বিবাহ ও নৈতিকতা – বার্ট্রান্ড রাসেল
বিবাহ ও নৈতিকতা – বার্ট্রান্ড রাসেল
.
০১. ভূমিকা
আধুনিক বা প্রাচীন, যেকোনো সামাজের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত দুটি পদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এর একটি হলো অর্থনৈতিক পদ্ধতি অন্যটি পারিবারিক পদ্ধতি।
বর্তমানে যে দুটি প্রভাবশালী চিন্তাধারা প্রচলিত আছে তার মধ্যে একটি মতবাদ বিশ্বাস করে, সবকিছুর উৎস হলো অর্থনীতি। অপর মতবাদ বিশ্বাস করে, যাবতীয় ঘটনা এসেছে পারিবারিক অথবা যৌন উৎস থেকে। প্রথম মতবাদের প্রবক্তা মার্কস, শেষোক্ত মতবাদটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রয়েড।
যেহেতু মূল সম্বন্ধীয় কার্যকারিতার দিক থেকে বিচার করলে বলা যায়, অর্থনীতি ও যৌনত্বের পারস্পরিক সম্পর্কে এমন যে, একে অন্যের ওপর সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব করতে পারে না। তাই ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো মতবাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী নই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, শিল্পবিপ্লব যৌন নৈতিকতার ওপর সবিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে। বিপরীত দিকে পিউরিটিয়ানদের যৌন গুণাবলি, শিল্পবিপ্লবের মনস্তাত্ত্বিক কারণ। আমি অর্থনৈতিক বা যৌনত্ব কোনোটার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে পারছি না।
আমার মনে হয় না, এই দুটি মন্তব্যকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করা যেতে পারে। অর্থনীতির মূল তত্ত্ব নিহিত আছে খাদ্য সগ্রহের মধ্যে। কিন্তু খাদ্য কি শুধুমাত্র মানুষের একক সত্তার জন্য আহরিত হয়? এটি সমগ্র পরিবারের জন্য সংগৃহীত হয়। তাই পারিবারিক পদ্ধতির রূপান্তরের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক চাহিদারও রূপান্তর ঘটে।
যদি পিতা-মাতার কাছ থেকে শিশুদের নিয়ে এসে প্লেটোর রিপাবলিকের আদর্শ রাষ্ট্র দ্বারা প্রতিপালিত করা হয়, তাহলেও পরিণতি অনিবার্য শুধুমাত্র জীবন বীমাই নয়, ব্যক্তিগত সঞ্চয়ের সবকটি ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। একথা বলার অর্থ হলো রাষ্ট্র পিতা-মাতার স্থান গ্রহণ করবে। অর্থাৎ সেই রাষ্ট্র নিজেই হবে একক পুঁজিবাদী।
সুসংবদ্ধ সাম্যবাদীরা এই মতবাদের বিরোধিতা করে। তারা বিশ্বাস করে, যদি রাষ্ট্রকে একক পুঁজিবাদী শক্তিতে পরিণত করা হয় তাহলে পরিবারের অস্তিত্ব থাকে না। এই মতাদর্শ সম্পর্কে মন্তব্য না করেও ব্যক্তিগত সম্পত্তির সঙ্গে পরিবারের অন্তরঙ্গ সংযোগের উপযোগিতা অস্বীকার করা যায় না। এটি হলো পারস্পরিক আত্মীয়তা, তাই আমরা কোনো একটিকে কার্য ও অপরটিকে কারণ বলে অভিহিত করতে পারি না।
যেকোনো গোষ্ঠীর যৌননৈতিকতা স্থাপিত আছে কয়েকটি স্তরে। প্রথমটি আইনের ওপর নির্ভরশীল আশাবাদী মতাদর্শ। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, কোন কোন দেশে এক বিবাহ এবং অন্যত্র বহু বিবাহ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। পরবর্তী স্তরের আইন বাধা সৃষ্টি করে না কিন্তু জনগণের বিশ্বাসের ওপর জোর দেওয়া হয়। সর্বশেষ স্তরটিকে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ওপর রাখা হয়েছে। অবশ্য তত্ত্বগতভাবে এটি সুপ্রযুক্ত হলেও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে গ্রহণীয়।
পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই বিশ্বের ইতিহাসে এমন কোনো কাল নেই, যেখানে যুক্তিকেন্দ্রিক মনোভাব দ্বারা যৌননৈতিকতা ও যৌনমতাদর্শ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম সোভিয়েত রাশিয়া। অবশ্য একথা দ্বারা আমি বোঝাতে চাইছি না যে, এক্ষেত্রে সোভিয়েত রাশিয়ার চিন্তাধারা ত্রুটিহীন। আমি শুধু বলতে চাই, তারা কুসংস্কার ও ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত নয়। যদিও অন্যান্য সকল দেশে, সর্বকালে এই মতবাদের অন্তরালে ঐ দুটি বিষয় কাজ করেছে।
জনগণের সার্বিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য সমৃদ্ধির জন্যে কি ধরনের যৌননৈতিকতা গ্রহণযোগ্য করা হবে, তা হলো চরম জটিল বিষয়। এবং যার উত্তর নির্ভর করে নানা অব্যবস্থার ওপর। আদিম কৃষিভিত্তিক গোষ্ঠীর সমস্যার সঙ্গে উন্নত শিল্পসমৃদ্ধ গোষ্ঠীর সমস্যাবলির তফাত আছে। যে সমাজে উন্নততর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিদ্যা মৃত্যুহারকে কমিয়ে দিয়েছে, তার সঙ্গে সেই সমাজের পার্থক্য আছে, যেখানে প্লেগ ও মহামারীতে জনসংখ্যার বিরাট অংশ অপ্রাপ্ত বয়সে মারা যায়।
বাস্তবিকপক্ষে, জ্ঞানবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা সহজেই বলতে পারবো, এই পরিবেশে গ্রহণযোগ্য যৌননৈতিকতার সঙ্গে অন্য পরিবেশের অনেক তফাত। শুধু তাই নয়, এক ধরনের খাদ্যে অভ্যস্ত সমাজের সঙ্গে অন্য ধরনের খাদ্যে অভ্যস্ত সমাজে এটির রূপান্তর হয়।
যৌননৈতিকতার প্রভাবকে নানাভাবে বিভক্ত করা যায় ব্যক্তিগত, যুগল, পারিবারিক, স্বাদেশিক ও আন্তর্জাতিক। হয়তো এমন দেখা যায়, কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রভাব সৎ, এবং অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে অসৎ। এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত করার আগে চিন্তা করতে হবে, গৃহীত পদ্ধতির ভারসাম্য বিষয়ে আমরা কি ধরনের চিন্তাভাবনা করতে পারবো?
একান্তভাবে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে শুরু করা যাক। এই প্রভাবগুলি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের অঙ্গ। আমরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ দ্বারা গঠিত বয়স্ক সত্তার প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করবো না, আমরা সেই নিয়ন্ত্রণের প্রতি অনুগত প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কেও আলোচনা করবো। সকলেই অবগত আছেন যে, এই ক্ষেত্রে প্রাথমিক নিষেধের প্রভাব হলো অতিমাত্রায় বিস্ময় উৎপাদনকারী এবং প্রত্যক্ষ আলোচিত বিষয়ের এই বিভাগে আমরা ব্যক্তির সুখ স্বাচ্ছন্দ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
আমাদের সমস্যার পরবর্তী স্তরে আমরা নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবো। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, কয়েক প্রকার যৌন সম্পর্কের মূল্যায়ন হয় অন্যভাবে। অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে একমত হবেন,শুধুমাত্র শরীর কেন্দ্রিক যৌন সম্পর্ক অপেক্ষা মানবিক আবেগধর্মী সম্পর্ক শ্রেয়। অবশ্য কবির হৃদয় থেকে সুসভ্য নর-নারীর সাধারণ চেতনার স্তরে সংযোজিত হয়েছে যে-চিন্তা তা হলো প্রেমের প্রাবল্য, যা প্রেমিক-প্রেমিকার ব্যক্তিসত্তায় অনুপ্রবেশের ওপর নির্ভরশীল। এটি কিন্তু বিতর্কিত বিষয়। আধুনিক মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ বিশ্বাস করে যে, প্রেম হলো সম সম্পর্কিত এদিক দিয়ে বিচার করলে বহু বিবাহকে আদর্শ পদ্ধতি বলা যাবে না। এই বিষয়কে বর্তমান বিভাগের সর্বত্র আমাদের চিন্তা করতে হবে বিবাহ ও বহিবৈবাহিক উভয় সম্পর্ক নিয়ে।
বিবাহের যেকোনো পদ্ধতি চালু থাকুক না কেন, বহিবৈবাহিক সম্পর্ক তাকে অনুসরণ করে।
.
এবার আমরা পরিবারের প্রশ্নে আসছি। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে কর্তৃত্ব স্থাপিত এবং ধীরে ধীরে এক-বিবাহযুক্ত পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বহু-বিবাহযুক্ত পরিবারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যৌন নৈতিকতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো, যে গুণটির অবর্তমানে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার অসম্ভব, সেই গুণটি অর্থাৎ নারীজাতির সম্মানকে বজায় রাখা। কেননা পিতৃত্বে ব্যাপারটি অনিশ্চিত। প্রায় খ্রিস্টান যুগ থেকে পশ্চিমের সভ্যতায় এই উদ্দেশ্যটি ধারাবাহিকভাবে লালিত হয়েছ। খ্রিস্টান ধর্ম পৌরুষত্বকে সুদৃঢ় করে তার মনত্মাত্ত্বিক উৎসকে করেছে তাপসিক। যদিও গত কয়েক বছরের মধ্যে রমণীসুলভ ঈর্ষাবোধ সেই ধারাকে পুনঃপ্রযুক্ত করেছে। যে ধারাটি রমণিদের আত্মত্যাগে বিলুপ্ত হয়েছিল অবশ্য এই ধারাটিকে তাৎক্ষনিক বলা যেতে পারে। কেননা, আকৃতি দেখে আমরা বিচার করতে পারি যে, রমণিরা এমন একটি পদ্ধতির প্রতি আকর্ষিতা হবে। বা উভয়কেই দেবে স্বাধীনতা, পুরুষকে স্বেচ্ছাচারী করে নারীজাতিকে কঠিন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখবে না।
.
এক বিবাহকেন্দ্রিক পরিবারের নানা বৈচিত্র্য আছে। পাত্র-পাত্রী নিজেরাই বিবাহ পর্ব সমাধান করে অথবা পিতামাতা সাহায্য করেন।
কোন কোন দেশে পাত্র-পাত্রীকে ক্রয় করা হয়, যেমন ফ্রান্সে পাত্রকে ক্রয় করা হয়। বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পর্কে মতপার্থক্য আছে।
গোড়া ক্যাথলিকরা বিচ্ছেদকে স্বীকার করে না। আবার প্রাচীন ধর্ম অনুসারে যেকোনো স্বামী সামান্য কারণে তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারে।
যৌন সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অথবা উপ-ধারাবাহিকতার উদ্ভব হয়েছে জানোয়ারদের মধ্যে, পরে তা মানব সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য, তরুণদের প্রতিপালনের জন্য পুরুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। উদাহরণ দিয়ে আমরা পাখির কথা বলতে পারি, যারা সর্বক্ষণ ডিমের উপর বসে তাকে উত্তপ্ত রাখে আর খাদ্য সংগ্রহের জন্য সারাদিনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করে।
একটিমাত্র পাখি দুটি কাজ করতে পারে না।
তার ফলে পুরুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর ফল হলো এই, অধিকাংশ পক্ষিদম্পতিকে পুণ্যের প্রতিক হিসেবে ধরা হয়।
মানব সমাজে নবজাতকের জৈবিক নিরাপত্তার জন্য পিতার সহযোগিতা কাম্য, বিশেষ করে যুদ্ধের সময় এবং ক্রুদ্ধ জনতার মধ্যে। আধুনিক সভ্যতার শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র এসে দ্রুত অধিকার করছে পিতার আসন। তাই একথা ভাববার অন্তরালে যুক্তি আছে যে, অর্থ উৎপাদনকারী সমাজে পিতাকে আর জৈবিক দিক থেকে অপরিহার্য বলে গণ্য করা হবে না। যদি এটি ঘটে তাহলে আমরা ঐতিহ্য সম্পন্ন নৈতিকতার সার্বিক ধ্বংসকে আশা করতে পারি।
যদিও একথা মনে করার কোন অর্থ নেই যে, একজন মা কেন তার সন্তানের পিতৃত্বের জন্য সুদূর নিরাপত্তার সন্ধান করবে। প্লেটো আমাদের আরো একধাপ অগ্রগামী করে রাষ্ট্রকে যে শুধুমাত্র পিতার আসনে বসাতেন, তাই নয়, মাতার স্থানটিও সে গ্রহণ করত।
ব্যক্তিগতভাবে আমি রাষ্ট্রকে অন্ধভাবে শ্রদ্ধা করি নাঃ অথবা অনাথ আশ্রমের হর্ষোৎফুল্লতা দ্বারা আকৃষ্ট নই। অর্থনৈতিক শক্তিসমূহই যে এই ব্যবস্থাকে কিছু পরিমাণে আরোপিত করেছে, সেটা অসম্ভব নয়।
যৌন সম্পর্কিত আইনটি দুটি ভিন্নমুখি পথে অগ্রসর হয়েছে। একদিকে এটি গোষ্ঠী দ্বারা ব্যবহার্য যেকোনো যৌননৈতিকতাকে সন্দেহের চোখে দেখে। অন্যদিকে এটি রক্ষা করে যৌন সম্পর্কে একক মানুষের সাধারণ অধিকার। শেষোক্ত পথটির আছে দুটি অধ্যায় প্রথমত এটি নারীজাতি ও শিশুকে অপমান ও ক্ষতিকারক শোষণের হাত থেকে রক্ষা করে, অপর দিকে এটি যৌনরোগের বিরুদ্ধে সতর্কতা অবলম্বন করে। এ দুটির কোন একটিকে শুধুমাত্র তার নিজস্ব গুণাবলি দ্বারা বিচার করা যায় না। সেই কারণে তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী হতে পারে নি।
প্রথম মত সম্পর্কে বলা যায়, শ্বেত ক্রীতদাস সম্পর্কিত বিচিত্র প্রচারের দ্বারা এমন আইনের উৎপত্তি হয়েছে যাকে লঙ্ঘন করবে ব্যবহারিক অসম্পূর্ণতা। তাই সাধারণ মানুষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার উপায়গুলি উদ্ভাবন করা গেছে। শেষোক্ত মতবাদ সম্পর্কে বলা যেতে পারে যে, চিকিৎসা দ্বারা যে ব্যাধির প্রতিকার হতে পারে সেই যৌনরোগকে পাপ হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যে তার্কিক মনোবৃত্তির পরিচয় মেলে না। এর ফলে যৌনরোগের প্রতি নিষিদ্ধ পাপবোধ গড়ে উঠেছে এবং তার ফলে এই রোগকে সঠিকভাবে নিরাময় করা সম্ভব হয় না।
এবার আমরা জনসংখ্যার প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব। এই সমস্যাটি এত ব্যাপক ও বৃহৎ যে, একে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করতে হবে। জননীর স্বাস্থ্যের প্রশ্ন শিশুর স্বাস্থ্যের প্রশ্ন এবং শিশুর চরিত্র গঠনে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র পরিবারের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে। এগুলিকে এই সমস্যার স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক বিষয়রূপে অভিহিত করা যায়। এছাড়া আছে অর্থনৈতিক বিষয়, ব্যক্তিগত এবং সর্বজনীন বিষয়, পরিবারের মাথাপিছু সম্পত্তির হার, পরিবারের গঠনের তুলনায় গোষ্ঠীর গঠনের অনুপাত এবং গোষ্ঠীর জন্মহার। জনসংখ্যার সমস্যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বিশ্বশান্তির সম্ভাব্যতার প্রশ্ন দুটি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত।
সর্বোপরি, এতে জড়িত আছ সমাজের বিভিন্ন স্তরের জন্ম ও মৃত্যুহার দ্বারা সম্পত্তির উন্নতি অথবা বিনাশের বুদ্ধিসম্মত প্রশ্নটি। উপরে বর্ণিত সবকটি সমস্যার যথাযোগ্য আলোচনা না হলে কোনো যৌন নৈতিকতাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণীয় অথবা নিন্দনীয় বলা যাবে না।
প্রগতিপন্থিরা ও প্রতিক্রিয়াশীলেরা সমভাবে এই সমস্যার একটি দুটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে অভ্যস্ত। ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণগুলির সংযুক্তি কারণ হলো বিরলতম ঘটনা। এবং একথা বলা অসম্ভব যে, এ দুটির মধ্যে কোনো একটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কখনোই বলতে পারি না, যে পদ্ধতিটিকে ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে যথাযথ বলে মনে হয় সেটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রুটিহীণ বিপরীতভাবে একই কথা বলা যায়। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, বেশির ভাগ সময় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জটিল মনস্তাত্ত্বিক কারণ মানুষকে অপ্রয়োজনীয় নিষ্ঠুরতা সম্পন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য করছে এবং বর্তমান যুগের সুসভ্য জাতির মধ্যেও এই মনোভাব বজায় আছে।
আমি আরো বিশ্বাস করি যে, চিকিৎসাবিদ্যা ও স্বাস্থ্যবিদ্যার উন্নতি, ব্যক্তিগত ও সার্বজনীন দৃষ্টিকোণ হতে উদ্ভূত বোধ নৈতিকতার রূপান্তর গঠন করছে। আগেই বলা হয়েছে, যে শিক্ষাব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকা পিতার সেই ভূমিকাকে ক্রমশ খর্ব করে দিচ্ছে। যে ঐতিহ্য যে ঐতিহাসিক যুগযুগান্ত থেকে বহন করে এসেছে। বর্তমান নীতিকথার আলোচনায় আমরা দুটি কথা মনে রাখবো–একদিকে আমরা অবচেতন হতে উদভূত কুসংস্কারের মৌলগুলিকে বাতিল করব: অন্যদিকে আমরা সেইসব সম্পূর্ণ নতুন বিষয়গুলির সম্পর্কে আলোচনা করবো যা বর্তমান জ্ঞানের কাছে অতীত যুগের জ্ঞানকে দূর্বল করেছে।
বর্তমানে যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়ার আগে আমি আরো কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই। এর মধ্যে কয়েকটি অতীতে প্রচলিত ছিল আর কয়েকটি এখনও প্রচলিত আছে মানব সমাজের অপেক্ষাকৃত কম সভ্য অংশের মধ্যে। তারপর আমি পশ্চিমা সভ্যতার প্রচলিত পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করবো এবং অবশেষে আমি অনুধাবন করার চেষ্টা করবো–কেন এই পদ্ধতিকে পরিশোধন করতে হবে। আর যেসব বিষয় দ্বারা সেই পরিশোধন সম্ভব হবে তা নিয়ে আলোচনা করবো।
Leave a Reply