পিশাচ সমগ্র – অনীশ দেব
প্রথম প্রকাশ ডিসেম্বর ২০২৩
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় কর্তৃক পত্রভারতী থেকে
অলংকরণ – কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল
.
সেইসব দিন
মনে পড়ে যাচ্ছে…
সে এক শনিবার। কিশোর ভারতী এবং পত্রভারতী নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলেছে অনীশদা এবং আমার মধ্যে।
অনীশদা বলছেন, ‘নেম ভ্যালুর গুরুত্ব আপনাকে দিতেই হবে। নামি লেখকদের লেখা প্রতি সংখ্যায় নাহোক, বছরে অন্তত পাঁচ-ছ’টা সংখ্যা কিশোর ভারতীতে রাখতেই হবে। তাতে হয়ত শুরুতে আমাদের খরচ বাড়বে, কিন্তু তার ফল আমরা পাবই পাব। তাছাড়া পত্রিকার কভারের কাগজ, ছাপা, ভিতরের ছাপা—প্রোডাকশন একেবারে নিখুঁত করতে হবে।’
আমি রাজি নই, ‘আপনি তো খালি খরচ বাড়াতে বলছেন। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে যে ডুবে যাবে প্রতিষ্ঠান।’
‘একটুও ডুববে না। আমায় একটা কাগজ দিন, আমি হিসেব কষে দেখিয়ে দেব, পার কপিতে বড়জোর ২০ পয়সা কস্টিং বাড়বে। কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে সারকুলেশন বাড়বে। তখন ওই বাড়তি খরচ আর গায়ে লাগবে না।’
‘টিক টিক টিক…।’
ঠিক মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঘুরছিল। তার খানিক দূরে একটা টিকটিকি এতক্ষণ স্থির হয়ে ছিল। সেই উপর থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ডেকে উঠেছে। সেও যেন অনীশদাকে সাপোর্ট করে উঠল।
অনীশদা আর আমি একটু চমকে উঠে উপরে তাকিয়েছি। দেখি, অনীশদা একদৃষ্টে চেয়ে আছেন উল্টো হয়ে থাকা টিকটিকিটার দিকে।
একটু পরে আস্তে আস্তে বললেন, ‘কী অদ্ভুত জীব, তাই না? দিব্যি উল্টো হয়ে সিলিং দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মানুষ যদি পারত!’ একটু থেমে হেসে বললেন, ‘মাথার মধ্যে দারুণ একটা ছবি ফুটে উঠছে।’
‘অনীশদা! নিশ্চয়ই গল্প?’
‘হ্যাঁ, আপনার কাগজেই লিখব। একজন টিচার…’ বলতে বলতে থেমে গিয়ে বললেন, ‘দেখা যাক, দাঁড়ায় কিনা।’
সেবারের পুজো সংখ্যা কিশোর ভারতীতেই এল ‘আমি পিশাচ।’ ইউনিক ভাবনা, যা একমাত্র অনীশদার পক্ষেই সম্ভব। রক্তচোষা ড্রাকুলা নয়, আবার মানুষের হিংস্র নেকড়েতে পাল্টে যাওয়া ওয়ারউলফও নয়, পিশাচ…! এক এবং অদ্বিতীয়।
পিশাচ নিয়ে অনীশ দেব লিখেছেন ছয়টি ছোট-বড় কাহিনি—আমি পিশাচ, তুমি পিশাচ, পিশাচ প্রহর ১, ২, ৩ এবং পিশাচের রাত। সবক’টি অসাধারণ এবং সাহসী প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের জন্য। অনীশদার বড় ইচ্ছে ছিল, আর একটা লিখে সাতটি কাহিনি নিয়ে বের করবেন ‘পিশাচ সমগ্র।’
শেষ লেখাটা আর লেখা হয়নি।…
তবুও ‘পিশাচ সমগ্র’ প্রকাশ করতে পেরে আমরা সত্যিই খুশি। লিখতে লিখতে মনে হল, অনীশদা সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। সেই পুরোনো কথাটাই আবার বলছেন, ‘ত্রিদিববাবু, আপনার সঙ্গে কেন যে আরও দশ বছর আগে পরিচয় হল না!’
প্রণাম, অনীশদা।
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়
২১ নভেম্বর ২০২৩
কলকাতা
Leave a Reply