বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী খণ্ড ১
সম্পাদক : আফজালুল বাসার
Collected Works Of Badruddin Umar Volume 1 Edited by Afzalul Bashar
বাঙ্গালা গবেষণা
বাঙ্গালা গবেষণা প্রকাশনা
প্রথম প্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০২১
সম্পাদকীয়
ঊনিশ শতকের শেষ দশক থেকে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত বদরুদ্দীন উমরের পরিবারে কংগ্রেসী, মুসলিম লীগার, কমিউনিস্ট-অকমিউনিস্ট, কৃষক সংগঠনের সাথে যুক্ত নেতা ও কর্মী ছিলেন। জীবন ছিল স্বচ্ছল, পরিবার ছিল বৃহৎ, পাশাপাশি ছিল রক্ষণশীলতা ও উদারতা। পরিবারের মানুষেরা চাকুরীজীবী এবং জমিদারী পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বৃটিশের ইংরেজি শিক্ষা প্রচলনের সময় থেকে ইংরেজি শিক্ষিত একটি সুবিধাভোগী শ্রেণীতে জন্মেও তাঁরা ছিলেন মানবদরদী, দেশহিতৈষী, স্বদেশপ্রেমী, জ্ঞান-বিজ্ঞানে আগ্রহী— জীবনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে নিয়ে দেশকে ভালাবাসবার প্রচেষ্টা তাঁদের অনেকেরই ছিল। বাড়ীতে সর্বভারতীয় নেতা ছিলেন উমরের বাবা আবুল হাশিম এবং আবুল হাশিমের বাবা-দাদা-নানা প্রমুখ। অনেক সর্বভারতীয় নেতা তাঁদের বাড়ীতে গিয়েছেন বা আসা-যাওয়া ছিল। এই পরিবেশে জন্ম নিয়ে এবং লালিত হয়ে উমর নিজে পরিণত হয়েছেন একজন প্রখ্যাত রাজনীতিক এবং চিন্তকে। তিনি লিপ্ত ছিলেন বিরামহীন লড়াইয়ে ব্যক্তিগতভাবে যেমন তেমনি সামাজিকভাবে বা দলীয়ভাবেও। সমসাময়িক সমাজজীবনকে তিনি নিজের জীবনে গভীরভাবে ধারণ করেছিলেন, তাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। কতটুকু ধারণ করেছিলেন তা এই পরিসংখ্যানটি থেকে আমরা দেখতে পারি – তিনি ৬০, ৭০, ৮০, ৯০, ০, ১০ এবং ২০ এর দশকে যথাক্রমে গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন ৩, ১১, ২১, ২৮, ৩৪, ২২ এবং ৭টি (আনুমানিক প্রকাশিতব্য) যা বিস্ময়কর। উল্লেখ্য, তার প্রণীত একটি গ্রন্থও নেই যা উঠে আসেনি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে এবং যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার অযোগ্য। তাঁর চিন্তাচর্চা এবং রাজনৈতিক অনুশীলন এতদঞ্চলের সাধারণ মানুষের সংগ্রামে পথ দেখাবে এবং জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। এমতাবস্থায় তাঁর চিন্তা সম্পদ রক্ষা ও অনুশীলনে তাঁর রচনাবলী প্রকাশের আবশ্যকীয়তা অনস্বীকার্য।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাঙ্গালা গবেষণা বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী প্রকাশ করছে।
বাঙ্গালা গবেষণা বদরুদ্দীন উমর রচনাবলীর সম্পাদকীয় নীতিমালা নিচে উল্লেখ করা হলো। অনুসৃত পাঠ। বদরুদ্দীন উমর প্রায় সকল গ্রন্থেই মুখবন্ধ লিখেছেন। বর্তমান রচনাবলীতে গ্রন্থের শুরুতে এসব মুখবন্ধ স্থান দেয়া হয়েছে যেন পাঠকের নিকট গ্রন্থ-প্রবেশের এবং পাঠ- পরিক্রমার কাজটি অপেক্ষাকৃত তাৎক্ষণিক হয়। নতুন মুদ্রণ ও সংস্করণগুলির বেলাতে কখনও কখনও মুখবন্ধ লিখেছেন। দেখা গেছে একটি গ্রন্থের বিভিন্ন মুদ্রণ/সংস্করণের কপি অভাবে তাতে মুখবন্ধ আছে কি না জানা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে এরকম মুখবন্ধ পাওয়া গেলে গ্রন্থভুক্ত করা যেতে পারে। এসব মুখবন্ধ যে সংস্করণেরই হোক না কেন প্রথম প্রকাশের পাঠ অনুসরণে এ রচনাবলীর পাঠ নির্ধারিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কোন কোন সংস্করণে নতুন লেখা গ্রহণ বা পুরনো লেখা বর্জন করা হয়েছে। এইসব নতুনভাবে গৃহীত লেখাগুলি প্রকাশের ক্রমানুযায়ী গ্রন্থভুক্ত করা হয়েছে। বর্জিত রচনা বর্জিতই থাকল। বর্জিত রচনাগুলি বিষয়ে পরে আমরা বিবেচনা করতে পারি।
একাধিক গ্রন্থে কোনো কারণে একই রচনা মুদ্রিত থাকতে পারে। বিষয়ভিত্তিক চয়নকৃত গ্রন্থের বেলায় এমন হতে পারে। একটি রচনা কেবল একবারই রচনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করা হবে, একাধিক গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত একই লেখা দ্বিতীয়বার মুদ্রিত হবে না। মূল লেখা বাংলা ও ইংরেজি গ্রন্থাবলি রচনাবলীতে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর অগ্রন্থিত বা অপ্রকাশিত প্রবন্ধ/গ্রন্থ যা রয়েছে সেগুলি সংগৃহীত ও একত্রিত হবার পর গ্রন্থভুক্ত করা যেতে পারে।
উদ্ধৃতি সুপারিশ। গ্রন্থ শেষে পরিশিষ্ট ৩-এ সমগ্র রচনাবলীর উদ্ধৃতি সুপারিশ উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পাদকীয় বক্তব্য ইত্যাদি প্রকাশের সুবিধার্থে গ্রন্থসূত্র সংক্ষেপে উল্লেখ করার জন্য প্রকাশের সালের সাথে প্রকাশের সময়ক্রম ক, খ, গ, ঘ ইত্যাদি যুক্ত করে গ্রন্থ উদ্ধৃতির সুপারিশ করা হয়েছে। যেমন ১৯৯০ সালে বদরুদ্দীন উমরের চারটি গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছিল—পশ্চাৎপদ দেশে গণতন্ত্রের সমস্যা (ফেব্রুয়ারী), বিপ্লব ও প্রতিবিপ্লব (ফেব্রুয়ারী), স্ট্যালিন প্রসংগে (সম্পাদিত) (ফেব্রুয়ারী) এবং প্রসংগ : রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপ (সম্পাদিত) (অক্টোবর)। উমর ১৯৯০ ক, উমর ১৯৯০ খ, উমর ১৯৯০ গ, উমর ১৯৯০ ঘ হিসেবে এই গ্রন্থগুলির উদ্ধৃতি সুপারিশ করা হয়েছে। পাশে পৃষ্ঠা সংখ্যাও থাকতে পারে যেমন : উমর ১৯৯০ ক ১২২।
গ্রন্থতালিকা। পরিশিষ্ট ২-এ তাঁর গ্রন্থের তালিকায়— মৌলিক, অনূদিত, বিষয়ভিত্তিক সংকলনগ্রন্থ, সম্পাদিত গ্রন্থ, নিজের লেখার অনুবাদ, ইরেজি গ্রন্থ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকা প্রকাশকালের ক্রম অনুযায়ী সজ্জিত। তালিকায় গ্রন্থের প্রথম প্রকাশের সাল, প্রকাশকের নাম ও সংক্ষিপ্ত ঠিকানা, প্রচ্ছদ শিল্পী, নাম লিপিকার, পৃষ্ঠা সংখ্যা, মূল্য, উৎসর্গপত্র, অন্যান্য বিষয় যদি থাকে উল্লেখ করা হয়েছে। কখনও কখনও পরবর্তী সংস্করণের তথ্যাদি উল্লেখিত হতে পারে। এই তালিকা অসম্পূর্ণ, কারণ এখনও বেশ কিছু রচনা গ্রন্থাকারে প্রকাশ হয়নি। তারও পর অতিরিক্ত গ্রন্থ পরিচয় যদি থাকে তা প্রয়োজনবোধে সম্পাদকীয় অংশে উল্লেখ করা যেতে পারে।
উল্লেখরীতি। পত্রপত্রিকা-গ্রন্থের নাম বাঁকা হরফে ও প্রবন্ধের নাম এক উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরে লেখা হয়েছে।
বানান। বর্তমান রচনাবলীতে বাঙলাদেশ, বাঙলা, বাঙালী, প্রথমতঃ, দ্বিতীয়তঃ, স্বভাবতঃ, নোতুন, গেলো, হলো, করলো, চাকুরী ইত্যাদি উমর অনুসৃত বানান অনুসরণ করা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশকালের কথা। পরিশিষ্ট ১-এ প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৬) প্রকাশকালের নানা কথা সম্বলিত উমরের একটি রচনা সংকলিত হয়েছে।
মূল্যায়ন। আমরা চেষ্টা করব রচনাবলীর প্রতি খণ্ডে খণ্ডভুক্ত গ্রন্থগুলিতে ব্যক্ত সারকথার বিবরণ দিতে, যা মূল্যায়নের পর্যায়ভুক্ত না হয়ে পরিচয়মূলক পরিসরের ভিতরে সীমিত থাকবে।
বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী ১ম খণ্ড। সাম্প্রদায়িকতা প্রকাশ হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, এরপর প্রকাশ হয় সংস্কৃতির সংকট (১৯৬৭) এবং সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) গ্রন্থ। ষাটের দশকে এসমস্ত গ্রন্থ প্রণয়ন করা ছিল সাহসী কাজ। ১ম ও ৩য় গ্রন্থটি সরকার সে সময় বাজেয়াপ্ত করার নোটিশ দিয়েছিল যে কারণে, সেই প্রশ্নটি আজকের দিনে আরও বেশি প্রাসংগিক। এখানকার সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। অথচ সাম্প্রদায়িকতার সাথে ধর্মনিষ্ঠার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ নয়; এ ধারণা বিভ্রান্তিমূলক এবং রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক। বিষয়টিকে তিনি ‘সাংস্কৃতিক সম্প্রদায়িকতার শ্রেণীগত ভূমিকা’, ‘মুসলমানদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় রাষ্ট্র’, ‘মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও মুসলিম সংস্কৃতি’, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক অগ্রগতি’, ‘নজরুল ইসলাম অহিফেন’ ইত্যাদি প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন যার পরিধি বৃটিশ আমল থেকে অদ্যাবধি ভারতীয় সমাজ বিশেষ করে বাঙালী সমাজে বিস্তৃত। আমাদের ভাষা-সংস্কার, সাহিত্য-সংস্কার ও বঙ্কিম-রবীন্দ্র-নজরুলকে ধর্মবিযুক্ত দৃষ্টিতে আলোচনা করেছেন। বাঙালী মধ্যবিত্তের কল্পলৌকিক ও অবাস্তব জাতীয় পরিচয় এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদের সমস্যাকে বিশ্লেষণ করে দেশীয় মাটিতে নেমে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের দিকে তাঁদের আকর্ষণ করেছেন।
আগে প্রশ্ন ছিল আমরা বাঙালী না মুসলমান না পাকিস্তানী। দেশ স্বাধীন হবার পর এখন প্রশ্ন আমরা বাঙালী না মুসলমান? এ প্রশ্নের সমাধান হয়েছে এইভাবে যে, আমাদের ধর্মীয় পরিচয় যাই থাক জাতীয় পরিচয় বাঙালী, যার মধ্যে পৃথক ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলিও রয়েছে। উমর লিখেছেন, এখানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভেলিকীবাজী দিয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে জীইয়ে রাখা হয়েছে (উমর ১৯৬৭)। যদিও সাম্প্রদায়িকতার মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি পাকিস্তানী আমলেই অপসারিত হয়েছিল (উমর ১৯৬৯)। জনগণের ভেতরে প্রত্যাশা ছিল এখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে। ‘কিন্তু আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে মনে হবে এখনকার পরিস্থিতি পাকিস্তানের পরিস্থিতির থেকেও অনেকাংশে রীতিমতো ভয়াবহ’ এ কথা উমর লিখেছেন ১৯৯৭ সালে সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা (১৯৬৯) গ্রন্থের সংস্করণের ভূমিকায়। উমর ব্যাখ্যা করেছেন, এখানকার জাতীয়তাবাদও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ, কারণ অধিকাংশ মানুষ একই ধর্মাবলম্বী। ১৯৯৭ সালের পর আরও প্রায় দুই যুগ পার হয়েছে, সে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এই সব কারণে ঐ তিনটি গ্রন্থের পঠন-পাঠনের আবশ্যকতা এখন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতা-বিযুক্ত সংস্কৃতিচর্চা এবং এই সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাওয়া আমাদের কাম্য। একথা ১ম খণ্ডভুক্ত গ্রন্থত্রয়ে অলোচিত হয়েছে। এখানে রচনাগুলিতে বর্ণিত হয়েছে সেই শক্তির কথা যা পঙ্গুকারী সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের বিনাশকারী। যেমন নজরুল প্রগতিপন্থী ছিলেন, হিন্দু-মুসলিম মিলনের অগ্রদূত ছিলেন কিন্তু কংগ্রেস-লীগের আদর্শভুক্ত ছিলেন না। তাঁর অহিফেনরূপ হচ্ছে ধর্মযুক্ত রাজনীতি যা তাঁর উপর আরোপ করা হয়েছে। তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন সাম্যবাদী আন্দোলনের সাথে ধূমকেতু, লাঙল, গণবাণী ইত্যাদি তারই পরিচায়ক। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ‘আমাদের সাহিত্যের প্রথম বিশ্বপরিচয়’। ‘তাঁর বিশাল প্রতিভা, বিপুল অভিজ্ঞতা এবং অপূর্ব রচনাশৈলী তাঁর ঐতিহাসিক যাত্রাপথে নব নব দিগন্ত রচনা করেছে।’ (উমর ১৯৬৯ ১৯৫)
এদেশের মানুষের আত্মপ্রতিষ্ঠা এবং সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রসারে ষাটের দশকের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন সে সময়ের রাজনীতিকে অগ্রসর করে দিয়েছিল। এই তিনটি গ্রন্থ তাতে ভূমিকা রেখেছিল এবং উমরেরও দেশব্যাপী একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল। উমরের ভেতরে কখনও উগ্রতা ছিল না। পরবর্তীকালে আওয়ামী এবং মস্কোপন্থী বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে সে ধারা স্তিমিত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে তাঁর সে গ্রহণযোগ্যতা আর থাকেনি। কিন্তু তিনি দীপ্য থেকেছেন তাঁর পথ চলায়।
আমূল সমাজ পরিবর্তনের জন্য যারা কাজ করছেন এবং করবেন তাদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এই রচনাবলীর প্রতি – দৃষ্টি আকর্ষণ করছি রাজনীতিক, ইতিহাসবিদ, সচেতন গণতন্ত্রকামী –সকল মানুষের।
বাঙ্গালা গবেষণা বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী বিষয়ে পাঠকের মতামত পেলে আমরা সাদরে তা বিবেচনা করবার আশা রাখি।
আফজালুল বাসার
ফেব্রুয়ারি, ২০২১
বিষয়সূচী
Leave a Reply