পাঁচটি উপন্যাস (চলচ্চিত্রায়িত উপন্যাস-সংগ্রহ) – শক্তিপদ রাজগুরু
দে’জ পাবলিশিং
প্রথম প্রকাশ : অক্টোবর ২০১০, আশ্বিন ১৪১৭
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : রঞ্জন দত্ত
প্রকাশক : সুধাংশুশেখর দে, দে’জ পাবলিশিং
.
অপুকে
.
প্রকাশকের নিবেদন
এই গ্রন্থে শক্তিপদ রাজগুরুর পাঁচটি সফল গ্রাম্য এবং জনপ্রিয় কাহিনিকে তুলে ধরা হয়েছে। শক্তিপদ রাজগুরু মূলত সাহিত্যিক। যদিও সাহিত্যের পাশাপাশি বহু উল্লেখযোগ্য ছবির চিত্রনাট্যও তাঁর লেখা। কিন্তু সার্থক সফল কাহিনিই ছবির সাফল্যের চাবিকাঠি। তাই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁর বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্প কাহিনিকেই মর্যাদা দিয়ে ছায়াছবিতে রূপায়িত করেছেন। এবং শক্তিপদ রাজগুরু সাহিত্যের পাশাপাশি সফল চিত্রনাট্যকার হিসাবে শুধু বাংলাতেই নয়, সর্বভারতীয় ছবিতেও সাফল্যলাভ করেছেন। উদ্বাস্তু জীবন নিয়ে তিনি একটি উপন্যাস লেখেন উল্টোরথ পত্রিকায়। নাম চেনামুখ। বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋত্বিক ঘটক এই কাহিনিটিকে চিত্ররূপ দিয়ে বাংলা ছবি করতে চান। উল্লেখ্য, চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটকই শক্তিপদবাবুকে বলেন সাহিত্যের পাশাপাশি চিত্রনাট্য লেখা শুরু করতে। বাংলা সাহিত্য জগতে ইতিপূর্বে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রতিভাবান সাহিত্যিকরা এ কাজে ব্রতী হয়েছিলেন। শক্তিপদ রাজগুরু তাঁদেরই পথ ধরে ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে চিত্রনাট্য লেখার কাজ শুরু করেন। একটা চিত্রনাট্য লেখা তো কঠিন কাজই। একটা সফল চিত্রনাট্য লেখা তার চেয়েও কঠিন কাজ। এখানে প্রতিটি দৃশ্যের সঙ্গে চাই ঘটনা প্রবাহের গতি—সর্বজনগ্রাহ্যতা। আর নিটোল-রসসিক্তভাবে কাহিনি টেনে নিয়ে যায় ক্লাইম্যাক্স অবধি। ‘চেনামুখ’ বাংলা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হলো ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নামে। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এক নতুন যুগের সূচনা করল ‘মেঘে ঢাকা তারা’। একটি উদ্বাস্তু কলোনিকে কেন্দ্র করে একটি অতি সাধারণ মেয়ের জীবনসংগ্রামের কাহিনি। শক্তিপদবাবুর লেখার আন্তরিকতা পরিচালক ঋত্বিক ঘটক নিখুঁত মুনশিয়ানায় যথার্থভাবে তুলে ধরেছেন তাঁর তৈরি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ চলচ্চিত্রটিতে। যা আজও শ্রেষ্ঠ দশটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে তো বটেই ফিল্ম আকাদেমির পাঠ্যক্রমেও ঠাঁই পেয়েছে এই চিত্রনাট্যরূপ।
জীবন কাহিনির গল্পও যেন সমাজজীবনের উপর একটা কষাঘাতই। তবে নিটোল হাসির মধ্য দিয়ে সেই চরম বেদনাহত দুই ছন্নছাড়া বাবা-মেয়ের কথা। হাসির মধ্যে ফুটে ওঠে বেদনার অশ্রু। জীবন কাহিনির পরিচালক ছিলেন রাজেন তরফদার। তিনিও নামী পরিচালক। এরপরই শক্তিপদবাবুর সুন্দরবনের পটভূমিকাতে
লেখা ‘নয়া বসত’ উপন্যাস মুম্বাইয়ের (তৎকালীন বোম্বে) বিখ্যাত পরিচালক শক্তি সামন্তর চোখে পড়ে। তিনি এবার শক্তিপদবাবুর এই উপন্যাস নিয়ে হিন্দি ও বাংলা ভাষায় সিনেমা তৈরি করার মনস্থ করেন। শক্তিপদবাবু, শক্তি সামন্তের ডাকে বোম্বে পাড়ি দেন। শুরু হয় বোম্বে চিত্র জগতে তাঁর চিত্রনাট্য লেখার কাজ। ছবির নামকরণ করা হলো ‘অমানুষ’। ওঁরা এসে সুন্দরবনের একটা দ্বীপে দুমাস থেকে শ্যুটিং করেন। এই ছবি শুধু বাংলাতেই নয়, সারা ভারতে সুনাম অর্জন করে। তারপর এই কাহিনি অবলম্বনে তামিল, তেলুগু, মালয়ালাম ভাষাতেও ছবি তৈরি করা হয়। ভারতের বাইরে প্রায় ছাব্বিশটি দেশে এই ছবি বিক্রি হয়েছিল। এরপর শক্তি সামন্ত, শক্তিপদবাবুর কাহিনি অবলম্বনে তৈরি করেন ‘অনুসন্ধান’, ‘অন্যায় অবিচার’ প্রভৃতি ছবি— যা আজও স্মরণীয়।
পরের ছবি ‘পরিক্রমা’ তৈরি হয় নবদ্বীপকে কেন্দ্র করে। ভিন্ন স্বাদের এই ছবিটি একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পৃথিবীর বহু দেশে দেখানো হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অন্য স্বাদের ছবি শক্তিপদবাবুর উপন্যাসকে কেন্দ্র করে।
অন্য কাহিনিটি একটি নির্যাতিত নারীর কঠিন প্রতিবাদের ছবি। বিদ্রোহী একটি মেয়ে সমাজের অন্যায় অবিচারে প্রতিবাদে মুখর
ভিন্ন স্বাদের এই পাঁচখানি চিত্রকাহিনি সন্নিবেশিত হলো। আশা করি সুধী পাঠকবৃন্দ এই সংকলনটিকে সাদরে গ্রহণ করবেন। তাহলেই গ্রন্থকার এবং প্রকাশকের ভালো লাগবে।
সুধাংশুশোর দে
.
এই বইয়ে আছে
Leave a Reply