দ্য মহাভারত কোয়েস্ট : দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট
মূল : ক্রিস্টোফার সি ডয়েল / অনুবাদ : মাসুম আহমেদ আদি
THE MAHABHARATA QUEST The ALEXANDER SECRET By CHRISTOPHER C DOYLE
দ্য মহাভারত কোয়েস্ট : দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট
মূল : ক্রিস্টোফার সি ডয়েল / অনুবাদ : মাসুম আহমেদ আদি
হাতের মাঝে চকচক করে উঠল উজ্জ্বল রত্ন;
চোখ নামালেন কাইজার; পেয়ে গেছেন যা ছিল কাঙ্ক্ষিত
রূপার মত
দৃশ্যমান হয়ে উঠল এ ঝর্না,
যেন পাথরের মধ্যে থেকে প্রবাহিত হচ্ছে এক রুপালি ধারা।
ঝর্না নয়-তার থেকেও বেশি কিছু;
কিংবা এ অগ্নিশিখা-আলোর ঝর্নাধারা।
কেমন দেখায় প্রভাতের তারা?
ভোরের আলোয় যেমন প্রভাতের তারা–
এটাও তেমন।
কেমন দেখায় রাতের ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের কিরণ?
এটাও তেমন।
কারণ চাঁদের চেয়েও বৃহৎ।
CANTO LAXIX-ESKANDAR NAMA
.
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
অসংখ্য ব্যক্তির কাছে ঋণী এই বই; যাদের সাহায্য ছাড়া হয়ত এর কোনো অস্তিত্বই থাকত না। তাই এই লেখার মাধ্যমে তাঁদের সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তার আগে, বছরব্যাপী গবেষণা আর লেখালেখির কারণে আমার দীর্ঘ অনুপস্থিতি মেনে নেবার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি পরী শর্মিলা আর কন্যা শায়নায়াকে। তাদের সমর্থন আর সহযোগিতা ছাড়া কখনোই লিখতে পারতাম
এই বই। প্রথম বইয়ের মত এবারেও, বিশেষ করে পুরাণ আর ইতিহাস নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে শায়নায়া।
ফাইনাল পান্ডুলিপি পড়ে, নিজ লক্ষ্যে অটুট থাকতে মূল্যবান সব মন্তব্য দিয়ে এই বইকে সাহায্য করেছেন আর্তিকা বকশি, আশা মিশিগান এবং আমার স্ত্রী শর্মিলা।
কতজ্ঞ ডব্লিউ এইচ ও রিজিওনাল অফিস ফর সাউথ ইস্ট এশিয়ার ডিপার্টমেন্ট ফর কমিউনিকেবল ডিজিসের ডিরেক্টর ডা. রাজেশ ভাটিয়া কাছে, যিনি অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন থিওরি নিয়ে আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যত্ন সহকারে পড়েছেন পান্ডুলিপি, আর শুধরে দিয়েছেন বিভিন্ন ভুল-ক্রটি। উনার সহযোগিতা পেয়েই নিখুঁত হয়ে উঠেছে বইয়ে তুলে ধরা বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত্র ঘটনা, আলোচনা এবং সাক্ষী প্রমাণ। তবে বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদির সাহায্যে সর্বশেষ ব্যাখ্যা আর অনুমান গঠন করা হলেও, এর মানে এই নয় যে আমার সমস্ত প্রকল্প আর থিওরি সম্পর্কেও উনি একমত পোষণ করেছেন।
মিসেস জ্যোতি ত্রিবেদী এবং মিসেস আশা মিশিগান, সংস্কৃত ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ এই দুজন আমাকে ধৈর্য ধরে ব্যাখ্যা করেছেন প্রকৃত শ্লোক আর শুধরে দিয়েছেন এগুলোর অর্থ।
চমৎকার প্রচ্ছদের নকশা করেছেন আনন্দ প্রকাশ। ফলে জীবন্ত হয়ে উঠেছে পাতার পর পাতা মেলে ধরা গল্প।
অসংখ্য ধন্যবাদ জেরাল্ড নর্ডলী, জ্যাকুলিন শুম্যান, ফিলিস আইরিন র্যাডফোর্ড, কেভিন এন্ড্রু মারফি, ক্রিস্টি মার্কস, প্যাট ম্যাক ইওয়েন, ব্যারিট ফার্থ আর ডেভ ট্রবিজ ও লেখকদের গবেষণা দলের আমার সকল সহকর্মীবৃন্দ, যারা গবেষণার অতীত আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে এর নির্ভুলতা।
বইয়ে ব্যবহৃত মানচিত্র আর লোকেশন সৃষ্টির মাধ্যমে দু’হাজার বছর আগে আলেকজান্ডারের রুট তুলে ধরেছেন মায়াঙ্ক মেহতা। আমার বর্ণনাগুলোকে জীবন দান করেছে প্রিয়াঙ্কার গুপ্তের নিখুঁত চিত্র।
ওয়েস্টল্যান্ডের সবাইকে জানাচ্ছি আ বিগ থ্যাংক, বিশেষ করে গৌতম পদ্মনাভন, যিনি ফাইনাল পাণ্ডুলিপি পড়ে প্লট আর গল্পের জন্য মূল্যবান সব মন্ত ব্য দিয়েছেন। আমার সম্পাদক সংঘমিত্র বিশ্বাস, যিনি আমার লেখাকে ঘষামাজা করে তুলে ধরেছেন এর সত্যিকারের সৌন্দর্য।
গবেষণার কাজে ব্যবহৃত সব বই, ব্লগ, আর্টিকেল আর ভিডিওর কথা লিখতে গেলে হয়ত আরেকটি বই হয়ে যাবে; তবে এর প্রতিটি রেফারেন্সের কাছেই আমি অসম্ভব কৃতজ্ঞ। আমার চিত্রিত কল্পের পেছনকার বিজ্ঞান আর ইতিহাস সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য ছাড়া অসম্ভব হয়ে পড়ত এসব থিওরি; বিভিন্ন প্রমাণ আর গবেষণার কারণেই সহজতর হয়ে গেছে এ কাজ।
অবশেষে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি কাঁধে তুলে নিচ্ছি এই বইয়ের সমস্ত ত্রুটি এবং কাহিনি বর্জনের দায়।
.
মুখবন্ধ
৩১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ
পারস্যের গ্যাবিয়েন, বর্তমান ইরান
জেলখানার তাঁবুতে বিছানায় বসে নিজের দুর্ভাগ্য নিয়ে আক্ষেপ করছেন ইউমিনেস। দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে মৃত্যু। বন্দী হয়েছেন সেই একচোখা অ্যান্টিগোনাসের হাতে, যার বিরুদ্ধে আগেও তরবারি হাতে লড়াই করেছেন। অথচ এবারের শেষ যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়েছেন তিনি। অ্যান্টিগোনাসের অপহরণকৃত ব্যাগেজ ট্রেনের বিনিময়ে এক-চোখা জেনারেলের হাতে তুলে দিয়েছে তারই নিজের প্রাদেশিক শাসনকর্তার দল।
বহুদিনের তিক্ত বৈরিতার সমাপ্তি হিসেবে জনসমক্ষেই ইউমিনেসকে বন্দী করার আনন্দ উৎসব উদযাপন করেছে অ্যান্টিগোনাস। কিন্তু দিন শেষে সূর্যাস্তের পরে আবার একান্তে ইউমিনেসের সাথে দেখা করতেও এসেছে।
আর ঠিক তখনি ইউমিনেস উপলব্ধি করলেন যে বিশাল ইন্দাস ভূমিতে আলেকজান্ডারের আক্রমণের সত্যিকার উদ্দেশ্য জানতে পেরেছে অ্যান্টিগোনাস। আলেকজান্ডার সেখানে কী খুঁজে পেয়েছিলেন তাও তার অজানা নয় আর দু’বছর পরে মহান বিজেতার মৃত্যুর কারণটাও স্পষ্টভাবেই জানে।
বন্ধু এবং সেক্রেটারি হিসেবে প্রথমে আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপের অধীনেই কাজ করেছিলেন ইউমিনেস। তারপর গুপ্তঘাতকের হাতে ফিলিপ মৃত্যুবরণ করার পর হয়ে উঠেন আলেকজান্ডারের চিফ সেক্রেটারি। “কিংস জার্নালস” বা রাজকীয় দিনলিপিতে রাজ্যের প্রতিদিনকার রেকর্ড রাখার দায়িত্ব পালন করেছেন ইউমিনেস। কিন্তু জার্নাল ত্যাগ করার কারণটাই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: আলেকজান্ডারের সত্যিকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষার এক রেকর্ড এবং সেই মহারহস্য যা তাকে দেবতায় পরিণত করেছে।
যোলা বছর আগে, সিয়া মরুদ্যানে জিউস আমোনের মন্দিরে বিজেতার সঙ্গী হয়েছিলেন ইউমিনেস। আলেকজান্ডারকে বলা হয়েছিল যে তিনি জিউস আমোনের পুত্র। তার মানে তিনি নিজেই স্বয়ং একজন দেবতা।
আর তাই নিজের দেবতু প্রচারে একটুও সময় নষ্ট না করে পশ্চিম দিকে সিন্ধু নদীমুখে ছোটেন আলেকজান্ডার; যা তাকে সত্যিকার অর্থেই দেবতা বানিয়ে তুলবে। সেই মহারহস্য সম্পর্কে যত কাহিনি শুনেছেন সেসব থেকেই সঞ্চয় করেছেন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য একগুয়ে জেদ; এমনকি সৈন্যদের ঘরে ফেরার আকুতিতেও কান দেননি তিনি।
দেবতাদের রহস্য লুকিয়ে রাখা সেই ভূগর্ভস্থ গুহার বাইরে আলেকজান্ডারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউমিনেস। কিন্তু ভেতরে আলেকজান্ডার একাই গেছেন। বের হয়ে আসার পর দেখা গেল জয়ের গৌরবে জ্বলজ্বল করছে তার চেহারা। যা খুঁজতে এসেছিলেন, পেয়েছেন।
গোপন এই অভিযানের সফলতার প্রমাণ হিসেবে ঘরে ফেরার পথে দখল করেছেন মালিজ। আক্রমণের পুরোভাগে ছিলেন আলেকজান্ডার নিজে, দেয়াল বেয়ে উঠার সময় মই ভেঙে পড়ে যান দস্যুদের মাঝে। ফলে সৈন্যদের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু তার দ্বীপ্তিময় মুখমন্ডল আর দেহবর্মের উজ্জ্বলতা দেখে প্রথম দিকে ভয় পেয়ে পালিয়ে যায় দস্যুর দল; ভেবেছিল বুঝি স্বয়ং এক দেবতাই নেমে এসেছেন তাদের মাঝে! তবে পরক্ষণেই দ্বিধা সামলে উদ্ধত অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসে। আলেকজান্ডারের দুপাশে ছিল দুই গার্ড। পাজরে গেঁথে যাওয়া তীরের আঘাত সত্ত্বেও মেসিডোনিয়ানরা এসে তাঁকে উদ্ধারের আগ পর্যন্ত বীরের মতই লড়াই করেছেন।
কিন্তু ভাঙ্গা তীর বের করে আনার অস্ত্রোপাচারের সময় ক্যাম্প জুড়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে রাজা মৃত্যুবরণ করেছেন। নৌকার উপর তার কেবিনের বাইরে দিনের পর দিন উদ্বিগ্ন মুখে অপেক্ষা করেছেন ইউমিনেস। অবশেষে দুর্বলতা সত্ত্বেও ডেকের উপর বেরিয়ে এলেন জীবিত আলেকজান্ডার। ইউমিনেসের কানেও পৌঁছে গেল আলেকজান্ডারকে সারিয়ে তোলা সেই মিরাকলের ফিসফিসানি।
আঘাতটা অত্যন্ত মারাত্মক হওয়াতে প্রচুর রক্তক্ষরণও হয়েছে। চিকিৎসকেরাও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। দেহের ভেতরকার ক্ষতের নিরাময় কিংবা রক্তক্ষরণের বিরুদ্ধেও কিছু করার ছিল না।
কিন্তু সবাই যখন অসহায়ের মত বসে বসে মৃত্যুর দিন গুনছিল, সেই সময়ে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলেন আলেকজান্ডার। অত্যন্ত ধীরে হলেও শুকাতে লাগল ক্ষত। তার আরোগ্য লাভ দেখে চিকিৎসকেরাও এবার তৎপর হয়ে উঠল। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই পুরোপুরি সেরে উঠলেন রাজা। শুকিয়ে গেল ক্ষত এবং শারীরিক কষ্ট সত্ত্বেও দেখা দিলেন প্রজাদের সামনে।
রটনাগুলোকে যে কী বলা যায় তা ভেবে পেলেন না ইউমিনেস। কিন্তু সেদিন, বাকি সেনাবাহিনির মত নিজেও বিশ্বাস করে বসলেন যে আলেকজান্ডার সত্যিই একজন দেবতা। অমর, অবিনশ্বর। মানুষের জ্ঞাত কোনো অস্ত্রই তার কোনোরকম ক্ষতি করতে পারবে না। আর এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে দেবতাদের গুহার ভূমিকার কথাও জানতেন ইউমিনেস।
গুহাতে যে মহারহস্যই থাকুক না কেন, একাকি সে রাতে গুহার মাঝে আলেকজান্ডার যাই করে থাকুন না কেন এর প্রভাবেই ব্যাবিলনের শেষ দিনগুলোয় জ্বরে আচ্ছন্ন, অসম্ভব তৃষ্ণার্ত আলেকজান্ডার কথা বলার সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন। পূর্ণ হল আলেকজান্ডারের দেবতা হবার উচ্চাকাঙ্ক্ষা; কিন্তু বিনিময়ে দিতে হল জীবন।
ইউমিনেস এও জানেন যে এই রহস্যের কল্যাণেই ছয় দিন পার হয়ে গেলেও একটুও পচন ধরেনি আলেকজান্ডারের মৃতদেহে; এতটাই শ্বেতশুভ্র আর তরতাজা ছিল মনে হচ্ছিল যেন জীবিত আলেকজান্ডার ঘুমাচ্ছেন।
আর এখন তিনি নিজে বন্দী হয়ে আছেন আলেকজান্ডারের এক জেনারেলের হাতে। জানেন তাকে বাঁচতে দেয়া হবেনা।
সান্ত্বনা শুধু এটুকুই যে, সুরক্ষিত আছে আলেকজান্ডারের গোপণ রহস্য। ইউমিনেস অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে ক্যালিসথিনসের বই ‘ডিডস অব আলেকজান্ডার থেকে সবকিছু রেকর্ড করেছিলেন। কিন্তু এর পর পরই অফিশিয়াল জার্নাল থেকে এই বইয়ের সমস্ত অংশ সরিয়ে ফেলেছেন। যেখানে আলেকজান্ডারের হাতে মৃত্যুবরণের মাত্র কয়েকদিন আগেই উনার হয়ে সগডিয়ানের ভূমিতে এক গোপন মিশনের কথা লিখে গেছেন ইতিহাসবিদ ক্যালিসথিনস। এর পরিবর্তে ইউমিনেস নিজের গোপন জার্নালে আলেকজান্ডারের সাথে তার অভিজ্ঞতা আর ক্যালিসথিনসের মিশনের কথা লিখে লুকিয়ে রেখেছেন নিজের তাবুতে।
তাছাড়া অ্যান্টিগোনাসের সাথে যুদ্ধের আগেই ধ্বংস করে ফেলেছেন সমস্ত কাগজপত্র আর দলিল-দস্তাবেজ। “একপাল বন্য পশু” নামে নিন্দা করেছেন নিজ শাসনকর্তাদের দলকে। সিক্রেট জার্নালটাও এক বিশ্বস্ত দূতের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে ক্যাসান্ডারের হাত থেকে মেসিডোনিয়ান সিংহাসন বাঁচাতে ব্যস্ত আলেকজান্ডারের মাতা অলিম্পিয়াসের কাছে।
অ্যান্টিগোনাস তাই কিছুই পায়নি।
তৃপ্তির শ্বাস ফেললেন ইউমিনেস। যথাসাধ্য পালন করেছেন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের প্রতি নিজ দায়িত্ব। অ্যান্টিগোনাস, টলেমি, ক্যাসাভার- আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য নিয়ে বিবাদে রত কেউই ইন্দাস ভূমির সেই মহারহস্য কখনোই জানতে পারবে না।
তেমনি জানতে পারবেনা বাকি দুনিয়া।
.
৩৯১ খ্রিস্টাব্দ
এক রহস্যের সমাধি
নির্জন গ্রামের রাস্তায় হেলেদুলে চলছে একটা খালি ওয়াগন। আধ ভাঙ্গা চাঁদের অস্পষ্ট আলোয় ফুটে উঠেছে ভ্রমণক্লান্তি। ঘোড়াটাও এমন দুলকি চালে এগোচ্ছে, যেন জেনেই গেছে যে শেষ হয়েছে মিশন। তাড়াহুড়া করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ মাত্র তিনদিন আগেও বহু মূল্যবান এক সম্পদ বহন করেছে এই ওয়াগন। অত্যন্ত দামি সেই জিনিসটাকেই গত ৫০০ বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজছে পৃথিবী।
নিরাপত্তার অভাব দেখা দিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে উদয় হওয়া এক নব ধর্ম খুব দ্রুত চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। খ্রিস্ট নামে একজন মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর উপর ভিত্তি করে মিশন অব্দি পৌঁছে গেছে, যেখানে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে লুকিয়ে আছে সেই পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। নব ধর্মমতাবলম্বীরা, যারা নেতাকে মনে করে ঈশ্বরের পুত্র আর তারই নামানুসারে নিজেদেরকে খ্রিস্টান নামে ডাকে তারা এবার পুরাতন দেবতাদের সম্পর্কে প্রশ্ন শুরু করেছে। ভেঙে ফেলছে মূর্তি, নষ্ট করছে প্রতিচিত্র আর ধ্বংস করে ফেলছে সব মন্দির।
আলেকজান্দ্রিয়ার সেই পবিত্র স্থানেও যেকোনো মুহূর্তে পৌঁছে যাবে এই ঢেউ, যেখানে গত পাঁচ শতক ধরে লুকিয়ে রাখা হয়েছে উপাসনার বস্তু।
তবে যেকোনো মূল্যেই একে রক্ষা করতে হবে। অর্ডার’ (গুপ্তসভা) নিজে থেকেই কাঁধে তুলে নিয়েছে এই দায়িত্ব। আলেকজান্দ্রিয়ার আদি বাসস্থান ছেড়ে, বর্তমানে খালি ওয়াগনের সমস্ত কিছুই অর্ডারের চিহ্ন সম্বলিত নৌকা, জাহাজ, গরুর গাড়ি আর ওয়াগনে ভরে বিভিন্ন নদী আর সমুদ্র পার করে রেখে আসা হয়েছে।
অর্ডারের সেই চিহ্নটা হলো, ঠিক যেন ছোবল মারার জন্য ফণা তুলেছে পাঁচ মাথাঅলা একটা সাপ।
যাত্রাপথে সম্পদের উপর থেকে কৌতূহলী চোখগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এই চিহ্ন। সবাই আসলে একে ভয় পায়। অত্যন্ত গোপনীয় এই অর্ডার সম্পর্কে কেউই কিছু জানে না, এর উৎপত্তি কিংবা সদস্য সম্পর্কেও কারো কোনো ধারণা নেই-তবে এর কাজকর্ম কারো অজানা নয়।
অবশেষে দায়িত্ব সম্পন্ন করে খালি ওয়াগন নিয়ে মরুভূমির দিকে ফিরে যাচ্ছে এর ড্রাইভার কারমাল। তবে শেষ আরেকবারের জন্য থামতে হবে।
নিস্তব্ধ একটা গ্রামের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে ওয়াগন। ঘুমে অচেতন পুরো গ্রাম। আবার ওয়াগনের পাশে আঁকা সর্প চিহ্নের জন্যও এমনটা হওয়া অসম্ভব কিছু না।
এবার বিশাল একটা বাড়ির সীমানা প্রাচীরের কাছে এসে খোলা গেইট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল ওয়াগন; যেন কারমালের আগমনের জন্যই অপেক্ষা করছিল। ড্রাইভওয়ের একেবারে শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে আছে ইট আর পাথরের তৈরি বহুতল একটা কাঠামো।
সদর দরজার সামনে ওয়াগন থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল কারমাল। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না। খুলে গেল দরজা। দেখা দিল ক্লোক (আলখেল্লা) পরিহিত, মাথা ঢাকা, লম্বা এক লোক।
“কাজ সমাধা হয়েছে?” ভারী স্বরে জানতে চাইলেন মাথা ঢাকা আগন্তুক।
মাথা নাড়ল কারমাল। দীর্ঘ এই ভ্রমণে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
“গুড। এখন কী করতে হবে তাও নিশ্চয় জানো।” চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়ালেন আগন্তুক।
“একটু দাঁড়ান” হাত বাড়িয়ে দিল কারমাল।
অবাক হয়ে তাকালেন ঘোমটা টানা লোকটা, “কী হয়েছে?”
“এটা রাখুন।” লোকটার হাতে কিছু একটা দিয়েই ওয়াগনে ফিরে গেল কারমাল। আরেকটা কাজ বাকি আছে এখনো।
গেইট দিয়ে ওয়াগন অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত কারমালের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন লম্বা আগন্তুক। শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন কামালের দেয়া ধাতব জিনিসটা। ত্রস্তপায়ে বাসায় ঢুকে ফেলে দিলেন মাথার কাপড়। দেখা গেল কোটরে বসা চোখ আর পাতলা ঠোঁটের এক কৃশকায় মুখাবয়ব।
মুঠো খুলে হাতের তালুয় ধরা ছোট্ট তামার ক্যাপসুলটার দিকে তাকালেন। তারপর আবার হাত মুঠো করে একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে চলে এলেন দোতলার গবেষণা কক্ষে।
দরজা আটকে ধপ করে ডেস্কে বসতেই মুখখানা ফ্যাকাসে হয়ে কাঁপতে লাগল আঙুল।
বোকা কারমালটা করেছে কী?
জানেন যে কারমাল অর্ডারের বাইরে কিছু করবে না। আরো কয়েক মাইল বিশ্বস্তভাবে ওয়াগন চালিয়ে গিয়ে মরুভূমির মাঝে ঘোড়াকে ছেড়ে দিয়ে কেটে ফেলবে নিজের গলা। কারণ রেলিকের (পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন) অবস্থান কাউকেই জানানো যাবে না। অর্ডারের আদেশ হল চিরতরে লোকচক্ষুর অন্তরালে লুকিয়ে ফেলতে হবে এই রেলিক।
ছুরি দিয়ে খুব সাবধানে ক্যাপসুলের একপ্রান্তের ক্যাপটা আলগা করতেই ডেস্কের উপর গড়িয়ে পড়ল পাতলা একটা ভেড়ার চামড়ার টুকরো। গুঙ্গিয়ে উঠলেন কৃশকায় লোকটা। না দেখেই বলে দিতে পারবেন এটা একটা ম্যাপ।
খুব দ্রুত আবার ভাজ করে আমার ক্যাপসুলের ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে দিলেন। অর্ডারকে এই ম্যাপের অস্তিত্ব সম্পর্কে কখনোই জানানো যাবে না। চিরতরে লুকিয়ে ফেলা সেই সিক্রেট লোকেশনের একমাত্র সূত্র হল এই ম্যাপ।
একবার ভাবলেন একেবারে ধ্বংস করে ফেলবেন। তারপর কী মনে হতেই নিজেকে থামালেন। একমাত্র উনিই জানেন এর অস্তিত্ব। তাই ভবিষ্যতে অর্ডারের সাথে কোনো ঝামেলা হলে হয়ত এ ম্যাগকে কাজে লাগানো যাবে।
তবে খুব সাবধানে আর চতুরতার সাথে লুকিয়ে রাখতে হবে, যেন তিনি ছাড়া আর কেউ না জানে এবং তাঁর মৃত্যুর পরেও কেউ খুঁজে না পায়।
ভালোভাবেই জানেন কোথায় লুকাতে হবে এই ক্যাপসুল।
.
জুন, ১৯৯০
সেন্ট জেমস কলেজ, ফিলাডেলফিয়া, ইউ এস এ
দাঁতে দাঁত চেপে ফটোকপিয়ার মেশিনটাকে আরো দ্রুত কাজ করার জন্য মনে মনে তাগাদা দিলেন মাইক অ্যাশফোর্ড। একেবারে লেটেস্ট মডেলের ব্র্যান্ড নিউ মেশিনটা প্লেইন পেপার ব্যবহার করেই ফটোকপি করতে পারে। কিন্তু তারপরেও তিনি যতটা চাইছেন কাজ ততটা আগাচ্ছে না।
দু-ঘন্টা আগের ফোন কলটার কথা মনে পড়তেই কপালের ভ্রু বেয়ে গড়িয়ে নামল ঘাম।
“মাইক অ্যাশফোর্ড?” জানতে চাইল অপর প্রান্তের লোকটা।
“ইয়েস। হু ইজ দেয়ার?”
“নেভার মাইন্ড, সেটা তেমন জরুরি না। তবে এখন যা বলব মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনার কাছে এমন কিছু জিনিস আছে যা আমার দরকার। গতকাল যে জিনিসটা আবিষ্কার করেছেন, সেই প্যাপিরাস ডকুমেন্টস।”
দ্বিধায় পড়ে গেলেন অ্যাশফোর্ড। ক্ল্যাসিকস ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি ছাড়া লাইব্রেরির বেজমেন্টের একটা বাক্সে পাওয়া প্যাপিরাস জার্নালের কথা তো আর কাউকে বলেননি। তবে কি ডিপার্টমেন্টের কেউ খবরটা চাউর করে দিয়েছে? এমনটাও তো হবার কথা নয়। তাহলে কিভাবে জানে এই অজানা কণ্ঠ?
“কোন ডকুমেন্টস?” লোকটাকে পরীক্ষা করতে চাইলেন মাইক।
কঠিন হয়ে গেল ওপাশের কলার, “আমার সাথে চালাকি করার চেষ্টা করবেন অ্যাশফোর্ড। একটা ঠিকানা দিচ্ছি, সেখানে ডকুমেন্টসগুলো পাঠিয়ে দেবেন। মুখবদ্ধ খামে করে জার্নাল পাঠাবেন, প্যাপিরাসগুলো যেন ছিঁড়ে না যায়। যদি এগুলোর কন্ডিশন ভালোও হয় তারপরেও এভাবেই পাঠাবেন।” গড়গড় করে ফিলাডেলফিয়ার ডাউন টাউনের একটা অ্যাড্রেস বলে গেল লোকটা।
পাথরের মত জমে গেলেন অ্যাশফোর্ড। জার্নাল সম্পর্কে সবকিছুই জানে লোকটা। এমনকি প্যাপিরাসের কন্ডিশনও!
“আর যদি আমি তা না করি?” পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন মাইক, “এই জার্নালগুলো কলেজের সম্পত্তি। লাইব্রেরিয়ান হিসেবে আমার দায়িত্ব হল এগুলোকে সুরক্ষিত রাখা। ফোন পেয়ে যার তার কাছে বিলিয়ে বেড়ানো নয়।”
অধৈর্য হয়ে উঠলেন কলার, “ফাইন। আপনাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু সেটা আপনি গ্রহণ করেননি। ঠিক আছে।”
হঠাৎ করেই কেটে গেল ফোন। অ্যাশফোর্ডের কানে গুনগুন করে উঠল এনগেজ টোন।
এর পয়তাল্লিশ মিনিট পরে ভয়াবহ সেই নিউজটা না পেলে এটাকে একটা ভূতুড়ে কল হিসেবেই বাতিল করে দিতেন। নিজ বাড়ির সামনের রাস্তা ক্রস করতে গিয়ে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়েছেন ক্লাসিক ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি মেম্বার কার্ল ড্রন। উনাকেই সবার আগে প্যাপিরাস জার্নালের কথা জানিয়েছিলেন মাইক। ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন ড্রন। উধাও হয়ে গেছে ঘাতক গাড়ি, কোনো প্রত্যক্ষদর্শী না থাকায় আর কখনোই এটাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
খবরটা শোনার সাথে সাথেই অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন অ্যাশফোর্ড। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন ড্রন। ধর্মপ্রাণ ক্যাথলিক হিসেবে জেসুইট লিবারেল আর্ট কলেজে ভালই মানিয়ে গেছেন। তাহলে কি সেই অচেনা কলারই ঘটিয়েছে এই অ্যাকসিডেন্ট!! কাকতালীয় বলে তো মনে হচ্ছে না।
একই সাথে মনে পড়ে গেল দুই সপ্তাহ আগে কলেজের ডীন আর ক্ল্যাসিকসের প্রাক্তন প্রফেসর লরেন্স ফুলারের রহস্যময় অন্তর্ধানের কথা। শিকাগো ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের সেমিনার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন ফুলার। কিন্তু হোটেল থেকে চেক আউট করার পরই যেন বাতাসে মিলিয়ে যান। হোটেলের ডোর ম্যান ও বেল বয় তাকে ক্যাবে উঠতে দেখলেও এয়ারপোর্টে পৌঁছাননি তিনি। এমপ্লয়মেন্ট কন্ট্রাক্টের শর্তানুযায়ী তার সমস্ত কাগজপত্র আর জার্নালের কাস্টডি পেয়েছে কলেজ। ক্যাটালগ না করে সাথে সাথে সবকিছু বাক্সে ভরে রেখে দেয়া হয়েছে বেজমেন্টে। জিনিসপত্রের বিস্তারিত বিবরণ লিখতে গিয়ে এরকমই একটা বাক্সে
প্যাপিরাসগুলো খুঁজে পেয়েছেন অ্যাশফোর্ড।
এবার তাহলে কার পালা? জেদি স্বরে কলারের অনুরোধ পায়ে ঠেললেও তিনিই কি এটার পরবর্তী লক্ষ্য?
খুব দ্রুত চিন্তা করে মনস্থির করে ফেললেন অ্যাশফোর্ড। কলারের চেয়েও তিনি এক ধাপ এগিয়ে আছেন। প্যাপিরাসের সাথে যে দুটো জার্নালও পেয়েছেন সে কথা কেউ জানে না। এমনকি ড্রন কিংবা অন্য কাউকেও বলেননি। দুটো জার্নালই ইংরেজিতে লেখা তারমধ্যে একটা আবার প্যাপিরাসের বিষয়বস্তুর অনুবাদ; জার্নালের প্রথম পাতায় যা সবিস্তারে স্বহস্তে লিখে গেছেন ফুলার। অনুবাদটা দেখে অবাক হলেও দ্বিতীয় জার্নালটা দেখে রীতিমত বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অ্যাশফোর্ড। মনে হল মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন।
তিনি যা ভাবছেন এই দুটো জার্নাল মিলে যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে তো এই আবিষ্কার শুধুমাত্র হাজার বছরের পুরাতন কোনো অর্থহীন ডকুমেন্টস নয়।
ঝুঁকির মাঝে পড়তে যাচ্ছে পুরো পৃথিবীর ভবিষ্যৎ!!
একেবারে শেষ কপিটা উগরে দিল ফটোকপি মেশিন। তাড়াহুড়া করে কাগজগুলোকে একত্র করে স্টেপল করে রাখলেন অ্যাশফোর্ড। দুই সেট কপি একসাথে খামে পুরে কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলেন প্রাপকের ঠিকানা। কিছুক্ষণ এমনভাবে তাকিয়ে রইলেন, যেন খতিয়ে দেখছেন নিজের কাজ।
তারপর আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের কলিগকে ডেকে ডাউন টাউনে ফেডেক্সের অফিসে পাঠিয়ে দিতে বললেন প্যাকেজটা। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে গেল প্যাকেজ।
কলিগ প্যাকেটটাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই ধপ করে নিজের চেয়ারে বসে পড়লেন অ্যাশফোর্ড। জার্নালের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞাত শেষতম ব্যক্তিটি যেন তিনিই না হন সেজন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। সাদাসিধে মানুষ হলেও তার দায়িত্ববোধ অত্যন্ত প্রখর। এরকম একটা অবস্থাতেও জার্নালগুলোকে বন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেবার কথা মাথাতেই আসেনি। এগুলো কলেজের সম্পত্তি আর তাই এখানেই থাকবে। ফলে একমাত্র সমাধান হিসেবে ফটোকপি করে পাঠিয়ে দিয়েছেন দূরে।
নিজের ভবিতব্য ভালোভাবেই জানেন অ্যাশফোর্ড। রহস্যময় সেই কলারের গলার স্বর শুনেই বুঝতে পেরেছেন যে, সে বাকবিতন্ডা পছন্দ করে না। নিজেকে বাঁচাবার কোনো ধারণা নেই। পালিয়ে যাবার কথা মাথায় এলেও কোথায় যাবেন? গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এই কলেজই তার জীবন। ১৯৮৩ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে একটা কনফারেন্সে যোগদান ব্যতীত এই পুরো সময়ে একবারও ক্যাম্পাসের বাইরে যাননি। সে সময়েই তার একমাত্র বন্ধু, ভারত থেকে আগত সেই ইতিহাসবিদ প্রাচীন দলিল সংরক্ষণের বিষয়ে কনফারেন্সে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তবে অবাক ব্যাপার হল দুজনে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছেন। এই বন্ধুর কাছেই এইমাত্র ফটোকপিগুলো পাঠিয়েছেন অ্যাশফোর্ড।
যা ঘটবে ঘটুক ভেবে চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা শুরু করলেন। ক্যাথলিক হিসেবে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য এই একটি মাত্র পথই জানা আছে।
তবে একটু পরেই অফিসের দিকে এগিয়ে আসা পদশব্দ শুনে চোখ মেলে তাকালেন। রুমের ভেতরে ঢুকে দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে গেল পাঁচজন লোক। জ্যাকেটের ফুলে উঠা কাঁধ দেখে বুঝতে পারলেন সবাই সশস্ত্র। কেবল মাঝখানের সেই লম্বা লোকটা ছাড়া। কয়লাকালে চোখ জোড়া আর চেহারার গভীর ভাব দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো দার্শনিক চিন্তায় মত্ত। তবে সে-ই যে এই দলের নেতা সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। অ্যাশফোর্ডের ডেস্কে প্যাপিরাসের ডকুমেন্টসগুলো দেখে ধক ধক করে জ্বলে উঠল লোকটার চোখ। “আহ, আমার জন্য তো দেখি একেবারে তৈরি করেই রেখে দিয়েছেন।” মনে হল প্রশংসা করছে কিন্তু চেহারার ব্যঙ্গ ভাবটা কাটলনা। ইশারা করতেই একজন এগিয়ে এসে খুব সাবধানে প্যাপিরাসগুলো তুলে নিয়ে চামড়ার ব্রিফকেসে ঢুকিয়ে ফেলল।
উদ্ধতভাবে তাকিয়ে রইলেন অ্যাশফোর্ড। তুরুপের তাস এখনো তার হাতে। যে জার্নাল দুটো ফটোকপি করেছেন সেগুলো নিরাপদেই ডেস্কের ড্রয়ারে শুয়ে আছে।
“আমার জন্য বোধহয় আপনার কাছে আরো কিছু আছে, তাই না?” জানতে চাইল লিডার।
“মানে? প্যাপিরাস ডকুমেন্টসগুলো তো দিয়েছি।” মনে মনে আশা করছেন নিজের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা ছাড়াই সব শেষ করতে পারবেন। মিথ্যে বলাতে তিনি একেবারেই অভ্যস্ত নন।
“এই ডকুমেন্টসগুলোর সাথে আরো যে দুটো ইংরেজি জার্নাল পেয়েছেন?” তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল লোকটার গলা। “আমাকে তো জানাতেও চান নি, তাই না? ভেবেছেন আমরাও জানি না।”
ঝুলে পড়ল অ্যাশফোর্ডের চোয়াল। ওরা কিভাবে জানে? উনি নিজে তো কাউকে বলেননি।
লিডার মাথা নাড়তেই হাত মুঠো পাকিয়ে এগিয়ে এলে এক সাগরেদ। গুভাটার আঘাতে নাক ভেঙে যাওয়ায়, ব্যথায় চিৎকার করে উঠলেন অ্যাশফোর্ড। মুখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল রক্ত।
“ডেস্ক খুঁজে দেখো।” আদেশ দিল লিডার। দ্রুত হাতে সব ড্রয়ার ঘেটে দেখল তিনজন। একজন জার্নালগুলো পেতেই ব্রিফকেসে ঢোকাবার আগে নেড়ে দেখাল।
সামনে ঝুঁকে একদৃষ্টে অ্যাশফোর্ডের দিকে তাকাল লিডার, “ডকু্যমন্টসগুলো নেয়ার পর আপনাকে খুন করার কথা ছিল; কিন্তু না, আমি সিদ্ধান্ত বদলেছি। আপনি আমাদের সাথে যাবেন। সাথে সাথেই হাওয়া হয়ে যাবেন। ঠিক ফুলার বুড়োটার মত। এখন আর মরণ কামনা করলেও কোনো লাভ হবে না।”
Leave a Reply