ধর্মের উৎস সন্ধানে (নিয়ানডার্থাল থেকে নাস্তিক) – ভবানীপ্রসাদ সাহু
প্রথম সংস্করণঃ জানুয়ারী, ১৯৯২ ( বইমেলা)
প্রচ্ছদ : তরুণ বসু
প্রকাশক: রাখাল বেরা
“মানুষেরে ঘৃণা করি’
ও’ কারা কোরাণ, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরিমরি।
ও’ মুখ হইতে কেতাবগ্রস্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি
মানুষ কোনো।”
— নজরুল ইসলাম
.
উৎসর্গ
ধর্ম যাঁদের
অসহায় আশ্রয়
তাঁদের উদ্দেশ্যে
.
প্রথম সংস্করণের ‘পুস্তক পরিচিতি’
আনন্দবাজার পত্রিকা (‘… ধর্ম কী, আর অধর্মই বা কি’, সুরজিৎ দাসগুপ্ত; ১১ অক্টোবর, ১৯৯২)– “বিচারকে বর্জন করে বিশ্বাসকে গ্রহণ করার মানসিকতাই ধর্মের পরিপোষক। মানব সমাজের যখন শৈশব দশা তখন মানুষের মনে যে সব আতঙ্ক ও কল্পনার জন্ম হয়েছিল, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে যেভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা হয়েছিল সেগুলি থেকে আস্তে আস্তে কালক্রমে এক একটি ধর্মের এবং একটি একটি ধর্ম থেকে এক একটি সম্প্রদায়ের জন্ম হয়েছে। ‘ধর্মের উৎস সন্ধানে’র লেখক ভবানী প্রসাদ সাহু এক জায়গায় লিখেছেন, ‘ধর্ম যে মানুষেরই প্রয়োজনে মানুষেরই তৈরি, ধর্মীয় তথা সাম্প্রদায়িক বিভেদ যে নির্ভেজাল কৃত্রিম একটি ব্যবস্থা–এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা দরকার।’ এই দরকার বোধ থেকেই লেখা হয়েছে গ্রন্থটি। মানুষের বঞ্চনা-বেদনায় ধর্ম অবশ্যই একটা সান্ত্বনার প্রলেপ দেয়, কিন্তু মানুষকে শাসনে রাখার জন্য বুদ্ধিমান ও চালাকদের কাছে ধর্ম একটা কলও বটে। ধর্মের উদ্ভবের কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে লেখক বক্স করে পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রাণীর ও মানুষের উদ্ভব ও বিকাশের কাহিনী সূত্রাকারে সাজিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া গ্রন্থটিতে আছে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, কোন্ ধর্ম কোন্ কোন্ দেশে প্রচলিত এবং কোন ধর্মের কোন্ দেশে অনুসারীদের সংখ্যা কত জাতীয় বহু তথ্য।
‘ধর্মের উৎস সন্ধানে’ বেরিয়ে শ্রী সাহু দেখেছেন যে ধর্ম যেমন মানুষকে ঐক্যবদ্ধকরে তেমনই সম্প্রদায়ে সম্প্রদারে বিভক্তও করে এবং এই বিভাগগুলির মধ্যে বিরোধ থেকে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব আর রাজনীতিবিদরা এই সাম্প্রদায়িকতাকেই নিজেদের রাজনীতিক স্বার্থসিদ্ধির কাজে লাগান।”
.
আজকাল (‘জয় হোক শুভবুদ্ধির’, আবদুর রউফ; ১২ই জানুয়ারী ১৯৯৩)—“(দাঙ্গা, ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের সাহায্যে রাজনৈতিক ফায়দা ওঠানো এসব) নিরসনের একমাত্র উপায় ধর্মীয় সেন্টিমেন্টের ব্যাপারটাই যাতে মানুষের মনে বাসা বেঁধে না থাকতে পারে তার উপায় নির্ধারণ করা। অনেকটা এই উদ্দেশ্য সামনে রেখেই ভবানীপ্রসাদ সাহু ‘ধর্মের উৎস সন্ধানে’ বইটি লিখেছেন।
ধর্মের ঐতিহাসিক ভূমিকা যাই হোক না কেন ধর্ম যে প্রকৃত পক্ষে মানুষেরই সৃষ্টি, দেশকালপাত্রের বিশেষ ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা থেকেই যে ধর্মগুলির উদ্ভব এবং বর্তমানে দেশ-কাল-পাত্র বহুল পরিমাণে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ায় এই সব ধর্মের উপযোগিতা যে নিঃশেষিত প্রায়, এই কথাগুলিই বৈজ্ঞানিক যুক্তিবিচারের সাহায্যে বইটির পাতায় পাতায় স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে।
লেখক গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে নিয়ানডার্থালদের চিন্তাভাবনা থেকে নাস্তিক্য পর্যন্ত মানুষের ধর্মীয় তথা ঈশ্বরচিন্তার ক্রমবিকাশ এবং পরিণতি পর্ব আলোচনা করেছেন। এই কাজে তাঁর পড়াশুনার ব্যাপ্তি বিস্ময়কর। তিনি প্রায় প্রতিটি প্রচলিত ধর্মের উদ্ভবের, প্রভাব বিস্তারের, ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন এবং পরিণতির ইতিহাস পর্যালোচনা করেছেন আলাদা আলাদা ভাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেখক সতর্ক থেকেছেন যাতে কারও ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাসে আঘাত না লাগে। অথচ ধর্ম যে বিশেষ পরিস্থিতিতে মানুষেরই তৈরী এই কথাটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে বিশেষ বিশেষ মানবগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণের দ্বারা বুঝিয়ে দিতে কসুর করেননি।
পরিশেষে শ্রী সাহু লিখেছেন,—নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতাই মানুষকে একটি কাল্পনিক বিভেদ থেকে মুক্ত করে সর্বজনীন ঐক্যের পথ দেখায় এবং মানুষ তখন অনৈক্যের যে কারণ— অর্থনৈতিক ও শ্রেণীগত বৈষম্য সে সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। লেখকের মতে সর্ব ধর্মের সমন্বয় বা যে যার নিজের ধর্মে প্রকৃত নিষ্ঠাবান হয়ে ওঠার দ্বারা মানুষে মানুষে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নাস্তিক্যবাদী দর্শনই মানুষকে তার বাস্তব সমস্যা চিনতে ও তার সমাধানের প্রকৃত পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাস টিকিয়ে রেখে এই পথ খোঁজার চেষ্টা এক সময় কানাগলির সম্মুখীন হতে বাধ্য।’ (পৃঃ ১৫৮ )
‘আমরা সম্ভবত এখন সেই কানাগলির মধ্যেই ঢুকে পড়েছি।…’
.
কলেজ স্ট্রীট (সমীরণ চৌধুরী; মে, ১৯৯২)—“মানুষ কেমনভাবে ধর্মের জন্ম দিয়েছে, কেমন ভাবে শাসক গোষ্ঠী তাকে ব্যবহার করেছে, কেনই-বা বিপুল সংখ্যক মানুষ ধর্মের আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করতে বাধ্য হয়— এ সম্বন্ধে বিভিন্ন দিক ব্যাপকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন লেখক। তাঁর মতে, অন্ধভাবে তথাকথিত ঐতিহ্যের অনুসরণ নয়, মুক্তমনে সত্যের সন্ধানই কাম্য। বর্তমান পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ধর্মগুলির সৃষ্টি, সংঘাত বিবৃত হয়েছে, তার সঙ্গে আছে লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে ধর্মকে শাসক শ্রেণীর ব্যবহারের অনুক্রমিকা। লেখকের মতে, ধর্ম নিরপেক্ষতা ধর্ম বিশ্বাসের সমার্থক। ‘সর্ব ধর্ম সমন্বয়’, ‘প্রকৃত ধর্মাচরণ করা’ প্রভৃতি কথাবার্তার লেখক যে বিরোধী তা বইটি পড়লে বোঝা যায়। ফলে, বইটি যথেষ্ট বিতর্ক জাগাবে।”
.
দু’চার কথা প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
‘সবার উপরে মানুষ সত্য’। হ্যাঁ, ধর্মেরও উপরে; তার একমাত্র কারণ, ধর্মকে মানুষই তার জ্ঞান ও বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টি করেছে, তার নিজেরই প্রয়োজনে। ধর্ম চিরন্তন বা সনাতন কোন কিছু যেমন নয়, তেমন ঐশ্বরিক কোন ব্যাপারও নয়, কারণ এই ঈশ্বরও মানুষেরই কল্পনার সন্তান। তবু কিছু মানুষ আছে, যারা ধর্মকে মানুষেরও উপরে স্থান দেয়। ধর্মের নাম করে অন্য মানুষকে ঘৃণা করা, এমন কি হত্যা করার ঘটনাও ঘটে। ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিভেদ এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে যেন মনে হয় ধর্ম রক্ষাই মানুষের প্রধান কাজ—যা মিথ্যা।
ধর্ম তথা ঈশ্বর বিশ্বাসকে ব্যবহার করে ও অটুট রেখে, বিভিন্ন সময়ে কিছু নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মানুষে মানুষে ঐক্য স্থাপন করা ও বিভেদ দূর করার বাণী প্রচার করেছেন। কখনো তা নিতান্ত সাময়িক কিছু কাজ করলেও, বিভেদ আদৌ দূর করে নি; তার কারণ, কোন ক্ষেত্রেই আন্তরিকভাবে মানুষকে ধর্ম ও ঈশ্বরের উপরে স্থান দেওয়া হয়নি এবং সব ক্ষেত্রেই ধৰ্মীয় গোষ্ঠীগত স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে তার নিজস্ব বিশেষ কিছু আচার-অনুষ্ঠান।
যাঁরা মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন, তাঁরাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষের বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসকে উৎসাহিত করে চলেন। ‘সর্বধর্ম সমন্বয়’ বা ‘প্রকৃত ধর্মাচরণ করা’র মত কথাবার্তায় তো সরাসরি ভাবেই তা করা হয়।
জোর করে কাউকে ধর্মবিশ্বাসী বা ধর্মপ্রাণ যেমন করা যায় না, তেমনি নাস্তিক বা নিরীশ্বরবাদীও বানানো যায় না। কিন্তু কি অতীতে, কি সম্প্রতি,এমন কাজ করা হয়েছে। একদা অতীতে, মানুষ নিজের অজ্ঞতা ও অসহায়তার কারণে এবং নিজের দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব প্রয়োজন মেটাতে (অন্তত যাকে সে মনে করেছে প্রয়োজন মেটানো), ঈশ্বর, আত্মা, ধর্ম ও ধর্মানুষ্ঠান, গোষ্ঠীগত ধর্মীয় তথা সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র ইত্যাদির জন্ম দিয়েছে। পরে এক সময় সমাজে শ্রেণীবিভাজনের ফলে শাসকগোষ্ঠী ধৰ্ম-কে ব্যবহার করেছে ব্যাপক মানুষকে শাসন করার কাজে (বর্তমানের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারও মিয়ার পাতাদের ব্যবস্থত। হচ্ছে ধর্মবিশ্বাসকে বিপুল সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও মানসিকতার অঙ্গ করে তোলা হয়েছে। শাসক গোষ্ঠী নিজ স্বার্থের অনুকূল ধর্ম-কে প্রচারের উদ্যোগ যেমন নিয়েছে, তেমনি মানুষের মধ্যে তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ ও বিক্ষোভকে দমনও করেছে। অন্যদিকে,মানুষকে জোর করে ধর্মবিশ্বাস থেকে মুক্ত করার, সরল ধর্মবিশ্বাসীদের অপমান ও হতমান করার মানসিকতাও লক্ষ্য করা গেছে।
মানুষ কেমনভাবে ধর্মের জন্ম দিয়েছে, কেমনভাবে শাসকগোষ্ঠী তাকে ব্যবহার করেছে, কেনই বা বিপুল সংখ্যক মানুষ ধর্মে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করতে বাধ্য হন—এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক সত্যকে ব্যাপকভাবে মানুষের সামনে নানা মাধ্যমে তুলে ধরা দরকার। এ কাজ না করে, শুধু ধর্মের দিকটি তুলে ধরা যেমন মানব জাতির স্বার্থবিরোধী, তেমনি বৈজ্ঞানিক সত্যকে তুলে ধরার নাম করে ধর্মের পথ জোর করে অবরুদ্ধ করাটাও মানুষের জ্ঞান ও সভ্যতার ইতিহাসকে অস্বীকার করার সামিল।
অন্ধভাবে তথাকথিত ঐতিহ্যের অনুসরণ নয়, মুক্তমনে সত্যের সন্ধানই কাম্য। আর এই প্রচেষ্টারই একটি সীমিত বহিঃপ্রকাশ এই বইটি। এটি গবেষণা গ্রন্থ নয়, স্বয়ংসম্পূর্ণও নয়, আমার যোগ্যতাও সন্দেহাতীত নয়। তবু এই প্রাথমিক সংক্ষিপ্ত প্রয়াসটি যদি সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকাও পালন করতে পারে, তবে সার্থকতা। অবশ্যই এর সীমাবদ্ধতা পূরণ হবে আরো অনেকের অংশগ্রহণে। তাই যুক্তিহীন, আবেগচালিত অন্ধ বিরোধিতা নয়, গঠনমূলক সমালোচনা শ্রদ্ধেয় পাঠকদের কাছ থেকে আশা করা হচ্ছে।
‘ধর্ম নয় সনাতন, ঐশ্বরিক কিছু শিরোনামায় ‘উৎস মানুষ’ (বিডি ৪৯৪, সল্টলেক, কলিকাতা-৬৪) পত্রিকায় ১৯৯০-১১ সালে ধারাবাহিকভাবে যে লেখা প্রকাশিত হয়েছিল, তারই পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত রূপ এই বইটি। তা সত্ত্বেও কিছু ত্রুটি থেকেই গেছে। পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার সময় পত্রিকার সম্পাদকমন্ডলী যে মূল্যবান পরিমার্জনা করেছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন তার জন্য আমি এঁদের কাছে কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে ডঃ অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীতরুণ বসুর কাছে। এছাড়া লেখাগুলি পড়ে পত্রিকার বেশ কিছু পাঠকও পরামর্শ ও উৎসাহ দিয়েছেন। এঁদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। এঁদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় ডাঃ সুজিত কুমার দাস, শ্রীসত্য মিত্র ও সুফী আব্দুল আন্নায-এর পরিবেশিত কিছু তথ্যও এই বইটিতে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া তথ্য সংগ্রহ ও অন্যান্য নানা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতার জন্য ডাঃ আরতি সাহু(চট্টোপাধ্যায়), ডঃ ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়, শ্রীসুধাংশু শেখর চট্টোপাধ্যায়, আকবর আলি, তানিয়া দে, অধ্যাপক কমলেশ লাহিড়ি ও শ্রীমতী সুনন্দা লাহিড়ি প্রমুখের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। এবং কৃতজ্ঞ ‘প্রবাহ’-এর তরুণ প্রকাশক শ্রীরাখাল বেরা-র কাছে, যিনি এ ধরনের বই প্রকাশ করার দিকে উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
ধর্ম প্রসঙ্গে অন্ধ ও যুক্তিহীন আবেগ নয়,—–বিজ্ঞানমনস্ক, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন ও আসছেন। তাঁদের হাতে হাত মিলিয়ে এই বইটি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকশিত করার কাজে কিছুটা সাহায্য করলেও পরিশ্রমের সার্থকতা।
ডাঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু
১লা জানুয়ারী, ১৯৯২
দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকা
কিছু সংযোজন ও সংশোধন করে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করা হল। পরিসংখ্যানগুলিকেও সাম্প্রতিক করার চেষ্টা হয়েছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা, আজকাল, কলেজ স্ট্রীট, সানন্দা ইত্যাদি বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বইটির প্রথম সংস্করণের সমালোচনা তথা পুস্তক পরিচিতি বেরিয়েছে। এই সব গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ব্যক্তিগত ভাবে আমার, ও সাধারণভাবে এ ধরনের মানসিকতার সবার পক্ষ থেকে তাঁরা ধন্যবাদার্হ। তবে আনন্দবাজার পত্রিকার পুস্তক পরিচিতির ক্ষেত্রে কিছু মজার ব্যাপার ঘটেছে। ঘটনাচক্রে এই পত্রিকায় দু’বার পরিচিতি প্রকাশিত হয়েছে। মজাটি ঘটেছে দ্বিতীয়বারে–৩০শে জানুয়ারী, ১৯৯৪ তারিখে যেটি প্রকাশিত হয়েছিল। সমালোচক যথাসম্ভব বইটি খুলেও দেখার সময় পান নি। তাঁর নিজের ব্যক্তিগত ও অপ্রাসঙ্গিক কিছু ধারণা দিয়ে জায়গা ভরিয়েছেন। বইটি সম্পর্কে একটি লাইনও নেই।
যাই হোক, ধর্ম নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সহ নানা দেশেই মৌলবাদী নোংরামী চলছে। এই আবর্জনা দূর করার ক্ষেত্রে এবং ধর্মপরিচয়মুক্ত মনুষ্যত্বে নিজেদের আলোকিত করার জন্য ধর্ম প্রসঙ্গে মোহমুক্ত, ইতিহাস-সম্মত তথ্যাবলী জানা দরকার। এক্ষেত্রে এই বইটি অন্তত যৎসামান্য ভূমিকাও রাখতে পারছে বলেই বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংস্করণটিও এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারবে আশা করা যায়।
ডাঃ ভবানীপ্রসাদ সাহু
১লা জানুয়ারী, ১৯৯৪
.
“…ইতিহাসে ইহা দেখা গিয়াছে যে, একদিন যে ধর্মসম্প্রদায় দেশের বিদ্যাকে পালন করিয়া আসিয়াছে, পরে তাহারাই সে বিদ্যাকে বাধা দিবার সর্বপ্রধান হেতু হইয়া উঠিল। কারণ বিদ্যা যতই বাড়িয়া উঠিতে থাকে ততই সে প্রচলিত ধর্মশাস্ত্রের সনাতন সীমাকে চারি দিকেই অতিক্রম করিতে উদ্যত হয়। শুধু যে বিশ্বতত্ত্ব ও ইতিহাস সম্বন্ধেই সে ধর্মশাস্ত্রের বেড়া ভাঙ্গিতে বসে তাহা নহে, মানুষের চরিত্রনীতিগত নূতন উপলব্ধির সঙ্গে প্রাচীনশাস্ত্রানুশাসনের আগাগোড়া মিল থাকে না।
“এমন অবস্থায় হয় ধর্মশাস্ত্রকে নিজের ভ্রান্তি কবুল করিতে হয়, নয় বিদ্রোহী বিদ্যা স্বাতন্ত্র্য অবলম্বন করে; উভয়ের এক অন্নে থাকা আর সম্ভবপর হয় না।
“কিন্তু ধর্মশাস্ত্র যদি স্বীকার করে যে, কোনো অংশে তাহার জ্ঞান অসম্পূর্ণ ও ভ্রান্ত তবে তাহার প্রতিষ্ঠাই চলিয়া যায়। কারণ, সে বিশুদ্ধ দৈববাণী, এবং তাহার সমস্ত দলিল ও পরোয়ানার উপর স্বয়ং সর্বজ্ঞ দেবতার সীল মোহরের স্বাক্ষর আছে— এই বলিয়াই সে আপন আসন পাকা করিয়া আসিয়াছে।…”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ধর্মশিক্ষা; সঞ্চয়)
.
প্রধান সাহায্যকারী সূত্র
১। Encyclopaedia Britannica, 15th Edition, 1981, USA.
২। Encyclopaedia Book of the Year, 1987—1993.
৩। The Culture & Civilisation of Ancient India in Historical Outline; D.D. Kosambi, 1981
৪ History of Religion, Sergei Tokarev, 1989
৫। A History of India (Vol. 1 ) Romila Thapar, 1966 এবং কৃষ্ণা গুপ্ত অনূদিত,–ভারতবর্ষের ইতিহাস, রোমিলা থাপার, ১৯৮৮
৬। Science & Society in Ancient India, Debi Prasad Chattopadhyay, 1979
৭। ভারতে বস্তুবাদ প্রসঙ্গে, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, ১৯৮৭
৮। বিজ্ঞানের ইতিহাস (১,২ খণ্ড), সমরেন্দ্রনাথ সেন, ১৯৬২
৯। ভারতীয় জাতিবর্ণ প্রথা, ডঃ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ১৯৮৭
১০। ভারতীয় সমাজ পদ্ধতি (১,২,৩ খণ্ড), ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৮৩-৮৪
১১। কোরআন শরীফ, অধ্যক্ষ আলী হায়দার চৌধুরী অনূদিত (ঢাকা), ১৯৭৮
১২। ইঞ্জিল শরীফ, ভারতের বাইবেল সোসাইটি, ১৯৮০
১৩। নারী : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে, আউগুষ্ট বেবেল, (বাংলা অনুবাদ ১৯৮২)
১৪। প্রাচীন ভারতে শূদ্র, রামশরণ শর্মা, (বাংলা অনুবাদ, ১৯৮৯)
১৫। ভারতীয় ইতিহাসের কালপঞ্জী, কার্ল মার্কস, (বাংলা অনুবাদ, ১৯৭১ )
১৬। Ancient China’s Technology and Culture, Compiled by the Institute of the History of Natural Sciences, Chinese Academy of Science 1983
১৭। Prehistoric Life; Ramona—AnnGale, 1983
১৮। Tell me the Answer: A Children’s Encyclopaedia, 1981
১৯। লৌকিক সংস্কার ও মানব সমাজ, আবদুল হাফিজ (ঢাকা), ১৯৭৫
২০। নৃতত্ত্বের সহজপাঠ, জে এম হোয়াইট (বাংলা অনুবাদ : সামসুদ ইসলাম), (ঢাকা), ১৯৭১
২১। ইতিহাসের আলোকে বৈদিক সাহিত্য, সুকুমারী ভট্টাচার্য, ১৯৯১
অন্যান্য-
১। The Elementary Form of the Religious Life, Emile Durkheim
২। Religion in Primitive Culture; Sir Edward Burnett Tylor
৩। Man and His Works, Melville J. Herskovits
৪। Standard Dictionary of Folklore, Mythology & Culture, ed. Maria Leach
৫। Totem and Taboo, Sigmund Freud
৬। Totemism and Exogamy, J. G. Frazer
৭। Political History of Ancient India, H. C. Raychowdhury
৮। Marxism and Primitive Societies, Emmanuel Terray
৯। The Economic History of Ancient India, Santosh Kumar Das
১০। Human Types, Raymond Firth
১১। The Golden Bough, Sir James George Frazer
১২। Comparative Religion, A.C. Bouquet
১৩। Structure and Function in Primitive Society, A.R. Radcliffe-Brown
১৪। An Introduction to Indian Philosophy, S. Chatterjee and D. Datta
১৫। The Heritage of Persia, R. Fruye
১৬। Se Folklore in the Old Testament, Sir J.G.Frazer
১৭। The Origins of Christianity, A. Robertson
১৮। Muhammad and the Arab Empire, J. Duckworth
১৯। A Survey of Islamic Culture and Institutions, K.D. Bhargava.
২০। The Dhammapada Buddhist Legends, (Oxford University Press)
২১। The Worship of Nature, J.G.Frazer
২২। Monotheism among Primitive Peoples, P. Radin
২৩। The Birth of the Gods: The Origin of Primitive Beliefs, G.E.Swanson
২৪। The Encyclopaedia of Philosophy, (8 Vol.), ed. Paul Edwards
২৫। The Quest: History and Meaning in Religion, Mircea Eliade
২৬। আধুনিক ভারত ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ, বিপানচন্দ্র (বাংলা অনুবাদ : কুনাল চট্টোপাধ্যায়)
২৭। Dialectical Materialism, Maurice Cornforth ইত্যাদি।
Leave a Reply