নক্ষত্রপথিক – দুটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস – সুমিত বর্ধন
প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর ২০১৯
.
যিনি লিখতে আমায় সর্বদা উৎসাহ দিয়েছেন
সেই
অদ্রীশ বর্ধনকে
.
কল্পবিজ্ঞান কাকে বলে সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। স্টার্জেন আর হেনলিন থেকে শুরু করে ক্লার্ক আর অ্যাসিমভ পর্যন্ত কল্পবিজ্ঞানের দিকপালরা কল্পবিজ্ঞানকে বিভিন্ন রকম সংজ্ঞায় অভিহিত করেছেন। তবে এ সবের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ক্রিস্টোফার ইভান্সের দেওয়া একটি দুই শব্দের ব্যাখা। কল্পবিজ্ঞানকে ইভান্স ছোট্ট করে বলেছেন ‘হোয়াট ইফ?’ অর্থাৎ ‘যদি?’ কী হতে পারে যদি মানুষ অন্য গ্রহে কলোনি বসায়? কী হতে পারে যদি মানুষ সত্যিই সময়পথে ভ্রমণ করার ক্ষমতা পায়? এই ধরণের ‘যদি’গুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করলে আশা অথবা আশঙ্কার যেসব সম্ভাবনা ভেসে ওঠে, কাহিনির প্রেক্ষাপট কল্পনার হলেও দেখা যায় সেইসব সম্ভাব্য পরিণতি অনেকাংশেই বর্তমান কালের জন্যে প্রাসঙ্গিক।
ইভান্স ছাড়াও কল্পবিজ্ঞানের আর-একটি অন্যরকম ব্যাখা দিয়েছেন কিম স্ট্যানলি রবিনসন। তিনি কল্পবিজ্ঞানকে বলেছেন ইতিহাসের সাহিত্য। যে ইতিহাসের সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে সংযোগ রয়েছে আমাদের বর্তমান বা অতীতের।
এই দুই স্বতন্ত্র দৃষ্টিকোণ থেকে কল্পবিজ্ঞান লেখার প্রচেষ্টা থেকে রূপ পেয়েছে যামল আর তোরণ।
ইতিহাসের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে ইতিহাসের শৃঙ্খলে পুনর্বার জড়িয়ে পড়লে সমাজ কোন পথে এগোয়, সেই প্রশ্ন তোলার কাহিনি যামল। আর তার ঠিক উলটোদিকে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অতীতকে পেছনে রেখে ভবিষ্যতের পথের সন্ধানে পাড়ি দেওয়া সমাজের রূপ কেমন হতে পারে সে প্রশ্নের কাহিনি তোরণ।
দুটি কাহিনিতেই প্রতিবারের মতনই নতুন জগৎ গড়ার চেষ্টা করেছি, যাতে পাঠক পড়ার সময় ডুবে যেতে পারেন এক অচেনা দুনিয়ায়। একই সঙ্গে চেষ্টা করেছি কল্পবিজ্ঞানের নতুন কিছু পরিভাষা সৃষ্টির।
আশা করি চিরাচরিত বিষয়বস্তু থেকে সরে এসে লেখা এই কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি দুটি পাঠকের ভালো লাগবে।
সুমিত বর্ধন
ডিসেম্বর, ২০১৯
.
প্রকাশকের কথা
কল্পবিশ্ব প্রকাশনীর চতুর্দশতম নিবেদন নক্ষত্রপথিক। শুরু থেকেই কল্পবিশ্বের উদ্দেশ্য ছিল পুরোনো লেখা পুনরুদ্ধার ও গবেষণামূলক লেখার পাশে এই সময়ের লেখকদের বাংলা কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি ও হরর কাহিনি প্রকাশ। প্রকাশনীর শুরু থেকেই নতুন লেখকদের উৎসাহ প্রদানের ব্যাপারটাকে আমরা বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছি। তারই সাম্প্রতিক ফলশ্রুতি লেখক সুমিত বর্ধনের এই বইটি।
অদ্রীশ বর্ধনের ভ্রাতুষ্পুত্র সুমিত বর্ধন একসময়ে ফ্যানট্যাসটিক পত্রিকায় প্রচুর লেখালিখি করেছেন। কল্পবিজ্ঞান পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর লেখালিখিতে কিছুটা ভাঁটা পড়ে। কল্পবিশ্ব ওয়েব-ম্যাগাজিন প্রকাশের সময় থেকেই তিনি কলম তুলে নিয়েছেন বাংলায় কল্পবিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষানিরীক্ষা করার প্রচেষ্টায়। গত চার বছর তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন একের পর এক চমক। এই উপন্যাস দুটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। তোরণ উপন্যাসটি ২০১৮ সালের শারদাঞ্জলি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ওয়েব-ম্যাগাজিন পরবাসিয়া পাঁচালিতে যামল উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রকাশ সঙ্গে সঙ্গেই পাঠকের বিপুল সমাদর পেয়েছিল উপন্যাস দুটি। বিপুল সংখ্যক পাঠকের অনুরোধে সেই উপন্যাস দুটি পরিমার্জনা করে বই আকারে প্রকাশ করতে পেরে প্রকাশক হিসেবে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
গত চার দশক ধরে যে কল্পবিজ্ঞানকে কঠিন সংজ্ঞা আর কিশোর অ্যাডভেঞ্চারের শিকলে আটকে রাখা হয়েছিল, সেই বাঁধন খুলতেই নেমেছে কল্পবিশ্ব। সঙ্গে আছেন সুমিত বর্ধনের মতো লেখকরা। ‘অপার্থিব সিরিজ’ নাম দিয়ে সেই আন্দোলনের আর-একটি ফসল ‘নক্ষত্রপথিক’ প্রকাশ করা হল।
আশা করছি কল্পবিজ্ঞানের এই নতুন পরীক্ষা পাঠকের যোগ্য সমাদর পাবে।
প্রকাশক
ডিসেম্বর, ২০১৯
Leave a Reply