ভয় সমগ্র ২ – মঞ্জিল সেন
ভয় সমগ্র ২ – মঞ্জিল সেন
সম্পাদনা : রঞ্জন মুখোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : জানুয়ারি ২০২০
ভূমিকা
বাংলা লোকসাহিত্য ও পরে কথাসাহিত্যে ভৌতিক বা অলৌকিক গল্পের একটা ধারাবাহিকতা আছে। বাংলার রূপকথা ও উপকথার জগতে বিচিত্র সব ভূতেদের কথা আছে। হিন্দুধর্মে শিবের অনুচরদের মধ্যে ভূত প্রেতদের সংখ্যাধিক্য কিংবা মহাকালীর সহচরীরূপে ডাকিনীযোগিনীদের সক্রিয় অবস্থান তো কিংবদন্তি হয়ে আছে।
কালের বিবর্তনে পরলোকগত ব্যক্তিদের অশরীরী আত্মারা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেন। ত্রৈলোক্যনাথ, রবীন্দ্রনাথ, বিভূতিভূষণ, হেমেন্দ্রকুমার, দীনেন রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র থেকে হাল আমলের শীর্ষেন্দু, প্রচেত, অনীশ, অদ্রীশদের লেখনীতে উত্তমরূপে অশরীরীদের কার্যকলাপ লিখিত হয়েছে। বাংলা কিশোর-সাহিত্যে উপেন্দ্রকিশোর, তারাশঙ্কর, সত্যজিৎ রায়ের মতো সাহিত্যিকরাও ভূতবিজ্ঞান বা ভূত-রসায়ন নিয়ে চর্চা করেছেন।
এ পর্যন্ত বাংলায় যত ভূতের গল্প লেখা হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় ভূতের গল্পের আসল আকর্ষণ হল পরিবেশ, গা ছমছমে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির পটভূমিকায় অশরীরীদের কার্যকলাপ পাঠকের মনোযোগ বেশি আকর্ষণ করে। ভৌতিক আবির্ভাবের আগে রোমাঞ্চকর শিহরন জাগানো পরিবেশ সৃষ্টি যা ভৌতিক বা আতঙ্কের রসায়নকে ঘনীভূত করে।
আর ঠিক এইখানেই লেখক মঞ্জিল সেন একজন সুদক্ষ রসায়নবিদের মতোই তাঁর ভৌতিক বা অলৌকিক কাহিনির রসায়ন তৈরি করেন, যেখানে অদৃশ্য আত্মাদের উপস্থিতি পাঠকের অনুভবে আসার জন্য তৈরি হয়ে যায় উপযুক্ত পরিবেশ। কখনো-বা রহস্যময় কোনো বাড়িতে দুঃস্বপ্নের রাতের হাতছানিতে ঘোর লেগে যাওয়া মানুষ অনুভব করে অশরীরীদের অজ্ঞাত অস্তিত্ব। কখনো-বা অশরীরী শরীরী হয়ে ওঠে, কখনো-বা যা দ্রবীভূত হয়ে ওঠে কোনো বস্তুর মাধ্যমে। ভাষার রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে লেখক পাঠকদের গল্পের ভয়ের পরিবেশ ও চরিত্রদের সঙ্গে একাত্ম করে তোলেন। এখানেই লেখকের কৃতিত্ব। ‘বুক ফার্ম’ এর আগে প্রথম খণ্ডে লেখকের পঁয়ত্রিশটি গল্প সংকলিত করেছিল। আলোচ্য খণ্ডে তাঁরা আরও পঁচিশটি গল্প সংকলনে এনেছেন। সংকলনের গল্প সংগ্রহে রঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সুশান্ত রায় চৌধুরী ও সোনাল দাসের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। সব বয়সের পাঠকদের কাছে গল্পগুলি সমাদৃত হবে আশা করা যায়।
বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়
Leave a Reply