ফ্রয়েড প্রসঙ্গে – দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
ফ্রয়েড প্রসঙ্গে – দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ : অগ্রহায়ণ ১৩৫৯
উৎসর্গ
এ. ডব্লিউ মামুদ
ভূমিকা
ফ্রয়েডীয় কলাকৌশলের শিক্ষানবিশি করবার সময়ে ফ্রয়েডীয় মতবাদ নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে পড়েছিলাম। মতবাদ-এর দিক থেকে এ-রকম মারাত্মক বিচ্যুতির নমুনা খুব কমই দেখা যায়। এবং আত্মসমালোচনার অবকাশ হয়তো ঘটতোই না যদি না সে-সময়ে লেখা আমার বই ‘যৌন-জিজ্ঞাসা’-র অত্যন্ত কঠোর সমালোচনা ‘মার্কসবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত না হতো। এদিক থেকে সমালোচক রবীন্দ্র গুপ্তর কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে যে কতোখানি কৃতজ্ঞ তা অল্পকথায় প্রকাশ করা সম্ভবই নয়। অবশ্যই, একটা ভ্রান্ত মতবাদের নেশা একবার ধরলে তা রাতারাতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন। নেশা কাটলেও প্রায়ই খোঁয়ারি থেকে যায়। আমি নিজে বেশ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি আমারও সেই দশা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। ফ্রয়েডবাদ প্রকাশ করবার সাহস যে এতোদিনে হলো তার আসল কারণ, এতোদিনে পালভবাদের সঙ্গে পরিচয়ের নির্ভরে প্রকৃত বৈজ্ঞানিক মনোবিজ্ঞানের রূপটা চোখে পড়েছে বলে ভরসা হচ্ছে। আপাতত পাভলভ নিয়ে আরো অনুশীলন করছি। সাহস যখন পাবো তখন “পাভলভ-প্রসঙ্গে” বলে স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করবো বলে মনস্থ করেছি। বাংলা ভাষায় ভ্রান্ত মনস্তত্ত্ব প্রচারের কলঙ্ক তাতে কিছুটা মুছবে।
পাঠকবর্গের কাছে একটা ব্যক্তিগত মার্জনা চাইবার আছে। বইটি ছাপাখানায় যাবার পরই আমি কলকাতা ছেড়েছি। এতোদূরে বসে লেখাটাকে শেষবারের মতো মাজাঘষা করা সম্ভব হলো না। অন্তত, শেষ অংশকে আর একটু মাজাঘষা করতে পারলে তৃপ্তি পেতাম।
এ-বইয়ের অংশ-বিশেষ ‘পরিচয়’-এ প্রকাশিত হয়েছিলো। এই সুযোগে ‘পরিচয়’-সম্পাদকের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম।
দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়
লন্ডন
২৫.১০.৫২
.
প্রকাশকের নিবেদন
১৯৫১-৫২ সালে লিখিত ‘ফ্রয়েড প্রসঙ্গে’ গ্রন্থটি পুনর্মুদ্রণ হলো এত বছর বাদে। লেখক জীবিত থাকলে এই বইটি পুনর্লিখিত হতো। তিনি তাঁর পূর্ব প্রকাশিত বইগুলির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ করার বিষয়ে বিশেষ আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন শেষদিকে। শরীর ও স্বাস্থ্যের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি।
বিগত কয়েক বছরে সোবিয়েৎ সমাজতন্ত্রের সাময়িক বিপর্যয়ে সারা পৃথিবীতে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। দেবীপ্রসাদও এ-সব বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। সে চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর শেষদিকের লেখাগুলিতে।
দেবীপ্রসাদের এই বইটি এবং অন্যান্য যে বইগুলি পুনর্মুদ্রণ করা হলো, তার মূল বস্তুতে কোন পরিবর্তনের দরকার আছে বলে মনে হয় না। বৈজ্ঞানিকভাবে পূর্বতন ধ্যানধারণার পুনর্বিচার এবং সেই বিচারের জনপ্রিয়করণই ছিল বইগুলি লেখার উদ্দেশ্য। অসাধারণ প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি তা করেছেন এবং বইগুলি সেজন্যই আজও সমান জনপ্রিয়। আশা করি, দেবীপ্রসাদের অগণিত পাঠক এ-বিষয়ে একমত পোষণ করবেন।
বইটির প্রকাশের ক্ষেত্রে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন অলকা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনুমতি ছাড়া এ-বইটি প্রকাশিত হতে পারত না। নিজে সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে প্রুফ সংশোধন করেছেন অশোক উপাধ্যায়। তাঁর কাছে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
.
দেবীপ্রসাদের জন্ম ১৯ নভেম্বর ১৯১৮। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ১৯৯৪ সালে।
১৯৩৯-এ সাম্মানিকস্তরে এবং ১৯৪২-এ দর্শনবিভাগে মাস্টার্স-এ তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। যুক্তিবাদে দীক্ষিত এই মানুষটি সহজ সরল ভাষায় বিজ্ঞান চিন্তায় অগ্রগতির প্রয়াস করেছেন সারাজীবন। দর্শন ও বিজ্ঞান চিন্তায় বাংলাভাষার যে অগ্রগতির কথা রবীন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন তার সার্থক উত্তরসূরি দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া বাংলায় তার অজস্র বই যেমন : ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে, সত্যের সন্ধানে মানুষ, ফ্রয়েড প্রসঙ্গে, সে যুগে মায়েরা বড়ো, ভাববাদ খণ্ডন, শোনো বলি মনের কথা, ক্ষুদে শয়তানের রাজত্ব ইত্যাদি।
ফ্রয়েডের দর্শনকে সহজভাবে বুঝতে ও সেই দর্শনকে কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে এই বইটিতে সেই কথা লেখা আছে।
Leave a Reply