দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই – জে ডি স্যালিনজার, অনুবাদ – নুসরৎ নওরিন
জে ডি স্যালিনজার : পুরো নাম জেরোম ডেভিড স্যালিনজার। জন্ম ১৯১৯ সালের ১ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে। বাবা লিথুনিয়ান বংশোদ্ভূত সল স্যালিনজার ছিলেন পনির ও মাংস আমদানিকারক। মা মিরিয়াম স্যালিনজার। বাবা ইহুদি এবং মা ক্রিশ্চিয়ান ৷ ক্যাচার ইন দ্য রাই প্রকাশের আগে স্যালিনজারের লেখা ছোটগল্প, নভেলাগুলো সংকলিত হয়েছে নাইন স্টোরিজ, ফ্র্যানি অ্যান্ড জোয়ি, রেইজ হাই দ্য রুফ বিম, কার্পেন্টার্স অ্যান্ড সিমোর : অ্যান ইন্ট্রোডাকশন ইত্যাদি গ্রন্থে । একমাত্র উপন্যাস দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই স্যালিনজারকে এনে দেয় প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয়তা, যা তাঁর কাছে ছিল চরম অস্বস্তির। ফলে নিউ ইয়র্ক থেকে বহু দূরে নিউ হ্যাম্পশায়ারের কর্নিশে অরণ্যময় এক পাহাড়ের কোলে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান তিনি। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় সেখানেই কাটান ।
নুসরৎ নওরিন : গল্প লেখেন, অনুবাদ করেন। পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে । বর্তমানে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। অনুবাদ করেছেন ওরিয়ানা ফাল্লাচির উপন্যাস লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন (বাতিঘর ২০২১)।
ভূমিকা
জে ডি স্যালিনজারের দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ৩১৯ নম্বর রুমে বসে একদিন বইটা পড়তে শুরু করি। লেখকের নাম আগে শুনিনি। পড়া শুরু করার পর ছোটবেলার মতো একটা জাদুকরি ঘটনা ঘটে । অনেক দিন পর ক্লাস, খাওয়া, গোসল বাদ দিয়ে বইটা পড়তে থাকি। এর আগে হোল্ডেন কলফিল্ডের মতো কোনো চরিত্রের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়নি। অনেকেই হয়তো হোল্ডেনের মতো ভাবে, কিন্তু স্যালিনজার যেভাবে তা লেখায় তুলে এনেছেন সেটা অসাধারণ। ঘোরের মধ্যে পড়া শেষ করে স্যালিনজারের আরও উপন্যাস খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি তাঁর আর কোনো উপন্যাস নেই ।
এটা প্রায় এক যুগ আগের কথা। এত দিন পর সেই মুগ্ধতার কাছে আবার কীভাবে ফিরে গেলাম, তা বলার আগে বইটি সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নেওয়া যাক ।
১৯৫১ সালের ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের লিটল, ব্রাউন অ্যান্ড কোম্পানি থেকে দ্য ক্যাচার ইন দ্য রাই প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পরপর বইটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়, জন্ম দেয় বিতর্কের একটি কিশোর চরিত্রের ভাবনা, ক্ষোভ ও বিচ্ছিন্নতাবোধকে এমন বিশ্বাসযোগ্যভাবে প্রকাশের মুনশিয়ানা দিয়ে স্যালিনজার।
অধ্যায় ১
তুমি কি সত্যিই আমার গল্পটা শুনতে চাও? তাহলে হয়তো শুরুতেই জানতে চাইবে আমি কোথায় জন্মেছি, আমার ফালতু শৈশবটা কেমন কেটেছে, আমার বাবা-মা কী করত—এই সব। এসব ডেভিড কপারফিল্ড মার্কা আবর্জনায় আমার কোনো আগ্রহ নেই। আর তা ছাড়া, আমার বাবা-মা খুবই অভিমানী টাইপের । আমি বলছি না যে তারা খুব অসাধারণ মানুষ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বললে দুজনেরই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। আর আমিও তো আত্মজীবনী বলতে বসিনি। ওসব ফালতু গল্পে আমার মোটেও আগ্রহ নেই ।
আমি শুধু গত ক্রিসমাসের কিছু ঘটনা বলব। উদ্ভট কিছু কাণ্ডকারখানা হয়েছিল আমার সঙ্গে। একদম মাথা নষ্ট করা। ওই সময়ই আমি এই বিশ্রী জায়গায় এলাম। আসতে হলো সবকিছুকে সহজভাবে নেওয়ার জন্য।
এখন যা বলব তার সবই আমি ডিবিকে বলেছি। ডিবি আমার ভাই । হলিউডে আছে। এখান থেকে বেশি দূরে না জায়গাটা। সে প্রতি সপ্তাহে গাড়ি চালিয়ে আমাকে দেখতে আসে। একদম নিয়ম মেনে। আগামী মাসে হয়তো আমাকে নিয়ে যাবে। কিছুদিন আগে সে একটা জাগুয়ার কিনেছে। চার হাজার ডলার দাম। জিনিসটা ঘণ্টায় দুশ মাইল চলে । ডিবির এখন অনেক টাকাপয়সা। আগে অন্য লেখকদের মতোই তার তেমন টাকাপয়সা ছিল না।
ডিবিকে চিনতে পারছ? এখনো না চিনলে বলি, ও একটা মারাত্মক বই লিখেছে। দ্য সিক্রেট গোল্ডফিশ। এর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর গল্পটা এক বাচ্চা আর তার গোল্ডফিশ নিয়ে। বাচ্চাটা কাউকে ওই মাছ দেখতে দেয় না। কারণ, ওটা তার নিজের টাকায় কেনা। মারাত্মক গল্প । ডিবি অবশ্য এখন নিজেকে বেচে দিয়েছে। সিনেমা আমার একেবারে অসহ্য লাগে । আমার সামনে কখনো সিনেমার কথা মুখেও আনবে না।
আমার কাহিনির শুরু যেদিন পেন্সি প্রেপারেটরি ছেড়ে এলাম সেদিন । আমার সর্বশেষ স্কুল। পেনসিলভানিয়ার এগারসটাউনে। হয়তো নাম শুনেছ। কারণ ওরা হাজার হাজার বিজ্ঞাপন দেয়। ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠায় চকচকে একজন লোককে দেখা যায়। লোকটা ঘোড়ায় চড়ে পোলো খেলছে। ছবির নিচে লেখা, ‘সেই ১৮৮৮ সাল থেকে আমরা ছাত্রদের অসাধারণ, বিশুদ্ধ চিন্তার তরুণ হিসেবে গড়ে তুলছি।’ দেখলে তোমার মনে হবে পেন্সির ছাত্ররা সারা জীবন শুধু পোলো খেলে। কিন্তু আমি পেন্সির ত্রিসীমানায় কখনো কোনো ঘোড়া দেখিনি। ওই কথাটা একদম ধাপ্পাবাজি। অন্য কোনো স্কুল থেকে পেন্সি মোটেও আলাদা কিছু না । অসাধারণ, বিশুদ্ধ চিন্তার তরুণ ওখানে কোথায়? বড়জোর দুজন পাওয়া যাবে। দুজনই ওদের কাছে অনেক। খুঁজলে দেখা যাবে ওই দুজনও পেন্সিতে এসে অসাধারণ হয়নি, আগে থেকেই ও রকম ছিল ।
যা বলছিলাম। দিনটা ছিল শনিবার। আমাদের সঙ্গে স্যাক্সন হলের ফুটবল খেলা। আমাদের স্কুলে এটা একটা বিরাট ঘটনা। একেবারে জীবন-মরণ ব্যাপার। তার ওপর বছরের শেষ খেলা। অবস্থা এমন যে পেন্সি হেরে গেলে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা টাইপের কিছু করে ফেলা উচিত। তো, তখন বেলা তিনটা। আমি টমসেন হিলের ওপর দাঁড়িয়ে আছি । যুদ্ধকামানটার পাশে। ওখান থেকে পুরো মাঠ দেখা যায় । এক দল আরেক দলকে কীভাবে তুলোধুনো করছে সব। গ্যালারির ছাউনির জন্য দর্শকদের ভালোমতো দেখতে না পেলেও পেন্সি সমর্থকদের জোরালো চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। অন্যদিকে স্যাক্সন সমর্থকদের চিৎকারে মনে হচ্ছিল কেউ মিনমিন করে কিছু বলার চেষ্টা করছে। তারা ভিজিটিং টিম। তেমন কোনো সমর্থক সঙ্গে আনেনি ।
এসব খেলায় মেয়েদের তেমন দেখা যায় না। কারণ শুধু সিনিয়ররাই
অধ্যায় ২
মি. এবং মিসেস স্পেন্সারের সব আলাদা, ঘরটর সব। দুজনের বয়সই সত্তরের কাছাকাছি। বেশিও হতে পারে। জীবনটাকে যথেষ্ট উপভোগ করেছেন তারা। তবে সেটা খুব সূক্ষ্মদাগে নয়। মোটা দাগে। কথাটা শুনলে মনে হতে পারে আমি ছোটলোকদের মতো চিন্তাভাবনা করি । তবে আমি সে অর্থে বলিনি। আসলে আমি মি. স্পেন্সারকে নিয়ে বেশ চিন্তা করতাম। আর তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হতো লোকটা এখনো বেঁচে আছে কী জন্য! বয়সের ভারে কুঁজো, শরীর বেঁকে গেছে। ক্লাসে ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে গেলেই হাত থেকে চক পড়ে যায়। সামনে থেকে কোনো ছাত্র গিয়ে চকটা তুলে দেয়। ভয়ংকর ব্যাপার । তবু ওনার বিষয়টা ভাবলে বুঝতে পারতে উনি খুব একটা খারাপ জীবন কাটাচ্ছিলেন না ।
এক রোববারের কথা বলি । আমরা কয়েকজন তার বাসায় হট চকলেট খেতে গিয়েছি। তিনি আমাদের একটা ন্যাভাহো কম্বল দেখালেন। কম্বলটা পুরোনো, জরাজীর্ণ। ইয়েলোস্টোন পার্কে এক ইন্ডিয়ানের কাছ থেকে কিনেছেন। মি. স্পেন্সারকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল তিনি অসম্ভব খুশি। এটাই বলতে চেয়েছি। স্পেন্সারের মতো এ রকম যেকোনো থুথুড়ে বুড়োর কথা ধরো । দেখবে তুচ্ছ একটা কম্বল কিনেই তার আনন্দের সীমা নেই ।
স্পেন্সারের রুমের দরজা খোলা। তার পরও ভদ্রতা করে কড়া নাড়লাম। চামড়া মোড়ানো একটা বড় চেয়ারে তিনি বসে ছিলেন। গায়ে ন্যাভাহো কম্বলটা জড়ানো। আমার দিকে তাকিয়ে তিনি চিৎকার করে বললেন, ‘কে? ও, কলফিল্ড? এসো, এসো।’
সব জায়গায় চিৎকার করা তার অভ্যাস। সেটা ক্লাসরুম কিংবা যেখানেই হোক । মাঝেমধ্যে মেজাজ খুব খারাপ হয় ।
তার ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একটা ব্যাপার হলো। ওখানে যাওয়ার জন্য হঠাৎ আমার খুব আফসোস হলো। মি. স্পেন্সারের হাতে মাসিক আটলান্টিক ম্যাগাজিন। সারা ঘরে পিল আর ওষুধ ছড়ানো-ছিটানো 1 সবকিছুতে ভিক্স নোজ ড্রপের গন্ধ। মন খারাপের জন্য এই পরিবেশ যথেষ্ট। তা ছাড়া অসুস্থ মানুষের প্রতি আমার যে খুব দরদ আছে তা না। মি. স্পেন্সারের গায়ে একটা পুরোনো বাথরোব। সেটার অবস্থা শোচনীয়। পুরো পরিবেশকে মিইয়ে দিতে বাথরোবটাই যথেষ্ট। দেখে মনে হয় মি. স্পেন্সারের জন্মই হয়েছে ওটার মধ্যে। তা ছাড়া বাথরোব, পায়জামা পরা বৃদ্ধদের দেখা খুব একটা সুখকর না। তাদের শুকনা, হাড় জিরজিরে বুক বাইরে বেরিয়ে থাকে। সমুদ্রসৈকত থেকে শুরু করে সব জায়গায় এদের দেখা যায় ছিলা মুরগির মতো লোমহীন, ফর্সা পায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বললাম, ‘হ্যালো, স্যার। আপনার চিরকুট পেয়েছি। থ্যাংকস আ লট, স্যার। চিরকুট না দিলেও হতো। আমি এমনিতেই দেখা করতে আসতাম।’
‘বসো।’
বসার জন্য বিছানা ছাড়া আর কিছু নেই । সেখানেই বসলাম । বললাম, ‘আপনার জ্বরের অবস্থা কেমন? ভালো, স্যার?’
‘আমি আছি সেই রকম। শোনো বাবা, ডাক্তারও কিচ্ছু করতে পারবে না,’ এ কথা বলে স্পেন্সার নিজের কথায় নিজেই মজা পেয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলেন। একসময় সেই পাগলের মতো হাসি বন্ধ হলো। বললেন, ‘খেলা দেখতে যাওনি কেন? আমি তো জানতাম বড় খেলাটা আজই ৷
‘হ্যাঁ, আজই । দেখতে গিয়েছিলাম। আসলে ফেন্সিং টিমের সঙ্গে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরলাম তো।’
আমি পাথরের মতো শক্ত বিছানাটায় বসে আছি। দেখি মি. স্পেন্সার বেশ গম্ভীর হয়ে যেতে শুরু করেছেন। আমি জানতাম এ রকম হবে।
অধ্যায় ৩
আমি ভয়ংকর মিথ্যাবাদী। এত বড় মিথ্যাবাদী তুমি জীবনেও দেখোনি । ধরো, আমি ম্যাগাজিন কিনতে দোকানে যাব। তখন যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, ‘কোথায় যাচ্ছ?’ আমি অবশ্যই বলব, ‘অপেরা শুনতে যাচ্ছি।’ খুবই বাজে অভ্যাস । মি. স্পেন্সারকে যখন বললাম, ‘জিমে যাচ্ছি’, তখন আসলে ডাহা মিথ্যে বলেছিলাম । আমি জিমে কখনোই কিছু রাখতাম না ।
আমি থাকতাম পেন্সির নতুন ডরমিটরি, অসেনবার্গার মেমোরিয়াল উইংয়ে। ওখানে সিনিয়র আর জুনিয়ররা একসঙ্গে থাকে। আমি জুনিয়র আর আমার রুমমেট সিনিয়র। আমাদের এই উইংয়ের নাম দেওয়া হয়েছিল এখানকার প্রাক্তন ছাত্র অসেনবার্গারের নামে। কারণ সে স্কুলের পেছনে অনেক টাকা ঢেলেছিল। পেন্সি থেকে বের হওয়ার পর সে ব্যবসা করে প্রচুর পয়সা কামায়। ব্যবসাটা হলো মরা মানুষকে সাজিয়ে-গুছিয়ে কফিন এবং কবরের ব্যবস্থা করা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান এই সব। তার ব্যবসার খুব প্রসার, সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রতি পাঁচ ডলার দিলে সে তোমার বাড়ির সবার কবরের ব্যবস্থা করে দেবে। তোমাকে কিছুই করতে হবে না, শুধু কষ্ট করে মরতে হবে। আর অসেনবার্গারকে দেখলে বুঝবে তার কবর দেওয়ার ব্যবস্থাটা কেমন। আমার ধারণা, ব্যবস্থা একটাই। লাশগুলো বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দেওয়া। যা-ই হোক, অসেনবার্গারের টাকা ঢালার কারণে উইংটা তার নামে করা হয় ।
বছরের প্রথম ফুটবল গেমে অসেনবার্গার ক্যাডিলাকে চড়ে এল । গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে আমাদের তাকে অভিবাদন জানাতে হলো। ট্রেনের স্টিম ইঞ্জিন যেমন আস্তে আস্তে চালু হয়ে গতি বাড়াতে থাকে সেই রকম মৌখিক অভিবাদন। প্রথমে ধীরে ধীরে, তারপর দ্রুত। যা-ই হোক, পরদিন সকালে অসেনবার্গার আমাদের চ্যাপেলে একটা বক্তব্য রাখল। বক্তব্যটা দিতে সে মাত্র ঘণ্টা দশেক সময় নিল। শুরুতেই মান্ধাতার আমলের গোটা পঞ্চাশ কৌতুক বলল। সে বোঝাতে চাচ্ছিল, ‘দেখো, কী স্বতঃস্ফূর্ত, সাবলীল আমি!’ তারপর বলল সে সব রকম বিপদে- আপদে হাঁটু গেড়ে নির্দ্বিধায় ঈশ্বরের সাহায্য চায়। আমাদেরও সব সময় যে অবস্থায় থাকি না কেন ঈশ্বরের সাহায্য চাওয়া উচিত, যিশুকে বন্ধু ভাবা উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। সে নাকি গাড়ি চালাতে চালাতেও যিশুর সঙ্গে কথা বলে । মনে মনে দেখতে পাচ্ছিলাম দুই নম্বর ভণ্ডটা গাড়ি ফার্স্ট গিয়ারে নিতে নিতে বলছে, ‘যিশু, আমাকে লাশ দাও। আরও কয়েকটা লাশ দাও।’
অসেনবার্গার যখন নিজের বিষয়ে বড় বড় কথা বলছে—সে কত দক্ষ, অসাধারণ ইত্যাদি ইত্যাদি—ঠিক তখন একটা দারুণ ঘটনা ঘটল । সামনের সারিতে বসা এডগার মাসালা বিকট শব্দে একটা পাদ দিল। আরেকটু হলে ছাদটা উড়ে যেত। চ্যাপেলের মতো পবিত্র জায়গায় নিঃসন্দেহে নিষ্ঠুর কাজ। তবে ঘটনাটা খুব মজার । কেউ অবশ্য শব্দ করে হাসল না। আর অসেনবার্গার এমন একটা ভাব ধরল যেন কিছুই শুনতে পায়নি। কিন্তু মঞ্চে হেডমাস্টার থার্মারসহ সবাই শুনেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই। থার্মার খুব আহত হলেন। পরদিন আমাদের একাডেমিক বিল্ডিংয়ে আসতে বলা হলো। সেখানে থার্মার যে বক্তব্য দিলেন তার সারমর্ম হলো, যে ছেলে চ্যাপেলের মতো জায়গায় এই ধরনের কাজ করতে পারে সে পেন্সিতে পড়ার অযোগ্য। বক্তব্যের মাঝখানে আমরা মার্সালাকে দিয়ে আরেকটা পাদ দেওয়ানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু মার্সালার সেদিন ঠিক মুড ছিল না। কিছু জিনিসের জন্য মুড লাগে । এই হলো অসেনবার্গার কাহিনি ।
মি. স্পেন্সারের ওখান থেকে সোজা ডর্মে ফিরে গেলাম । সবাই খেলা দেখতে গিয়েছে। রুম হিটার চালানো। চারদিকে আরামদায়ক উষ্ণতা। কোট, টাই, কলারের বোতাম খুলে আমার নতুন হান্টিং হ্যাট মাথায়
Leave a Reply