ফানুস – মৌরি মরিয়ম (উপন্যাস)
উৎসর্গ
একজন মানুষের সঙ্গে আমার অনেক কিছু মিলে যায়। পছন্দ, অপছন্দ, অভ্যাস, মানসিকতা, চিন্তাভাবনার ধরনসহ আরও অনেক কিছুই। আমার সব প্রয়োজন নিয়ে ভাবেন এই মানুষটি। সময়ের মধ্যে আমার কাজ শেষ হলো কি না সেই দুশ্চিন্তাও তিনি করেন। হঠাৎ হঠাৎ আমার মুখ দেখে বুঝে ফেলেন ভেতরে কী চলছে!
আরেকজন মানুষ আমাকে আমার বাবার মতো করেই ‘মা’ বলে ডাকেন। আমার জন্য অপরাজিতার চারা রাখেন, চারাটা চুরি হয়ে যাওয়ায় আফসোস করেন।
আল্লাহতায়ালা আমার জীবনে এই দুজন মানুষকে আশীর্বাদস্বরূপ পাঠিয়েছেন, যেমনটা পাঠিয়েছেন তাদের ছেলেকে। আমার শাশুড়ি-মা বিউটি সুলতানা এবং শ্বশুর-বাবা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রিয় বইটি উৎসর্গ করছি তাঁদের।
ভূমিকা
আমরা যারা হুমায়ূনভক্ত, অন্যপ্রকাশ তাদের কাছে অন্যরকম এক আবেগের নাম। অন্যপ্রকাশ’ থেকে বই বের করার সুযোগ তাই আমার মতো ক্ষুদ্র এক লেখকের কাছে বিস্ময়কর। কিন্তু এ সুযোগটা যখন এল ততদিনে ২০২১ সালে ‘মহাযাত্রা’ বইটি বের হচ্ছে এটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আমি পড়লাম উভয় সংকটে। একান্ত ইচ্ছা ‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে বই বের হোক, কিন্তু নতুন কোনো পাণ্ডুলিপিও এত অল্পসময়ে তৈরি করা সম্ভব নয়। সংকটের আরও একটি কারণ আছে–একই মেলায় দুটো বই বের করার সাহস আমার কোনোকালেই ছিল না। সত্যি বলতে কী, এখনো সে সাহস তৈরি হয় নি।
‘অন্যপ্রকাশ’ থেকে বই বের করার প্রবল ইচ্ছেটা সামলাতে পারলাম না। তাই পুরোনো লেখার পোঁটলার মধ্য থেকে খুঁজে বের করলাম ‘ফানুস’। এই লেখাটি আমি খুব যত্ন করে রেখেছিলাম। প্রিয় অনুভব আর ভালোবাসার জিনিস একান্তে আগলে রাখার মতো। ভেবেছিলাম বহু বছর পর ‘ফানুস’ প্রকাশের কথা ভাবব। কিন্তু তা আর হলো না। অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহার ভাইকে বললাম, এটা আমার কাঁচা হাতের লেখা কিন্তু ভীষণ পছন্দের গল্প। এডিটের জন্য আমাকে অনেক সময় দিতে হবে। তিনি সময় দিলেন। সময় নিয়ে আমি পুফের কাগজগুলো লাল কালিতে ভরিয়ে দিলাম।
পাঁচ বছর আগে, ২০১৬ সালের শেষের দিকে, আমি এই উপন্যাসটি লেখা শুরু করি। তার কয়েকবছর আগে থেকেই গল্পটি আমাকে ভীষণভাবে বিরক্ত করত। যেটাই লিখতে যেতাম এর চরিত্রগুলো মাঝখানে এসে মাথার ভেতর ঘুরঘুর করত। একরকম অতিষ্ঠ হয়েই লেখা শুরু করলাম। কিন্তু কিছু পর্ব লেখার পরে নিজের ওপর নিজে বিরক্ত হচ্ছিলাম। কারণ যা লিখছিলাম তা আমার নিজেরই পছন্দ হচ্ছিল না। তাই তখনকার মতো লেখা বন্ধ করে দিলাম। আরও দুটো উপন্যাস লিখতে গিয়ে অর্ধেক অর্ধেক লিখে রেখে দিলাম।
কয়েক মাসের রাইটার্স ব্লকের পর ২০১৭ সালের জুন মাসে উপন্যাসটি লেখার জন্য ভীষণ তৃষ্ণা অনুভব করলাম। লিখতে গিয়ে দেখলাম এবার আমি লিখতে পারছি। তখনই একটানা লিখে শেষ করে ফেলি। তারপর রেখে দেই পুরোনো লেখার সঙ্গে। চার বছর পরে আবার এডিট করলাম। আশা করছি, পাঠকেরা ফানুস পছন্দ করবেন।
মৌরি মরিয়ম
খিলগাঁও, ঢাকা।
Leave a Reply