বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা – বিনয় ঘোষ
বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা (১৮০০-১৯০০) – বিনয় ঘোষ
‘সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র’ গ্রন্থমালার শেষ (সমাপ্ত) খণ্ড
প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ১৯৬৮
.
পরিমার্জিত সংস্করণ প্রসঙ্গে প্রকাশকের কথা
‘বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা’—র প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ১৯৬৮—তে গ্রন্থকার কর্তৃক ৪৭/৩ যাদবপুর সেন্ট্রাল রোড কলিকাতা—৩২ থেকে প্রকাশিত হয়। ঐ বইটিতে লেখা হয়েছিল—’ভারত সরকারের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্তর্গত আঞ্চলিক ভাষা উন্নয়ন উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আনুকুল্যে প্রাপ্ত আর্থিক সাহায্যের জন্য এই গ্রন্থের সুলভ মূল্য সম্ভব হয়েছে।’ বইয়ের দাম ধার্য হয়েছিল সতেরো টাকা। পরবর্তীকালে বইটি পৃথকভাবে আর ছাপা হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেন প্রকাশ ভবন।
নতুন করে প্রকাশ করার সময় আমাদের অবলম্বন করতে হয়েছে পূর্ব প্রকাশের মুদ্রণ। কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু মুদ্রণপ্রমাদ লক্ষ করা যায়। সে-সব সাধ্যমতো সংশোধন করা হয়েছে। এবং লেখক ও তাঁর লেখাকে যথাযথ মর্যাদা দিতে আমরা যত্ন নিয়েছি ছাপা ও সামগ্রিক প্রকাশনার বিষয়ে। নির্ঘণ্ট প্রস্তুত করেছেন শ্রী সত্যব্রত ঘোষাল। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
.
গ্রন্থপ্রসঙ্গে
‘সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজচিত্র’ গ্রন্থমালার পরিকল্পনা করা হয় ১৯৫৯ সালে। প্রথম সংগ্রহের কাজ আরম্ভ হয় ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা নিয়ে, এবং প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় জানুয়ারি ১৯৬২ সালে। তারপর ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ ‘সম্বাদ ভাস্কর’ ‘বেঙ্গল স্পেক্টেটর’ ‘বিদ্যাদর্শন’ ‘সর্বশুভকরী পত্রিকা’ ‘সোমপ্রকাশ’ প্রভৃতি দুষ্প্রাপ্য পত্রিকার সংকলন দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। বহু গ্রন্থাগার ও ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে পত্রিকাগুলি সন্ধান করে, তার ভিতর থেকে উপকরণ—নির্বাচন করে, কপি করে, সম্পাদনা করে এক—একটি খণ্ডের কাজ শেষ করতে অনেক সময় লেগেছে। প্রায় দশ বছর লাগল কাজটি শেষ করতে। আত্মজীবনী, জীবনস্মৃতি, চরিতকথা, বংশবৃত্তান্ত ও পারিবারিক বৃত্তান্ত প্রভৃতি সামাজিক ইতিহাসের উপাদান আমাদের দেশে অত্যল্প বলে পুরাতন সাময়িকপত্রের এই উপাদানের মূল্য ও গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
‘বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা’ (১৮০০—১৯০০) এই গ্রন্থমালার শেষ (সমাপ্ত) বা উপসংহার—খণ্ড। এখানে উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিহাসের বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি, প্রধানত সমাজতাত্ত্বিক (Sociological) দৃষ্টিতে। পূর্বের চার খণ্ডের ‘সম্পাদকীয়’ প্রবন্ধে ও ‘প্রাসঙ্গিক তথ্যে’ উনিশ শতকের বাংলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। আমার লেখা ‘বাংলার নবজাগৃতি’ ‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালী সমাজ’ (তিন খণ্ড) ‘বিদ্রোহী ডিরোজিও’ ‘কলকাতা কালচার’ প্রভৃতি গ্রন্থেও উনিশ শতকের বাংলার সামাজিক ইতিবৃত্ত আলোচিত হয়েছে। কাজেই বর্তমান গ্রন্থে তার পুনরাবৃত্তি করিনি, সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টি দিয়ে বাঙালি সমাজের পরিবর্তনের মৌল ধারা ও প্রকৃতি বিচারের প্রয়াস পেয়েছি। দুঃসাহসিক প্রয়াস সন্দেহ নেই, কিন্তু ইতিহাসের গতিধারা বিশ্লেষণে অন্তত কিছুটা দুঃসাহসিক না হলে হয়ত নতুন চিন্তা ও দিঙ্নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
বিনয় ঘোষ
.
নিবেদন
পৃথক Bibliogrphy অনাবশ্যকবোধে দেওয়া হল না, কারণ প্রত্যেক অধ্যায়ের শেষে বিস্তৃত ‘নির্দেশিকা’ দেওয়া হয়েছে।
গ্রন্থে সন্নিবেশিত চিত্রাবলি সংগ্রহ করেছি বিভিন্ন পুরাতন চিত্রসংকলন থেকে। যেমন :
B. Solvyns : A Collection of Two Hundred and Fifty Coloured Etchings, Descriptive of the Manners, Customs and Dresses of the Hindoos : Calcutta 1799
Charles Doyley : The European in India, London 1813.
Colesworthy Grant : Rural Life in Bengal, London 1860
বসন্তক ১২৭৯—৮০ : বাংলা ব্যঙ্গপত্র। প্রাণনাথ দত্ত সম্পাদিত।
শ্রীরাধাপ্রসাদ গুপ্ত W. Taylor অঙ্কিত দুষ্প্রাপ্য চিত্রটি (পৃষ্ঠা ১৬) তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে দিয়েছেন। এজন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। গ্রন্থে মুদ্রিত চিত্রটি আসল চিত্রের অংশবিশেষ। মূল চিত্রটি কলকাতার লাটভবনে হার্ডিঞ্জের আমলে শিখ যুদ্ধে বিজয়োৎসবের চিত্র।
বিনয় ঘোষ
Leave a Reply