পঞ্চাশটি ভূতের গল্প – ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
প্রথম সংস্করণ জানুয়ারি ২০০১
.
ভূমিকা
ভূতের গল্পের আবার ভূমিকা? হ্যাঁ, ভূমিকা একটু লিখতেই হবে। তার কারণ, ভূত আছে কি নেই এ নিয়ে তর্কেরও শেষ নেই। ভয় থেকেই যদি ভূতের জন্ম হয় তা হলে ভূত থেকেই বা ভয়ের জন্ম হবে না কেন? ভূত এবং ভয় দু’জনেই সহোদর ভাই। ভূত নিয়ে এখন রীতিমতো গবেষণা, এমনকী প্রতিযোগিতাও চলছে। কোনও কোনও ভৌতিক গল্পে বিজ্ঞানের পতাকা উড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টাও হচ্ছে ভূত-টুত কিছু নয়, মানুষ অযথা ভূতকে কল্পনা করেই ভয় পায়। আমি কিন্তু সে মতে বিশ্বাসী নই। নই বলেই এতগুলো ভূতের গল্প লিখে ফেললাম। বছরের পর বছর ধরে গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বিস্মৃতপ্রায় যুগের প্রবীণদের মুখ থেকে যেসব কাহিনী আমি সংগ্রহ করেছি, তারই সযত্ন প্রকাশ আমার এই গল্পগুলিতে।
আমি নিজে ভূত এবং অলৌকিক ব্যাপারস্যাপারগুলোতে বিশ্বাস করি। কেন করি, তার উত্তর আমার গল্পগুলোর মধ্যেই আছে। আমি মনে করি ভয়ের কম্বল মুড়ি দিয়ে ভূতেরা যতই অন্ধকারে মিশে থাকুক, তবুও ভূত বর্তমান। ভূত ভবিষ্যৎ। ভূত আছে এ-কথা যেমন বাজি রেখে বলা যায় না, তেমনই ভূত নেই এমন বাজিও কি ধরা যায়? ইদানীংকালে আমরা কেউ ভূত না দেখলেও বহু মানুষের বিরল অভিজ্ঞতাকে তো এককথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না! ভূত যুগে যুগে। ভূত দেশে দেশে। কেউ কেউ ভূতকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের অলস কল্পনা বলে মনে করেন। কিন্তু বহির্ভারতে যে-সমস্ত সভ্য দেশ কুসংস্কারমুক্ত ও উন্নত, তারাও কিন্তু ভূতের অলৌকিকত্বকে মেনে নিয়েছেন। এই তো সেদিনের কথা, গারস্টিন প্লেসের পুরাতন আকাশবাণী ভবনকে ঘিরে যে সমস্ত গুণী-জ্ঞানীরা তাঁদের অলৌকিক অভিজ্ঞতার কথা লিখে গেলেন তাঁরা কি সবাই মিথ্যে কথা বলে গেলেন? যাই হোক, বিশ্বাস-অবিশ্বাস মনের ব্যাপার। এবং গল্প গল্পই। সত্য হোক, মিথ্যা হোক, যাই হোক, আমার বইয়ের সব গল্পই ভূতের। একমাত্র শেষের গল্পটিই যা ব্রহ্মদত্যির। তাও সে গল্পও আমার বানানো নয়।
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়
.
লেখক পরিচিতি
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম ২৫ ফাল্গুন ১৩৪৭। ইংরাজি ১৯৪১। মধ্য হাওড়া খুরুট ষষ্ঠীতলায়। কিশোর বয়স সাহিত্য সাধনার শুরু। ১৯৬১ সাল থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় আলোচনীর সঙ্গে লেখালেখিসূত্রে যুক্ত থাকলেও ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ছোটদের জন্য লেখা ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ই লেখককে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
লেখক মূলত অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, তাই দেশে দেশে ঘুরে যে-সব দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর প্রতিটি রচনার কাহিনী ও চরিত্রচিত্রণে। বর্তমানে আনন্দমেলা পত্রিকার নিয়মিত লেখক।
Leave a Reply