ভবিষ্য পুরাণ / ভবিষ্যপুরাণম্ – মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বিরচিতম্
(১ম ও ২য় খণ্ড একত্রে)
(মূল সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ সমেত)
[সংস্কৃত-অংশ প্রুফরীড করা হয়নি]
তন্ত্রজ্ঞপ্রধান পণ্ডিতপ্রবর কুলাবঘৃতাচার্য্য বীরাচারীসাধক শ্রীমৎ স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি) কৃত অনুবাদ ও সম্পাদনা
নবভারত পাবলিশার্স
ভূমিকা
ব্রহ্মময়ীর ইচ্ছায় দীর্ঘ পাঁচ বৎসরের প্রচেষ্টাকে সার্থক ভাবে ফলপ্রসু করে ও নানা বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে নবভারত পাবলিশার্স থেকে ভবিষ্য পুরাণের বঙ্গানুবাদ সহ শোভন সংস্করণ প্রকাশিত হল। প্রকাশক সংস্থার কর্ণধার বঙ্গভাষায় পুরাণ ও তন্ত্রগ্রন্থ প্রকাশনার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। প্রয়াত রণজিৎ সাহার একান্ত ইচ্ছা ছিল যে অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও প্রধান উপপুরাণগুলি বঙ্গাক্ষরে মূল ও ভাষানুবাদ সহ প্রকাশিত হোক। ভবিষ্যপুরাণ প্রকাশ পেয়ে তাঁর সেই ইচ্ছা পূর্ণ হল। নিঃসন্দেহে এই গ্ৰন্থ সনাতন ভারতীয় ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও শাস্ত্রীয় ঐতিহ্যের চর্চায় আগ্রহী বিদ্বজ্জনের মনোরঞ্জন করবে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ীর তন্ত্রশাস্ত্র চর্চা ও প্রকাশনার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই পুরাণটি প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করি।
ঐতিহ্যের দৃষ্টিতে ভবিষ্যপুরাণ ব্যাস প্রণীত অষ্টাদশ মহাপুরাণের অন্যতম। পুরাণ পঞ্চলক্ষণযুক্ত–
‘সর্গশ্চ প্রতিসর্গশ্চ বংশো মন্বন্তরাণি চ।
বংশানুচরিতঞ্চৈব পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্’।
ভবিষ্যপুরাণেও পুরাণের লক্ষণ অনুসারে সৃষ্টিতত্ত্ব, বিভিন্ন মনুর শাসনকাল, রাজবংশ ও ঋষিবংশ সমূহের বর্ণনা এবং নানা পৌরাণিক ইতিবৃত্ত সন্নিবেশিত হয়েছে। অধিকন্তু এই পুরাণটিতে বিশেষভাবে ভাবী কলিযুগের বিস্তৃত বর্ণনা আছে। এই প্রসঙ্গেই বর্ণিত হয়েছে ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাস— হিন্দু রাজগণের নানা কীৰ্ত্তি, মুসলমান শাসকবর্গের পরিচয়, ইস্লামিক ও খ্রীষ্টিয় পুরাকথার সঙ্কলন, ইউরোপীয় শাসকদের প্রসঙ্গ। শঙ্করাচার্য্য, রামানুজ, শ্রীচৈতন্যদেব, রামানন্দ, কবীর, নানক, মীরাবাঈ প্রমুখের উল্লেখ ও পৌরাণিক ইতিবৃত্ত এই পুরাণে আছে। দেহলী, কলিকাতা প্রভৃতি নগরীর নাম ও কতিপয় আরবী-ফারসী শব্দের সংস্কৃত নিরুক্তি পাওয়া যায় এই পুরাণে। অর্ব্বাচীন ভারতেতিহাসের এই পৌরাণিক বিবরণ অত্যন্ত কৌতুহলজনক।
আধুনিক বস্তুবাদী বিচারে এই পুরাণের অর্ব্বাচীনত্ব স্বভাবতই সুস্পষ্ট। বিশেষতঃ পৌরাণিক সাহিত্যে প্রক্ষিপ্ত অংশকে অস্বীকার করা যায় না। তবে ঐতিহ্যমূলক দৃষ্টির স্বপক্ষে এটুকুই বলা যায় যে ইতিহাস-পুরাণ সর্ব্বদাই বেদার্থকে প্রপঞ্চিত করে। বৈদিক জ্ঞান ও কর্ম্মে অনধিকারী মানুষ পুরাণ কথার মধ্য দিয়েই পুরুষার্থ লাভ করে। শাস্ত্রীয় ঐতিহ্যে পুরাণ সর্ব্বদাই বেদানুসারী স্মৃতি। বেদমূলক স্মৃতি হিসাবেই পুরাণের প্রামাণ্য স্মার্ত্ত-ব্রাহ্মণ্য পরম্পরায় স্বীকৃত। তাই অর্ব্বাচীন ভারতেতিহাস স্মার্ত-ব্রাহ্মণ্য দৃষ্টিতে কিভাবে ধরা দিয়েছিল তার মনোজ্ঞ বিবরণ পাওয়া যাবে ভবিষ্যপুরাণে। তা ছাড়া অধুনা প্রচলিত বহু ব্রতোৎসব, পূজা, ক্রিয়াকর্ম্ম ও ক্রিয়াবিধি প্রপঞ্চিত হয়েছে ভবিষ্যপুরাণে। ধর্ম্মনিষ্ঠ সদাচারী সাধকের কাছে এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। সব মিলে ভবিষ্যপুরাণের এই প্রকাশনা শাস্ত্রচর্চ্চার মন্দীভূত ধারায় নূতন স্রোত সঞ্চারিত করার কাজে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলেই আশা রাখি
গ্রন্থ সম্পাদনার কাজে অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে। প্রুফ দেখে দিয়েছে আমার সেবক নকুলানন্দনাথ ভৈরব। নবভারত পাবলিশার্স কর্তৃপক্ষকে জানাই আশীৰ্ব্বাদ।
অলমতিবিস্তরেণেতি শম্—
ভবদীয়,
শ্রীমৎ স্বামী পরমাত্মানন্দনাথ ভৈরব (গিরি)
শ্রী শ্রী ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ী
৪/২/বি, শীতলা মাতা লেন,
ন-পাড়া, কল- ৯০
Leave a Reply