নাস্তিকের ধর্মকথা – অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Nastiker Dharmakatha by Anirban Bandyopadhyay
প্রথম প্রকাশ : মাঘ, ১৪২৪
প্রকাশক : আরোহী প্রকাশন
প্রচ্ছদ পরিকল্পনা : ধনঞ্জয় সেনগুপ্ত
উৎসর্গ
যাঁরা এ পৃথিবীকে সুস্থ রাখতে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন
কথামুখ
নাস্তিক শব্দটি মানে যে ঈশ্বর ও ধর্মে অবিশ্বাস করে। আস্তিক মানে যে ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাস করে। বিষয়টি যদি এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকত, তাহলে আমাকে এ গ্রন্থের অবতারণা করতে হত না।
কেবলং শাস্ত্রমাশ্ৰিত্য ন কর্তব্য বিনির্ণয়।
যুক্তিহীন বিচারেণ ধর্মহানিঃ প্ৰজায়তে।।
এটার আমার বচন নয়, শাস্ত্রীয় বচন। আমি নাস্তিক। শাস্ত্র আমার জীবন নিয়ন্ত্রণ করে না। অর্থাৎ আমি বস্তুত অশাস্ত্রীয় মানুষ। যুক্তিহীন ধর্মকথা মান্য করে পুণ্যলাভের বাসনা আমার নেই। বরং শাস্ত্রমতে যুক্তিহীন বিচারে ধর্মের ক্ষতিসাধন হয় বল আমি বিশ্বাস করি। এটাই আমার বিশ্বাস, আমার ধর্মানুভূতি। কল্পনাবিলাসে নাস্তিকরা অভ্যস্ত নয়।
পতঞ্জলি মতে ‘অস্তি’ বা ‘আছে’– এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ আস্তিক এবং এর বিপরীত, ‘ন অস্তি’ বা ‘নেই’– এই ধারণার বশবর্তী হয়ে মানুষ ‘নাস্তিক। ঈশ্বর ও ধর্ম বিষয়ে নাস্তিকদের চিন্তাচেতনা এবং আস্তিকদের চিন্তাচেতনা নিয়েই এই গ্রন্থের বিষয়। নাস্তিক্যবাদের ইতিহাস ও বিবর্তনই এই গ্রন্থের রসদ। প্রচলিত ধর্মগুলির ইতিহাসও আলাদা প্রবন্ধে আলোচনা হয়েছে। বস্তুত এই গ্রন্থে মোট তিনটি প্রবন্ধ আছে। প্রবন্ধ তিনটি হলেও নাস্তিকতাই মূল সুর। সুরের জয়, অ-সুরের পরাজয় আবশ্যক।
নাস্তিক্যবাদ ও নাস্তিকদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ধারণা পরিষ্কার নয়। নাস্তিকদের দর্শন ও লড়াই কখনোই আস্তিকদের বিরুদ্ধে নয়। নাস্তিকদের লড়াই বুজরুকদের বিরুদ্ধে, ভণ্ডদের বিরুদ্ধে, প্রতারকদের বিরুদ্ধে। যাঁরা আল্লাহ-ঈশ্বর-গডের নাম ভাঙিয়ে যাঁরা সাধারণ মানুষদের প্রতারণা করে, নাস্তিকদের লড়াই তাঁদের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়– যাঁরা ধর্মের নামে দাঙ্গা বাধায়, রক্তবন্যা বইয়ে দেয়, যাঁরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে, লড়াই তাঁদের বিরুদ্ধে।
যতদিন এ পৃথিবীতে এই ভণ্ড-বুজরুকরা থাকবে, ততদিন নাস্তিকদের আন্দোলন চলবে। যাঁরা নিজ ধর্মকে বুক ঠুকে উৎকৃষ্ট বলে ঘনঘন চেল্লান, আর
অন্য ধর্মকে নিকৃষ্ট বলে হেয় প্রতিপন্ন করে, নাস্তিকদের লড়াই তাঁদের | বিরুদ্ধেও। কারোর ধর্মবিশ্বাসকে আঘাত করা নাস্তিকদের কাজ নয়। ঈশ্বর ও ধর্মকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে।
যাবতীয় গুজব, অন্ধবিশ্বাস, প্রশ্নহীন আনুগত্য এবং সমস্ত রকমের পশ্চাৎপদতাকে সরিয়ে বিজ্ঞানমনস্ক সমাজের স্বপ্ন দেখে নাস্তিক্যবাদীরা। নাস্তিক্যবাদীরা ধর্মের নামে মানুষের বিভাজন ঘৃণা করে। নাস্তিকরা সমস্ত বিদ্বেষ-বিভাজনের বিরোধিতা করে।
এই গ্রন্থের মাধ্যমে সক্রেটিস, ব্রুনো, অভিজিৎ, তসলিমা, ভগৎ সিং, সলমন রুশদি, স্টিফেন হকিং, কালবর্গির পথ ধরে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। এই প্রয়াস যদি পাঠকদের কিছুমাত্র ঋদ্ধ করতে সক্ষম হয়, তাহলেই আমার পরিশ্রম সার্থক হবে।
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
Leave a Reply