ভালো বাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো – ত্রিদিব দস্তিদার
উৎসর্গ
যে তুমি আমার কবিতার রক্তক্ষরণ
প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ১৯৯৯
প্রকাশক – আনোয়ার ফরিদী আবু সিদ্দিক, ম্যাগনাম ওপাস, ঢাকা
.
ভালো বাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো
ভালোবেসে কি ফতুর করা যায়?
ভালোবাসা ফতুর হয় না কখনো
তবে আমি তোমাকে ভালো বাসতে বাসতে
ফতুর করে দেবো
তোমার ভালোবাসা এক সময় ফুরিয়ে যাবে
আমার ভালোবাসার আজন্ম উত্তাপে
বাষ্পায়িত হবে তোমার ভালোবাসা
আমার ভালোবাসার গতি ও তীব্রতায়
ম্রিয়মাণ হবে
জলে, অন্তরীক্ষে
ভালোবাসা-স্থলের অতি ব্যবহারে
হবে তুমি প্রাচীন কোন নৃতত্ত্বের সন্ধান
নতুন প্রেমিকের কাছে
ভালো বাসতে বাসতে তোমাকে
ফতুর করে দেবো
ফতুর করে দেবো
ভালো বাসতে বাসতে বাসতে
তোমার সৌন্দর্য-কীৰ্ত্তন
তোমার শরীর ও মনে কখনোই ভাষার ব্যাকরণ
পতন হয় না জানি, ছন্দে কিংবা বাক্যে
বানানে কিংবা বুননে
তুমি বিদূষিণী, বসে আছো
আমার হৃদয়ে এক অনন্য পাঠশালা।
যতোবার কবিতার ভাষায় তোমাকে দেখি
তোমার গুণনের গাণিতিক ধারা পাল্টে যায়
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ধারায়
গ্রন্থিত হয় তোমার রূপ
বিশ্ব-সুন্দরীরাও হার মানে
তোমার আলোকবর্তিকা নির্ণয়ে।
তুমি দীর্ঘসূত্রিতার সঠিক বানানে
দুর্বল করো আমাকে
ভাষার বর্ণাঢ্য রূপে, সৌন্দর্যের বিভাষিত
শিল্পীর তুলিও যেন খসে পড়ে
চোখ দু’টো আসে হাতের মুঠোয়
কবিতায় নামে মরূদ্যান।
তোমার সৌন্দর্যের দাড়িপাল্লা হয় না জানি
এক ছটাক নয়, শুধু এক ছটা
ছিটে-ফোঁটা তোমার আলো এসে
যদি পড়তো আমার কলমে
তবে নোবেল পুরস্কারে আবার দাঁড়াতাম ঘুরে।
এখন আমার কবিতা ঘুরে তোমার পায়ে পায়ে
চায় পোষা-বেড়ালের আদর
দয়া করো বিদূষিণী, পদতলে ফেলো না তাকে।
প্রেম-ভিখিরি
কে যে তোমায় আগলে রাখে
প্রেম-সুবাদে নিত্য সাজে
প্রেম-জীবনের মাঝে
পদাবলীর কোন সে তরুণ বাঁকে?
সন্ধ্যা যখন টানলো ইতি
দ্বিতীয় জনের উপস্থিতি
ভরাট ভীষণ ভরাট মেঘের চাপ
প্রেম-ভিখিরি দাও করে দাও মাফ।
দ্বিতীয় জন তৃতীয় জন
একজন তো নয়
তোমার কাছে ভিক্ষা চাওয়া
প্রেমের লাগে ভয়।
প্রেমের আবার ভিক্ষা কিসের
প্রেম যে রাজকীয়
হাতির পিঠে ঘোড়ার পিঠে
প্রেম থাকে যে প্রিয়।
কে বলে যায় ওসব কথা
রাজ আসনে প্ৰেম
ভিক্ষাহীন প্রেম হয় না
বৈষ্ণবী চায় হেম।
প্রেমের থাকে ভিক্ষা-পাত্র মাথায় রঙিন তাজ
শূন্য থালায় চোখের মুক্তো
এই সে প্রেমিক রাজ।
এই তো আমার প্রেমের বিষয়
ভিক্ষা-পাত্রে রাখি
প্রেমিক হওয়ার একলা পক্তি
শব্দে শব্দে আঁকি।
বাই-কালার স্ক্রীন ভালোবাসা
ভালো বাসতে বাসতে ফতুর করে দেবো
তোমার হৃদয়
আবেগের ব্যাংকিং তফসিল বন্ধ হয়ে যাবে
তুমি দেউলিয়া ঘোষিত হবে
অন্যসব প্রেমিকের কাছে
হারাবে হৃদয়-ম্যাগনিটিজম।
আমার সপ্তবর্ণের ভালোবাসা তবু
নিয়তই তোমার হৃদয়-ভালোবাসায়
ফেলবে সুতীক্ষ্ণ রঙের আলো
যে রঙের মূর্ছনা কখনো শেষ হবে না জানি,
ভালোবাসার নামে তুমি বাই-কালার হবে
আমারই একক রঙের স্ক্রীনে
তোমার রঙের নিজস্বতা খুঁজে খুঁজে ফিরবে বিজ্ঞজন।
ভালোবাসতে বাসতে তোমাকে ফতুর করে দেবো
এবং নিজেও ফতুর হবো একদিন
তোমার কাজল-রঙে মিশে
আবারো হয়ে যাবো এই আমি, স্বকীয়তাহীন
তোমার বাই-কালার স্ক্রীন ভালোবাসায়।
জন্মের আলো
যে আলোর বিচ্ছুরণে তোমার জন্ম
তার আগে কিংবা পরে
সূর্যোদয়ে কিংবা সূর্যাস্তে
আমি জন্ম নিয়েছিলাম খণ্ডিত দেহ-পল্লবে
তখন অলৌকিক প্রত্যয়ে তোমার আলো
পড়েছিলো আমার যুগ-যুগান্তরের
নিবিড় এ দেহ-খণ্ডে
সেই থেকে এক ধরনের পরিপূর্ণ আলোর উষ্ণতায়
আমার দেহ-মন বেড়ে উঠতে থাকে
আমি ভালোবাসতে থাকি পৃথিবীর রূপ,
রঙ, রস ও তোমাকে।
যে আলোর বিচ্ছুরণে তোমার জন্ম
তার আগে কিংবা পরে
আমার কোনো প্রকৃত ভালোবাসা ছিলো না
সঠিক কোনো নির্ণয়
অপ্রাকৃত যন্ত্রণায় আমার দেহ-মন বিচ্ছিন্ন ছিলো
তোমার জন্মের সাথে সাথে ওরা এক হলো
পৃথিবীতে নেমে এলো আর একটি বীজ-উদ্গম সেতু
ফিরে এলো আমার জীবনে এবং
বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত;
You love, so I live.
জন্ম জন্মান্তরে প্রেম
তোমার পরিত্যক্ত পোশাকের ঘ্রাণ ছুঁয়ে
পাশে বসে থাকি
যেন তোমাকে না পাওয়ার প্রতীক্ষাই একক
দু’ হাতে বুকে নিই
চুম্বনে চুম্বনে রাখি ধোপার ভূমিকা
আচানক বলে ফেলো ওহ্ ময়লা ময়লা
সরিয়ে বসুন
তারপর আমারও আবেগাতুর বলা
আমি যে আজ্ঞাবাহী তোমার গাধা চর ধোপা
তোমার পোশাক যতোই লন্ড্রির উপযোগী হোক
এ আমার অন্যরকম ধোপার কস্তুরি
তোমার না পাওয়া শরীরের না ধোয়া ঘ্রাণ
যেন আমি পেতে চাই তার কাছে
তোমার পরিত্যক্ত ব্রা-এর নিচে
যে মুক্তোর ঘাম-বিন্দু আভা লেগে থাকে
আমি ধোবো না কখনো তাকে
শুধু ছোঁবো
তোমাকে অধরা জেনে শুধু তাকে ছোঁবো
রেখে দেবো জন্ম জন্মান্তরে
এক প্রেমিক ধোপার ঘরে।
নিজ-পক্ষ ভালোবাসা
ভালো বাসতে বাসতে তোমাকে ফতুর করে দেবো
দ্বিতীয় ভালোবাসার উষ্ণ কোনো মুদ্রা
তখন থাকবে না তোমার
হাতে, মুখে, চোখে এবং সর্বাঙ্গে
কিছু চুম্বনের গ্রন্থিত ক্রীতদাস ফোস্কা ছাড়া
আর কোনে বিত্ত দেবো না তোমাকে।
আমার অপসৃত ভালোবাসার বিত্তে থাকে
যাচিত সুন্দরের চিহ্ন, এসব চিহ্ন আমি
তোমার ত্বক-শ্রী জীব-মৃত্তিকায়
রোপণ করবো অন্য এক কর্ষণের অভিজ্ঞ নাটায়
টেনে এনে চাহিদার ঊর্ধ্বমুখিতায়
আবারো বাস্তুতে খোদিত কারুকাজ
গড়ে নেবো আরেক সুন্দরের
স্বেচ্ছাচারী ভালোবাসা
তারপর নিজেও ফতুর হবো নিজ-পক্ষ ভালোবাসায়।
সত্যব্রতের প্রেম
কি এমন ভালোবাসায় ডোবালাম পা
প্রকৃত প্রেমিক কাদায় সেঁটে আছে গা?
ধোবো না ছোঁবো না বলে যে আবেগ আঁকি
মিথ্যাচারী প্রেম এসে তাকে দেয় ফাঁকি।
সে কেমন বিচারক অর্থ-দণ্ড হাতে
আমার প্রেমকে রাখে করুণার খাতে।
প্রকৃত প্রেমিক হয়ে কষ্ট বাড়ে প্রাণে
সজল চোখের তারা ছোটে কাম-বাণে।
এভাবেই ভালোবাসা কামসিক্ত শরীরী আহ্বানে
আমাকে নিমগ্ন রাখে সত্যব্রত প্রেমিক মননে।
অন্য চোখের অদৃশ্যে
অন্য চোখের অদৃশ্যে নিজের চোখের জল
ঝরিয়েছি কতোবার
মধ্যরাতে বালিশ থেকে মাথার ওজন তুলেছি মাথায়
তবুও আমার খরস্রোতা এ জল নদী
ভাঙেনি কারো কূল
দগ্ধ করেছি নিজেকে অদৃশ্য পোড়াকাঠে
গ্যাস বার্নার খুলে দিয়ে সিগারেটে রেখেছি আগুন
তবু ফায়ার ব্রিগেডের চোখে
এক ফোঁটা জলও আসেনি কখনো
জ্বলেনি কারো মূল্যবান নথি, মন্দির কিংবা মসজিদ
শুধু নিজের ক্রোধের আগ্নেয়গিরি বুকে
নিজেই শ্বাসরুদ্ধ হয়েছি বারবার।
এ কেমন ছক কাটা খেলার ঘরে এনেছো ঈশ্বর
নিজ-সৃষ্টিকে দিয়েছো ধ্বংসের অকুতোভয় আশ্বাস
যে আশ্বাসে আজো সৃষ্টির গোপন রহস্য খোঁজার
বন্দনায় পড়ে আছি একা, নিঃশর্ত সুন্দরের পাদদেশে
যদি সে ছোবলও তোলে ক্রোধে ম্রিয়মাণ হই আমি
কেন তার প্রগলভ বিষপানে হয়ে যাই নীল?
নিজ-পাণ্ডুলিপি কেন নির্মাণ করি নিঃসঙ্গ যন্ত্রণায়
কেন ভালোবাসাকে ধরে রাখি ফিনিক্স পাখির রূপে?
এই কি আমার নিছিলিস্ট শস্য-ভূমির বীজ?
অন্য চোখের অদৃশ্যে নিজের চোখের জল ঢেলে কেন
বৃথাই রোপণ করি এক সুকান্ত বৃক্ষের চারা?
তোমাকে ছোঁয়ার দণ্ড
প্রেমিকের যতোটুকু ভালোবাসা
আমি নিবেদন করে চলি
তারও বেশি গোপনে রেখেছি হৃদয়ে
না জানি তোমার কাছেও এমন কিছু গোপন
আছে কি না? তোমার আরাধ্য আকরখানি
পাবো কি না?
এখানেই বলা চলে আমার স্বার্থের গোপনতা
এ যেন বন্দির মাতন ভেবে হেসে যাওয়া
তবে কি ভালোবাসা এভাবে স্বার্থপরতায়
এগিয়ে যায়?
সকল সুন্দরের কাছে হার মেনে
একক সুন্দরে জড়িয়ে থাকা
পরগাছা উদ্ভিদ যেন
জীবনকে টেনে নেয়া নির্দিষ্ট ভালোবাসায়!
এখানেই ফাঁক থেকে যায়, তবে
তুমি কি দিয়েছো তাকে সেই ভালোবাসা,
নিজস্ব গোপন?
না উদ্বৃত্ত কিছু করুণায় বেড়ে ওঠা জীবন
তোমাকেই ঘিরে থাকা
স্বপ্নে কি জাগরণে, না প্ল্যাটনিকে
পূজনীয়া তোমাকে যেমন অন্তরে পোষা
খাঁচা বোনা, নিজেকে বন্দি রাখা তোমার ভেতর
তোমাকে ছোঁয়ার দণ্ডে আরো বেশি সিদ্ধ হওয়া
নিজেকে ফিরে ফিরে পাওয়া
ভালোবাসা ভালোবাসা করে পুনরায় কি বেঁচে যাওয়া?
পুনর্নির্মাণ
বার বার তোমাকে নতুন করে চিনতে হয়
যে চেনা অধ্যায় থেকে তোমাকে চিনতে চাই
আবার নতুন অন্য এক অধ্যায় এসে আমাকে চেনায়
সপ্ত-বর্ণের মাঝে কয়টি বর্ণ আজ আমাকে চায়
তাও বলে দিতে পারি না এ জীবনের অপার বিষাদে
ভালোবাসায় তোমাকে সাজাতে গিয়ে চিনতে পারি না
অবহেলায় তোমাকে সাজাতে গিয়ে চিনতে পারি না
ঘৃণায় তোমাকে সাজাতে গিয়ে চিনতে পারি না
এই অচেনা থাকার নাম কি তবে ভালোবাসা
এই অচেনা থাকার নাম কি তবে ঘৃণা
এই অচেনা থাকার নাম কি তবে অবহেলা?
আমার ভালোবাসা, অবহেলা এবং ঘৃণা
কোনোটারই অপেক্ষা করো না তুমি
শুধু অখণ্ড উপেক্ষা করে গেছো কাল-নিরবধি
আমার আবেগের সকল মহিমাকে
অনুভূতির গোপন রেণু-গুঞ্জনকে
যেন জীবনানন্দের কবিতায় বয়ে নিয়ে যাও
অচেনা এক মানসের কাছে কি তার রূপের গোধূলিতে
কেন এই গোধূলির চারপাশে তোমার প্রকৃতি
কেন তোমার ‘অনেক’ শব্দটির পেছনে খালি পায়ে হাঁটি
কেন কাঁকরের পথে পথে ভাগ্যের অপরূপ পাথর খণ্ড খুঁজি
এ বুঝি চিরায়ত সত্যের কাছে তোমার মূর্তি গড়া
পুনরায় ভেঙে ফেলে তোমাকেই ফের নির্মাণ করা?
একা হওয়ার নিজস্ব ভঙ্গি
নিজের আঙুল কামড়িয়ে রক্ত ঝরাবো
তবু আমি একা হবো
তোমার সঙ্গ যতোটা মধুর
তারও চেয়ে বিষণ্ণ বড়ো
পাহাড়ের তলপেট-ভরা এ জলজ পরিভ্রমণ
আমাকে দিয়েছে যেন চোখভরা জলের অতল
যেখানে আমার মৃত্যু-শ্যাওলার আহ্বান
নিয়ে যায় তোমার একান্ত তৃষ্ণায়
যদিও আমি বাঁচি, তবু যেন মৃত্যু হয়
আমার সকল ইচ্ছার
তোমার জীবন-সঙ্গীনামী বন্ধনের কাছে
আমি আজ নিজ ভুলে নিজে একা।
তোমরা দু’জন পাহাড় আর নদী
আমি একা
তোমাদের মাঝে আছি তবু একা
তোমাদের সাথে আছি তবু একা
তোমাদের হ্যাভারসেকে আছি তবু একা
তোমাদের ভালোবাসায় আছি তবু একা
তোমাদের মেজাজ-মর্জিতে আছি তবু একা
তোমাদের ঝুলন্ত ব্রিজে আছি তবু একা
তোমাদের তারাগোনা ব্যাকলনি আছি,
তবু একা
এ আমার একা হওয়ার নিজস্ব ভঙ্গি
কার্বন
বুকের কার্বনে লিখে রেখেছি তোমার নাম
সহস্রবার
এই কার্বনে কারো নাম লেখা যাবে না আর
ক্ষয়ে গেছে তার জন্মের সহিষ্ণু আচার।
স্কুল-জীবনে একবার প্রেমের নাম লিখতে গিয়ে
উল্টো করে ধরেছিলাম কার্বন
তাই কারো নাম ওঠেনি সেদিন।
আজ কার্বন ধরা শিখেছি আমি
কিন্তু তোমাকে অধরা জেনেছি এখনো
শুধু সহস্রবার লিখে রাখা তোমার নাম
বুকে নিয়ে
এক ব্যথিত কার্বন আজো বেঁচে আছি।
ভালোবাসার রঙ-কাহিনী
ভালোবাসায় ফতুর হলে আমির হওয়ার
ঠিক তহবিল খুঁজে নেবো
ভালোবাসায় অমর হবো
ভালো এবার বাসতে বাসতে ফতুর হবো
পথে বসবো পথের আমির
ভালোবেসে আমির হবো
ভিক্ষা-পাত্র থাকবে এবার তোমার নামে
দান-দক্ষিণা যা কিছু পাই
ভালোবাসার মাজার হবে, মন্ত্র দেবো
তোমার নামে যতো মুরিদ
আমি তাদের পীর কিংবা যাজক হবো
শিন্নি মানত পড়বে শুধু তোমার নামে
আমার ডেরায়
এসব থেকে ছিটে-ফোঁটা গ্রহণ করে
পৌঁছবে তোমার ভালোবাসার নসিয়তে
তখন তারা, হয়তো তখন
ভালোবাসার অমর পদ্যে কেচ্ছা-কদর
বাড়বে প্রতি জনে জনে
ভালোবাসার আমির ফকির নিয়ে তখন
কবির গানে ভেসে যাবে
ভালোবাসার আমির থেকে ফকির হওয়ার
রঙ-কাহিনী শুরু হবে
আমি তো এক ভালোবাসার আমির ফকির
তোমার কাছে পৌঁছতে হলে শূন্য হাতে
পৌঁছে যাবো
আমির হয়ে ভালোবাসার চরণ ছোঁবো।
তোমার পায়ের ছাপচিত্র
তোমার পা দু’টো দিয়ে
আমার বুকের ওপর ছাপ দিতে চাই
ভালোবাসার এ সীলমোহর নিয়ে
আমি পৃথিবী পরিভ্রমণ করবো।
তোমার তাজমহল-পায়ের ছাপচিত্র
এবার হবে আমার পায়ে চলার গাইড
আমার নিবেদনের ঘাম হবে তোমার যমুনা
এসবই আমার একান্ত মানচিত্রের রঙ
তার বাতিঘর হবে তুমি।
সৌন্দর্যের অনাড়ম্বর পা দু’খানি
আমাকে আকুল করে প্রতিনিয়ত
আমি অগ্রযাত্রার কথা ভাবলে
তোমাকে ভাবি
দার্জিলিং কিংবা শিলং পাহাড়ে
তোমার হাইহিল
পা মচকে গেলে আমি ব্যান্ডেজ হই
যে পা কখনোই ছুঁতে পারি না
দেখি না যার পূর্ণাঙ্গ রূপ
এবার নীল স্পর্শে
বুকে ধরে নিই তার সম্পূর্ণ অবয়ব।
তোমার পা দু’টো দিয়ে
আমার এ পোড়া বুকে ছাপ দাও
ভালোবাসার এ সীলমোহর নিয়ে
এবার তোমাকে পরিভ্রমণ করবো।
কষ্টের পরিবার
তোমার কর্মের নিশ্ছিদ্র পাল্লা
যখনই আমি হালকা করতে চাই
বলে ওঠো
অনেক কষ্ট দিচ্ছি আপনাকে
এ তোমার কেমন বিনয়?
যে কষ্ট পেতে চায়
তাকে তুমি কেমন করে কষ্ট দেবে?
যার কষ্টের শেষ নেই
যে এসেছে কষ্ট বহনে
যে এসেছে কষ্ট গ্রহণে
তাকে তুমি কি করে কষ্ট দেবে?
কষ্ট-বহনকারীর কাঁধে তুমি
অলক্ষে তুমি
দিবালোকে তুমি
রজনীতে তুমি
যার কষ্টের নাম তুমি
তাকে তুমি কি করে কষ্ট দেবে?
সহজ পথে আমার প্রেম নেই
কষ্টার্জিতও আসেনি কখনো
শুধু আসে কষ্টের রূপে
কষ্টের বোন
কষ্টের ভাবী
কষ্টের স্ত্রী
কষ্টের মা
এ যেন আমার কষ্টের পরিবার।
তোমার জাতক
পাওনা বলতে আমার কিছুই নেই
নিছক বেঁচে থাকা ছাড়া
পৃথিবী আর তোমার কাছে
বীজ আর ফসলের কাছে
কেন যে আমি বার বার বেঁচে থাকি, বেঁচে যাই
প্রামাণ্য ফসলহীনতার চিত্রে
তবে কি আমি নিষ্ফলা সুন্দরের তৃষ্ণায় বেঁচে যাই?
তবে কি এটাই আমার একমাত্র উজ্জীবনী বেঁচে থাকার?
পাওনা বলতে এ ক্ষীণ জীবনকে নিয়ে যে ঘোর আমার
পৃথিবী এবং তোমার কাছে
তাও কি বেঁচে থাকার, নিজেকে ভালোবাসার?
যেদিন পৃথিবী আমাকে ধারণ করলো
আমি উঠে আসলাম তোমার কাছে
তোমার সর্বাঙ্গে দেখে পৃথিবীর রূপ
আমি নির্মিত হলাম তোমার জাতকে
কিন্তু তোমার আরাধ্য ফলন ছোঁয়ার আগে
আমি মাটিতে খসে পড়লাম পুনর্বার
তোমার সুন্দরের পুণ্যে, অন্য এক না পাওয়ার জন্মান্তরে
এখন তোমাকে খোঁজার জন্যে
অন্ধকারে আমার চোখ
একটি বীজের দক্ষিণা চায়
যার ফসল হবে তুমি, একমাত্র তুমি
পৃথিবী হবে যার বীজ ধারণের অখণ্ড মাটি
এবং অমেয় ভালোবাসা।
ব্রাত্যজনের প্রেম
কোনো পাপ ছোঁবে না তোমাকে
শুধু ভালোবাসা ছোঁবে
ভালোবাসা কুড়িয়ে দেবে ব্রাত্যজন
যুগ যুগ ধরে এ মাটির নামে।
তুমি পুণ্যতীর্থা আমার রাধিকা
প্রেম-ফসলের অগ্নিনীল আরাধনার সাক্ষী
এবার আমিই দেবো
তোমার নামে
আমিই হবো ভালোবাসার একমাত্র পাপী
যে কোনো দণ্ডই আজ মাথা পেতে নেবো
খরা, রৌদ্র-তাপ, অনাবৃষ্টি
এবার তোমার নামে দেবো বলি নিজেকে
পুণ্যবতী হবে মাটি, ভাগ্যবতী হবে সবুজ
এভাবে ভালোবাসার আত্মদানে
পুনর্বার হবে তুমি বিজয়িনী।
তুমি পাপী নও আমার রক্তের ফোঁটায়
ভালোবাসার অশ্রু-সিক্ত নক্সীকাঁথায়।
গাধা-শব্দ এবং ভালোবাসা
ভালোবাসার আরেক নাম গাধা
তুমি ভালোবেসে গাধা হ’তে চাও না কখনো
আমি হবো সেই গাধা,
তোমার একপক্ষ ভালোবাসার গাধা।
অপমানের সকল বোঝা এবার
তুলে দাও তার সহিষ্ণু পিঠে
তোমার নামে উচ্চারিত এ ভুল শব্দটি
ছুড়ে দাও তার দিকে
শুধু তুমি সওয়ারী থেকো
পারস্যের হোজ্জা কি তবে গাধা ছিলো
না গাধাই ছিলো তার একান্ত বাহন
গাধার সওয়ারী কি তাই গাধা হ’তে পারে?
ভালোবাসার বোঝা বহনকারী এ গাধা
শ্রদ্ধায় নত করে মাথা, কান দু’টো নাড়ে
তোমাকে দেখলে দাঁড়িয়ে যায়
প্রভুত্ব স্বীকার করে থাকে চিরকাল
শুনে না কেউ তার তৃষ্ণার ডাক
তবু কেন তার ব্যথার ডাককে অপমান বলো
আপন ব্যক্তিত্বে কেন মিছে টেনে নাও সুতো?
গাধার ডাকতো গাধারই মতো সকলেই মানে
তবু গাধা ভালোবাসা জানে।
রূপ-শীতলতা
তোমার সৌন্দর্যের শীতলতা এতোই উজ্জ্বল যে
আমি আগুনকে সঙ্গে নিয়েও
তোমাকে উষ্ণতা দিতে পারি না
আমি যতোই বলি বাইরে এবং ভেতরে
আমার খরতাপ, প্রচণ্ড তৃষ্ণা
তুমি বার বার একটি জলের পাত্র
এগিয়ে দেবার শুধু ভান করো
আমি যতোবার বলি ভালোবাসা সিনসিয়র
তুমি বলো ‘ভালোবাসা’ শব্দটি যথেষ্ট বোকা
একখণ্ড কালো মেঘ দেখিয়ে বলো
অই যে দেখছো সেও এক-সময় মিলিয়ে যাবে
তারপর শুধু একটি রঙ
তোমার এই বহুবর্ণের ‘ভালোবাসা’ আমি নই
অন্য কেউ অন্য জগতে তার নিবাস
কিন্তু তুমি এসবও বলো না
শুধু আমাকে কেন জানি মোহিত করে রাখো
তোমার মৌনতা দিয়ে, সম্মোহনী রূপ শীতলতা দিয়ে।
তোমার সৌন্দর্যের শীতলতা এতোই উজ্জ্বল যে
আমি আগুনকে সঙ্গে নিয়েও
তোমাকে কখনো উষ্ণতা দিতে পারি না।
তোমার চোরাবালি
তোমার চোরাবালি
কাকে যে ডাকছে
আমি তো জানি বেশ
ছবি কার আঁকছে?
তবু তো যাবো আমি
তোমার ডাকে যে
অন্ধ বিনাশে
প্রেমের এ তরীতে।
তোমার চোরাবালি
কি মধু শব্দে
মুখের হাসি নিয়ে
চাঁদও কি জব্দে?
তবু তো যাবো আমি
তোমার মোহেতে
পায়ে কি মাটি জানি
বর্ণ চোখেতে?
তোমার চোরাবালি
যদি এ দেহটা
তোমাতে মৃত্যু
কামনা বলে যা!
কম্পন শ্বাসরুদ্ধতার
হাতের কম্পন ভয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে
ক্যামেরা ধরলাম
শার্টার স্পীড নামিয়ে দিয়েছি দু-এ
তবু তুমি কাঁপবে না জানি
তোমার স্থির চিত্রে, স্থির বিশ্বাসে
আউট অন ফোকাস হবে অন্যসব
অন্য হেজি হেজি দূরের মানুষ
কি নিখুঁত তোমার ছবি দেখে নেবে নির্ভুল সাজ-রূপে
সাদা কামিজের নীল ল্যাস, ট্রান্সপারেন্ট
জুতো জোড়ার আঙুল
কেমন নেইল-পলিসহীন চক চক
আমাকেও যেন তাকিয়ে আছে
ভালোবাসাহীন তোমার স্থির চিত্র নিয়ে।
তবুও আমার হৃদপিণ্ডের লেন্স শোভিত
পুনরায় কেঁপে উঠবে তোমার রূপ আর
প্রেম-অধরার কৌশলে
শ্বাসপতনের অনিবার্য উষ্ণতার
তবে তোমার স্থির চিত্র কখনোই বাতিলযোগ্য হবে না
আমার ভালোবাসার আলোহীনতার এ্যাপার্চারে।
বন্ধু না প্রেমিক
কারো বন্ধু হ’তে পারলাম না
না কারো প্রেমিক!
বন্ধুর ভাষা কি হ্যান্ডসেক
প্রেমিকের ভাষা কি চুম্বন?
আমি হ্যান্ডসেক আর চুম্বনের দূরত্বে
পড়ে আছি বহুকাল
আমার শরীর আর বেড়ে ওঠে না
আমার মন আর বেড়ে ওঠে না
আমি স্থির একটি বিন্দুতে ক্রমশ
ছোট হয়ে আসছি
পৃথিবী আর মানুষের সম্পর্ক
যে রকম ছোট হয়ে আসে
আমি ঠিক সে-রকম নই
আমি প্রেম আর বন্ধুত্বের মাঝখানে
ছোট্ট একটি বিন্দু
যার ব্যাসই আমার অস্তিত্ব
অথচ আমি ব্যাসহীন নিছক একটি বিন্দু
সাদা কাগজের ওপর দীর্ঘকাল
পড়ে আছি একা
যেন বা কোনো সুঁই-ফোটা বুক
ফুসফুসে যার আজন্ম কষ্ট
প্রেমহীনতার, বন্ধুত্বহীনতার।
কারো বন্ধু হ’তে পারলাম কই
না কারো প্রেমিক!
চকলেট আপা
এ বয়সেও চকলেট খান, আপা
চকলেটে কি বয়স যায় মাপা?
আপনি চকলেট আপা।
আপনার ব্র্যান্ড পিকনিক
হুররাফুর্তি বয়সের ধিক্
মানুষেও মোড়ক-রঙ ছোটে চারদিক।
আপনার হাতে আমিও চকলেট
হৃদয়-মোড়ক খুলতে আজও ভারি লেট
কার হাতে হবো যে আবার কাটলেট?
আপনার এজ, আমি ভাঙা ফেস
অকাঠ-দুঃখে সুখ করে নাতো চেঞ্জ
ভালোবাসা পেতে দিতে হয় রেস।
আপনার হৃদয়ে চকলেট-প্রেম
মোড়ক খুললে দেখি রাঙতার জ্যাম
তারও নিচে আছে বুঝি না পাওয়ার হেম।
এ বয়সেও চকলেট খান, আপা
চকলেটে কি বয়স যায় মাপা?
আপনি চকলেট আপা।
ঝর্না
পাহাড়ের চোখ বেয়ে
পানি ঝরছিলো
তুমি দেখতে পাওনি
পাহাড় মৃদু কাঁদছিলো কেন?
আরো জোরে কান্না এলে
সে ঝর্নাকে পেতো।
দিন-রাত্রির চাদর এবং চাকা
রাত আর দিন একই অনুভূতিতে থাকে না
দিনের অনুভূতি একটি চাকা
রাতের অনুভূতি একটি চাদর
তোমাকে ছাড়া সাতটি দিনের অনুভূতি
না সাতটি রাতের অনুভূতি
ভালোবাসার মুখে বলে তোমাকে ছাড়া
একটি দিনও
রাত বড়ো একা, রাতের কথা কেউ তা বলে না
তোমাকে ছাড়া সাতটি দিনের অনুভূতি
না সাতটি রাতের অনুভূতি ছুটে এলো
এ নিয়ে চাকা চাদরের ওপর উঠে গেলো
চাদর চাকাকে জড়িয়ে ধরলো।
তোমাকে ছাড়া আমার দিন-রাত্রির অনুভূতি
এভাবে একটি যুদ্ধের ময়দানে
নিয়তই খণ্ড-শিলা ঠেলে ব্যারিকেড ভাঙে
আর চাকা এবং চাদর সাতটি দিনের জন্যে
সাতটি রাতের জন্যে অপেক্ষায় থাকে।
মেয়েটির হ্যান্ডগ্লোভস
ছেলেটি ছুঁতে চায় মেয়েটির হাত
মেয়েটির হাতে পরা হ্যান্ডগ্লোভস
হাতের উষ্ণতা সে ধরে রেখেছে হাতে
ছেলেটি হাত বাড়ালে তুষারপাত নামে
মেয়েটি ছুটে যায় ঘরের ফায়ারপ্লেসে।
একদিন মেয়েটি গ্লোভস খুলে টেবিলে রাখলো
ছেলেটি ভুল করে গ্লোভসের দিকে হাত বাড়ালো
মেয়েটি তড়িৎ-চমকে পরে নিলো গ্লোভস
তুষারপাতে ঢেকে গেলো ছেলেটির হাত।
জল-বিদ্যুৎ আলো
আমার হাতের টিস্যু পারেনি চুষে নিতে
তোমার চোখের গড়িয়ে পড়া জল
বড় বেদনার্ত দু’ চোখের জলরাশি দেখে
আমি বাঁধ হ’তে পারিনি সেদিন
এ মনস্তাপ নিয়ে আজো হাতের টিস্যু
রাতের ঘুমহীন চাদর হয়, কখনো বা কাফন
এ সন্তাপে মেঘে ডুবে যায় চাঁদ, জ্যোৎস্নাবিহীন।
চির সবুজের রূপসী তুমি
পুরানো হবে না জানি কোনোদিন নিমগ্ন বিশ্বাসে
তোমার শরীরে ঝরে পড়বে কুয়াশার ঘাম
মুছে দেবে সকালের কাঁচা-রোদ সুখের টাওয়েলে
স্বর্ণাভ শরীরের প্রান্তর ছুঁয়ে চিক চিক করবে রোঁয়া
ফসলের ডাক শুনে ছুটে যাবে শ্যামল নাগর।
কিসের দুঃখ তোমার?
আমি তো দেখিনি কখনো, লোকে বলে
চাঁদের কলঙ্ক আছে তবু দেয় জ্যোৎস্নার আলো
আমি সেই আলো চাই তোমার দু’ চোখ ভরা আলো
জল নয়, জল-বিদ্যুৎ আলো।
কে তোমাকে দখলে নেবে নিন্দা আর পিশাচী থাবায়
তুমি সার্বভৌম প্রকৃতি আমার, সুন্দরের
সবুজ মানচিত্র, অবিনশ্বর আলো।
প্লাস, সারপ্লাস
চব্বিশ ঘণ্টা কখনো মাইনাস হয় না
তোমার ভাবনায়
এই দিন-রাত্রির গোপন কাউন্টিং
তোমাকে নিয়ে
যেখানেই যাই পর্বত চূড়ায় কিংবা
কাঁকর সমতলে
তোমার প্রতিটি মুহূর্তের ডিজিটে
আমার আঙুল
প্লাস, আর প্লাস, আরো সারপ্লাস
সৌন্দর্যের ছবি
আঁকতে আঁকতে আরো গুণনের ফল
চব্বিশ ঘণ্টায়ও কখনো মাইনাস হয় না।
দেহ-তীর্থের করাঞ্জলি
স্পর্শে না এলে জড়ুল হয় না প্ৰকাশ
নিম্ন-তটের জঙুল জন্মের শাশ্বত চিহ্নের ফুল
তোমার জঙুলে গোলাপ না পদ্ম ফুটে আছে
ঘ্রাণে কি অঘ্রাণে তোমার শরীরে নামে
ঋতু অগ্রহায়ণ
এখনো পাইনি তার আগমনী সংকীর্তন।
শরীরের কোনখানে জড়ুল-যামিনী ফেলে আলো
তার তিন ভাগ যদি পেতাম আমি
তোমার তিলোত্তমা শরীর জরিপের ছলে
তবে তোমার এ দেহ-তীর্থে করাঞ্জলি দিতাম
প্রাণ খুলে হতাম এক তুষ্ট-পুণ্যবান।
তোমার এ দেহ-স্নানে
আমিও এবার লাঙ্গলবন্দ যাত্রী
শুধু একবার বলে দাও পুণ্যবতী
এ পাপীর জৈবিক তৃষ্ণার নদী তুমি
আর দেখাও জন্ম-জঙুল ফুল
বলো ঠিক এইখানে, তোমার সনাক্তকরণ।
হাতের মুঠোয় চোখ
তোমার দিকে
ঘুরলে যতো লোক
নিখুঁত খাদে
হাতের মুঠোয় চোখ!
মন ধাঁধানো
না চোখ ধাঁধানো
তোমার অহংকার
অন্য বয়স
এক বয়সে তোমায় দেখি
করে হাহাকার!
রূপ-যৌবন
ছুঁতে তোমার
কোন ঋতু যে কাছের
পরাগ রেণুর প্রজাপতি
তোমার চলন মাছের।
তোমার দিকে
ঘুরলে যতো লোক
নিখুঁত খাদে
হাতের মুঠোয় চোখ!
ছুঁয়ে দাও, ওরা বেঁচে যাবে
তোমার ভালোবাসার মুষ্টি-ভিক্ষা চাওয়া
আমার কবিতাগুলো ইচ্ছে না হয়
পড়ো না, শুধু একবার ছুঁয়ে দাও
ওরা বেঁচে যাবে।
তোমাতে দীক্ষিত আমার কবিতারা
বড়ই কাঙাল
দিনভর, রাত্রিভর তোমাকেই ভাবে
তোমার নামের তজবিহ হাতে
বানায় ছন্দ ১০১
শব্দের বাগানে ফোটায় সাতনরি-গোলাপ
তাকে তুমি দেখো আর নাই দেখো
পড়ো আর নাই পড়ো
শুধু একবার ছুঁয়ে দাও, ওরা বেঁচে যাবে।
কবির সমগ্র জীবন-কাব্য
যদি তোমাকেই নিয়ে হয়, তোমাকেই নিয়ে যদি
অমরত্বের পথে যাই এই হতভাগ্য কবি
তবে তোমার ভালোবাসা কি হবে কবিতাবিহীন?
স্বয়ম্বরা
এক পক্ষ ভালোবাসা
যেন কৃষ্ণপক্ষ
মেঘের ফাঁকে চাঁদ লুকাবে
কেমন এ যে যক্ষ?
প্রেমিক যক্ষ আগলে রাখে
স্বয়ম্বরা-প্রেম
স্বয়ম্বরা ঠিক সরে যান
যক্ষ সাজেন মেম।
মেমের হাতে পাহাড় নদী
পর্যটনের নেশা
স্বয়ম্বরা দেখবে কাকে
লোডশেডিং-এ ডেসা?
আছি মন, কবিতার সর্বাঙ্গে
তুমি কাকে আহ্বান করো
কাকে বা সরিয়ে দাও দূরে
কোনটা মনের টান
কোনটা বা শরীরের
পাশ ছুঁয়ে মনে যায়,
মনে যাওয়া
না মন ছুঁয়ে দেহ-পাশে?
তবে দেহের ভঙ্গি কি মনে?
তা দেখে গ্রন্থের চোখ
অক্ষরের উড়ন্ত বিলাস খোঁজে
দেহজ-মেধার বিকল্পে
পূর্ণ করে তোমার মহিমা
কিন্তু রহস্যের দুয়ারে তোমার ঠোঁট
কি করে আমি তবে দেহ-পাশে যাই?
মন-পাশে কতজনা?
মনকে পেছনে ফেলে তোমাকে রচনা হয় না
তাও যদি এক মনে, এক অঙ্গে, একক ধ্যানে।
যদি তুমি ডেকে নাও দেহ-মন এক সাথে
একক আহ্বানে
তবে রচনা করবো আমি কবিতার বর্ষণকাল
আর মেঘে মেঘে বলে যাবো
আমি আছি, আছি মন, আছি দেহে
কবিতার সবুজ সর্বাঙ্গে।
হৃদয়-ভান্তে
পড়েছি এ কোন কঠিন প্রেমের ভানে
হৃদয়-ভান্তে বুঝলো কি করে এ যে সত্যের মানে?
তবুও ভানকে জেনেছি প্রেমের মান
গোপনে কেঁদেছি দিন ভেঙে রাত আধখান
এভাবে চলার পথে শুধু ভানুমতী
জীবন দেখায় আমাকে রঙিন ক্ষতি
প্রাণদণ্ডের সাহসে বেড়েছে প্রেম
প্রেমের সড়কে ভাসছে ট্রাফিক জ্যাম।
এ প্রেম আমার ভণিতা গড়ার সখা
তৃষ্ণায় যতো বুক ফেটে যাক জল পাবে না চখা
তবু যে আমি মরুভূমি নিয়ে কবি
‘মরীচিকা সেন’ দেখে যাই নিরবধি।
সবাই যে দিকে যায়
সবাই যে দিকে যায়
আমি যাই না সেদিকে
যেতে যেতে রাস্তার চিহ্ন
এঁকে যায় মানুষ, সেসব ধূসর বড়ো
আমি ওসব রাস্তার নই
আমি যাই সবুজ সড়কে, ভিন্ন মোড়কে।
যে সড়কে তুমি আছো, শুধু তুমি
ভিন্ন এক রূপে, অমৃত স্বপ্নে
সেখানে দাঁড়িয়ে যাই আমি
ভিক্ষা-পাত্র হাতে সজল ভিখারী যেন
যে পাত্রে তোমার আলোর ছটা
তৃষ্ণার জল হয় অকাল বুদবুদ
যার রঙ সাত রঙে, তৃষ্ণা পুরে না
তবু আমি সেই পথে যাবো
তোমাকে পাবো না শব্দ কিংবা অক্ষরে
যেখানে তোমার রক্ত-মাংস খেলা
বা অন্য কোনো সড়ক-পঙ্ক্তিতে
পাওয়া না পাওয়ার রক্ত-মাংসে।
Leave a Reply