মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি (দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স) – জামাল নজরুল ইসলাম
[বিজ্ঞানের বই ইউনিকোড আকারে দেয়া অনেক কঠিন। অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব বলে মনে হয়। এর নানান সূত্র, বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন – এগুলো সঠিকভাবে সাজানো কঠিন। এই বইটি পাঠকদের বিশেষ অনুরোধে দেয়ার চেষ্টা করা হল, কিন্তু এতটা কঠিন হবে, আগে জানলে হয়তো কোনো চেষ্টাই করতাম না। অনেক ভুলভ্রান্তি আছে – বিশেষ করে ফর্মূলা আর বিশেষ সাংকেতিক চিহ্নগুলোতে, তাই এগুলো রেফারেন্স হিসেবে না নেয়ার অনুরোধ করা হল। মূল বইটি বাজারে পাওয়া যায়, একান্তই দরকার হলে কিনে নিবেন। ধন্যবাদ।]
অনুবাদ – অনঙ্গভূষণ দাস
প্রকাশক – নাগরী
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০২২
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
.
লেখকের উৎসর্গ
আমার বাবা-মায়ের স্মৃতির প্রতি
আমার ভাই তারেক মুইনুল ইসলাম (১৯৩০-১৯৭৯)
এবং ভ্রাতুষ্পুত্র নাদিম ওমর (১৯৫৫-১৯৭৯)-এর স্মৃতির প্রতি।
.
অনুবাদকের উৎসর্গ
বাবা-মা
.
মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি-প্রসঙ্গে
রহস্যেঘেরা আমাদের এই মহাবিশ্ব। অনন্ত মহাবিশ্বে নিয়ত গ্রহ-নক্ষত্র ঘিরে কতজনের কতই-না জিজ্ঞাসা! এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আর স্থায়িত্ব নিয়ে মানব মনের অন্তঃকরণে কত প্রশ্নরা করে অবিরত আনাগোনা! এমনই কিছু প্রশ্ন—মহাবিশ্বের সকল নক্ষত্র তথা গ্যালাক্সি কি অতি দূর ভবিষ্যতে প্রবল টানে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে? অতি ছোট্ট আয়তনে ঘনীভূত হয়ে দুমড়ে মোচড়ে কি বিনষ্ট হয়ে যাবে সৃষ্টির সবকিছুই? প্রাণের অস্তিত্ব কি বিলীন হয়ে যাবে? এক শর্তে এমনটি হওয়ার কথা। অন্যদিকে আমাদের মহাবিশ্ব চিরপ্রসারণশীলতার বৈশিষ্ট্য নিয়ে সৃষ্টি হয়ে থাকলে তার পরিণতি অন্যরূপে। এক্ষেত্রে মহাকাশে নিয়ত সকল নক্ষত্র পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে। দূরে সরে যেতে যেতে কি এরা পরস্পর থেকে মহাকর্ষীয় বন্ধন ছিন্ন করে ফেলবে? অতি দূর ভবিষ্যতে কার্যকরীভাবে বিনষ্ট হয়ে যাবে কি মহাকাশীয় সমস্ত প্রক্রিয়া? নক্ষত্ররা তখন পুরোপুরিভাবে শক্তি হারিয়ে নিথর হয়ে যাবে? এরা কি একা একা বিচরণ করতে থাকবে অন্ধকারময় অসীম শূন্যতায়? অবশেষে আমাদের সমগ্র মহাবিশ্ব অতি দূর ভবিষ্যতে চূড়ান্তভাবে কোন দশায় পর্যবসিত হবে? পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও বিশ্বতত্ত্ববিদ ড. জামাল নজরুল ইসলাম দীর্ঘ গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে এঁকেছিলেন এই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির দৃশ্যপট। ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালে বিশ্ব পেয়েছিল তাঁর অনুপম সৃষ্টি ‘দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ বইটি। বইটিতে দেখা যায় আমাদের এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। সময়ে সময়ে এটি আরও বহুবিধ পরিবর্তনের সম্মুখীন হবে। সুতরাং মহাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা গ্যালাক্সিগুলো পরিবর্তনের অনুবর্তী। পর্যবেক্ষণযোগ্য এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় শত বিলিয়নেরও বেশি গ্যালাক্সি। প্রতিটি সাধারণ গ্যালাক্সিতে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় দশ হাজার কোটি নক্ষত্র। এসব নক্ষত্রের মৃত্যু হয়। কিন্তু এদের মৃত্যুর ধরন হয় ভিন্ন ভিন্ন। এবার প্রশ্ন হচ্ছে মহাবিশ্ব তার চূড়ান্ত পরিণতির দিকে
যেতে যেতে আমাদের গ্যালাক্সি, সৌরজগৎ এবং আমাদের এই আদর্শ পৃথিবীকে কোন দশায় ফেলবে? দূর ভবিষ্যতে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমাদের পৃথিবীর শক্তির উৎস সূর্য এক সময় লাল দানবে পরিণত হবে। অগ্নিবৎ উত্তাপে ছেয়ে যাবে সমগ্র পৃথিবী। শেষ পর্যন্ত সূর্য তার শক্তি হারিয়ে সে-ও শীতল হয়ে যাবে। নিকষ অন্ধকার পৃথিবীতে তখন বিরাজ করবে শীতলতা আর শীতলতা। এই দুই অবস্থাতেই কি পৃথিবীতে মানব সভ্যতা টিকে থাকতে পারবে? নাকি মানব সভ্যতা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাড়ি জমাবে মহাশূন্যে, খুঁজে নেবে শক্তির নতুন উৎস? পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কি তখন বিলীন হয়ে যাবে? মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সিই পরিবর্তনের অনুগামী। অতঃপর এই সমগ্র মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি কী? বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম এইসব রহস্যময় জিজ্ঞাসার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণের অবতারণা করেছিলেন তাঁর দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স বইটিতে।
সৃষ্টিতত্ত্বের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে ‘মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ।’ এই বিকিরণ এক ধরনের তাড়িৎচৌম্বক বিকিরণ। এই বিকিরণ সমগ্র মহাবিশ্বে সমরূপে পরিব্যাপ্ত। পদার্থবিজ্ঞানী আর এলান পেনজিয়াস ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলসন যৌথভাবে প্রথম এই বিকিরণ আবিষ্কার করেছিলেন। ধারণা করা হয় মহাবিশ্বের বিশেষ কোনও স্থান থেকে এসে এই বিকিরণ মহাবিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ থেকে বিজ্ঞানীগণ এই ইঙ্গিত পান যে, মহাবিশ্ব প্রথম অতি উষ্ণ ও অতি ঘনীভূত অবস্থায় ছিল। এই বিষয় তথাকথিত ‘বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্বকে সমর্থন করে। এই বিগ ব্যাং থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল মহাবিশ্বের। কিন্তু বিগ ব্যাং যে মহাবিশ্বের উৎস তা নিয়েও রয়েছে মতানৈক্য। বিজ্ঞানী ড. জামাল নজরুল ইসলামের মত অনেকেই মনে করেন যে, বিগ ব্যাং সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত অনেক কিছুই জানার বাকি রয়েছে। বিগ ব্যাং এর পূর্বেও কি মহাবিশ্বের অন্য কোনও পর্যায় ছিল? বিগ ব্যাংয়ের মুহূর্তেই কি সময় তার যাত্রা শুরু করেছিল? এসব প্রশ্নের উল্লেখ করে জামাল নজরুল ইসলাম বলেছেন, বিজ্ঞানের এই জটিল প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও পর্যন্ত নেই। যাই হোক নানান ইঙ্গিত, পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে অধিক যুক্তিসংগত বিষয়কেই মেনে নেওয়া হয়। কালের পরিক্রমায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞানজগতে উন্মোচিত হচ্ছে নতুন দিগন্ত, আবির্ভূত হচ্ছে গবেষণার নিত্যনতুন বিষয়। সময় সাপেক্ষে পুরোনো কিছু মতানৈক্যের অবসান ঘটে, অমীমাংসিত বিষয়ের হয় মীমাংসা। এরই মাঝে কতিপয় জটিল প্রশ্ন অমীমাংসিতই রয়ে যায়। বিজ্ঞান কিছুদূর হেঁটে কখনও নতুন পথেরও ইশারা দেয়। বহু জটিল সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে আত্মনিবেদন করেন মহাজ্ঞানীগণ
সৃষ্টিতত্ত্বের সবচেয়ে জটিল বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান একটি সনির্বন্ধ বিষয় হল—–’সৃষ্টির চূড়ান্ত পরিণতি’। অবশেষে কী হবে এই মহাবিশ্বের? প্রশ্নটি অনেককেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল যা এখনও চলমান। বিশ্বতত্ত্ববিদ জামাল নজরুল ইসলাম অধিক সম্ভাব্য ও সন্তুষ্টিজনক উত্তর দিয়েছিলেন তাঁর বিশ্ববিদিত দি আলটিমেইট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স বইটিতে। বিশ্ব সমাদৃত এই বই আমি বাংলায় অনুবাদ করার প্রয়াস করেছিলাম। বিজ্ঞানের বই হওয়ায় এটির ভাবানুবাদ ছিল অচিন্তনীয়। কিয়দাংশ ছাড়া বইয়ের সবটুকুতেই আমি অবিকল সাদৃশ্যের পক্ষপাতী ছিলাম। বইটির অনূদিত শিরোনাম দিলাম ‘মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি’।
রাশিয়ার গণিতবিদ আলেকজান্ডার আলেকজান্দ্রোভিজ ফ্রিদম্যান মহাবিশ্বের দুটি মডেল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মডেল দুটি ছিল ‘মুক্ত মহাবিশ্ব’ ও ‘বদ্ধ মহাবিশ্ব’। মুক্ত মহাবিশ্ব চিরকালই সম্প্রসারিত হয় আর বদ্ধ মহাবিশ্ব অতি দূর ভবিষ্যতে সম্প্রসারণ থামিয়ে দেয়। অবশেষে বদ্ধ মহাবিশ্বের সংকোচন শুরু হয়। সুতরাং, মুক্ত মহাবিশ্ব ব্যাপ্তির দিক থেকে হয় অসীম। পক্ষান্তরে বদ্ধ মহাবিশ্ব ব্যাপ্তির দিক থেকে হয় সসীম। উপরোক্ত মডেলদ্বয়কে জামাল নজরুল ইসলাম পর্যবেক্ষণ করেছেন। এদের স্পেসের জ্যামিতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন খুব স্পষ্টতায়। তিনি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দেখলেন যে, দুই মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির রূপ পরস্পর থেকে ভিন্ন হয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তিনি মহাবিশ্বের আদর্শ মডেল বিবেচনা করেছিলেন। মডেল মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের সকল বস্তুকে মূর্ত করে। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ থেকে তিনি কিছু যুক্তিসংগত অনুমান পেয়েছিলেন। ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিগুলোকে মহাবিশ্বের মূল উপাদান ধরে নিয়ে তাদের চূড়ান্ত পরিণতি অনুসন্ধান করেছেন। গ্যালাক্সিদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা নক্ষত্রদের জন্ম, বিবর্তন ও মৃত্যুর প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন অধিক স্বচ্ছতায়। এসব নক্ষত্রের সমস্ত বস্তুর মূল উপকরণ হচ্ছে পরমাণু। পদার্থের পরমাণু আবার ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত। এখনও পর্যন্ত এরা মৌলিক কণা হিসেবে বিবেচিত। প্রসঙ্গক্রমে এসব মৌলিক কণাসহ কতিপয় উল্লেখযোগ্য কণার ধরন, বৈশিষ্ট্য ও মিথষ্ক্রিয়তা বর্ণনা করেছেন সহজবোধ্য ভাষায়। বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহাকর্ষীয় তত্ত্ব অনুসারে প্রোটন কণার বিনাশ হওয়া উচিত। আর প্রোটন কণা অস্থায়ী হলে মহাবিশ্বের সকল বস্তুর গঠনও হবে অস্থায়ী। অর্থাৎ বদলে যাবে সমগ্র মহাবিশ্বের গঠন। পর্যবেক্ষণযোগ্য আমাদের মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির অধিক সম্ভাব্য দশাগুলো এই বইয়ে আমরা দেখতে পাব। বিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম ভৌত মহাবিশ্ব গবেষণায় এক অনন্য মাত্রা দিয়ে গেছেন। বিশ্বতত্ত্বে তিনি ব্যক্তিক আলোয় প্রোজ্জ্বল।
আমার গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ নাগরীর প্রতি। স্বনামধন্য এই প্রকাশনী বইয়ের অনুবাদ প্রকাশ করতে মহৎ উদ্যোগ নিয়ে খুব যত্ন সহকারে প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করেছে। মূল বই যার হাত ধরে আমার কাছে এসেছিল তিনি বন্ধুপ্রতিম বড়োভাই সাংবাদিক ও লেখক বিপ্লব দেব। অনুবাদ করার দায়িত্বটা তিনি আমার কাঁধে একরকম চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এটি অনুবাদ করার সময় তিনি আমাকে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দিয়ে অনেক মূল্যবান মন্তব্য করেছিলেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক পরামর্শ পেয়েছিলাম বিপ্লব দেবের কাছ থেকে। আমি তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ বই অনুবাদ করতে গিয়ে আমার উত্তম বন্ধু স্বর্ণা দাসের কাছ থেকে বারবার সহায়তা ও উৎসাহ পেয়েছিলাম। এভাবেই সৃজনশীল কাজের জন্য সে আমাকে উৎসাহ, অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ স্বর্ণার প্রতি।
অনঙ্গভূষণ দাস
.
মুখবন্ধ
১৯৭৭ সালে ‘কোয়ার্টারলি জার্নাল অব দ্য রয়্যাল এস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটি’ জার্নালে মহাবিশ্বের সম্ভাব্য চূড়ান্ত পরিণতি (Possible ultimate fate of the universe) শিরোনামে আমার একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। এই লেখাটি আমরা কয়েকজন সহকর্মীর কাছে কৌতূহলপ্রদ হয়ে উঠেছিল। এদিকে ওয়াইনবার্গের The first three minutes বইটি প্রকাশিত হয় যেটি লেখা হয়েছিল মহাবিশ্বের শুরুর দিক নিয়ে। এই বইটি আমাকে ভাবিয়েছিল যে, মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতির একটি বই হলে দারুণ ব্যাপারই হবে। কিছুদিন পরই জ্যোতির্বিজ্ঞান-বিষয়ক সাময়িকী স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ থেকে আমাকে অনুরোধ জানায় তাদের জন্য আমার গবেষণাপত্রটিকে সহজবোধ্য ভাষায় লিখে দিতে। এই লেখাটি ১৯৭৮ সালে ওই সাময়িকীর জানুয়ারি সংখ্যায় ‘The ultimate fate of the universe’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। লেখাটি প্রকাশ হওয়ার পর পাঠকদের প্রতিক্রিয়া আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল এই বিষয়ের ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ বই লিখতে। তারই ফলস্বরূপ বর্তমান এই বই। যাদের বিজ্ঞানবিষয়ক তেমন কোনও জ্ঞান নেই তাদের কথা মাথায় রেখেই আমি এই বইখানি লিখেছি। প্রায়োগিক বিজ্ঞানসংক্রান্ত বিষয়গুলো এবং ভৌত প্রক্রিয়াগুলো যতটা সম্ভব সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছি। কিন্তু তথ্য বিন্যাসের প্রয়োজনে অতিসহজীকরণ পরিহার করেছি। তার মানে বইটির কোনও কোনও অংশে সাধারণ পাঠককে অর্থাৎ যার বিজ্ঞানসম্বন্ধীয় তেমন কোনও জ্ঞান নেই তাকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস যারা বইটি পড়তে যত্নবান হবেন, কোনও প্রকার দুর্বোধ্যতা ছাড়াই তারা সম্যক ধারণাগুলো পেয়ে যাবেন।
গ্রন্থপুঞ্জিতে উল্লিখিত কতিপয় বই ও প্রবন্ধ থেকে কিছুটা সহায়তা নিয়েছি। এই উপকরণ প্রমাণস্বরূপ হওয়ায় আলাদা আলাদাভাবে তথ্যসূত্রগুলোর প্রাপ্তি স্বীকার আবশ্যক বলে মনে করছি না। কিন্তু যেখানেই সম্ভব তাদের নাম উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি যারা নতুন নতুন ধারণা ও পর্যবেক্ষণ তৈরি করেছেন। আমি কয়েকজন সুপরিচিত প্রয়াত বিজ্ঞানীর পুরো নাম এবং জন্ম-মৃত্যুর তারিখ উল্লেখ করেছি। আর এই তথ্য নেওয়া হয়েছে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ১৯৭০ সংস্করণ থেকে। কিছু কিছু তথ্যের ক্ষেত্রে এর পরবর্তী সংস্করণকে উপযুক্ত মনে হয়েছে। সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের নামের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম নামের বেলায় নামের আদ্যাক্ষর ব্যবহার করেছি।
আমি এফ. জে. ডাইসনের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। বইটি লেখার জন্য তিনিই প্রথম আমাকে উৎসাহিত করেছিলেন এবং এই বইয়ের নতুন ধারণার অনেকটাই তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। এস. জে. আর্সেস, এস ডব্লিউ হকিং, এস মিঠন, জে. ডি নারলিকার, এম. জে. রিচ এবং জে. সি টেইলরের প্রতি আমার অসংখ্য ধন্যবাদ। তাঁরা এই বইটির বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের ওপর কার্যকর মন্তব্য করেছেন। সহযোগিতার জন্য ধন্যভাদ জানাই ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসের স্টাফকে বিশেষ করে এখানে ম্যারিয়েন জোয়েটের কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে। সুদক্ষভাবে পাণ্ডুলিপির মুদ্রণের জন্য মিসেস ম্যারি র্যাইসের কাছে আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। সবশেষে আমার জীবনসঙ্গিনী সুরাইয়াকে এবং আমার স্নেহের দুই কন্যা সাদাফ ও নার্গিসকে ধন্যবাদ জানাই। বইটি লেখাকালীন মুহূর্তগুলোতে তাদের কাছ থেকে আমি অবিরাম সহায়তা ও উৎসাহ পেয়েছি।
জামাল নজরুল ইসলাম
নভেম্বর, ১৯৮২
অধ্যাপক (গণিত)
সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন
.
কনভেনশন নোট
এই বইয়ে ‘বিলিয়ন’ শব্দটি আমেরিকার হিসাব অনুযায়ী ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ১ বিলিয়ন সমান ১ হাজার মিলিয়ন। সংখ্যাকে সূচকীকরণ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ ১০^n আকারে লিখলে ১০^n-এর ১০ হয় ভিত্তি এবং ‘n’ হয় এই ভিত্তির শক্তি বা সূচক। প্রক্রিয়াটি ভিত্তির সূচক অনুসারে ভিত্তির পুনরাবৃত্ত গুণফলকে বোঝায়। সুতরাং ১০ সংখ্যাটিকে n সংখ্যকবার গুণ করে যে ফল আসে তার সমান ১০^n। অন্যদিকে
১০^-n হচ্ছে ১০^n এর বিপরীত অর্থাৎ 1/10^n ।
সুতরাং, ১ বিলিয়ন সমান ১০^৯ এবং এক বিলিয়ন বিলিয়ন সমান ১০^১৮।
পক্ষান্তরে, ১০^-৯ সমান ১ বিলিয়ন ভাগের ১ অংশ অর্থাৎ ১/১০^৯ ।
Leave a Reply