বসু-বাড়ি – শিশিরকুমার বসু
প্রথম সংস্করণ: জুন ১৯৮৫
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড
প্রচ্ছদ: বিপুল গুহ
.
আমার জীবনসঙ্গিনী ও সহধর্মিণী
কৃষ্ণাকে
.
নিবেদন
পাঁচ বছর আগেও ভাবিনি এমন একটি লেখা আমি লিখব। হঠাৎ বন্ধুবর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একদিন বলে বসলেন যে সুভাষচন্দ্রকে আমরা ছেলেবেলায় যেমন দেখেছি, সে সম্বন্ধে একটা লেখা দিতে হবে ‘আনন্দমেলা’র জন্য। ‘আনন্দমেলা’য় আমার লেখা “রাঙাকাকাবাবু ও আমাদের ছেলেবেলা” বেরোবার পর কি যেন একটা ঘটে গেল। নানা দিক থেকে নানা প্রশ্ন আসতে লাগল, মনে হল যেন সুভাষচন্দ্রকে কাছে থেকে জানবার একটা নতুন আগ্রহ ছোটদের মধ্যে দেখা দিয়েছে। কেবল ছোটরাই বা কেন, আজকের বাবা- মায়েরা, যাঁরা সুভাষচন্দ্রকে দেখেননি, তাঁরাও নতুন করে উৎসুক হয়ে উঠলেন। যাঁরা আরও বড় এবং সুভাষচন্দ্রকে এবং আমার বাবাকে দেখেছেন, তাঁরাও পুরানো দিনের কথাগুলি নতুন করে শুনতে চাইলেন।
তারপর একদিন নীরেনবাবু অতি সহজ কিন্তু দৃঢ়ভাবে আমার উপর ‘বসুবাড়ি’ চাপিয়ে দিলেন। বললেন, কেবল সুভাষচন্দ্রের কথা নয়, আমার ছেলেবেলা থেকে বসুবাড়ি সম্বন্ধে খুঁটিনাটি যা কিছু মনে আছে, ছোট বড় সকলের সম্বন্ধে, ছোট বড় যে সব ঘটনা মনে ছাপ রেখে গেছে, ধারাবাহিকভাবে লিখে যেতে হবে। তিনি ‘আনন্দমেলা’য় ছাপবেন। আমি অনেক অনুনয় করলাম, আমার অতিব্যস্ত জীবনযাত্রার কথা বললাম, লেখায় আমার অনভিজ্ঞতার কথা বললাম, কিন্তু তিনি ছাড়বার পাত্র নন। তিনি জিতলেনও, লেখা শুরু হল এবং তিন বছর ধরে প্রকাশিত হতে থাকল।
দেশের ইতিহাসের এক অতি সঙ্কটপূর্ণ সময়ে একটি পরিবারের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, জয়-পরাজয়ের সহজ সরল একটি কাহিনী গল্পের ভঙ্গিতে বলার আমি চেষ্টা করলাম। পাঠকদের মধ্যে লেখাটির প্রতিক্রিয়া দেখে আমি অবাক ও অভিভূত হলাম। বাংলার অসংখ্য ছোট ছেলেমেয়ে ও তাদের বাবা-মায়েরা তাঁদের সহৃদয় ও অকুণ্ঠ উৎসাহের হাত বাড়িয়ে দিয়ে লেখাটি চালিয়ে যেতে আমাকে সাহায্য করলেন। তিন বছর ধরে রাতের পর রাত লণ্ঠন বা মোমবাতি জ্বালিয়ে যখন লিখছি, ছায়ার মত পাশে ছিলেন আমার জীবনসঙ্গিনী।
লেখাটি যখন প্রকাশিত হচ্ছিল এবং শেষ হবার পরও বাংলার বহু জায়গায় আমি গিয়েছি। শুনেছি লেখাটি যখন খণ্ডে খণ্ডে বেরোচ্ছিল, সেটি পড়বার জন্য নাকি অনেক পরিবারে কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। শুনেছি বাংলার এমন অনেক ছোট্ট ছেলেমেয়ে যারা পড়তেও শেখেনি,লেখাটি পড়ে শোনাতে তাদের মায়েদের বাধ্য করেছে। লেখাটির মাধ্যমে আজকের ছেলেমেয়েরা সুভাষচন্দ্রকে খুবই কাছের মানুষ
মানুষ হিসাবে দেখতে শিখেছে—’রাঙাকাকাবাবু’ বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছেন। বসুবাড়ির যা কিছু তুচ্ছ তা পথের ধারে পড়ে থাক, বসুবাড়ির দেশসেবার গৌরব ও ত্যাগের ঐশ্বর্য দেশবাসী ভাগ করে নিন, লেখকের এই প্রার্থনা।
লেখাটির মধ্যে ইংরাজিতে কতকগুলি উদ্ধৃতি আছে। ছোটদের সুবিধার জন্য পরিশিষ্টে সেগুলির বাংলা অনুবাদ দেওয়া হল।
যখন আনন্দ পাবলিশার্স আমাকে জানালেন যে ‘বসু-বাড়ি’ বই-এর আকারে প্রকাশ করবেন, আমি স্থির করলাম যে ছোটখাটো দু’চারটি ভুল শোধরানো ছাড়া মূল লেখায় কোন
পরিবর্তন করব না, করিওনি। ১৯৫০-এ আমার বাবার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমি এই লেখার সমাপ্তি টেনেছি,কারণ সেই সঙ্গেই বসুবাড়ির ইতিহাসের এক বিশেষ অধ্যায়ের শেষ। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সব কথা বলা হয়ে গেছে। যদি সময় থাকে ও সুযোগ আসে আরও কিছু হয়ত বলব।
প্রুফ সংশোধনে বন্ধুবর শ্রীহরি গাঙ্গুলী যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। আনন্দ পাবলিশার্সের বন্ধুবর্গ বইটি সর্বাঙ্গসুন্দর করতে যত্নের ত্রুটি করেননি। এঁরা আমার ধন্যবাদার্হ।
জয়হিন্দ
শিশিরকুমার বসু
বসুন্ধরা
৯০ শরৎ বসু রোড
কলিকাতা-৭০০০২৬
২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৮৫
Sanjoy Mondal
আপনারা একটি OCR করা বই পাঠাতে পারেন। আমি খুব দ্রুত proofread করে দিতে পারি। আপনারা আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে লেখাটি অভ্রতে বা যে কোনও ইউনিকোডে হলে ভালো হয়। যদি .txt কিংবা .doc কিংবা.docx এ পাঠান ভালো হবে।
admin_egb
এই ‘বসু-বাড়ি – শিশিরকুমার বসু’ বইটিই পুরো প্রুফরিড করা হয়নি। চাইলে এটি করে দিতে পারেন। ধন্যবাদ।