দ্য পিকউইক পেপার্স – চার্লস ডিকেন্স
রূপান্তর : কাজী শাহনূর হোসেন
প্রথম প্রকাশ: ১৯৯৮
কিশোর ক্লাসিক
সেবা প্রকাশনী
২৪/৪ কাজী মোতাহার হোসেন সড়ক সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০
ভূমিকা
অমর মি. পিকউইকের সঙ্গে আমাদের প্রথম মোলাকাতের দিনটি হচ্ছে ঐতিহাসিক বারোই যে, আঠারোশো সাতাশ। সেদিন ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অভ ইউনাইটেড পিকউইকিয়ানস’ তাদের মহান নেতা স্যামুয়েল পিকউইক, এসকয়্যার, জি.সি.এম.পি.সি-র (জেনারেল চেয়ারম্যান মেম্বার পিকউইক ক্লাব) ভাষণ শোনার জন্যে মিলিত হলো। সমিতি সেদিন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিল মি. পিকউইকের শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-গরিমা মানবতার কল্যাণে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। এই মর্মে তারা একটি প্রস্তাব পাস করল, সমিতি একটি ভ্রমণ শাখা গঠন করবে। প্রস্তাবটির উত্থাপক একমেবাদ্বিতীয়ম্ মি. স্যামুয়েল পিকউইক। শাখাটির নামকরণ করা হলো ‘দ্য করেসপন্ডিং সোসাইটি অভ দ্য পিকউইক ক্লাব।’ এতে নির্বাচিত হলেন :–স্যামুয়েল পিকউইক, ট্রেসি টাপম্যান, এসকয়্যার, এম.পি.সি. (মেম্বার অভ পিকউইক ক্লাব), অগাসটাস গ্রাস, এসকয়্যার, এম.পি.সি. ও নাথানিয়েল উইঙ্কল, এসকয়্যার, এম.পি.সি। ঠিক হলো সদস্যরা যে যার খরচ বহন করবেন- এবং ঘোষণা দেয়া হলো, এই শর্তে যার যতদিন খুশি কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। বদলে অবশ্য তাঁদেরকে লন্ডনস্থ’ পিকউইক ক্লাবে তাঁদের ভ্রমণ, তদন্ত, পর্যবেক্ষণ ও অভিযানের রিপোর্ট পেশ করতে হবে। বইয়ে উল্লেখিত ঘটনাগুলো তাঁদের সে সব রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তৈরি।
আসুন পাঠক, প্রথমে আমরা মহান নেতা মি. স্যামুয়েল পিকউইকের সঙ্গে পরিচিত হই। অচেনা কেউ হয়তো এই সমিতির সভাপতির টাক মাথা আর গোল চশমা দেখে বিশেষ কিছুই আবিষ্কার করতে পারবে না। কিন্তু যারা তাঁকে চেনে তারা জানে টাকের নিচে কী ক্ষুরধার বুদ্ধিই না অবিরত কাজ করে চলেছে মি. পিকউইকের, এবং ভদ্রলোকের উজ্জ্বল চোখজোড়া সর্বক্ষণ কী দারুণভাবেই না চমকাচ্ছে গোল চশমার আড়ালে! সমস্বরে ‘পিকউইক!’ নামটা বিস্ফোরিত হলো অনুসারীদের কণ্ঠ থেকে, এবং মহাপুরুষটি ধীরে সুস্থে একটি চেয়ারে গিয়ে উঠলেন; তাঁরই হাতে গড়া ক্লাবের সভ্যদের উদ্দেশে নিজস্ব মতামত রাখার জন্যে। আহা, শিল্পীর তুলিতে কী চমৎকারই না ফুটে উঠতে পারত দৃশ্যটা! গোটা দুনিয়ার শ্রদ্ধা-সমীহ লুটোপুটি খাচ্ছে তাঁর পায়ের কাছে, যাঁরা তাঁর সঙ্গে ভ্রমণে বেরিয়ে বিপদের মোকাবেলা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তাঁদের দিকে এবার চাইলেন তিনি। তাঁর ডানধারে বসে রয়েছেন মি. ট্রেসি টাপম্যান- সেই রোমান্টিক টাপম্যান, ছেলে-মানুষের উৎসাহ রয়েছে যাঁর মানবজাতির একটি দুর্বলতার প্রশ্নে- ভালবাসা। বয়স ও উন্নত খাবারের গুণে তাঁর কোমর বেড়ে চলেছে ইঞ্চি ইঞ্চি করে, চিবুক ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে কলারের কাছটা ঢেকে ফেলেছে। কিন্তু তাই বলে টাপম্যানের হৃদয়ের এতটুকু পরিবর্তন হয়েছে কি? না। মহিলাদের ভালবাসা এখনও তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ।
মহান নেতার বাঁ পাশে বসা কবিসুলভ মনের অধিকারী স্নডগ্রাস এবং তাঁর পাশেই বিশিষ্ট খেলোয়াড়ী ব্যক্তিত্ব উইঙ্কল। প্রথমজনের পরনে একটি কাব্যিক নীল রঙা আলখাল্লা এবং দ্বিতীয়জন পরে রয়েছেন শূটিং কোট। এই চারজনের নানা অভিযানেরই বর্ণনা করা হয়েছে বইতে, নিখুঁত সতর্কতায় পিকউইক ক্লাবের রেকর্ড ঘেঁটে তুলে এনে। এঁরা সবাই, তাঁদের নেতার মতে, একটিমাত্র আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ- সেটি হচ্ছে খ্যাতি। স্নড়গ্রাসের চাহিদা কাব্যিক খ্যাতি। উইঙ্কল চান খেলার মাঠে সাফল্য। টাপম্যান জয় করতে চান মহিলাদের হৃদয়। কিন্তু স্যামুয়েল পিকউইক চান অন্যের উপকার করে নিজে পরিতৃপ্ত হতে।
Leave a Reply