বাংলাদেশের ইতিহাস – ৩য় খণ্ড (আধুনিক যুগ) – রমেশচন্দ্র মজুমদার
বাংলা দেশের ইতিহাস – তৃতীয় খণ্ড [আধুনিক যুগ] ১৭৬৫-১৯০৫
ভারততত্ত্ব-ভাস্কর শ্রীরমেশচন্দ্র মজুমদার, এম-এ, পিএইচ-ডি, ডি-লিট
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ১৯৭১
.
প্রসঙ্গকথা (বর্তমান সংস্করণ)
প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস লেখার পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এর বড় কারণ সমকালে লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়নি। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলায় রাজ পৃষ্ঠপোষকতায় দরবারী ইতিহাসও লেখা হয়নি। ফলে সাহিত্যের সূত্র, পর্যটকদের বিবরণ এবং সামান্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান ব্যবহার করে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস লেখা আধুনিক কালের একটি প্রয়াস বলা যেতে পারে। মধ্যযুগের ইতিহাস লেখায় বাড়তি সুযোগ এসেছে দিল্লিতে বসে সুলতান ও মোগল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় লেখা দরবারী ইতিহাস। এসব সূত্র ব্যবহার করে লেখা ইতিহাস রাজনৈতিক ইতিহাসের গণ্ডি পেরুতে পারেনি অনেক কাল পর্যন্ত। সেই অর্থে সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাস লেখা একেবারে সাম্প্রতিককালের প্রয়াস। এমন বাস্তবতার আদি সময়ে অনেকটা শূন্যতার মধ্য দিয়েই রমেশচন্দ্র মজুমদারকে ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ নামে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস লেখার যাত্রা শুরু করতে হয়েছিল। গত শতকের চল্লিশের দশকে রমেশ চন্দ্র মজুমদার যখন বাংলা ভাষায় বাংলার ইতিহাস লেখার পরিকল্পনা করেন তার অনেক বছর আগে অনেকটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে লেখা দুটো মাত্র গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। এর একটি ‘গৌড়রাজমালা’। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদ রাম প্রসাদ চন্দের এই বইটি বাংলা ১৩৩৯ সাল অর্থাৎ ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এটি পূর্ণাঙ্গ কোনো বাংলার ইতিহাস নয়। তবু বাংলার ইতিহাস রচনার পথে একটি দৃঢ় পদক্ষেপ বলা যায়। এর দুই বছর পর বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা ভাষায় রচনা করেন ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’। এরপর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই খণ্ডে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাস লেখার প্রকল্প গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত হয় গ্রন্থ দুটো হবে ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের প্রবন্ধের সংকলন। প্রাচীন যুগের গ্রন্থটি রমেশচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায় (R. C. Majumdar) The History of Bengal-Volume-1, Hindu Period) নামে ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হয়। রমেশচন্দ্র মজুমদার আশা করেছিলেন গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগত আগ্রহে ও দায়বোধ থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাচীন যুগপর্বের বাংলাদেশের ইতিহাস লেখায় আত্মনিয়োগ করেন।
এই গ্রন্থ রচনায় রমেশচন্দ্র মজুমদার একজন মেধাবি ঐতিহাসিকের স্বাক্ষর রাখতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় নিজেই উল্লেখ করেছেন এই গ্রন্থ তিনি টিকা টিপ্পনির ভারে ভারাক্রান্ত করতে চাননি। সহজবোধ্যভাবে যেন পাঠক আত্মস্থ করতে পারে। অথচ তারপরেও নানা তথ্যে সমৃদ্ধ একটি অভিজাত ইতিহাস গ্রন্থই তিনি উপস্থাপন করেছিলেন।
আমরা দেখেছি বিশ শতক পর্যন্ত কালপরিসরের মধ্যে অল্প কয়েকজন ইতিহাসবিদের প্রয়াস ছাড়া প্রায় সকল ইতিহাস গ্রন্থই রাজনৈতিক ইতিহাসে আটকে ছিল। সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস চর্চা তেমনভাবে অগ্রসর হয়নি। এর বড় কারণ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস লেখার মত তথ্য সূত্রের অভাব। সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্নসূত্র অনুসন্ধানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় নতুন করে বাংলার রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাস লেখার ধারা শুরু হয়েছে।
অথচ রমেশচন্দ্র মজুমদারের ব্যক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা সূত্র-সংকটের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সাহায্য করেছে। তাই তাঁর গ্রন্থে (বাংলাদেশের ইতিহাস) অত্যন্ত সার্থকভাবে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের একটি ধারাবাহিকতা উপস্থাপিত হয়েছে অনেকটা স্পষ্টভাবেই।
ইতিহাসে একটি কথা রয়েছে যে ইতিহাস বা ইতিহাসের ঘটনা বার বার ফিরে আসে। এজন্যই হয়তো বলা হয় ইতিহাসে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায় না। শেষ সত্যে পৌঁছা যায় না, তবে নতুন নতুন তথ্যে বার বার সংস্কার করে সত্যের দিকে এগিয়ে চলা যায়। রমেশচন্দ্র মজুমদার যে সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাস রচনা করেছিলেন তখন প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্র প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিজ মেধা প্রয়োগ করে তিনি অনেক বাধাই অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।
একারণেই তাঁর গ্রন্থে রাজনৈতিক ইতিহাসের পাশাপাশি প্রাচীন বাংলার সমাজ, ধর্ম, শিল্পকলা সকল কিছুই অত্যন্ত গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রমেশচন্দ্র মজুমদার ছিলেন একজন বিদগ্ধ ইতিহাসবিদ। একজন ইতিহাস পাঠককে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস জানানোর জন্য যেভাবে সূচি বিন্যাস করা দরকার তিনি এই গ্রন্থে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা করতে পেরেছেন। ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক অবস্থান বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে পাঠককে পরিচিত করিয়েছেন বাংলাদেশের সাথে। নৃতাত্ত্বিক নানা বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে চিহ্নিত করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এই জাতির উৎপত্তি ও বিকাশ ধারা উন্মোচিত হয়েছে। রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাক্রম আলোচনায় অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে শাসকদের শাসনকালের বর্ণনা করেছেন গ্রন্থকার।
আমরা বলতেই পারি প্রাচীন বাংলার ইতিহাস রচনায় সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস বিশেষ করে শিল্প ইতিহাস রচনার পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর গ্রন্থের শেষ পর্বে।
অবশ্য ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ পাঠ করা সমালোচকদের অভিযোগ রয়েছে রমেশচন্দ্র মজুমদারের মধ্যে কিছুটা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছে। কারণ তিনি হিন্দুদের পাশাপাশি সাধারণ মুসলমানদের কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই ম্লেচ্ছ ও যবন বলে অভিহিত করেছেন তাঁর গ্রন্থে। কোনো কোনো জায়গায় ধর্মসম্প্রদায়ের প্রসঙ্গ বিশ্লেষণে কিছুটা একদেশদর্শিতার সংকট রয়েছে। অবশ্য বঙ্গভঙ্গোত্তর বাংলায় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যে বিরোধের দেয়াল তৈরি করা হয়েছিল তাতে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির মুসলমান ও একই ধারার হিন্দু-অবস্থান পুরুষানুক্রমে টিকে ছিল। আর. সি. মজুমদারের ইতিহাস চর্চা কখনো কখনো খুব সীমিতভাবে হলেও সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতাকে এড়াতে পারেনি। পাঠক যদি সময়ের বাস্তবতা মেনে পাঠ করেন তবে খুব একটা অস্বস্তিতে পরতে হবে না।
এ কথাটি ঠিক রমেশচন্দ্র মজুমদার যখন গবেষণা করেন তখন প্রত্নউপাদানের অনেকটাই আবিষ্কৃত হয়নি। তাই কোনো কোনো ঘটনা বা সন তারিখ সচেতন মানুষের কাছে ভুল মনে হতে পারে। যেমন তিনি বখতিয়ার খলজির নদীয়া আক্রমণের তারিখ ১২০২ বলেছিলেন। এই তারিখ নিয়ে দীর্ঘকাল পর্যন্ত গবেষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছিল। প্রায় আড়াই দশক আগে আমরা বখতিয়ার খলজির মুদ্রা শনাক্ত করতে পারি। আর মুদ্রা উত্তীর্ণের তারিখ যাচাই করে বলতে পারি নদীয়া আক্রমণের তারিখটি ছিল ১২০৪। ইতিহাস লিখনের এটিই রীতি। এভাবেই যুগে যুগে সংশোধিত হয় প্রাপ্ত নতুন উপাদান ব্যবহার করে। তাই ‘বাংলা দেশের ইতিহাস’ গ্রন্থে এজাতীয় তথ্য ভুল না ভেবে নির্দিষ্ট সময়ের সিদ্ধান্ত বলে মানতে হবে।
পাশাপাশি বখতিয়ার খলজি (ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি) প্রসঙ্গে বর্তমান গ্রন্থটিতে আরেকটি বিশ্লেষণ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মত প্রকৃত ইতিহাসবিদের দৃষ্টিভঙ্গিকে স্পষ্ট করছে। ইতিহাসের একটি ভুল ব্যাখ্যা দীর্ঘদিন থেকে আমরা বহন করে আসছিলাম। আর তা হচ্ছে ‘বখতিয়ারের বঙ্গ বিজয়’। ১৯৯৬-এ এনসিটিবির পাঠ্য বই, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য বই ইত্যাদিতে সংস্কার করে আমরা লিখছি বখতিয়ারের অধিকৃত অঞ্চল ‘বঙ্গ’ নয় নদীয়া ও লখনৌতি। অর্থাৎ প্রাচীন জনপদ ‘বঙ্গে’র সীমানায় বখতিয়ার প্রবেশ করেননি। আবার বখতিয়ারের অনেক পরে মানচিত্রে বাংলা বা বাংলাদেশ নামে একটি ভূখণ্ড চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে ১৩৫২-৫৩ খ্রিস্টাব্দে সুলতান শামস উদ্দিন ইলিয়াস শাহ পুরো বাংলাকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর। সুতরাং বখতিয়ার প্রকৃত অর্থে বাংলা বা বঙ্গ বিজেতা নন। বাংলায় মুসলিম বিজয়ের দ্বারোঘাটন করেছিলেন মাত্র। অথচ অত আগে প্রত্নসূত্র না থাকলেও নিজ প্রজ্ঞা দিয়ে রমেশচন্দ্র মজুমদার একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যায় ইতিহাসের সত্যটিই উপস্থিত করেছিলেন অত্যন্ত সার্থকভাবে। বর্তমান গ্রন্থের পাঠক মাত্রই ড. মজুমদারের অমন পাণ্ডিত্যের ছোঁয়ায় মুগ্ধ হবেন।
মুদ্রণ না থাকায় এই অসাধারণ গ্রন্থটি দীর্ঘকাল সহজলভ্য ছিল না। দিব্যপ্রকাশ ধ্রুপদী ইতিহাস গ্রন্থ পুণঃমুদ্রণ করে, অনুবাদ করিয়ে প্রকাশ করায় একটি প্রতীকী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। রমেশচন্দ্র মজুমদারের বাংলা দেশের ইতিহাস’ গ্রন্থটি প্রকাশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলো। দিব্যপ্রকাশের কর্ণধার প্রীতিভাজন সুলেখক মঈনুল আহসান সাবের যখন প্রকাশের পূর্বে এই বইখানির একটি ভূমিকা লিখে দিতে বললেন, তখন আমি বিব্রতবোধ করছিলাম। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মত ঐতিহাসিকের গ্রন্থের ভূমিকা লেখা আমার মত অর্বাচীনের সাজে না। কিন্তু সাবের ভাইয়ের অনুরোধ ফেলা মুশকিল। তাই ভূমিকা নয়- গ্রন্থ প্রসঙ্গে দুএকটি কথা বলার সুযোগটুকু নিলাম।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ
অধ্যাপক
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
.
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
বাংলা দেশের ইতিহাস, তৃতীয় খণ্ড প্রকাশিত হইল। দ্বিতীয় খণ্ডে মুসলমান বিজয় হইতে আরম্ভ করিয়া ইংরেজরাজ্য প্রতিষ্ঠান সূচনা–অর্থাৎ, ১৭৬৫ সনে ঈস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ানি প্রাপ্তি পর্যন্ত আলোচিত হইয়াছে। এই খণ্ডে ইংরেজের অধীনতাপাশ হইতে মুক্তিলাভ পর্যন্ত–অর্থাৎ, ১৭৬৫ হইতে ১৯৪৭ সনের ইতিহাস বর্ণিত হইবে এইরূপ পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, গ্রন্থের কলেবর বর্ধিত হওয়ায় বর্তমান খণ্ডে ১৯০৫ সন পর্যন্ত বাংলা দেশের ইতিহাস আলোচিত হইল। এই বৎসর বাংলা দেশ দুই ভাগে বিভক্ত করায় দেশময় যে তীব্র আন্দোলন উপস্থিত হয় তাহাই ভারতের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম পর্ব বলিয়া অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন। বাংলা দেশ যে কেবল বিয়াল্লিশ বৎসরব্যাপী এই সংগ্রামের অগ্রদূত ছিল তাহা নহে, ইহার সফলতালাভে বাংলা দেশের অবদান ভারতের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলিয়া চিরদিন গণ্য হইবে। এই স্বাধীনতার সংগ্রামে বাঙালী যে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করিয়াছিল তাহার বিবরণ, বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন বিস্তৃতভাবে আলোচিত হইবার যোগ্য। সুতরাং [৬৪০ পৃষ্ঠাব্যাপী] তৃতীয় খণ্ডের উপসংহারে সংক্ষেপে ইহার আলোচনা না করিয়া ইহার জন্য পৃথক একটি খণ্ড নির্দিষ্ট হইল।
এই তৃতীয় খণ্ডটি বাংলা দেশের আধুনিক যুগের ইতিহাসের প্রথম ভাগ মাত্র। পরবর্তী চতুর্থ খণ্ডে আধুনিক যুগের ইতিহাস সম্পূর্ণ হইবে। বাংলার বীর সন্তানেরা মাতৃভূমির উদ্ধারের জন্য যে সাহস, বীরত্ব, কারাবরণ, কঠোর নির্যাতন ও আত্মবলিদানের দৃষ্টান্ত রাখিয়া গিয়াছেন, তাহার সম্বন্ধে বহু বিবরণ ক্রমশঃ প্রকাশিত হইতেছে। সুতরাং এই যুগের প্রকৃত ইতিহাস একখানি মহাকাব্য বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। চতুরশীতি বৎসর বয়স্ক বৃদ্ধ গ্রন্থকারের পক্ষে এই মহাকাব্য রচনা সম্ভবপর না হইলেও ভবিষ্যৎ, ঐতিহাসিক এই গুরুদায়িত্ব সুচারুরূপে সম্পন্ন করিবেন, এরূপ আশা করা অসঙ্গত নহে।
এই গ্রন্থের কলেবর বৃদ্ধির কারণ, ইহা কেবলমাত্র বাংলা দেশের ইতিহাস নহে, ইহা বাঙালীর ইতিহাস। প্রথম খণ্ডে প্রাচীন যুগের ইতিহাসে বাঙালী জাতির কৃষ্টি ও সভ্যতা, তাহাদের চিন্তা ও ভাবনা, অভাব ও অভিযোগ, সামাজিক ব্যবস্থা, ধর্মচিন্তা, ধর্মানুষ্ঠান এবং বিভিন্ন শ্রেণীর অধিবাসীর আর্থিক অবস্থা প্রভৃতির কাহিনী ঐতিহাসিক উপাদানের অভাবে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণিত হইয়াছে। মধ্যযুগে এই সমুদয় বিবরণ অপেক্ষাকৃত বিস্তৃতভাবে আলোচিত হইলেও সমসাময়িক নির্ভরযোগ্য উপকরণের স্বল্পতানিবন্ধন সংক্ষিপ্ত ও অসম্পূর্ণ। কিন্তু, ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন শ্রেণীর বাঙালী সম্প্রদায় সম্বন্ধে সমসাময়িককালে লিখিত বিবরণের প্রাচুর্যবশতঃ পূর্বোক্ত বিষয়গুলি সম্বন্ধে বিস্তৃত বর্ণনা ও আলোচনা সম্ভবপর হইয়াছে। প্রধানতঃ সমসাময়িক বাংলা ও ইংরেজি সাময়িক পত্রেই এই ঐতিহাসিক উপকরণ পাওয়া যায়। সমসাময়িক বিখ্যাত কয়েকটি বাংলা পত্রিকা- সমাচার-দর্পণ, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা, সোমপ্রকাশ, সংবাদ-প্রভাকর প্রভৃতিসে-যুগের বিশিষ্ট মনস্বীগণ দ্বারা সম্পাদিত হইত। সুতরাং এই সমুদয় পত্র-পত্রিকার সাহায্যে যে উপকরণ সংগ্রহ করা যায় তাহার ঐতিহাসিক মূল্য সম্বন্ধে সন্দেহ করিবার অবকাশ নাই। উপরোক্ত পত্রিকাগুলি ছাড়াও আরও বহু সাময়িক-পত্র ছিল। বাঙালী-সমাজের এমন কোন দিক নাই যাহার উপর এই সমুদয় পত্রিকা উজ্জ্বল আলোকপাত করে নাই, একথা অনায়াসে বলা চলে। ঊনবিংশ শতাব্দীর পূর্বে এই শ্রেণীর ঐতিহাসিক উপকরণের অস্তিত্ব ছিল না। সুতরাং ইহাদের সাহায্যে বাঙালী জীবনের বিভিন্ন ধারার যে বিবরণ লেখা সম্ভবপর হইয়াছে এই গ্রন্থের প্রথম দুই খণ্ডে তাহা হয় নাই। এইসব পত্রিকা বর্তমানকালে খুবই দুপ্রাপ্য। সৌভাগ্যের বিষয়, দুইজন বাঙালী পণ্ডিত বহু ক্লেশে পূর্বোক্ত বাংলা পত্রিকার প্রয়োজনীয় অংশগুলি সঙ্কলিত ও মুদ্রিত করিয়া অমূল্য ঐতিহাসিক উপকরণ সংগ্রহের সুযোগ দিয়াছেন। স্বৰ্গত ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তিন খণ্ডে সংবাদপত্রে সেকালের কথা এবং শ্রীবিনয় ঘোষ চারি খণ্ডে সাময়িক পত্রে ‘বাংলার সমাজচিত্র’ নামে এই শ্রেণীর সঙ্কলন প্রকাশিত করিয়াছেন। বিনয়বাবু পঞ্চম খণ্ডে তাঁহার সঙ্কলিত অংশগুলির সাহায্যে ‘বাংলার সামাজিক ইতিহাসের ধারা’ নামে উনিশ শতকের বাংলা সমাজের একটি বিস্তৃত বিবরণ লিখিয়া তাঁহার গ্রন্থের মূল্যবৃদ্ধি এবং এই যুগের ইতিহাসরচনার বিশেষ সহায়তা করিয়াছেন। পূর্বোক্ত সাত খণ্ড সঙ্কলন-গ্রন্থের সাহায্যেই বর্তমান পুস্তকের সমাজচিত্র অঙ্কন সম্ভবপর হইয়াছে। এইসব গ্রন্থ হইতে বহু সংক্ষিপ্ত ও সুদীর্ঘ উদ্ধৃতি এই গ্রন্থে স্থান পাইয়াছে। ইহার জন্য আমি মুক্তকণ্ঠে তাঁহাদের ঋণ স্বীকার ও তাঁহাদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতেছি।
পূর্বোক্ত সমসাময়িক পত্রিকাগুলি ব্যতীত বাংলা ভাষায় রচিত আলোচ্য যুগের অনেক চিঠিপত্র ও দলিল প্রভৃতিও ইতিহাসের মূল্যবান উপকরণ। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক শ্রীপঞ্চানন মণ্ডল এইরূপ ৬৩২খানি চিঠিপত্র সঙ্কলন করিয়া ‘চিঠিপত্রে সমাজচিত্র’ প্রকাশ করিয়াছেন। ইহা হইতেও অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করিয়াছি এবং এজন্য তাঁহাকেও বিশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি।
উনিশ শতকে বাংলা দেশ হইতে প্রকাশিত কয়েকখানি ইংরেজি পত্রিকাতেও বহু মূল্যবান ঐতিহাসিক উপকরণ আছে। ইহার মধ্যে Hindoo Patroit, Amrita Bazer Patrika প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই দুইটি প্রকাশিত পুরাতন সংখ্যার কিছু কিছু সঙ্কলন প্রকাশিত হইয়াছে, কিন্তু তাহা খুবই সংক্ষিপ্ত এবং তাহাতে রাজনীতিক তথ্য ও জাতীয়তার উদ্বোধন সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বিবরণ মাত্র পাওয়া যায়। ব্রজেন্দ্রবাবু ও বিনয়বাবুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া কেহ যদি এই সমস্ত ইংরেজি পত্রিকাগুলির ঐতিহাসিক তথ্য-হিসাবে প্রয়োজনীয় অংশগুলির সঙ্কলন করেন তাহা হইলে ভবিষ্যতে উনিশ শতকে বাংলা দেশের ইতিহাস আরও পূর্ণাঙ্গ হইবে এইরূপ আশা করা যায়।
উনিশ শতকের ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান গ্রন্থ আছে। কিন্তু, বিশেষভাবে বাংলার ইতিহাসসম্বন্ধে লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা খুব বেশী নহে। দশ বৎসর পূর্বে আমি ইংরেজিতে ‘Glimpses of Bengal in the Nineteenth Centuary’ নামে একখানি ক্ষুদ্র পুস্তিকা প্রকাশ করিয়াছিলাম। তাহার পর এ সম্বন্ধে অল্প কয়েকখানি ইংরেজি ও বাংলা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কিন্তু, এগুলি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস নহে, কয়েকটি বিশিষ্ট বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আলোচনামাত্র। যখন আমি এই গ্রন্থ লিখিতে প্রবৃত্ত হই, তখন উনিশ শতকের বাংলার কোন পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস প্রকাশিত হয় নাই। সুতরাং প্রথম প্রচেষ্টা হিসাবে ইহাতে অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি থাকিবার সম্ভাবনা–তাহার জন্য পাঠকদের নিকট মার্জনা ভিক্ষা করি। আমার এই গ্রন্থ রচনা শেষ হইবার কিছু পূর্বে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হইতে : ইংরেজিতে লিখিত একখানি এই যুগের পূর্ণাঙ্গ বাংলার ইতিহাস প্রকাশিত হয়।
আমার এই গ্রন্থে রাজনীতিক ইতিহাসের অংশ খুবই সংক্ষিপ্ত। কারণ, রাজনীতিক ইতিহাসের দিক দিয়া এই যুগের বাংরার ইতিহাস, ও ভারতবর্ষের ইতিহাসের মধ্যে প্রভেদ বেশী নাই। বাংলা দেশকে কেন্দ্র করিয়াই ইংরেজ প্রায় সারা ভারতবর্ষ জয় করিয়াছিল এবং উনিশ শতকের প্রথম ভাগ হইতেই বাংলা দেশ সমগ্র ভারতে বিস্তৃত ইংরেজসাম্রাজ্যের অংশমাত্র। ইহার বিবরণ প্রধানতঃ ইংরেজের অথবা ভারতের ইতিহাস-বাংলা দেশ বা বাঙালীর ইতিহাস নহে।
উনিশ শতকের বাংলা দেশের ইতিহাসে জাতীয় নবজাগরণের বিবরণই প্রাধান্য লাভ করিয়াছে। অর্থাৎ, ধর্মসংস্কার, শিক্ষা-বিশেষতঃ স্ত্রী-শিক্ষার উন্নতি, সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন, নূতন সাহিত্য ও সংবাদপত্রের উদ্ভব, জাতীয় ভাবের উন্মেষ, রাজনীতিক ও অর্থনীতিক অগ্রগতির দাবি এবং তদুদ্দেশ্যে জাতীয় সঙ্ প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির কাহিনীই বঙ্গদেশের ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করিয়াছে। উনিশ শতকে বাংলার এই জাগরণ যে সমগ্র ভারতকে উদ্বুদ্ধ করিয়াছে। এবং এই হিসাবে যে পূর্বোক্ত বিষয়বস্তুগুলি বাংলার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ স্থান দাবী করিতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। এই গ্রন্থে এই সমুদয়েরই বিস্তৃত আলোচনা করা হইয়াছে। কিন্তু, একথা স্মরণ রাখিতে হইবে যে এইসব আন্দোলন ও তাহার ফলাফল প্রথমে মুষ্টিমেয় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলার অধিবাসীদের শতকরা ৮০/৯০ জনের সহিত এই সম্প্রদায়ের বিশেষ কোন সম্বন্ধ ছিল না। বাঙালীর ইতিহাসে এই শেষোক্ত শ্রেণীর ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনীতিক অবস্থার বিষয়ও পর্যালোচনা করা আবশ্যক। তাহা না হইলে বাংলার বা বাঙালীর ইতিহাস অসম্পূর্ণ থাকিবে। প্রথম দুই খণ্ডে ঐতিহাসিক উপকরণের অভাবে এই শ্রেণীর লোকের জীবনযাত্রা সম্বন্ধে পর্যাপ্ত বিবরণ দেওয়া সম্ভবপর হয় নাই। কিন্তু, বর্তমান যুগে যে এইসব বিষয়ের বহু সমসাময়িক নির্ভরযোগ্য প্রমাণ সংগৃহীত ও প্রকাশিত হইয়াছে তাহা পূর্বেই উল্লেখ করিয়াছি। ধর্ম, সমাজ, আর্থিক অবস্থা, শিক্ষা, আমোদ-প্রমোদ, সাহিত্য, শিল্প, সঙ্গীত প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বিরাট গণসম্প্রদায়ের বিবরণও দিতে চেষ্টা করিয়াছি। এই খণ্ডে এইরূপ পৃথক প্রয়োজনীয়তাও খুব বেশী। কারণ এই যুগে ইংরেজিশিক্ষা ও তাহার সঙ্গে পাশ্চাত্ত্য প্রভাবের ফলে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত এবং নাগরিক ও গ্রাম্য জনগণের মধ্যে যে গুরুতর ব্যবধান গড়িয়া উঠিয়াছিল, প্রাচীন ও মধ্য যুগে তাহার অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নাই। সুতরাং এই যুগে বাঙালীর সমাজ যে দুইটি বিশিষ্ট সম্প্রদায়ে বিভক্ত হইয়াছিল তাহাদের পৃথক পৃথক বিবরণ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিয়াছি। বিশেষতঃ উনিশ শতকে বাংলার জনসাধারণের ধর্ম ও নীতির জ্ঞান, ধারণা ও তদনুযায়ী অনেক আচার-ব্যবহার প্রভৃতি–আমাদের বর্তমান শিক্ষা ও সংস্করের সম্পূর্ণ বিরোধী এবং তাহার সম্বন্ধে বিংশ শতকের শিক্ষিত বাঙালীর জ্ঞান, ধারণা ও অভিজ্ঞতা খুবই অল্প। অনেকের পক্ষে নাই বলিলেও চলে। সুতরাং এই সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ বিশিষ্ট প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া যে চিত্র আঁকিয়াছি, তাহা অনেকের বিস্ময় ও বিরাগ উৎপাদন করিতে পারে। কিন্তু, স্মরণ রাখিতে হইবে। যে, সত্যানুসন্ধানই ইতিহাসের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য এবং অতীতের ধর্ম, নীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা যত অপ্রীতিকর হউক না কেন, অজ্ঞতার আবরণে লোকচক্ষুর অন্তরালে তাহা গোপন করিয়া রাখা সম্ভব ও সঙ্গত নহে। কারণ, বর্তমান অবস্থার যথাযথ পরিচয়, বিচার ও সংশোধনের জন্য অতীতের জ্ঞান বিশেষ প্রয়োজনীয়। ইতিহাসের পারম্পর্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান না থাকিলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ইতিহাসের শিক্ষা কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এই গ্রন্থের সমাপ্তিকাল ১৯০৫ খ্রীস্টাব্দে। রাজনীতিক বিবর্তনের দিক দিয়া ইহা একটি বিশেষ যুগের শেষ ও নূতন যুগের আরম্ভ কাল বলিয়া সীমানির্দেশ করা যাইতে পারে। কিন্তু সাহিত্য ও শিল্পের সম্বন্ধে এই উক্তি প্রযোজ্য নহে। কারণ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ও শিল্পে অবনীন্দ্রনাথ যে নবযুগ প্রবর্তন করেন এই তারিখে তাহার সূচনা হইয়াছে, কিন্তু পূর্ণ বিকাশ হয় নাই। যে-কোন তারিখে সীমানির্দেশ করিলেই ইতিহাসে এই প্রকার অসঙ্গতি অবশ্যম্ভাবী। অথচ, এই প্রকার সীমানির্দেশ না করিলে বিভিন্ন খণ্ডে ইতিহাস রচনা করা সম্ভবপর নহে। এইজন্য প্রচলিত রীতি অনুসারে রাজনীতিক বিবর্তনের দিক বিবেচনা করিয়া ১৯০৫ সন এই খণ্ডের সীমারেখা নির্ধারিত হইয়াছে। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য কয়েকজন সাহিত্যিক ও শিল্পীদের বিবরণ কেবলমাত্র সংক্ষেপে বিবৃত হইয়াছে, বিস্তৃত আলোচনা পরবর্তী খণ্ডে করা হইবে। বাংলা দেশে সংস্কৃত এবং আরবী, ফারসী ও ইংরেজি সাহিত্যের চর্চা সম্বন্ধেও এই খণ্ডে পৃথক কোন বিবরণ নাই। পরবর্তী খণ্ডে ১৭৬৫ হইতে ১৯৪৭ সন পর্যন্ত ইহার আলোচনা করা হইবে।
এই গ্রন্থের ‘শিল্প’ অধ্যায়ের অনেক বিবরণ এবং চিত্রগুলির জন্য শ্রীযুক্ত অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট আমি বিশেষভাবে ঋণী। শ্রীনকুল চট্টোপাধ্যায় মহাশয় পাঁচালী গান সম্বন্ধে অনেকগুলি তথ্যের সন্ধান দিয়া বিশেষ সাহায্য করিয়াছেন। বাংলা সাহিত্য সম্বন্ধে শ্রীসুখময় মুখোপাধ্যায়ের লিখিত কয়েকটি অংশের সংযোজনা করিয়াছি। আধুনিক সঙ্গীতের বিবরণ প্রধানতঃ শ্রীদিলীপকুমার মুখোপাধ্যায় লিখিত একটি অপ্রকাশিত প্রবন্ধ হইতে সঙ্কলিত। ইহাদের সকলকেই আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করিতেছি।
যে সকল মুদ্রিত গ্রন্থ হইতে সাহায্য পাইয়াছি, পাদটীকায় তাহার বিস্তৃত উল্লেখ করিয়াছি।
এই গ্রন্থে ‘সন’, ‘খ্রীঃ’–এই দুইটি খ্রীস্টাব্দের প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে।
আমার বিশেষ স্নেহাস্পদ ভূতপূর্ব ছাত্র শ্রীসুরেশচন্দ্র দাস যেভাবে এই গ্রন্থের মুদ্রণ ও প্রকাশের সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ এবং ইহার নির্দেশিকা প্রস্তুতির সম্পূর্ণ কার্য সুচারুরূপে সম্পন্ন করিয়াছেন তাহার জন্য আমার বিশেষ ধন্যবাদ ও আশীর্বাদ জ্ঞাপন করিতেছি। এই গ্রন্থের সাহায্যে যদি উনিশ শতকের বাঙালীর জীবনের সম্বন্ধে পাঠকের একটি সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে তাহা হইলেই আমার শ্রম সার্থক হইবে।
শ্রীরমেশচন্দ্র মজুমদার
২ পৌষ, ১৩৭৮
(১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১)
৪, বিপিন পাল রোড
কলিকাতা-২৬
Emon Hossain
It’s Helpful