দাম্পত্যের স্বরূপ – সুকুমারী ভট্টাচার্য
দাম্পত্যের স্বরূপ – সুকুমারী ভট্টাচার্য
দু’টি কথা
বিবাহ বিষয়টি জটিল ও নানা সমস্যাসংকুল। কোনও সিদ্ধান্তই এখানে চূড়ান্ত বা প্রশ্নাতীত নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে বিবাহ— ঐক্যদাম্পত্য— বেশ অর্বাচীন একটি ধাপ। তবু এটি নিয়েই আলোচনা এ কারণে যে, এটি নরনারীর যৌন সম্পর্কের বিবর্তনে ও নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ইতিহাসে সম্ভবত শেষতম ধাপ, যেখানে পৌঁছে নরনারী সমাজস্বীকৃত একটা সম্বন্ধে বহুকাল যাবৎ স্থির আছে। এর কিছু ব্যতিক্রম, যা রক্ষণশীল মানুষের কাছে উন্মার্গগামিতা বা উৎকেন্দ্রিকতা বলে প্রতিভাত হচ্ছে তা নিয়ে গত কয়েক প্রজন্ম ধরে একটা প্রশ্ন তুলেছে— প্রশ্নটা তথাকথিত ‘কেন্দ্রে’র যথার্থ ভূমিকা নিয়ে। মানুষের ইতিহাস কোনও একটি বিন্দুতে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না, নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে এবং সমাজ যুগের প্রয়োজনের অনুকূল বিধান গ্রহণ করে।
বিবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু কিছু সমস্যা, সামাজিক ভাবে কিছু কিছু ব্যতিক্রমী অবস্থিতি, এ যুগ বিবাহকে কী কী নতুন সমস্যার মধ্যে এনে দাঁড় করিয়েছে, এ সব থেকে নিষ্ক্রমণের সম্ভাব্য উপায়ই বা কী, এ সব নিয়েই বর্তমান প্রবন্ধ। বলা ভাল, সমস্যাগুলি জীবন্ত মানুষের জীবনের স্তরে স্তরে সংলগ্ন, তাই কোনও চূড়ান্ত সমাধান নির্দেশ করার ধৃষ্টতা আমার নেই। শুধু কিছু বিশ্লেষণের দ্বারা সমস্যাগুলিকে স্বরূপে বুঝবার চেষ্টা করেছি; বিশ্লেষণই হয়তো বা কিছু আলোকপাত করবে। সব কটি প্রসঙ্গ যেহেতু বহুকাল ধরে বহুধা-আলোচিত, তাই নতুন আলোকসম্পাতের সম্ভাবনা কম। শুধু বিশ্লেষণেরও কিছু নিজস্ব তাৎপর্য আছে, এই বিশ্বাসেই কাজটিতে হাত দেওয়া।
সমাজের রাষ্ট্রনৈতিক ও অর্থনৈতিক পট-পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নরনারীর সম্পর্কে, পরিবারের বিন্যাসেও যে অনিবার্য প্রভাব পড়ে এবং তার ফলে যে গভীর ও ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায় তা অনুধাবন করে গবেষণা করলে আজকের সমাজে বিবাহের পরিবর্তিত রূপটি বোঝা সহজ হবে। সেই শ্রমসাধ্য গবেষণা করবার মতো শিক্ষাগত প্ৰস্তুতি ও পরমায়ুগত অবকাশ আমার নেই, তাই এটা লিখতে গিয়ে বার বার মনে হয়েছে, সামাজিক-নৃতত্ত্ববিদ কোনও পণ্ডিত বা পণ্ডিতবর্গ যদি একক অথবা যৌথ ভাবে এ গবেষণায় প্রবৃত্ত হতেন, তা হলে আমাদের সমাজের ‘বিবাহ’ নামক এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্যক ভাবে বোঝা সহজ হত। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এ অনুরোধ জানিয়ে রেখে নিজের অপূর্ণতা সম্বন্ধে পাঠকের কিছু সহিষ্ণু প্রশ্রয় কামনা করছি।
এই বিষয় নিয়ে ইতিপূর্বে প্রকাশিত লেখাটি ‘গা ঙ চি ল’ থেকে খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশিত আমার প্রবন্ধ সংকলনের জন্য সাধ্যমতো পরিমার্জন করার চেষ্টা করেছি। বিবেচনার ভার পাঠকের।
Alex
Hey