প্রতিযোগী
০১. কোন্ড ক্রীক পেরোনর সময়
কোন্ড ক্রীক পেরোনর সময় যথারীতি লাগাম টেনে ধরল রয় সলটার। বক্স ডব্লিউ এর ফোরম্যান সে। একত্রিশ বছর বয়স, দীর্ঘদেহী, শক্তসমর্থ।
এ জায়গাটা খুব পছন্দ ওর। এখানেই কোথাও ছোট্ট একটা কাঠের বাড়ি বানাবে সে। সংসার পাতবে। ইচ্ছেটা বহুদিনের তার, মেয়েও ঠিক করে রেখেছে। মনে মনে। সে উদ্দেশ্যে গত তিন বছর ধরে বেতন আর বোনাসের একাংশ জমিয়ে চলেছে।
ওয়াগনারের র্যাঞ্চে বছর ছয়েক যাবৎ ফোরম্যানের দায়িত্ব পালন করছে সলটার। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই। এ র্যাঞ্চের এক পাল গরু। অ্যাবিলেন-এ নেয়ার পথে মারা যান তিনি।
জর্জ ওয়াগনার নতুন ফোরম্যান নিয়োগ করার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাননি। বাবার মৃত্যুর পর ছেলের কাঁধে তুলে দিয়েছেন দায়িত্ব। তাঁকে হতাশ করেনি রয় সলটার। লোকের কাছ থেকে কিভাবে কাজ আদায় করতে হয় জানা আছে তার। সবাই পছন্দও করে ওকে। সেজন্যে কৃতজ্ঞ সে সবার কাছে।
বাফেলো ফ্ল্যাটের দিকে আবার রওনা দিল ও। নীল চোখ দুটো সরু হল বিরক্তিতে। জর্জ ওয়াগনারের ছেলে জোহানকে খুঁজে আনার জন্যে শহরে চলেছে সে। প্রায়ই যেতে হয়। গত রাতে আবারও ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেছে জোহান। বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে। র্যাঞ্চের বর্তমান পরিস্থিতির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস চাপল সলটার। জর্জ ওয়াগনার বদলে গেছেন কেমন যেন। ছেলে বড় হলে একটু-আধটু অবাধ্য তো হতেই পারে। কিন্তু সেটা কিছুতেই মানতে পারছেন না ওয়াগনার। ওয়াগনারের মেয়ে তানিয়ার কথা মনে পড়তেই চোখজোড়া আরও সরু হল সলটারের। তানিয়াকে পছন্দ করে সে। বিয়ে করতে চায়। গত তিন বছর ধরে। বলব বলব করেও ওকে বলা হয়নি কথাটা।
জর্জ ওয়াগনার ওকে বলেছিলেন ভবিষ্যতে কোল্ড ক্রীকে হেডকোয়ার্টার বানাতে পারে সে। প্রায় একশো ষাট একর চারণভূমি রয়েছে জায়গাটার চারপাশে। নতুন র্যাঞ্চ শুরু করতে পারে-‘বক্স এস’ নাম দিয়ে।
তানিয়া সব সময়ই পছন্দ করত ওকে। খুব ঘনিষ্ঠ ছিল ওরা। একসাথেই বড় হয়েছে। সলটারের বাবা তখন এ র্যাঞ্চের ফোরম্যান ছিলেন। কিশোর সলটারের পিছু ছাড়ত না কিশোরী তানিয়া। নিজেকে ছেলে ভাবতে পছন্দ করত সে। ও কথা ভেবে এখন হাসি পেল সলটারের। বেশ ভালভাবেই কেটে যাচ্ছিল। তারপর ঘটল সেই দুর্ঘটনা। গরুর পাল নিয়ে বেরোনর ঠিক পাঁচ দিন পরেই লাশ হয়ে ফিরে এলেন বাবা। খুব ভোরবেলাকে যেন গুলি করে তাকে। তন্ন তন্ন করে। খুঁজেও হত্যাকারীকে বার করতে পারেনি ওরা। বাবার মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে সলটার।
বাবার মৃত্যুশোক সামলে ওঠার আগেই তানিয়া চলে গেল পুবে। তিন বছর পর ফিরে এল সম্পূর্ণ নতুন এক মেয়ে। আগের সেই চপলা কিশোরীটিকে খুঁজে পাওয়া গেল না তার মাঝে।
সলটারের ধারণা ছিল যতই বদলে যাক ওকে ভুলতে পারেনি তানিয়া। কিন্তু হঠাৎ কোত্থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল উইলবার অসকার। কিনে নিল জেমস হার্বার্টের র্যাঞ্চ। ‘র্যাফটার ও’ নাম দিল ওটার।
তানিয়ার সঙ্গে ক্যানসাস সিটিতে পরিচয় হয়েছিল অসকারের। র্যাঞ্চ কিনলেও সেদিকে মোটেও মন নেই তার। ফোরম্যান ম্যাকগ্র-র হাতে র্যাঞ্চ ছেড়ে দিয়ে সময় কাটাতে লাগল তানিয়ার সঙ্গে। ঘনিষ্ঠতা বাড়ল ওদের। কপাল কুঁচকে উঠল সলটারের।
তানিয়ার চেয়ে বছর দশেকের বড় হবে অসকার। মেয়ে পটানর বিদ্যা ভালই জানা আছে তার। ইতোমধ্যেই প্রচুর টাকা উড়িয়েছে। তানিয়াকে দেখিয়েছে তার টাকার জোর।
বাফেলো ফ্ল্যাট এখান থেকে বারো মাইল দূরে। দ্রুত ঘোড়া দাবড়াল সলটার। কেমন যেন অসহিষ্ণ লাগছে ওর। তিক্ততায় ভরে আছে মন। যে-কোন কিছু পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, ভাবল সে। হোক সে মেয়েমানুষ বা র্যাঞ্চ। সবাই তো আর অসকারের মত ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি। দাঁতে দাঁত পিষল সলটার।
অসকার লেন কাউন্টিতে আসার পর থেকে তানিয়ার সঙ্গে ওর দূরত্ব বেড়ে গেছে কয়েক যোজন। সরাসরি কিছু বলেনি তানিয়া। সলটারের সঙ্গ এখনও উপভোগ্য তার কাছে। তবে ওর কথা বলার ভঙ্গি আর চাহনি বলে দেয় অনেক কিছু। পাত্র হিসেবে অসকার ওর চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। এমনকি জর্জ ওয়াগনার পর্যন্ত ওর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে এখন আর কিছু বলেন না। কোল্ড ক্রীকে বাড়ি বানাবার কথা সলটার ছাড়া আর কারও যেন মনেই নেই। সে ও ঠিক করেছে যোগ্যতা অর্জনের পর তানিয়াকে প্রস্তাব দেবে, তার আগে কখনই নয়।
হঠাৎ গুলির শব্দে চিন্তার জাল ছিঁড়ে গেল ওর, বেশ দূর থেকে এসেছে শব্দটী। ক্রু কুঁচকে উঠল সলটারের। চাইল চারদিকে। মনে হয় শিকার করছে কেউ।
ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল সে। শহরে যেতে হবে। এ ছাড়া আর কারও সাধ্য নেই জোহানকে ফিরিয়ে আনে। খানিক দূর এগোতেই পরপর কয়েকটা গুলি হল। দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রতিধ্বনি তুলল শব্দগুলো। লাগাম টেনে ধরল সলটার। শিকারি নয়। কেউ বোধহয় বিপদে পড়েছে। দুটো অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ চলছে। কোল্ট আর উইনচেস্টার। গুলির শব্দ লক্ষ্য করে ঘোড়া ছোটাল সে। এই অঞ্চলে গত কয়েক মাস ধরে গরু চুরি যাচ্ছে। আশেপাশের প্রত্যেকটা র্যাঞ্চই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জর্জ ওয়াগনারের র্যাঞ্চও বাদ যায়নি। শেরিফ রজার হার্পার চোর ধরার জন্যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও কিছু করতে পারছে না।
হ্যাটটা খানিক সামনে টেনে দিল সলটার। গোলাগুলি চলছে এখনও। প্রায়। ডজন দুয়েক গুলির শব্দ কানে এসেছে ইতোমধ্যেই। কেউ নিশ্চয় ভীষণ বিপদে পড়েছে।
কুরুক্ষেত্রের দিকে ঘোড়া দাবড়াল সলটার। অসকার আর ফ্লিন্ট উডককের র্যাঞ্চের মধ্যবর্তী সীমানায় রয়েছে এখন সে। গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে ফ্লিন্টের গরু ক্রমাগত চুরি যাচ্ছে। হয়ত গণ্ডগোলটা সেজন্যেই, ভাবল সলটার। দুটো র্যাঞ্চের মাঝখানের ক্রীকটা পেরোল সে। তীরবেগে ঘোড়া ছোটাল পাহাড় চূড়ার দিকে। চূড়ায় পৌঁছে দেখতে পেল তিন ঘোড়সওয়ার ছুটে আসছে তার দিকে। সঙ্গে গরুর পাল। ওদের পিছু ধাওয়া করছে আরেকজন অশ্বারোহী। বেশিরভাগ গুলি সে-ই ছুঁড়ছে।
স্যাডল বুট থেকে নিজের উইনচেস্টারটা তুলে নিল সন্টার। উজ্জ্বল সূর্যালোক চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে তার। তিন ঘোড়সওয়ার এখন দু’শ গজ দূরে। সোজা ধেয়ে আসছে। তাদের শ’খানেক গজ পেছনে চতুর্থ অশ্বারোহী। তার লম্বা পাতলা শরীরটা দেখে চিনতে পারল সলটার। ফ্লিন্ট উডকক। রাইফেলে কার্তুজ রল সলটার। ফ্লিন্টের শক্র মানে তারও শত্রু। ফাঁকা গুলি করল সে। গুলির শব্দে লোক তিনটি চমকে তাকাল ওর দিকে। লাগাম টেনে ধরল। পরক্ষণেই ওর রেঞ্জের বাইরে ঘোড়া ছোটাল। ওকে লক্ষ্য করে দু’জন গুলি ছুঁড়ল। সলটারের কাছে-পিঠেও এল না ওগুলো। তৃতীয়জন ওদিকে গুলি চালাতে শুরু করেছে পেছন দিকে। ফ্লিন্টকে লক্ষ্য করে। হঠাৎই লাগাম থেকে হাত ছুটে গেল ফ্লিন্টের। ছিটকে পড়ল সে ঘোড়া থেকে। মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে রইল সে। নিথর। ওর ঘোড়া ওকে ফেলেই ছুটল ঢাল বেয়ে।
হতচকিত হয়ে গেল সলটার। পরমুহূর্তেই সংবিৎ ফিরে পেয়ে তিন অশ্বারোহীর উদ্দেশে গুলি চালাতে লাগল সে। বুঝতে পারল না ওদের কারও গায়ে। গুলি লেগেছে কিনা। তবে ও রিলোড় করার আগেই পানি ছিটিয়ে ক্রীক পেরোল ওরা। চলে গেল রেঞ্জের বাইরে।
তখুনি ঘোড়ায় চাপল সলটার। রাইফেলটা বুটে রেখে ধাওয়া করল লোকগুলোকে। এ মুহূর্তে অনেকখানি দূরে চলে গেছে ওরা। ঘোড়ার গতি দ্রুত হল সলটারের গোড়ালির খোঁচায়। স্যাডলবুট থেকে রাইফেলটা তুলে নিল ও। প্রায় আওতার বাইরে চলে যাওয়া আবছা শরীরগুলোকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটা গুলি করল সে। তবে তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। এযাত্রা আসলে বেঁচে গেছে লোকগুলো। হাল ছেড়ে দিল সলটার, আরে! ওদিকে ফ্লিন্ট আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, হঠাৎ মনে পড়ল ওর। ঘোড়ার মুখ ফেরাল দ্রুত। তীব্রগতিতে ছুটছে এখন ওটা। ফ্লিন্টের কাছে শিগগিরই ফিরে এল ও। চাইল ওর অসাড় দেহের দিকে। বারুদের গন্ধ মিলিয়ে যায়নি এখনও।
ফ্লিন্টের ঘোড়াটা মালিকের কাছে ফিরে এসেছে তখন, নিজের ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামল সলটার। হাঁটু গেড়ে বসল ফ্লিন্টের পাশে। ধীরে ধীরে চিত করে শোয়াল ওকে। ফ্লিন্টের ফ্যাকাসে মুখের দিকে চাইল সে। র্যাঞ্চার চোখ মেলল এসময়।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সলটার। ওর দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চাইল ফ্লিন্ট। যেন বুঝতে পারছে না কিছু।
কোথায় লেগেছে, ফ্লিন্ট? প্রশ্ন করল সলটার। জবাব দিল না ফ্লিন্ট। উঠে বসল বহুকষ্টে। ওর ডান কাঁধ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ভিজে লাল হয়ে গেছে শার্ট। ওকে আবার শুইয়ে দিল সলটার।
গরু চোরের দল, কঁপা গলায় বলল ফ্লিন্ট। চিনেছ কাউকে? প্রশ্ন করল সে।
নাহ, ফ্রিন্টের শার্ট খুলতে খুলতে বলল সলটার। ক্ষতস্থানটা বেরিয়ে পড়তে চমকে উঠল সে। জলদি ডাক্তার রবসনকে দেখানো দরকার। তুমি বাড়িতে শুয়ে অপেক্ষা করবে নাকি আমার সঙ্গে শহরে যাবে?
যাব, বলল ফ্লিন্ট। ওঠার চেষ্টা করছে। বছর পঞ্চাশেক বয়স ওর। রুক্ষ মুখটা সাদা হয়ে গেছে। রাগী দু’চোখে এখন বেদনা ফুটে উঠেছে। এলাকার কারও হাত আছে এর পেছনে, আমার বিশ্বাস, বলল ফ্লিন্ট।
র্যাঞ্চারের গলা থেকে রুমালটা খুলে নিল সলটার। ক্ষতস্থান বাঁধল ওটা দিয়ে।
ওদেরকে আগে কখনও দেখেছ এখানে? জিজ্ঞেস করল সে।
জানি না, আমি গুলি ছুঁড়তেই ব্যস্ত ছিলাম। চেহারা দেখিনি।
ওদের দেখলে কখন?
সকালে গিয়েছিলাম বাথানে। দেখি প্রায় খালি করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে পায়ের চিহ্ন দেখে ধাওয়া করলাম।
তোমার লোকেরা জানে?
হুঁ, বলল ফ্লিন্ট। হাঁক দিয়ে এসেছি।
এসময় ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল ওরা। ফ্রিন্টের কাউবয়রা আসছে। বড় দেরি করে ফেলেছে এরা।
ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলে স্যাডলে অতি কষ্টে চেপে বসল ফ্লিন্ট। যন্ত্রণায় বিকৃত হল মুখ। ঘোড়ায় চেপে ওর পাশাপাশি চলতে লাগল সলটার। চারদিকটা পর্যবেক্ষণ করল সে।
ফ্লিন্টের কাউবয়দের দু’জন এসময় চলে এল ওদের কাছে।
বসের কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল একজন। কোথায় যাচ্ছেন?
কাঁধে গুলি লেগেছে। বলল সলটার। শহরে যাচ্ছি, ডাক্তার দেখাব।
তোমরা গরুগুলো র্যাঞ্চে নিয়ে যাও। সবাইকে বলবে চিন্তার কিছু নেই, শিগগিরই ফিরছি আমি, কোনমতে বলল ফ্লিন্ট। কাউবয় দু’জন অন্যদের সঙ্গে যোগ দিতে চলে গেল। গরু ফিরিয়ে নেবে র্যাঞ্চে।
রাসলাররা নিশ্চয়ই চিহ্ন রেখে গেছে। শহর থেকে ফিরেই খুঁজতে বেরোব। এভাবে চলতে পারে না। গত পরশু রাতে আবারও চুরি হয়েছে আমাদের র্যাঞ্চে। এবার গেছে একশটা। অসকার কাল রাতে এসেছিল। ওর নাকি পঞ্চাশটা গেছে, কঠিন গলায় বলল সলটার।
ভালই চালাচ্ছে শালারা, দাঁতের ফাঁকে বলল ফ্লিন্ট, কিন্তু গরুগুলো বেচছে কোথায়? এ এলাকায় নয় নিশ্চয়। এখানকার কোন র্যাঞ্চারই ওদের সঙ্গে কারবার করবে না। গরু তাড়িয়ে নিচ্ছে অথচ তার কোন চিহ্ন নেই কেন?
নিশ্চয়ই আছে, শহরের ট্রেইল ধরে এগোতে এগোতে বলল সলটার। গাফিলতি তো করছ তোমরা। আমি জর্জকেও বলেছি সব র্যাঞ্চার মিলে এর সমাধানের জন্যে কাজ করতে। আমার কথা কানেই তোলেনি। আসলে তোমরা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে লড়াই করতে চাও, এভাবে হবে না, সবাই মিলে বসে একটা কিছু বুদ্ধি বার কর। দেখবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই চোর ধরা পড়ে গেছে।
হয়ত তোমার কথাই ঠিক, বলল ফ্লিন্ট। তবে আমার বিশেষ কিছু করার নেই, আমি ছোট র্যাঞ্চার। জর্জ ওয়াগনার আর অসকার ব্যবস্থা নিক। আমরা তো আছিই।
জর্জ বদলে গেছে, দ্রুত বলল সলটার। জোহানের সঙ্গে তার গোলমাল লেগেই আছে। আসলে ছেলেকে মাথায় তুলেছে সে। অকর্মার ধাড়ি একটা। র্যাঞ্চের কোন কাজেই আসে না।
আসল সমস্যা অন্যখানে, ডানদিকে খানিকটা ঝুঁকে বসে বলল ফ্লিন্ট। বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে গেছে ছোঁকরা। অসকারের ফোরম্যান ম্যাকগ্র আর অন্যান্যদের সঙ্গে মিশে গোল্লায় যাচ্ছে। মদ-জুয়া ধরে ফেলেছে।
জানি, ঠাণ্ডা গলায় বলল সলটার। আবেগ ঝেড়ে ফেলতে চাইল গলা থেকে। পারল না।
ম্যাকগ্র আগে জর্জ ওয়াগনারের র্যাঞ্চে ছিল। সলটারের বাবা মারা যাওয়ার পর সবার ধারণা ছিল সে-ই এবার ফোরম্যান হবে। ম্যাকগ্র সব সময়ই গোমড়ামুখো কঠোর চরিত্রের লোক। দুর্ব্যবহারে অভ্যস্ত। রয় সলটার ফোরম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর লোকের সঙ্গে ওর দুর্ব্যবহারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তবে বক্স ডব্লিউ তখনও ছাড়েনি ও, তারপর অসকার এখানে র্যাঞ্চ কেনার পর কিভাবে যেন ওর ফোরম্যানের চাকরিটা বাগিয়ে নেয় সে, বক্স ডব্লিউ ছেড়ে চলে যায়। এরপর সাটারের সঙ্গে আর কখনও কথা বলেনি ও।
তোমার বাবা মারা যাওয়ার সময় থেকেই গণ্ডগোলের শুরু, ফ্লিন্ট বলল।
বাবা মারা যায়নি, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। তাকে মারা হয়েছে।
কিন্তু এতদিনেও তো জানা গেল না কিছু। তোমার কি মনে হয়? কেউ শিকার করতে গিয়ে ভুল করে
অসম্ভব, বলল সলটার। শিকারি হলে গুলি করার পর অবশ্যই ভুল বুঝতে পারত। লাশ নিয়ে আসত।
তা ঠিক। তাকে সম্ভবত খুন করা হয়েছিল, সোজা হয়ে বসল ফ্লিন্ট। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল সে। কিন্তু বাবা তো কখনও কারও ক্ষতি করেনি, ফ্লিন্টের দিকে চেয়ে বলল সলটার।
ক্ষতি না করলেও শত্রু জন্মায়। কে যে কখন কি ভাবে শত্রু হয়ে যাবে। বোঝার উপায় নেই।
বেশ অনেকদূর চলার পর ঘোড়া থামাল ফ্লিন্ট। স্যাডল থেকে ইচ্ছে করে পিছলে পড়ল ঘাসে। হাত পা ছড়িয়ে, চোখ বুজে শুয়ে রইল। সলটার ঘোড়া থেকে নেমে ওর ওপর ঝুঁকতেই খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার কথা বলল ফ্লিন্ট। ওর দুর্দশা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সলটার। তাই বলল, তুমি বরং এখানেই শুয়ে থাক। আমি ডাক্তার আর ওয়াগন নিয়ে ফিরে আসছি।
দরকার নেই। আমাকে স্যাডলে তুলে দাও, কোনক্রমে উঠে দাঁড়াল ফ্লিন্ট।
আবার এগিয়ে চলল ওরা। খানিক বাদেই দেখা গেল শহর। বাফেলো ফ্ল্যাট। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ওরা মেইন রোড ধরে চলেছে এখন। একপাশে কাত হয়ে রয়েছে ফ্লিন্ট। ওর পাশে ঘোড়া নিয়ে এল সলটার। ফ্লিন্টকে পড়ে যেতে দেখলেই ধরে ফেলবে।
সবে বিকেল হয়েছে। প্রচুর লোকজন এখন রাস্তায়। এসময় স্যালুনের সামনের দিক থেকে ডাকল কে যেন। সলটার চেয়ে দেখল পরিচিত এক লোক। হাত তুলল সে। তবে থামল না। ফ্লিন্টকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জেলখানা পেরোল ওরা। ল অফিসের দরজায় শেরিফ রজার হার্পার দাঁড়িয়ে ছিল। মাঝবয়সী লোকটি কঠোর হলেও ন্যায়পরায়ণ। ফ্লিন্টের এ অবস্থা দেখে এগিয়ে এল সে।
কি খবর, হার্পার? আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। যাবে নাকি? আবার রাসলারদের উপদ্রব, বলল সলটার।
দীর্ঘ পদক্ষেপে ওদের কাছে পৌঁছে গেল শেরিফ। ওরা গুলি করেছে?
ওরাই তো করবে। আমি নিজেকে গুলি করব নাকি? প্রায় চিৎকার করে উঠল ফ্লিন্ট।
চুপ করে রইল শেরিফ।
সলটার পৌঁছে গেল ডাক্তারের বাড়ির সামনে। দ্রুত নেমে পড়ল স্যাডল থেকে। ধীরে ধীরে ঘোড়া থেকে নামার চেষ্টা করল ফ্লিন্ট। ওর সব শক্তি আর সহ্যক্ষমতা যেন শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত ওর দুপাশে পৌঁছে গেল সলটার আর শেরিফ। দু’পাশ থেকে ধরে ওকে নামাল। নিয়ে চলল ডাক্তারের বাড়ির দিকে।
মারাত্মক জখম? প্রশ্ন করল শেরিফ।
কাঁধে লেগেছে, খুব মারাত্মক কিছু নয়। তবে রক্ত পড়েছে প্রচুর, সলটার বলল।
ডাক্তারের সার্জারিতে নিয়ে যাওয়া হল ফ্লিন্টকে। বসানো হল গদিওয়ালা কাউচে। শেরিফ গেল ডাক্তার ডাকতে। এই ফাঁকে ফ্লিন্টকে শুইয়ে দিল সলটার। গায়ে কম্বল চাপা দিল। শেরিফ ডাক্তার নিয়ে ফিরে এল। ডাক্তার তার সরঞ্জাম ধোয়ার কাজ শুরু করতেই হার্পার বলল, পুরো ঘটনাটা খুলে বল তো, সলটার, তুমি এতে জড়ালে কিভাবে?
সলটার নিজের দেখা আর ফ্লিন্টের মুখে শোনা সব ঘটনা খুলে বলল। মন দিয়ে শুনল শেরিফ। সব শোনা হলে পর বলল, ওদের কাউকে চিনতে পেরেছ?
একশ গজ দূর থেকে দেখেছি। চেনার প্রশ্নই ওঠে না। ঘোড়াগুলোও অপরিচিত, জবাব দিল সলটার।
আমি বুঝি না গরু চোরের দল আসে কোত্থেকে, আবার চুরি করে পালায়ই বা কোথায়। চেষ্টার ত্রুটি তো করছি না আমি। ফল পাচ্ছি কই? অসহিষ্ণু গলায় বলল শেরিফ।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সলটার। ওদের সাহস দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। গুলি করতেও দ্বিধা করছে না ওরা। দেখি, র্যাঞ্চে ফিরে জর্জের সঙ্গে কথা বলব।
অবশ্য ইদানীং কোন ব্যাপারেই মন নেই তার। হয়ত বয়স একটা কারণ, বলল। সলটার।
কত আর বয়স! আমার মতই হবে, দ্রুত বলল শেরিফ। মুচকি হাসল। সলটার। শেরিফের আঁতে ঘা লেগেছে।
জর্জের ব্যাপারটা আলাদা, ও তো আর তোমার মত একা নয়। দু’দুটো উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে সামলাতে হয় তাকে। তানিয়াকে নিয়ে অবশ্য চিন্তা নেই তার। ওকে আসলে ভোগাচ্ছে জোহান।
ছোকরাটাকে প্রায়ই শহরে দেখি, বলল শেরিফ। জর্জ আমার পুরানো বন্ধু, ওকে ভালমতই চিনি আমি। মনে হয় ছেলেকে লাইনে আনতে পারবে সে।
পারলেই ভাল, বলল সলটার। চোখ জোড়া সরু হল এক মুহূর্তের জন্যে। ওর দৃষ্টি গেল ফ্লিন্টের কাঁধে। ক্ষতস্থান থেকে সরু লম্বা একটা যন্ত্র বার করছে ডাক্তার। দলা পাকানো একটা সীসের টুকরো চিমটের মত যন্ত্রটায় আটকে রয়েছে। শিউরে উঠল সলটার। কিন্তু ফ্লিন্টের কোন ভাবান্তর নেই। আবার শেরিফের দিকে দৃষ্টি দিল সে।
জোহানের সঙ্গে স্যালুনের মেয়েটার কি সম্পর্ক? জান কিছু?
হেলগার কথা বলছ? বলল শেরিফ। মেয়েটা ম্যাকগ্র-র বান্ধবী। ওর সঙ্গে মাখামাখি করছে জোহান। আশ্চর্য ব্যাপার, ম্যাকগ্র কিছুই বলছে না, অথচ গত বছর একজনকে খুন করতে বসেছিল সে। হেলগার প্রতি নাকি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছিল লোকটি।
হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল সলটার। ম্যাকগ্রর মতলবটা জানা দরকার আমার।
আমি জানতে চাই রাসলারদের রহস্য, দৃঢ় কণ্ঠে বলল শেরিফ।
ওই তিন রাসলারের ট্র্যাক পরীক্ষা করে দেখতে পার, সলটার বলল। আমার সঙ্গে আজই চল, আমি জায়গামত নিয়ে যাব। অসকারের রেঞ্জের ওপর দিয়ে পালিয়েছে ওরা। কাজেই খুঁজে বার করতে অসুবিধে হবে না।
আমিও তাই ভাবছিলাম, বলল শেরিফ। কিন্তু এখন গিয়ে কি আর লাভ হবে? ট্রাক মুছে দেয়া ওদের জন্যে অসম্ভব কিছুই নয়। এর আগে কয়েকবার রেড রিজ পর্যন্ত রাসলারদের ধাওয়া করে গিয়েছিলাম। তারপর আর খুঁজে পাইনি।
ওপথেই গরু পাচার হচ্ছে, বলল সলটার, তারমানে প্রতিবারই অসকারের র্যাঞ্চ পেরোচ্ছে ওরা।
অসকারের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে মনে করছ তুমি? তা না-ও হতে পারে। কারও না কারও র্যাঞ্চের ওপর দিয়ে তো গরু তাড়িয়ে নিতে হবেই। অসকারের র্যাঞ্চের ওপর দিয়ে নিচ্ছে। এতে কিছু প্রমাণিত হয় না, শেরিফ বলল।
তা হয়ত হয় না। তবে নজর রাখতে তো আর ক্ষতি নেই। আমি জর্জকে বলব পাহারা বসাতে। আমাদের লোকেরা পাহারা দিলে কিছু না কিছু জানা। যাবেই।
ওদের সঙ্গে আমি থাকতে পারলে ভাল হত, বলল শেরিফ। কিন্তু জানই তো একজন মাত্র ডেপুটি আমার। তা-ও আবার ভরসা করার মত নয়। তাই সব কিছুতেই হাজারবার ভাবতে হয়।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল সলটার।
শেরিফের ডেপুটি ডিক উইলসনকে দুচোখে দেখতে পারে না সে। তানিয়ার সঙ্গে দেখা হলেই ব্যাটা ঘেঁসাঘেঁসি করতে চায়। তানিয়ার আশপাশে কাউকেই সহ্য করতে পারে না ও।
দেখি জোহানের খোঁজ করি গিয়ে, দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল সলটার। তুমি স্পটে যেতে চাইলে তোমাকে নিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে রওনা দেব আমি। জোহানকে তো স্যালুনেই পাওয়া যাবে। কি বল? শেরিফকে প্রশ্ন করল সলটার।
হ্যাঁ। কাল সারারাত ওখানেই ছিল সে। আজ সকালেও যেতে দেখেছি।
একটা ব্যাপার বুঝি না, দরজার কাছে পৌঁছে বলল সলটার, ম্যাকগ্র আর আমি একই কাজ করি, দুজনেই ফোরম্যান। ও এত অবসর পায়, কিভাবে? আমার তো কাজের চাপে ঘুম প্রায় হারাম।
মানুষে মানুষে তফাৎ আছে। সবাই তো আর তোমার মত নয় যে কাজ নিয়ে পাগল। তাছাড়া ম্যাকগ্রর বস্ র্যাঞ্চে থাকে না। জানই তো কেন, বলল শেরিফ।
চুপ করে রইল সলটার, জবাব দিল না।
তুমি একা ফিরতে পারবে, ফ্লিন্ট? নাকি আমি পৌঁছে দেব? প্রশ্ন করল সলটার।
পারব, সলটার, বলল ফ্লিন্ট। ছেলেরা আমার খোঁজে শহরে আসবেই।
০২. স্যালুন খোলা থাকে সারাদিনই
স্যালুন খোলা থাকে সারাদিনই। মাঝে মধ্যে অবশ্য পোকার জমে উঠলে রাতেও খোলা রাখা হয়। ব্যাট উইং ডোর ঠেলে স্যালুনের চৌকাঠে দাঁড়াল এসে সলটার। ভেতরটা অস্পষ্ট। খানিকক্ষণ ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সে। চোখ সইয়ে নিল। বারটেন্ডার দাঁড়িয়ে রয়েছে বারের পেছনে। জনা দুয়েক লোককে গেলাস হাতে দেখা গেল সেখানে। কোণের দিকে একটা চারকোনা টেবিলে বসে রয়েছে। কয়েকজন। জোহানকে চিনতে পারল সলটার। ম্যাকগ্র আর অসকারের র্যাঞ্চের আরও কয়েকজনকেও টেবিলে দেখতে পেল সে।
বেশ শোরগোল চলছে টেবিলটাতে। সেদিকে এগোল সলটার। জোহান হারছে বুঝতে বাকি রইল না তার। ও বাপের কাছ থেকে হাতখরচের জন্যে যে টাকা পায় তার বেশিরভাগটাই যায় ম্যাকগ্রর পকেটে। জুয়া খেলে আদায় করে নেয় সে। বাকিটা মদ খেয়ে ওড়ায় জোহান। সঙ্গে ম্যাকগ্র তো থাকেই। ম্যাকগ্রর সঙ্গে মিশে নিজের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে করছে জর্জ ওয়াগনারের বোকা ছেলেটা, ভাবল সে।
টেবিলটার কাছে পৌঁছল সলটার, দাঁড়াল জোহানের ঠিক উল্টোদিকে। উত্তেজনায় টানটান অবস্থা ছেলেটার। মাত্র বিশ বছর বয়স ওর। অথচ ভাব ভঙ্গিতে যেন বিরাট বীরপুরুষ। কাউকে পরোয়া করে না। এর জন্যে সবচেয়ে বেশি দায়ী ওর বারা। অতিরিক্ত লাই দিয়ে মাথা খেয়েছে ছেলেটার। এখন আর সামলাতে পারছে না।
জোহানের ডানপাশে বসেছে ম্যাকগ্র। বছর চল্লিশেক বয়স। লম্বা। পেশীবহুল শরীর। গোল মুখটাতে অসংখ্য ভঁজ। চোখ দুটো থেকে যেন সবকিছুর প্রতি বিতৃষ্ণা ঝরে পড়ছে।
হঠাৎ চোখ তুলে চাইল সে। চোখাচোখি হল সলটারের সঙ্গে। ম্যাকগ্রর মুঠো শক্ত হল হাতের কার্ডগুলোতে। পরক্ষণেই চোখ নিচু করে আবার খেলায় মন দিল সে।
জোহান, তোমার সাথে কথা আছে, নরম গলায় ডাকল সলটার।
ওর দিকে চাইল জোহান। ক্ষণিকের জন্যে বিরক্তি দেখা দিল তার চোখে। তারপর মৃদু হাসল।
কি খবর, সলটার? বাবা পাঠিয়েছে?
কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম খোঁজ নিয়ে যাই, বলল সলটার।
বাবা-ছেলের বিবাদ মেটাতে মেটাতে বিরক্ত হয়ে গেছে সে। সলটার নিজে নির্বিরোধী লোক। পারিবারিক অশান্তি মোটেও পছন্দ নয় তার। তবু জড়িয়ে পড়তে হয় এসবে। বাবা-ছেলের বিরাদকে কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকগ্র। উৎসাহিত করছে ওর অর্ধেক বয়সী জোহানকে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বক্স ডব্লিউ এর প্রত্যেকে।
তুমি বারে গিয়ে ড্রিংক নাও। আমার কথা বললেই হবে। আমি আসছি, ওর দিকে না চেয়েই বলল জোহান।
থ্যাংকস, বারের দিকে হাঁটা দিল সলটার। এ সময় কানে এল ম্যাকগ্রর গলা। নিচু গলায় বলল কি যেন। ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছে বুঝতে পারল সলটার। লাল হয়ে উঠল তার মুখ। শক্ত হল মুঠো। তবে ফিরল না সে। এগিয়ে গেল বারটেণ্ডারের দিকে। বিয়ারের অর্ডার দিল। বারের পেছনের আয়নাটায় চোখ গেল ওর। দেখল ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র। ওর স্যাঙাত্রা হাসছে। কেবল মাথা নিচু করে বসে রয়েছে জোহান। অস্বস্তি বোধ করছে সে।
রাগে গা জ্বলে গেল সলটারের। বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করল সে। ফালতু ঝামেলায় জড়ানো ঠিক হবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ও। মৃদু চুমুক দিচ্ছে বিয়ারের ক্যানে। এসময় বারের কাছে এল জোহান।
বিশটা ডলার হবে, সলটার? প্রশ্ন করল সে।
অত টাকা নিয়ে ঘুরি না আমি।
মিথ্যে বল না, বক্স ডব্লিউতে তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। অথচ বিশটা ডলার ধার দিতে পারছ না?
তোমাকে ধার দিলে টাকাটা যাবে ম্যাকগ্রর পকেটে। কাজেই দেব না।
ঠিক আছে। তোমাকে চিনলাম-বলল জোহান।
আমার কিছু করার নেই, জোহান। তোমাকে আমি ঘোড়া আর অস্ত্র চালাতে শিখিয়েছি। কিন্তু ভাল-মন্দের পার্থক্য এখনও শেখাতে পারিনি। আবার বলছি, জোহান এই লোকগুলো ভাল নয়। এদের সঙ্গে মিশে নিজেকে নষ্ট কর না। নিজেকে পুরুষ ভাবছ তুমি। অথচ সেটা প্রমাণ করতে পারছ না।
থাক আর শুনতে চাই না। এসব কথা অনেক শুনেছি। তোমরা সবাই এক, চিৎকার করে উঠল জোহান। স্যালুনের সবার চোখ এখন ওদের দিকে। একদৃষ্টে এ দিকেই চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।
আবার শোনা গেল জোহানের চিৎকার। বাবার সঙ্গে জাহান্নামে যাও তুমি। দালাল কোথাকার। আমার পৌরুষ নিয়ে কথা বলে আবার আমার বোনের পিছে ঘুরঘুর করে। কাপুরুষ। সাহস থাকলে তানিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াও গিয়ে যাও।
ঝলসে উঠল সলটারের ডানহাত। প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল জোহানের বাঁ গালে। ছিটকে পড়ল সে।
কয়েকটা চেয়ার সরানর আওয়াজ কানে এল সলটারের। এগিয়ে আসছে ম্যাকগ্র, ধীর পদক্ষেপে। পেছনে তার দলের লোকেরা। ওর উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারছে সলটার। দীর্ঘদিন ধরে বোধহয় এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতে ছিল
কাজটা ভাল করলে না, সলটার, কর্কশ কণ্ঠে বলল ম্যাকগ্র। এগিয়ে এসেছে। সে বারের কাছে।
জোহান ওয়াগনার আমাদের বন্ধু। আমি থাকতে ওর গায়ে টোকা পড়তে পারে না।
পড়ল তো, বেয়াদবি করলে ভবিষ্যতেও পড়বে, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল সলটার। স্যালুনে এখন পিন পতন নিস্তব্ধতা। কেবল জোহানের জোরে জোরে, শ্বাস নেয়ার শব্দ ছাড়া কিছু কানে আসছে না। হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে সে। ওর বাপ হলেও একই কাজ করত, বলল সলটার।
তুমি ওর বাপ নও। অথচ ভাবটা এমন যেন বক্স ডব্লিউ তোমার।
বক্স ডব্লিউ আমার হোক আর যারই হোক তোমার এত লাগে কেন? তুমি ওটার ফোরম্যান হতে পারনি, সেজন্যে?
বাজে কথা বলবে না, রেগে উঠল ম্যাকগ্র। সলটার বুঝল জায়গামত খোঁচা দিয়েছে সে। এক কদম এগিয়ে এল ম্যাকগ্র। হাত চলে গেছে কোমরে। পিস্তলের বটে। ওকে কভার দিচ্ছে স্যাঙাত্রা।
বিপদ আঁচ করল সলটার। ওর ডান হাত নেমে এল কোল্ট ৪৪ এর বাটে। ম্যাকগ্রর দিক থেকে চোখ সরাল না সে।
ঝামেলা করতে চাও? কঠিন গলায় প্রশ্ন করল সলটার। এক মুহূর্তের নীরবতা। এসময় উঠে দাঁড়াল জোহান।
না, বলল সে। চাইল ম্যাকগ্রর দিকে। তুমি কথা দিয়েছিলে। মনে নেই?
কিসের কথা দেওয়া-দেওয়ি? সলটারের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। এরা তোমাকে কি কথা দিয়েছে, জোহান?
কয়েকজন বয়স্ক লোক এসময় উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। জুয়া খেলছিল। ওদের উঠে যেতে দেখে বুঝল সলটার, গোলমাল এড়ানো যাবে না। না যাক, যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত রয়েছে সে।
জোহান, দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? বার্নে যাও। আমি আসছি, বলল সলটার।
ওকে লক্ষ্য করে ঘুসি ছুঁড়ল জোহান। সৎ করে মুখ সরিয়ে নিল সলটার। লাগাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল জোহান। ওর বাঁ কাঁধে সজোরে ধাক্কা দিল সলটার। আবার মাটিতে পড়ে গেল সে।
গত কবছরে বড় বেশি বাড় বেড়েছে তোমার। তোমাকে সাইজে আনতে হবে, চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকগ্র। চেষ্টা করে দেখ, পাল্টা বলল সলটার। মানা করেছে কে?
ম্যাকগ্রর মুখে কথা সরল না। সলটারের চেহারা রাগে থমথম করছে। ম্যাকগ্রর সঙ্গের লোকগুলো পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কোনমতে উঠে দাঁড়াল জোহান। টলতে টলতে এগোল সলটারের দিকে।
সোজা গিয়ে ঘোড়ায় চাপ। আমার সঙ্গে র্যাঞ্চে ফিরবে তুমি, হুকুমের ভঙ্গিতে ওকে বলল সলটার। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল জোহান। যা বলছি কর। তুমি কি চাও কেউ মারা যাক? প্রশ্ন করল সলটার।
কে মরবে? তুমি না আমি? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ম্যাকগ্র। চোখ দুটো তার ধকধক করে জ্বলছে। সলটার বুঝল যে-কোন মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে।
সেটা ভাল করেই জান, শান্ত কণ্ঠে বলল সে।
তোমাকে মজা দেখাতাম, ধীরে ধীরে বলল ম্যাকগ্র। কেবল আইন অমান্য করতে চাই না বলে ওকে কথা শেষ করতে দিল না সলটার।
আইনের কথা তোমার মুখে আগে কখনও শুনিনি, শান্তস্বরে বলল সে। সত্যি কথাটা স্বীকার করতে লজ্জা কিসের? আসলে আমাকে ভয় পাও তুমি।
মুঠো পাকিয়ে তেড়ে এল ম্যাকগ্র। সলটারের চেয়ে অনেকখানি লম্বা সে। ওজনেও বেশি। কিন্তু সেজন্যে মোটেও ভীত নয় সলটার। প্রস্তুত সে। ম্যাকগ্রর ডান হাতের ঘুসিটা আসতেই বাঁ হাত তুলল সলটার। হাতুড়ির বাড়ি পড়ল যেন হাতে। পরক্ষণেই পাল্টা আঘাত হানল সে। চোয়ালে প্রচণ্ড ঘুসি খেয়ে, টলতে টলতে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল ম্যাকগ্র। সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাল সলটার। সামান্য এগিয়ে এসে আরও গোটা কয়েক ঘুসি বসাল ওর নাকে মুখে। ফ্লোর আঁকড়ে ধরল ম্যাক, চোখে আঁধার দেখছে। মুহূর্ত পরেই ধেয়ে এল সে, গোয়ারের মত। বোধ বুদ্ধি প্রায় লোপ পেয়েছে তার। সামান্য সরে গেল সলটার। তার ডান হাতের প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল ম্যাকগ্রর চোয়ালে। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হল না ম্যাকগ্রর পক্ষে। আর্তনাদ করে উঠল সে। দড়াম করে পড়ে গেল স্যালুনের মেঝেতে। ঠোঁট আর নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে, ফুলে উঠেছে চোয়াল। হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রইল ও। বিশাল বুকটা হাপরের মত ওঠা-নামা করছে।
আর কেউ আছে? দর্শকদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল সে। শক্ত দেখাচ্ছে তার মুখ। কেউ টু শব্দটি করল না। র্যাফটার ও-র লোকগুলো হতবাক হয়ে গেছে বিশালদেহী ওস্তাদের দুরবস্থা দেখে। ঠিক আছে, বলল সলটার। খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে এল সে। জোহানের দিকে চেয়ে বলল, এখনও দাঁড়িয়ে আছ? তোমাকে ঘোড়া রেডি করতে বলেছিলাম না?
ওর কথায় মাথা নেড়ে সায় জানাল জোহান। মেঝেতে শুয়ে থাকা ম্যাকগ্রর দিকে একবার দেখে নিয়েই প্রায় ছুটে বেরোল স্যালুন থেকে।
বক্স ডব্লিউ-এর লোকজনের সঙ্গে লাগতে এস না। সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, অসকারের র্যাঞ্চের লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলল সলটার।
ঘুরে দাড়াল কথা শেষ করেই। বুটের শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল স্যালুন ছেড়ে। ঘোড়র কাছে পৌঁছে স্যাডলে চেপে বসল। স্যালুনের দরজার দিকে এক ঝলক চাইল সে। নাহ্ কোন সাড়াশব্দ নেই। পিস্তলের বাঁট থেকে হাত সরিয়ে নিল ও। ঘোড়া হোটাল আস্তাবলের দিকে। দ্রুতবেগে। আস্তাবলে ঢুকে জোহানকে ঘোড়ায় স্যাডল পরাতে দেখল সে। শেরিফও রয়েছে খানিকটা দূরে। ঘোড়া রেডি করছে। ওদের সঙ্গে যাবে।
মাফ করে দিয়ো সলটার, বলল জোহান। আমার ভুলের জন্যে সত্যিই কেউ মারা যেতে পারত। আমি ভাবতেও পারিনি ওরা আমার পক্ষ নেবে।
ওরা তোমার পক্ষ নেয়নি, জোহান, হালকা ভাবে বলল সলটার। ম্যাকগ্র বহুদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমাকে শায়েস্তা করতে চায়। তোমার অজুহাতে সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছিল।
ভাল শিক্ষা পেয়েছে ম্যাকগ্র, বলল জোহান। জীবনেও ভুলবে না।
তাই? শ্রাগ করল সলটার। শেরিফ এগিয়ে এল এসময়। ওদের কথা কানে গেছে তার। আজকের ব্যাপারটা তোমাকে একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি, জোহানকে বলল সলটার।
কি হয়েছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। কোন গোলমাল?
সব দোষ আমার, মাথা নিচু করে বলল জোহান। শেরিফকে খুলে বলল পুরো ঘটনাটা। সলটার লক্ষ করল শক্ত হয়ে উঠল শেরিফের মুখের পেশীগুলো।
সলটার, ম্যাককে তো চেনই। ও তোমাকে ছেড়ে দেবে না। যেভাবেই হোক এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবে, বলল শেরিফ।
আমি ওর প্রতি লক্ষ রাখব, দাঁতের ফাঁকে বলল সলটার। আমি ফোরম্যান। হওয়ার পর থেকেই আমার ওপর খেপে রয়েছে ও। জোহান, দেখলেই তো ওরা কেমন, দোহাই তোমার, ওদের কাছ থেকে দূরে থাক।
সে আর বলে দিতে হবে না, বোদ্ধার মত বলল জোহান। চল, রওনা দিই, বাবার সঙ্গে কথা আছে আমার।
শেরিফও যোগ দিল ওদের সঙ্গে। তিনজনে বেরিয়ে এল রাস্তায়। চলল শহর ছেড়ে। কেউ কথা বলছে না। তবে সলটারের মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে স্যালুনের ঘটনাটা। ম্যাকগ্রর চোখের দৃষ্টি ভাল লাগেনি ওর। কি ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। কে জানে। আচ্ছা, বাবাকে কি ম্যাকগ্রই মেরেছে? বাবার সঙ্গে সেদিন ম্যাকগ্রও বেরিয়েছিল। ভাবনাগুলো খোঁচা দিচ্ছে মনে। ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
আপনি কোথায় চলেছেন? জোহান জিজ্ঞেস করল শেরিফকে। রেঞ্জে কিছু হয়েছে?
হ্যাঁ, শেরিফ র্যাঞ্চের ঘটনা খুলে বলল জোহানকে।
আমি আপনাদের পাশে আছি, বলল জোহান। ওর বলার ভঙ্গিতে এমন একটা দৃঢ়তা আছে যার ফলে ওর দিকে চমকে তাকাল সলটার। কিন্তু ওর চেহারা দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারল না সে।
ওই তিনজন কারা হতে পারে? প্রশ্ন করল জোহান।
জানি না, জবাব দিল সলটার। তবে আমরা ট্র্যাক অনুসরণ করব। তুমিও থাকতে পার আমাদের সাথে। হয়ত কিছু বেরিয়েও যেতে পারে। ডজন খানেক রাসলার আছে এ দলে, কোন সন্দেহ নেই। আর ওদের হেডকোয়ার্টারও রয়েছে এ রেঞ্জেই। আমি পাহারার ব্যবস্থা করতে চাই। অবশ্য সব র্যাঞ্চারের সঙ্গে আলাপ করেই যা করার করব। রাসলাররা ধরা না পড়া পর্যন্ত পাহারার ব্যবস্থা থাকবে।
আমিও থাকতে চাই, বলল জোহান।
যেখানটাতে ফ্লিন্টকে গুলি করা হয়েছিল সেখানে এসে পড়ল ওরা। শেরিফ নজর বোলাল চারপাশে। তারপর রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে অসকারের র্যাঞ্চে চলে এল ওরা। এ পথ দিয়েই রেড রিজের দিকে পালিয়েছে গরু চোরের দল।
কাজটা কঠিন, বলল শেরিফ। আরও লোক লাগবে।
সে তোমার ব্যাপার, পাল্টা বলল সলটার। আমি কাজ চালিয়ে যাব। জোহান, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বাবাকে সব কথা বলবে। আর জো, মার্টিন আর বেটকে নিয়ে ফিরে আসবে।
ওরা আসতে চাইবে না, জোহান বলল। আজ রবিবার। ওরা হয়ত শহরে যেতে চাইবে। সবাই তো আর তোমার মত নয়।
তবে তুমি তাকে নিয়ে এস গে, শেরিফকে বলল সলটার। আমি আর জোহান থেকে যাই। কি বল? প্রশ্ন করল সে।
আগে জানা দরকার ট্রাকগুলো কোথায় গেছে, গম্ভীর স্বরে বলল শেরিফ। চিন্তিত। অসকারের বাড়ি এখান থেকে সাত মাইল দূরে। এপথ ধরে গেলে লয়েডের র্যাঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছব আমরা। তাই না?
হ্যাঁ, বলল সলটার।
ঘোড়া দাবড়াল, ওরা। ঘণ্টাখানেক পরে রেঞ্জ পেরিয়ে গেল, তিনজনে। রিজ কান্ট্রির পাহাড়গুলোর কাছে পৌঁছল ওরা। রুক্ষ জমি। ভাঙা-চোরা। ঘাস প্রায় চোখেই পড়ে না এখানে। বিশাল সব পাথর পড়ে রয়েছে এখানে ওখানে।
আকাশের দিকে চাইল সলটার। রোদ মরে এসেছে। খুব বেশিদূর আজ আর এগোনো যাবে না। এখনও ট্র্যাক অনুসরণ করছে ওরা। চারদিক নিঃশব্দ। ঘোড়ার খুরের শব্দ ছাড়া আর কিছু কানে আসছে না।
এখানেই থামা যাক, আচমকা বলল শেরিফ। রুক্ষ জমিতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে ওদের ছায়া। সারা রাত এভাবে চললেও বোধ হয় পথ ফুরোবে না। রাসলাররা বোকা নয়। ওরা সরাসরি, আস্তানায় ফেরেনি। পসি অনুসরণ করতে পাঞ্জে, সেই ভয়ে। খুব সম্ভব আশপাশের কোন শক্ত জমিতে ট্রাক নষ্ট করে নিয়েছে। তারপর ফিরে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
হতে পারে, ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামল সলটার। সতর্ক দৃষ্টিতে চাইল মাটির দিকে। কলোরাডো সীমান্তের কাছাকাছি এসে গেছে তারা। যে কোন মুহূর্তে পাথুরে জমিতে ট্র্যাক হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে আশা ছাড়ল না সে।
এখন কি করতে চাও? অসহিষ্ণু গলায় সলটারকে প্রশ্ন করল জোহান। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। খানিকবাদে আর ট্র্যাক দেখা যাবে না। সঙ্গে লোকও নেই যে ক্যাম্প করব। আপনি কি বলেন, শেরিফ?
কি আর বলব। সব সময় যা করি এবারও তাই করতে হবে। ফিরে যাব, হতাশ গলায় বলল শেরিফ। এপর্যন্ত এসে বারবারই ব্যর্থ হয়েছি আগেও।
না, তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল সলটার। কিছুতেই না, ট্র্যাক ফুরানো না পর্যন্ত যাব আমরা। তিনজন আছি, তিনদিকে যাব।
খামোকা সময় নষ্ট করছি আমরা। তারচেয়ে বরং ফিরে গিয়ে পসি বাহিনী পাঠাই। পুরো এলাকা চষে চোরদের খুঁজে বার করবে। আমি বলছিলাম কি, সলটার, এখনকার মত ফিরে যাই চল, মিনমিন করে বলল শেরিফ।
তুমি চাইলে ফিরে যেতে পার, বলল সলটার। আবার রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিল সে। জোহান, তুমি র্যাঞ্চে গিয়ে লোক নিয়ে এস। যত দ্রুত সম্ভব। সাথে কদিন চলার মত খাবার আর পানিও আনবে। দেখ আবার শহরে চলে যেয়ো না।
কি যে বল না তুমি, অভিমান ঝরে পড়ল জোহানের কণ্ঠে। শহরে আর যাই কিনা সন্দেহ।
না গেলেই ভাল, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। এখন চটপট রওনা হয়ে যাও। আমি চিহ্ন রেখে এগোব। তুমি ওদের নিয়ে ঠিক এখানটাতে ফিরে আসবে। তোমরা আসার আগেই রাত হয়ে যাবে। কাজেই ক্যাম্প করে কাল ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পার। তারপর আমাকে অনুসরণ করবে।
আপনি কি করবেন? শেরিফের দিকে চেয়ে জানতে চাইল জোহান।
তুমি গিয়ে লোক নিয়ে এস। আমি সলটারের সঙ্গে যাব। কাল দেখা হবে আশা করি, বলল শেরিফ।
মাথা ঝাঁকাল জোহান, উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে সে। ঘোড়া ছোটাল। সেদিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে লাগাম ঝাঁকাল সলটার। চলতে শুরু করল ঘোড়া। শেরিফ সঙ্গ নিল ওর।
সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। এখনও অবশ্য সলটারের চোখে পড়ছে ট্র্যাক। রিজ কান্ট্রির দিকে এগোল ওরা।
ঘন কালো ছায়া এখন ওদের চারপাশে। চুপ করে রয়েছে শেরিফ, ফলে কেমন যেন একটা একাকীত্ব ঘেঁকে ধরেছে সলটারকে।
দাগ চোখে পড়ছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। তোমার চোখ তো আমার চেয়ে ভাল।
দাগ-টাগ পরে। আগে একটা ভাল জায়গা চোখে পড়ে কিনা দেখি, জবাবে বলল সলটার। রাতটা কাটাতে হবে। কাল খুব ভোরে আবার খুঁজতে শুরু করব।
স্যাডল থেকে নামল ওরা। চারদিকে পাথরের স্তূপ। সলটার বুঝতে চেষ্টা করল কোথায় রাত কাটাবে।
আমার তৈরি হয়ে আনা উচিত ছিল, বলল শেরিফ। বোঝা উচিত ছিল বাইরে রাত কাটাতে হতে পারে। আসলে রাসলারদের দোষ নেই! সব দোষ আমার এই বুড়ো গর্দভের।
কথাগুলো মিথ্যে সেটা তুমি নিজেও জান, মৃদু হেসে বলল সলটার। তোমার যোগ্যতা সম্বন্ধে কারও কোন সন্দেহ নেই। দোষ আমাদের কপালের।
হঠাৎ সচকিত হল সলটার। কি যেন নড়ে উঠেছে। চোখের কোণে দেখতে পেয়েছে সে। সোজা হল ও। ঘুরে দাঁড়াল।
কতগুলো পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক মুখোশধারী। হাতে উইনচেস্টার।
কে ওখানে? ভারী গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। সলটারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওদের দুজনের হাতই চলে গেছে পিস্তলের বটে।
কোন চালাকি চলবে না, হুমকি দিল আগন্তুক। হাত তুলে দাঁড়াও। শেরিফ, তুমিও।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদেশ পালন করল ওরা। আঁধার ভেদ করে দেখার চেষ্টা করল লোকটিকে। কিন্তু মুখোশের কারণে কিছুই চোখে পড়ল না তার।
খিস্তি করল হার্পার। শেষ মুহূর্তে তার হাত ঝলসে উঠল কোল্টের বাঁটে। চিৎকার করে সতর্ক করল সলটার। কিন্তু শুনল না শেরিফ। পরমুহূর্তেই গুলি খেয়ে আর্তনাদ করে উঠল সে। ছিটকে পড়ল। গুলির প্রতিধ্বনি ঢেকে দিল তার আর্তচিৎকার। সলটার একবার কেঁপে উঠতে দেখল শেরিফের দেহ। তারপর স্থির হয়ে গেল শেরিফ।
০৩. আইনের লোকদের সেন্স বলে কিছু নেই
আইনের লোকদের সেন্স বলে কিছু নেই, কর্কশ কন্ঠে বলল আগন্তুক। তবে তোমার আছে। তুমি কে? ঐ বুড়োটার সাথে এখানে কি করছ?
আমি রয় সলটার। বক্স ডব্লিউ-এর ফোরম্যান। রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছি আমরা। বোধহয় পেয়েও গেছি তাদের একজনকে।
ও, তুমিই সলটার? তোমাকেই তো খুঁজছি। রাসলারদের উৎপাতে বিরক্ত হয়ে উঠেছ, তাই না?
বিদ্রুপের হাসি হাসল, লোকটি, দাঁতে দাঁত পিষল সলটার। সে ভাল করে লক্ষ করতে চেষ্টা করল মুখখাশধারী লোকটিকে। পরে হয়ত কাজে আসতে পারে।
মাঝারি উচ্চতা লোকটির। কাউবয়দের মত পোশাক তার পরনে। আলোর অভাবে রঙটা দেখতে পেল না সলটার।
খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ নিশ্চয়ই! আমি শিগগির তোমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করছি, আবার বলল লোকটি।
বিপদ আঁচ করল সলটার। পেশীগুলো শক্ত হল তার। যে-কোন মুহূর্তে গুলি ছুঁড়তে পারে আগন্তুক। শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে ওর। অস্বস্তি। তবে সেটা বুঝতে দিল না লোকটিকে।
তোমার কথা বুঝতে পারলাম না, বলল সে। সময় নিচ্ছে আসলে। প্রস্তুত করছে নিজেকে। মরার আগে অন্তত একটা কামড় দিয়ে মরতে চায় ও। তবে। বিপক্ষও সম্পূর্ণ তৈরি রয়েছে বুঝতে পারল সে। দাঁড়িয়ে রয়েছে সলটার। এ অবস্থায় খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না ও। তবে চেষ্টা করতে তো আর দোষ। নেই।
আমার কথা বোঝার দরকার নেই, হা হা করে হেসে উঠল লোকটি। রাইফেল তুলল। পরক্ষণেই বুকে প্রচণ্ড বাড়ি খেল সলটার। কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে। দুহাত বাড়িয়ে বাতাস আঁকড়ে ধরতে চাইল। চেতনা লোপ পেতে। বসেছে ওর। নানা ধরনের আলোর খেলা দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। তারপর সব অন্ধকার।
কিসের শব্দে যেন জ্ঞান ফিরল সলটারের। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। চোখ পিটপিট করে চাইল ওপর দিকে। তারাভরা আকাশ। এখন রাত। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। শীতে কাঁপতে লাগল সলটার। কিছুই মনে করতে পারছে না সে। উঠে বসার চেষ্টা করল। হঠাৎই সব মনে পড়ে গেল ওর। এদিক-ওদিক চেয়ে শেরিফ রজার। হার্পারকে খুঁজল ও। দেখতে পেল ঠিক পাশেই পড়ে রয়েছে শেরিফের দেহ। গুঙিয়ে উঠল হার্পার।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথায় বিকৃত হল মুখ। অতিকষ্টে শেরিফের শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়ল সে। এই সামান্য পরিশ্রমেই মাথা ঘুরতে লাগল ওর। মনে হল জ্ঞান হারাবে আবার।
বুকে হাত দিল সলটার, বাঁ দিকে কাঁধের ঠিক নিচে লেগেছে গুলিটা। রক্ত শুকিয়ে এসেছে প্রায়। শার্টের ভেতর ডান হাত ঢোকাল সে। মৃদু চাপ দিয়ে। পরীক্ষা করল ক্ষতস্থান। দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করল ব্যথাটা। শার্ট খুলতেই দেখল বাঁ কাঁধের মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে গুলিটা। গুলির সময় দ্রুত পাশ ফিরেছিল সে। তাতেই বেঁচে গেছে।
বাঁ হাত অকেজো হয়ে গেছে এ মুহূর্তে। শেরিফের শরীরের ওপর আবার ঝুকল সে। এখনও গোঙাচ্ছে বেচারা। ডান হাত দিয়ে ওর শার্টের বোতামগুলো খোলার চেষ্টা করতে লাগল সলটার। শার্ট খুলে আঙুল দিয়ে ক্ষতস্থান খুঁজতে লাগল ও। বুকের বাঁ দিকে পাওয়া গেল গর্তটা। পাঁজরের ওপর দিকে লেগেছে গুলিটা। বুঝল শেরিফ গুরুতর আহত। পুরো ঘটনাটাই ঘটানো হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। লোকটির মুখ আর শরীর স্মরণ করার চেষ্টা করল ও। কিন্তু চেতনা অসাড় হয়ে আসায় ব্যর্থ হল সে।
শেরিফ, আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? ফাসফেঁসে গলায় প্রশ্ন করল ও। গুঙিয়ে উঠল শেরিফ। ব্যথা সহ্য করে কোনমতে উঠে দাঁড়াল সলটার। ক্ষতস্থানে হাত চলে গেল আবার। বার করে এনে দেখল রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। খানিকটা স্বস্তি পেল সে। রক্ত শুকিয়ে জমে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ফুটো, কিন্তু বেশি নড়াচড়া করলে যে-কোন মুহূর্তে আবার রক্তপাত শুরু হতে পারে।
ওদের ঘোড়া দুটো দাঁড়িয়ে রয়েছে তখনও, ব্ল্যাংকেট রোল দুটো শেরিফের কাছে নিয়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করতে হল ওকে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্ল্যাংকেট রোল দুটো খুলল ও। তারপর চাপা দিল শেরিফের গায়ে।
পরে চারদিকটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল ও। বুঝে পেল না রাসলারদের গোপন আশ্রয়ে এসে পড়েছে কিনা। যদি তাই হয় তবে সেই গানম্যান নিশ্চয়ই ওদের গার্ড। এবং ওরা এখনও বাঘের ঘরে রয়েছে। এ মুহূর্তে এখান থেকে পালানো অসম্ভব। দুজনেই আহত ওরা।
হঠাৎ কি মনে হতে হাঁটু গেড়ে বসল ও মাটিতে খানিক হাতড়াতেই হাতে লাগল শক্ত একটা জিনিস। ওর সিক্সগান। ওটা তুলে নিয়ে হোলস্টারে ভরল সে। আবার উঠে দাঁড়াল ও। ধীর পায়ে সামনে এগোল, এলাকাটা রাসলারদের কিনা সেটা বোঝা দরকার।
শেরিফ যেখানে পড়ে রয়েছে তার চারপাশ দিয়ে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ঘুরে এল সে। রাসলারদের চিহ্ন দেখা গেল না। শেরিফের কাছে ফিরে এল। আবার। দেখল জ্ঞান ফেরেনি তার। বেচারা বাঁচে কিনা সন্দেহ, ভাবল সে। অসম্ভব দুর্বল লাগছে সলটারের। আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ল সে শেরিফের পাশে। চোখ বুজল। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
ঘুম ভাঙতে দেখে চারদিকে আবছা আলো। ডান দিকে গড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসল ও। খানিকবাদেই ভোর আসছে। শেরিফের কথা মনে হতেই ঝুঁকে পরীক্ষা করে দেখল তাকে। যা ভেবেছিল তাই। মারা গেছে শেরিফ রজার হাপার।
শেরিফের মৃতদেহের দিকে খানিকক্ষণ বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল সলটার। তারপর সংবিৎ ফিরে পেয়ে টলতে টলতে এগোল ঘোড়া দুটোর কাছে।
নিজের ঘোড়াটার স্যাডলে চেপে বসল ও। লাগাম চেপে ধরে ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল। এ কাজটুকু করতে হাঁপিয়ে উঠল সলটার।
সূর্য উঠে গেছে ইতিমধ্যে। ছুটে চলেছে সলটারের ঘোড়া। স্যাডলে বসে থাকার জন্যে রীতিমত কসরৎ করতে হচ্ছে ওকে। প্রায় শুয়ে পড়েছে সে ঘোড়ার। পিঠে। ঘোড়ার কেশর আঁকড়ে ধরেছে ডান হাতে। প্রতি ঝাঁকুনিতেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে।
এ সময় দূরে শোনা গেল গুলির শব্দ, থমকে দাঁড়াল ঘোড়া। বহুকষ্টে স্যাডলে বসে রইল সলটার। খিস্তি করল। খানিক বাদেই শুনতে পেল ঘোড়ার খুরের শব্দ।
হোলস্টারে হাত চলে গেল ওর। সরিয়ে নিল পরক্ষণেই। এদের সঙ্গে এদেরই এলাকায় পারা সম্ভব নয়। মাথা ঘুরে উঠল ওর। ছিটকে পড়ল ঘোড়া থেকে। জ্ঞান। হারাল সে।
ক্ষতস্থানে হাতের চাপ পড়তে জ্ঞান ফিরল ওর। চোখ মেলে দেখতে পেল একটি পরিচিত মুখ। তার বস্। জর্জ ওয়াগনার। মৃদু হাসল জর্জ। ওর চোখে উদ্বেগের ছায়া।
যাক, জ্ঞান ফিরেছে তাহলে, গম্ভীর গলায় বলল র্যাঞ্চার। কি ঘটনা বল তো। হার্পার কোথায়?
সলটার দেখতে পেল জর্জের কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আরও কয়েকজন। জোহান রয়েছে ওদের মাঝে। বাকিরা বক্স ডব্লিউ-এর কাউহ্যাণ্ড। অনেকখানি স্বস্তি পেল এবার ও। দুর্বল গলায় সব ঘটনা খুলে বলল। ওকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে এখন। একজন হুইস্কির ফ্লাস্ক ধরেছে মুখের কাছে। কঢোক গিলে কাশতে লাগল ও। চোখ পিটপিট করছে।
কয়েকজন লোক ঘোড়ায় চাপার জন্যে যাচ্ছিল। রাসলারদের খোঁজে যাবে। জর্জ ফেরাল তাদের।
বোকামি কোরো না, দ্রুত বলল সে। রাসলাররা সংঘবদ্ধ। ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু করছে তারা। কোনরকম ঝুঁকিতে যাব না আমরা। র্যাঞ্চের সবাইকে জড়ো করতে হবে এখানে। তারপর সবাই মিলে খুঁজতে শুরু করব। বেট, তুমি আর বিলি সলটারের ট্র্যাক অনুসরণ করে শেরিফের মৃতদেহ নিয়ে এস। টমলিন, তুমি শহরে গিয়ে ডেপুটি শেরিফকে সব জানাও আর পসি বাহিনী নিয়ে তাকে এখানে আসতে বল। আমি এখানে অপেক্ষা করব। মার্টিন, তুমি যাবে অসকারের কাছে। তাকে সব বলবে। আমার কথা বললেই সঙ্গে লোক দিয়ে দেবে সে। এবার সবাই মিলে কাজ করব আমরা। দেখি কি করা যায়।
গলায় হুইস্কি পড়ায় খানিকটা ভালবোধ করছে এখন সলটার। এক কাপ কফি দেয়া হল ওকে। সে সঙ্গে ঠাণ্ডা খাবার। গোগ্রাসে গিলল ও। বোঝা গেল ব্যথার চেয়ে খিদেই বেশি রকম কাহিল করেছে ওকে। গোটা কয়েক কম্বল জড়িয়ে দেয়া হল ওর গায়ে। শুয়ে পড়ল সে। শুনতে পেল মিলিয়ে যাচ্ছে খুরের শব্দ। যে যার হুকুম পালন করতে ঘোড়া ছুটিয়েছে। মাত্র কয়েকজন রইল এই অস্থায়ী ক্যাম্পে। এসময় জর্জ এল তার আহত ফোরম্যানের কাছে।
সলটার, ডাকল সে, খুব কষ্ট হচ্ছে? কেবল হাতটা তুলল সলটার। জোহান আমাকে সব বলেছে। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যা করতে পারিনি তুমি তাই করেছ। এর দরকার ছিল। আমার গাধাটার কারণে মারাও যেতে পারতে তুমি। ম্যাকগ্রকে শুইয়ে দিয়েছিলে শুনলাম?
হাসার চেষ্টা করল সলটার। বিকৃত দেখাল হাসিটা।
ও সুবিধের লোক নয়, বলল জর্জ। কখন কি করে বসে বলা যায় না। আচ্ছা, এই গানম্যানকে ও-ই পাঠায়নি তো?
বসের কথাগুলো ভেবে দেখল সলটার। গতকালকের আগন্তুক বলেছিল ওকেই খুঁজছে সে। ফ্লিন্ট উডকক গুলি খাওয়ার আগে রাসলারদের বিরুদ্ধে, সরাসরি কোন অ্যাকশনে যায়নি সলটার। তবে কি
জর্জ, তোমার কথাগুলো ভেবে দেখার মত, শান্ত স্বরে বলল সলটার। কিন্তু ম্যাকগ্র শেরিফকে খুন করবে কেন?
শেরিফ পিস্তল ড্র না করলে তাকে হয়ত কিছুই বলত না। শুধু তোমাকে মেরে রেখেই চলে যেত।
হুঁ, বলল সলটার।
ওকে আমি ছাড়ছি না, যে করে থোক খুঁজে বার করবই, বলল জর্জ। তারপর যোগ করল, সলটার, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বিশ্রাম দরকার।
ঠিকই বলেছ, দুর্বল কণ্ঠে বলল সলটার। ওঠার চেষ্টা করল সে। আমাকে স্যাডলে তুলে দাও। কদিন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে আসব আমি। আসতেই হবে।
জোহানকে সঙ্গে নাও, বলল জর্জ। নয় মাইল মুখের কথা নয়। অসুস্থ শরীরে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।
ঘাড় নেড়ে সায় জানাল সলটার।
জোহান কোন প্রতিবাদ করল না। খুশি মনে, সলটারের পাশাপাশি বক্স ডব্লিউ-এ ফিরে চলল। সলটারকে সাহায্য করার জন্যে এ মুহূর্তে ব্যাকুল হয়ে রয়েছে সে। পৌঁছে গেল র্যাঞ্চে।
তানিয়া, উঠন পেরনর সময় চেঁচিয়ে ডাকল জোহান। স্যাডলে সোজা হয়ে বসল সলটার। চাইল এপাশ-ওপাশ। বারান্দায় বসে রয়েছে তানিয়া। পাশে অসকার। প্রথমে ঈর্ষা তারপর রাগে জ্বলে গেল ওর শরীর। বারান্দার কাছে স্যাডল থেকে নামল সলটার। এক মুহূর্ত চেপে ধরে রইল স্যাডল হর্ন।
কি হয়েছে? ছুটে এল তানিয়া। উৎকণ্ঠিত। লম্বা-পাতলা মেয়েটিকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। আরও একবার মুগ্ধ হল সলটার। কোঁকড়ানো চুল হলুদ ফিতে দিয়ে বেঁধেছে ও।
সলটার গুলি খেয়েছে, তরিৎ বলল জোহান। শেরিফ মারা গেছে।
সলটারের দৃষ্টি অসকারের দিকে। এই মারত্মক দুঃসংবাদ শুনেও কোনরকম ভাবান্তর হল না তার। অসকারের চোখ দেখে মনে হল সলটারের দুর্দশায় যথেষ্ট খুশি হয়েছে সে। তবে আরও খুশি হত ও শেরিফের দলে যোগ দিলে। একটি কথাও বলল না অসকার। সলটারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াল না। টলতে টলতে বারান্দার দিকে একাই এগোল ও।
দ্রুত নেমে এল তানিয়া। সলটারের ডান কনুই বাঁ হাতে পেঁচিয়ে ধরল সে।
অসকার, প্লীজ, ধর ওকে, অনুনয় করল তানিয়া। নড়ল না অসকার। বসে থেকে যেন মজা উপভোগ করছে সে।
খুব লেগেছে, সলটার? কষ্ট হচ্ছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল তানিয়া।
ভেব না, মুখ বিকৃত করে ব্যথা সহ্য করল সলটার। এত সহজে ভূত হচ্ছি না।
অসকার, ডাকল তানিয়া, দেখছ না ওর কষ্ট হচ্ছে? একটু ধর না।
ঝাড়া দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিল সলটার। দরকার নেই, বলল সে। বিছানা পর্যন্ত যেতে পারব।
আমি ধরছি তোমাকে, জোহান বলল। বোনের জায়গায় এসে গেছে সে। খুশি হল সলটার। ছেলেটা কোন ক্ষোভ পুষে রাখেনি। ওর গায়ে হাত তোলার পরও ওকে বিন্দুমাত্র দোষারোপ করেনি জোহান বা ওর বাবা। আসলে সলটার শুধুমাত্র এ র্যাঞ্চের ফোরম্যান নয়। এ পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক তারচেয়ে অনেক বেশি গভীর। জোহান আর তানিয়ার সঙ্গে ওর সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। জোহানকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করে সে, জোহানও কোনদিন বড় ভাইয়ের অভাব অনুভব করেনি, সমীহ করে ওকে। বাবার মৃত্যুর পর জর্জ ওয়াগনারকে বাবার আসনে বসিয়েছে সলটার।
সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠতে লাগল ওরা। পেছনে তানিয়া। সর্বক্ষণ জোহানকে বকা-ঝকা করে গেল সে। আস্তে উঠতে পারিস না, গাধা কোথাকার! এহ হে, লাগিয়ে দিলি তো।
সলটারের বাঁ কাধ বার দুয়েক বাড়ি খেল দেয়ালে। পড়ে যেতে যেতে কোনমতে সামলে নিল ও। শেষ ধাপে পৌঁছর পর পা কাঁপতে লাগল ওর। শরীরের ভার পুরোপুরি ছেড়ে দিল জোহানের ওপর। ঘরে ঢুকল ওরা। সোজা বিছানায় গিয়ে পড়ল সলটার।
তুমি পানি আর পরিষ্কার কাপড় নিয়ে এস গে, বোনকে নির্দেশ দিল জোহান। জখমটা খুলে গেছে বোধহয়। আমরা যদূর যা পারি করব। তারপর ঘোড়া নিয়ে শহরে চলে যাব। ডাক্তার আনতে হবে।
চোখ বুজে শুয়ে রইল সলটার। ওর কাপড় খুলে দিল জোহান। যতখানি পারল তাকে সাহায্য করল সে। চাদর দিয়ে গলা পর্যন্ত ওকে ঢেকে দেয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথা আর অবসাদে আবার জ্ঞান হারাল ও।
দুদিন অচেতন অবস্থায় রইল সলটার। তৃতীয় দিন সকালে চোখ মেলল সে। কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু কেন সেটা মনে করতে পারল না ও। ওর বিছানার পাশে বসে ছিল তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। চকিতে ওর দিকে চাইল সলটার। ক্লান্ত, চিন্তিত একটা মুখ। দেখে মনে হচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে নিঘুম কাটিয়েছে। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল সলটার। কিন্তু শুকনো ঠেকল জিভ আর গলা। কথা বেরোল না। ওর দিকে এক মুহূর্ত চেয়ে থেকে মৃদু হাসল তানিয়া।
কটা দিন খুব চিন্তায় ছিলাম, সলটার। খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
কথা বলতে চেয়ে আবারও ব্যর্থ হল সলটার। ওর অবস্থা দেখে উঠে গেল তানিয়া। এক গ্লাস পানি নিয়ে ফিরে এল। উঠে বসার চেষ্টা করল সলটার। পারল তো না-ই বরং টনটন করে উঠল ব্যথাটা। ওকে ধরে ধরে বসাল তানিয়া। ঠোঁটের কাছে গ্লাসটা ধরতেই তৃষ্ণার্ত সলটার এক চুমুকে শেষ করল পানি।
আহ, বলল সে। কতক্ষণ হল শুয়ে রয়েছি?
আজ বুধবার। সকাল, বলল তানিয়া। তুমি রবিবার বিকেলে র্যাঞ্চে ফিরেছিলে।
তারমানে তিন দিন, বিড়বিড় করে বলল সলটার। ডাক্তার ঘরে ঢুকলেন এসময়।
জ্ঞান ফিরেছে ওর, বলল তানিয়া।
গুড, বললেন ডাক্তার। সলটারের কাছে এসে বসলেন। ক্ষতস্থানটা পরীক্ষা করে দেখলেন।
তানিয়া, বললেন তিনি, একটু গরম পানি লাগবে যে।
যাচ্ছি, উঠে চলে গেল তানিয়া। রান্নাঘরে পানি গরম করার জন্যে।
তোমার কপাল ভাল হে, বললেন ডাক্তার। তার দিকে চাইল সলটার, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
মেয়েটি যেভাবে তোমার সেবা করেছে; বললেন ডাক্তার। তাতেই বেঁচে গেছ তুমি। আমি তো ভেবেছিলাম ইনফেকশন হয়ে যাবে। দিন নেই রাত নেই যখনই এসেছি, বিছানার পাশে বসে থাকতে দেখেছি ওকে।
তানিয়া খানিক বাদে পানি গরম করে নিয়ে এল। কাজে লেগে গেলেন ডাক্তার।
তানিয়ার দিকে চাইল সলটার। অনেকখানি নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে মেয়েটিকে। দারুণ আবেগ অনুভব করল সলটার, প্রকাশ করতে পারল না।
রাসলারদের ধরা গেল? প্রশ্ন করল ও।
না, দীর্ঘশ্বাস ফেলল তানিয়া। গত রবিবার থেকে বাইরে রয়েছেন বাবা, চিহ্ন খুঁজছেন। তবে পাননি কিছু। ওদিকে শেরিফের মৃত্যুতে গোটা শহরে তোলপাড় পড়ে গেছে। ডিক উইলসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ম্যাকডারমট এখন নতুন শেরিফ। রাদারফোর্ড তার ডেপুটি। পসি বাহিনী নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে ওরা। তবে কাউকে ধরতে পারেনি। রাসলাররা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে।
তানিয়ার কথাগুলো ভাবতে লাগল সলটার। ডাক্তারের কাজ শেষ। তিনি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পরে আসবেন আবার। তানিয়া সলটারের জন্যে খাবার আনতে গেল। ঘরে এখন একা ও গানম্যানের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাটা মনে পড়ল ওর। ডান হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠল। খুনীদেরকে খুঁজে বার করবে সে, করবেই। বাবার খুনী, শেরিফের খুনী কাউকে ছাড়বে না।
শেরিফের খুনী রাসলারদের লোক না-ও হতে পারে। কিন্তু তাহলে শেরিফকে গুলি করার পর ওকে গুলি করল কেন? পুরো ঘটনাটাই ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো হয়েছে। ওরা রাসলারদের খুঁজছে সেটা জেনেই কি গানম্যান পাঠানো হয়েছে নাকি সবটাই ব্যক্তিগত আক্রোশের পরিণতি? লোকটা কেন বলল সলটারকে খুঁজছে সে? ব্যক্তিগত আক্রোশ যদি থেকেই থাকে তবে সেটা কার প্রতি? শেরিফ নাকি সলটার? যে করে তোক প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতেই হবে তাকে। সমাধান করতে হবে এই রহস্যের। গানম্যান ওকে খুন করতে চাইলে একবার গুলি করেই চলে যেত না। ও মারা গেছে, নিশ্চিত হতে চাইত। সেক্ষেত্রে আর বেঁচে থাকার কথা নয় ওর। যাই হোক, এখন থেকে সতর্ক থাকবে সলটার, প্রস্তুত থাকবে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে বাবার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ ঘটনার কোথাও কোন যোগসূত্র রয়েছে।
সলটারের চিন্তার জাল ছিন্ন হল তানিয়ার ডাকে। ওঠ, খেয়ে নাও।
ওকে ধরে ধরে বিছানায় বসাল তানিয়া। তারপর মুখে তুলে দিল খাবার। সেটুকু খেয়ে নিয়ে মুখ খুলল সলটার। আমার জন্যে অনেক করেছ তুমি। আমি কৃতজ্ঞ।
আরে, ছাড় ওসব কথা, খানিকটা বিরক্তির সঙ্গে বলল তানিয়া। জলদি সুস্থ হয়ে গরুর পালের সঙ্গে মিশে যাও। র্যাঞ্চ, কাউবয় আর গরু ছাড়া আর তো কিছু বোঝ না, ওদেরকেই কৃতজ্ঞতা জানিয়ো।
মৃদু হাসল সলটার।
০৪. আরও দুদিন কেটে গেল
আরও দুদিন কেটে গেল। অনেকখানি শক্তি ফিরে পেয়েছে এখন সলটার। তানিয়ার সেবা-শুশ্রষা পেয়ে মানসিক ভাবেও যথেষ্ট সুস্থ বোধ করছে।
নাস্তার টেবিলে প্রচুর খাবার-দাবার সাজানো রয়েছে তার জন্যে। এতদিন পর আজই টেবিলে খেতে এসেছে সে। অকারণেই ওর আশপাশে ঘুরঘুর করল তানিয়া। এগিয়ে দিল এটা ওটা। ব্যাপারটা উপভোগ করল সলটার।
সেদিন সকালটা বারান্দার বেঞ্চিতে বসে কাটাল সে। দুপুরের ঠিক আগে জর্জ ওয়াগনার আর র্যাঞ্চের অন্যেরা ফিরে এল। ক্লান্ত, অবসন্ন, মলিন দেখাচ্ছে তাদের।
কেমন আছ? প্রশ্ন করল জর্জ। স্যাডল থেকে লাফিয়ে নামল সে। আরও সপ্তাহখানেক বিশ্রাম দরকার তোমার। চেহারা তাই বলছে।
কোন কিনারা হল? প্রশ্ন করল সলটার।
ধুর! হতাশ শোনাল জর্জের কণ্ঠ। ঘাড় ফিরিয়ে সঙ্গের লোকগুলোর দিকে চাইল সে। ঘোড়া থেকে স্যাডল খুলছে ওরা। বিশ্রাম নিতে যাবে।
পুরো এলাকাটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি আমরা। রসলারদের টিকিটিও দেখলাম না। শহর থেকে পসি বাহিনী এসেছে। এছাড়া অন্যান্য র্যাঞ্চের লোকেরা তো ছিলই। সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক ছিলাম আমরা। সব পরিশ্রমই পানিতে গেল।
ঠিক মত খোঁজনি তোমরা, সলটার দৃঢ়স্বরে বলল।
কি বললে? রেগে উঠল জর্জ। ক্লান্তি আর হতাশায় লাল হয়ে গেছে মুখ। বললাম না তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।
তা তো বুঝলাম, কিন্তু তবু যে রাসলারদের খোঁজ পাওয়া গেল না এর কারণটা অন্যখানে।
বল শুনি কি কারণ, কর্কশ কন্ঠে বলল জর্জ।
রাসলাররা, তোমার সাথেই ছিল।
কি যা তা বলছ! গুলি খেয়ে মাথার ঠিক নেই তোমার।
জর্জ, তুমি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নাও, বলল সলটার, পরে এ ব্যাপারে কথা আছে তোমার সঙ্গে।
জবাব দিল না জর্জ। ঘুরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে এক কাউবয়কে ডাকল। তার ঘোড়াটা নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে চলে গেল।
জনা ছয়েক লোক এসময় এগিয়ে এল বারান্দার কাছে। এ র্যাঞ্চের কাউবয়।
কেমন আছ, সলটার? জানতে চাইল জো। বাকিরা জবাব শোনার জন্যে, অপেক্ষা করতে লাগল।
সেরে উঠছি, উত্তর দিল সলটার। এদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক তার! বেশিরভাগই পুরানো লোক এরা। স্যাঞ্চের প্রতি বিশ্বস্ত, অনুগত। তাকেও জান দিয়ে ভালবাসে, সমীহ করে।
অসম্ভব খেটেছ তোমরা। আমি তোমাদের জন্যে গর্বিত। নেহাত কপাল খারাপ আমাদের। তাই এখনও খোঁজ পেলাম না রাসলারদের। তবে আমাকে একটা সপ্তাহ সময় দাও আমি কিছু একটা করবই, বলল সলটার।
এর পেছনে কারা আছে মনে হয় তোমার? প্রশ্ন করল মার্টিন।
এখনও জানি না তবে বার করে ফেলব। তোমরা বিশ্রাম নাওগে যাও।
ম্যাকগ্রর সাথে কি হয়েছিল, সলটার? আমাদের জানা থাকা দরকার, বলল। একজন। জোহান বলেছে যদিও, তবু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
তেমন কিছু না, মৃদু হেসে বলল সলটার। জোহানকে খুঁজতে স্যালুনে গিয়েছিলাম, ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি ম্যাকগ্রর। সে আমাকে মারতে আসাতে শুইয়ে দিয়েছিলাম মাটিতে।
ব্যাপারটা এত সহজে ও ভুলবে না, সলটার, বলল মার্টিন। ওকে তো তুমি চেনই। ভাগ্যিস অসকার এই কাউন্টিতে এসেছিল। ম্যাকগ্র দূর হওয়াতে বেঁচেছি আমরা।
ও এখান থেকে দূর হলেও আমার ওপর থেকে রাগ দূর হয়নি ওর, ধীরে ধীরে বলল সলটার।
চুপ করে ওর কথাগুলো শুনল অনন্যরা। বেট ডান হাত দিয়ে ঘুসি মারল নিজের বাঁ হাতে।
খুনীটাকে কি ওই শালাই পাঠিয়েছিল? ক্রুদ্ধ শোনাল তার কণ্ঠস্বর।
আগে আমাকে প্রমাণ পেতে দাও। তারপর তোমরা তো সব জানবেই। এক সঙ্গেই যা করার করব আমরা।
এ কথায় অনেকখানি শান্ত হল ওরা। ফিরে চলল বাঙ্ক হাউসে। জর্জের ঘোড়াটা নিয়ে চলল একজন। বেঞ্চে আবার আরাম করে বসল সলটার।
সলটার, একটা বালিশ দেব? পিঠে আরাম পাবে, তানিয়ার কণ্ঠ। চকিতে ঘাড় ফেরাল সলটার। সুন্দর মুখটা অসম্ভব টানে তাকে। চুম্বকের মত। এ মুহূর্তে প্রচণ্ড ভালবাসা অনুভব করল সে মেয়েটির প্রতি।
দরকার নেই, তানিয়া, সহজ গলায় বলল সে। এগিয়ে এল তানিয়া। বেঞ্চিতে ওর পাশে বসে পড়ল। আমাকে একেবারে রোগী বানিয়ে ফেলেছ তোমরা, বলল সলটার। কালই আবার স্যাডলে চাপব আমি।
পাগল নাকি! রেগে উঠল তানিয়া। কাল ডাক্তার আসবেন। তুমি উল্টো পাল্টা কিছু করলে সব দোষ পড়বে আমার ঘাড়ে; সেটা হচ্ছে না। কোনরকম ঘাড় তেরামি চলবে না তোমার।
ঘাড় তেরামি? হেসে প্রশ্ন করল সলটার। আমি আবার ঘাড় তেরামি করি নাকি?
করই তো, তানিয়ার কণ্ঠে কপট রাগ।
আমার তো ধারণা ছিল আমি ঠাণ্ডা স্বভাবের লোক, বলল সলটার।
সবাই নিজেকে তাই মনে করে, হেসে ফেলল তানিয়া। ইদানীং তোমাকে আমার কেমন যেন ভয় করে। যেমন গোমড়ামুখো হয়ে গেছ তুমি, ভয় করবে না? কি হয়েছে, সলটার? তুমি তো এমন ছিলে না।
কিছু হয়নি, তানিয়ার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ও। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। মেজাজের কারণ, তানিয়ার প্রতি তার বুক ভরা ভালবাসার কথা বলে ফেলতে পারলে হালকা হতে পারত সে। মুখ খুলতে গিয়েও অসকারের কথা–ভেবে চুপ করে গেল ও। ওকে লক্ষ করল তানিয়া। বুঝল প্রসঙ্গটা অস্বস্তিতে ফেলেছে সলটারকে।
নিজের প্রতি তোমার খেয়াল নেই, সলটার, বলল তানিয়া। উঠে পড়ল বেঞ্চি থেকে। থাকলে বুঝতে কতখানি বদলে গেছ তুমি। কেন বদলেছ সে তুমিই জান।
জবাব দিতে পারল না সলটার, চলে গেল তানিয়া। সেদিকে চেয়ে রইল সে, দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল। ছোট হল চোখ। মেয়েটিকে বড় বেশি ভালবেসে ফেলেছে সে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি। রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে।
ওদিকে ধীরে ধীরে তানিয়ার হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে অসকার। লোক যেমনই, হোক সে, টাকা তো আছে।
তিক্ততায় ছেয়ে গেল সলটারের মন। যে কোন কিছু মোকাবেলা করতে পিছপা নয় সে। কিন্তু অসকারের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তানিয়ার পছন্দের লোকের কোন ক্ষতি করতে পারবে না ও।
র্যাঞ্চের চারদিকে চাইল সে। এটাই ওর বাড়ি। বাবা ওর তিন বছর বয়সে এখানে নিয়ে এসেছিলেন ওকে। তারপর থেকে এখানেই রয়েছে ও, ওয়াগনারদেরকে পরম আত্মীয় বলে জেনেছে। ও জানে তানিয়া ওকে পছন্দ করে। তবে সেটা নিছকই বন্ধুত্ব। তবে, তানিয়ার কাছে ভালবাসার কথা প্রকাশ করবে সে। সেজন্যে সময় চাই তার। আগে যোগ্যতা অর্জন, তারপর অন্য ভাবনা। নিজের জন্যে একটা র্যাঞ্চ গড়ে তুলতে হবে। র্যাঞ্চ ‘এস’ নাম হবে ওটার। তারপর প্রস্তাব দেবে তানিয়াকে। অবশ্য ততদিনে যদি আসকারের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে বা যদি বিয়েই হয়ে যাবে তবে এতসব ভাবনা সবই বৃথা। তাতে আপত্তি নেই সলটারের। তানিয়া সুখী হলেই খুশি ও।
সেদিন বিকেলে আবার বারান্দার বেঞ্চিতে গিয়ে বসল সলটার। গনগনে রোদ এখন বাইরে। চোখ বুজে ভাবতে লাগল সলটার। কল্পনায় দেখতে পেল গুলি খাওয়ার দৃশ্যটা। আবার কি সিক্সগানটা ব্যবহার করতে পারবে সে? নাকি সেদিনের সেই গুলিটা মনের জোর কেড়ে নিয়েছে ওর?
হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হল। গুলি। চমকে উঠল সলটার। ঠিক মাথার পেছনের কাঠে লেগেছে গুলিটা, বাঙ্ক হাউসের পাশ দিয়ে তাকাল ও। প্রায় শ’তিনেক গজ দূরে আবছা ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে দেখল সে। পরমুহূর্তেই মেঝেতে শুয়ে পড়ল সলটার, ঝাঁকি খেল কাঁধ। ফলে ককিয়ে উঠল সে। খানিক বাদেই ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ল জানালার কাঁচ।
জোহানকে এসময় দেখা গেল দরজায়। চেঁচিয়ে ওকে ভেতরে যেতে বলল সলটার। রাইফেল আনার জন্যে। জোহান যেন ওর কথা বুঝতে পারেনি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল সে। সলটার দেখল দরজার কাঠের খানিকটা অংশ ছিটকে পড়ল। এবার আর কিছু বলতে হল না জোহানকে। অদৃশ্য, হয়ে গেল সে।
আরও কয়েকটা গুলি এল। দু’বার অল্পের জন্যে বেঁচে গেল সলটার। গানম্যান পজিশন বদলেছে, বুঝতে পারল। তবে নড়ল না ও। বাঙ্কহাউসের সামনে থেকে সম্মিলিত কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেল। মুহূর্ত পরেই কমপক্ষে ছটা রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হল। গুলির শব্দে পুরো র্যাঞ্চটা প্রকম্পিত হয়ে উঠল।
দৌড়ে বেরিয়ে এল জর্জ। হাতে রাইফেল। সলটারের পাশে চলে এল সে। সলটার ততক্ষণে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
গুলি লাগেনি তো? প্রশ্ন করল জর্জ
না, দৃঢ় স্বরে বলল সলটার। ভেতরটা কেমন যেন করছে তার। ওকে টার্গেট করেছে কেউ। কে?
এতবড় সাহস! ওরা শেষ পর্যন্ত র্যাঞ্চে হামলা করল? ক্রুদ্ধ জর্জ বলল।
জবাব দিল না সলটার। বসে পড়ল বেঞ্চিতে। আহত স্থানে চাপ দিল ডান হাত দিয়ে। দপদপ করছে ব্যথাটা। বুকের ভেতর জ্বলছে আগুন। তুমি ভাবছ লোকটা রাসলার। তাই না, জর্জ?
তাই তো। তোমার কোন সন্দেহ আছে? উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল জর্জ। র্যাঞ্চের কজন লোক ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে ধাওয়া করল গানম্যানকে। আরও কজন বেড়ার কাছে দাড়িয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে লাগল।
সলটার। রাসলাররা স্থানীয় লোক, এ ধারণা তোমার এখনও রয়েছে?
অবশ্যই। অসহিষ্ণুভাবে বলল সলটার। দয়া করে আমার কথা শোন। প্রথমেই যদি শুনতে তবে সকলেরই ভাল হত। পুরো কাউন্টি তো খুঁজেছ তোমরা, তাই না?
হ্যাঁ। কিন্তু রাসলারদের চিহ্ন পাইনি কোথাও, দ্রুত বলল জর্জ। জোহান আর তানিয়াকে এ সময় দেখা গেল দরজায়। ভেতরে যাও, ওদের দেখে ধমকাল জর্জ। মরার শখ হয়েছে?
হাসি চাপল সলটার। জর্জের ধমকে জোর আছে। সুড়সুড় করে ভেতরে চলে গেল দু’ভাই-বোন। আবার ওর দিকে ফিরল জর্জ।
তোমার ধারণা কি? প্রশ্ন করল জর্জ। তোমার সিদ্ধান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক হয়। স্বীকার করতে দোষ নেই।
সিদ্ধান্ত নয়, সন্দেহ বলতে পার, বলল সলটার। রসলারদের খোঁজ মেলেনি এবং তারা এ কাউন্টি ছেড়েও যায়নি। কাজেই নিশ্চয় স্থানীয় লোকজন এর সঙ্গে জড়িত। আমার ধারণা তারা আশপাশের র্যাঞ্চেই আছে। এবং তারাও রাসলারদের খোজার ভান করছে। মুখ দেখে তো আর বোঝার উপায় নেই কে রাসলার, যদি না গরু সহ ধরা পড়ে।
তোমার কথা হয়ত সত্যি, ভারী গলায় বলল জর্জ। ওরা কোন র্যাঞ্চের লোক সেটা তো বললে না। বাইরে উঠনের দিকে চাইল জর্জ। তার র্যাঞ্চের লোকজনেরা রয়েছে ওখানে। আমাদের লোকেরা নয় তো?
না, আমি বিশ্বাস করি না। তবে যদি হয় সেটা নেহাত দুর্ভাগ্য। যা হোক কোন্ পথে গরু তাড়িয়ে নেয়া হয় সেটা বল।
সবগুলো ট্র্যাক চলে গেছে রেড রিজ কান্ট্রির দিকে, যেখানে তোমরা গুলি খেয়েছ।
রেড রিজ যেখান থেকে শুরু অসকারের র্যাঞ্চ সেখানেই শেষ।
তুমি বলতে চাও এই রাসলিং-এর পেছনে অসকারের হাত আছে? জর্জের কণ্ঠে বিস্ময় আর অবিশ্বাস।
আমি তা বলছি না। অসকার বেশিদিন হয়নি এসেছে এখানে। ওর পক্ষে এরকম একটা পরিকল্পনা করা এত সহজ নয়। আমি বলছি ম্যাকার কথা। র্যাঞ্চ। ‘ও’-র মালিক বলতে গেলে সে-ই। অন্তত ওর কাজ-কর্মে তাই মনে হয়। শনিবার। বিকেলে ওর সঙ্গে শহরে গোলমাল হল আমার। ক’ঘণ্টা পরেই গুলি খেলাম আমি, আর শেরিফ মারা গেল।
যে লোক গুলি করেছে সে ম্যাকগ্র নয়। তুমিই বলেছ।
আমি আমার সন্দেহের কথা বলছি। ম্যাকগ্র ভাল লোক নয়, সে তুমি ভালই জান। ওর স্বভাব এমন যে সহকর্মীদের বুকে অস্ত্র ধরতেও দ্বিধা করবে না। আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ও নিশ্চয়ই কিছু জানে।
মাথা ঠাণ্ডা কর, সলটার। আসলে ম্যাকগ্রর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে তোমার। তুমি ধরেই নিচ্ছ ফোরম্যান হওয়ার জন্যে তোমার বাবাকে খুন করেছে
সেটা কি একেবারেই অসম্ভব?
না। ওর সত্যিই ইচ্ছে ছিল ফোরম্যান হওয়ার। তোমাকে ফোরম্যান করায় প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল সে। তোমার বাবার খুনের ব্যাপারে ওকে যদি সন্দেহ করিও তবু রাসলিং-এর সঙ্গে ও জড়িত রয়েছে সেটা ভাবতে পারছি না আমি।
পারবে।
কিভাবে?
ফাঁদ পাতব আমরা। দেখি ও ধরা দেয় কিনা।
খুলে বল।
সময় হলে বলব, জবাব দিল সলটার। আমার ধারণা ভুল নয়। এইমাত্র যে গোলাগুলি হয়ে গেল এটা কোন সাধারণ রাসলারের কাজ হতে পারে না।
সে তুমি জান, বলল জর্জ। ওর কথায় অসন্তুষ্ট। ওরা ফিরে এসেছে।
উঠে দাঁড়াল সলটার। চেয়ে দেখল তিনজন অশ্বারোহী ফিরে আসছে। সাথে বাড়তি ঘোড়া নেই। তারমানে গানম্যান ধরা পড়েনি। পালিয়েছে। জো লাথি মারল ঘোড়ার পেটে বারান্দার কাছে চলে এল ঘোড়া।
কপাল খারাপ, বস্, হতাশ ভঙ্গিতে বলল সে। শালা পালিয়েছে। খুব বেশি ক্ষতি হয়েছে নাকি?
না। তেমন কিছু না। একটা জানালা ভেঙেছে কেবল, জবাব দিল সলটার।
ধন্যবাদ, জো।
আমরা ঘোড়ায় চেপে পাহারার কথা ভাবছিলাম, বলল জো।
দরকার নেই, বলল জর্জ। তবে কাউবয়দের বল গোটা কয়েক ঘোড়ায় স্যাডল পরিয়ে তৈরি রাখতে। যে কোন সময় দরকার পড়তে পারে। নিজেরাও সতর্ক থাকবে।
অবশ্যই, দৃঢ়স্বরে বলল জো। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল সে।
ভেতরে এস। বাইরে থাকা ঠিক নয়, সলটারকে বলল জর্জ। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল সলটার। ধীরে ধীরে এগোল দরজার দিকে।
তানিয়া রয়েছে রান্নাঘরে। দুপুরের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত। সলটারের দিকে বড় বড় চোখে চাইল সে। খাবার টেবিলে যথারীতি উত্তেজিত হয়ে উঠল জোহান, আজকের ঘটনার ব্যাপারে। ওকে গম্ভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল সলটার। ছেলেটা ম্যাকগ্রদের সাথে বেশ কিছুদিন মেলামেশা করেছে। ও কি জানে কিছু? হয়ত ওদের দু’একটা কথা কানে এসেছে জোহানের–কিন্তু গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে। করেনি সে। ওকে জিজ্ঞেস করা দরকার। খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল সলটার।
জোহান, শান্ত কণ্ঠে বলল সে। ম্যাকগ্রদের সঙ্গে ইদানীং প্রচুর মেলামেশা করেছ তুমি।
করেছিলাম। তবে আর নয়, বলল সে।
জর্জ টেবিল ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল। কিন্তু সলটারের উদ্দেশ্য বুঝে বসে পড়ল। সরু চোখে চাইল ছেলের দিকে। অস্বস্তি বোধ করছে জোহান।
ভাল, বলল সলটার। ম্যাকগ্রর সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল তোমার। এমনকি ওর প্রেমিকার সাথে তোমাকে মিশতে দিতেও দ্বিধা করেনি সে। তাই?
লাল হয়ে উঠল জোহানের মুখ। বাপের দিকে এক ঝলক তাকিয়েই মাথা নিচু করল সে।
সলটারের প্রশ্নের জবাব দাও, মৃদুকণ্ঠে বলল জর্জ।
কি জানতে চাও বল, সলটারকে বলল জোহান।
মার্কর কথা জানতে চাই। ওকে বা ওর কোন লোককে কখনও এ এলাকার রাসলিং-এর ব্যাপারে কিছু বলতে শুনেছ?
না, জবাব এল। সলটারের মনে হল এত শীঘ্রি প্রশ্নটা করে বসা উচিত হয়নি।
শোন সলটার। ম্যাকগ্র খারাপ লোক নয়। লোকে ওকে ভুল বোঝে, বলল জোহান।
কথা গোপন করছ কেন? প্রশ্ন করল জর্জ।
করছি না, বাবা। গোপন করার কি আছে?
আমাকে বল, নরম স্বরে বলল জর্জ। আমি তোর বাবা। মুখ দেখে আমি তোর মনের কথা বলে দিতে পারি। তুই কিছু একটা গোপন করতে চাইছিস। কি সেটা? ম্যাকগ্র কি এই রাসলিং-এর হোতা? ওদের কাউকে চুরির ব্যাপারে কিছু বলতে শুনেছিস?
না, বাবা। ভুল চিন্তা করছ তোমরা, ম্যাকগ্র এর সাথে জড়িত নয়।
বিশ্বাস করি না, কর্কশ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। মিথ্যে বলছিস তুই। মনে রাখিস শেরিফকে খুন করা হয়েছে। নতুন শেরিফ অপরাধীকে ছেড়ে দেবে না। খুঁজে বার করবেই। তোর কোমরে দড়ি পড়বে না তো?
না, চিৎকার করে উঠল জোহান। চেয়ার ঠেলে দরজার দিকে হাঁটা দিল সে। ওর বাবা প্রায় লাফিয়ে এসে চেপে ধরল ছেলের বাহু। ছেড়ে দাও আমাকে, প্রায় ধমকে উঠল জোহান। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ তোমরা। আগেই বলেছি আমি এসবের কিছুই জানি না। ছাড়। ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল জোহান। বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।
ও এতে জড়িয়ে গেছে, কঠিন গলায় বলল জর্জ। তবে কিভাবে জড়াল আমাকে জানতে হবে।
০৫. মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জর্জ আর সলটারের
এভাবে হবে না, বলল তানিয়া। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জর্জ আর সলটারের। আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি সত্যি কথাটা বার করে ফেলব। তারপর যোগ করল, অনেকদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছে অসকারের র্যাঞ্চের লোকগুলো সুবিধের নয়।
কিভাবে বুঝলি? জানতে চাইল জর্জ। আর বুঝে থাকলে ওর সঙ্গে মেলামেশা করছিস কেন? ওকে মোটেও পছন্দ নয় আমার। ব্যাটা খালি টাকার গরম দেখায়।
ওটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তীব্র কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাল তানিয়া। যাই হোক না কেন অসকার দ্রলোক। সে জানে কিভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়। তুমি নিশ্চয়ই চাও না আমি কোন কাউহ্যাণ্ডকে বিয়ে করি?
কথাগুলো বলার সময় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল তানিয়ার। ওর প্রতিটি কথা যেন ছুরির মত বিধল সলটারের হৃদয়ে। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল সে। চোখ দুটো জ্বলে উঠল তার। তবে সে আগুন বড় স্লাম। ওর দিকে চকিত দৃষ্টি দিল জর্জ। তারপর ফাঁকা হেসে বলল, আমিও কাউহ্যাণ্ড ছিলাম। সেখান থেকেই আজকের অবস্থায় এসেছি। টাকা ছাড়া আর কি আছে অসকারের যা একজন কাউহ্যাণ্ডের নেই? ও তো মানুষই না। কুটোটা পর্যন্ত সরায় না সে। এতবড় একটা বিপদের মোকাবেলা করছি আমরা অথচ সেদিকে কোন খেয়ালই নেই তার। যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে ওর ফোরম্যান ম্যাকগ্র।
তোমার কেন মনে হল বক্স ও-র লোকেরা ভাল নয়? সলটার প্রশ্ন করল তানিয়াকে। অসকার এ ব্যাপারে কিছু বলেছে কখনও?
না। ও এ ব্যাপারে কিছু জানে না। জানলে একটা ব্যবস্থা নিতই। তুমি ভাবছ ও এতে জড়িত, তাই না?
জবাব দিল না সলটার। তানিয়ার গলার স্বরে বুঝতে পারল যুক্তির পরিবর্তে আবেগ দিয়ে সবকিছু বিচার করছে সে।
রাসলিং-এর সঙ্গে অসকারের জড়ানর প্রয়োজন পড়ে না, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল জর্জ। ওর টাকার অভাব নেই। সলটারের দিকে ফিরল সে। বসন্ত আসার আগেই যা করার করতে হবে আমাদের। তুমি রেডি হও।
আমি রেডিই আছি, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল সে। জনা কয়েক লোক লাগবে আমার। আবার নতুন করে শুরু করব।
তোমাকে তো বলেইছি পুরো কাউন্টি চষে এসেছি আমরা। কোন লাভ হয়নি।
আমার লাভ হয়েছে, মৃদু হেসে বলল সলটার। রাসলাররা জানে তাদের সন্দেহ করছি না আমরা। ফলে সুবিধে হবে আমার। আমাকে অবিশ্বাস করবে না ওরা। বন্ধু ভাববে।
দেখ কি করতে পার, দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল জর্জ।
সে বেরিয়ে যেতেই তানিয়ার দিকে চাইল সলটার। ওর দিকে চেয়ে রয়েছে মেয়েটি। একটু আগে বলা ওর কথাগুলো মনে পড়তে ঠোঁট কামড়াল সলটার।
তানিয়া আজ সরাসরি বলে দিয়েছে যা বলার। বুঝিয়ে দিয়েছে সলটার ওর যোগ্য নয়। মেয়েটা বড় নিষ্ঠুর। কতখানি, সে নিজেও জানে না বোধহয়।
সলটার, সাবধানে থেক, বলল তানিয়া। এত তাড়াতাড়ি আবার ঘোড়ায় না চাপলেও পারতে। রাসলারদের কথা বলছি না আমি। ভয় সেই গানম্যানকে।
আমার জন্যে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে, কর্কশ কণ্ঠে বলল সলটার।
তুমি আসলে অসকারকে সহ্য করতে পার না। কেন তা জানি না আমি। ও তো খারাপ লোক নয়।
আমি তো বলিনি খারাপ, বলল সলটার। তোমার বন্ধু-বান্ধবদের ব্যাপারে আমার নাক না গলানই ভাল। তুমি তো ছোট খুকী নও। আমার চেয়ে কম বোঝ না তুমি।
এত কড়াভাবে কথাগুলো বলতে চায়নি সলটার। কিন্তু তানিয়ার ব্যবহার উত্তেজিত করে রেখেছে তাকে। জর্জের সঙ্গে তানিয়ার কথোপকথন কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে। সলটার পা বাড়াল দরজার দিকে।
বারান্দায় বেরিয়ে এসে দাঁড়াল সে। চাইল চারদিকে। জোহান রয়েছে করালে। স্যাডল পরাচ্ছে ঘোড়ায়। জর্জ ওয়াগনার উঠন পেরিয়ে করালের দিকে এগোল। দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়াল সলটার। সে নিশ্চিত, বিপদে পড়েছে জোহান। খুব সম্ভব ওকে ব্ল্যাকমেইল করছে ম্যাকগ্র।
ছেলের পাশে পৌঁছে গেল জর্জ। কি যেন কথা হল বাপ-বেটার মধ্যে। শুনতে পেল না সলটার। তার পরপরই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল সে। ছেলের গালে বিরাশি সিক্কা ওজনের প্রচণ্ড এক চড় বসিয়েছে বাপ। ছিটকে মাটিতে পড়ে গেছে ছেলে।
দ্রুত এগোতে গিয়ে কাঁধে ঝাঁকি খেল সলটার। বারান্দার পোস্ট-ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। মাটিতে বার কয়েক গড়াগড়ি খেল জোহান। তারপর ওঠার চেষ্টা করতেই সামনে এগোল জর্জ। একটানে ছেলেকে দাঁড় করিয়ে ফেলল। রাগী। কণ্ঠস্বর কানে ভেসে এল সলটারের। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল সে। এগোল করালের দিকে। এসময় ঝাড়া দিয়ে সরে গেল জোহান। লাফিয়ে ঘোড়ায় চাপল সে। বেরিয়ে গেল তীরবেগে। আরেকটু হলেই ধাক্কা খেত সলটার। জোহানের দুগাল বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।
বেড়ায় হেলান দিল সলটার। দেখল বসকে। রাগে লাল হয়ে রয়েছে জর্জের মুখ।
আবার গোলমাল বাধালে? ওকে শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল সলটার।
ঠিকই আছে। গাধাটাকে বললাম ম্যাকগ্রদের সঙ্গে মিশিস না। আর আমাকে বলে কিনা নিজের চরকায় তেল দিতে। কত বড় স্পর্ধা।
আমি হলেও তাই বলতাম, সহজ গলায় বলল সলটার। এভাবে বাগে আনতে পারবে না ওকে।
বড় দেরি করে ফেলেছি, রাগত স্বরে বলল জর্জ।
তা তো অবশ্যই। এখন মেজাজ দেখিয়ে লাভ কি বল। আমি বরং ওকে ধরে আনিগে।
না। যাবে না তুমি, অন্যরকম শোনাল জর্জের গলা। যথেষ্ট বড় হয়েছে ও। আমার কাছ থেকে সরে থাকতে চাইলে থাকুক। ওকে আনতে যাওয়ার কোন দরকার নেই। এর আগে প্রতিবারই ওকে ফিরিয়ে আনার জন্যে পাঠিয়েছি তোমাকে। তাতেই মাথায় উঠে গেছে ও। ওর যা মন তাই করুক গে।
জর্জ, পরিস্থিতিটা একটু বোঝার চেষ্টা কর, নরম গলায় বলল সলটার। জোহানকে মুঠোয় পেয়েছে ম্যাকগ্র। এ ব্যাপারে আমি মোটামুটি নিশ্চিত। কিভাবে পেল সেটাই জানতে হবে আমাদের। এখন জোহানকে এভাবে ছেড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে ওকে ম্যাকগ্রর দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দেয়া। ম্যাকগ্র সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়বে না। পরে আপসোস করব আমরা সকলে। আমি দেখতে চাই ও কোথায় যায়, কি করে।
তুমি অসুস্থ, সলটার, প্রতিবাদ করল জর্জ। তোমার যেতে হবে না। যখন দেখবে তুমি যাওনি তখন ও নিজেই ফিরে আসবে।
তা হয় না, সলটার বলল। ঘুরল সে। বানের কাছে জোকে দেখতে পেল। ডাকল তাকে। জো, আমার শোবার ঘর থেকে গানবেল্টটা নিয়ে এস। রাইফেলও আনবে। আর কাউকে বল আমার ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে দেবে।
বাইরে যাবে? জোর কণ্ঠে উদ্বেগ।
হ্যাঁ।
তোমার যাওয়া ঠিক হবে না, সলটার, নিচু গলায় বলল জর্জ। আমার কথা শোন।
আমি তোমার ছেলে নই, জর্জ। ফোরম্যান, গম্ভীর স্বরে বলল সলটার। আমার কাজ আমাকে করতে দাও।
ছেলে বলেছে নিজের চরকায় তেল দিতে, আর এখন ফোরম্যান কথা শুনছে; তবে আমার আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ? হতাশ ভঙ্গিতে কথাগুলো উচ্চারণ করল জর্জ। বারান্দার দিকে হাঁটা ধরল সে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঘরে ঢুকে পড়ল। তার পিছনে প্রচণ্ড জোরে বন্ধ হল সদর দরজা।
এরপরও যাবে তুমি? জিজ্ঞেস করল জো। তার কালো চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে।
হ্যাঁ, জো। তুমিও যাচ্ছ আমার সঙ্গে। এবার উৎসাহিত হল জো। আরও কয়েকজনকে নিয়ে নিই? শুধু মার্টিন, আর কাউকে নয়। ওকে তৈরি হতে বল। তুমি আমার ঘোড়ায় স্যাডল পরাও, আমি রাইফেল নিয়ে আসছি।
ইয়েস, স্যার। বাঙ্কহাউসের দিকে লম্বা পা বাড়াল জো। সেদিকে খানিক চেয়ে থেকে ঘুরে ঘরের দিকে এগোল সলটার। স্যাডলে চাপার মত সুস্থ এখনও হয়নি সে, কিন্তু কিছু করার নেই। এ রহস্যের কিনারা করতে চাইলে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। কাজ করতে হবে এখন থেকেই।
সলটার বারান্দায় উঠতেই দেখা হয়ে গেল তানিয়ার সঙ্গে। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে চাইল সলটার। কিন্ত দুপাশে হাত বাড়িয়ে ঢোকার পথ আটকে দিল তানিয়া।
সর, কর্কশভাবে নির্দেশ দিল সলটার। ভেতরে যেতে হবে। রাইফেল নেব।
কি শুরু করেছ তোমরা বল তো। তিনজন বয়স্ক লোক ছেলেমানুষের মত কাজ-কারবার করেই চলেছ। তুমি বাইরে যেতে চাইলে যাও, কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে পাবে না।
লম্বা শ্বাস টানল সলটার। এতখানি আশা করেনি সে। তানিয়া তখনও দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর কাঁধে হাত রাখল সলটার। খানিকটা কুঁকড়ে গেল, তানিয়া। ওর চোখের দিকে চাইল সে। রাগ করেছে কিনা বোঝা গেল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সলটার। মেয়েটি বড় সুন্দর। ওকে সামান্য ঠেলা দিল সে। পিছে হেলে গেল তানিয়া। তবে ভারসাম্য হারানর আগেই ওকে ধরে ফেলল সলটার। ওর ডান কাঁধ আঁকড়ে ধরল তানিয়া। দুজনের মুখের ব্যবধান এখন মাত্র ইঞ্চি কয়েক। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে তানিয়া। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সলটার। ওকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করল না মেয়েটি। অনেকটা আচ্ছন্নের মতই ঝুঁকল সলটার। চুমু খেল ওকে।
তানিয়া অবাক হলেও প্রতিবাদ করল না। সলটারের নিষ্ঠুর ঠোঁটজোড়া কেবলমাত্র একবার স্পর্শ করল তানিয়ার গাল। দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল সলটার। নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে।
ঠোঁটজোড়া পুড়ে যাচ্ছে ওর, যেন আগুনের ছ্যাকা দিয়েছে কেউ। বুকে আবেগের বান।
তানিয়া সরে গেছে দরজা থেকে। খানিক বাদে নিজের ঘরে চলে এল সলটার। সরু কোমরে গানবেল্টটা পরে নিল। বাঁ হাত এখনও অকেজো প্রায়। ফলে ওটা ব্যবহৃত হল সামান্যই। সিক্সগানটার গুলি পরীক্ষা করে হোলস্টারে ভরল। এগোল কোণের দিকে। রাইফেলগুলো রয়েছে ওখানে। উইনচেস্টার আর কোল্ট দুটোর জন্যে বাড়তি কার্তুজ রয়েছে স্যাডলব্যাগে। বার্ন থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে নিলেই হল। দ্রুত পায়ে সে বেরিয়ে এল ঘর ছেড়ে। নেমে এল নিচে। রান্নাঘরে। কাজে ব্যস্ত ছিল তানিয়া। পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল। কেমন যেন অপরাধবোধ হচ্ছে সলটারের। মনে হচ্ছে মস্ত অন্যায় করে ফেলেছে।
আমি দুঃখিত, তানিয়া, বলে বসল সে। হঠাৎ কি যে হয়ে গেল।
ওকে কথা শেষ করতে দিল না তানিয়া। একটা ব্যাগে করে তোমার খাবার দিয়ে দিচ্ছি। ওর দিক থেকে চোখ সরাল না সে। প্রচণ্ড অনুতাপ হচ্ছে সলটারের। কিন্তু কাউহ্যাণ্ডকে বিয়ে করার ব্যাপারে বলা তানিয়ার কথাগুলো মনে পড়তেই শক্ত হল। সে তো ভদ্রলোক নয়! কাজেই অভদ্রের মত কাজ তো সে করতেই পারে। একজন কাউহ্যাণ্ডের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। চোয়াল শক্ত হল ওর।
তানিয়া খাবারের ব্যাগ আনা অবধি অপেক্ষা করল সলটার। তারপর ব্যাগটা নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজার দিকে এগোল। দরজার কাছে পৌঁছতেই পিছু ডাকল তানিয়া। থমকে দাঁড়াল সলটার।
সাবধানে থেক, বলল সে। পারলে বাবা আর জোহানের বিবাদটা মিটিয়ে দাও।
সব সময় তো তাই-ই করি, নিজের কানেই কর্কশ ঠেকল সলটারের গলা। কালো হয়ে গেছে তানিয়ার মুখ। জঘন্য! ভাবল ও। সামান্য একজন কাউহ্যাণ্ড ছাড়া কিছুই নয় সে। উইলবার অসকারের মত ভদ্রতা বা মার্জিত ব্যবহার ওর কাছ থেকে আশা করা যায় না। সারাটা জীবন র্যাথেই কাটিয়েছে সে। লেখাপড়ার। সুযোগ পায়নি অসকারের মত। সে অদ্ৰতা করবে না তো করবেটা কে? ক্রুদ্ধ সলটার ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বারান্দায় বেরিয়ে এসে দেখল ওর। ঘোড়া নিয়ে আসছে জো। ওদিকে করালে স্যাডল পরাতে ব্যস্ত মার্টিন।
তুমি তৈরি? প্রশ্ন করল জো, কষ্ট হবে কিন্তু, সলটার।
হোক, বলল সলটার। খাবার নিয়েছ তো?
হ্যাঁ, বলল জো। তুমি এক কাজ কর, সলটার। বাইরে বেরুনর আগে স্যাডলে চেপে একটু প্র্যাকটিস করে নাও।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল সলটার। উইনচেস্টারটা রাখল স্যাডলবুটে। রেকাবে বাঁ পা রাখল সে। স্যাডলহর্ন চেপে ধরে উঠে বসল স্যাডলে। দাঁত চেপে ব্যথাটা সহ্য করল ও। গত কদিন করালে আটকা ছিল ঘোড়াটা। ফলে মনের আনন্দে তিড়িং বিড়িং করে নাচতে লাগল ওটা। দ্রুত ঘোড়াটাকে নিয়ন্ত্রণে আনল সলটার। করালের দিকে ঘোড়া ছোটানর সময় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল তার।
বাঙ্কহাউসের কাছে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল সে। ওকে লক্ষ্য করছে কয়েকজন কাউহ্যাণ্ড, বাঙ্কহাউসের দরজায় দাঁড়িয়ে।
কেমন বুঝছ, সলটার? প্রশ্ন করল বিলি।
পারব, জবাব দিল সে। তোমরা তৈরি থেক। সাহায্যের দরকার পড়লে জোকে পাঠাব।
আমরা এখনই তোমার সঙ্গে গেলে অসুবিধে আছে? বলল টমলিন।
সময় হোক, নিশ্চয়ই যাবে, সকলের উদ্দেশ্যে বলল সলটার। তোমরা ধৈর্য হারাচ্ছ কেন বুঝছি না আমি। রাসলারদের সঙ্গে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে আমরা অনেকেই মরব। তোমরা সবাই একসাথে মরতে চাও নাকি?
ওরা জবাব দিল না কেউ। ঘোড়ার মুখ ঘোরাল সলটার। মার্টিন আর জোকে ঘোড়ায় বসা অবস্থায় দেখতে পেল সে।
গেটের দিকে ঘোড়া ছোটাল সলটার। মরিয়া হয়ে চেপে ধরল লাগাম। তীরবেগে ছুটল ঘোড়া। মুখে বাতাসের ঝাঁপটা লাগছে সলটারের। কানে আসছে। খুরের শব্দ। রক্ত গরম হয়ে উঠল ওর। এ মুহূর্তে ব্যথাটা অনেক কম বোধ করছে সে। খোলা র্যাঞ্চ ধরে ছুটছে ঘোড়া। জোহানের পথ অনুসরণ করে। ওর পিছু নিল জো আর মাটিন।
খানিক বাদেই সলটারের মনে হল ভুল করেছে সে। র্যাঞ্চে বিশ্রাম নেয়াই উচিত ছিল তার। কিন্তু পরক্ষণেই ভেতর ভেতর প্রচণ্ড দৃঢ়তা অনুভব করল। জোহানের ট্রাক চলে গেছে শহরের দিকে। তারমানে বাফেলো ফ্ল্যাটে যাচ্ছে ওরা, ভাবল সলটার। গত শনিবার যেখানে শেষ করেছিল আজ আবার সেখান থেকে শুরু করতে হবে।
লাগাম টেনে ধরল সলটার। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছে সে। কাউবয় দুজন চলে এল তার কাছে। তাদের ধূলিমলিন চেহারায় উদ্বেগের ছাপ।
তুমি ফিরে যাও, সলটার, বলল জো। স্যাডলে সোজা হয়ে বসেছে সে। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পার। জোহানের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক আমাদের। আমরাই ফিরিয়ে আনতে পারব তাকে।
আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না। আমি পারব। যেতে আমাকে হবেই, দৃঢ় স্বরে বলল সলটার।
জানি তোমাকে বুঝিয়ে কাজ হবে না, ত্যাগ করল জো। আমরা সবাই। তোমার পাশে আছি, সলটার।
ধন্যবাদ, জো, সন্তুষ্ট হয়ে বলল সলটার। চল রওনা দিই। শহরে গিয়ে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করব আমরা। তারপর ঢুকব স্যালুনে।
দ্রুতবেগে ছুটল তিন ঘঘাড়সওয়ার। পুরো যাত্রাটা সলটারের কাছে দুঃস্বপ্নের মত ঠেকল। শহরের কাছাকাছি পৌঁছে বাফেলো ফ্ল্যাট চোখে পড়তে আবার লাগাম টেনে ধরল সলটার।
সময় নষ্ট করে লাভ নেই, বলল সে। শেরিফের সঙ্গে দেখা করব আমি। জো, আমি চলে যাওয়ার পর পায়ে হেঁটে আশপাশটা ঘুরে দেখবে তুমি। জোহানকে দেখার চেষ্টা করবে। ও নিশ্চয়ই স্যালুনে কিংবা হেলগা ডিকসনের কেবিনে রয়েছে। খেয়াল রাখবে ও যেন তোমাকে দেখতে না পায়। ও কোথায় আছে, কি করছে জানতে হবে আমাদের।
ঠিক আছে, বস, বলল জো।
আমার কাজটা কি? জানতে চাইল মার্টিন। আমি বেকার বসে থাকব?
না, আমাকে অনুসরণ করবে তুমি। আমি বেঁচে থাকি এটা চায় না অনেকেই। সামনের দিকটা সামলাব আমি। কিন্তু পেছনটা তো আর দেখতে পাচ্ছি না সর্বক্ষণ। তুমি খেয়াল রাখবে। পারবে না?
অবশ্যই, হোলস্টারে হাত রেখে বলল মার্টিন। গুলি করছে কোন্ হারামজাদা? তোমার কোন ধারণা আছে?
মনে হয় আরেকবার দেখলে চিনে ফেলব, সলটার বলল ধীরে ধীরে। ওর মুখ দেখতে পাইনি আমি। কিন্তু শরীরের কাঠামোটা স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে। কেবল আরেকবার দেখতে পেলেই হল।
দেখলে আমাদেরও জানাবে, চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল জো, উচিত শিক্ষা দিয়ে দেব।
শহরে পৌঁছে গেল ওরা। কাউবয় দুজনকে রেখে একাই চলল সলটার। আস্তাবল পেরনর সময় মনে পড়ে গেল হার্পারের কথা, এখান থেকেই দুর্ঘটনার দিন বেরিয়েছিল সে, হার্পার আর জোহান। মাত্র এক সপ্তাহ আগের কথা। অথচ মনে হচ্ছে যেন কত যুগ পেরিয়ে গেছে। শৈরিফের অফিসের সামনে ঘোড়া থামাল সে।
নতুন শেরিফ অফিসেই ছিল। তাকে ভালমতই চেনে সলটার। ম্যাকডারমট বুড়ো হলেও আইনের মারপ্যাঁচ ভাল বোঝে। এক সময় এলসওয়ার্থ আর ডজ সিটির টাউন মার্শাল ছিল সে। দায়িত্ব পালন করেছে যোগ্যতার সঙ্গেই। ওকে দেখে শেরিফ উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। লম্বা লোকটা সামান্য ঝুঁকে পড়েছে বয়সের ভারে। চোখা মুখটাতে বুদ্ধিমত্তার ছাপ। সরু চোখ। কগোছা সাদা চুল, টাক ঢাকার জন্যে আঁচড়েছে সামনের দিকে।
সলটার, তোমাকে দেখে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু জখম না সারতেই আবার বেরিয়ে পড়লে?
কেমন আছ, ম্যাক, বলল সলটার। ব্যথা নিয়েই শহরে আসতে হল। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে দেখা করে যাই। গত শনিবারের ঘটনার স্টেটমেন্ট লাগবে।
হ্যাঁ। আসলে ধাক্কা সামলে ওঠার জন্যে সময় দিচ্ছিলাম তোমাকে, নতুন শেরিফ বলল, আমি অবশ্য কাজে নেমে পড়েছি। জান তো, রাদারফোর্ড আমার ডেপুটি। ঘটনাস্থলে রয়েছে এখন সে, ট্র্যাক খুঁজছে, অনুসরণ করছে। আমি বলেছি যতদিন লাগে লাগুক, খুনী কোথায় গেছে খুঁজে বার করা চাই।
ওটাই একমাত্র উপায়, সম্মতি জানাল সলটার। আমি ব্যাটাকে স্পষ্ট দেখতে পাইনি। ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটে গিয়েছিল। আমাদের জন্যে যেন ওঁৎ পেতেই ছিল ও। দুটো গুলি করে আমাকে আর শেরিফকে শুইয়ে দিয়েছিল।
ঠাণ্ডা মাথার খুনী! ম্যাকডারমট রাগতস্বরে বলল। তবে ধরা ওকে পড়তেই হবে।
আজ বক্স ডব্লিউতে একদফা গোলাগুলি হয়ে গেছে। আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। ভাগ্য ভাল লাগেনি কারও। জানালার কাঁচ ভেঙেছে কেবল, আর কটা ফুটো হয়েছে দরজায়।
তোমার পিছে লেগেছে কেউ, জ্বলে উঠল শেরিফের চোখজোড়া। কে, সলটার?
জানলে তো ভালই হত, চেয়ারে বসে পড়ে বলল সলটার। মুশকিল হচ্ছে ওরা আচমকা হামলা করছে, আমার মুখোমুখি হতে চাইছে না। আমি তো তৈরিই আছি।
গত শনিবার কি হয়েছিল? ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। তবে সলটার বুঝল কি বলতে চায় সে। ম্যাকগ্রর সঙ্গে তোমার লাগালাগির ব্যাপারটা জানি আমি। ওকে সন্দেহ হয়?
প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করি কিভাবে বল?
তা তো অবশ্যই। প্রমাণ লাগবে। শুধু গত শনিবারের ঘটনাই না, তোমার বাবার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটাও ভুলিনি আমি। আমার দায়িত্ব নেয়ার একটা কারণ সেটাও। রহস্যটা উদ্ঘাটন আমি করবই।
আমিও ভুলিনি, বলল সলটার। বাবার খুনীকে যে করে হোক খুঁজে বার করবই। অবশ্য যদি সে এর মধ্যে মারা গিয়ে না থাকে।
আমিও আছি তোমার সঙ্গে। যাই হোক, তুমি শহরে কি জন্যে এসেছ?
জর্জ ওয়াগনার আর তার ছেলের ঝগড়ার কথা সলটার খুলে বলল শেরিফকে। তবে শহরে জোহানের আনাগোনা আর ম্যাকগ্রর সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণ। সম্বন্ধে ওর নিজের সন্দেহগুলো প্রকাশ করল না। পুরো সন্দেহটাই অনুমান নির্ভর। এ ব্যাপারে খামোকা শেরিফকে প্রভাবিত করা উচিত নয়।
জোহান জমে গেছে এখানে, ম্যাকডারমট স্বীকার করল। ওকে জড়িয়ে অনেক গুজব কানে এসেছে আমার। তার মধ্যে নিশ্চয় কিছু সত্যতা আছে। তোমার জায়গায় আমি হলে ওকে বাফেলো ফ্ল্যাট থেকে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে বক্স ডব্লিউতে বেঁধে রেখে দিতাম।
প্রয়োজন পড়লে তাই করব, সলটার বলল। স্টেটমেন্টের ব্যাপারটা?
এখন না, জবাব দিল নতুন শেরিফ। আগে আরও চেকিং হোক; তারপর। ঠিক আছে। আমি চলি তবে, বিদায় নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল সলটার।
একপাশে দাঁড়িয়ে ইতিউতি চাইল। কাছেই কোথাও ঘাপটি মেরে রয়েছে হয়ত রজার হাপারের খুনী। ওর দিকে হয়ত রাইফেল তাক করে রেখেছে এ মুহূর্তে। কেবল ট্রিগার টেপার অপেক্ষা! ভাবনাটা মাথায় আসতেই হোলস্টারে হাত চলে গেল সলটারের।
০৬. আকাশের দিকে চাইল সলটার
আকাশের দিকে চাইল সলটার, আঁধার ঘনিয়ে আসছে। জোহানকে খুঁজে বার করে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। জর্জ ওয়াগনারের ওপর খেপে উঠল সে মনে মনে। জোহানের সঙ্গে এমন ব্যবহার না করলেও চলত। জোহানকে দিয়ে সত্যি কথা বলিয়ে নেয়ার সুযোগটা নষ্ট করে দিল জর্জ। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নয় সলটার। সুযোগ সে বার করবেই।
স্যালুনের দিকে হাঁটা ধরল ও। ওর পেছনে দেখতে পেল মার্টিনকে। নিশ্চিন্ত হল সে। বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই সতর্ক করে দেবে মাটিন।
স্যালুন খোলাই ছিল। গোটা দুয়েক প্রদীপ জ্বলছে ভেতরে। ব্যাটউইং ডোরের ওপর দিয়ে তাকাল সলটার। বারের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে জো। তবে জোহানকে দেখা গেল না ভেতরে। সলটার ঢুকে পড়ল স্যালুনে। মুহূর্ত পরেই ওকে অনুসরণ করে ঢুকল মার্টিন। নিজেদের জন্যে বিয়ার কিনল সলটার। বারের কাছে দাড়িয়ে গল্প করতে লাগল ওরা।
জোহানের টিকিটিও দেখলাম না, জো বলল। আস্তাবলের বাইরে হিচিং রইলে রয়েছে ওর ঘোড়া। বোধহয় শহরে বেশিক্ষণ থাকার ইচ্ছে নেই। টেণ্ডার বলেছে গত শনিবার তুমি জোহানকে স্যালুন থেকে নিয়ে যাওয়ার পর আর দেখেনি ওকে।
হেলগা ডিকসন, বলল সলটার। ওখানেই রয়েছে সে। আমি চিনি ওকে। বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছে। কাজেই এখন সহানুভূতি দরকার ওর।
কিন্তু ম্যাকগ্র দেখে ফেললে বিপদ আছে, জো বলল।
তুমি জান না, জো, বলল সলটার। ম্যাকগ্র জোহানকে উৎসাহিত করছে। মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটানর জন্যে। কেন, সেটাই রহস্য।
জো-র রুক্ষ মুখে বিস্ময় লক্ষ করে হেসে ফেলল সলটার। প্রথমে শুনে আমিও বিশ্বাস করিনি। চল, হেলগার কেবিনে গিয়ে দেখি জোহান রয়েছে কিনা।
বিয়ার শেষ করে বেরিয়ে এল ওরা। ছায়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দূরের চূড়াগুলোর আড়ালে অদৃশ্য হয়েছে সূর্য।
তুমি পিছন থেকে আমাদের কভার দাও, মার্টিন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে নির্দেশ দিল সলটার। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল মার্টিন। ওদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ওরা খানিকদূর এগোতেই পিছু নিল। চোখজোড়া সদাসতর্ক। প্রয়োজনের মুহূর্তে সিক্সগানটা টেনে বার করার জন্যে তৈরি রয়েছে হাত।
সলটার দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ, চাইল চারপাশে। বাফেলো ফ্ল্যাট নিস্তব্ধ। আজ শুক্রবার। এসময়ে প্রচুর লোক থাকার কথা স্যালুনে। আশপাশের বাড়িঘর গুলোতে আলো জ্বালানো হয়েছে। ডান দিকে মোড় নিল সলটার। হেঁটে চলল ফুটপাথ ধরে। এসে থামল এক সারি বাড়ির সামনে। শহরের এ এলাকায় স্বল্প আয়ের লোকজন বাস করে। গোটা ত্রিশেক বাড়ি রয়েছে এখানে।
ওইটাতে স্যালুনের মেয়েরা থাকে, একটা কেবিনের দিকে আঙুল তাক করল জো। অন্যান্য বাড়িগুলোর চেয়ে খানিকটা তফাতে রয়েছে ওটা।
তুমি জানলে কিভাবে? প্রশ্ন করল মার্টিন। তবে জবাব শোনার জন্যে অপেক্ষা করল না। হেসে উঠল দু’জনেই।
এগোল সলটার। লণ্ঠন জ্বলছে কেবিনে। সে আশা করল জোহানকে পারে ওখানেই। কেবিনের কাছে পৌঁছে থেমে দাঁড়াল সলটার। ফিরল দুই সহযাত্রীর দিকে।
আড়াল নাও তোমরা। চোখ-কান খোলা রাখবে, বলল সে। জোহানের সঙ্গে আমার একা কথা বলাই ভাল।
দেখো, ভালুকটার খপ্পরে পড়ো না যেন, বলল জো। ম্যাকগ্র সম্ভবত শহরেই আছে। এবং এ জায়গাটাই সবচেয়ে পছন্দ তার।
আমাকে চিনতে বাকি নেই ওর, ঘোষণা দিল সলটার। ঘুরল সে। পৌঁছে গেল কেবিনের দরজার কাছে। টোকা দিল বার কয়েক। কয়েক সেকেন্দ্রে বিলম্ব, তারপর ছিটকিনি খোলার শব্দ হল ভেতর থেকে। খুলে গেল দরজা। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে চেনে সলটার। হেলগা ডিকসনের বয়স বড় জোর বাইশ। লম্বা, সোনালি চুলগুলো ছড়িয়ে রয়েছে কাঁধের ওপর। নিঃসন্দেহে সুন্দরী। হেলগার তাকানর ভঙ্গি দেখে মনে হল যেন সলটারের জন্যেই অপেক্ষা করছিল। সে।
কি খবর তোমার? অভ্যস্ত কণ্ঠে বলল সে। কুকুর হারিয়েছ আবার?
মৃদু হাসল সলটার। জোহানকে বারবার বক্স ডব্লিউতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে। ফলে ব্যাপারটা সবার কাছেই তামাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
ও আছে এখানে? থাকলে একটু ডেকে দাও। পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নেব, বলল সলটার।
এখানে নেই, ডিয়ার, জবাব দিল মেয়েটি। আমি ম্যাকগ্রর জন্যে অপেক্ষা করছি। তবে চাইলে ভেতরে আসতে পার। গত শনিবারের ঘটনা শুনেছি আমি।
তোমার পক্ষেই সম্ভব। সেদিনের পর ম্যাকগ্রর সব কিছুর ওপরে তোমার অধিকার এসে গেছে। এমনকি আমার ওপরেও।
ধন্যবাদ, সলটারের হাসি দু’কানে গিয়ে ঠেকল। জোহানকে খুব দরকার আমার। ওকে সত্যিই দেখনি? প্রসঙ্গ পাল্টাল সে।
এসেছিল। ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। বলেছি ম্যাকগ্র আসছে।
ও, ঘুরে রওনা দেয়ার সময় আবার দাঁড়িয়ে পড়ল সলটার। জোহান কোথায় গেছে বলেছে কিছু?
উহুঁ। আমাকে কিছু বলে না ও।
তাই? আমি ভেবেছিলাম তোমরা খুব ঘনিষ্ঠ, কথা আদায়ের চেষ্টা করল সলটার। কিন্তু ওর ফাঁদে পা দেয়ার মেয়ে হেলগা নয়। চরে খায় সে। বিদ্রুপাত্মক হেসে সলটারের মুখের ওপর দড়াম করে দরজা বন্ধ করল ও। ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।
ঠোঁট চাপল সলটার, ক্ষতস্থান ব্যথা করছে। কাউবয় দুজনের কাছে ফিরে এল সে। নেই, হতাশ কণ্ঠে বলল সে। এসে চলে গেছে। হেলগা বলল আজ রাতে ম্যাকগ্র আসবে। হয়ত ওর সঙ্গে দেখা করার জন্যে শহরের বাইরে গেছে জোহান।
আমার তা মনে হয় না, খুব সম্ভব ম্যাকগ্রর জন্যে কোথাও ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছে সে, জো বলল।
হতে পারে, সলটার বলল। জো, তুমি এক কাজ কর। আস্তাবলে গিয়ে লুকিয়ে বসে থাক। ম্যাক নিশ্চয়ই একা আসবে না। সঙ্গে লোকজন থাকবে। ওদের সঙ্গে কথা বলবে সে, তুমি আড়ি পেতে শুনবে কি বলে। কিছুতেই ধরা পড়া চলবে না কিন্তু। বুঝেছ?
সজোরে মাথা ঝাঁকাল জো। ঘুরে রওনা দিল। মার্টিন রইল সলটারের সঙ্গে। নির্দেশের অপেক্ষা করতে লাগল সে। চুপ করে রয়েছে সলটার। ভাবছে। জোহানকে না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করার নেই ওদের, সতর্ক থাকা ছাড়া। খুনীর টার্গেট হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই ওর। তারচেয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ হওয়াই ভাল। খুনী ম্যাকগ্র নিজে বা ওর র্যাঞ্চের আর কেউ হতে পারে। শহরে এসে সলটারকে ঘুরে বেড়াতে দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে ম্যাকগ্রর। হয়ত আবার খুন করার বা করার চেষ্টা করতে পারে। সলটারকে পেছন থেকে মার্টিন কভার দিলে খুনী আর তার চান্স সমানই বলতে হবে। মার্টিনকে পরিকল্পনার কথা জানাতেই প্রবল আপত্তি করল সে।
বোকামি কোরো না, সলটার, প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মার্টিন। তুমি মারা পড়লে নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারব না আমি। যদি ওকে দেখতে না পাই তবে? যদি পিস্তল ড্র করতে দেরি হয়ে যায় আমার? না, এতবড় ঝুঁকি কিছুতেই নেব না আমি।
আমার জান গেলে যাক, বলল সলটার। ঝুঁকি আমি নেবই।
ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না, সলটার, অসন্তোষভরে বলল মার্টিন। তুমি আমার বস, যা বলবে তাই করতে বাধ্য আমি। তবে একটা অনুরোধ করব, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। নইলে কভার করতে পারব না।
হেসে সায় দিল সলটার। হাঁটা ধরল মেইন রোডের দিকে। রাস্তার আলোয় জোর শরীরটা চোখে পড়ল ওর। রাস্তার উল্টোদিকে চলে গেল সলটার। ছোট স্যালুনগুলো চেক করার জন্যে। পুরো রাস্তাটা হেঁটে এল সে। তার পিছে সর্বক্ষণ লেগে রইল মাটিন।
ছোট শহরটা সম্পূর্ণ খোঁজার পর বিরক্ত হয়ে পড়ল সলটার। জোহান নেই কোথাও। রাস্তার এক কোণে থামল সে। তার কাছে ঘেঁষে এল মাটিন। কয়েকটা নিচুপ মুহূর্ত কাটল। তারপর সলটার ঘুরে হাঁটা দিল আস্তাবলের দিকে। ম্যাকগ্রর
আসার সময় হয়ে এল বোধহয়, ভাবল সে।
উঠনে যখন প্রবেশ করল ওরা তখন আলো নেই আস্তাবলে। একটা ওয়াগনে। গাদা করা রয়েছে খড়, সেটার ছায়ায় এসে দাঁড়াল সলটার। জো ভেতরে রয়েছে। কাজেই ওদের ঢোকার কোন দরকার নেই। ওয়াগনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা। করতে লাগল ওরা। দূরের স্যালুনগুলো থেকে ভেসে আসছে হৈ-হল্লার ক্ষীণ শব্দ। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানা নেই সলটারের। হঠাৎ খুরের শব্দে সচকিত হল ওরা। দু’জনে খানিকটা চেপে এল ওয়াগনের গায়ে। চার অশ্বারোহী উঠন পেরিয়ে ঢুকল ভেতরে। তারপর এল আস্তাবলের দিকে।
ব্যথা ভুলে গেল সলটার। সতর্ক হয়ে গেছে। চারজনের প্রথমজন বক্স ওর ফোরম্যান ম্যাকগ্র। সলটারের ঠিক উল্টোদিকে, ওয়াগনের অন্যপাশে ঘোড়া থামাল সে।
শোন, সহযাত্রীদের উদ্দেশে বলল, আমি কোন গোলমাল চাই না, কথাটা আবার বলে রাখছি। নতুন শেরিফ হার্পারের চেয়েও বদমাশ। কাটলি, তুমি শহরের খবরাখবর জোগাড় করবে। জানা দরকার এখানকার কি অবস্থা। সলটার শহরে এসেছিল কিনা বা এখনও রয়েছে কিনা জানতে হবে।
আচ্ছা, দ্রুত ঘোড়া ছোটাল একজন। বাকি দুজন ম্যাকগ্রর কাছাকাছি হল।
জোহান ওয়াগনার, সম্ভবত শহরেই রয়েছে, ওদের উদ্দেশে বলল ম্যাক, ওকে খোঁজ। জরুরি কথা আছে। হেলগার কেবিনে যেতে বলবে ওকে। আমি ওখানেই থাকব।
লোক দু’জন নেমে ঘোড়া নিয়ে ঢুকল আস্তাবলে। সোজা হল সলটার। দেখল উঠন পেরিয়ে গেল ম্যাকগ্র। মার্টিনের দিকে চাইল সে। ঝলসে উঠতে দেখল কাউবয়-এর সাদা দাঁত।
হেলগার কেবিনে গেল ম্যাকগ্র। আমাদেরও যাওয়া দরকার, কঠোর গলায় বলল মাটিন। মনে হচ্ছে জোহানের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে ম্যাকগ্র।
হ্যাঁ। কিন্তু জোহান কোথায়? শহর ছেড়ে চলে গেল নাকি?
নাহ। ম্যাকগ্র হাজির হয়েছে, কাজেই জোহানের দেখা মিলতে দেরি হবে, বলল মার্টিন। আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
হঠাৎ হুড়োহুড়ির শব্দ শোনা গেল আস্তাবলে। কানখাড়া করল সলটার। একটা ঘোড়া খুর দাপাল। সঙ্গে সঙ্গে অন্যগুলোও তাল মেলাল। চাপা আওয়াজ করল কে যেন। আস্তাবলের দিকে পা বাড়াল মাটিন। ওর হাত চেপে ধরল। সলটার।
দাঁড়াও, বলল সে। জো না-ও হতে পারে লোকটা। সাবধানে চল, দেখি গিয়ে।
ওয়াগনের আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল ওরা। আস্তাবলের এক পাশের ফাঁকা জায়গা পেরোল। সামনের দিকের এক কোণে এসে দাড়িয়ে পড়ল। লণ্ঠনের আলো বেরিয়ে আসছে কাঠের ফোকর দিয়ে। একটা কাঠের ফুটোয় চোখ রাখল সলটার। বার্নের দরজার চৌকাঠে দাড়িয়ে রয়েছে ম্যাকগ্রর সেই দুই স্যাঙাৎ। ঘরের অন্ধকার কোণের দিকে চেয়ে রয়েছে তারা। লণ্ঠনের আলো পৌঁছেনি এ অংশে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একই লক্ষ্যে তাকাল সলটারও। খিস্তি করল এক লোক। জো, তবে দেখা গেল না তাকে। এদিকে দরজায় দাঁড়ানো দু’জনের মধ্যে একজনের হাতে এখন সিক্সগান।
জলদি বেরিয়ে এস, অস্ত্রধারী গর্জাল। দেরি করলে ঝাঁঝরা করে দেব। কে তুমি? এখানে লুকিয়ে কি করছ?
অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল সলটার আর মার্টিন। দু’জনেরই হাত চলে গেছে কোমরে। হোলস্টারে। ক’ মুহূর্ত বাদে আলোয় বেরিয়ে এল জো। পোশাক থেকে খড়কুটো ঝাড়তে ঝাড়তে। হচ্ছেটা কি এখানে? বিরক্ত কণ্ঠে জানতে চাইল সে।
বক্স ডব্লিউ-এর রাইডার, বলল একজন। লুকিয়ে বসে করছটা কি এখানে?
লুকিয়ে থাকব কেন? পাল্টা প্রশ্ন করল জো, চোখটা লেগে এসেছিল। বিয়ার পেটে পড়েছে কিনা।
শহরে কি করছ?
তোমার তাতে কি দরকার? কর্কশ কণ্ঠে কথাগুলো বলল জো। শঙ্কিত হল সলটার। এমুহূর্তে গোলমাল চায় না সে।
দরকার আছে, বলল সিক্সগানওয়ালা। পিস্তলটা ফেলে দাও। নইলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব।
এবার বার্নের সামনের দিকে এগোল সলটার। তার পিছনে মার্টিন। শুনতে পেল ভেতরে তর্ক করে চলেছে জো। দ্রুততর হল সলটারের চলার গতি। লোক দু’জনের ঠিক পেছনে এসে দাঁড়াল সে। ওরা ততক্ষণে প্রায় পৌঁছে গেছে জোর কাছে। একজনের হাতে অস্ত্র।
দাঁড়াও, তীক্ষ্ণকণ্ঠে আদেশ করল সলটার। পাঁই করে ঘুরল ওরা। কোল্টের বাঁটে সলটারের হাত, কিন্তু ড্র করার চেষ্টা করল না সে। লোক দুটোর পেছনে জো এর হাতে পিস্তল এসে গেছে তখন। ও, সলটার। তারমানে সুস্থ হয়ে উঠেছ। অস্ত্রধারীর কণ্ঠে রাজ্যের বিরক্তি ঝরে পড়ল।
দুঃখ পেয়েছ মনে হয়, বিদ্রূপ করল সলটার। আমার লোককে হুমকি দিচ্ছ কেন?
ও এখানে আড়ি পেতেছিল।
তাতে ক্ষতি কিসের? দ্রুত প্রশ্ন করল মার্টিন। জো তোমাদের কথা শুনে ফেলেছে? অসুবিধে কি? তোমরা নিশ্চয়ই ষড়যন্ত্র করছিলে না।
হ্যাণ্ডগান ফেলে দাও, লোক দুটোর পেছন থেকে বলল জো।
বাদ দাও, জো, বলল সলটার। দরজা ছেড়ে দাঁড়াল সে। লোক দুজনকে চলে যেতে ইঙ্গিত করল। দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে উঠন পেরোল ওরা। তারপর রাস্তায় পৌঁছে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল।
মুশকিলে ফেলে দিলে, জো, বলল সলটার, ওরা এরপর তৈরি হয়ে থাকবে।
তৈরি ওরা হয়েই রয়েছে। ম্যাকগ্রর কথাতে, বোঝনি? শান্ত অথচ জোরালভাবে কথাগুলো বলল মার্টিন। আমাদের কাজ এখন জোহাকে খুঁজে বার করা।
ঠিক, ঘুরল সলটার। এই লোক দুটো এক্ষুণি গিয়ে ম্যাকগ্রকে সব জানাবে। আমাদের কথা জেনে যাবে ম্যাকগ্র। আচ্ছা, জো, তুমি তো আলাদা হয়ে গিয়েছিলে, জোহানকে দেখেছ?
না, এবার কোথায় লুকিয়েছে কে জানে।
ম্যাকগ্রও হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে। কেন কে জানে, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল মার্টিন। সলটারের পিছু পিছু বেরিয়ে এল বার্ন থেকে।
মেইন রোডে আবছা অন্ধকার। র্যাঞ্চ ও-র লোক দুটোকে দেখা গেল না কোথাও! স্যালুনগুলো পেরনর সময় জোহানকে আরেকবার করে খুঁজে গেল সলটার। নেই। খুব সম্ভব র্যাঞ্চে ফিরে গেছে সে। তবে পরক্ষণেই বুঝল এটা কষ্ট কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। জোহানের জন্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছেই তার।
মার্টিন, বলল সে। তুমি হেলগার কেবিনে ফিরে যাও। লোক দুটো ম্যাককে কি বলে লুকিয়ে শোনার চেষ্টা করবে। জো, তুমি ফলো কর আমাকে। রওনা দিল মাটিন। রাতের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল সে।
জোকে নিয়ে হাঁটা ধরল সলটার। ম্যাকগ্রর কথা ভাবছে সে। নতুন কি ফন্দি আঁটছে র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান? কার্টলি নামের এক লোক এ মুহূর্তে রয় সলটারের খোঁজ করছে শহরে। কেন?
শেরিফের অফিসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে চাইল সলটার। ডেস্কে বসে রয়েছে ম্যাকডারমট। দেখে মনে হল চিন্তামগ্ন।
খানিক দূর যেতেই এক লোককে হেঁটে আসতে দেখা গেল ওদের দিকে। লোকটা থেমে দাঁড়িয়ে উঁকি দিল একটা স্যালুনে। বেঁটে-খাটো গড়ন। মার্টিন নয়। ম্যাকগ্রর সেই চর নয় তো?
যে লোকটা এদিকে আসছে, জোকে বলল সলটার, মনে হয় ম্যাকগ্রর লোক সে। আমাকে খুঁজছে।
অস্ফুটে কিছু বলল জো। তারপর ফুটপাথের দিকে সরে গেল। আগুয়ান লোকটাকে এখন তাদের দুজনের মাঝ দিয়ে পেরোতে হবে। ধীর পদক্ষেপে হাঁটতে লাগল ওরা। লোকটা এসময় দেখে ফেলল ওদের। চিনতে চেষ্টা করল। রাস্তার আলো পড়েছে সলটারের মুখে। আগন্তুকের চেহারাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এখন। এই লোকই ম্যাকগ্রর সঙ্গে আস্তাবলের উঠনে গিয়েছিল। অবয়ব দেখে চিনতে পারল সলটার।
তুমি রয় সলটার না? ফুটপাথে দাঁড়িয়ে পড়েছে লোকটা। জোর দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফেরাল সলটারের চোখে।
হ্যাঁ, কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না, হোলস্টারে হাত চলে গেল সলটারের। র্যাঞ্চ ও-তে বেশ কজন নতুন লোক নেয়া হয়েছে। এ লোকটা তাদের একজন।
এ কাউন্টিতে নতুন এসেছি আমি। তবে গত সপ্তাহের ঘটনা শুনেছি। তোমাকে সুস্থ দেখে ভাল লাগছে। বেচারা রজার হার্পার! খুব ভাল লোক ছিল নাকি
ঠিকই শুনেছ, কর্কশ কণ্ঠে বলল জো।
এ কাউন্টিতে বড় গোলমাল, তাই না?
সবে তো শুরু, সলটার বলল। জোহানকে দেখেছ এদিকে কোথাও?
না, দ্রুত জবাব এল। চলি। ফুটপাথ ধরে এগোল লোকটা।
নতুন লোক হিসেবে বড় বেশি জার্নে ব্যাটা, জো মন্তব্য করল।
কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলেছিল জো। কিন্তু বলা আর হল না। হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে উঠল ওরা। পরপর কয়েকটা গুলি হল। তবে ধারে কাছে এল ওদের। মাজল লাইটের লালচে শিখা চোখে পড়ল সলটারের। মাথা নিচু করে দ্রুত পা চালাল সেদিকে। মার্টিনের জন্যে চিন্তা হচ্ছে। সে রয়েছে ওদিকটাতেই। জোর মাথাতেও একই চিন্তা। অসুস্থ সলটারকে পিছনে ফেলে রেখেই এগিয়ে গেল সে।
০৭. চিৎকার করে ডাকল সলটার
জো, দাঁড়াও, প্রায় চিৎকার করে ডাকল সলটার। জোর নাগাল পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করল ও। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কাঁধের ব্যথাটা চেগিয়ে উঠল। জো ততক্ষণে মিলিয়ে গেছে চোখের সামনে থেকে। এপথ ধরেই হেলগার কেবিনের কাছে গিয়েছিল মার্টিন। সম্ভবত র্যাঞ্চ ও-র লোকেরা দেখে ফেলেছে ওকে। তারপরই এই গুলির ঘটনা ঘটেছে।
মোড়ে পৌঁছে সলটার দেখল জো ঝুঁকে পড়েছে একটা পতিত শরীরের ওপর। সলটারের বা কাঁধটা দপদপ করছে। সেখানটায় হাত চাপা দিল সে।
মাটিন? ঢোক গিলে প্রশ্ন করল সলটার।
হ্যাঁ, ফাঁসফেঁসে শোনাল জোর কণ্ঠ। সিধে হল সে। মারা গেছে।
বার্ন, কোনমতে বলল সলটার। র্যাঞ্চও-র লোক দুটো একাজ করে থাকলে ঘোড়ার জন্যে আস্তাবলে গেছে। পালাবে। শিগগির চল।
কথা কটা বলেই ঘুরে দৌড় শুরু করল সলটার। প্রাণপণে। ব্যথার পরোয়া করল না। মুহূর্ত পরেই ওকে রেসের ঘোড়ার মত অতিক্রম করে গেল জো। তার ডান হাতে শক্ত করে ধরা রয়েছে বিশাল সিক্সগান।
গুলির কারণ জানার জন্যে বেরিয়ে এসেছিল অনেকে। ওদের দুজনকে ঊধ্বশ্বাসে ছুটতে দেখে লাফিয়ে সরে গেল তারা।
দাড়াও, চেঁচিয়ে নির্দেশ দিল কে যেন। নইলে গুলি করব।
নতুন শেরিফের গলা, চিনতে পারল সলটার। তবে ছোটা থামাল না সে। পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, আমি সলটার। মার্টিনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। মোড়ে পড়ে রয়েছে লাশ। খুনী বোধহয় বার্নে গেছে।
আর কিছু বলল না শেরিফ। ছুটে চলল সলটার। জোকে দেখতে পাচ্ছে না সে। ও এগিয়ে রয়েছে অনেকখানি। আস্তাবলের গেটে এসে থামল। হেলান দিল একটা পোস্টে। পিস্তল ড্র করল। প্রচণ্ড হাঁপিয়ে গেছে সে। জোর পাচ্ছে না। পায়ে। মনে হচ্ছে যেন হাঁটু মুড়ে পড়ে যাবে। বহুকষ্টে বার্নের দিকে চলল সলটার। এ সময় কানে এল গুলির শব্দ। বার্নের ছায়ায় আড়াল নিল সে।
আরও দুবার গুলি হল। বানের ভেতরে দরজার কাছে পৌঁছে গেল সলটার। দেখল দরজার পোস্ট ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে লম্বা একটা শরীর। জো। ওর কাঁধে হাত রাখল সে।
কি ব্যাপার, জো? অতিকষ্টে কথা কটা উচ্চারণ করল সলটার।
ওরা বার্নের ভেতরে রয়েছে, ক্রুদ্ধস্বরে বলল জো। আমি দরজার কাছে পৌঁছতেই গুলি শুরু করল। তারপর ঢুকে পড়েছে। পেছন দিক থেকে তাড়িয়ে আনতে হবে শালাদের।
এক মিনিট। এদের চ্যালেঞ্জ করে দেখি, সলটার বলল। আমি জানতে চাই ওরা কারা।
ওদের খুন করি আগে, তারপর জেনো, ভয়ঙ্কর শোনাল জোর কণ্ঠ। ওরা খুনী, কোন সন্দেহ নেই। একজন দরজায় পাহারা দিচ্ছিল, আরেকজন ছিল ভেতরে। ঘোড়ার ব্যবস্থা করছিল।
তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি, জো, সলটার বলল। মার্টিন তোমার প্রিয় বন্ধু ছিল। কিন্তু এ লোক দুটোকে জ্যান্ত ধরা উচিত। তাতে খোলাসা হবে অনেক রহস্য। প্লীজ।
ঠিক আছে। এখান থেকে কথা বলে দেখ ওদের সঙ্গে, হাঁটা দিল জো। আমি পেছন দিকে যাচ্ছি।
মাথা ঝাঁকাল সলটার। জো চলে গেলে পর খানিকটা সহজ হল সে। হাতে পিস্তল নিয়ে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করল। জোকে পজিশন নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে। বার্নের ভেতরে এখন কোন সাড়াশব্দ নেই।
বার্ন ঘেরাও করা হয়েছে, চেঁচিয়ে বলে উঠল সলটার। তোমরা মাথার ওপর হাত তুলে বেরিয়ে এস।
পরপর কয়েকটা গুলি করে জবাব দিল ওরা। সলটারের মাথার কাছের কাঠে লাগল সেগুলো। কাঠের টুকরো ছিটকে পড়ল ওর মাথায়। মাটিতে শুয়ে পড়ল সলটার। পিস্তলের বাটে শক্ত হল হাত। ক্রল করে আস্তাবলের ভেতর দিকে এগোল সে। আবার এক ঝাঁক গুলি বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে। মুহূর্ত পরে তৃতীয় একজন গুলি ছুঁড়তে শুরু করল। প্রথম দুজন তার প্রত্যুত্তর দিল না। নিশ্চুপ রইল।
গুলি চালাচ্ছে জো। ব্যাপারটা পছন্দ হল না সলটারের লোক দুটোকে গোলাগুলি ছাড়া প্রতে পারলে প্রমাণ করা যেত অনেক কিছু। সদ্য ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ওদের ধরতে পারলে আইনের চোখে সহজেই দোষী প্রমাণিত হত ওরা। কিন্তু সে আশা ভেস্তে গেছে। হতাশা ঘিরে ধরল ওকে।
গুলি বন্ধ কর, উঠনের দিক থেকে চিৎকার করে উঠল কর্কশ একটা কণ্ঠ।
নতুন শেরিফ, ম্যাকডারমট! দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। হাতে পিস্তল।
জো, চেঁচাল সলটার। গুলি থামাও। বন্ধ হয়ে গেল গোলাগুলি। অস্বস্তিকর নীরবতা ফিরে এল আবার।
গণ্ডগোলের কারণটা কি? গুলি শুরু করেছে কে? চেঁচিয়ে জানতে চাইল শেরিফ।
মার্টিন মারা গেছে বলেছি তোমাকে, রাগতস্বরে বলল সলটার। ওর খুনীদের ধরার জন্যে এখানে এসেছি আমরা।
খুনীরা বার্নের ভেতরে রয়েছে?
হ্যাঁ, জবাব দিল সলটার। তার কানে এল খুরের শব্দ। খুব সম্ভব লোক দুটো পালানর চেষ্টা করবে। মনে মনে তাই চাইল সলটার। তাতে ওদের বিরুদ্ধে যুক্তি খাড়া করা যাবে।
বার্নের ভেতর কেউ থেকে থাকলে বেরিয়ে এস। আমি শেরিফ ম্যাকডারমট। জলদি।
গাধা দুটোকে গুলি করতে মানা কর। আমরা আসছি, জবাব এল। ঘোড়া নিতে এসে গুলির মুখে পড়লাম। মগের মুল্লুক নাকি?
সলটার, পিস্তল ঢোকাও, চিৎকার করে বলল শেরিফ। তোমরা বেরিয়ে এস।
উঠে দাঁড়িয়ে হোলস্টারে পিস্তল ভরল সলটার। পরমুহূর্তে বেরিয়ে এল লোক দুজন। আবছা আঁধারে অস্পষ্ট তাদের মুখ।
গুড, বলল শেরিফ। আমার অফিসে চল। তোমাদের নাম?
জিওফ হাওয়ার্থ, বলল একজন।
বব হ্যারিসন, জবাব দিল অন্যজন।
এরা র্যাঞ্চ ওর লোক, আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বলল জো, খানিক আগে মার্টিনকে খুন করেছে।
ওর মাথার ঠিক নেই, হ্যারিসন বলল। আমি আর জিওফ শহরের বাইরে যাচ্ছিলাম। ঘোড়া নেয়ার জন্যে এসেছি এখানে। আর অমনি এ দুজন গুলি চুড়তে শুরু করেছে।
বাজে কথা বলবে না, রেগে উঠল জো। এরা মার্টিনের খুনী। আমি জানতে চাই কেন খুন করা হয়েছে তাকে।
প্রশ্ন করার দায়িত্ব আমার, ম্যাকডারমট বলল।
আমার লোকেরা নির্দোষ, কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল এক লোক। চমকে তাকাল সবাই। ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল ম্যাকগ্র। জো, তোমার ধারণা এরা মার্টিনকে মেরেছে?
হ্যাঁ, জোরাল গলায় জবাব দিল জো।
বেশ, প্রমাণ কর, চাবুক কষাল যেন ম্যাকগ্র। এদের গুলি করতে দেখেছ?
না, আমি আর সলটার তখন গজ ত্রিশেক দূরে ছিলাম। গুলির শব্দে ছুটে গিয়ে দেখি পড়ে রয়েছে মার্টিনের মৃতদেহ। সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছি বার্নে। আমাকে দেখেই এদের একজন গুলি ছুঁড়ল। তারপরও বলতে চাও এরা নির্দোষ?
সবাই আমার অফিসে চল, ম্যাকডারমট বলল। তোমাদের কারও কথাতেই সন্তুষ্ট নই আমি। লটার, আমি ভেবেছিলাম তুমি এসবের বাইরে থাকবে।
উপায় ছিল না, সংক্ষিপ্ত জবাব দিল সলটার। এদের ঠেকিয়েছি আমরা। নইলে পালাত। গত সপ্তাহের খুনীকে ধরতে পারিনি। এবারের খুনীদের পেরেছি।
কোর্টে প্রমাণ করা অত সহজ হবে না, ভারী গলায় বলল ম্যাকগ্র।
হাওয়ার্থ, তুমি মার্টিনকে গুলি করেছ?
না, বস।
হ্যারিসন, তুমি?
আমি খুনী নই, বস।
ব্যস। আমি এতেই সন্তুষ্ট। শেরিফ, তুমি কি বল? এদের আটকে রাখার কোন যুক্তি আছে? রাস্তার মোড়ে খুন করে এসে এখানে আবার জোকে গুলি করা এক কথায় অসম্ভব। এরা তো পাখি নয় যে উড়ে আসবে।
ঠিক আছে, ক্লান্ত গলায় বলল শেরিফ। কাল দেখা যাবে। তোমরা দুজন আমার অনুমতি ছাড়া কাউন্টি ছেড়ে নড়বে না। সলটার, তুমি আর জো মাথা ঠাণ্ডা রাখ। আর ঝামেলা বাড়িয়ো না।
সলটারকে জেলে ঢোকানো উচিত, সহজ গলায় বলল ম্যাকগ্র। সে-ই ঝামেলা পাকাচ্ছে।
র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান তার লোকদের ইঙ্গিত করল। তারা পিছু নিল ওর। সদম্ভে উঠন পেরোল ম্যাকগ্র। অনেক লোক জড়ো হয়েছে গেটে। তারা পথ ছেড়ে দিল ওদের।
দাঁতে দাঁত চাপল সলটার। শুনতে পেল দীর্ঘশ্বাস ফেলল জো। অসহিষ্ণুর মত পায়চারি করতে লাগল শেরিফ।
জো, সব দোষ তোমার, দাঁতের ফাঁকে বলল সলটার। তুমি গুলি না করলে ওরাও করত না। ওদের পিস্তল চেক করতে পারত শেরিফ।
তোমাকে তো বলেছি, গুলি আমি শুরু করিনি, ক্ষোভের সঙ্গে বলল জো।
এক কথা কবার বলব?
রাস্তায় যখন আমি ডেকেছিলাম, তখন যদি থামতে; তবে তোমাদের সঙ্গে আসতাম আমি। ওদের চ্যালেঞ্জও করতে পারতাম। আইন অমান্য করতে সাহস পেত না ওরা। এখন দেখলে তো-
ওদের পালাতে দিতে চাইনি আমরা। দেরি করলে ঠিকই পালাত, সলটার বলল।
পালাত মানে? পালিয়ে তো গেলই। ওদের বিরুদ্ধে আর খুনের চার্জ আনা যাবে না। কোন প্রমাণ নেই। তারচেয়ে চল মার্টিনের লাশ দেখে আসি। যদিও কোন লাভ হবে না তাতে। তোমাদের আর ওদের কথা পরস্পার বিরোধী। মার্টিনকে গুলি করতে দেখেনি কেউ।
তাই বলে দোষ করেও পার পেয়ে যাবে? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল জো।
রাগ-ঝাল করে তো আর মার্টিনকে ফিরে পাবে না, বলল ম্যাকডারমট। উঠনের দিকে এগোল। চল, একবার রাস্তার মোড় থেকে ঘুরে আসি।
রাস্তায় বেরিয়ে এল ওরা। ওদের পিছু নিল জনতা। ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে লণ্ঠন নিয়ে হাজির হয়ে গেছে লোকজন। মোড়ে পৌঁছে গেল ওরা। মৃতদেহের চারপাশে খানিকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ভিড় ঠেলে মৃতদেহের একপাশে চলে এল ওরা। উত্তেজিত গলায় আলোচনা করছে লোকে। রাগে গা জ্বলে গেল সলটারের।
তামাশা দেখতে এসেছ? ভাগ এখান থেকে, চিৎকার করে বলে উঠল সে।
ওর ধমকে কাজ হল। চুপ করে গেল সকলে। চারদিকে চাইল একবার শেরিফ।
কেউ খুনের ঘটনাটা দেখেছ? জান কিছু প্রশ্ন করল সে। জানা থাকলে বলে ফেল। ভয়ের কিছু নেই।
তোমার অফিসের দিক থেকে দুজন লোক এদিকে ছুটে এসেছিল, বলল কেউ একজন।
সে সময় তুমি কোথায় ছিলে? প্রশ্ন করল ম্যাকডারমট।
ওই যে ওদিকে, উল্টো দিকে আঙুল দেখাল সে। স্যালুনের দিকে যাচ্ছিলাম আমি। দুটো পিস্তল দিয়ে পেছন দিক থেকে গুলি করেছিল একে। এও পাল্টা গুলি করেছিল কিন্তু টিকতে পারেনি দুজনের বিরুদ্ধে।
পিস্তল দুটো ছিল? জানতে চাইল কৌতূহলী শেরিফ।
লোক ছিল কজন? একজন না দুজন? দুটোই একজনের হাতে ছিল না তো?
না। দুজন লোক। পিস্তল দুটোর ব্যবধান দশ ফুটের মত ছিল। গুলির শব্দ মিলিয়ে যেতেই শুনলাম দুজন লোক ছুটে পালাচ্ছে। লোকটি অর্ধেকখানি ঘুরে অন্ধকার যে রাস্তাটা দেখাল সে রাস্তাতেই রয়েছে হেলগা ডিকসনের কেবিন। তারপর এল এই লোক দুটো। লাশ দেখেই ঘুরে দৌড়াল। কিছুক্ষণ পরে বার্নে গোলাগুলি শুনলাম।
তোমাকে ঠিক এ কথাগুলোই বলেছিলাম আমরা, শেরিফকে উদ্দেশ্য করে বলল সলটার। খুনীরা দেখতে কেমন? লোকটিকে প্রশ্ন করল সে।
দেখতে পাইনি। আলো ছিল না। শুধু ছুটতে দেখেছি।
তোমার নাম? প্রশ্ন করল শেরিফ। স্টেটমেন্ট লাগবে।
কার্ল হুপার, জবাব এল। স্টেজ অফিসে আছি আমি। সারাদিনই পাবে ওখানে।
লোকজন সরে যেতে শুরু করেছে। বুঝে ফেলেছে উত্তেজনা ফুরিয়ে গেছে।
আমাদের কথা বিশ্বাস হল এবার? শেরিফকে জিজ্ঞেস করল সলটার।
অবশ্যই, জবাব দিল সে। কিন্তু এতে প্রমাণিত হয় না যে হাওয়ার্থ আর হ্যারিসন খুনী।
লাশের একটা ব্যবস্থা করতে হয়, কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল কেউ।
সলটার ঘুরে তাকাল। তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ফ্রেড। আণ্ডারটেকার।
মাথা ঝাঁকাল সলটার। পাশে দাঁড়ানো অন্য লোকটিকে কার্ট নিয়ে আসতে নির্দেশ দিল ফ্রেড। আর সে নিজে এগিয়ে এল লাশ পরীক্ষা করার জন্যে।
খরচ দেবে বক্স ডব্লিউ, বলল সলটার।
কাজটা কার? প্রশ্ন করল ফ্রেড।
জানি কাদের কিন্তু প্রমাণ করতে পারছি না, জো বলল। তবে, ওদের ছাড়ব আমি।
তুমি তদন্ত কর, শেরিফকে বলল সলটার। চল, জো, র্যাঞ্চে ফিরে যাই। জোহানকে তো পেলাম না। মাঝখান থেকে মার্টিনকে হারালাম। জর্জকে জানাতে হবে সব।
সলটার, ঝামেলা এড়িয়ে চলবে, সে হাঁটা ধরতেই বলল শেরিফ। জবাব দিল না সলটার।
কি ভাবছ, সলটার? খানিকদূর আসার পর প্রশ্ন করল জো। নিশ্চয়ই র্যাঞ্চে ফিরছ না? তোমার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে মার্টিন। ওর লাশ মাড়িয়ে ফিরর না কিছুতেই।
প্রশ্নই ওঠে না। শেরিফকে শোনালাম কেবল।
তবে এত কি ভাবছ?
হাওয়ার্থ আর হ্যারিসন ম্যাকগ্রর সঙ্গে বেরিয়ে গেছে। ঘোড়া নেয়নি। আমার ধারণা শহরেই রয়েছে ওরা তিনজন। সুযোগের অপেক্ষা করছে। চরম কিছু ঘটাতে চায়।
সেই ভাল। একটা এসপার ওসপার হয়ে যাওয়া দরকার।
হু। ওদের তিনজনের কাছ থেকে কথা বার করতে পারার প্রশ্নই ওঠে না, নিচু গলায় বলল সলটার। চিন্তামগ্ন। ওর দিকে চাইল জো।
তবে?
হেলগা নিশ্চয়ই ম্যাক আর জোহানের কাজ-কারবার সম্বন্ধে জানে, ফ্যাসফেঁসে শোনাল সলটারের গলা। ওর সঙ্গে কথা বলব আমরা।
হেলগা যদি মুখ না খোলে? চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল জো। আমাদের দেখে চেঁচামেচি জুড়ে দিতে পারে।
সেটাই চাই আমি, কঠিন গলায় বলল সলটার। ম্যাকগ্র জানুক হেলগার কাছে গিয়েছি আমরা। যা হওয়ার সামনাসামনি হোক।
সলটার ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার রাস্তার মোড়ের দিকে রওনা হল। ওকে অনুসরণ করল জো।
সলটার, ডাকল জো। হেলৰ্গাকে এসবে না জড়ালে হয় না? হাজার হোক, মেয়ে মানুষ।
উপায় নেই, এখন ও-ই ভরসা।
নিচু গলায় খিস্তি করল জো। সলটার চলে গেল কেবিনের কাছে। জানালার পাতলা পর্দা ভেদ করে আলো আসছে। পর্দার ফুটোয় চোখ রাখল সলটার। খাটে বসে ম্যাগাজিন পড়ছে হেলগা।
একাই রয়েছে ও, ফিসফিস করে জোকে বলল সে। বিড়বিড় করে কি যেন বলল জো। বুঝল না সলটার। তুমি বাইরে থাক, লক্ষ রাখবে; ম্যাকগ্রকে দেখলেই সতর্ক করবে আমাকে।
ঠিক আছে, দৃঢ় গলায় বলল জো।
দরজার কাছে গিয়ে বার কয়েক মৃদু আঘাত করল সলটার। চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি বোলাল। খুলে গেল দরজা। উঁকি দিল হেলগা।
কি চাও? প্রশ্ন করল সে। কেটে পড়। ম্যাকগ্র আসার আগেই, সলটারের মুখের ওপর দরজা টেনে দিল সে। তবে লাগানর আগেই ডান কাঁধ দিয়ে প্রচণ্ড ধাক্কা দিল সলটার। দড়াম করে খুলে গেল দরজা। ধাক্কার চোটে কয়েক পা পিছিয়ে গেল হেলগা। সলটার শুনতে পেল অন্ধকার কোণ থেকে খিস্তি করল জো।
ভেতরে ঢুকল সলটার। ভেজিয়ে দিল দরজা। কি চাও? ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করল হেলগা।
তোমাদের মতলবটা কি জানতে চাই, দ্রুত জবাব দিল সলটার। হেলগা প্রতিবাদ করতে যেতেই হাত তুলল সে। ম্যাকগ্রর ব্যাপারে জানি আমি, ভাও দিল সলটার, কাজেই ওর কথা না বললেও চলবে। জোহানকে নিয়ে কি করতে চায় সে?
আমি কি জানি? জোহান শহরে নেই, বলল সে। জানতে না?
আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু নেই কেন? ম্যাকগ্র ওকে কাজে লাগাতে পারেনি?
মানে? তুমি কিছু জান নাকি? উত্তেজনা ধরা পড়ল মেয়েটির কঠে। চোয়াল শক্ত হল সলটারের। জানা থাকলে তো কথাই ছিল না। কিন্তু প্রকাশ করল না। সেটা। হেলগার কাছ থেকে খবর বার করতে হবে, যে ভাবে হোক।
যতটুকু জানি তা তোমাকে জেলে পারার জন্যে যথেষ্ট। কটা বছর থেকে আসবে নাকি?
সব তোমার চাপাবাজি, ফাঁকা হেসে বলল হেলগা।
তবে ভয় পাচ্ছ কেন? জোর করে হাসল সলটার। ভেবেছিলাম তুমি জোহানের বন্ধু। এখন দেখছি তা নয়। ম্যাকগ্রর নির্দেশ পালন করে গেছ শুধু। ওরা যদি জোহানকে খুন করে তবে তার দায় তোমার ঘাড়েও বর্তাবে।
ফ্যাকাসে হয়ে গেল হেলগার মুখ। জেদি মেয়ের মত দুপাশে মাথা নাড়ল। সে।
ম্যাকগ্র কি করবে না করবে সে তার ব্যাপার। আমি সেজন্যে দায়ী হতে যাব কেন?
সব জেনেশুনে চুপ করে থাকলে দায়ী হবে না? বলল সলটার। ম্যাকগ্রর দুজন লোক মার্টিনকে খুন করেছে। আমি র্যাঞ্চে ফিরে খবরটা জানালেই দু’র্যাঞ্চে যুদ্ধ বেধে যাবে। তুমি কি তাই চাও? আমাকে সব খুলে বল। একশ ডলার পাবে।
বেরোও এখান থেকে, চেঁচিয়ে উঠল হেলগা। তোমার যা ইচ্ছে করগে যাও।
ঠিক আছে, যাচ্ছি। তোমার ভালর জন্যেই বলেছিলাম, শ্রাগ করে বলল সলটার। এখন শেরিফকে সব জানানো ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল সে। মনে আশা এই বুঝি পিছু ডাকবে হেলগা। কিন্তু চুপ। করে রইল মেয়েটি। আশা নিভে গেল সলটারের। তার ধোকায় কাজ হয়নি। দরজাটা ভিড়িয়ে দিয়ে জো এর দিকে কয়েক পা এগিয়েছে কেবল এসময় আচমকা খুলে গেল দরজা।
আমি রাজি। কারও জন্যে জেল খাটব না আমি। তবে কথা রাখতে হবে। তোমাকে। পুরো টাকা চাই।
পাবে, দ্রুত বলল সলটার। আমি চাই এ শহরের একজন লোক নিজের কানে তোমার সব কথা শুনুক।
শেরিফ? প্রশ্ন করল হেলগা। উফ!
প্রমাণ দরকার শেরিফের। আমার নয়। কাজেই ওকে বাদ দেয়া যায় না।
আমি পরিস্থিতির শিকার, তিক্ত কণ্ঠে বলল মেয়েটি। ঠিক আছে, সব। জানাব আমি। তবে ম্যাকগ্রর হাত থেকে আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব তোমার। মনে থাকে যেন।
০৮. হেলগাকে নিয়ে শেরিফের অফিসে
হেলগাকে নিয়ে শেরিফের অফিসের দিকে রওনা দিল সলটার। সঙ্গে জোও রয়েছে। এতক্ষণের উত্তেজনায় ব্যথার কথা ভুলেই গিয়েছিল সলটার। এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সেটা।
কী ঘটতে যাচ্ছে জানা নেই ওর। মেয়েটি কতখানি জানে? যতটুকু জানে তাতে ম্যাকগ্রদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে শেরিফ?
হেলগা নার্ভাস হয়ে পড়েছে। চাইছে এদিক-ওদিক। পেছন দিকে সতর্ক নজর রেখেছে সলটার। কার্টলির কথা ভোলেনি ও। এখনও শহরে রয়েছে সে। দৃষ্টি রাখছে সলটারের ওপর। তবে একটা ব্যাপারে ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। সে। কার্টলি শেরিফ রজার হাপারের হত্যাকারী নয়। হত্যাকারীর গলা এবং অবয়ব এ লোকের সঙ্গে মেলে না।
শেরিফের অফিসের দরজার কাছে পৌঁছে দাঁড়াল ওরা। ইশারায় জোকে পেছন থেকে কভার দিতে বলল সলটার। অফিসের সামনের জানালায় আলো জ্বলছে। কিন্তু দরজা খুলতে ব্যর্থ হল সলটার। বন্ধ। অসহিষ্ণুভাবে গুঙিয়ে উঠল হেলগা।
পেছন ফিরল সলটার। জো, খুব সম্ভব খুনের জায়গায় রয়েছে শেরিফ। তুমি শিগগির খুঁজে আন তাকে। বলবে খুব জরুরি দরকার। আমি হেলগাকে নিয়ে রইলাম এখানে।
আমার ভয় করছে, জো সরে যেতেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল হেলগা। ম্যাকগ্রর লোকেরা নজর রাখছে তোমার ওপর। শুধু তোমাকে মেয়েই থামবে না ওরা। আমাকেও মারবে।
ভয় পেয়ো না, আমি তো আছি। আচ্ছা, প্রথমবার আমি তোমার কেবিন থেকে ফেরার পর কি ঘটল বল তো। খুব কৌতূহল হচ্ছে আমার।
খানিক বাদেই ম্যাকগ্র এল, ওকে বললাম জোহানকে খুঁজতে এসেছিলে তুমি। তারপর ওর দুজন লোক এসে তোমাদের সঙ্গে বার্নে দেখা হওয়ার কথা জানাল। ম্যাকগ্র বলে দিল বক্স ডব্লিউ-এর প্রত্যেকটা লোকের ওপর নজর রাখতে। আর সুযোগ পেলেই প্রাণে মারতে। লোক দুটো চলে গেল। তার কমুহূর্ত পরেই গোলাগুলির শব্দ শুনলাম।
লোক দুটো কারা?
জিওফ হাওয়ার্থ আর বব হ্যারিসন।
গুড, সব জানাবে শেরিফকে, তোমার আর চিন্তা নেই। ম্যাকগ্র ঝামেলা পাকাচ্ছে কেন জান কিছু?
ক্ষমতার জন্যে, বলল মেয়েটি। বক্স ডব্লিউ-এর ক্ষমতা পাওয়ার জন্যে তোমার বাবাকে খুন করেছে সে।
কি বললে? আবার বল, হেলগার কাঁধ ধরে ঝাঁকাল সে।
ছাড়। ব্যথা লাগে।
মাফ চাইল সলটার। হাত সরিয়ে নিল ওর কাঁধ থেকে। মেয়েটি রাস্তার দিকে চেয়ে সেঁটে এল সলটারের শরীরে। ওর কাঁধের ওপর দিয়ে চাইল সলটার। একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে। আরও কাছে আসতে চিনতে পারল সে। কার্টলি। অবশ্য ওদের দেখতে পায়নি ও। পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। হেলগা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে, বুঝল সলটার। পিস্তলের বাটে হাত চলে গেল তার। কপালে বিন্দু বিন্দু। ঘাম।
ঈশ্বর বাঁচিয়েছে, লোকটি চোখের আড়াল হতে বলল হেলগা। আমাকে মারতে চাও নাকি? চল আমার কেবিনে ফিরে যাই। শেরিফকে নিয়ে এস তুমি। ওখানেই কথা হবে। এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়াচ্ছি না আমি।
একটু অপেক্ষা কর। এখন কেবিনে ফেরা আরও বিপজ্জনক। ম্যাকগ্র আমার বাবাকে মেরেছে বলছ, কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে? ও নিশ্চয় বলেনি তোমাকে?
এক রাতে পাঁড় মাতাল হয়ে এসেছিল, বলল মেয়েটি। ঘুমের মধ্যে সব বলেছে। এও বলেছে তোমাকে চরম ঘৃণা করে ও।
কিন্তু কেন? প্রশ্ন করল সলটার। আমি ওর কি ক্ষতি করেছি?
তোমার বাবাকে মারল কেন? পাল্টা প্রশ্ন করল হেলগা। ফোরম্যান হওয়ার জন্যে। পারল কই? সে দায়িত্ব তো নিলে তুমি। ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারেনি সে।
আমাকে তখন খুন করার চেষ্টা করল না কেন?
তক্কে তক্কে ছিল। এসময় এল উইলবার অসকার। ওর র্যাঞ্চের ফোরম্যান হল ম্যাকগ্র। কিন্তু তোমার প্রতি ঘৃণা দূর হয়নি তার। দায়িত্ব পেয়ে প্রতিশোধের নেশা আরও বাড়ল বরং। জর্জ ওয়াগনারকেও একই রকম ঘৃণা করে সে, ওকে ফোরম্যান করেনি বলে। তোমাদের দুজনের ওপরই প্রতিশোধ নিতে চায় সে। তোমাকে খুন করে, আর জর্জকে ধ্বংস করে।
গত সপ্তাহে ও-ই কি আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল?
না। ঘটনাটা ঘটায় অন্যদের মত ও-ও অবাক হয়ে গিয়েছিল। যে কোন কিছু প্ল্যান করলেই আগে আমাকে জানায় সে। রাসলিং ঘটাচ্ছে সে-ই। জর্জ ওয়াগনারকে পথে বসানর দুটো রাস্তা বার করেছে ম্যাকগ্র। এক রাসলিং আর দুই জোহান ওয়াগনারকে নষ্ট করা।
জোহানকে কিভাবে নষ্ট করছে সে?
জোহানকে রাসলিং-এ ঢুকিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে: ম্যাকগ্র। জোহানকে দিয়ে তোমাকে খুন করাতে চেয়েছিল। পারেনি। আমার সঙ্গে জোহানের মেলামেশায় বাধা দেয়নি ও। যাতে ওকে পুরোপুরি মুঠোয় পেয়ে যায়।
জোহান রাসলিং-এ জড়াল কিভাবে? জানতে চাইল সলটার।
জুয়া, বলল হেলগা।
তারমানে?
জুয়া খেলে প্রচুর টাকা হেরেছে জোহান। আর ওকে দুহাতে ধার দিয়েছে ম্যাক। ছেলেটা এখন নাক পর্যন্ত ডুবে আছে দেনায়। সে সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকগ্র। ইদানীং ওকে টাকার জন্যে চাপ দিতে শুরু করেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে জোহান। ওকে বুদ্ধি বাতলে দিয়েছে ম্যাকগ্র। রাসলিং। বাপের গরু চুরি করে জুয়ার ধার শোধ করছে ছেলে। তবে কিছুদিন যাবৎ ম্যাককে বিরক্ত করছে জোহান। ওর খপ্পর থেকে বেরোতে চাইছে। ম্যাকগ্র প্রচণ্ড রেগে রয়েছে ওর ওপর।
জোহান এখন কোথায়? প্রশ্ন করল সলটার। শহরে নেই। সবখানে খুঁজেছি। আমি।
মাইল দুয়েক দূরে একটা শ্যাক আছে, বলল হেলগা। রাসলাররা ওখানেই জড়ো হয়। ওদের অনেকে র্যাঞ্চ ও-র লোক। সেটা অবশ্য জানে না অসকার। জোহান বলছিল দিন দুয়েক ওখানেই কাটাবে।
রাস্তার দিকে চাইল সলটার, জো বা শেরিফ কারও দেখা নেই। এখনই রওনা দেয়া দরকার। কিন্তু হেলগাকে একা রেখে যেতে সাহস করল না সে। হেলগার মুখে সব কথা শোনা দরকার শেরিফের। ম্যাকগ্র শহরে রয়েছে, ভাবনাটা মাথায় আসতেই চোখ চকচক করে উঠল সলটারের। খুনীটার মুখোমুখি হওয়ার সময় হয়ে এসেছে প্রায়। আপন মনে হাসল সে।
বুটের শব্দে সচকিত হল সলটার। ঘাড় ফেরাতেই দেখল ফিরে আসছে কার্টলি। উত্তেজনায় টানটান হল ওর শরীর। হাত চলে গেল পিস্তলের বাঁটে।
প্রথম সুযোগেই তোমাকে খতম করবে ও, চাপা গলায় বলল মেয়েটি। ম্যাকগ্র তাই বলছিল। ওর ধারণা তোমাকে যে-ই খুন করুক না কেন দোষ পড়বে হার্পারের খুনীর! কারণ সেদিন তোমাকে গুলি করেছিল সে।
চুপ, ফিসফিসিয়ে বলল সলটার। হেলগার গলা কানে গেছে কার্টলির। জেলখানার দিকে তখুনি মাথা ফেরাল সে। সলটার আশা করল শেরিফের জানালার আলো গানম্যানকে ধোকা দেবে। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভেজাল সে। আরও খানিকটা এগিয়ে এসেছে এখন কার্টলি। এ মুহূর্তে ওদের পাশ কাটাল সে।
এবারও তার চোখ এড়িয়ে গেল ওরা। হেলগার কাঁধে বাঁ হাত রাখল সলটার। ডান হাত শক্ত হল পিস্তলের বাটে।
ল অফিস ছাড়িয়ে প্রায় গজ বিশেক এগিয়ে গেছে কার্টলি। তীক্ষ্ণ চোখে ওকে নজর করছে সলটার। সামান্য উঁচু হল গানম্যানের ডান কাঁধ। অভিজ্ঞ সলটার বুঝতে ভুল করল না। কাঁধে চাপ দিয়ে হেলগাকে বসিয়ে দিল সে। কোল্ট চলে এল সলটারের হাতে। দেখতে পেল দ্রুত
ফিরে আসছে কার্টলি। তবে ভুল করে ফেলল সে। সম্পূর্ণ ঘোরার আগেই। পিস্তল বার করল। ইতোমধ্যে অনেকখানি কাছে চলে এসেছে সে। লণ্ঠনের আলোয় অস্পষ্ট ছায়ামূর্তির মত লাগছে তাকে।
সলটার? চেঁচিয়ে জানতে চাইল সে।
হ্যাঁ, আমি। পিস্তল কক করল ও। গানম্যানের ডান হাত এখন ওর দিকে তাক করা। ভয়ে আর্তচিৎকার করে উঠল হেলগা। ধপ করে এক হাঁটুর ওপর বসে পড়ল সলটার। লালচে আলো চোখে পড়ল তার। প্রচণ্ড শব্দে গুলি এল। লাগল ঠিক ওর পাশের দেয়ালে। পিস্তলটা ঝাঁকি খেল সলটারের ডান হাতে। আগের গুলির প্রতিধ্বনি মিলিয়ে গেল এবার। চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করল সলটার। আবার গুলি করল কার্টলি। তবে সলটারের ধারে কাছে এল না সেটা। বাতাসে গানম্মোক, তারই মাঝ দিয়ে গানম্যানকে এক ঝলক দেখতে পেল সে। উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছে লোকটা। পিস্তল কক করল সলটার।
খানিক অপেক্ষার পর উঠে দাঁড়াল। অবসাদগ্রস্ত। গুলির মিলিয়ে আসা প্রতিধ্বনি শুনল কান পেতে। হঠাই লাফিয়ে উঠে দৌড়াতে চেষ্টা করল হেলগা। ওর হাত চেপে ধরল সলটার।
বোকা কোথাকার, ধমকাল সে। তোমার জন্যে এখানটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
ওকে দরজার দিকে ঠেলে দিয়ে কার্টলির দিকে এগোল সে। ফুটপাথে পড়ে রয়েছে গানম্যান। তার প্রাণহীন দেহটা পিস্তল দিয়ে কভার করল সলটার। নিশ্চিত হল, মারা গেছে কাটলি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ফিরে এল হেলগার কাছে। লোকজন জমতে সময় লাগবে না। আর তাদের মাঝে ম্যাকগ্র থাকলে তো কথাই নেই। ওর সঙ্গে হেলগাকে দেখলেই সব বুঝে ফেলবে সে। প্রাণে মরবে হেলগা, কেউ ঠেকাতে চাইলে তাকেও ছাড়বে না ম্যাকগ্র। জন সলটারের মত রয় সলটারকে হয়ত জীবন দিতে হবে ওর গুলিতে।
বুটের শব্দ কানে এল সলটারের। লম্বা একটা মূর্তি ছুটে আসছে এদিকে। জো। তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে ম্যাকডারমট। হাঁপ ছাড়ল সলটার।
কি হয়েছে? ব্যগ্র প্রশ্ন করল জো। থেমে দাড়াল মৃতদেহের কাছে।
বলছি, দ্রুত বলল সলটার। শেরিফ ওর কাছে পৌঁছলে বলল, অফিস খোল, ম্যাক। হেলগা তোমার সঙ্গে কথা বলবে। আমি চাই না কেউ দেখে ফেলুক ওকে।
দরজা খুলল ম্যাকডারমট। হেলগাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল সলটার। তাদের পেছনে ঢুকল জো আর শেরিফ। হেলগাকে সেলের দিকে ঠেলে নিয়ে চলল সলটার।
একে আপাতত আটকে রাখ, পরামর্শ দিল সে। লোকে ভরে যাবে এ জায়গাটা। ম্যাকগ্র ওকে দেখে ফেললে অসুবিধে হবে। খুন করবে নির্ঘাত।
তুমি কথা দিয়েছিলে, আমাকে রক্ষা করবে, ভয়ে কেঁপে উঠল হেলগার গলা।
তাই-ই করছি, পাল্টা বলল সলটার। দেরি কোরো না, ম্যাক।
এসব কি হচ্ছে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, অবাক হয়ে জানতে চাইল শেরিফ, ডেস্ক থেকে বড় একগোছা চাবি নিল সে।
সব বলব তোমাকে। আগে যা বলছি কর, সলটার বলল, ম্যাকগ্র আর তার দুই চামচাকে ধরতে চাও তুমি। খুন আর রাসলিং এর অভিযোগে। সে ব্যবস্থাই করছি আমি।
ম্যাকগ্র শহরে রয়েছে, দ্রুত বলল জো। বড় স্যালুনটায় দেখেছি।
মাথা নাড়ল ম্যাকডারমট। বুঝতে পারছে না কি ঘটছে। সেল খুলে হেলগাকে ভেতরে ঢোকাল। তালা মেরে দিল দরজায়। যখন ফিরে এল তখনও চোখ মুখ থেকে বিস্ময় কাটেনি তার। অসহিষ্ণু বোধ করছে সলটার। দরজার দিকে এগোল সে। কিন্তু থমকে দাঁড়াতে হল শেরিফের ডাকে।
এসব পছন্দ হচ্ছে না আমার, বলল শেরিফ। সব জানতে চাই আমি।
একটা লাশ পড়ে রয়েছে বাইরে, সলটার বলল। ম্যাকগ্রর লোক। আমাকে গুলি করেছিল। আমাকে খুন করতে চায় ম্যাকগ্র, আবার প্রমাণিত হল সেটা। তাছাড়া হেলগা জানিয়েছে ছ’বছর আগে বাবাকে খুন করেছে সে-ই, হেলগার সঙ্গে ওর আলোচনা, সংক্ষেপে শেরিফকে জানাল ও। তবে প্রতিটি মুহূর্ত উৎকর্ণ রইল বাইরের শব্দ শোনার আশায়। কানে এল লোকজনের চাপা গলার কথাবার্তা।
এতে হবে না, সব শুনে বলল শেরিফ। আমি নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করব ম্যাককে। এবং এক্ষুণি। ওই মেয়ের কথায় কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।
আমার ওপর ব্যাপারটা ছেড়ে দাও। আমি স্যালুনে গিয়ে ম্যাকগ্রর সঙ্গে কথা বলব। তুমিও থাকবে আমার সঙ্গে। কার্টলিকে মেরে ফেলেছি জানলেই ওর প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবে তুমি। ও কি করে তখন নিজের চোখে দেখবে।
আইন ওভাবে কাজ করে না, প্রতিবাদ জানাল শেরিফ। তোমাকে নেব না আমি। একাই যাব। এখানে নিয়ে আসব ওকে। ওর বক্তব্য শুনব। তুমি আর জো এসবের বাইরে থাকবে।
তোমার যা ইচ্ছে, ঠাণ্ডা গলায় বলল সলটার। আমি তবে আমার কাজে যাব। খুব সম্ভব বিপদে পড়েছে জোহান। জো, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। যত দ্রুত সম্ভব। ছেলেদের জড়ো কর। আমি প্রথমে যাব শ্যাকে। সেখান থেকে সোজা স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ। জর্জকে বলবে ছেলেদের নিয়ে ওখানে চলে যেতে। আমার জন্যে অপেক্ষা করবে। তারপর সকলে মিলে অসকারের র্যাঞ্চে যাব। দেখব কি বলে সে।
আমার মনে হয় ভুল করছ তুমি,সলটার, সতর্ক করল ম্যাকডারমট।
তুমি তোমার কাজ কর। আমার ব্যাপারে না ভাবলেও চলবে, কর্কশভাবে বলল সলটার। হেলগার যেন কোন ক্ষতি না হয়। ওকে আশ্বাস দিয়েছি আমি। আর ম্যাকগ্রকে ধরতে চাইলে রওনা দাও এখুনি। স্যালুন থেকে বেরিয়ে গেলে, পরে খুঁজে বার করতে অসুবিধে হবে।
আমি বরং তোমার সঙ্গে যাই, বলল জো। শ্যাকে গণ্ডগোল বাধলে সাহায্যের দরকার পড়তে পারে।
সাহায্য দরকার পড়বে র্যাঞ্চ ও-তে যাওয়ার সময়। এখন নয়, শান্তস্বরে বলল সলটার। এখন যা বলেছি কর।
ওকে, বলল কাউবয়। র্যাঞ্চে ফিরছি আমি। মাঝরাতের দিকে স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ দেখা হবে।
ওখানে থাকব আমি, বলল সলটার। জোর পিছে পিছে বাইরে বেরিয়ে এল সে। এসময় শেরিফের ডাকে থামতে হল তাকে। চলে গেল জো।
সলটার, আমার সঙ্গে চল তুমি, গম্ভীরস্বরে শেরিফ বলল। তুমি সোজা স্যালুনে ঢুকবে। ম্যাককে বলবে তুমি জেনে গেছ সে তোমার বাবার হত্যাকারী। তারপর দেখি কি করে ও।
বুদ্ধিটা মন্দ নয়, বলল সলটার। শেরিফকে নিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে। মৃতদেহের চারপাশ ঘিরে ভিড় জমেছে ততক্ষণে। ওরা হাঁটতে শুরু করতেই কিছু, কৌতূহলী লোক পিছু নিল ওদের।
মাথা ঠাণ্ডা রাখবে, পরামর্শ দিল শেরিফ। গোলাগুলি চাই না আমি। ম্যাকগ্র অপরাধী হলে আমি চাই সে তার দোষ স্বীকার করুক।
আমাকে দেখলেই সম্ভবত ড্র করবে সে, কঠিন শোনাল সলটারের কণ্ঠ।
আমিও নিশ্চয় দাঁড়িয়ে থাকব না তখন।
রাস্তা পেরোল ওরা। নিঃশব্দে। এগিয়ে চলল স্যালুনটার দিকে। চারপাশে চাইল সলটার। অনুমান করতে চেষ্টা করল আরও কোন বিপদ ওঁৎ পেতে রয়েছে। কিনা। হাওয়ার্থ আর হ্যারিসন কি তাদের ফোরম্যানের সঙ্গে রয়েছে? থাকুক, পরোয়া করে না সলটার। ক্রোধে জ্বলছে সে ভেতর ভেতর। বাবার খুনীর সঙ্গে দেখা হবে সামান্য পরেই। মার্টিনকেও খুন করিয়েছে ম্যাকগ্র। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, খুনীটাকে দেখেও। পারবে তো?
গত শনিবারের সেই গানম্যান কে? তার পরিচয় কি? ম্যাক হেলগাকে বলেছে সেদিনের ব্যাপারে কিছু জানে না সে। মিথ্যে বলবে না ও। সব। পরিকল্পনার কথা মেয়েটিকে জানায় ম্যাকগ্র। কাজেই ও ব্যাপারেও স্বীকার না করার কোন কারণ নেই।
দরজার কাছ থেকে নজর রাখব আমি, বলল শেরিফ। ব্যাট-উইং-এর কাছে পৌঁছে গেছে ওরা। সায় জানাল সলটার। এগিয়ে গিয়ে ডান কাঁধ দিয়ে দরজায় আঘাত করল সে। তারপর সদর্পে ঢুকে পড়ল ভেতরে। চারদিকে চেয়ে ম্যাকগ্রকে খুঁজল সে। যে কোন কিছুর জন্যে মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছে।
ম্যাকগ্র নেই। হতাশ হল সলটার। হয়ত র্যাঞ্চে ফিরে গেছে। অপেক্ষা করছে কার্টলির জন্যে। সুখবর নিয়ে আসবে সে। এমনিতেই মার্টিন মারা গেছে; তার ওপর সলটার মারা পড়লে হাঙ্গামা হতে পারে; এই ভেবেই হয়ত শহর ত্যাগ করেছে সে।
একটা বিয়ার অর্ডার দিল সলটার। আরেকবার ভাল করে দেখল স্যালুনটা। টেণ্ডারকে জিজ্ঞেস করল, খানিক আগে ম্যাকগ্র ছিল এখানে, চলে গেছে নাকি?
হ্যাঁ। স্যালুনটা এক ঝলক দেখে নিল টেণ্ডার। কয়েকজন রাইডারকে নিয়ে এখানে ছিল সে। চলৈ গেছে এই তো আধ ঘণ্টার মত হবে। ও বেরোনর পরপরই গুলি হতে শুনলাম। ওর র্যাঞ্চের কে বলে মারা গেছে। তারপর আর ফেরেনি ম্যাকগ্র।
ঘুরে বিয়ার হাতে বারের দিকে এগোল সলটার। এক কোণে পরিচিত এক লোককে বসে থাকতে দেখল। সেদিকে এগোল সে।
কি খবর, ডায়াস, হাসিমুখে বলল সলটার। একটা ড্রিঙ্ক নেবে?
বয়স্ক লোকটি ওকে চিনতে পেরে এগিয়ে এল। শরীরের কাঠামো মজবুত এখনও তবে ঝুলে পড়েছে চামড়া।
কেমন আছ, সলটার? পাল্টা জিজ্ঞেস করল লোকটি। বাপের চেহারা পাচ্ছ দিনকে দিন। শুনলাম গুলি খেয়েছ। তা আছ কেমন এখন?
ভাল, বলল সলটার। ইশারায় এক গ্লাস বিয়ার আনার জন্যে অর্ডার করল টেণ্ডারকে। বসে পড়ল দুজনে। চারদিক একবার জরিপ করে মুখ খুলল, ডায়াস, তুমি তো বাবার বন্ধু ছিলে। বাবার খুনীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি জানই তো। আজ রাতে সে কিন্তু তোমার চোখের সামনেই ছিল।
চোখের সামনে? এখানে? বিস্ময়ে ভূ কোঁচকাল ডায়াস। কে সে?
ম্যাকগ্র। কঠোর শোনাল সলটারের গলা। আবার চাইল চারপাশে। দেখল ব্যাট উইং-এর ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে শেরিফ। শুনেছি অনেক গোপন কথা জানা আছে তোমার। সত্যি?
ফাঁকা হাসল লোকটি। কমুহূর্ত সলটারের দিকে চেয়ে থেকে মাথা ঝাঁকাল।
হু, বলল সে। ইদানীং এসব খবর বেচে পেট চালাতে হচ্ছে। বয়স তো আর কম হল না। কাজকর্মে শক্তি পাই না আগের মত। রজার হার্পারকেও সাহায্য করতাম আমি, খবর সরবরাহ করে।
তাই নাকি? অবাক হল সলটার। কখনও শুনিনি তো। যা হোক দশডলার রোজগার করতে চাইলে মুখ খোল। কি হচ্ছে এখানে? গত সপ্তাহে আমাদের গুলি করল কে?
গত সপ্তাহের খুনী র্যাঞ্চ ও-র লোক, বলল বুড়ো। এক ঢিলে দু’পাখি মারতে চেয়েছিল সে। তোমাকে আর শেরিফকে পেয়েও গিয়েছিল এক সঙ্গে।
নাম কি তার?
তা জানি না। ভাড়া করে আনা হয়েছিল তাকে। এতদিনে কোথায় গায়েব হয়ে গেছে কে জানে। এ কাউন্টির লোক নয় সে।
যে কাউন্টিরই হোক, বলল সলটার, আমাকে মারার জন্যে আবারও চেষ্টা চালিয়েছে সে। বক্স ডব্লিউতে গুলি করেছে আমার ওপর।
হতে পারে। এখন কি ম্যাককে খোঁজ করছ?
হ্যাঁ। তবে তার আগে জোহানকে পেতে হবে। নইলে বড় কোন বিপদ ঘটে যাবে ওর। সলটারের কাঁধের ব্যথাটা চাগাল আবার।
আজ রাতে কথা বলতে শুনেছি ওদের, বলল ডায়াস, পাশের টেবিলে ছিল ওরা। কোন ব্যাপারে খুব উদ্বিগ্ন ছিল ম্যাকগ্র। আমাকে পর্যন্ত খেয়াল করেনি। হাসল সে। ওরা জানে আমার কানের ক্ষমতা।
কিছু শুনেছ?
ম্যাকগ্রর সঙ্গের দুজন লোক একটা খুনের কথা আলাপ করছিল। আজ কাকে যেন মেরেছে ওরা।
হাওয়ার্থ আর হ্যারিসন। চিনি ওদের। ওদের কথা থাক। ম্যাকগ্র কি বলল?
শহরের বাইরে ওদের পাঠিয়েছে ম্যাকগ্র। কোন একটা শ্যাকে যেন। আরেকজন ছিল। বার কয়েক এসে ম্যাকগ্রর সঙ্গে কথা বলে গেছে সে। তোমার নাম শুনেছি ওদের মুখের তবে কি বলেছে বুঝতে পারিনি। শেষবারের মত ও লোকটা চলে যেতে বসে রইল ম্যাকগ্র। মনে হয় অপেক্ষা করছিল কোন কিছুর জন্যে। ওকে খুব উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল। তারপর খানিক আগে গুলির শব্দ কানে। যেতেই লাফিয়ে উঠল সে। বেরিয়ে গেল। আর ফেরেনি।
এতেই চলবে। বুক পকেট হাতড়ে কখানা রোল করা নোট বার করল সলটার। ডায়াসকে নোটগুলো দিয়ে উঠে পড়ল। বেরিয়ে এল ব্যাট উইং ঠেলে। শেরিফ অপেক্ষা করছিল বাইরে। তাকে খুলে বলল সব কথা।
তবে এক্ষুনি চল, বলল শেরিফ। স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট এ।
জোহান সম্ভবত মারা পড়েছে, সলটার বলল। আজ রাতে চরম পরীক্ষা আমাদের। চল রওনা দিই। আগে শ্যাকে যাব। এখান থেকে দু’মাইল।
সঙ্গে লোক নিয়ে নেব?
না। অত সময় নেই। এখন লোক লাগবে না। আমরা দুজনই যথেষ্ট। আর র্যাঞ্চ ও অপারেশনে বক্স ডব্লিউ-এর সবাইকে তো পাবই।
আস্তাবলে একসঙ্গে গেল ওরা। ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে এল দ্রুত। ক্লান্তিবোধ করছে সলটার। বড় জ্বালাতন করছে জখমটা।
রাতটা বড় নিঝুম। আকাশে মেঘ নেই। অসংখ্য তারা উঠেছে আজ। শেরিফের ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে খানিকটা অসুবিধেই হচ্ছে সলটারের। শ্যাকের কাছাকাছি আসার পর লাগাম টেনে ধরল ওরা। উঁচু একটা টিবির ওপর এসে দাঁড়িয়েছে। স্যাডল থেকে নেমে পড়ল সলটার। একটা গাছের কাছে টেনে নিয়ে গেল ঘোড়া। তারপর হেলান দিল গাছের গায়ে।
তুমি ঠিক আছ তো, সলটার? উদ্বিগ্ন গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। যেতে পারবে? ঘোড়া নেয়া কিন্তু উচিত হবে না। ওরা শব্দ শুনে ফেলতে পারে।
হুঁ, বলল সলটার। কপাল থেকে ঘাম ঝাড়ল সে। পা দুটো কাঁপছে ওর। মনে হয় আজ রাতে বড় ভোগাবে। এখানকার কাজ সুষ্ঠুভাবে শেষ করে যেতে হবে স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক। তারপর র্যাঞ্চ ও অভিযান তো বাকিই রয়েছে। টিকতে পারবে তো সে? ঘোড়া দুটো গাছের সঙ্গে বাঁধল শেরিফ। বাঁধা শেষে দুজনে নেমে আসতে লাগল টিবি থেকে।
শ্যাকটা কোথায় জানে দুজনেই। ওখানে পৌঁছনর অনেক আগেই আলো চোখে পড়ল ওদের। একটা জানালায় জ্বলছে। রুক্ষ জমিতে দ্রুত পা চালাতে চেষ্টা করল ওরা। শ্যাক থেকে শ’খানেক গজ দূরে আড়াল নিল। হাঁপাচ্ছে দুজনেই। জখমের কারণে সলটার আর বয়সের ভারে শেরিফ। তবে কথা যখন বলল তখন দৃঢ় শোনাল শেরিফ ম্যাকডারমটের গলা।
তোমার ধারণা এটা রাসলারদের আড্ডাখানা? যদি তাই হয়, তবে যাই করি না কেন বুঝে শুনে করতে হবে।
হ্যাঁ, চল গোপনে ঢুকে পড়ি। কটা ঘোড়া আছে গুনতে হবে। জানালা দিয়েও উঁকি মারব। হাওয়ার্থ আর হ্যারিসন এখানে এসে থাকলে জোহানের বারোটা বাজিয়েছে হয়ত।
শ্যাকের দিকে এগোল ওরা। দুজনের হাতেই পিস্তল। সলটার জরিপ করল চারপাশটা। স্নান আলোয় বুঝতে চাইল গার্ড রয়েছে কিনা। পা টিপে টিপে শ্যাকের এক কোণে চলে এল ওরা। ছায়া পড়েছে এখানটাতে। এ সময় উঠনটা আলোকিত হয়ে উঠল। কর্কশ গলায় কথা বলল কেউ। দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। আবার অন্ধকার।
দশ মিনিটের মধ্যে হাওয়া হব আমি। তারপর গুলি করবে ওকে।
শেরিফের হাত শক্ত করে চেপে ধরল সলটারের, ডান কনুই। মাথা ঝাঁকাল সলটার। পরিচিত কণ্ঠস্বর। ম্যাকগ্রর। মুহূর্ত কয়েক বাদেই স্যাডলে চাপল র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান। বেরিয়ে গেল দ্রুত। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল সলটার। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝ দিল নিজেকে। ম্যাকগ্রর সঙ্গে পরেও বোঝাপড়া করা যাবে। তারচেয়ে অনেক বড় দায়িত্ব এখন ওর কাঁধে। খানিক বাদেই খুন হবে কেউ। কে হতে পারে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে সে। কেবিনের দিকে এগোল সে। সঙ্গে শেরিফ।
০৯. শ্যাকের সামনের দিকের এক কোণে
শ্যাকের সামনের দিকের এক কোণে চলে গেল সলটার। তার পাশে শেরিফ। কোণ ঘুরে চলে এল ঘোট একটা জানালার কাছে। পর্দা নেই। উঁকি দিল সে। ঝুলে পড়ল চোয়াল যখন দেখল জোহান বসে রয়েছে ফায়ারপ্লেসের পাশে। হাতে সিক্সগান নিয়ে তার পেছনে দাঁড়ানো হাওয়ার্থ। আরেকজন আছে ঘরে। হ্যারিসন। দম আটকে এল সলটারের। আজ সন্ধ্যায় মার্টিনকে খুন করেছে এরা। এখন তৈরি হচ্ছে জোহানকে খুন করার জন্যে। দরজার দিকে এগোল সে। কিন্তু তার হাত আঁকড়ে ধরল শেরিফ।
জোহান, ডাকল হ্যারিসন। আমরা হুকুমের দাস। ম্যাকগ্রর কথা শুনতে হবে। তোমাকে না মেরে উপায় নেই।
মাটিনকে যেমন মারতে হল, হাওয়ার্থ বলল। হাসল নিষ্ঠুরভাবে। বক্স ডব্লিউর বিরুদ্ধে আজ রাতে যুদ্ধ ঘোষণা করছি আমরা। সকালের আগেই মারা পড়বে সলটার শালা। কার্টলিকে মেরেছে।
মারুক। কোন আপত্তি নেই আমার, বলল জোহান। মদে চুর হয়ে রয়েছে সে, বুঝল সলটার। আমি ম্যাকার বন্ধু। আমাকে মারবে কেন তোমরা?
তোমার বাবাকে পঙ্গু করার জন্যে। ম্যাকগ্র একদিন না একদিন বক্স ডব্লিউ হাতাবেই। তোমাকে আর সলটারকে মেরে আপাতত পথের কাঁটা দূর করছে সে। পরে জর্জের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
চুক্তি তো সেরকম ছিল না, বলল জোহান। মনের দুঃখে মাথা নাড়াল সে। ম্যাকগ্রকে সাহায্য করেছি নিজেদের র্যাঞ্চের স্টক চুরি করে। আমার সঙ্গে এমন করাটা ঠিক নয়। না না ম্যাকগ্র অমন করতেই পারে না।
দশ মিনিট হয়ে এল প্রায়, বলল হ্যারিসন। শ্রাগ করল সে। ঝামেলা চুকাবে কে? তুমি না আমি?
আমি, বলল হাওয়ার্থ। মার্টিন খুব সম্ভব তোমার গুলিতে মরেছে। কাজেই তোমার দায়িত্ব শেষ।
অর্ধেকটা শরীর ঘোরাল সলটার। পিস্তলের মাজল দিয়ে খোঁচা দিল শেরিফের কাঁধে। ইশারায় দরজা দেখাল। মাথা ঝাঁকাল শেরিফ। ঘুরল দ্রুত। আবার ঘরের ভেতর দৃষ্টি দিল সলটার। পিস্তল তুলছে হাওয়ার্থ। বদলে যাচ্ছে তার চেহারার ভজ। গুলি করতে প্রস্তুত সে।
না, জোহান বলল। মের না, তোমাদের দুজনকেই একশো ডলার করে দেব আমি।
হিংস্রভাবে হেসে উঠল ওরা। তখুনি পিস্তল তুলল সলটার। মাজলের আঘাতে ভেঙে ফেলল কাঁচ। চাপ দিল ট্রিগারে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিল পুরো বাড়িটাকে। গুলি খেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল হাওয়ার্থ। টালমাটাল অবস্থায় ট্রিগার চাপল। গুলি বিধল জোহানের ডান পায়ের কাছে। মেঝেতে।
হ্যারিসন লাফিয়ে চলে এল দরজা বরাবর। পিস্তল এসে গেছে তার হাতে। ওদিকে শেরিফ ঢুকে পড়েছে দরজা দিয়ে। একসঙ্গে গুলি করল ওরা। দড়াম করে পড়ে গেল হ্যারিসন। দুটো গুলি বুক ফুটো করে দিয়েছে তার। নিথর পড়ে রইল সে। শেষ।
বুক ভরে নিশ্বাস নিল সলটার। জানালা থেকে সরে এসে কেবিনে ঢুকল। শেরিফ তখন পরীক্ষা করছে তোক দুটোকে। ফায়ারপ্লেসের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে জোহান। মুখে লাজুক হাসি। মাতলামি ছুটে গেছে তার।
সলটার, তোমাকে দেখে যে কী খুশি লাগছে।
জোহানের কাছে গিয়ে কষে এক চড় কষাল সলটার। উফ বলে মাথা ঘুরে পড়ে গেল জোহান। সতর্ক চোখে সলটারকে পর্যবেক্ষণ করল শেরিফ। কুঁকল সলটার। টেনে দাড় করাল জোহানকে। ঠেলে নিয়ে চলল দরজার দিকে।
সোজা র্যাঞ্চে ফিরে যাও, কঠিন গলায় বলল সলটার। একটু এদিক ওদিক করলে হাড় গুড়ো করে দেব।
টলতে টলতে বেরিয়ে এল জোহান। অন্ধকারে মিশে গেল সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল শেরিফ। এসে দাঁড়াল সলটারের পাশে।
ও দুটো মরেছে, মন্তব্য করল সে। মার্টিনের আত্মা শান্তি পাবে। জোহান রাসলিং-এর সঙ্গে জড়িত, একথা ভাবতেও অবাক লাগছে। ওর বাবাকে জানাবে না?
আমি জানাব না। যা বলার জোহানই বলবে, বলল সলটার। চল রওনা দিই। স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীকে দ্রুত পৌঁছতে হবে। লোকজন নিয়ে র্যাঞ্চ ও অপারেশনে যাব।
অসকার অবাক হয়ে যাবে, যখন শুনবে ওর লোর্কেরা গরু চুরিতে জড়িত।
আজ রাতে অবাক হওয়ার মত আরও ঘটনা ঘটবে, দাঁতের ফাঁকে বলল সেলটার। বেরিয়ে এল বাইরে। প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে কিন্তু সেটাকে প্রশ্রয় দিল না সে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে এখনও।
ঢিবির ওপর উঠে এল ওরা। কাহিল হয়ে পড়ল সলটার। ঘেমে উঠল। অতি কষ্টে নিজেকে স্যাডলে টেনে তুলল সে। ওর অবস্থা দেখে ওকে সাইড দিল শেরিফ। ঢাল বেয়ে সমতল জমিতে নেমে এল ওরা। ঘোড়া দাবড়াল দ্রুত গতিতে। লক্ষ্য তাদের স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক। ওখানে অপেক্ষা করছে বক্স ডব্লিউ এর কাউবয়রা। জোর মুখে মাটিনের মৃত্যু সংবাদ শুনে নিশ্চয় রক্ত গরম হয়ে গেছে ওদের। র্যাঞ্চ ও-এর দিকে রওনা দেয়ার আগে সব কিছু ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে সবাইকে। ব্রিফ করতে হবে। ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেছে। চাঁদ উঁকি দিচ্ছে আকাশে। আরও এক ঘণ্টা একটানা চলার পর থামল ওরা। ঘোড়া দুটোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল জীব দুটো। ওদের নিশ্বাস ভারি করে তুলল রাতের বাতাস। স্যাডলে প্রায় শুয়ে পড়ল সলটার। কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রাখল শেরিফ।
পারবে তো, সলটার? প্রশ্ন করল সে। না পারলে কোন অসুবিধে নেই। বক্স ডব্লিউতে ফিরে যাও। আউটফিটদের নিয়ে আমি একাই যেতে পারব। তুমি অনেক করেছ। এবার ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। ভোরের আগে র্যাঞ্চ ও-তে যাব না আমরা। তার এখনও ছঘন্টা বাকি। এতক্ষণ কষ্ট করতে পারবে না তুমি। চলে যাও, এখন আমরাই সব সামলাতে পারব।
ঠিকই বলেছ, মাথা তুলে বলল সলটার। ফিরেই যাব।
তবে চলি আমি, স্যাডলে চাপল গিয়ে শেরিফ। ঘোড়া ছোটাল। শেরিফকে যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ চেয়ে রইল সলটার।
তারপর সিধে হয়ে বসল সে। ঘোড়াটাকে মন্থর গতিতে এগিয়ে নিল। এভাবে চললে বক্স ডব্লিউতে পৌঁছতে ঘণ্টা দুয়েক মত লাগবে তার। লাগুক, কোন তাড়া নেই। পরিস্থিতিটা ভাবতে চেষ্টা করল সে। মনের গভীর থেকে ফোরম্যানের কাজটা ছেড়ে দেয়ার তাড়না অনুভব করছে সে। এই রেঞ্জ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে সে। নতুন করে আবার সব শুরু করবে। এখানে অনেকগুলো ভূত জ্বালাতন করছে তাকে। বাপের ভূত তো রয়েছেই, তার ওপর আবার প্রেমের ভূত। অসহ্য কষ্ট!
হঠাৎ গুলির শব্দে বাস্তবে ফিরে এল সে। ওর ডান পাশ দিয়ে গিয়েছে গুলিটা। তবে বহুদূর দিয়ে। এর অর্থ কী? ঘোড়া থামিয়ে কান পাতল সলটার। অল্প খানিকক্ষণ বাদে আবার গুলি হল, তারপর আবার। চিবুক ঘষল সে। র্যাঞ্চ ও-তে ফিরে থাকলে ওপথেই গিয়েছে ম্যাকগ্র। কিন্তু গুলি করছে কাকে?
জোহান! হঠাৎ মনে পড়ল ওর। গুলির শব্দ লক্ষ্য করে ঘোড়া ছোটাল সে। জোহান জেনেছে ম্যাকগ্র তাকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছে। ওকে ব্যাঙ্কে ফিরে যেতে বলেছে সলটার। কিন্তু সত্যি ফিরে গেছে কি সে? নাকি ম্যাকগ্রর ওপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে? গোলাগুলি হচ্ছে এখনও। দীর্ঘ বারো ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড টেনশনে রয়েছে সলটার। তার সঙ্গে পরিশ্রম। ফলে শরীর আর চলতে চাইছে না। এ মুহূর্তে নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রাম বড় প্রয়োজন তার। কেবল মাত্র মনের জোরে এগিয়ে চলল সে।
শ্যুটিং স্পটের ধারে কাছে আসতেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল জায়গাটা। এতক্ষণ যাই ঘটুক না কেন শেষ হয়ে গেছে ঘটনা। এদিক ওদিক চাইল সে। গুলির কারণ বুঝতে চাইল। আচমকা গুলি হল আবার। লালচে শিখা দেখে লাফিয়ে নামল সে স্যাডল থেকে। মাটিতে শুয়ে সামান্য মাথা জাগিয়ে দেখতে লাগল যুদ্ধ। দুটো পিস্তল থেকে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যোদ্ধাদের দূরত্ব কয়েক গজ মাত্র। শুয়ে থেকেই লোক দুটোর পরিচয় বোঝার চেষ্টা করল সে। বোঝা গেল না। ঠিক করল চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করবে। তবে তার আর প্রয়োজন হল না। কর্কশভাবে চেঁচিয়ে উঠল একজনঃ কে ওখানে?
জমে গেল যেন সলটার। কণ্ঠস্বরটা অতি পরিচিত। র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান ম্যাকগ্র! পিস্তল ড্র করল বক্স ডব্লিউ-এর ফোরম্যান।
কিন্তু প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগল। আশা করল উত্তর দেবে ম্যাকগ্রর প্রতিপক্ষ। জবাব আসতে আপন মনেই মাথা নাড়ল সে। শালা বদমাশ, আমি জোহান। ভোরের আগেই তোরা সব শালা মরবি নয় ধরা খাবি।
ও তুই? বেঁচে আছিস এখনও? আবার গুলি করতে শুরু করল ম্যাকগ্র। পাল্টা গুলি ছুঁড়ল জোহান। পরবর্তী কমুহূর্ত কেবল গুলির শব্দই শোনা গেল। খানিক বাদে
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ডাক ছাড়ল সলটার, থাম তোমরা, আমি রয় সলটার। জোহান, শিগগির দূর হও এখান থেকে। আর ম্যাক পিস্তল ড্র কর। আমি তোমাকেই খুঁজছি।
পিনপতন নিস্তব্ধতা। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে ম্যাকগ্র। মৃদু হাসল সলটার। ম্যাকগ্রর মাথায় খেলা করছে পরিকল্পনা, স্পষ্ট বুঝতে পারল সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দিল র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান। তার সঙ্গে তাল মেলাল সলটার। গুলির শব্দে কেঁপে উঠল জায়গাটা। সলটারের শরীরের আশপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সীসা। তবে গা করল না সে। রোখ চেপে গেছে তার। পিতৃহত্যার। প্রতিশোধ নেয়ার বাসনা উন্মত্ত করে তুলেছে তাকে। ওদিকে ম্যাকগ্র এলোমেলো গুলি চালাচ্ছে। ওকে এক ঝলক দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল সলটার। সুযোগটা পেতেই দুটো সীসে ঢুকিয়ে দিল শত্রুর শরীরে। মুহূর্তে থেমে গেল প্রতিপক্ষের আক্রমণ। ম্যাকগ্রর তীক্ষ্ণ আর্তনাদে ভেঙে পড়ল রাতের নীরবতা।
মরেছে, চেঁচিয়ে উঠল জোহান। খোড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এল সে। ছুটে গেল ম্যাকগ্রর কাছে। মাটিতে পড়ে রয়েছে ও। চিৎকার করে ওকে সাবধান করল সলটার। কিন্তু গায়ে মাখল না জোহান।
পরমুহূর্তে কোল্টের শব্দ শুনল সলটার। দেখতে পেল ঝাঁকি খেল জোহানের শরীর। যেন ধাক্কা খেয়েছে শক্ত পাথরের সঙ্গে। পড়ে গেল সে। ম্যাককে উঠতে দেখা গেল এ সময়। চাঁদের আলোয় চকচক করছে হাতের অস্ত্রটা। সলটারের দিকে ফিরল ও। তাক করল কোল্ট।
তোমাকে আর বাঁচতে হচ্ছে না, সলটার, হিংস্র শোনাল ম্যাকগ্রর গলা। আজই শেষ দিন তোমার।
পিস্তল ঝলসে উঠল সলটারের হাতে। প্রথম গুলিতে পেট ফুটো হয়ে গেল ম্যাকগ্রর। মাটিতে বসে পড়ল সে। পরবর্তী গুলিতে ওর কপাল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোল। প্রাণ হারাল ম্যাকগ্র। দ্রুত জোহানের দিকে এগোল সলটার। মাটিতে পড়ে রয়েছে সে। সলটারের আশঙ্কা মারা গেছে জোহান। কিন্তু ওকে দেখে কথা বলে উঠল ছেলেটি।
সলটার, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, বন্ধু।
হোলস্টারে পিস্তল ঢুকিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল সলটার।
কোথায় লেগেছে?
হার্টে। আমি গেছি, কাশতে লাগল জোহান। কাশির দমকে নিশ্বাস আটকে আসছে তার। ওর মাথাটা সামান্য তুলে ধরল সলটার। বড় দেরি হয়ে গেল, ধীরে বলল জোহান। একটা অনুরোধ রাখবে, সলটার? বাবাকে রাসলিং-এর কথা কিছু জানিয়ো না, প্লীজ। বাবা কষ্ট পাবে।
কথা বল না, জোহান। চুপ করে শোও আমি দেখছি।
লাভ নেই, বিড়বিড় করে বলল জোহান। আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাই, সলটার। করবে?
নিশ্চয়ই। তোমার বাবাকে জানাব ম্যাকগ্রকে খুঁজে বার করতে আমাকে সাহায্য করেছ তুমি।
ধন্যবাদ, অতিকষ্টে বলল জোহান। সলটার, তানিয়া তোমাকে ভালবাসে, ওকে আর কষ্ট দিয়ো না।
বল কি তুমি! তবে অসকার?
অসকারের সঙ্গে মিশে তোমার মধ্যে ঈর্ষা জাগাতে চায় ও, কথা কটা বলতে যেন প্রাণ বায়ু বেরিয়ে গেল জোহানের।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল সলটার। বিস্ময় কাটলে দেখল জোহানের মুখে কথা নেই। মারা গেছে সে। ওর শরীরটা ধরে বারকয়েক ঝাঁকি দিল সলটার। ফাঁকা লাগছে বুকের ভেতরটা। জোহান নেই! আর ভাবতে পারল না ও। ডুকরে কেঁদে উঠল। খানিক পরে নিজেকে অনেকটা সামলে নিল সলটার। চোখ মুছে জোহানের ঘোড়াটা খুঁজতে লেগে গেল। খানিক খুঁজতেই পাওয়া গেল ওটাকে। কোনমতে জোহানের মৃতদেহটা স্যাডলে চাপাল সলটার। হাঁপাতে লাগল সে। এবার নিজের ঘোড়ায় চাপল ও। ম্যাকগ্রর নিপ্রাণ দেহ পিছনে ফেলে বক্স ডব্লিউ-এর দিকে এগোল। জর্জের ওপর রাগ হচ্ছে ওর। জোহানের মৃত্যুর জন্যে সে-ই দায়ী। ছেলেকে কেন বশে রাখতে পারল না? তানিয়ার কথা ভাবল ও। একমাত্র। ভাইটাকে হারাল মেয়েটি। একথা ওকে কি করে জানাবে সলটার?
নিশুতি রাতে একা চলেছে সে। পাশের ঘোড়ায় মৃত জোহান। সলটারের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ধকল গেছে। তার মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে জ্ঞান হারাতে পারে সে। অর্ধ সচেতন অবস্থায় পেরিয়ে এল কয়েক মাইল। শেষ পর্যন্ত উঁচু একটা টিলায় উঠে এল সে। এখান থেকে স্পষ্ট চোখে পড়ে বক্স ডব্লিউ। জানালা দিয়ে হলদে আলো এসে উঠনে পড়ছে। নিপ বসে থেকে সেদিকে চেয়ে রইল সে। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে; নিশ্চিত ও মার্টিনের মৃত্যু সংবাদ র্যাঞ্চে নিয়ে আসার পর কি ঘটেছে কে জানে। সবাই নিশ্চয় ছুটে গেছে স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক এ। অপেক্ষা করেছে সলটারের জন্যে। কিন্তু দেরি দেখে রওনা দিয়েছে নিজেরাই। র্যাঞ্চ ও-র দিকে।
ঢাল বেয়ে ঘোড়া দুটো নিয়ে নেমে এল সলটার। শথ গতিতে এগোল র্যাঞ্চের দিকে। উঠনে ঢুকে স্যাডল থেকে নেমে পড়ল ও। হেলান দিল করাল ফেন্সে। ঝাঁপসা চোখে চাইল। মনে হল বারান্দায় বসে আছে দু’জন মানুষ। বারান্দার দিকে এগোল সে। জোহানের মরদেহবাহী ঘোড়াটা নিয়ে। প্রথম ধাপের কাছে এসে থামল। বারান্দার বেঞ্চিতে বসে রয়েছে তানিয়া আর উইলবার অসকার। এখানে বসে করছেটা কি লোকটা? ওর র্যাঞ্চে তো এখন গোলমাল চলার কথা। ওকে দেখে চিৎকার করে উঠল তানিয়া।
সলটার, কোথায় ছিলে? ব্যাকুল প্রশ্ন করল মেয়েটি। এক ঝলক চাইল অসকারের দিকে। সলটারের দিকে একদৃষ্টি চেয়ে বসে রয়েছে সে। নিশ্চুপ।
আর সবাই কোথায়? প্রশ্ন করল সলটার। জোহানের কথা কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।
ওরা ঘণ্টা কয়েক হল বেরিয়ে গেছে। অসকারের দিকে চাইল তানিয়া, এবার সত্যি কথাটা বলা যায় তোমাকে। বাবা কাউবয়দের নিয়ে শহরে যাননি। গেছেন স্যাড়ল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ। শেরিফ আর সলটারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্যে। সেখান থেকে তোমার র্যাঞ্চে যাবে সবাই। ম্যাকগ্র আর র্যাঞ্চ ও-র লোকেরা রাসলিং-এর সঙ্গে জড়িত এটা এখন আর কারও অজানা নয়।
অসকারের চেহারা দেখে হাসবে না কাদবে বুঝে উঠতে পারল না সলটার। প্রচণ্ড চমকে গেছে অসকার।
তোমার জন্যে আরও দুঃসংবাদ আছে, অসকার, শান্ত কণ্ঠে বলল সলটার। তোমার লোকের হাতে মারা গেছে আমার ভাই। আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
কি বললে তুমি? চেঁচিয়ে উঠল তানিয়া। কে মারা গেছে বললে?
জোহান, মৃদু স্বরে বলল সলটার। ঘোড়ায় রয়েছে ওর লাশ। ম্যাকগ্রর হাতে মারা গেছে।
জোহান মারা গেছে! চিৎকার করে বারান্দা থেকে নেমে এল তানিয়া। দৌড়ে গেল জোহানের ঘোড়র কাছে। জাপটে ধরল ভাইয়ের মৃতদেহ। হাউমাউ করে কাঁদছে সে। ওর দিকে একবার চাইল লটার। কথা সরল না তার মুখে। চোখ ফেরাল অসকারের দিকে।
ওদিকে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল অসকার। তার চোখ জোড়া সলটারের চোখে।
জানতাম তানিয়াকে কিছুতেই বিয়েতে রাজি করাতে পারব না, এই প্রথম মুখ খুলল সে। ও তোমাকে ভালবাসে। হাজার চেষ্টা করেও ওর মন পাইনি আমি। আজ রাতে শেষ সুযোগ দিয়েছিলাম মনস্থির করার জন্যে। কথা শুনল না। যাই হোক, ওকে পাচ্ছ না তুমি। শেষের দিকে গলার স্বর কঠিন হল তার। কভারডেল, কোথায় তুমি?
ঠিক ওর পেছনে, বস, জবাব এল দ্রুত। কভার করে রেখেছি।
জমে গেল সলটার। পরিচিত কণ্ঠ। এ গলা জীবনে কোনদিন ভুলতে পারবে সে। খুনী। এর হাতেই প্রাণ দিয়েছে শেরিফ রজার হার্পার। আর গুলি খেয়ে আহত হয়েছে ও নিজে।
গুড, বলল অসকার। কভারডেল এর আগেরবার ভুল করেছিল। তোমাকে খতম না করেই চলে গিয়েছিল। এবার ভুলটা শুধরে নেবে সে।
কিন্তু তুমি এসবে জড়ালে কেন? অসকারকে প্রশ্ন করল সলটার।
আমি চাই ক্ষমতা। সেজন্যে রাসলিং-এ নেমেছি। জর্জ ওয়াগনারকে ফতুর করার এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না, বলল অসকার। অবশ্য তানিয়া আমার কথায় রাজি হলে ক্ষতিটা গায়ে লাগত না ওর বাপের। হাজার হোক জামাই বলে কথা। কিন্তু তোমার জন্যে সে আর হল না। কাজেই মরার জন্যে প্রস্তুত হও। তুমি।
তানিয়ার কি হবে?
মরবে, প্রেমিকের জন্যে। ওর বাপটাও ছাড়া পাবে না। রাসলিং করে কম পয়সা তো আর কামাইনি। দুনিয়াতে মেয়েমানুষেরও অভাব নেই। কি বল?
সলটারের ইচ্ছে হল অসকারের টুটি চেপে ধরে। কিন্তু একেবারেই অবাস্তব কল্পনা সেটা। ওর পিঠে খোঁচা দিচ্ছে পিস্তলের নল।
ওকে নিয়ে যাও, কভারডেল, অসকার বলল। তুমি ফিরে আসা পর্যন্ত তানিয়াকে দেখে রাখব আমি। চোখের সামনে তার প্রেমিককে মারা ঠিক হবে না। এমনিতেই ভাইটা গেছে।
ওর পিঠে ধাক্কা দিল গানম্যান। আগে বাড়াল। এভাবে মরতে কিছুতেই রাজি নয় সলটার। শেষ চেষ্টা করতে হবে। গভীর শ্বাস নিল সে দৃঢ় করল মাংসপেশী। মরিয়া হয়ে ঘুরে দাঁড়াবে ও। হয় গুলি খেয়ে মরবে নয় খুনীকে পেড়ে ফেলবে। ঠিকমত মুখে একটা ঘুসি বসাতে পারলেই হল। উল্টে যাবে দাবার ছক। হঠাৎ তানিয়ার চিৎকারে থেমে দাঁড়াল ওরা। তানিয়ার দিকে চাইল সলটার।
ভাইয়ের মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেয়েটি। স্যাডলের পেছন দিকে। ব্ল্যাঙ্কেট রোল থেকে একটা হাত উঠতে দেখল সলটার। ঝকঝক করে উঠল সিক্সগানের নল। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেল সলটারের। ওর পেছনের লোকটা আর্তচিৎকার করে উঠল। ঝাঁকি খেয়ে সরে গেল খানিকদূর। আরও দুটো গুলি হল। এবার ভূমিশয্যা নিল সে, চিরদিনের মত। রাতের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ। জোহান গুলি করেছে। তারমানে মরেনি ও। এজন্যেই হঠাৎ চিৎকার করে উঠেছিল তানিয়া। সলটারের নিজেরও চিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে। খুশিতে।
খিস্তি করল অসকার। তার হাত চলে গেছে হোলস্টারে। চোখের কোণে ব্যাপারটা লক্ষ করল সলটার। অসকারের হাত ওঠার আগেই হোলস্টারমুক্ত হল সলটারের কোল্ট। অসকারের বুক লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপল সে। র্যাঞ্চ মালিকের সাদা শাটার বুক পকেট লাল হয়ে উঠল। গুলি খেয়ে পিছিয়ে গেল অসকার। পিস্তলটা শেষবারের মত ব্যবহার করল সে। ব্যর্থ চেষ্টা। তারপর হাত পা ছড়িয়ে দড়াম করে পড়ে গেল বারান্দার কাঠের মেঝেতে। হাত থেকে ছিটকে পড়ল অস্ত্র। ছুটে এল তানিয়া। নিজেকে ছুঁড়ে দিল সলটারের বুকে। প্রেয়সীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে কাঁধে ব্যথা পেল সলটার। তবে পরোয়া করল না। তানিয়ার মাথার ওপর দিয়ে অসকারের প্রাণহীন দেহটার দিকে চাইল সে। লোকটা অসম্ভব ভুগিয়েছে। ওর বুকে তখন ফুঁপিয়ে চলেছে তানিয়া। প্রেমিকার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল সলটার।
আমি কিন্তু সব দেখে ফেলেছি, জোহানের কথায় সংবিৎ ফিরে পেল ওরা। ছিটকে সরে গেল দুদিকে। তারপর দুজনেই দৌড়ে এল জোহানের কাছে। এখনও স্যাডলে শুয়ে রয়েছে সে। ওই অবস্থাতেই ওকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগল সলটার, গালে-কপালে।
তুই না বললি হার্টে গুলি লেগেছে? প্রশ্ন করল সলটার। বিস্ময়ের ঘোর পুরোপুরি কাটেনি তার। স্যাডল থেকে জোহানকে নামাল সে আর তানিয়া।
ঠিকই তো বলেছি, বলল জোহান। হার্ট কোথায় থাকে যেন? বাঁ দিকে না? আমার তো ওদিকেই লেগেছে।
দেখি কোথায় তোর হার্ট, শার্ট খুলে দেখল সলটার।
ওরে গর্দভ, হার্ট এখানে থাকে? কাঁধে লেগে বেরিয়ে গেছে গুলি। তেমন কিছুই হয়নি। আর গাধাটা আমাকে পর্যন্ত বোকা বানিয়ে ছেড়েছে।
তানিয়া আর সলটার দুজনেই হাসতে লাগল। বড় লজ্জা পেয়েছে জোহান। বেশি হেস না, বলল সে। ভুল সবারই হয়।
জোহানের কথায় হাসির দমক বাড়ল ওদের। জোহানকে নিয়ে ঘরে ঢুকল ওরা। ওকে শুইয়ে দিল বিছানায়।
ডাক্তার নিয়ে আসব? প্রশ্ন করল সলটার।
দরকার নেই। কাল সকালে আনলেও চলবে। তাছাড়া গুলি খাওয়া রোগীর চিকিৎসায় আমার অভিজ্ঞতাও কিন্তু কম নয়, চোখ গোল গোল করে বলল তানিয়া।
ওর বলার ধরনে এবার লজ্জা পাওয়ার পালা সলটারের। আমি চলি, দ্রুত বলল সে। স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ যাব।
যাও, বলল তানিয়া। সাবধান থাকবে কিন্তু।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল সলটার। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রজার হার্পারের খুনীর মৃতদেহ দেখে নিল এক ঝলক। আপন মনেই হাসল সে। তারপর ঘোড়ায় চাপল। লক্ষ্য স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক। ওর হৃদয়টা এ মুহূর্তে দু’টুকরো হয়ে গেছে। একটা টুকরো রয়েছে ওর সঙ্গে, আর অন্যটা তানিয়ার কাছে।
Leave a Reply