ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
৩৫ টি ভয়ের গল্পের বৃহত্তম সংকলন
Bhoy Samagra by Harinarayan Chattopadhyay
প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১৯
প্রচ্ছদ : সপ্তদীপ দে সরকার
.
আমার পিতা হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
১৯১৬ সালের ২৩ মার্চ কলকাতায় ভবানীপুর অঞ্চলে পৈতৃক ভদ্রাসনে হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। পিতা কালীদাস চট্টোপাধ্যায়। মা নগেনবালা দেবী। জন্মের কিছু পর থেকেই বর্মায় তাঁর কাটে দীর্ঘ পঁচিশ বছর।
১৯৪৮-এ ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘ইরাবতী’। যদিও ধারাবাহিকটি বেরিয়েছিল ‘মোহনা’ নামে। এরপর প্রকাশিত হয় ‘আরাকান’, ‘উপকূল’, ‘অভিষেক’ উপন্যাস। প্রথম চারটি উপন্যাসের মূল উপজীব্য হল বর্মার অধিবাসীদের জীবন, জীবিকা, দৈনন্দিন যাপনের ইতিহাস। সেদেশেই তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবনের সূচনা। রেঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করে রেঙ্গুন কোর্টে আইনজীবীর কর্মজীবন (১৯৩৮-১৯৪০) শুরু করেছিলেন হরিনারায়ণ। ১৯৪০ সালের পর অন্যান্য অনেক ভারতীয়র মতোই তিনি ও তাঁর পরিবার চিরকালের মতো বর্মা ত্যাগ করে কলকাতায় ভবানীপুরের পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসেন। ততদিনে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ, বর্মাদেশে গণ আন্দোলন ছাড়াও রাজনৈতিক নানা অস্থিরতা ঘটে গিয়েছে। সেইসব প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে হরিনারায়ণ ছেড়ে আসা বাল্য কৈশোর যৌবনের ব্রহ্মদেশকে নিয়েই একাধিক উপন্যাস লিখলেন। বর্মার কলেজে পড়বার সময় লেখক ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বিপ্লবীযুবা আউসাং-এর সহকারী ছিলেন। ‘আরাকান’ উপন্যাসের লুন নায়ক চরিত্রকে তিনি আউসাং-এর আদলে তৈরি করেছেন। ‘আরাকান’ শুধু বর্মার স্বাধীনতা যজ্ঞের সমিধ আহরণের ইতিকথা। চরিত্র ও ঘটনার পরিণতি লাভের সম্ভাবনা পরবর্তী ‘অভিষেক’ খণ্ডে।
‘বাতাসে বারুদ’, ‘শহরে বন্দরে’, ‘অভিসারের লগ্ন’, ‘বনকপোতী’, ‘আলোকে তিমিরে’, ‘মেঘলোকে’, ‘মধ্যাহ্নের মেঘ’, ‘ময়ূর ময়ূরী’ ইত্যাদি আরও অনেক উপন্যাস তিনি লিখে গেছেন।
‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় তাঁর প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ৬ জুলাই। লেখাটির নাম ছিল ‘নজর’। ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত রচনাসমূহ হল ‘অন্তরাল’, ‘অলৌকিক’, ‘ওরে ভীরু’, ‘কনে চন্দন’, ‘গ্রহণ’, ‘চোর কাঁটা’, ‘নিখোঁজ’, ‘প্রতিরূপ’, ‘সই’, ‘সর্বনাশ’, ‘সিংহরাশি’, ‘স্বাক্ষর’, ‘ইতিহাস’, ‘কুয়াশা’, ‘জরিপ’, ‘দাদন’, ‘বাঘচাঁদ’, ‘বিকর্ষণ’, ‘বিনিময়’, ‘বোরখা’, ‘সত্যমেব’ ইত্যাদি।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হল সপ্তকন্যার কাহিনী, স্বপ্ন মঞ্জরী, মৃগশিরা, প্রজাপতি মন, জোনাকীর দীপ, সুরবাহার, শঙ্খলিপি।
হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ব্যতিক্রমী চরিত্রের লেখক ছিলেন। জীবনযাপনকে পরিচ্ছন্ন ও নিয়মানুগ রাখতে চেষ্টা করতেন। রাত্রি জেগে লেখার অভ্যেস ছিল না। নির্দিষ্ট সময়ে শয্যাগ্রহণ এবং শয্যা ত্যাগ, আহার গ্রহণেও ছিল নিয়মনিষ্ঠা। তবে সন্দেশ রাবড়ির সঙ্গে গুড় খেতে ভালোবাসতেন। নিয়মিত প্রাতর্ভ্রমণে যেতেন রবীন্দ্র সরোবরে। গল্প লেখার পাশাপাশি ছবিও আঁকতেন।
হাসতেন আর হাসাতে ভালোবাসতেন। প্রখ্যাত কমিক শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসংখ্য জনপ্রিয় রম্যনাটক হরিনারায়ণবাবুর লেখা।
তাঁর লেখা নিয়ে চলচ্চিত্র খুব একটা কম হয়নি। বাংলায় ‘অভিসারিকা’, ‘অশান্ত ঘূর্ণি’, ‘জি টি রোড’ আর হিন্দিতে ‘মুঠঠি ভর চাউল’ সিনেমাগুলি তৈরি হয়। নাটকে অভিনয় করতে ভালোবাসতেন, তাঁর চারু অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে নাটকের নিয়মিত মহড়া হত। বহু বেতার নাটকেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৪৯ সালের ছবি ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’-এ তিনি দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। বহুমুখী প্রতিভাধর মানুষটি লিখেছেন শ্যামাসংগীত, আবৃত্তিতে পেয়েছেন অনেক মেডেল। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালে ‘মতিলাল পুরস্কার’ এবং ১৯৭৬ সালে ‘তারাশঙ্কর পুরস্কার’ লাভ করেন।
শেষ সময় আসে। কলকাতায় বর্মার অধিবাসীদের বার্ষিক অনুষ্ঠান হত ‘বর্মা ফাংশন’ নামে। সেখানে হরিনারায়ণবাবুকে ছাড়া চলত না। ১৯৮১ সালে সেই উৎসবে তিনি রবীন্দ্রনাথের ‘দুঃসময়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান। নিয়ে যাওয়া হয় রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু জ্ঞান আর ফেরেনি। ১৯৮১ সালে ২০ জানুয়ারি তিনি স্ত্রী পুত্র কন্যাদের ফেলে চিরকালের মতো চলে যান।
হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের যাবতীয় ভয়ের গল্পকে দুই মলাটে প্রকাশ করার প্রয়োজন ছিল। যেখানে তাঁর ভৌতিক গল্পের পাশাপাশি স্থান পাবে সবকটি অলৌকিক, অতীন্দ্রিয়, অতিপ্রাকৃত তথা পারলৌকিক ব্যাখ্যাতীত গল্প।
সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমার অনুমতিক্রমে ‘বুক ফার্ম’ থেকে প্রকাশিত হল হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ৩৫ টি ভয়ের গল্পের বৃহত্তম সংকলন ‘ভয় সমগ্র’। এই প্রচেষ্টার জন্য ‘বুক ফার্ম’-কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি বইটি পাঠকের ভালো লাগবে।
* হরিনারায়ণের একই প্লটের ভৌতিক কাহিনি ভিন্ন নামেও প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, ‘টান’ গল্পটি ‘ভৌতিক’ নামে এবং ‘আমরা আছি’ গল্পটি ‘আমরা ভূতেরা’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইতে ‘টান’ ও ‘আমরা আছি’ নামে গল্প সংকলিত হল।
তপতী দেবী
২০.০৬.২০১৯
Debjit Patra
This site is awesome and very helpful for book lovers
KRISHNENDU CHAKRABARTY
Send on my adress alipur dadpur Hooghly 712305