প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২ – আরিফ আজাদ
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২ – আরিফ আজাদ
.
প্রকাশকের কথা
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই বিদ্যমান। সভ্যতার প্রতিটি যুগে, প্রতিটি সময়ে এবং প্রতিটি প্রেক্ষাপটে আমরা এই দ্বন্দ্বের লড়াই দেখতে পাই। দেখতে পাই তার চলমান ধারা। সত্য ও অসত্যের এই লড়াইয়ে সত্য সবসময় বিজয়ী হবে, এটাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইচ্ছে। তাই, যখনই সভ্যতার মাঝে কোনো অসত্য, কোনো অবিশ্বাস বেঁকে বসেছে, তখনই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেখানে সত্যের পক্ষে কথা বলার জন্য, সত্যের নিশান উড্ডীন করার জন্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারা এসে মানুষকে সত্যের পথে ডেকেছেন। তাদের অনুপম স্পর্শে মুছে যেত অবিশ্বাস আর অসত্যের কালি। সত্যের আলোয় মুখরিত হয়ে উঠত অন্ধকার ধরণী। বিশ্বাসের সুশীতল বাতাস তারা বুলিয়ে দিতেন সকলের হৃদয়জুড়ে।
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। তথ্যপ্রবাহের অবাধ এবং স্বাধীন ব্যবহারের সুযোগে মানুষের জীবন যেমন সহজ হয়ে উঠেছে, তেমনি এই সহজলভ্যতা অস্থির করে তুলছে মানুষের অন্তরকে। তথ্যপ্রবাহের অবাধ ব্যবহারের এই সুযোগ পুঁজি করে ধর্মবিদ্বেষী একটি মহল খুবই চতুরতার সাথে সরলপ্রাণ মুসলিমদের মনে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অবিশ্বাসের বিষ; হৃদয়-মনে বপন করে চলছে সন্দেহের বীজ। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে ধর্মের বিরুদ্ধে তাদের কৌশলী মিথ্যাচার। তাদের মিথ্যার বুলি ও প্রোপাগান্ডা এবং ইসলাম-বিদ্বেষী লেখাজোখা এমনভাবে আর এমন ঢঙে তারা উপস্থাপন করছে যে, সাধারণের কাছে তাদের কথাগুলোকে সত্য বলে মনে হতে পারে। তাদের এই মিথ্যার জালে পা দিয়ে ঈমানহারা হচ্ছে মুসলিম তরুণ-সমাজ।
ইসলামকে তারা পশ্চাদপদ, গোড়া, সেকেলে ও অসার এবং যুগের সাথে অসামঞ্জস্য প্রমাণ করতে চায়। এতে করে মুসলিম তারুণ্যকে তারা বোঝাতে চায়, আধুনিক জীবন মানেই হলো ঈশ্বর, ধর্ম ও ধর্মীয় জীবনাচরণমুক্ত জীবন ধারণ।
দুঃখের বিষয় হলো তাদের এরকম মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডামূলক লেখালেখিতে প্রভাবিত হয়ে অনেক তরুণ-তরুণীরা বিপথে হাঁটছে। ধর্মকে তারা নিতান্তই মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং খুবই আনকালচারড জ্ঞান করছে। তারা বেছে নিচ্ছে আধুনিকতার নামে ভ্রান্তিপূর্ণ বেহায়াপনার রাস্তা। নিজেরাও হয়ে উঠছে একেকজন। চরম ও হিংসাত্মক ধর্মবিদ্বেষী। এভাবে, ইসলাম বিদ্বেষীদের ছড়ানো বিষবাষ্প গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের প্রজন্মকে। প্রজন্ম হয়ে পড়ছে অস্থির, দিশেহারা ও দিকভ্রান্ত।
প্রজন্মকে অস্থির ও ভ্রষ্ট গহ্বর থেকে বাঁচিয়ে তুলতে হলে দরকার তাদের নিয়ে কাজ করা। যে-মিথ্যা এবং প্রতারণার ফাঁদে তারা পা দিয়েছে, সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করতে হলে প্রয়োজন সেই মিথ্যা এবং প্রতারণার জাল উপযুক্ত ও ধারাল যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ছিন্ন করে দেওয়া। অবশ্যই সেটা করতে হবে তরুণদের মনস্তত্ত্ব বুঝে। তরুণরা কী চায় আর কীভাবে চায় সেটি প্রাধান্য দিয়ে এগোতে পারলেই তাদেরকে তুলে আনা যাবে বিভ্রান্তির ধ্বংসাত্মক মায়াজাল থেকে।
ইসলাম-বিদ্বেষী মায়াজাল ভেদ করে প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে যে কজন কাজ করে যাচ্ছেন, আরিফ আজাদ নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে একজন তরুণ তুর্কি। নিজে একজন তরুণ হয়ে তরুণদের মনস্তত্ত্ব বুঝতে তিনি একদম ভুল করেননি। নাস্তিক তথা ইসলাম বিদ্বেষীদের উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে গিয়ে গৎবাঁধা প্রবন্ধ রচনা না করে, তিনি সেগুলোকে হৃদয়কাড়া গল্পে রূপ দিয়েছেন। পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সেই গল্পগুলোতে রেখেছেন টানটান উত্তেজনা। সাজিদ চরিত্রটি গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে তিনি সাজিয়েছেন সবগুলো গল্পের রহস্যময়ী-চিত্রপট। শুধু তাই নয়, গল্পগুলোর যে পরিবেশ আর কাহিনিপট, তা দেখলে যে-কারও মনে হবে, ওই গল্পের তিনিও একজন অংশীদার। পরিচিত পরিবেশের মধ্য দিয়ে চেনাজানা মানুষগুলোর সাথে অনুসন্ধিৎসু আবহে এগিয়ে যায় গল্পের কাহিনি। এভাবেই সাজিদ রচনা করে যায় বিশ্বাসের পক্ষে যৌক্তিক কথামালা। সাজিয়ে যায় বিশ্বাসী হৃদয়ে ভালোবাসার পসরা। যুক্তি আর তথ্যের সাহায্যে কখনো-বা চুরমার করে দেয় অবিশ্বাসের অশুভ-দূর্গ। এভাবেই এগিয়ে যায় সাজিদ…।
বাংলা ইসলামী-সাহিত্যাঙ্গনে আরিফ আজাদ এখন নিত্য-আলোচিত, বহুলপ্রশংসিত ও পরিচিত মুখ। প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে চমক সৃষ্টি করেছেন বইমেলা ২০১৭-তে। এরপর রচনা করেছেন পাঠকনন্দিত বই আরজ আলী সমীপে। সম্পাদনা করেছেন প্রত্যাবর্তন, তিনিই আমার রব এবং মা, মা, মা এবং বাবার মতো সাড়া জাগানো বইয়েরও। তার অনবদ্য রচনা সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই-ই হলো।
সাবলীল, প্রাঞ্জল ও যৌক্তিক লেখার মাধ্যমে বিশ্বাসী মানুষের মনে শক্ত-জায়গা করে নেওয়া লেখক আরিফ আজাদের জন্য সমকালীন পরিবারের পক্ষ থেকে শুভকামনা। সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই প্রকাশ করতে পেরে সমকালীন পরিবার গর্বিত এবং আনন্দিত। আমরা লেখকের দীর্ঘায়ু কামনা করছি। উম্মাহর জন্য আরও বিপুল পরিমাণে কাজ করার সুযোগ যেন মহান রাব্বল আলামীন আমাদের এই ভাইকে দান করেন। আমীন।
বইতে যদি কোনোরকম অসঙ্গতি ব্লা ভুল চোখে পড়ে, তা সহৃদয় পাঠককে আমাদের জানানোর অনুরোধ রইল। আমরা অবশ্যই সেটা শুধরে নেব, ইন শা আল্লাহ।
সত্যবিশ্বাসের সাথে সকলের পথচলা সুন্দর হোক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সবাইকে সিরাতুল মুসতাকীমের পথে অটল ও অবিচল রাখুন। আমীন।
প্রকাশক
সমকালীন প্রকাশন
.
লেখকের কথা
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার, যিনি আমাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান করেছেন। দরুদ ও সালাম প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যাকে বিশ্বজাহানের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরণ করা হয়েছে। শান্তি বর্ষিত হোক তার পরিবার-পরিজন এবং তার সাহাবীদের ওপর যারা ইসলামের জন্য ত্যাগ করেছেন নিজেদের সর্বস্ব। রাযিয়াল্লাহু আনহুম।
এখন চলছে এক উত্তাল সময়। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে মানুষের চিন্তা, চেতনা আর আদর্শ পৌঁছে যাচ্ছে সর্বত্র। একজন যা ভাবছে তা মুহূর্তেই জেনে যাচ্ছে অন্যরা। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অবাধ সুযোগ এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা যেন ব্যাপারটিকে আরও মোহনিয়া করে তুলেছে।
প্রযুক্তির এই ধারা-ই কাজে লাগিয়েছে ধর্মবিদ্বেষী একদল মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ার অবাধ ব্যবহারের এই সুযোগে ইসলাম, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে ইন্টারনেটে তারা এমন সব কথা ছড়াতে লাগল যা মুখ বুজে সহ্য করা যেকোনো ইমানদার ব্যক্তির জন্য ছিল অত্যন্ত কঠিন। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল অসচেতন মুসলিম তরুণ, যাদের ধর্ম নিয়ে খুব বেশি জানাশোনা ও পড়াশোনা নেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের এসকল তরুণদের টার্গেট করে তারা বিভিন্ন ব্লগে ও ফেইসবুকে ছড়াতে থাকে প্রোপাগান্ডা যার সবটাই-জুড়ে থাকে কেবল ইসলাম-বিদ্বেষ। ইসলামের নবী ও তার স্ত্রীগণ এবং অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। যুবক-যুবতীদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করিয়ে তাদের ধর্ম থেকে বিমুখ এবং দূরে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তারা আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে। দুঃখের সাথে বলতে হয়, তাদের এই প্রচেষ্টায় তারা অনেকটাই সফল হতে পেরেছে। তাদের ছড়ানো নীল-জগতের বিষে বিষাক্ত হতে থাকে বেশকিছু বিশ্বাসী তরণের অন্তর। ধর্ম নিয়ে তাদের মনে ঢুকে পড়ে সীমাহীন সন্দেহ আর অবিশ্বাস। স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াতের সত্যতাসহ নানান ব্যাপারে তারা দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতে থাকে।
চারদিকের এরকম অন্ধকার, অস্থিরতা আর অবিশ্বাসের বিষবাষ্প দেখতে দেখতে বিষিয়ে উঠছিল মন। চোখের সামনে পাল্টে যেতে থাকা মানুষগুলো দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলাম। কেমন যেন অদ্ভুত এক অন্ধকার এসে গ্রাস করে নিচ্ছিল সুন্দর এই উপত্যকা।
এরকম অস্থির সময়ে একদিন ঠিক করেই ফেললাম, কলমের জবাব কলমেই হোক। লেখার বদলে লেখা আসুক। যুক্তির বিপরীতে যুক্তি। যে-কলম দিয়ে তারা বিশ্বাসী হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে চলছে, সেই কলমের প্রতিবাদে প্রয়োজন আরও শক্তিশালী কলম। যে-কলম বিশ্বাসের কথা বলবে। যে-কলম রচনা করবে বিশ্বাসী প্রাণের সুর।
আমার মনে আছে, এরকম দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে, জোসনা প্লাবিত এক রাতে লিখে ফেলেছিলাম সাজিদ সিরিজের একদম প্রথম গল্পটা। ওই গল্পে একটি নতুন ধারার সূচনা করেছিলাম আমি। তখনো জানতাম না যে, এই ধারা একদিন বিপ্লব হয়ে উঠবে। আলহামদু লিল্লাহ।
ইসলাম-বিদ্বেষীদের প্রশ্নগুলোকে একত্র করে, তাদের যুক্তিগুলোকে একাধারে সাজিয়ে নিয়ে আমি চেষ্টা করেছি তার বিপরীতে আমাদের যুক্তিগুলোকে উপস্থাপন করতে। এই কাজটা করতে গিয়ে আমি গৎবাঁধা কোনো প্রবন্ধ রচনা করিনি। আমি সবসময় চাইতাম যে, আমি যা-ই লিখব, তা যেন সকল শ্রেণির মানুষের কাছে বোধগম্য হয়। তারা যেন পড়ামাত্রই আমার কথা বুঝে নিতে পারে। আমি আমার লেখাতে, আমার যুক্তি, উপমা কিংবা উদাহরণে কোনোরকম দূর্বোধ্যতা রাখতে চাইনি। আমি তাদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছি ধর্ম নিয়ে যাদের খুব বেশি জানাশোনা নেই; কিন্তু ধর্মবিদ্বেষীদের ছড়ানো প্রোপাগান্ডায় নিজের বিশ্বাস নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমি তাদের সহজ এবং সরল ভাষায় বোঝাতে চেয়েছি যে, ধর্মের বিপরীতে ধেয়ে আসা যুক্তিগুলো কতোটা ভঙ্গুর। প্রশ্নগুলো কতটা অবান্তর। আমি তাদের কাছে ইসলামের মাহাত্ম্য তুলে ধরতে চেয়েছি। কুরআনের অনন্যতা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়তের সত্যতার ব্যাপারে অখণ্ডনীয় যে-সব প্রমাণ রয়েছে, সেগুলোকে এক জায়গায় করে ধীরে ধীরে তাদের অন্তরে প্রবাহিত করে দিতে চেয়েছি বিশ্বাসের ফল্গুধারা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই কাজে আমাকে সাহায্য করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ।
জোসনা প্লাবিত রাতের সেই একটি গল্প থেকে ধীরে ধীরে সাজিদ সিরিজ মলাটবদ্ধ হয়ে যায়। চারদিক থেকে প্রচুর মানুষের ভালোবাসা, সহযোগিতা এবং পরামর্শে ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় সাজিদ সিরিজের প্রথম বই প্রকাশিত হয় প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামে। সেই যে শুরু, সেই ধারা এখনো চলছে, আলহামদু লিল্লাহ।
সাজিদ চরিত্রটাকে নিয়ে পাঠকদের মনে ভালোবাসার কমতি নেই, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এমন এমন রিভিউ-ও পেয়েছি এই বইয়ের, যেগুলো আমাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে। একজন যুবক যখন আমি সাজিদ হতে চাই বলে তার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, আমার চোখ দুটো তখন অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। যখন আমাকে এসে বলা হয় যে, তার জীবনের পরিবর্তনে, দ্বীনে ফিরে আসার পেছনে এই বইটি নিয়ামক হিশেবে কাজ করেছে; তখন আমার হৃদয়-মন অস্ফুটে আলহামদু লিল্লাহ বলে ওঠে। আমি শুকরিয়া জানাই সেই মহান অধিপতির, যিনি এই কাজ সহজ করে দিয়েছেন আমার জন্যে। আলহামদু লিল্লাহ্।
প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-প্রকাশ হওয়ার পরে সবার একটাই প্রশ্ন ছিলো আমার কাছে, সাজিদ-০২ কবে আসবে?
যখন আমি এই সিরিজ লিখছিলাম, তখন ভাবতেও পারিনি যে এই লেখাগুলো কখনো মলাটবদ্ধ হতে পারে। আমি কল্পনাও করতে পারিনি যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই কাজটির জন্য আমাকে এতো সম্মানিত করবেন। আলহামদু লিল্লাহি আলা কুল্লি হাল। সাজিদ সিরিজের পরবর্তী বইয়ের জন্য এত এত পাঠকদের অনুরোধ দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত এবং আপ্লুত হয়েছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার সাহায্য আর ভালোবাসা যে কীরকম হতে পারে, তা আমি খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আলহামদু লিল্লাহ।
সাজিদ এক মলাটেই শেষ হয়ে যাক, সেটা আমি নিজেও কখনো চাইনি। কারণ, প্রতিপক্ষের যে পরিমাণ বিদ্বেষ, মিথ্যাচার আর প্রোপাগান্ডা, তা কখনোই এক মলাটে নিয়ে এসে শেষ করে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই সাজিদ সিরিজ এগিয়ে নিতে আমার ভেতরেও সবসময় একটি প্রণোদনা কাজ করত। এরই ধারাবাহিকতায় সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই নামে পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। আলহামদু লিল্লাহ। অসংখ্য শুকরিয়া মহান রবের দরবারে।
সাজিদ সিরিজের প্রথম খন্ডের ব্যাপক জনপ্রিয়তার ফলে দ্বিতীয় খণ্ড রচনার কাজটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জের। দ্বিতীয় মলাটে সাজিদকে কীভাবে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি সেটা ছিল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রথমত একটি চ্যালেঞ্জ, দ্বিতীয়ত আগের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে সাজিদকে নতুনভাবে প্রকাশ করতে বেশ দীর্ঘ একটা সময় নিয়েছি। তাই, মাঝখানের সময়টাতে সাজিদ আসেনি দেখে যারা আমার ওপরে অভিমান করে আছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের এই অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্যে হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা।
নিয়ে কিছু বলতে চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অশেষ রহমতে এই খণ্ডে আমি এমনকিছু টপিক নিয়ে কাজ করতে পেরেছি যেগুলো নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিনের। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তার অধম বান্দার জন্য সেই কাজটাকে সহজ করে দিয়েছেন আলহামদু লিল্লাহ।
এবারের বইটিকে নাস্তিকতা বিরোধী বললে মোটাদাগে ভুল করা হবে। কারণ, এবারের বইতে আমি যেমন নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব রেখেছি, রেখেছি খ্রিষ্টান মিশনারিদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবও। এর পাশাপাশি কুরআনের অলৌকিক কিছু ব্যাপার, ভাষাতাত্ত্বিক কিছু মিরাকল নিয়ে আলোচনাও স্থান পেয়েছে এবারের বইতে। আমার মনে হয়েছে, গৎবাঁধাভাবে নাস্তিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকলে পাঠকদের মনে এক ধরনের একঘেয়েমি সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য বিষয়বস্তুতে বৈচিত্র্য আনতেই আমি বইটি এভাবে সাজিয়েছি। তাছাড়া, আমি বিশ্বাস করি কুরআনের এ সব বিষয়াদি মানুষের জানা উচিত। তবেই মানুষের মধ্যে কুরআনের প্রতি গভীর ভালোবাসা জন্মাবে। তারা কেবল পড়ার জন্যে নয়, জানা এবং বোঝার জন্যে তখন কুরআন পড়বে, ইন শা আল্লাহ।
আগের মতোই এবারের বইটি লিখতে গিয়েও অনেক ভাইয়েরা আমাকে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত আর পরামর্শ দিয়ে। তাদের সকলের কাছেই আমি কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ। বইটি লিখতে গিয়ে আমি শরণাপন্ন হয়েছি বিভিন্ন স্কলার,
শাইখ এবং দাঈ ইলাল্লাহ ভাইদের ইংরেজিতে মজুদ থাকা রিসোর্সের। বিশেষ করে ভাই আবু জাকারিয়া, উস্তায হামযা জর্জিস এবং ইকরা টিমের। মুশফিকুর রহমান মিনার ভাই এবং জোবায়ের আল মাহমুদ ভাইয়ের কাছেও কৃতজ্ঞতা তাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য এবং পরামর্শের জন্য। আল্লাহ যেন তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করেন।
সবশেষে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার দরবারে আমি আবারও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি। সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই তিনি যেন কবুল করে নেন। এই বইতে যা কিছু ভালো আর কল্যাণের, তার সবটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পক্ষ থেকে। আর, এই বইতে যা কিছু ভুল ও অকল্যাণকর, তার সব-ই আমার পক্ষ থেকে।
পাঠকের কাছে সবিনয় অনুরোধ, বইটি নিয়ে যদি আপনার কোনো অভিযোগ বা অনুযোগ থাকে, তা আমার বরাবর কিংবা প্রকাশনী বরাবর জানাবেন। কল্যাণের উদ্দেশ্যে দেওয়া আপনাদের সবরকম পরামর্শকে সাদরে গ্রহণ করা হবে, ইন। শা আল্লাহ। বইটি যদি আপনি কল্যাণকর মনে করে থাকেন, তাহলে দয়া করে আপনার কাছে রেখে দেবেন না; আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার কোনো এক শুষ্ক হৃদয়ের বান্দার কাছে হস্তান্তর করে দেবেন। যদি এই বই তার শুকিয়ে যাওয়া হৃদয়ে কল্যাণের বারিধারা ফেরাতে পারে, অন্তরের অনুর্বর মাটিতে এই বই যদি এক পশলা বৃষ্টির কারণ হতে পারে, তাহলে সেই কাজের নেকি সমানভাবে আপনি এবং আমিও পেয়ে যাব, ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের কাজগুলো কবুল করুন। আমীন।
আরিফ আজাদ
.
লেখক–পরিচিতি
আরিফ আজাদ। জন্মেছেন চট্টগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করতেই বেশি পছন্দ করেন। ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা কুড়ান। বিশ্বাসের কথাগুলোকে শব্দে রূপ দিতে তার জুড়ি নেই। অবিশ্বাসের দেয়ালে অনুপম স্পর্শে বিশ্বাসের ছোঁয়া দিতে তার মুন্সিয়ানা রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় লেখকের পাঠকনন্দিত বই আরজ আলী সমীপে। এছাড়াও সম্পাদনা করেছেন প্রত্যাবর্তন এবং মা, মা, মা এবং বাবার মতো জনপ্রিয় বইগুলো। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হলো লেখকের তৃতীয় মৌলিক গ্রন্থ, জনপ্রিয় সাজিদ সিরিজের দ্বিতীয় বই।
Leave a Reply