পাঁচকড়ি দে রচনাবলী ৩ (তৃতীয় খণ্ড )
সম্পাদনা বারিদবরণ ঘোষ
করুণা প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০১২
প্রচ্ছদ : ইন্দ্রনীল ঘোষ
.
।। সম্পাদকীয়।।
এটা একটা আশ্চর্য সমাপতন কিনা জানিনা, কিন্তু এটাই ঘটনা যে এখন থেকে ১৭০ বছর আগে বিশ্বসাহিত্যের প্রথম রীতিমতো ইংরেজি ডিটেকটিভ গল্পটি লিখে ফেলেছিলেন এডগার অ্যালেন পো (১৮০৯-১৮৯৪)। গল্পটির নাম ছিল ‘দি মার্ডারস্ ইন দি রু মর্গ’। তাঁর সাফল্যকে যাঁরা সিংহাসনচ্যুত করতে চেয়েছিলেন—তাঁরা অবিশ্যি বলেন পো নাকি গল্পটি পেয়েছিলেন ফাঁসোয়া ইউজেনে ভিদোক- এর ১৮২৮-২৯ সালে লেখা ‘মেমোয়ার্স’ থেকে। অর্থাৎ ইংরেজি নয়, ফরাসি সাহিত্যই গোয়েন্দা গল্পের আদি জনক। তো ইংরেজ আর ফরাসিদের লড়াই তো আর আজকের বলার নয়—ওঁরা লড়াই করতে থাকুন। আমাদের শিরোমণি হয়ে আছে আর্থার কোনান ডয়েল (১৮৫৯-১৯৩০) তাঁর শার্লক হোমস্ আর ওয়াটসনকে নিয়ে। লন্ডনের বেকার স্ট্রিটের একটা ল্যাবরেটরিতে বসে এক ভদ্রলোক নানান রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন, যতক্ষণ জেগে থাকতেন মুখে পাইপ লাগানো অবস্থায় ডয়েলের পাঠক তাঁকে বসে থাকতে দেখেছেন। মনে পড়ছে তাঁর পাঠকের হয়তো—মাঝে মাঝে চণ্ডুর নেশা করে ভদ্দরলোক একেবারে বুঁদ হয়ে থাকতেন। কিন্তু তাঁর অসম্ভব বুদ্ধি— যাকে বলে আই কিউ—আর অপরাধবিজ্ঞানের নানা শাখায় তাঁর অধিকারের কারণে রহস্য সন্ধানের অদ্ভুত সব কাণ্ড দেখে পাঠক আপনি তাঁর ভক্ত হয়ে পড়তেন—সেটিও নিশ্চয়ই মনে পড়ছে। আমার তো মনে পড়ছে কোনান ডয়েল যেদিন শার্লক হোমসের মৃত্যু বর্ণনা করে একটি ছোটগল্প লেখার পর সারা দেশ জুড়ে কেমন হৈচৈ পড়ে গেছিল—সেই শোকদৃশ্যের বর্ণনার কথা। লোকেরা কালো কাপড়ের পট্টি বেঁধে শোক পালন করেছিলেন আর সক্কলে মিলে ডয়েলের কাছে দাবি জানাতে শুরু করেছিলেন—শার্লক হোমস্কে মারা চলবে না—ওকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে হবে। শোনা যায়, তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন স্বয়ং ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের কেউ কেউ।
কিন্তু এটা আমি সঠিক জানিনা যে এর্কুলে পোয়ারো বা মিস মার্পলের শেষ কী পরিণতি ঘটিয়েছিলেন অগাথা ক্রিস্টি। যেমন জানিনা পুলিশের ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার লেখক প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘আদরিণী’, ‘তান্তিয়াভীল’ বা ‘দারোগার দপ্তর’-এর লেখা বন্ধ করলে বাঙালিরা শোকগ্রস্ত হয়েছিলেন কিনা। ছোটবেলায় বেশ মনে আছে শশধর দত্ত মোহন সিরিজের বই লেখা শেষ করলে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমাদের মনের শূন্যস্থান পূরণ করে চলেছিলেন তখন হেমেন্দ্রকুমার রায়, নীহাররঞ্জন গুপ্ত, প্রভাবতী দেবী সরস্বতী এমন কি স্বপনকুমার। কিন্তু পাঁচকড়ি দে যেন এঁদের সবার মাথার মণি হয়ে বিরাজ করেছিলেন। নীলবসনা সুন্দরী পড়তে পড়তে যখন সঙ্গের ছবিতে দেখলাম উদ্ভিন্ন যৌবনাসুন্দরী উন্মুক্ত বক্ষে ছুরি বসানো—দেবেন্দ্রবিজয় দেখছেন, তাঁর দুটো চোখ দিয়ে বাঙালি পাঠকের লক্ষ চক্ষু উত্তেজক দৃশ্য দেখেছিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় এমন করেই আমাদের চিত্ত বিজয় করে তুলেছিলেন।
আসলে রহস্য উপন্যাসের কতকগুলো মজা থাকে। যতই খুন হয়, ততই যেন সেই মজাটা জমে ওঠে। আর সেই খুন বা অপরাধের কিনারা করতে গিয়ে গোয়েন্দা (এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের বোকা বোকা ভূমিকা) এমন সব চমকপ্রদ ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে রুদ্ধশ্বাসে গল্প পড়ার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। শিকার ও শিকারী, ক্রিমিন্যাল আর ডিটেকটিভ মিলে যে কুরুক্ষেত্র কাণ্ড ঘটিয়ে তোলেন—তাতে মহাভারত ঘাট মানতে বাধ্য হয়। একজনই ডিটেকটিভ—কিন্তু পাঁচকড়ির প্রত্যেকটা উপন্যাসে তিনি অপরাধের কিনারা বা ডিটেকশন করেন নিত্যনতুন কলাকৌশলে। তার সঙ্গে ভাষার
বুনোনে যে একটা কৌতূহল শেষ পর্যন্ত টান টান হয়ে ওঠে—তার কৃৎকৌশলটা পাঁচকড়িবাবু খুব আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন। যে ক্ষিপ্র গতিতে গল্প এগোয় তারও চেয়ে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেন দেবেন্দ্রবিজয়—গোবিন্দরামেরা। যেন তিনি অপরাধীকে বলেন—বাপুহে তুমি যদি চল ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়। এর জন্যেই এর বাজারদর একসময়ে চূড়ান্ত ছিল। সংস্করণের পর সংস্করণ ছাপা হয়েছিল পাঁচকড়ির বইয়ের। হত্যাকারী বা অপরাধী নিষ্ঠুরতা যেমন পাল্লা দিয়ে এগোয়, তেমনি টক্কর দিয়ে চলেন পাঁচকড়ির গোয়েন্দারা। নইলে তাঁর বাংলা বই হিন্দি আর উর্দু বইয়ের বাজারকেও দখল করে নিতে পারতেন এমনি করে। যতই নিন্দে করে সমালোচক বলুন না—তাঁর ‘হত্যাবিভীষিকা’ বইটি কোনান ডয়েলের The Hound of Baskarvikes, ‘ঈষৎ পরিবর্তিত অনুবাদমাত্র’। আমি বলি, মশাই—একখানি লিখে দেখান তো!
তবে হ্যাঁ, অস্বীকার করে লাভ নেই, বাঙালি ডিটেকটিভ বইয়ের লেখকেরা বিদেশী গোয়েন্দা বইগুলো একেবারে হজম করে ছেড়েছিলেন। বদহজম হয়নি বলেই গোবিন্দরাম শার্লক হোমসের ‘আত্মীয়’ হলেও একেবারে খাঁটি আগ-মার্কা বাঙালিটি হয়ে আমাদের পূজ্যপাদ হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ বলেছেন এগুলি ‘ডয়েলের কাহিনীরই খড়-মাটিতে অন্য রঙ লাগানো।’ সবগুলিই? কই source বের করুন তো? তখন অন্য অভিযোগ এসে হাজির হয়। সুকুমার সেনও এই অভিযোগ করেছেন এবং গজেন্দ্রকুমার মিত্রেরাও। অভিযোগটা কাকাবাবুর (গজেন্দ্রকুমার মিত্র) ভাষাতেই বলি, নইলে পাঠক ভেবে বসবেন—আমিও বুঝি এই দলে)—”জনশ্রুতি তাঁর ‘সম্পাদিত’ ও ‘সঙ্কলিত’ মার্কা বইগুলিতে স্বর্গত ধীরেন্দ্রনাথ পালের অনেকখানি হাত ছিল। আশালতা ও উমেেরর লেখক ধীরেন পাল নিজে তো শক্তিমান লেখক বটেই তাঁর ইংরেজি পড়াশুনোও বিস্তর। সে যুগেই ম্যাকমিলান কোম্পানি তাঁর ইংরেজি বই ‘লাইফ অফ শ্রীকৃষ্ণ’ প্রকাশ করেছিলেন, লক্ষ কপি বিক্রির বই রাজভাষাও নাকি তাঁরই লেখা—কয়েকটি রজতমুদ্রার বিনিময়ে দত্তক দিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁর পক্ষেই ‘শার্লক হোমস্’কে অত দ্রুত এদেশে আনয়ন করা সম্ভব বলে মনে হয়। প্রসঙ্গত বলা যায়— তাঁর পুত্র যতীন্দ্রনাথ পাল যাকে ভার্সেটাইল লেখক বলে তাই ছিলেন। ছেলেদের ছড়া, ইতিহাসের বই থেকে যৌনতত্ত্ব—সর্বত্রই তাঁর অবাধ গতি ছিল। পিতার মতো দ্রুত লিখতে পারতেন। ৩৬/৩৭ বছর বয়সে মারা যান, তখনই তাঁর নামে-বেনামে লেখা বইয়ের সংখ্যা আশির ওপর। ‘যমুনা’ সম্পাদক যতীন্দ্রনাথ পাল ধীরেন পালেরই ভ্রাতুষ্পুত্র। এই পাল বংশের কথা আমি ‘পাঁচকড়ি দে রচনাবলী’র প্রথম খণ্ডে কিছুটা আলোচনা করে এসেছি। অভিযোগ হাজারো আসতে পারে, কিন্তু বাংলা গোয়েন্দা বইয়ের বাজারটা—দীনেন্দ্রকুমার রায়ের আগে পাঁচকড়ি দে মশায়েরই যে একচেটিয়া ছিল—তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
একজন বিখ্যাত গোয়েন্দাকাহিনী রচয়িতা নীহাররঞ্জন গুপ্ত (যাঁর শতবর্ষ উদযাপিত হচ্ছে এ বছরেই) তিনি পাঁচকড়ির বই সম্পর্কে কী বলে গেছেন, একালের পাঠকদের কাছে একবার তা নিবেদন করি : “ইতিপূর্বে পাঁচকড়ি দে-র খানকয়েক রহস্য উপন্যাস—’মায়াবী’, ‘মায়াবিনী’, ‘হত্যাকারী কে’ ও ‘নীলবসনা সুন্দরী’ পড়ে রহস্য ও ক্রাইম জগতের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় ঘটেছিল। কেবল পরিচয়ই নয়—মনের মধ্যে কিছুটা রোমাঞ্চ সৃষ্টি করেছিল। ডিটেকটিভ বা গোয়েন্দার চরিত্রটির মধ্যে রীতিমতো যেন একটা রোমাঞ্চকর আকর্ষণ অনুভব করতাম।”
এই আকর্ষণটি এখনও বর্তমান আছে—এমনতর অভিজ্ঞতা আমাদেরও। পূর্ব প্রকাশিত খণ্ড দুটির জনপ্রিয়তা এর প্রমাণ বহন করছে। এবং আরও এমনতর খণ্ডের চাহিদা ক্রমবর্তমান। আমাদের সংগ্রহে বেশ কিছু বই আছে, পাঠকেরাও ইচ্ছে করলে প্রকাশকের ঘরে চিঠি দিয়ে তাঁদের আশ-পাশের
পুরনো লাইব্রেরিতে পাঁচকড়ি দে-র বইপত্রের সন্ধান দিলে অথবা ব্যক্তিগত সংগ্রহের কথা জানালে— আমরা বৃহত্তর পাঠক মহলে আরও কয়েকটি খণ্ড উপহার দিতে পারব। এদের টান যে কতখানি ঘনীভূত ছিল তার সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন সেকালের বিখ্যাত কবি ও ব্যবহারজীবী দেবেন্দ্রনাথ সেন— ‘আমরা স্বীকার করতে বাধ্য, আমরা সচরাচর ইংরেজি ও ফরাসিস্ লেখকদিগের রচিত যে সব ডিটেকটিভ উপন্যাস পাঠ করি, তদপেক্ষা…. কোন অংশে হীন নহে। ভাষা বেশ সরল সুন্দর—যেন জলধারার মত বহিয়া যাইতেছে, লেখক সুনিপুণ কৌশলে মুন্সিয়ানার সহিত, উস্তাদির সহিত পাঠককে গ্রন্থের প্রথম হইতে শেষ পর্যন্ত পাঠ করিতে বাধ্য করেন। কৌতূহল চরিতার্থ করিবার জন্য এক দুৰ্দ্দমনীয় ব্যাকুলতা জন্মে। লেখকের পক্ষে ইহা কম বাহাদুরির বিষয় নহে।‘
‘বঙ্গভূমি’ পত্রিকা (১৯ মাঘ ১৩১১) যথার্থই মন্তব্য করেছিলেন—’শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি বাবু রহস্য বিন্যাসে বঙ্গের গেবেরিয়ো, এবং রহস্যোদ্ভেদে কনান ডয়্যাল; তাঁহার সৃষ্টি অরিন্দম ও দেবেন্দ্রবিজয় লিকো ও শার্লক হোমসের সহিত সর্বতোভাবে তুলনীয়।’
এই খণ্ডে আমরা যে বইগুলি সংকলন করেছি, পাঠক তার রহস্য নিজেই আস্বাদন করতে পারবেন। এর মধ্যে ‘বাঙ্গালীর বীরত্ব’ বইটির সঙ্গে গোবিন্দরামের বইয়ের সম্পর্ক বিষয়ে পাঠক জেনেছেন। ‘বিষম-বৈসূচন’কে লেখক ‘উপন্যাস’ নামে চিহ্নিত করে গেছেন। এর প্রকাশক ছিলেন ৭ নং শিবকৃষ্ণ দাঁ লেন, জোড়াসাঁকো, কলকাতা ঠিকানাস্থ Paul Brothers & Co. অনুমান করি এটি ধীরেন্দ্রনাথ পাল, যতীন্দ্রনাথ পালদের পুস্তক-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ছিল। এর সূত্রেও পাঁচকড়ি দে-র সঙ্গে এঁদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা অনুমান করতে পারি। ‘সুহাসিনী’ বইটিকে পরিচায়িত করা হয়েছে ‘সুহাসিনী’ নামে। এর আখ্যাপত্রের একেবারে ঊর্ধ্বাংশে মুদ্রিত আছে ‘উপন্যাস-সন্দর্ভ/শ্রীপাঁচকড়ি দে সম্পাদিত’ বইটির সূচনা ঘটেছিল ‘আশালতা’ রচয়িতা ধীরেন্দ্রনাথ পালের হাতে। পাঁচকড়ি এতে মেদ- মজ্জা সংযোজন করেছিলেন। ‘ঠিকে ভুল’ অংশটি সম্পূর্ণত পাঁচকড়ির রচনা। দুটি রচনা একত্র করে ‘সুহাসিনী’ ও ‘ঠিকে ভুল’ নামে প্রকাশ করা হয় যখন এর নতুন সংস্করণ প্রকাশ পায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে। এটি প্রকাশিত হয় ‘CALCUTTA / THE BENGAL MEDICAL LIBRARY, 201 CORNWALLIS STREET’ থেকে। এই প্রতিষ্ঠানটিই হল বিখ্যাত গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স পুস্তক প্রকাশনার আদি নাম, প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। এর সঙ্গে সংযুক্ত ছবিগুলো ছেপে দিয়েছিলেন আর এক বিখ্যাত প্রেস ‘লক্ষ্মীবিলাস প্রেস’। একসময়ে সচিত্র ‘নিরুপমা বর্ষস্মৃতি’ প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। পাঁচকড়ি দে সম্পর্কে যতই জানতে পারি—ততই যেন কৌতূহল বেড়ে যায়। পাঠকবর্গও বোধকরি এই সম্পাদকের সঙ্গে একমত হবেন।
এই বইটি প্রকাশে বৈদ্যবাটির প্রাচীন গ্রন্থাগার, কোন্নগর পাবলিক লাইব্রেরি, তালতলা পাবলিক লাইব্রেরি, সরস্বতী মিশ্র ও আমার অনুরাগীদের সহযোগিতা করেছেন সানন্দে। করুণা প্রকাশনীর কর্ণধারবৃন্দ আমাকে পূর্ববৎ উৎসাহ জুগিয়ে চলেছেন।
১৫ আগস্ট ২০১১
বারিদবরণ ঘোষ
.
সূচিপত্র
- মনোরমা (ভিন্ন লিঙ্কে দেয়া হয়েছে)
- বাঙ্গালীর বীরত্ব (ভিন্ন লিঙ্কে দেয়া হয়েছে)
- বিষম-বৈসূচন (নীচে দেয়া হয়েছে)
- সুহাসিনী (নীচে দেয়া হয়েছে)
- ঠিকে ভুল (নীচে দেয়া হয়েছে)
- চিঠিচুরি (নীচে দেয়া হয়েছে)
Leave a Reply