বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন – মুহম্মদ আবদুল হাই
দ্বিতীয় সংস্করণ বৈশাখ ১৪১৫ বঙ্গাব্দ
রবিউল আউয়াল ১৪২৯ হিজরি
ভূমিকা
‘বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন’ গত শতকের মাঝামাঝিতে রচিত। মুহম্মদ আবদুল হাই রচিত এ বইটি অর্ধশতাব্দী পূর্বে ভ্রমণ কাহিনী হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ১৯৫০ সালের দিকে বহির্বিশ্বের ছবি বা কাহিনী বাংলাভাষায় খুব কমই বই হিসেবে মানুষের হাতে এসেছে। মিলেনিয়াম যুগের সাথে সে যুগের আকাশ পাতাল পার্থক্য। আজ অর্থ থাকলেই পুরো বিশ্ব ঘুরে দেখা যায়। ঘরে বসেও বিশ্বকে জানা যাচ্ছে। সে সময় এত সহজভাবে তা সম্ভব ছিল না। বিলেত, আমেরিকা, জাপান ইত্যাদি বহির্বিশ্বে যেতে হলে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে মানুষকে। উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য অনেক চেষ্টা করে বিদেশে যেতে হতো। আমার পিতা মুহম্মদ আবদুল হাই উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন এবং তার অধ্যবসায় ও মেধার জোরে ডিষ্টিংশনসহ উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করে তৎকালীন বাংলাভাষায় ধ্বনিবিজ্ঞানকে রাজ-আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এ ভাবে জ্ঞান মার্গের এক নতুন দিগন্ত আবিষ্কারের দ্বার স্বচেষ্টায় উন্মোচন করেছিলেন তিনি।
ধ্বনিবিদ মুহম্মদ আবদুল হাই তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনকে যেমন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে অনুধাবন করেছিলেন, তেমনি তকালীন বৃটিশ সভ্যতাকেও উপলব্ধি করেছিলেন নিগূঢ় তাৎপর্যে। লন্ডনের প্রকৃতি, মাটির রূপরসগন্ধ, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও দৈনন্দিন জীবনের মাঝে লুকিয়ে থাকা বহমান সভ্যতা, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা বিষয়কে তিনি লেখনীর মাধ্যমে ছবির মত ফুটিয়ে তুলেছেন এই গ্রন্থে।
আগেই বলেছি বইটি অর্ধশতাব্দী পূর্বে রচিত। কতখানি স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও গতিশীল মনের অধিকার জন্মালে এবং মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে সংবেদনশীল হলে এমন লেখা সম্ভব হয়, গ্রন্থটি তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইংল্যান্ডে লেখকের অবস্থানকালে সেখানকার সামাজিক রীতিনীতি ও জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের পার্থিব দৃষ্টিভঙ্গিটি তিনি লক্ষ্য করেছেন একজন সমাজ বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে। স্বদেশানুরাগ ও স্বদেশের হিত চিন্তা তাঁর মধ্যে ছিল বলেই তঙ্কালীন বাংলাদেশের সাথে (সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান) তুলনা করে উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে থাকা আমাদের দেশ ও জাতির দুর্বলতাকে তুলে ধরেছেন লেখক। মনে হয় উন্নত সভ্যতার আলো আমাদের দেশে তথা সমাজে এসে প্রবেশ করুক তাই তিনি চেয়েছিলেন।
বইটিতে একত্রিশটি পরিচ্ছেদ আছে। তৎকালীন সময়ের লন্ডনের নানা গুরুতুপূর্ণ বিষয় নিয়ে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ভাষায় লিখে গেছেন লেখক।
এ বইটি দীর্ঘদিন পর পুনঃ মুদ্রণের উদ্দেশ্য হল লেখকের এমন একটি চমৎকার প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা ভ্রমণকাহিনী বর্তমান প্রজন্মের হাতে তুলে দেয়া ও সেই সাথে অর্ধশতাব্দী পূর্বের ইংরেজ সমাজের চিত্র, এবং ইতিহাসের সাথে এখনকার পাঠকদের পরিচয় ব্যাপক ও গভীর করতে সাহায্য করা।
আজকের নতুন প্রজন্ম এ গ্রন্থখানি পাঠ করে লন্ডন তথা বিলেত ও বিলেতবাসী ইংরেজদের তৎকালীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট সুন্দর ও আনন্দময় ধারণা গ্রহণ করে নিজেদের চিত্ত ও চিন্তার সমৃদ্ধি ঘটাতে সক্ষম হবে এ প্রত্যাশা রাখি।
হাসিন জাহান
নীপবন শিশু বিদ্যালয়
দক্ষিণ ক্যাম্পাস,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
২৬ নভেম্বর ২০০১
পুনশ্চ : বর্তমান সংস্করণে অল্প কিছু স্থানে দু’ একটি শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। যথা, ৩০ ডিগ্রী ফাঃ কে ৩২ ডিগ্রী ফাঃ করা হয়েছে (পৃ. ১৮)। ‘হালাল’ স্থলে ‘জবাই’ (পৃ. ২৩) বলা হয়েছে। ১০৩ পৃষ্ঠায় ‘আগ্নেয়াস্ত্র’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। হ্যামস্টেড স্টেশন (পৃ. ৫৫) আঠারো তলা বলা আছে। স্বচ্ছতার জন্য বন্ধনীতে সঠিক তথ্য ১৯০ ফুট উল্লেখিত হলো, যা আসলে আঠারো তলার সমউচ্চ বোঝায়। অন্যান্য সামান্য সংযোজন Text-এর মধ্যেই সম্পাদকীয়তার খাতিরে যুক্ত করা হয়েছে।
হা. জা.
উৎসর্গ
আমার পুত্র ও কন্যাদের হাতে
Leave a Reply