পাঁচকড়ি দে রচনাবলী ৪ (৪র্থ খণ্ড)
সম্পাদনা – ড. বারিদবরণ ঘোষ
করুণা প্রকাশনী।। কলকাতা-৯
প্রথম প্রকাশ : জুন, ২০১৩
প্রচ্ছদ : ইন্দ্রনীল ঘোষ
সম্পাদকীয়
তিনটি খণ্ড ধরে আমরা একালের পাঠকের কাছে রহস্যকাহিনি সম্রাট পাঁচকড়ি দে-র খান পনেরো দুষ্প্রাপ্য বই উপহার দিতে সমর্থ হয়েছি। এখন চতুর্থ খণ্ডটি প্রকাশিত হল তিনটি পূর্ণ উপন্যাস (এর মধ্যে কালসর্পী’তে দুটি খুচরো উপন্যাসিকা আছে) ও দুটি রহস্যগল্প উপহার দিলাম। পঞ্চম খণ্ডের উপকরণ প্রস্তুত, সেটিও উপহার দেবার আয়োজন চলছে। পূর্ব পূর্ব খণ্ডে পাঁচকড়িবাবুর জীবনের নানা কথা বলে আসলেও তাঁর পিতার নাম আমরা উল্লেখ করিনি। তাঁর পিতা ছিলেন কেদারনাথ দে, ২৯ আশ্বিন ১৩১৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।
আগের খণ্ডগুলিতে যে-সব বইগুলি মুদ্রিত হয়েছে, সেইসব বইয়ের মধ্যে অনেকগুলি বইয়ের তৎকালীন বিজ্ঞাপনগুলি চমকপ্রদ। কৌতূহলীদের জন্যে সেইসব বিজ্ঞাপনের কয়েকটি আমরা এই ভূমিকার সঙ্গে যুক্ত করে দিলাম।
প্রথম খণ্ড
উপন্যাসে অসম্ভব কাণ্ড—৪র্থ সংস্করণে ৮০০০ বিক্রয় হইয়াছে যে উপন্যাস, তাহা কি জানেন? তাহা শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বাবুর
মায়াবী (অতীব রহস্যময় ডিটেক্টিভ-প্রহেলিকা)
ভীষণ ঘটনাবলীর এমন অলৌকিক ব্যাপার কেহ কখনও পাঠ করেন নাই। সিন্দুকের ভিতর রোহিণীর খণ্ডখণ্ড রক্তাক্ত মৃতদেহ, আসমানী লাস–সেই খুন-রহস্য উদ্ভেদ। নরহন্তা দস্যু-সর্দ্দার ফুলসাহেবের রোমাঞ্চকর হত্যাকাণ্ড এবং ভীতিপ্রদ শোণিতোৎসব। ঘটনার উপর ঘটনা-বৈচিত্র্য–বিস্ময়ের উপর বিস্ময়-বিভ্রম-রহস্যের উপর রহস্যের অবতারণা—পড়িতে পড়িতে যেন হাঁপাইয়া উঠিতে হয়। এমন সুবৃহৎ ডিটেটিভ উপন্যাস এ পর্যন্ত বঙ্গসাহিত্যে আর বাহির হয় নাই। না পড়িলে বিজ্ঞাপনের কথায় ঠিক বুঝা যায় না। (সচিত্র) সুরম্য বাঁধান, মূল্য ২৮. স্থলে ১।, মাত্ৰ।
যখন অতি অল্পদিনে ৩য় সংস্করণে ৬০০০ পুস্তক বিক্রয় হইয়াছে, তখন ইহাই এই উপন্যাসের প্রকৃষ্ট পরিচয় ও প্রশংসা।
শক্তিশালী যশস্বী সুলেখক “মায়াবী” প্রণেতার অপূর্ব্ব-রহস্যময়ী লেখনী-প্ৰসূত—সচিত্র
নীলবসনা সুন্দরী (অতীব রহস্যময় উপাদেয় ডিটেকটিভ উপন্যাস)
পাঠকদিগকে ইহাই বলিলে যথেষ্ট হইবে যে, ইহা মায়াবী, মনোরমার সেই সুনিপুণ; অদ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ডিটেক্টিভ বৃদ্ধ অরিন্দম ও নামজাদা সুকৌশলী ডিটেটিভ ইনস্পেক্টর দেবেন্দ্রবিজয়ের আর একটি নূতন ঘটনা—সুতরাং ইহা যে গ্রন্থকারের সেই সৰ্ব্বজন-সমাদৃত ডিটেক্টিভ উপন্যাসের শীর্ষস্থানীয় “মায়াবী” ও “মনোরমা” উপন্যাসের ন্যায় চিত্তাকর্ষক হইবে, তদ্বিষয়ে সন্দেহ নাই। শ্রীযুক্ত পাঁচকড়িবাবু রহস্য-বিন্যাসে বঙ্গের গেবোরিয়া এবং রহস্যেদ্ভেদে কনান্ ডয়াল; তাঁহার সৃষ্ট অরিন্দম ও দেবেন্দ্রবিজয় শার্লক হোমসের সহিত সর্ব্বতোভাবে তুলনীয়। পড়ুন—পড়িয়া অপরকে পড়ান। সুরম্য বাঁধান, মূল্য ৩ স্থলে ১।।০ মাত্ৰ।
হত্যাকারী কে?
“হত্যাকারী কে? সচিত্র ডিটেটিভ উপন্যাস, শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি দে প্রণীত। উপন্যাসখানি ক্ষুদ্র হইলেও ইহার ভাষা, ভাব, চরিত্রসৃষ্টি প্রশংসার্হ। ইহার কাগজ ও মুদ্রাঙ্কণাদিও উৎকৃষ্ট।”
—বসুধা, ৩য় বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা।
“বাবু পাঁচকড়ি দে বাঙ্গালা পাঠকের নিকট অপরিচিত নহেন। বাঙ্গালা সাহিত্য-ক্ষেত্রে ইঁহার যথেষ্ট নাম, ইনি একজন বিখ্যাত ডিটেটিভ ঔপন্যাসিক। ডিটেটিভ উপন্যাস প্রণয়নে ইনি যে সুখ্যাতি অর্জন করিয়াছেন, তাহা বড় একটা কাহারও ভাগ্যে ঘটে না। আমরা তাঁহার ‘হত্যাকারী কে?’ নামক ক্ষুদ্র ডিটেক্টিভ উপন্যাসখানি পাঠ করিয়া যারপরনাই সুখী হইয়াছি। আশা করি, তিনি দিন দিন এরূপ উন্নতি করিয়া বাঙ্গালা সাহিত্যের পরিপুষ্টি সাধন করুন।”
— জাহ্নবী, ৯ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা।
‘Hatyakari Ke or Who is the Murderer, a detective tale in Bengali by Babu Panchkari Dey who has already made a name as a writer of detective stories. Well illustrated, and fairly well written the book maintains the reputation of the author.’
The Illustrated Police News, 15 August, 1903
‘WHO IS THE MURDERER?’-This is a delightful detective story in Bengali by Babu Panch Kori Dey. The story is attractive and sensational that one can hardly keep it aside before finishing it.’
The Indian Empire, February 28, 1905.
মায়াবিনী
জুমেলিয়া নাম্নী কোন নারী-পিশাচীর ভীতিপ্রদ ঘটনাবলী ও বীভৎস হত্যা-উৎসব পাঠে চমৎকৃত হইবেন। অধিক পরিচয় নিষ্প্রয়োজন, ইহাই বলিলে যথেষ্ট হইবে–যে ক্ষমতাশালী গ্রন্থকারের ঐন্দ্রজালিক লেখনী-স্পর্শে সর্ব্বাঙ্গ সুন্দর ‘মায়াবী’, ‘মনোরমা’, ‘নীলবসনা সুন্দরী’ প্রভৃতি উপন্যাস লিখিত, ইহাও সেই লেখনী নিঃসৃত। (সচিত্র) সুরম্য বাঁধান, মূল্য।। আট আনা মাত্র
রঘু ডাকাত
এই উপন্যাস বহুদিন ফুরাইয়া গিয়াছিল, শত সহস্র গ্রাহকের আগ্রহে আবার ছাপা হইল। সেই বিশ্ববিখ্যাত রঘুসৰ্দ্দারের ভীষণ কাহিনী পড়িতে কাহার না কৌতুক হয়? অনেকেই কেবল সেই দুর্দান্ত রঘু ডাকাতের নামমাত্র শুনিয়াছেন, কিন্তু তাহার অপূৰ্ব্ব কাৰ্য্যকলাপ, অসীম প্রতাপের কথা সকলকেই বিস্ময়চকিত চিত্তে পাঠ করিতে হইবে; সকলে সত্বর হউন, প্রত্যহ রাশি রাশি পুস্তক বিক্রয় হইতেছে, এবার এই উপন্যাস চিত্রশোভিত ও সুরম্য বাঁধান। মূল্য ১ টাকা।
মৃত্যু-রঙ্গিনী
এই উপন্যাসের নায়িকাসুন্দরী যথার্থই মৃত্যু-রঙ্গিনী বটে! এই রমণী পিশাচী অপেক্ষাও ভয়ঙ্করী, নরহত্যা, নারীহত্যা, স্বামীহত্যা, হত্যার উপরে হত্যা; এই রমণী সাহসে প্রতাপে, কৌশলে, চাতুর্য্য্যে, শঠতায়, দম্ভে, গর্ব্বে কোন অংশে রঘু ডাকাতের কম নহে; ইহাকে মেয়ে রঘুডাকাত বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। সুরম্য বাঁধান (সচিত্র) মূল্য ** মাত্ৰ।
তৃতীয় খণ্ড
সুহাসিনী (ঠিকে ভুল )
(বিস্ময়াবহ ডিটেটিভ উপন্যাস)
ইহাতে না আছে কি–বন্ধুত্বের অপূর্ব্ব আদর্শ—প্রেমের অপূর্ব্ব আলেখ্য—স্নেহের পূর্ণ বিকাশ-হৃদয়ের স্বর্গীয় মহত্ত্ব—মানবের উপাস্য দেবত্ব। আরও আছে-নরকের জ্বলন্ত; অনলের লেলিহান শিখা, পাপের বিশ্ববিধ্বংসকারী প্রচণ্ড ঝঞ্ঝা। সুহাসিনী দেবী, ইন্দুবালা দানবী, বরেন্দ্রনাথ দেবতা—গোপাল সয়তানের অবতার—হতাশ প্রেমিক দীনেন্দ্রকুমারের সকরুণ পরিণাম প্রভৃতি পাঠকের সমগ্র হৃদয় ব্যাপিয়া এমন এক তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করে যে, একাসনে আত্মহারাভাবে ইহার আদ্যোপান্ত পাঠ না করিয়া থাকা যায় না।
সুন্দর বাঁধান (সচিত্র), মূল্য দ· মাত্র।
পাল ব্রাদার্স—৭নং শিবকৃষ্ণ দাঁর লেন, জোড়াসাঁকো, পোঃ বড়বাজার, কলিকাতা
বাঙ্গালীর বীরত্ব (জনৈক দস্যুবীরের জীবন-কাহিনী)
বাঙ্গালীর অমিত বাহুবলের পরিচয়, বাঙ্গালীর অজেয় শৌর্য্যের পরিচয়, বাঙ্গালীর অতুল মহত্বের পরিচয়, বাঙ্গালীর অপূর্ব্ব শূরত্ব ও আত্মোৎসর্গ, বাঙ্গালীর পবিত্র হৃদয় ও পবিত্রতম সংসার, বাঙ্গালীর ধর্ম্ম, বাঙ্গালীর কর্ম্ম, বাঙ্গালীর সাধনা, বাঙ্গালীর সর্ব্বস্ব, সকলই একাধারে– রত্নাধার স্বরূপ। আরও আছে, জগতের অন্যত্র দুর্লভ—দেবীস্বরূপিণী বাঙ্গালীর বিধবা, সর্ব্বৈশ্বর্য্য পরিপূর্ণ রমণী-হৃদয়, রমণীর কৃতিত্ব, রমণীর স্বর্গসম্ভার, পতিপরায়ণতা—এমন লোমহর্ষণ সত্য-ঘটনা-বৈচিত্র্যময় উপাদেয় উপন্যাস বঙ্গ-সাহিত্যে বিরল। ১০খানি সুদৃশ্য সুন্দর হাফটোন ফটোচিত্র আছে। সুন্দর বাঁধাই। মূল্য ** মাত্র।
মনোরমা
(কামরূপদেশবাসিনী মিমীজাতীয়া কোন সুন্দরী রমণীর পৈশাচিক কার্যকলাপপূর্ণ অপূৰ্ব্ব জীবন-কাহিনী)
ইহাতে দেখিবেন, কামরূপদেশের কুহকিনী স্ত্রীলোকদিগের হৃদয় কি অমানুষিক পরাক্রমে, কি অলৌকিক সাহসে পরিপূর্ণ। সেই ভয়ানক হৃদয়ে যখন আবার যে প্রেম বিকশিত হইয়া উঠে—সে প্রেমও কত ভয়ানক, কত আবেগময় দিগ্বিদিক্জ্ঞানপরিশূন্য। সেই পৈশাচিক প্রেমের জন্য অতৃপ্ত লালসায় প্রেমোন্মাদিনী হইয়া তাহারা না পারে, এমন ভয়াবহ কাজ পৃথিবীতে কিছুই নাই। শ্রীযুক্ত পাঁচকড়িবাবুর কোন উপন্যাসই অসার বাজে কথায় পূর্ণ নহে, এমনকি তাঁহার একখানিমাত্র পুস্তক পড়িয়া শেষ করিলে বোধ হয়, যেন ১০/১২ খানি উপন্যাস একসঙ্গে শেষ করিয়া উঠিলাম। সচিত্র ও সুরম্য বাঁধান। মূল্য ** মাত্র।
চতুর্থ খণ্ড
Day’s Sensational Detective Novels
লব্ধপ্রতিষ্ঠ প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি দে মহাশয়ের সচিত্র উপন্যাস-পৰ্য্যায়।
পরিমল (ভীষণ কাহিনীর অপূর্ব্ব ডিটেটিভ রহস্য)
বিবাহরাত্রে বিমলার আকস্মিক হত্যা-বিভীষিকা। পরিমলের অপার্থিব সারল্য। তীক্ষ্ণবুদ্ধি ডিটেকটিভ সঞ্জীবচন্দ্রের কৌশলে ভীষণতম গুপ্তরহস্য ভেদ। দস্যুদলপরিবেষ্টিত হইয়া তেমনি অপূৰ্ব্ব কৌশলে দুঃসাহসিক সঞ্জীবচন্দ্রের আত্মরক্ষা—একাকী দস্যুদলদমন। একদিকে যেমন ভীষণ ভীষণ ব্যাপার—আর একদিকে আবার তেমনি ছত্রে ছত্রে সুধাক্ষরে অনন্ত প্রেমের বিকাশ দেখিবেন। আরও দেখিবেন, রূপতৃষ্ণা ও বিষয়-লালসার বশীভূত হইয়া মানব কেমন করিয়া দানব হইয়া উঠে। সব না পড়িলে দুই-এক কথায় সে সকলের কিছুই বুঝা যায় না। (সচিত্র) সুরম্য বাঁধান, মূল্য ** মাত্ৰ।
সকলে লউন—অতি উপাদেয় উপন্যাস!
অতি অল্প দিনে ২য় সংস্করণে ৪০০০ গ্রন্থ নিঃশেষিত প্রায়—শতসহস্র পাঠকের আগ্রহে আবার ছাপা আরম্ভ হইয়াছে।
জীবনস্থত-রহস্য (হিটিক উপন্যাস—বঙ্গসাহিত্যে এই প্রথম)
বিস্ময়াবহ ঘটনা—ঘটনার প্রবাহ, এমন আর হয় না। ইহার ঘটনা, ভাব, চরিত্রসৃষ্টি সর্ব্বতোভাবে নূতন এবং অনাগত। বিষাক্ত রুমাল ও বিষ-গুপ্তি রহস্য, সুরেন্দ্রনাথের ভীষণ অদৃষ্টলিপি, ততোধিক ভীষণতর সন্দেহজনক খুন ও মৃতদেহ অপহরণ; ডাকিনী জুলেখার দারুণ কুটিলতা, উভয় সঙ্কটাপন্না উন্মাদিনী সেলিনা-সুন্দরীর হতাশ হৃদয়ের হৃদয়ভেদী উচ্ছ্বাস এবং ব্যাকুল কার্য্য, অমরেন্দ্রনাথের আদর্শ আত্মত্যাগ এবং আশ্চৰ্য্য আনুবিধিৎসা প্রভৃতি বিস্ময়জনক কাহিনী ঐন্দ্রজালিক মায়ালীলার ন্যায় হৃদয়ে এমন এক অদম্য চিত্তোত্তেজনা সৃষ্টি করে যে, কেহ মুগ্ধ ও বিস্ময়-বিহ্বল না হইয়া থাকিতে পারেন না। এখানে আমরা হত্যাকারীর নাম বলিয়া এমন কৌতূহল বর্দ্ধক গল্পের সৌন্দর্য্য নষ্ট করিতে চাহি না। সুশোভন চিত্রাবলী পরিশোভিত, সুরম্য বাঁধান, মূল্য ** মাত্র।
আমরা এপর্যন্ত প্রকাশিত চারটি খণ্ডের বিধৃত গ্রন্থরাজির বিজ্ঞাপন এবং সমালোচনাগুলি একালের পাঠকদের কাছে উপহার দিয়ে সমকালীন একটা আবহাওয়াকে প্রায় প্রত্যক্ষ করার সুযোগ দিলাম। পরের খণ্ডগুলি বিষয়েও আমরা তৎপরতা দেখাতে পারবো।
পাঠকবর্গ লক্ষ্য করেছেন, কয়েকটি উপন্যাসের পরিচয় দিতে গিয়ে লেখক ‘হিপনোটিক উপন্যাস’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছেন। পরের খণ্ডেও আমরা এমন একটি উপন্যাস’ পুনর্মুদ্রিত করার সুযোগ এই হিপনোটিক উপন্যাসের চরিত্র বিষয়ে একটি অনুপুঙ্খ আলোচনা প্রকাশের সুযোগ নেবো। তাতে বাংলা রোমাঞ্চ উপন্যাস প্রকাশের প্রথম যুগে এমনতর উপন্যাসের চরিত্রটি বোঝা যাবে যেমন, তেমনি এমনতর উপন্যাস রচনা এখন কেন হচ্ছে না—তার একটি কারণও বুঝে উঠতে পারবো। একথা অস্বীকার করা যাবে না যে এই ধরনের বই রচনার আদর্শ ছিল বিদেশী ডিটেকটিভ উপন্যাসগুলি। আজকে তাদের উৎস নির্ণয় অসম্ভব না হলেও সুকঠিন।
বিজ্ঞাপনগুলি থেকে পাঠক লক্ষ্য করবেন—বইগুলির প্রকাশক ছিলেন পাল ব্রাদার্স। এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ পাল। একসময়ে এঁর লেখা বইপত্র বাজারে খুবই গৃহীত হয়েছিল। তাঁর লেখা কয়েকটি বইয়ের নাম করতে পারি—ঐতিহাসিক গল্প (১৮৮৫, আটটি ইতিহাসভিত্তিক গল্পের সংকলন), নরনারী তত্ত্ব (১৮৮৫, পশ্চিমদেশের কয়েকজন বিখ্যাত মানুষের কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, শরীরবিজ্ঞান প্রভৃতির চমৎকার আলোচনা), বঙ্গের পঞ্চরত্ন (১৮৮৪), রামমোহন রায়, রামগোপাল ঘোষ, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বারিকানাথ মিত্র ও কেশবচন্দ্র সেনের জীবনী), বেদিনী (১৯০৪, সামাজিক কাহিনি), সঙ্গিনী (১৮৮৪, স্ত্রীর গার্হস্থ্য কর্তব্য), স্ত্রীর সহিত কথোপকথন (১৮৮৪, ঐ), স্বামী-স্ত্রী (১৯২৮, ঐ)। এর সম্পর্কে এতো কথা বলার কারণ ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ghost writer’—‘ভুতুড়ে লেখক’, সেকালের বাজারে প্রচারিত ছিল—তিনিই নাকি পাঁচকড়ি দে-র ‘ভুতুড়ে লেখক’ ছিলেন। এ-বিষয়ে পাথুরে প্রমাণ নেই, থাকবার কথাও নয়। কিন্তু চলতি কথাটা উড়িয়ে না দিয়ে পরবর্তী গবেষণার জন্যে নিবেদন করে দিলাম।
কিন্তু একথা তো মেনে নিতেই হবে যে পাঁচকড়িই বাঙালি ডিটেকটিভ কাহিনি লেখকদের মধ্যে ‘সর্বাগ্রগণ্য’ হয়ে উঠেছিলেন বাংলা রোমাঞ্চিত সাহিত্যে একসঙ্গে জোড়া ডিটেকটিভকে উপহার দিয়ে। এই রচনাবলির পাঠকের সঙ্গে দেবেন্দ্রবিজয় এবং গুরু অরিন্দমের নিশ্চয়ই ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটে গেছে ইতোমধ্যে। পরে গোবিন্দরাম ও আরও একাধিক ডিটেকটিভকে তাঁর উপন্যাসে নিয়ে এসেছেন। এই খণ্ডে ‘পরিমল’ উপন্যাসের ডিটেকটিভ হলেন সঞ্জীবচন্দ্র। অনুমান করা যেতে পারে—এটিই তাঁর প্রথম বই এবং প্রথম গোয়েন্দা চরিত্র ছিল। এঁকে আমরা অন্যত্র আর পাইনে।
দেবেন্দ্রবিজয়কে আমরা প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম তাঁর ‘মায়াবিনী’ বইটিতে। ‘মনোরমা’তেও একে আমরা দেখেছি। যে ‘হিপনোটিক উপন্যাসে’র কথা বলছিলাম—তার সূত্রপাত সম্ভবত এখানেই। এখানেই কামরূপ-কামাখ্যার যোগিনীদের তান্ত্রিক কাণ্ডেই মেসমরিজম-এর আদি সূচনা। ‘মায়াবী’তে পেলাম দেবেন্দ্রবিজয়ের ডিটেকটিভগুরু অরিন্দমকে ফুলসাহেবের দৌরাত্ম্য এবং জুমেলিয়ার দৌরাত্ম্যে জমজমাট কাহিনি। গুরু ও শিষ্যকে আমরা একসঙ্গে পেয়েছি ‘নীলবসনা সুন্দরীতে। পরের খণ্ডে আমরা আরও একজন ডিটেকটিভের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। ততক্ষণ এই খণ্ডে আপনারা অনুপ্রবেশ করুন।
এখন পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানতে আমি উৎসুক আছি। আমার মতো উৎসুক প্রকাশক দুই পুরুষ—বামাচরণ ও কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। নমস্কারান্তে—
বারিদবরণ ঘোষ
পয়লা বৈশাখ, ১৪২০
Leave a Reply