বাইবেল : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং
বাইবেল : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং
অনুবাদ – শওকত হোসেন
প্ৰথম প্ৰকাশ – একুশে বইমেলা ২০১১
লেখকের উৎসর্গ :
এইলিন হেস্টিংস আর্মস্ট্রংয়ের স্মৃতির উদ্দেশে
অনুবাদকের উৎসর্গ :
আয়েশা তাসনিম আলী
বাবা
.
ভূমিকা
মানুষ অর্থ সন্ধানী প্রাণী। আমরা আমাদের জীবনের কোনও ধরনের নকশা বা তাৎপর্য খুঁজে না পেলে সহজেই হতাশায় ডুবে যাই। ভাষা আমাদের এই অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা যোগাযোগের কেবল একটা অত্যন্ত জরুরি উপায়ই নয়, বরং আমাদের অন্তস্থ জগতের নানান সামঞ্জস্যহীন অস্থিরতা প্রকাশ ও তাকে স্পষ্ট করে তুলতে সাহায্য করে। আমাদের বাইরে কোনও কিছু ঘটাতে চাইলে আমরা ভাষা ব্যবহার করি। আমরা হয় নির্দেশ দিই বা অনুরোধ জানাই, তখন যেভাবেই হোক আমাদের চারপাশের পরিবেশ বদলে যায়, তা যতটা সূক্ষ্মভাবেই হোক না কেন। কিন্তু কথা বলার সময় আমরা কিন্তু একটা কিছু ফিরেও পাই: কোনও ধারণাকে কেবল ভাষায় প্রকাশ করেই আমরা একে চাকচিক্য বা আবেদন দান করি, আগে যা ছিল না। ভাষা খুবই রহস্যময় ব্যাপার। যখন কোনও শব্দ উচ্চারিত হয়, বায়বীয়কে রক্তমাংসের রূপ দেওয়া হয়; বক্তব্যের জন্যে প্রয়োজন ভাবমূর্তি-শ্বাসপ্রশ্বাস, পেশি নিয়ন্ত্ৰণ আর জিভ ও দাঁত। ভাষা এক জটিল সঙ্কেত, গভীর বিধিবিধানে বন্দি এক সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে যাকে সমন্বিত করা হয়েছে; এই ব্যবস্থা বক্তার কাছে অস্পষ্ট থেকে যায় যদি তিনি প্রশিক্ষিত ভাষাবিদ না হন। তবে ভাষার আবার সহজাত অপর্যাপ্ততাও রয়েছে। সব সময়ই কিছু না কিছু অব্যক্ত থেকে যায়। এমন কিছু যা বোধগম্য নয়। আমাদের বক্তব্যই মানব সভ্যতার দুৰ্জ্জেয় অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমাদের সজাগ করে তোলে।
এই সবই আমাদের ইহুদি ও ক্রিশ্চান উভয়ের পক্ষেই ঈশ্বরের বাণী বাইবেল পাঠের ধরনকে প্রভাবিত করেছে। ধর্মীয় উদ্যোগের ক্ষেত্রে ঐশীগ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়েছিল। প্রায় সব প্রধান ধর্মবিশ্বাসেই মানুষ বিশেষ কোনও টেক্সটকে পবিত্র ও অধিবিদ্যিকভাবে অন্যান্য দলিল হতে ভিন্ন বিবেচনা করে এসেছে। এইসব রচনাকে তারা তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা, সর্বোচ্চ আশা- আকাঙ্ক্ষা ও গভীরতর ভীতির সাথে বিপুল মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। এবং রহস্যময়ভাবে বিনিময়ে টেক্সটও তাদের একটা কিছু দিয়েছে। পাঠকগণ এইসব রচনায় উপস্থিত সত্তার মতো কিছুর মুখোমুখি হয়েছে। সেটাই আবার তাদের এক দুজ্ঞেয় মাত্রার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ঐশীগ্রন্থের উপর ভিত্তি করে বাস্তব, আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে জীবন গড়ে তুলেছে তারা। পবিত্র টেক্সট যখন কোনও গল্প বলে, লোকে সাধারণভাবে সেগুলো সত্যি হিসাবে বিশ্বাস করে, কিন্তু অতি সাম্প্রতিক কাল অবধি আক্ষরিক বা ঐতিহাসিক সত্যতা কোনও ব্যাপার ছিল না। ঐশীগ্রন্থের সত্যকে আচরিক বা নৈতিক দিক থেকে চর্চা করা না হলে বিচার করা সম্ভব নয়। যেমন বৌদ্ধ ঐশীগ্রন্থ বুদ্ধের জীবন সম্পর্কে পাঠককে খানিকটা ধরণা দান করে, তবে কেবল সেইসব বর্ণনাই অন্তর্ভুক্ত করেছে যেগুলো বৌদ্ধদের আলোকন লাভ করার জন্যে অবশ্য করণীয় সম্পর্কেই শিক্ষা দেয়।
আজকাল ঐশীগ্রন্থের বাজে একটা নাম হয়েছে। সন্ত্রাসীরা তাদের নিষ্ঠুরতাকে ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করতে কু’রানকে ব্যবহার করে; কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে মুসলিমদের ঐশীগ্রন্থের সহিংসতাই তাদের লাগাতার আগ্রাসী করে তুলেছে। ক্রিশ্চানরা বিবর্তনবাদের শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়, কারণ বাইবেলিয় সৃষ্টি তত্ত্বের সাথে এর বিরোধ রয়েছে। ইহুদিদের যুক্তি হচ্ছে ঈশ্বর যেহেতু কানানকে (আধুনিক ইসরায়েল) আব্রাহামের বংশধরদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাই প্যালেস্তাইনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত নিষ্ঠুরতা ন্যায়সঙ্গত। ঐশীগ্রন্থের এক ধরনের পুনর্জন্ম ঘটেছে, সাধারণ মানুষের জীবনে তা হানা দিতে শুরু করেছে। ধর্মের সেক্যুলারিস্ট বিরোধীরা দাবি করছে, ঐশীগ্রন্থ সহিংসতা, উপদলীয় কোন্দল ও অসহিঞ্চুতার জন্ম দেয়। মানুষকে আপন চিন্তাভাবনা হতে বিরত রাখে ও প্রবঞ্চনাকে উস্কে দেয়। ধর্ম যদি সহানুভূতিরই শিক্ষা দেবে তাহলে পবিত্র টেক্সটে কেন এত সহিংসতা? বিজ্ঞান যেখানে এত অসংখ্য বাইবেলিয় শিক্ষাকে নাকচ করে দিয়েছে সেখানে কি আর এখন কারও পক্ষে ‘বিশ্বাসী’ থাকা সম্ভব?
ঐশীগ্রন্থ যেহেতু এমনি বিষ্ফোরক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে, তাই জিনিসটা আসলে কী আর কী নয়, সেসম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। বাইবেলের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এই ধর্মীয় বিষয়টির উপর কিছুটা আলো ফেলেছে। উদাহরণ স্বরূপ, এটা উল্লেখ করা জরুরি যে, বাইবেলের সম্পূর্ণ আক্ষরিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ একেবারেই সাম্প্রতিক কালের ঘটনা। উনবিংশ শতাব্দীর আগে খুব কম লোকই জেনেসিসের প্রথম অধ্যায়কে জীবনের উৎসের বাস্তব ভিত্তিক বর্ণনা ভাবত। শত শত বছর ধরে ইহুদি ক্রিশ্চানরা দারুণ রকম উপমা ও উদ্ভাবনী ধরনের কাহিনী উপভোগ করে এসেছে, জোর দিয়ে বলেছে বাইবেলের সম্পূর্ণ আক্ষরিক পাঠ যেমন সম্ভব নয় তেমনি কাঙ্ক্ষিতও নয়। বাইবেলিয় ইতিহাস নতুন করে লিখেছিল তারা, নতুন নতুন মিথ দিয়ে বাইবেলের কাহিনীকে প্রতিস্থাপন করেছে এবং জেনেসিসের প্রথম অধ্যায়কে বিস্ময়করভাবে ভিন্ন কায়দায় ব্যাখ্যা করেছে।
ইহুদি ঐশীগ্রন্থ ও নিউ টেস্টামেন্ট উভয়ই মৌখিক ঘোষণা হিসাবে সূচিত হয়েছিল। এমনকি লিপিবদ্ধ হওয়ার পরেও অন্যান্য ট্র্যাডিশনে উপস্থিত মৌখিক ভাষ্যের প্রতি পক্ষপাত রয়ে গিয়েছিল। একেবারে শুরু থেকে মানুষ ভয়ের সাথে ভেবে এসেছে যে লিখিত ঐশীগ্রন্থ অটলতা ও অবাস্তব ক্ষতিকর নিশ্চয়তার সৃষ্টি করে। অন্য তথ্যের মতো ধর্মীয় জ্ঞান পবিত্র পাঠের উপর স্রেফ চোখ বুলিয়ে আয়ত্ত করা যায় না। প্রাথমিকভাবে ঐশী অনুপ্রাণিত বাণী বলেই দলিলসমূহ ‘ঐশীগ্রন্থে’ পরিণত হয়নি, সেটা হয়েছে লোকে সেগুলোকে ভিন্নভাবে বিবেচনা করতে শুরু করেছিল বলে। বাইবেলের গোড়ার দিকের বছরগুলোয় এটা নিশ্চিতভাবেই সত্যি। কেবল আচরিক পরিপ্রেক্ষিতে স্থাপন করার পর সাধারণ জীবন ও সেক্যুলার চিন্তা ধারা হতে বিচ্ছিন্ন হয়েই বাইবেল পবিত্র হয়ে ওঠে।
ইহুদি ও ক্রিশ্চানরা তাদের ঐশীগ্রন্থকে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধার সাথে দেখে। সিনাগগে তোরাহ স্ক্রোলই পবিত্রতম, একটা ‘আর্কে’ মূল্যবান আবরণে ঢেকে রাখা হয়; লিটার্জির ক্লাইমেক্সের সময় তা বের করা হয়, তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে গোটা জমায়েতের ভেতর ঘোরানো হয় সেটাকে। প্রার্থনার চাদরের গোছা দিয়ে ওটা স্পর্শ করে তারা। কোনও কোনও ইহুদি এমনকি প্রাণপ্রিয় কোনও বস্তুর মতো স্ক্রোল বুকে জড়িয়ে ধরে নাচেও। ক্যাথলিকরাও মিছিলে বাইবেল বহন করে, সুগন্ধিতে ভরিয়ে রাখে ওটাকে, পাঠ করার সময় উঠে দাঁড়ায়, কপাল, ঠোঁট ও বুকের উপর ক্রস চিহ্ন আঁকে। প্রটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের কাছে বাইবেল পাঠ সমাবেশের সর্বোচ্চ বিন্দু। কিন্তু তারচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক অনুশীলন যেখানে খাদ্যাভ্যাস, অঙ্গভঙ্গি ও গভীর মনোসংযোগের সাথে অনুশীলনের ব্যাপার রয়েছে; বহু আগে থেকেই যা ইহুদি ও ক্রিশ্চানদের মনের ভিন্ন অবস্থায় বাইবেল পাঠে সাহায্য করে এসেছে। এভাবে তারা অন্ত নিহিত অর্থ পাঠ করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে, আবিষ্কার করেছে নতুন কিছু, কারণ বাইবেল সবসময়ই যা বলেছে তারচেয়ে বেশি কিছু বোঝায়।
গোড়া থেকেই বাইবেলের কোনও একক বাণী ছিল না। সম্পাদকগণ ইহুদি ও ক্রিশ্চান টেস্টামেন্টসমূহের অনুশাসন স্থির করার সময় কোনও রকম মন্তব্য ছাড়াই বিরোধপূর্ণ ভাষ্য গ্রহণ করে পাশাপাশি স্থাপন করেছেন। প্ৰথম থেকেই বাইবেলিয় রচয়িতাগণ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া টেক্সট স্বাধীনভাবে পরিবর্তন করে গেছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ দান করেছেন। পরবর্তীকালের ব্যাখ্যাকারগণ বাইবেলকে তাদের সময়ের বিভিন্ন সমস্যার মানদণ্ড হিসাবে ধারণ করেছেন। অনেক সময় নিজেদের বিশ্বদৃষ্টির বিকাশে একে কাজে লাগিয়েছেন, কিন্তু আবার ইচ্ছামতো বদলেছেনও যাতে সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার সাথে তা খাপ খেতে পারে। তারা আসলে বাইবেলের বিভিন্ন অনুচ্ছেদের মূল অর্থ জানার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিলেন না। বাইবেল ‘প্রমাণ’ করেছে যে, এটা পবিত্র কারণ মানুষ অব্যাহতভাবে একে ব্যাখ্যা করার নিত্য নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে, তারা আবিষ্কার করেছে, প্রাচীন এই দলিলগুচ্ছ এমন সব পরিস্থিতিতে আলো ফেলতে পারছে যা তাদের রচয়িতাগণ কোনওদিনই কল্পনা করেননি। প্রত্যাদেশ ছিল অবিরাম প্রক্রিয়া। সিনাই পাহাড়ের দূরবর্তী কোনও থিওফ্যানিতে তা রুদ্ধ ছিল না। ব্যাখ্যাকাররা প্রতি প্রজন্মে ঈশ্বরের বাণীকে শ্রবণযোগ্য করে গেছেন।
বাইবেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্তৃপক্ষ জোর দিয়েছেন যে, দয়া অবশ্যই তর্জমাকরীর অন্যতম পরিচালনাকারী নীতি হতে হবে। ঘৃণা বা অসম্মান সৃষ্টি করতে পারে এমন ব্যাখ্যা বৈধ নয়। সব বিশ্বধর্মই দাবি করে যে সমবেদনা কেবল প্রকৃত ধার্মিকতার মূল গুণ ও পরীক্ষাই নয়, বরং এটাই আমাদের আসলে নির্বানা, ঈশ্বর বা দাও-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বাইবেলের ইতিহাস ধর্মীয় অনুসন্ধানের যুগপৎ সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরে। বাইবেলের রচয়িতা ও ব্যাখ্যাকারগণ প্রায়শঃই তাদের সমাজে প্রকট হয়ে ওঠা সহিংসতা, নিষ্ঠুরতা ও বর্জনবাদের কাছে নতি স্বীকার করেছেন।
মানুষ এক্সতাসিস কামনা করে-তাদের স্বাভাবিক জাগতিক জীবন থেকে ‘বাইরে আসতে’ চায়। সিনাগগ, চার্চ বা মসজিদে এই পরমানন্দের খোঁজ না পেলে নাচ, গান, খেলা, যৌনতা বা মাদকের শরণাপন্ন হয়। মানুষ গ্রাহী ও স্বজ্ঞাপ্রসূতভাবে বাইবেল পাঠ করার সময় আবিষ্কার করে যে এটা তাদের দুয়ের অনুভূতি যোগাচ্ছে। সর্বোচ্চ ধর্মীয় অন্তর্দৃষ্টির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পূর্ণতা ও একত্বের বোধ। একে কোইন্সিদেন্সিয়া অপোজিতোরাম: এই তুরীয় আনন্দের মুহূর্তে ভিন্ন এমনকি পরস্পবিরোধী মনে হওয়া বস্তুসমগ্র মিলে গিয়ে অপ্রত্যাশিত একতা তুলে ধরে। বাইবেলের স্বর্গোদ্যানের কাহিনী আদিম সামগ্রিকতার এই অভিজ্ঞতারই বিবরণ দেয়। ঈশ্বর ও মানুষ বিচ্ছিন্ন ছিলেন না, বরং একই স্থানে বাস করতেন: নারী-পুরুষ লিঙ্গ পার্থক্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিল পশুপাখি ও প্রাকৃতিক জগতে মিলেমিশে বাস করত তারা; শুভ ও অশুভের ভেতরও কোনও পার্থক্য ছিল না। এমন একটা অবস্থায় এক্সতাসিসে –অর্থাৎ পরস্পরবিরোধী সাধারণ জীবনের বিচ্ছিন্ন প্রকৃতি থেকে ভিন্নতায়-বিভেদকে অতিক্রম করে যাওয়া হয়। মানুষ তাদের ধর্মীয় আচারের এই ইডেনিয় অভিজ্ঞতা নতুন করে সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
আমরা যেমন দেখব, ইহুদি ও ক্রিশ্চানরা বাইবেলের পাঠের এক পদ্ধতি গড়ে তুলেছিল যা প্রকৃতিগতভাবে সম্পর্কহীন বিভিন্ন টেক্সটের ভেতর যোগাযোগ গড়ে তুলেছে। টেক্সটচুয়াল পার্থক্যের প্রাচীর ক্রমাগত ভেঙে এক ধরনের কোইন্সিদেন্সিয়া অপোজিতোরাম অর্জন করেছিল তারা, অন্যান্য ঐশীগ্রন্থের ঐতিহ্যেও এর চল রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কু’রানের সঠিক ব্যাখ্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুদূর অতীত কাল থেকেই ভারতের আর্যরা ঋগ বেদের সম্পর্কহীন বিভিন্ন বস্তুকে আপাত একসূত্র গাথা শ্লোকসমূহের বিভিন্ন ধাঁধা ও বৈপরীত্য শোনার সময় বিশ্বের নানামুখী উপাদানকে ঐক্যবদ্ধ রাখা রহস্যময় শক্তি ব্ৰহ্মাকে উপলব্ধি করার প্রয়াস পেয়েছে। ইহুদি ও ক্রিশ্চানরা যখন তাদের বৈপরীত্যমূলক ও বহুস্তরবিশিষ্ট ঐশীগ্রন্থের ভেতর একসূত্র আবিষ্কারের প্রয়াস পায়, তখন তারাও স্বর্গীয় একত্বের ধারণা লাভ করে। ব্যাখ্যাকরণ একাডেমিক প্রয়াস নয় বরং সব সময়ই আধ্যাত্মিক অনুশীলন ছিল।
মূলত ইসরায়েলি জনগণ জেরুজালেম মন্দিরে এই এক্সতাসি অর্জন করেছিল, স্বর্গোদ্যানের প্রতীকী প্রতিমূর্তি হিসাবে নির্মিত হয়েছিল মন্দিরটি। ওখানেই তারা শালোমের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল: সাধারণভাবে শব্দটিকে ‘শান্তি’ হিসাবে অনুবাদ করা হয়ে থাকে, তবে আসলে ‘সামগ্রিকতা, সম্পূৰ্ণতা’ হিসাবে অনুবাদ করাই ভালো। মন্দির ধ্বংস করে ফেলার পর এক ট্র্যাজিক, সহিংস বিশ্বে ভিন্নভাবে শালোমের সন্ধান করতে হয়েছে তাদের। দুই দুইবার তাদের মন্দির ভুমিসাৎ করা হয়, প্রতিবার ধ্বংস হওয়ার পর তারা বাইবেলে পরিণত হতে চলা দলিলে উপশম ও ছন্দ সন্ধান করলে ঐশীগ্রন্থ নিয়ে মাতামাতির এক নিবিড় কাল সূচিত হয়েছিল।
Leave a Reply