না – মোহিত কামাল
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০০৯
উৎসর্গ
তখন পড়াশোনা করছি সাবেক পিজি হাসপাতালে, বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। মনোচিকিৎসায় উচ্চতর কোর্সের অংশ হিসেবে প্লেসমেন্ট হয়েছে। নিউরোলজি বিভাগে।
পিজি হাসপাতালের এ ব্লকের সাত তলায় দুপুরে খাবার টেবিলে বসে খবর পেলাম, মা গুরুতর অসুস্থ। দ্রুত বেরোলাম হোস্টেল থেকে। কাউকে জানিয়ে আসার সময় পেলাম না।
রাতে পৌঁছলাম চট্টগ্রামে।
বাসার বাইরে দেখি অনেক চেনাজানা মানুষ, স্বজনেরা জড়ো হয়েছে। কেউ কথা বলছে না আমার সঙ্গে। এত মানুষ কেন? প্রশ্ন নিয়ে বাউন্ডারি গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢোকার সময় চোখ পড়ল শবযাত্রার খাটের ওপর, কেঁপে উঠল বুক।
ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারলাম, মা নেই। চলে গেছেন…
স্তব্ধ হয়ে গেলাম। একটুও কাঁদলাম না। কান্না এল না। শূন্যতায় ভরে উঠল বুক।
থেমে থাকে না জীবন। এভাবে চলে যায় স্বজনেরা। চলতে থাকে জীবন।
ক্লাস করতে হবে। ফিরে এলাম ঢাকায়।
বসে আছি নিউরোলজি ক্লাস শুরুর অপেক্ষায়।
তিনি এলেন ক্লাসে।
মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘোষণা করলেন, আজ পড়াব না। আমাদের মোহিতের মা ইন্তেকাল করেছেন। মোহিতের মা মানে সবার মা। আসুন, মায়ের মৃত্যুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করি। আসুন, মায়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করি আমরা।
দুই সপ্তাহে একফোঁটা কাঁদিনি। ওই মুহূর্তে বুক ফেটে যায়, চোখ ফেটে আসে কান্না। হু হু করে কেঁদে ফেললাম।
তিনি পাশে এসে দাঁড়ালেন। সহমর্মিতার হাত রাখলেন আমার মাথায়।
ছোট ঘটনা। অথচ মমতার এক বিশাল স্পর্শে ভরে আছে মন। ভরে থাকবে পুরো জীবন।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করি তাঁকে।
তিনি মহানুভব শিক্ষক, বড় মনের মানুষ, দেশবরেণ্য স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ডা. আনিসুল হক চেয়ারম্যান, নিউরোমেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায়, বিএসএমএমইউ।
দ্বাদশ মুদ্রণ, পরিমার্জিত নতুন সংস্করণের নিবেদন
না উপন্যাসের দ্বাদশ মুদ্রণ, পরিমার্জিত নতুন সংস্করণ বেরোচ্ছে। খবরটা শুনে লেখক হিসেবে কেবল আনন্দ পাচ্ছি বললে ভুল হবে। আতঙ্কও জাগছে। নতুন করে সংশোধন পরিমার্জন করতে গিয়ে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। তা সংশোধনও করা হয়েছে। এ সংস্করণ বেরোনোর পরও সে ভুল রয়ে যাবে কিনা, শংকামুক্ত হতে পারছি না। ছাপাখানার ভূত কাকে বলে টের পেয়েছি। সে-ভূত থেকে মুক্ত থোক যেকোনো প্রকাশিত বই, মনে-প্রাণে চাই।
তরুণ-তরুণীরা বইটাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন, বড়রাও। সাহিত্য বোদ্ধাদের মধ্যে যারা পড়েছেন, তারাও। এ গ্রহণযোগ্যতায় অনুপ্রেরণা পাচ্ছি আরও আরও লেখার।
সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
বিদ্যাপ্রকাশের স্বত্ত্বাধিকারী মজিবর রহমান খোকাকে ধন্যবাদ। নতুন করে বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়ে কৃতজ্ঞতা পাশে বেঁধে রেখেছেন আমাকে। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই তাঁকে।
মোহিত কামাল
ধানমন্ডি, ঢাকা
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
.
অথচ আশ্চর্য আমি স্বপ্ন দেখি পূর্বপুরুষের
গোলাভরা ধান আর সবুজের উত্তরাধিকার,
স্বপ্ন দেখি নারী তুমি প্রতিমা এ শ্যামল দেশের
সেই তুমি দুর্ভিক্ষের মরুময় ধুধু হাহাকার।
মানি না এ বাস্তবতা, আমি চাই অথই সবুজ
বাগানের প্রতিকৃতি তোমার যৌবন হোক আজ
আমি অন্ধ প্রেমিকের অস্থিরতা নিয়েই অবুঝ
শিশুর সারল্যে আঁকি রমণী-শিল্পের কারুকাজ।
নাসির আহমেদ
বৃক্ষমঙ্গল উত্তরপর্ব : ১৬
Leave a Reply