পুনরাবলোকনে বাল্মীকির রাম – সুকুমারী ভট্টাচার্য
প্ৰাককথন
৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে রামভক্ত সঙ্ঘ পরিবারের রামকে আরও এক বার তলিয়ে দেখার বাসনা হল। আগাগোড়া খুঁটিয়ে পড়লাম রামায়ণ। সেখানে যে রামকে পেলাম তিনি বনগমন পর্যন্ত আদর্শ পুরুষ হলেও তার পরে তাঁর মধ্যে এমন কিছুই পাওয়া গেল না যাতে তাঁকে ‘মর্যাদা পুরুষোত্তম’ বলা যায়।
প্রথম জীবনে তাড়কা রাক্ষসীকে বধ করার সময় তিনি নারীকে আঘাত করার প্রশ্নে দ্বিধান্বিত, অথচ পরিণত রাম শূদ্র হয়ে তপস্যার অপরাধে শম্বুককে মৃত্যুদণ্ড দেন, নির্দ্বিধায়। রামচরিত্রের এই দ্বি-বিধ পরিচয়ও বর্তমান আলোচনায় প্রণিধানযোগ্য।
শুধু তাই নয়, মূল রামায়ণের কাহিনির সঙ্গে প্রক্ষিপ্ত কাহিনিগুলিকেও গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন না করলে এই বিচার অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। মূল রামায়ণের রাম কোনও দেবতা নন, মানুষ। অথচ প্রক্ষিপ্ত অংশে বলা হল তিনি বিষ্ণুর অবতার।
‘বাল্মীকির রাম— ফিরে দেখা’ এই উপলব্ধি থেকেই সঞ্জাত। আমার মনে হয়েছে এক নির্মোহ দৃষ্টিতে রামকে দেখার প্রয়োজন আজকে সবচেয়ে বেশি। এই লেখা পড়ে হয়তো সকলে খুশি হবেন না। কিন্তু এটি পাঠ করে যদি পাঠকমনে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয় বা রামায়ণের মোহহীন বিচারে যাঁরা আগ্রহী তাঁদের অধ্যয়নে এ বিচারের কিছু সূত্রপাত ঘটানো যায় তবেই এই প্রচেষ্টা সার্থক মনে করব।
Leave a Reply