দশ মহাবিদ্যা – সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০২০
রচনাকাল – ফেব্রুয়ারি ২০১৯- আগস্ট ২০১৯
প্রচ্ছদ – আহমদা মরিয়ম চৌধুরী
.
আমমি, কোলে নে বাচ্চাটাকে
.
প্রথম প্রকরণ
প্রবেশক
শীতল অনল, মা গো, সুরভি অনল
ঝ’রে গেলি অতীতের ঘাসের তলায়;
কনকলতার মতো, ফ্যালোপিয় নল
ঝুলে থাকল সিলিংফ্যানে; শোলার গলায়
কালো দাগ— আজরাইলের আংটি যেন, যাহে
স্বয়ংবরে নিলি তুই; ধনুঃ নহে, তুলি
ভেঙে, তোরে নিল তুলি’ অসুর-বিবাহে:—
পিছনে নায়র তোর, সোনার পুত্তলি,
নিদুয়া সায়র হ’য়ে প’ড়ে রৈল পাড়ে!
কারে মারলি, কারে রাখলি – বিষুবীয় পাপ
গ’লে নামল ভিসুভিয় লাভা কার ঘাড়ে,
নিজেকে ছাড়া তো কাউকে করলি না, মা, মাফ?
খুদগর্জি হ’ল না, বল? যে-তোর মাথায়
কন্যা হ’য়ে ধন্যা ছিল মাতার মাতায়?
কালী
১
রব হয় শব্দ আর আল্লাও-তো রব,
রবের বাহিরে তবে কেবল বরফ,
যেরূপ অরব আজি তোমার পরান,
তোমার সুরমার ঘাটে আমার শ্মশান।
তুমি গো সে-বিষ যার পানে সদাশিব
স্থাণু-দশা। বীজ থেকে বাড়ালেন জিব
বাইরে তার। অস্মিতার বাহির ঈশ্বর
যেতে পারলে, যিনি হ’ন নাহি-র ঈশ্বর,
তেজে মেরি ওলস্টোনক্রাফ্ট, জেদে তিনি তুমি,
মা আমার, বোন আমার, প্রিয় মৃত্যুভূমি
স্বর্গাদপি লঘীয়সী মায়া। স্বর্গে বাপ,
বদির জাবেদা খাতা, নেকির হিসাব…
ভিতরে রহুন তারা, তোমার দ্বিতীয়
চেহারার মতো, চাঁদ, তামাম-ইন্দ্ৰিয়।
২
ঈশ্বরের দেহ গড়া ঈশ্বরকণায়,
কণাদ গণনা করে হিগজ আর বোজন,
এন্ট্রপির প্রেক্ষাপটে ফর্মের ওজন
মাপে ব্রহ্মগুপ্ত অস্তি-নাস্তি-মোহানায়।
শূন্যে-কি গজায় কিছু? শূন্য-কি গজায়?
গজানো শূন্যে-কি তবে বস্তু অগজায়?
তেপান্তর যত বড়, পিঁপড়ার প্রেষণ
তারও থেনে লম্বা, যদি পিঁপড়া জেগে যায়।
ঘুমে তিন, জাগরণে এক ডিমেনশন—
ক্যালকুলাস আঁৎকে উঠবে যে-আঁকের আগে
তা পাটীগণিত! শ্যামা, এই পর্যূষণ
শিখায়েছে ইঞ্জিল কোরান আমাদিগে।
ভূমাতে যে-শূন্য, বা যে-শূন্যে জাগে ভূমি
সে-বুদ্বুদ মায়া হ’লে, সে-বুদ্বুদ তুমি।
৩
চোখ- আমরা বদল করেছি পরস্পর।
মুখোমুখি মুগ্ধ-আয়না আমরা পরস্পর।
আমাদের কলবে-আঁকা বাঁকা মরুচাদ,
শুদ্ধ আত্মহত্যা, নবজন্ম পরস্পর।
হটএয়ার বেলুন খালি আমাদের মাথা।
শান্তির চপেটাঘাতে শূলীভূত মাথা।
ধূসর-পদার্থ বয় ওঁম্ শান্তিঃ ওঁম্–
ব্রহ্মতালু-উড়ে-যাওয়া আমাদের মাথা।
গগ আর মাগগ, মেরি শেলির ঈশ্বর,
তিরিশ-পাখি, আত্তরের জঙ্গম ঈশ্বর,
আমাদের মধ্যে হিরাজমাট সময়,
আমরা ট্রিনিটির একটি খসানো ঈশ্বর।
সোফিয়া ও ডেমিয়ার্জ, তারা পুত্র আর মাতা
আরাফাতে জেনা করে পুত্র আর মাতা।
৪
সকাল অ্যালাব্যাস্টার জ’মল, অরমিতা,
সকল ল্যাম্পপোস্টে জ্ব’লে উঠল ‘পাত্রী চাই’,
শকল যা দেখল লোকে, বেশ শরমই তা,
শকুল-মদর-যথা গুখোর বেহায়া।
বনের উদরে আমরা যত-না পিছাই
বোনের আদরে পিছে চ’লে আসে ছায়া,
বানের টানের মতো। তথাচ মিছাই
বেনের ময়ূরপঙ্খি কাটে কালাপানি,
গলুইয়ে গোলেম এক, লিথিজলে নাইয়া,
গলাকাটা মোংলা; চেঙ্গমুড়ির সাপিনি
গলায় পাথর; এক কঠিন মেসায়া
গোলায়াথ লাথি মারে অটুট, নিটোল
শনির বলয়ে, জ্বলে হলুদ ত্ৰিপিণী—
সোনা রুপা নহে, বাপা, এ বেঙ্গা পিতল
৫
দিঘিতে নিজের খোমা দেখো নি, হিজল।
প্রতিমা না, সবই প্রতিবিম্বিত প্রতীক
কোনো মৃত জ্বালামুখে। ডাকো, ‘ইয়া রহিম,
হাঁকো, “কুন!”, মূঢ় মুই, কামেল ফাজেল
নই, তবু যা দেখাও, বোধকরি সঠিক,
যে-মর্ম ধর্মের নয়, কিংবা আলোহীন
আন্ধা-কামানের চোখ, এই অপ্রাঞ্জল
ইনফ্রা-রেড রশ্মি যেথা মেশে, সে-ইজেল
ধ’রে থাকে, হাতে নয়, দাঁতে, এলোহিম…
ঝাপটা মারে, ঝাপসা দেখি, না-বুঝে গতিক
ঝামা ঘ’ষে করি সাফ নফসের বিজল,
যে-দিলে লিলিথ-হাওয়া নাচে হ্যালোয়িন,
জন্মদ্রোহী আমাদের জগৎ গথিক,
আমরা তাও হাবিয়ার হ’ব না ভার্জিল।’
৬
গৌরীর নখের মতো সরু মরুচাঁদ
জ্বলছে কালো মসজিদের মিনার-মাথায়
একা। দূরে আকাশের রাংতার ছাতায়
ফুটল একটা সিলুয়েট- হজরাল আসওয়াদ-
ভুখারি সেরাসেনের খেজুরের খোয়াবে।
সে-তাবৎ মিহিরের ভগ্ন-স্বাস্থ্য-পানে
মুজতাগ-আতার থেকে আলমা আতা-পানে
রেশমে কঙ্কাল ঢেকে ইহকাল খোয়াবে
কাশগড়ের রসদ এসে পৌঁছাল না দেখে
আর্যজাতি— ও সিবেলি, ওগো মহামায়া,
দিবারাতি ঢিমা-আঁচে জ্বলে তব চুলা,
কত ছায়া রান্না হয়, পাকে কত মা’আত্,
আয়াতে আসমান ভরে, ঝরে থেকে-থেকে,
পদনখে প’ড়ে তব আছে যতগুলা।
৭
সাধে-কি তোমাকে রেখে বেলা ব’য়ে যায়,
মায়া, আমি পয়লাবার জেনেই পুরা হা:
বীপ্সার ঈশ্বরকণা, বিদিত ত্রিদিব—
তুতানখামেন আর পাথরের যোনি।
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, সত্যে যথা শিব,
গজায় গজাল-দাঁত রুহুর গুহায়,
নানা ই-চিং বিচিং, নানা কু-সু-রাহা—
রাত জাগা চোখের কালি, চিনি-কম চায়ে।
শব্দের গাবের থেকে অরাবের ধ্বনি
বাজে মাতৃ-গূঢ়ৈষায়; জুগুপ্সার ভার-
-কাঁধে হাঁটে সিন্দাবাদ কুব্জ-অবসাদে,
অনেক মনের নীচে মননের খনি
বাণীতে, বীণাতে উঠে, উধাও আবার।
আছো? কই? আলতামিরা? নাকি আলহাম্বরায়?
৮
আমি-তো তোমাকে চাই। তবু কোনোদিন
চাই না-যে আমার হবা, চিনবাই না বরং,
যেন জমাদার, জিম্মি, যে জিজিয়াধীন,
যাকে তাও ঢেকে রাখে তব শ্লীচরণ—
মশার, মাছির মতো তোমার পরম
শুভ্র বিবসন দেখব পানির, হাওয়ার
লা-মোকামে। যুগলবন্দি বা কোনো লড়ন্ত
হবে না মাইফেলে, ঘগ্গে ওঠাবে মারোয়ার
ধৈবতের ঢেউ আর ষড়ুজের জোয়ার,
আমি খালি সাক্ষী থাকব তোমার অজ্ঞাতে,
হয়তো চুরি পাকড়ে ফেলবে আমার পরওয়ার
দেগার; বেগার- তারও তোমার সাক্ষাতে
হাজিরির, জাহিরির ইজাজত নাই।
তুমি আর আমি আর হামারি তন্হাই।
৯
আমি-তো তোমাকে চাই, যে-তোমাকে তুমি
দ্যাখো নাই আয়না কিংবা রাতের ডায়রিতে,
তোমাকে দেখেছিলেন জালালুদ্দিন রুমি
কোনো শাস্ তাবরিজির রাতুল শায়েরিতে
যবে মেলিলেন নিগাহ্ পহেলা সেহরিতে
মান্নার খবুজে- ইসামসির শরীর
ভুঞ্জিতে, লহুর লগে, শখে― সখারীতে।
তখনও ভাঙে নি ঘুম সর্প-শর্বরীর,
তখনও সে নিরুৎপাত নির্দংষ্ট্র দড়ির,
মুসার জাদুর লাঠি তখনও নির্জীব,
ইয়া-কেও দ্যাখে নাই এশিয় তরির
মাঝিমাল্লা, য়ুরোপা-কে পুরুষের জিব,
তখনও… মিডিয়া, খুকি, যে তোমার জুড়ি,
ফ্রকের কোঁচড়ে ভরছে নক্ষত্রের নুড়ি।
১০
আত্মার আলোয় যাই। চেয়ে দেখি, ওঁম্–
প্রণব-পণব বাজে। শুনে বসি, উম্ম্,
ঢাকাইয়া যেহেতু। আমি বাদায়, জলায়
দুই মিলেনিয়া থেকে কাদার তলায়
যা-আমিষ গজায়েছি, কানকো-ফুলকো-আদি,
স-ব জ্ব’লে-জ্ব’লে উঠছে, খাঁটি সোনাচাঁদি-
আমি-তো আমিশ গো, মা, উনিশ শতক
থেকে উঠে এসে এবে পুড়ে যাইছে ত্বক্।
নাকি, মা, আভিভি তব ফ্যালপিয় নলে
পিছলায় যাইছি, পথিশেষে কোনো হোমানলে
গ’লে পড়তে, কোনো পৈতা বা কোনো পিতার
সৎকারে বা বষট্কারে। মা গো, তুমি তার
মা-ও নাকি? নাকি কন্যা? নাকি গো ব্রাহ্মণী?
আলোর আত্মায় যাই— ওঁম্ নৈরামনি।
১১
চার বছরেরটি তুমি, উপরে ও নীচে
লাঠি-হাতে দু’টি স্যর, মা গো, ওরা কারা?
শোনো, ঊর্ধ্বলোকে ক্রুদ্ধ প্রলয়-নাকাড়া!
আসমান ফাড়িয়া একটা টর্নেডো নামিছে
জমিনের একটা মিঠিফুল ছিঁড়ে নিতে।
রক্ত গড়াতে দেখলে আমরা চাটি জিব;
জিবের জীবন, কালী, তব শিশ্নাজীব
মাদারচোদ পোলারা দাপায় ধরণিতে
বাঁড়াপারা নানা হানা রাঙা-হাতে ল’য়ে—
মিসাইল টপিডো শেল কার্তুজ বুলেট—
বোরকা বা বিকিনি সবেই লটকাইছে টু-লেট,
চল্লিশ বা চার। তুমি কোলের আলোয়
এ-সব শুঁয়াপোকাই বড় ক’রে তোলো;
আমি তবু ব’সে ছিনু— কবে হবে ষোল।
১২
কাহারে ফেলিয়া যাও, কোথায় ফেলিয়া?
ফেলিয়া কোথায় যাও, কেন ফ্যালো, যাও?
এ-পারে ডহর-পানি? ও-পারেতে বাঁও?
একই-তো আঁধার, আঁখি মুদিয়া, মেলিয়া—
আমি-তো জরুরি নয়; কেননা জরুরই
গোলাম আজম— তাই-না? টিপে গেছ ভাত,
জিবে যার জিবেগজা, বাকি-অঙ্গে বাত,
পরি-পূর্ণা ই-ধরণি, ধরি আর উড়ি
নেভারল্যান্ডাকাশে। কিন্তু সে-তো ছায়া, খোল-
খোলা। ঢাকা থেকে তুমি উবে কেন যাও?
আদাবরে ধাঁধা লাগে- গো-খোঁজা খোঁজাও
গোল্লায় গায়েব— কোনো খোলে না আগোল;
পিছে-পিছে শটাশট গিরিছে শাটার,
প্রতিধ্বনি— চ’লে-যাওয়া তোমার হাঁটার।
১৩
তোমাকে পেয়েছিলাম হঠাৎ হারায়ে
ফেলার চেয়েও দ্রুত। ঐশ্বরিক ঠাঠা—
ব্যা-এর আধেক ডেকে শিরশ্ছিন্ন পাঁঠা
যেন ম’রে গেল ঠাইট খাড়ায়ে-খাড়ায়ে…
সেও আজি আধাশতকেরও বুঝি আগে।
যে-দরজা বিসমিল্লা খুলে তোমার মুখানি
দেখিনু, জন্মের শোধ, যেখানে সুখানি
চ দুঃখানি, মৌত-হায়াত, জ্বালামুখে জাগে
উলুরুর মতো কোনো রক্তপর্বতের।
হেনেছি মোতাজেলার এজতেহাদি উঁকি-
থমকে-থাকা ঘটমান বর্তমান— মুখী
কচুর আঁচুক মুচড়ে ওঠা, বর্বটির
লালচের লালচে বোঁটা। তারপর হারায়ে
ফেললাম, পাবার মতো, তাড়ায়ে তাড়ায়ে।
১৪
মুখভর্তি চেহারা যদি, কোন্খানে আমার
ছেনি চলবে, লো ললনে, কিছু ঊহ্য থাক্-
উন্মীল নীলের ঢাকনি মিহি গসামার
যা ফুঁয়ে ওড়নানো যায়, সোনার চেরাগ
আচমকা চকমকিয়ে, ফের তাও নিবিয়ে দিতে
তিলককামোদে যেন সহসা বেহাগ
শুশুক লাফায়ে গেল। ত্বদীয় বেদিতে
হত্যা দিয়া পইড়ে-থাকা কিসি পিগমালিয়ন
একটা-একটা পাপড়ি খুলতে, তামাম মেডিটে—
রানিয়ান দরিয়ার দুধে হর-এক উল্বণ
তরঙ্গবিভঙ্গে তার [অ]খিল-খোলা খুলি
ভ’রে ল’য়ে, অপেক্ষায়। ফিলহাল বিল্হণ
লিখবে চৌরপঞ্চাশিকা, ছুটবে ছিটাগুলি:
আবারও আবরো, আবরু, অবার চোখগুলি…
তারা
১
প্রসীদ, শারদে, সোনাবিবি বিভীষণা,
মোহের মোহর ফেকো জামাতা-জামাতে,
মাথায় না হয় যদি, না-হয় হামা-তে
পোলারে পাকড়ায়ে বলো, “এ-জলে মিশো না!”
কপালের ফেরে তুমি যার বিবসনা,
ভূ[ভার]তনাথ- তার তাণ্ডব থামাতে
আর্যের নর্ডিক রঙ পাটল, তামাটে,
সে-তো শিশ্নী, লিঙ্গায়েত, প্রসুর শিশু না।
পরো, মা পরমা, রক্ত-অলক্ত শ্রীপদে,
কালী মা’য়, কলেমায়, কলির নাজাত;
ধর্মের কলের পানি পুরুষ টিপটে
হাজার শবের মতো ঢালে শেরাজাদ,
হিন্দের গজবার পরে ফাঁকা-পানিপথে
সৈয়দ আহমদ আর মৌলানা আজাদ।
২
জনমের মতো কবি মাগিলা মেলানি,
ও বিমাতা কবিমাতা, জ্বালাও মশাল
সৎ-সন্তানের শবে, যে ছেলে ক’-সাল
আগে জন্মেছিল তোর। শেখের কিশোর
গর্ভ নষ্ট ক’রে দিয়া দিনের কেলানি
ফলাতে মোমের সোঁতে গিয়াছে মিসর
মৎস্য-নায়ে (মাৎস্যন্যায়ে?)। কত-যে-কী শোর
শুনেছিস… সর্বহারা, নাকি সে নকশাল,
পুতিনের নাতিপুতি, ট্রাম্পের চেলা নি
হ’য়া গেল আঙ্গো কবি! পনস রসাল
চেঙ্গারিতে ল’য়ে যবে ছুটিত বংশাল,
কাত্যায়নী, বাতায়নে খাড়ায়া, শিশুর
কামনার কাঁটাতারে বনিলা ফেলানি,
নাগরের নীরে নিবে গেল পতিসর।
৩
আম্মা গো, তখনও গৌড়ে কেহই ইংরিজি
খিস্তি শোনে নাই; হালকা, সামা-য়, দা’রা-য়
হিন্দু-মুসলমান মজে; লতিফা-বিভূতি
হাতিশুঁড় উস্কে দেয় গুপ্ত ইঁদারায়-
সুরাবর্দি হস্ত-হ’ন্তে জালাল তাবরিজি
লভেন অমৃতকুণ্ড, তাঁরে প্রভু দয়া
ক’রে দেখায়েছে তার তৌহিদি ওজুদি,
হলায়ুধ মিশ্র পরে সেক শুভোদয়া
রচিলেন তাঁরই নামে লক্ষ্মণ সেনের
বিহান-বাংলায়। তার ঝিঁঝি-ডাকা রিঝি—
-মাঝে বাজে অন্য কোনো সোনারবেনের
সোনালি ছলনা, দাড়ি রাঙায়ে মৌদুদি
মরুহাসি হাসামাত্র তাবৎ ইরফান,
তাবৎ রাবিতা, উবে গিয়েই খালিস্তান।
৪
“বাবা-তো বাণিজ্যে গেছে, আম্মা, তোরে মুতা
করতাম চাই। এইটা আরও গাঢ় পরিণয়-
অগম্যাও তো জায়েজ, সত্মা কেন নয়?
রক্ত-তো না, মাটি খালি সম্পর্কের সুতা
আমারগের।” তুমি কইলা মটকায়ে আঙুল,
“রক্ত কী?- মাটির বাসনা শুইঙ্গা দ্যাখো, বেটা,
মাটিতে সান্ধায় যদি ভিনদিশি লাঙল
ভূমিপুত্রকন্যাদের একোই শূলব্যথা
মরহুম রুহুতে বাজে। তোমার বহুতা
কিংবা বহুলতা, একটা ভাষা-মুক্তান্বয়,
পোগ্রম-প্রোগ্রামে কোনো- হয় নয়তো নঞ—
মাকড়শা তোমার বাপ, তুমি-আমি লূতা।”
“নারায়ে তকবির!”— আমি আছড়াই লাঙুল,
ডিজিটাল অষ্টতাল জ্বলে আলফা-বিটা।
৫
মর্ জ্বালা! তোমারে আমি মনে করুম ক্যান!
আন্ধারে জ্বালাইলে মোম কোন্হানে যায়-গা সে,
সলিতা পুড়িলে কোন্-বা জায়গা থিকা আসে,
এবংকার সবিশেষ-নির্বিশেষ জ্ঞান।
ঘোড়েল সওয়ার— ধরো রাজকুমারী অ্যান
ঘোড়া লৌড়াইতাছে একলা সাভানাভ ঘাসে,
মা তার চিন্তায় চিৎ, মেয়ার তালাশে
আসমানে ছাড়লেন ঔগ্গা রক্তচক্ষু শ্যেন
অটাম টেম্জের তীরে– রাজকন্যা ফিরল না।
ফিরল তার ছায়াকাঁপা পুণ্য-বিসুদবার
শ্যেনের স্পীনের মধ্যে। তখন রানিমা
বসলেন ময়ূরাসনে, হাওয়া বইল লোনা:
“শুক্র শনি রবি সোম মঙ্গল বুধবার,
বিদায়!”—আমার মনে তোমার ম্লানিমা।
৬
ললিতলবঙ্গলতা নহে, উহা পান
ডিবায়, দোয়াতে কালি, বরফের কবি
শব্দের মশার শোনে উতোর-চাপান,
হায় রে কী-যে অপ্রতিভ জোহরের রবি!
পদ্মাবতী নাইতে গেলে তুমি আইলা ঘরে
প্রলয়পয়োধিজলে ভেসে উঠল বেদ—
বঙ্গোপসাগর যথা আরব সাগরে
কন্যাকুমারীর মোড়ে ঘুচাইল-রে ভেদ,
জ্বলিয়া-না উঠিল হস্তে খাগেরো কলম
সোনার কাঠির মতো— কত অন্ত্যমিল
শতধারে ভ’রে ফেলল ভূর্জের ছলম;
থ’কে গেলে, তারা, মিলায়েছ রেওয়ামিল
শিশু-মুখে তুলে দিয়া যুগল জান্নাত-
খোদাকে তেমনই হয়তো দিছিল মানাত।
৭
তারা-তো আর্যই, তারা, কৌরব-পল্লব,
বরারোহা, যারা করে শাটী-টানাটানি—
কারা মোক্তাসেব তোর, কে হৃদিবল্লভ
আমরা যারা আমই-মাত্র, নির্ণয় ন জানি।
আলপ্তগিনের পায়ে সবুক্তগিনের
বেহেশতি নজরানা: ঐ-তো, ঐ-তো হিন্দুস্তান!
মামুদ গজনবি পরে সিন্ধু-নাগিনের
ফণা কেটে রফা করে সান্ধ্য অনুষ্ঠান।
তারও আগে সেকান্দর (নাকি জুলকারনাইন?)
খোদার পেয়ারের বান্দা ব’লে জানা যায়,
তোমার কেশাগ্র সে-তো স্পর্শ করে নাই-
সমকামী ছিল, তাই? তারই জানাজায়
তোমারে পাথর ছুঁড়ে ভেঙে ফেলল কারা?
বাঈজি নেচে, দিলা, মাঈজি, কাদেরে আশকারা?
ষোড়শী
১
কল্পতরুকুঞ্জে তুমি বৈসে, সত্যভামা,
রতিজ্বরে জর্জরিতা, এ-দিকে পাহুন
লাফাঙ্গা যে-লাং, তার কপালে আগুন;
স্যমন্তক-আশে পশে যবন আমামা।
ধ্বনিল ধর্মান্ধকারে শরিয়তনামা :
“তৃণ যেবা গলে বান্ধে তার এই গুণ
মুমিন সকলে তারে বোলে মালাউন।”
কাহিনির হানি তুমি করিয়ো না, রামা,
ইছপ জলিখা তথা আজিজ মিছির…
গণেশের গুনাহ্ নাশে পুত্র যদু শেখ
গো-গোস্ত গোগ্রাসে খাঞা, তৎপর ইশের-
মূলের গেলাস-হাতে, মৌতের আশেক,
বাবার স্বভাবে তার উচ্চ করি’ শির
মায়ের গোড়ায় করে রেতের নিষেক
২
মোদের মজহবে, উম্মু, এমনই নিয়ম
যে, কারণ আপনি কার্য পারে না করিতে,
হাওয়া-যে গন্দম খায়, কিংবা মরিয়ম
অন্তঃসত্ত্বা, প্রকৃতির রীতি-বিপরীতে….
আলিঙ্গনে যাঁর নবি হবেন কাতর
হেরার গুহায়, কিংবা রোজ-কেয়ামতে
বাজিবেক শিঙ্গা যাঁর, মুসার পাথর
যে-হাতে ফোরকান হবে সিনাইয়ের পথে
তাঁরা তিনি নন, তাঁরা তেনার পিয়ন
মালাইকা বা জিন— সবই তাদের মারফতে,
সপ্তাকাশে তিনিহারা তাঁর প্যান্থিয়ন…
মারফতিই সেরা রাহা কারো কারো মতে।
আমরা তাই নকশাবন্দি, চিশতি, কলন্দর,
মাদারি, কাদেরি, মা গো, সপ্ত-সমুন্দর।
৩
যত মহাজন তত নথোসনোমিয়া
এ যেন জন্মের ঠিক থাকলে কেহ বড়
হয় না দুনিয়ায়, ময়না, মতি করো দড়;
আজাইড়া নিজের জড় ভুঁড়িয়ো না, মিয়া।
প্রিমা কৌসা, ভণ্ড, তোর, জরায়ু— অধুনা
গর্ভে-পণ্ড গোপিচাঁদ তা ভুলে লাশের
তালাসের অভিশাপে শুক্র-খালাসের
নিষেধে, পাণ্ডুর প্রায়; অদুনা-পদুনা
শাশুড়ির গলা ধইরা কান্দে উভরায়।
মরিয়ম কান্দে, রুত, আমেনা, রাহেলা,
মা গো, তুমি মাই দিয়াও মাগো অবহেলা,
পুং-টা খাড়াইলেই পোংটা বাপের ঘোড়া-ই
হ’য়া যায়, রক্তচোষা পেটের শয়তান-
যদি-বা পিতার তার না-রহে পয়চান।
৪
যে তোমার ঘাড়ের রগের থেনে কাছে,
যে তোমার ধারণাতীতের চেয়ে দূরে,
যে-বরফ ঊহ্য থাকে রমজান-রোদ্দুরে,
এ-স্ফিয়ার পয়দা হ’ল যে স্কয়ার কাচে
তারই একটা-ফোঁটা আমি তোমাকে দিলেম,
ওগো মায়া, যো-তুম মায়ার অর্থটাই
বদলে দিছ বাচ্চা-মুখে দুধের বোঁটায়,
তোমারই হাদিয়া আমি তোমাকে দিলেম,
ফিয়ারলেস ও নাদিয়া, করো মোরে মাফ,
আমি-যে বাঁড়ার লগে চোখের চামড়ারও
হজামত সাইরা খাড়া মারো, তারে মারো,
আমার চোখের পিছে আমার যে-বাপ
লালার রেটিনা-হেন ষোড়শী গতর
লেহিতেছে বিষ্ঠাভুক্ কৃমির মতন।
৫
আমারে ভাসায়ে দিল বেতের ঝুড়িতে,
নীলে; তুমি তুলে নিলে, রাজার দুলারি,
নাঙ্গা রাঙা বুকে। আমি প্রথম উড়িতে
শিখিনু পাহাড় থেকে পাহাড়ের খাঁড়ি—
পিতা মরুচর, আমি হলেম পাহাড়ি
গোর্খা, বেল্টে বাঁকা-কুকরি, তাতে কাটি আম
আম্রপালী গাছে, তুমি যাও বলিহারি:
“এ কোন্ জংলিরে আমি কোঁকে বরিলাম!”
শ্মশ্রু উপজিলে, হেরো, মিস হ্যাভিশাম,
জাদুদণ্ড দিলা শেখ, লাঠি কিংবা সাপ,
পর্চা-দাগে করি ভাগ দক্ষিণ আর বাম
দরিয়া বা তোমার সেটার। আদিপাপ-
-সমেত ভুঞ্জিনু আমি গাছপাকা গন্দম,
চর্যাভাবে, ধর্ম ঢাকতে, পরিনু কণ্ডম।
৬
ওগো গার্গী, পণফরে রান্ধো গো পুরোডাশ।
বানপ্রস্থে যোগী যায়, আমি থাকি ঘরে,
তেনারে জিগায়ে রাখো, কী-যে হয় কীসে,
তৎপর তৎপর হবে মোদের মোডাস
অপারেন্ডি। ও সাংক্তা লামিয়া, এবে বরে
মুগ্ধ করো মেধা-মেদে, দুগ্ধ, মধু, বিষে,
মজ্জা ও মগজ তার শুষে নাও। বনে
অপচয় কেন। মোকাত্তায়াত-আখরে
সাধনা-বিনাই ফানাহ্, ফিল্লাহ্ না, ফিশ-শেখ;
আমরাও অমৃত হমু, অনন্ত যৌবনে
না-নিবারি নির্লজ্জতা জলপাই-পাতায়,
আজিকে আজরাইলে মন, কালিকে ইবলিসে,
আমাদের স্বচ্ছ শ্রমজলের লবণে
সিঁড়ি হ’য়ে চড়বে ঋষি সাগরমাতায়।
৭
আমাদের মিথোলজি মিসোলজি হ’ল
মাত্র কুড়ি শতাব্দীতে। তার আগে চার-পাঁচ
শতকে ধার্মিক, অজ্ঞাবাদী বা চার্বাক
কুড়ায়ে-বাড়ায়ে যা-যা জমায়েছে, ষোল
আনা-ই কান্টের পায়ে কাটা প’ড়ে র’ল,
মাথার তক্তটা নিল গলার আওয়াজ।
মা গো, হেরো, কত উট, কত-না জাম্বাক
মরু-বিলাবঙে এসে মুত খায়ে ম’ল—
আত্তিলার এত্তেলায় কাছা খোলে পোপ,
হেভেন কাফফারা দিয়া রক্ষা করে হেল:
মধ্যপ্রাচ্য- প্যালেস্টাইন— পাল্টা-উল্টা তোপ—
আজগুবি মরণ, তার আজব ভ্যানতারা,
জাহেলের যুগ, নয়তো যুগের জাহেল,
তারা ভরা রাত কিংবা রাত-ভরা তারা।
৮
আজরের কিসসা রচে মীর মশাররফ,
ঢেকে ফ্যালে হোসেনের বামুন আনসার
বাহিনীকে কারবালার মায়ার বরফ,
সিন্ধুর কাদায় কোনো কৈয়ের কানসার
বুড়বুড়ি উঠিলে পরে দেখিলা দাহির
হিন্দুস্তানে ইমামের ভীত পরিবার।
দাবানো মানবতার নির্ভীক সাহিল
বুকে নিল কাসেমের ঘা সতেরোবার।
উমায়া মায়ার মায়া, রগের খান্নাস,
নবির লহুর ধারা শুকানোর রোদ,
খাঁটি তিন খলিফার বেঘোর প্রাণনাশ
এবং পিতার সনে পুতের বিরোধ,
কাবিল কতল করে ট্যাবুর এহসাস :
কেতাব জায়েজ করে হনন ও কিসাস।
৯
ও মহান্ মিথ্যা, তুমি ঘোচাও এবার
নিকষ নেকাব। আমরা কাতি-থান্দা থেকে
মরুর সাপের মতো চলি এঁকেবেঁকে
স্বপনকালের পানে। কত-কী দেবার
ছিল আলচেরিঙ্গা-পদে: মরণ-শপথ
যেথায় কুলাবা, গাম কিংবা ওয়াটল হ’য়ে
জন্মেছি আমরা— কভু আমাদের পথ
যাবে না সে-ভূমি উৎরে। তবু, ক্রমান্বয়ে
ভূমি নিজে স’রে গেল পায়ের তলায়-
আলচেরিঙ্গা! আলচেরিঙ্গা! কোনো সাড়া নাই;
শাহাদাও খালি হাঁদা ভোঁদার গলায়।
বিদায়, মায়ার মায়া, আর-কোনো মানা-ই
আমাদের মরুযাত্রা থেকে ফেরাবে না।
সত্যের সন্ধানে আমরা সংশপ্তক সেনা।
১০
উজানিনগরে ফিরল উজাইড়া ছাওয়াল,
মা ষোড়শী। মধুকর, কমলে-কামিনী,
দেবতার ঘট ল’য়ে খেলে ছিনিমিনি
ননি খেতে ফিরে আইল তোর নন্দলাল,
ও যশোদা। চায় না যশ, সে চায় রসদ
সেই আকালের লাগি, যদি তুমি নাই,
তবু আসা লাগবে যদি তোমারে বিনাই
সে কার অবাধ্য, কার হবে বশংবদ?
মুতাজিলা পোলা মাগে একটা খালি রাত
আশারি আব্বুর পিছে, বা চৌকির নীচে,
মা তোর জঠরে নিত্য আঁচড় হানিছে
একটা দুসরা-তোর লাগি, ঘায়েল কিরাত।
জান্নাতেও খান্নাসের কৃমি আমি, উম্ম্,
কর্দম-নর্দমা, যত করি তায়াম্মুম।
১১
হীনযান মহাযান নাকি চন্দ্রযানে
রাজপথ জনপথ নাকি পানিপথে
যামু আমি ভবিষ্যৎ অতীতের পানে
ফেলে রেখে আমাদের ভূত, ভবিষ্যতে?
রেখো, মা, লাশেরে মনে, মেনোপজ-সাদা
জরায়ুর হরপ্পায়। সরস্বতী-পাড়ে
পা চুবায়ে বসি, নলে আলাদা-আলাদা
শোঁ-শোঁ। অহো, পানি কাঁপে, কাঁপে নল। মা রে,
আমারে ফিরায়ে লহো। ঘুরে দেখি বাঁয়ে
তোমার অংশে খালি এক গায়েবি শীৎকার
পায়রাবন্দি সুলতানার স্বপ্নের লাভায়
বরফের ভাইব্রেটর— বিরাশি সিক্কার
হাওয়া-চড় পালে মোর;— সে-তুমি কে ছিলে
যে-তুমি ষাঁড়ের অংসে মাথা রেখেছিলে?
১২
বদরে গদর হয়, বঙ্গে পড়ে লাশ।
হেকিমি কিমিয়া আর যত খাবনামায়
পয়গম্বরের মূত্রমলের কেলাস—
তা-সবে তাবিজ করি’ সোয়াবও তো কামায়
আলেম। তালেব-রূপে ফিরোজ নাজেল
মশারিতে নেয়ামত, দাবনারা দেগা-র।
দাড়িওয়ালা হ’লে যাকে ডাকি আজাজেল
নারীওয়ালা বলি তাকে পরওয়ার দেগার।
ইয়াবা গিলায়ে তার গোত্র-গোরুদিগে
বিতাড়িত ইব্রাহিম বহেন বন্ধকি
নিয়মসিন্দুকে ভ’রে, কেনানের দিকে,
স্বপ্নো-নু মায়া-নু মতিভ্রমো-নু জিন্দেগি।
গিলা আর শিকোয়ার তারানা তিলানা:
ডিলেমা দিলে, মা, দিলে, সিলা-তো দিলা না?
১৩
সিরাতুল মুস্তাকিম, কিংবা উজুবাট,
সেকুলার মধ্যপন্থা, দ্য গোল্ডেন মীন-
কিছুতেই, মধ্যবিত্ত, পাবে না জামিন-
হে আসমানি শর্ষেফুল, ছাড়ো অজুহাত,
টেম্পল কোথাও নাই, ও নাইট টেম্পলার।
বিলাতি পাঁতলুন খোলো, লুঙ্গি কিংবা ধুতি,
গোস্ত বা গোবর, মধ্যে বেচারা গো-রুটি
পাতের-নোস্তের গেয়ে মাগি-বে রোজকার ঘা
সের রোজগার– আসছে নাৎসির স্বস্তিকা,
আস্তিক কাস্তের। ওগো ইউরিয়ার ইরি,
তুমি-কি গো গোরু হবা? নাকি অহন-থিকা
হিল্লায় হালাল করবা নারীগোরুগিরি
পৈতা-টুপি বা ল্যাঙট হাওয়ায় উড়ায়ে
হেরার গুহায়, নৈলে কৈলাস-চূড়ায়?
১৪
চামড়ার নীচে কী আছে, আমরা দেখতে চাই?
চামড়ার উপরে চামড়া চড়াতে কবিরা
আজাবে নাজেল হ’ন, পরে পদ্যবিরা
মুখে নাকে নবদ্বারে অশ্রাব্য চেঁচায়
তৃতীয় দিবস অব্দি— হুক্কু-কুক্কুরুকু-
ভগিনী মানে-তো যার ভগ থাকে—যোনি—
পক্ষান্তরে কচি স্বসা, এমনো রজনি
গোঁয়াবে বৃথায়? এবে বা’জানের রুকু…
আজানের শোনো বাণী, নিদ্ৰাপেক্ষা শ্রেয়
এবাদত! শূন্য-মার্গ-শীর্ষে গলে মোম,
ভগ্নের টন-টন ব্যথা, ভগ্নির মলম,
এবং ভ্রংশের শেষে ভালোও বাসে ও!
গাহে নব্য হাল্লেলুইয়া লেনার্ড কোহেন :
ব্রনের মস্তক-কোলে মরে ব্রনোয়েন।
ভুবনেশ্বরী
১
হারেম হারাম নাকি? এগারো বা নয়
অমিতবীর্যের জন্য পর্যাপ্ত-তো নয়,
ফলে পুত্র অসাম্প্রত, দত্তক-তনয়
আমারে নিলেন নাথ, দিলেন প্ৰণয়
এবং আমিও তারে দিনু উপহার—
প্রিয়ারে পিতার লাগি করিনু জিহার।
নানা-নাতনি পতি-পত্নী মাঝারে তাহার
বরিবস্যা-ধোঁয়া ওঠে অগ্নায়ী স্বাহার।
ছয় আর নয়ের মধ্যে তোমার শৈশব
এক বৃদ্ধ-বালকেরে করিল প্রসব,
অন্য এক বালবৃদ্ধ দেখিয়া ও-সব
শত গোপী-বৃন্দাবনে বনিলা কেশব …
একবার চলিলে শূন্যে কে কারে থামায়?
য়োকাস্তা, আবার করো গ্রহণ আমায়।
২
কাস্ত্রো আর চে গেভারা হ্যান্ডসাম ছিলেন।
গাদ্দাফিও। হামাগুড়ি ইদি আমিনের
ধামা ভুঁড়ি। ইন্দোচীনে সুনিয়াত সেন
কী সারায় সময়ের বা হোচি মিনের
মনে নাই। আমরা জপি পল পটের নাম,
সুকর্ণের কানে-বিষ-ঢালা সুহার্তোর
দরিয়াচুরির কেচ্ছা। দারুল ইসলাম
পূর্ব তিমুরের দ্বীপে। ফের নিঃস্বার্থ
বেনিন্যো আকিনো দেশে পা-ফেলা-মাত্রই
গুলি। হোথা উড়ে যায় রাজীবেরও খুলি।
এ-সবই সামলায় ইতিহাসের ছাত্রই
খেরোখাতাময়। হিন্দুস্তানের বুলবুলি
আমরা, খুসকি চুলকে মরি হিন্দের গজবায়:
পাকিস্তান উপজিলা গাঁধীর জজবায়।
৩
তাসমান-মানুষ হ’ল তাসমান-শয়তান
তাদেরে পাখির মতো শিকারের পরে।
সেও এনডেনজার্ড। আজি বোঙ্গা জারি করে
জামিনবিহীন এক শীতল ফরমান।
ইউচি আইনু ইরোকি আস্তেক মেস্তিজোরা
আদিবাসী-খেতাবের সোডার বোতলে;
সাঁওতাল খাসি ও চাকমা, গারো বা মিজোরা
তা নিয়া চড়কগাছে নিজেদেরকে তোলে।
আজি করিবাম শেভ গোঁদের বিষফোড়া,
পাহাড় সমান হবে ফুঁ-দেওয়া তেঁতুলে।
এ-রগড়ে আছো যারা, কানা বা অজ্ঞান,
নসিহত আসিতেছে তোমরার দগড়
বাজাবারে। যারা মদ গাঁজা বা শূকর
খেয়ে সেকুলার, তারা সামলাক সামান।
৪
সাবেয়িরা কারা ছিল? তারা-কি এজিদি?
নাকি নেস্টরিয়? কোটা হেতেগো কেতাব?
জবুর? তাগোর কেবলা আছিল বাওবাব?
নাকি মানী-পরম্পরা? নাকি তারা বিধি-
-বহিঃস্থ নস্টিক কোম কোনো? আজও তারা
রাজে নাকি বৃহত্তর উম্মার মনে
সামষ্টিক নিশ্চেতনা? মনোবিকলনে
কে ইয়ুং কোনোদিন দ্বারকার পারা
খুঁজে পেয়ে, টেসিফোন-হেন চমকে উঠে
বলবে একে-একে লুপ্ত প্রজাতির কথা,
এত্রুস্কান, মায়া, ইঙ্কা, নাবাতিয়— ক’টা
আত্মা পাও সভ্যতার কৃমিমাংস খুঁটে?
মর্দান স্লোগান আজীবিক, সদ্ধর্মীর:
হাকুনা মাতাতা আর নারায়ে তকবির।
৫
“ধরা আমি দিব না গো আকাশের পাখি’
ব’লে নীড়ে ফিরে চলে দীপ্র দশহাজার;
‘বরং বর্থেই মরব, ভিনদিশি রাজার
গর্তে প’ড়ে বাঁচতে চাই না।’ জেনোফোন বাকি
কেচ্ছা লিখে রেখে গেছে, ইচ্ছা হ’লে প’ড়ে
দেখো, আম্মা। আমরা জানি, ভাড়াটে সৈনিক
তারা ছিল, সাইরাসের; আমরাও খপ্পরে
প’ড়ে, নেতা-নবিদের, বাইরে আছি প’ড়ে
সিসিফাস, বাওয়াবাওয়ি খামাখা মৈনাক-
-শিখরে, বোল্ডার হ’য়ে নামা যায় যাতে
আজাবের গুধ্ন-শ্যেন-নক্র-মকরের
নখরে আপন ব্যান্ড বাজাতে-বাজাতে…
ফিরব, সপ্ত-ঘুমন্তের একলা-কুকুরের
মতো। ভাত বেড়ে রেখো, মা গো, কাঁকরের।
৬
তখন আলিসায় বসি’ ধোঁকে অপাবৃণু,
আমি তার করতলে বিলাসখানিতে
অবরোহণের রাস্তা জানিতে-জানিতে
বৈকাল-জাগর ভাঙি ঘুমায়ে উঠিনু,
উঠিয়া— এ আনি কারে! এমন এক আলো—
তামাশা-ফিনফিনে এই আলো, মুখে দিলে
অবহেলে হেলে থাকে জাহেলের দিলে।
জাহেল? জালেম?— সন্ধ্যা-প্যারিসের সালঁ
রিমঝিম করিছে, যেন তুলুজ লোত্রেক
এখনই আঁকতেছে… বোরকা আসছে একটা প্র্যাম
হাল্কা ঠেলে, শিশুটার— শিশুই, নহে শ্যাম-
বিবের নীচেই বোমা। আমি জাগি এক
ভবিতব্যে, আলো নহে, অন্ধকারও মুছে
যে টানে আমারে খুনি-জননির কুচে।
৭
মহাবিদ্যা পয়লা সর্গ সাঙ্গ করিলাম।
আপনাদের ভালো লাগলে আর লিখিব না।
নতুবা, লিখিতে রইব, যতদিন দাম
না-উঠে বহির, প্রকাশনা-বিড়ম্বনা
না-ঘুচে লেখক-চোষা মেলাকর্তাদের।
প্রথম সর্গটা ছিল স্বর্গ না, নরক-
আকামের আকামতে সাইরাছি তাদের
আমার নিউরনে ধুধু যাদের মড়ক
দেখে-দেখে, শুঁকে-ওঁকে আমি ক্লান্ত-প্রাণ;
ভুবনেশ্বরীরে খোদ রচিব তারপর,
যে-দেবী সর্বভূতেষু চিরবিদ্যমান,
পরুষ পুরুষ-গালে আলোর থাপ্পড়
মেরে-মেরে যে ভাগাবে ঈশ্বর আর ভূত-
আমি ফিদিয়াস গড়মু সে-দেবীর বুৎ।
দ্বিতীয় প্রকরণ
প্রবেশক
এই মর্মে শুরু হ’ল দ্বিতীয় আখ্যান;
পোলাপান, গোলাকার বৈসো হিবাচির
সমান দূরত্বে গ্রহ, নির্জন প্রাচী-র
রাত্রি-দ্বিপ্রহরে যবে চাঁদের সাম্পান
তরে বৈতরণি, উথলে উচ্চৈঃ নিরুচ্চার,
পশুক ঈশ্বরকণা পশু চামড়া ফুঁড়ে,
মরা-মা’র মাইয়ে যথা সুদূর দারফুরে
দুধ এসে জমে তবু বুকের বাচ্চার
জন্মের ভুখের লাগি। কী-ক’রে এ-সব
সম্ভবে, মা, কুমারীর গর্ভাধানে ফুল
ফোটে, কিংবা গর্ভাধান-ছাড়াই কেশব
যশোদার ননিকুম্ভে বুদ্বুদ-গোকুল
র’চে চলে। এবঙ্কার মগ্ন দ্বারকার
কথামালা— শাঁখা— শাঁখ— ধান-দূর্বা জোকার …
ভৈরবী
১
আড্ডা হচ্ছে মন্তেজুমা, আতাহুয়ালপার :
আমরা, নাকি আমাদের রাজ্য, আগে কারা
এন্তেকাল ফর্মায়েছে?— নিচের ইশারা:
মৃত্যু একটা পরিণতি, পরিণাম নয়,
অর্থাৎ বাইরের নয়, ঘরেরই ব্যাপার—
জন্মের আজান থেকে মৃত্যু পয়দা হয়।
দুই রাজা মাথা নাড়ে, রাজ্যের বিষয়
উঠে আসে ৎলালোকানে; হাসে, কাঁদে তারা,-
সভ্যতার জন্ম যদি জীবাণুর দ্বারা,
পাথরের গায়ে শ্যাওলা, পাথরের ময়লা,
আমরা সত্য ইসামসিহ, কল্লা দিয়া যারা
মৃত্যুর প্রকৃত মিথ্যা কৈরাছি প্রকাশ,
যে-মৃত্যু বিক্রয়যোগ্য রুগ্ণ ক্রীতদাস,
তলাহীন ঝুলি কিংবা ঝুলিহীন তলা।
২
ভালুক-চামড়া বালা রাত্রে দেখিলা এ খোয়াব
দ্বিচন্দ্র নারীর, খালি সমকামিনীরা
যারে হ্যারে। বনস্থলে সহসা-আরাব
এক নারী-ভালুকের- ঘুচে গেল ব্রীড়া…
তারপর ভাইদের সাথে দুই ভালুকিনি
যুঝে গেল, যাবৎ সিনোপা দূরাকাশে
পাঠায়ে বাঁচাল— সেও তাদের ভগিনী,
চাঁদ আর পারুল হ’য়ে, তারাদের পাশে।
আমারে শোনাল এড্ডা নাপি-খানদানের
শেষ মোহিকান— শীর্ণ— আমিকি পা-কালো-
পরম্পর পুরুষের জোড়া-প্রাণদানের;
নারীর দু’-হাতে দুই চাঁদে দুই আলো!
কালো চামড়া, সিনোপার যুগ্মসিংহাসন
একই দেহে। ছ’-ভাইয়ের মুশকিল, আসান।
৩
জমজমের জমে জল যম-যমুনায়-
সিঁড়ি, তুমি কার?- যায় যে যখন, তার।
সিঁড়ির সুরুকে এক আনাড় আনার-
কলিতে ঘুমায় সত্য পাশার আশায়।
তোর আয়ু কিসে, রানি, তোর আয়ু কিসে?
রানি ও চাকরানি উভে বেদানারই গাছ,
বঁটিতে আমিষ কোটে, যে নিজে আনাজ—
আর—কুমারের আয়ু দাড়িমের বীজে।
ডাইনির আইনের দাড়িপাল্লা, কড়ি-বুড়ি—
তোমার পরীক্ষা হবে: হারলে, তুমি জিতে
যেতে-যেতে হেরে যাবে, জিতলে পরে, জি-তে
হারাবে মায়ের পাশা; পাশাবতী পুরী
তোমারে ঘিরিয়া জ্বলবে সদোমের মতো।
হত্যায়, কুমার, হও বারেক সম্মত।
৪
জলভ্রমি ঠেলে এলে, রানি নেফারতিতি,
সময় শুরুর আগে, সন্ধ্যা-বাংলাদেশে;
পটুয়া কুলাল যত, তব অধ্যাদেশে
বদলে ফেলল চিরতরে চিত্রণের রীতি।
গঙ্গামাতা মিলে গেল নীলে। অট্টহাসে
ফুল্লরার ওষ্ঠ যাচে বিশ্বনাথে, আর
রাবানন্দ মহামুদ্রা ঢুণ্ডে কামাখ্যার।
খুঙ্গি পুথি লুঙ্গি ধুতি— যদুভট্ট আসে;
আসে শেখ কাজি মৃধা, ফুঙ্গি ও ফিরিঙ্গি,
ভূমিজ সাঁওতাল হয় মগের পড়োশি,
নানা মাছে কানাকানি অব্যয় সরসী,
আখেন আতেন তার বুড়লে ভাঙা ডিঙি
ক্রান্তি-ঘুম জেগে: মেরি, রক্তাম্বর রানি-
লক্ষ-কোটি পিরাহ্নার দশন-ঝলসানি।
৫
কত গপ্পো গজাচ্ছে-রে এই নদিয়ায়!
অবিদ্যা রায়বেঁশে নাচে, ন্যাংটা মদ্দা-মাগ
বেগে ধায়; ধুলা নয়-তো, জীবন্ত পরাগ
বাসন্তী উল্লাসে ওড়ে— শুদ্ধাশুদ্ধি যায়
গঙ্গায়। নিমাই ঘুরছে, লুটাচ্ছে মূর্ছায়,
হঠাৎ-হঠাৎ কান্না– আরাত্র সাঁতরাক
অদ্বয় নিতাই পঙ্কে। জপুক-না আস্তাগ-
—ফেরোল্লা মোল্লার ব্যাটা, যার চিকিৎসায়
য়ুনানে শিকড় খোঁজে তিন কবিরাজ।
সংজ্ঞার অঙ্গার পোড়ে: ফিদা চিদাসন
আস্তে-আস্তে ফাঁকা হয়, সেথায় বিরাজ
করে শুধু এক কালো চোখ। জনগণ
মিথ্যার ইফতার করে। ভাবে কি, সিরাজ,
শুক্র ঝরছে? তবে তাই গা ভাই, লালন।
৬
রৌরবেই ফেরো ফের, মাদাম বোভারি।
নুহের বুহিত নারী, যে-নাও ডোবারই
কথা নয় এমনকি কোরানে, বা বাইবেলে-
কথা-তো একটাই; তুমি ভাসবে অবারিত
নাড়িসঙ্গমের দিকে। যখন বাবেলে
আবাবিল নুড়ি ছুঁড়ছে, তখনও, লাইবেলে
তোমাকে বাঁধে নি কেউ— আহ্ যদি পারিত,
দ্য সাদ-ফ্যাসাদ মিটত তোমার নির্বাক্
অচ্ছোদসরসী-নীরে? কেননা তারই-তো
মালিকানা একচেটিয়া, স্বেচ্ছায় যা হৃত।
রুপালি জ্যোৎস্নার ঝড়ে একাকী নীলবাঘ
আকাশের পাতে পাতে লেখে আনাবাস,
ততবার উড়ে যায় মেরাজে বোররাক,
নাস্তাশা কিস্কির গায়ে যতগুলি ভাঁজ।
৭
আমার সৎমার চোখে যে-টেম্পেস্ট নাচে,
ন্যাংটা ক্যালিব্যান, জ্ঞানী যে-প্রস্পেরো তাকে
কখনও শঙ্কায়, কভু রিরংসায় ছেঁড়ে
ওথেলো উথাল হ’লে কে ডেজডিমোনাকে
রাখবে পিতৃগৃহে আটকে? আকাশের কাচে
ফাটল যে-বেলুন, নোংরা পরপুরুষেরে
আকস্মিক অনুকম্পা যেন কোনো ফাঁকে,
মওকা পাওয়ামাত্রই, সে দিল বীজ ছেড়ে…
তোরাহ্ বা তালমুদ, অ্যাপক্রিফা, কোনো কুফরি
কেতাবে বন্দিনি, সত্যবতী মা গো, জাগো!
মৎস্যগন্ধাকে তোমার মরা রাম-গড়ে
কুয়াশা-কুৎসায় করল মমি যাকে ইয়াগো,
ভ্যাম্পায়ার হোক, খোলো ইজিপ্টের চুবড়ি,
অযোনি জননি গো, কী পাবে সত্যাগ্রহে?
ছিন্নমস্তা
১
বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগরের
পদে দণ্ডবৎ, কিন্তু জানি এও বেশ
তাঁরা-যে বাইরের; আমরা নিজের ঘরের
মুর্গিগুলি খুঁজি তু-তু সারা বাংলাদেশ।
আমরা দেখি সংস্কৃতের, আরবির আদেশ
ইংরাজি, ফারসিতে লেখে কেল্লায়, গড়ের
মাঠে, না না, রাইটার্স বিল্ডিঙে, কেরানিরা
রাজার পাপোশে, হায়-রে, যা-সব রানিরা
চিলুমচিতে থুকে দেয়। তাইলে, দীপঙ্কর?
ছবি তার ধুয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁর
বেনো জলে। তিতুমীর? ধর্মের লস্কর;
বাকি থাকে শেরে বাংলা ও গোপাল ভাঁড়-
বাঙালি জাতির নবি রামকৃষ্ণ, আর
আমাদের শ্রেষ্ঠ কবি রায়গুণাকর।
২
ঋষি অরবিন্দ আর চিত্তরঞ্জনের
ঝাণ্ডা ধ’রে নেতাজি সুভাষ কিংবা রাস-
বিহারী, কানাইলাল, সূর্য সেন, প্রীতি-
লতা, চারু, মণি সিংহ, অশেষ প্রয়াস-
বাংলাদেশে বিপ্লবীর অভাব পড়ে নি
ইতিহাসে। কিংবা ধরো প্রতিবিপ্লবীরও:
শরিয়তুল্লায় শুরু? নাকি তিতুমীর?
মৌলানা ভাসানী? তবু হয়তো তারা বীরও…
ফের শেরে বাংলা, তার লায়েক সাকরেদ
বাংলা না— দুর্যোধনের মতো খালি তাজ
চেয়েছিল, দূরে ব’সে পেয়েও গেছিল
দুশমনের মেজবানিতে। তেঁতুলের গাছ
সে-ই রুয়েছিল, আজও রয়েছে বিঁধে সে
মাসিমার ক্ষীণ সিনা, পীন বস্তিদেশে।
৩
আমারও আর্মানিদের কথা মনে হয়
বুড়িগঙ্গাতীরে যারা গেড়েছিল ঘাঁটি
পোগজ সার্কিস হার্নি সির্কো পানিয়াটি
লোহার বুদ্বুদে বন্দি ঘুমন্ত সময়।
মাহুতটুলিতে আমরা হার্নি সাহেবের
অন্যতম বংশধর ম্যাকির বাসায়
চৌকি বসাতুম উর্দু শোনার আশায়,
আর্মানিটোলার মাঠে টুপি থেকে বের
করেচি চরস-গুলি গোপন সেলাম
ঠুকে মানুকেরে; পরে সিরিঞ্জে যখন
হাত পাকল, সুকুন-সে চেখে নিজেদের খুন
মগা-সহ আর্মানিরও আস্বাদ পেলাম-
একে-একে খ’সে গেল সকল পালক,
ছিলা-মুৰ্গি ঢাকা-ভর্তি এককোটি না-লোক।
৪
ফলসা-রাঙা ঠোঁট, ওগো ফলসা-রাঙা ঠোঁট,
ব্যালকনিতে চক্ষু রুয়ে ভুগ্ন মম ঘেটি,
নিম্নে নেমে আধাবারটি যদিস্যাৎ হাঁটো
পাতলা খান বেড়ে আমরা ববন বনেটি।
আমরা-তো শিলীন্ধ্র, তুমি জীবাশ্ম আমগোর,
আপনারেই দেখতে থাও পরেগো আয়নায়,
নয়টা-পাঁচটা চর্কি ঘুরি, মধ্যে কাবাঘর-
রাস্তাঘাটে নাস্তা সেরে খাস্তা পারাটায়।
ফাল্গুনে-গগনে-ফেনে মূর্ধন্যর হাওয়া,
ময়দানব বয়দা খায় মিয়ার ময়দানে-
নাকি সে আলেক সাঁই-রে- সূক্ষ্ম আসা-যাওয়া-
ফলসা-ঠোঁটে হুড়কা এঁটে উড্ডিল আসমানে।
তুঙ্গ মণি-মন্দিরে বন্দিরা গায় স্তব:
আত্মা নয়, রক্ত নয়, বস্তুই বাস্তব।
৫
কিছু-কিছু ছেলে আছে গর্বরোগে ভোগে,
বলে না কো কথা তারা মেয়েদের সাথে।
তাদেরে লাজুক বলে লাকাঁ-কালা লোকে,
আরব্য র-যোনি লেখা তাদের কুঁচকিতে।
আরেক কিসিম, যারা পড়ামাত্র জানে
কুকুরীর পুটকি-শোঁকা কুকুরই পুরুষ,
বড়শিটা শানায় তারা ফজর আজানে
এশা ওক্তে মোছে সাদা-কালির বুরুশ।
এ-দুইয়ের মধ্যে একটা তৃতীয় প্রকার
রহে, যারা প্রেম করে নিজের মাথায়
ছাতি মেলে, পাশে ব’সে শকার-বকার
মনে-মনে জ’পে, ভিজে একশা হ’য়ে যায়
যে-মেয়েরা, বা মালেরা, তাদেরও কেউই
তাকায় নি আমাকে, বলে নাই, চলো শুই।
৬
বাঙালির মতো কোনো গলিজ জাতির
নেতৃত্ব মানায়, মায়া, মুজিব জিয়ার :
এরশাদ গোপাল ব’লে খানিক খাতির
পেতে পারত, কিন্তু এই প্রৌঢ়া রাজিয়ার
আলতুনিয়া কেহ নহে; কত আসবে যাবে-
এই বাক্য গলতি হবে, মালকিন যাবে না।
ভেস্তসুদ্ধ ভেস্তে যাবে আল্লার আজাবে
কিন্তু এ খেলাপি তার রাখতে থাকবে দেনা—
থুক্কু, লেনা বলতে হ’ত, ঊর্ধ্বগামী নদী,
আসমান সীমানা তার, বাপের পাঁজর
বাবেলের ধাপ, তার ধবলী ননদি
বদন-বদনায় মাখে চোখের কাজর :
আম ও ছালা— মূল্যবোধ আর অনুভূতি-
তেঁতুলও না, ছালাময় কাঁঠালের ভুতি।
৭
বঙ্গে ও মগধে আমরা পাখির ভাষায়
কথা কই, আম্মু, এই বুকনিতেই তোরে
খানকি ডাকি যবে তুই পাশের বাসায়
কাচঘরে বাড়িস, মাই, ডরের আঁতুড়ে।
বিদ্যা-তো বিদাত, মা গো, গজালির পর,
ব্যস! আমরা পেয়ে গেনু উত্তুঙ্গ উনুন,
চান্দের ডেকচিত আঁরা তোঁয়ার বিবর
পাক করি, রকে ব’সে চাখি তিখা নুন।
কচি-পাতা, কচি-পেয়ারা, কচি-কচি বুক,
কচি-সতীচ্ছদ-ছেঁড়া অব্যক্ত চিৎকার,
অ্যাসিডে ঝলসানো গাল, গলা ও চিবুক—
সুভানাল্লা, ছিন্নমস্তা, বলো তুমি কার
নেয়ামত অস্বীকার? শিশুযোনিত্রাস
বাঁশড়ায় তা দেয় ল্যাজে উল্লম্ব দাঁড়াশ
৮
ছাত্রী হেরি ভেটকি দিলা ভূতকাধ্যাপক—
টেবিলের নীচে পা-টা নড়ে বেখেয়ালে,
ততবারই জিবলা কেটে সৌজন্যজ্ঞাপক
নীচু হ’লে, ওড়না সরে স্যরের কপালে।
এত ধীরে জাল পড়ে, টেরটা পায় না বিল,
জালের নীচেই বক বাইলা মাছ ঢোঁড়ে,
বাইলা মাছ বুঝলে পরে নির্ঘাত খিলখিল
হাসত, যে-রকম মেয়েরা হাসে প্রেমে প’ড়ে
পয়লা-পয়লা; ইন্টারনেটে তারপর আপলোড
হ’য়ে যায়, বা ডাউনলোড; পাতাল-প্ৰবেশ
করে সীতা, শিশু সীতা, রাজ্যের বলদ
নিষ্পাপ পাখিটা। আম্মা, আমি তোরও শেষ
হাসিটা দেখিয়াছিনু মামার তলায়।
আমরণ বঁড়শি গাঁথা আমার গলায়।
৯
আমাদের মামাদের সাতমহলা বাড়ি।
মাসিদের বাসা এক ভাঙা কোশা-নাও।
মামাদের বাড়ি গেলে বাজারে পাঠায়:
ধইন্যা আনছস ক্যারে, আনতে কইছি জিরা!
মাসির বাসায় তার পরনের শাড়ি
মেঝেতে বিছায়া দেয়— বাছা, বইসা জিরা।
তালের পাঙ্খার হাওয়া বেয়াড়া মাথায়…
কিন্তু খালি মামাবাড়ি যাইতে বলে মাও
পকেটে চিরকুট, আমরা যাইলে, ধাড়ি-ধাড়ি
মামাত মামদোরা মম পকেট হাতায়,
সিগরেটের বাঁট চোষে নেংটু বাবাজিরা।
মুখ-হাত চলে না, তাই বেজার মামাও
বলে: ফোট, গাধাবোট! – ভারি মোট-কাঁধে
পরিতাপ করি, বাপ, মালঝাঁপ ছাঁদে।
১০
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে এল ‘সঙ’
বাংলাদেশে। যেন শত-শত তিমিঙ্গিল
একে-অপরেরে গিলে একটা দানবীয়
কিড়া হ’য়ে স্টীমরোলার গড়াল ভীষণ
তামাম সবুজে। বুঝে, খুলে ফেলল খিল
নীলাকাশও কুত্তাবিল্লি— ইউনুস নবিও
এতখানি পানি দেখলে খুদকুশি খেতেন—
তবু, আদিগন্ত ধুধু মরুবালি সীল-
-ক’রে-দেওয়া জাহেলের দিলে, যা গোবি
ও ধরতে অপারগ। সেই পোকার হাইমেন
ন্যাকড়াচ্ছিন্ন পিতৃপুরুষের কীর্তিতেই—
যখন মালুম হ’ল, সবুজ সবই ও
সাবাড় করেছে, ঢেলে লালা-বিটুমেন
দাঁড়া হানল নিজের সজীব নীড়টিতেই।
১১
বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, কবি, সুশীল সমাজ,
রাবীন্দ্রিক ব্যান্ডেজে-মোড়ানো গনোরিয়া,
শান্তিপুরী পাঞ্জাবিতে পড়িবে নমাজ,
বাঁশরি পাসরি’ তুমি বসিবে শরিয়া
মোতাবেকে চৌঠা নিকাসনে। বৌটা বার্বি,
ইঞ্জিরি মিডিয়ম স্কুলে মাথায় নেকাব
প’রে সে ফরাসি ছাড়ে, হিন্দি, উর্দু, আর্বি—
ইংলিশে বাংলাও বলে। সুপদস্থ বাপ।
দাড়িতে-দাড়িতে মিল রবি আর শফি,
চ্যানেলে-প্যানেলে শুদ্ধ বাংলার সংসদ
জেল্লা জ্বলে ফাউন্ডেশনে অটবি বিটপী-
গ্যালারিতে ছবি হাসে, মিছরির বলদ
ফুকো লাকাঁ সাইদের। শোনো গো ধীমান,
তোঁয়ারে কবজ কইরবো তোঁয়ার ইমান।
১২
এইসব বাঙাল ক্যামনে ভিজা পায়, ড্যাম!
নাক কুঁচকে তাকান মম লাণ্ডির লোব্রাও
হলুদ গেঞ্জিতে এক সম্ভ্রান্তা ম্যাডাম,
“ব্রান্ডের” জিনিস-ছাড়া পরেন না যোঁ ব্রা-ও-
জর্জিয়ো আর্মানি যাঁর দর্জি, লুই ভিঁত
মুচি। আমি খুঁজি কারে ওনার চড়ই-
-চোখে, যেন ইনি ন’ন ইনি, ইনি মৃত
তিনি, যারে চিনিতাম মহেঞ্জোদরোয়,
আংটি দেখতে-দেখতে যার প্রাণটি গেল ফেঁসে
হুদাই বিয়ার ওয়াস্তে ভোদাই বিদেশে—
ও বালিকা, প্রবালিকা, কপাল এ মন্দ না,
তোমারে করেছে স্পট হাবল দুরবিন:
পতিবন্দনায় বেঁধে কপালে বন্ধনা
ক্রিকেটে লাফাও তুমি, জেরিনা জেসমিন।
১৩
শাহিন শওকত সুন্নি, মঞ্জু কাদিয়ানি,
আলাদা মসজিদে ঢোকে আলাদা তারাবি
পড়তে; আমি ততক্ষণ সামলাই দোকানি
তারিন-এ। দশটার পর মোচড়ে খাড়াবি,
একলগে দরবার যামু। তাপস অমলও
আইব। আমি ভুলে যাই মিল্কভিটার দাম,
খদ্দেররে জিগাই, কত। যত কেন মলো,
গাধার গাধারই কান। শোনো-রে নাদান,
হাইঞ্জার হাওয়ার মতো গোপন একাকী
তোমার সবুর ওড়ে, লক্ষ্মীবাজারের
মন্দিরের পিছে, যেথা সর্বজয়া কাকি
পলায় সিন্দূর-রেখা লম্পট জারের
চম্পট দেওয়ার আগে। আমরা সবই জানি :
আমাদের ভেঙে তবু ফ্যালে-তো আজানই।
১৪
এমুন ফকির হইছি, নিজের কাছেই
থালা পাতি। রৈদ-বিষ্টি, মিষ্টি-মিষ্টি হাওয়া
আমারে দেখিবামাত্র খয়রাতি তাকায়
মঈন ভাইয়ের মতো। বর্ণা তবু-তো চা
খেয়ে যেতে বলে, তাতে চিনির অভাব
হাসিতে পোষায়া দিয়া। নোয়াবি এ-খোয়াব
দেখি একা: ক্রান্তিকালে শান্তিনগরের
দোতলা বাড়িটা হবে আমারই, মঈন
নিজেই পেজগিতে প’ড়ে কন্যাদায়গ্রস্ত
চেহারায় ব’সে, পড়বে পুরান পেপার
নীচতলায়। আমি পাক্কা ঘণ্টাদেড় বাদে
সাজুগুজু সেরে নামব। “আরে, কবি নাকি!
হঠাৎ কী মনে ক’রে গরিবখানায়!
(আগেভাগে বলা ভালো, জেবে রেজগি নাই।
ধূমাবতী
১
আমার শিথানে জ্বলে সোনার দেবদূত;
বলা ভালো, দেয়াসিনি, কেননা পহেলা
মহেলা সে, যে-বা বারো সাহাবির হেলা
ঠেলে-আসা মাগদালেনা; মুই-কি তারই পুত?
শুতি আছি গ্র্যানিটের সেপালকরে। মুঠ
খুললি সে হুলায়ে আইবে ফ্র্যাঙ্কিন্সেন্স, ম্যর,
ঘুমের ভিতরে ঘুম ভাঙাতে আমার,
প্ল্যানচেটে বাবাকে ডাকবে, বা পবিত্র ভূত।
আমার শরীর— এই বাসনার পূট
লুঠ ক’রে ল’য়ে যাবে ইনানির চরে,
ফালা ফালা ক’রে ফেলবে কামড়ে-আঁচড়ে
একাধারে অষ্টনাগ, খুদা কিংবা খুদ।
রাখছি ছিঁড়া, ধূমাবতী, ব্রীড়া-বহিস্ত্বক্–
যে হও সে হও, নারী, মা-বোন-ইস্তক।
২
লম্বাতম ছেলেটার মৃদু গর্ব হয়
খর্বতর দোস্তদের লগে যবে ঘোরে,
তথাচ তবেও তার মনে রুগণ ভয়
মর্নিং গ্লোরির মতো ফুটে ওঠে, ভোরে।
কোথায় রজনি তুমি, সজনি, জাগো-রে!
খুলে ফ্যালো দু’প্রকার ভ্রান্তির মেরাপ।
আদমের অণ্ডদের টিকি-দাড়ি ধ’রে
জিয়ন্তে গিলায়ে দাও তহুরা শরাব,
মায়া! এই শুয়ারের খুরের হিসাব
পিসাবে বেরোয়ে যাক গেঁদাগেঁদিদের।
রিঠাফলে ধুয়ে, দিয়া, দিয়ো অভিশাপ
লাজ-হীনা পবিত্রতা পরায়ে, নিদের,
জ্বালায়ে ঈদের চাঁদ, বা প্রবারণার,
নইলে কেন্দো পুত্রহারা মর্সিয়া, জনার।
৩
চিনি আমি ইহাদেরে? জরুরি-কি চেনা
এ-সকল নকলেরে? বুদ্ধিজীবিতার
চুটকি-পরা খালি-খুলি… আমার রোচে না
সাহিত্য-সংস্কৃতি-সভা, টিভি বা বেতার
টকশো-ঠকশো-মকশো আদি। মোক্ষ কী এদের?
একটা-দুইটা পুরস্কার, শ’খানেক ‘লাইক’
যদিও যে-কোনো ঘিলুহীনার মেদের
লাইকভ্যালু এন্তার বেশি। অগত্যা, পালাই
ত্রেতায়: যেথায় তুমি নীলের বজরায়
দু’-পাদুকা-তলে নত আন্তনি, সীজার
প্রীতদাস, ক্লেওপাত্রা, ও-দিকে গর্জায়
আদ্রিয়াতিক বালুতটে ঈর্ষার গীজার
ওক্তাভিয়া, বড়বোন, বুকে ছোটভাই—
পশে পারদের সাপ সোনার সভায়।
৪
ড্রাকুলা-দশনা, অয়ি তুষার-রসনা,
ও আমি রশনা তব কোমল-কোমরে-
জন্মান্ধ জলৌকা, কোথা কে বাঁচে কে মরে
জানে না, রক্তের রঙ কালো নাকি লাল।
রজনি, এখনই যাবে? দু’পল র’সো না,
আহা সবে হ’ল শেষ গোপন খিলাল,
এখন বাণীর রানি গাইবে রূপজালাল,
তুমিও নোয়াখাইল্যা হবা খিলির কামড়ে?
বরং স্মরণ করো ভাবী ইতিহাস :
যবে ফেনি চৌমুহনি কিংবা মাইজদি কোর্ট
খুলি দিয়া ভাঙব আমরা খুলির আখরোট
তখন তাপস শুভ শাহিন সাইদ
নারকেলের অতিরেকে তুলবে নাভিশ্বাস,
গেড়ে গাঙে কুটিপাটি হাসবে নেরেইদ….
৫
গোল্লায় গেলাম গিয়া— স্টপ! তত্ত্বমসি
মন্ত্র জ’পে শুতে গেছি ইচ্ছা-বিছানায়,
তক্ষনি লেপ্টালে মোরে গোলাপি ছানায়,
আনোনা ননিতে। তব মগজের মসি
পানিরঙে এঁকে দিল কররেখা মম।
তোমার শরীর জুড়ে স্বচ্ছ অশরীর;
তোমার বুকের ঘ্রাণ, ফর্সা, ফলসা-ঠোঁট;
আলোর লতার হেন, অমাশর্বরীর
লেপের তলায় চলল আঙুলের গোঁৎ–
আমার শ্রোণিতে গলল অ্যাস্কন্টের মোমও,
ঘুমের ভিতরে আমি ঘুমায়ে পড়লাম।
জাগলাম তোমার স্বপ্নে। যে-স্বপ্ন আমার।
বালক-বালিকা— যারা রান্নাঘরে মা’র
সাড়ার আড়ালে করবে হালাল হারাম।
৬
আমরাও ছিনতাই করছি, শাহবাগে একদিন,
ফরিদ আর আমি। রাত্র বারোটায় সুসু
খাড়াইছি পিজির পিছে, রগে রগে ছুঁচো-
ফেরেশতা নাজিল হ’ন: ‘আমাকে ঠ্যাক দিন’
অলমোস্ট বিড়বিড় ক’রে। মাইট্টা আন্ধিয়ারে
রুখলাম তাহার রুখ, সাক্ষাৎ আজরাইল,
ভদ্দরলোক বুঝে তবু না-দিলাম গাইল,
মধ্যবিত্ত-তো আমরাও; বললেম মিয়ারে :
‘বাফৈ, মাভৈঃ, আমরা নহি রাহাজান,
জাস্ট একশ’টা ট্যাকা দিলে ঐশী রহমত
সোনার চান্দিতে গিরত। মিয়া সহমত:
‘খালি ট্যাঁকে পাঁচটা সিক্কা, নিবেন, ভাইজান?’
হিক্কা সামলে, হেরি তার বিমল মুখানি,
যেন চাঁদ, যেন নান, যেন বাকরখানি।
৭
মৌতই-তো তারার, যারা আজিও জীবিত,
মুর্দার মরণ নাই। নিত্য মৃত্যুভীত
ছুটছে যারা, খেতেছে হোঁচোট, একসময়
কবরেই আছড়ে পড়তে, কাষ্ঠ-বাকশোময়
আলো আর আঁধারের কুস্তোকুস্তি যত
তাবৎ তোমার পিছে, যে-তুমি কাৰ্যতঃ
বেরোয়ে পড়েছ এই আউশভিৎসের থেকে।
নিজস্ব আরাফে ঠুকে চলেছি প্রত্যেকে
আমাদের ঠুনকো-মাথা, অথচ কী-তেজে
অস্বীকার ক’রে গেলে, হ’লে না প্রতেজে
জীবনের, মরণেরও: কী ক’রে জানে কে
কবর-প্রাকারে দরজা আঁকলে পদনখে,
একটু পিছু ফিরে হাসলে, আমাদের রাত
আলো ক’রে, উবে গেলে, ভোরে, মনিরাথ।
তৃতীয় প্রকরণ
প্রবেশক
তোমার রয়ানি গাইব নিশি-জাগরণ।
জাগিবেক ঝিমুনিতে লুসি আর মিনা,
যেন গৌরী আর কালী, পেয়ারে বহিনা,
ট্রান্সিলভানিয়ায় জাগে জিয়ন্ত মরণ।
পুরুষ-নারীর রাঙা দাঙ্গার ধরন—
আব্রাহাম, কিংবা কোনো তেমন কমিনা
কী-বিষ চালিসে ঢেলে চলে তা আমিনা
বা হয়তো মরিয়ম জানে। যত রণরণ
বেবাকই নারীরে খালি মিনা ও লুসিতে
ভাগ ক’রে ভোগ করা ড্রাকুলার দাঁত,
শুচি ও অশুচি, এই উভয় চুঁচিতে
জিবলাটা বোলাতে এই হেজাজি জেহাদ,
মাতাহারি, কত যত্নে শাড়ির কুচিতে
ঢেকে রাখো ঈশ্বরের কালো বাঁকা চাঁদ।
বগলা
১
অম্বা-সনে, অম্বিকা ও অম্বালিকা ফাউ।
অমলা বিমলা আসে কলিঙ্গার লগে।
যে হৌক সে হৌক পুং, ইছাই বা লাউ,
বেবাকেরই একাধিকা কিবতিয়াও লাগে।
অদুনা-পদুনা দুই বোনে একই খাটে
এই লিঙ্গ পূজে, মা গো, সারা নিশি জাগি’;
মালেরা বিকায়, মায়া, খোলা গোলাহাটে,
কেনা গেলে, মাগ, আর অন্যথায়, মাগি।
সুরীক্ষার মতো কারো পরীক্ষায় ফেল
মারা-তরি ছোটে লাউ নাঙ্গা ইয়ে-হাতে
লগে কালু ডোম, যদি কোনো ঠ্যাঁটা বেল
না-ফাটে নরমে, তারে গরমে ফাটাতে।
কামিন্যা ধর্মের নারী, মুক্তা মাইয়া তার,
ত্রিষষ্ঠীর গড়ে বন্দি, অজয়ের পার।
২
রঞ্জাবতী, বাঞ্জা রানি, শালে দিলা ভর
পুত্রকামনায়, বপা কোত্থেনে গাবর
গেন্দা এক ফেকে দিল তোমার নিষ্প্রাণ
আদুড় গতরে… আর, অমনি! পরস্পর
জীন-বিনিময় হ’ল, হ’ল অধিষ্ঠান
চাপাইয়ের তীরে কয়কে হফ্ উদ্যান
ফলে-ফুলে-জলে-মূলে-লতাগুল্মে আলো,
সেথায় রহিম-কোলে যুবতি রূপবান
একই জন্মে সাত-জন্মের পালান পিয়াল
ধানি মরিচেরে, মা গো, দেখতে-দেখতে লালু
তড়াক খাড়ায়ে গেল রাজা ইডিপাস,
হতভাগি রঞ্জাবতী আবার বিয়াল…
চান্দের পশরা হেরি’ কান্দে লঙ্কারাজ :
কোথা গেলে পাব আমি নারিকেল গাছ?
৩
হাকন্দ পুকুরে ঠায় বাটুয়া কুকুর
তদারক করে লুয়া, নবখণ্ডসেবা;
আহার পাহারা দেয় ধর্মের মুকুর
বন্যার বাংলায়- বাংলা, ভারতবর্ষে বা
গোটা গণ্ডোয়ানাল্যান্ডে প্রক্ষিপ্ত; আসমান
এক পোন্দে ধুতি, এক পোন্দে লুঙ্গি প’রে
ঘর্ম-শ্রম-কাম-জল বর্ষে ভাসমান
নিরঞ্জন বাংলাদেশে। অহো! ধুনা পোড়ে
বুকের মালসায় তোর, ভ্রাতা মহামদ
রাঢ়ে-বঙ্গে তেড়ে আসে উদ্যত-শমশের,
ধূমাবতী, চণ্ডাবতী, সামলাও শ্বাপদ,
বুনি-বনে ঢুকল একটা আস্ত সোয়া-শের!
ধর্মের কুকুর খালি ধর্মেরে বুঝল না।
কদ্রূ ও বিনতা বুঝল, লহনা খুল্লনা।
৪
সত্য-কি, সাত্যকি, তুমি অক্ষৌহিণী সেনা
ল’য়ে শেষে মাধবের রুবরু দাঁড়াবে?
ফোরাতের পানি, সে-তো দজলায় মেলে না,
হেফাজত ছাত্রলীগ জামাতি বা র্যাবে
ওয়াজ কিংবা ক্রসফায়ার চালাক রাতভর,
নৌকা তবু ডুবুডুবু বাপের সোনার
বিচির চিবিতে, বিতিকিচ্ছিরি খচ্চর
চিবাবে গোল্ডেন ফ্রীস মাংসবাসনার।
বরং, নমরুদ, তুমি এডিসের সাথে
হাত মেলাও, মোটাসোটা চিকনগুনিয়া-
জাতির খালার সাথে কাঁসার থালাতে
রক্ত চাখো; তো দেশের পলিটিক্স্ নিয়া
ভাবতে চান, ভাবতে যান বুদ্ধিজিবিগণ-
মশার গুঞ্জন আর মাসির গর্জন।
৫
শস্যের ইষীকারূপে বিরাজো, ঈশিতা।
পীতোদকা, জগ্ধতৃণা, দুগ্ধদোহা গোরু
সিদ্ধার্থের চোখে লখে ছোকরা নচিকেতা,
যমালয়ে ডালে তারে পিতা কিংবা গুরু
শাপে কিংবা বরে। ছ্যামড়া নিজে অনন্দায়
লাম্যা গিয়া তুল্যা আনে আনন্দের গূঢ়
নিয়মসিন্দুক। পুত্র কারণ সন্ধায়
পিতার মিথ্যার যদি, ওলটপালট
মর্ত্যে ও পাতালে, গঙ্গা-অলকানন্দায়,
আসলিয়ত উঠে আসে দাবায়ে খাসলত।
কিন্তু যমও ব’লে বসল তোমারে পুরুষ
পূর্-ধাতুর অজুহাতে। গোপন ব্যালট
তোমার বিপক্ষে গেল। পুত্রও পরুষ
পুরস্কার ল’য়ে ফিরল পিতার পুরীষ।
৬
মায়ারা বাঙাল ধরে প্রাগজ্যোতিষ নাকি
কামাখ্যায়। রোসাঙ্গেরও কথা শুনতে পাই।
আহা-রে বালস্য বাল, দুইটা রাঘাটাকি
সামনে-পিছে, ঠোকরের নাহি-কো কামাই
অথচ বাঙালি নারী- সে নদীসংজ্ঞক।
বাঙালে স্ত্রীলিঙ্গ হয় না, অন্য তার জাত—
সমানাধিকার চাইছো? ধর্ষিতা–ধর্ষক!
হরিণ হায়েনার সাথে শেয়ার করবে পাত?
পঞ্চাশোর্ধ্ব মেন্দিদাড়ি মাগরেব বাদেই
রুপা বা নুসরাত-রূপী দিনি নেয়ামত
বিসমিল্লাহ ব’লেই ফাড়ে, পারলে সে চাঁদেই
আমূল হান্দায়ে দিত নাঙ্গা হজামত–
অন্যের বাগানে ফোটা রাফি কিংবা তনু
গনিমতই-তো তোমার, হে বাঙাল নুনু।
৭
রাজার শ্যালিকা তুমি ছিলা, ফিলোমেলা,
তোমারে মাতের দেঈ হ’তে হ’ল, মায়া,
ধর্মভীরু, মর্ষকামী আমরা, খোলামেলা
ধর্ষণের ফসলেরে ডাকিনু মেসায়া।
শিশুসার ঈশ্বরের লালসার ছায়া
তব পয়োধরে পড়ে রাহুর মতন,
অরুণ বরুণ কান্দে, ম’রে থাকে গাইয়া-
রতন নহিলে কেবা করয়ে যতন।
মরুতীর্থে ওসেরের পাতাল-পতন;
ইব্রাহিম কাটতে ছোটে ইসহাকের গলা
প্রস্তর-গম্বুজে, নাচে দলছুট ফোটন-
পোলারে বগলে রাখো, ওগো মা বগলা।
যত খাও, তত রক্তে ভরে হোলি গ্রেল,
আপেলের পাপ, নাকি পাপের আপেল?
৮
চিল্লায় বসেছি, মাতঃ, চল্লিশদিনের
মতন প্রথম-ঘাটে রুখে যাও, পরে
ধোনামোনা, আপু ডোম, এরা তো জিনের
জিনপুরে ব’সেই আছবে; যায়ো অবসরে।
অধুনা সাধনা মম শিবের সাধন।
বাবা শিব, হাবা শিব, কাবা শিব, নীল ও
কালো এক কালোয়াত; আলি রজা ক’ন:
‘শঙ্কর প্রণমি নবি মর্ত্যেতে আসিল”।
ল্যাবেণ্ডিশ পোলা তোর চৈড়া বৈন্যাগাছ
সেদিন পাড়িল একটা গাছপাকা দাড়িম,
বাটালি মাটাম ল’য়ে গড়তে ধরল ছাঁচ
পৈতৃক খোলের, তুমি পাড়ো তাহে ডিম
দু’টি: – ব্লুতেম্নেস্ত্রা আর হেলেনের লগে
কাস্তর ও পোলক্স তার পাথরের রগে।
৯
পাথরের থামে অজ অজগর কোঁদা,
ভিতরে মূককীট একটা: মৃত ওসিরিস।
থামেরে ঘিরিয়া ঘোরে কুমারী আইসিস,
সাতবার চুম্বনে জাগে পাথরের খোদা।
অজগর ফুলে ওঠে জন্মান্ধ ঊষ্মার
মতো, উদ্গিরণপথে ফেনা আর লালা,
মনি আর মজি, তবু গর্ভগৃহে তালা,
গালা-ঘরে ম’রে থাকে ডালিমকুমার।
ঘিঙ্গি-ঘিঙ্গি উচ্ছে-ঝিঙ্গি নন্দী-ভৃঙ্গী নাচে,
ববম্বম্ ববম্বম্ শিঙা ঘোর বাজে,
জাগন্তে উপাড়ি’, নারী, লহো তারে ছিঁড়ে,
আলোর পায়রার মতো দেহো তারে ছেড়ে,
ধ্বজাভঙ্গ প’ড়ে থাক অঙ্গে-বঙ্গে খুঁটো—
প্রেম–ওড়ো– ওড়ো, বাত্যাদেবতার জুতো।
১০
বাসবদত্তার খোয়াব দ্যাখো, উদয়ন?
নাকি খোয়াব তোমাদের দু’জনেরে দ্যাখে?
যেন নদীপানে ধায় মদির নয়ন
বাঁকা-বঁড়শি—নিজে মন যে-প্রকার ব্যাঁকে
শূন্য থেকে বায়ু আর বায়ু থেকে জলে।
জ্বলে— বালু— নাকি লাভা? একা সুকুমারী
পদ্মাবতী পুড়ে যায় আলতায়-কাজলে—
কতিহুঁ, মদন, তনু দহসি হামারি?
আমি-তো বিভার আগে বিধবা, বাসরে
সতীদাহ। তুমি এসো, যৌগন্ধরায়ণ!
চা খাবা? আসাম গোল্ড? তাসের আসরে
চন্দ্রাবতী গাইবে তার নব-রামায়ণ?
সীতা-ও-সরমা পালা নাচবে পপ মিলা,
তুমি তাসে ফেলবা লাশ, বাবা চান্দিছিলা।
১১
আমিও ছিলাম তোর গস্তফিরানিতে
নৃত্যপর নিত্যানন্দ, অদ্বয় চলনে
পা-দু’টি কাদার কাঠি, যে চায় জানিতে
তার মৃত মাতৃভাষা। নবোঢ়া-নয়নে
কত ধীরে পাপড়ি খোলে চন্দ্রবোড়া-ঘুম,
একটা-একটা আঁষে জ্বলে একটা-একটা তারা,
যখন নায়র ফিরছ, শশীর কুসুম,
লো এয়োতি, সায়রের চামড়া-তলে যারা
শুতি ছিল, ফণা খুলল তোমার বুকের
দাঁতের রেখায় ক্রুদ্ধ; ফুঁসে উঠল কালো
হুমকি ও হুলিয়া হ’য়ে, ক্যাপ্টেন হুকের
পাটাতন ভেঙে বর-বরফে আটকাল-
আমারে-তো তুলে দিলে ভাসন্ত চাঙড়ে,
মুরুব্বি তোমাকে খেল? কামঠ? হাঙড়ে?
১২
গোলেস্তাঁয় সিয়েস্তা-ঢুলু বৃদ্ধ আলতামাস
তোমায় দেখছেন, তুমি ঘোরাও শমশের।
ডালে-ডালে পিককুল জপে আবাকাস;
জিমনাজিয়ামের থেকে স্পার্টার বাতাস
হিন্দের অলিন্দে বহে। কিন্তু এ সার্কাস
কদ্দিন মোল্লায় স’বে? ভারতবর্ষের
তখত হবে রিজিয়ার? তো তাইলে ফ্যালাস
হবে ডিব্বা কাব্যি আর নুরানি নস্যের?
তারপর ইন্দিরা আসবে, পিছে বেনজির,
হাসিনার জুটবে লাইফ, লুকাবে খাকির
নিরাপত্তাতলে। আমরা সতত তদবির
ক’রে যাব পরবর্তী মহিলা-লাশের-
তসলিমা? মালালা? — হাসে হাক্কানি লাকির :
আজরাইলের জিম্মাদারি “মাল” খালাসের।
১৩
বাতাপি-তে তখনও চালুক্য পুলকেশী,
রাজ্য-হর্ষ দু’টি ভাই ছোটে থানেশ্বরে
বোনের আবদার মেনে বাউটিতে, বেশরে-
জমানার জমাট জীমূতে রেশারেশি
ডানা বাঁধে। রাজ্যশ্রী, তুমিই ভারতের
প্রথম রাজকন্যা-চুরি; যে-ক’দিন ছিলে
অটবি-দৰ্ভটে, অপচ্ছায়ার পাঁচিলে
যখনও পশে নি এসে ভায়ের রথের
চাকার ঘর্ঘর, তুমি ভয়ে, পরিতাপে
কতটা কুমারী ছিলে, এ-কথা-কি ভাই
একবারও জিগায় নাই? একবারও-কি তারে
লাগে নাই অপহর্তাদের এক-কাতারে?
তারপর কী হ’ল, মেয়ে, সে-ভায়েরই ঠাঁই
বরিলা শ্যামল বুকে শুভ্র অমিতাভে…
১৪
ঈশানে নিশান ওড়ে, আসিছে কুষাণ
কণিষ্ক পুরুষপুর ছেড়ে পূর্বদেশে,
বীরভ, ফিরে যেতে অইতের বেশে—
শাক্যসিংহ, ভারতের অশেষ শ্মশান
বারে বারে শষ্পশ্যাম ক’রে গেছ তুমি,
কত সঙ্ঘমিত্রা, কত মহেন্দ্রের সাথে
ধুলা ও পরাগ ওড়ে দিগ্বিদিক, মাতে
ভূর্ভুবঃস্বঃ— রবি আর খরিপের জমি
ভস্ম ক’রে শস্য তোলে অশ্বঘোষ, তথা
ভিষক্ চরক, আর বাঘা নাগার্জুন
পাথরের নুড়ি থেকে করে বা’র তেল
কয়েকশ’ বৎসর টানা। তারপর গর্তটা
খুঁড়ে গেল পাকাপোক্ত, দাহিরের খুন
ঝরায়ে সিন্ধুর জলে মরুর কাতেল।
মাতঙ্গী
১
নীলাম্বরী শুনিতেছি ওঙ্কারনাথের :
মিতুয়ার প্রতীক্ষায় প্রোষিতভর্তৃকা
জোয়ানি নিছনি দিচ্ছে। এ কী মরীচিকা!
যাহাকে সোহাগ কহো, মা গো, এ-নাটের
গুরু কেবা? কেবা তোর গতরের তলে
রুয়ে দিছে শড়া-শব ভ্রূণোদ্গম হ’তে?
একবার পাজামা খুললে লাল কেল্লা ফতে,
তারপর সময় চলে সময়ের জলে।
মহান্ রুমের পোক্ত আকুয়েডাক্ট বেয়ে
ভেসে আসে নারীরক্ত রোমক জিহ্বায়,
আল্লাহ্ বা জেহোবা যার কলিজা চিবায়
অনন্ত শয়ানে: অম্বা, ভাসতে ভাসতে মেয়ে
সূর্যের পিছনে কোনো সঠিক সূর্যের
ইন্তাজার ক’রে চলে নাকি, মা, নিজের?
২
পার্চমেন্ট উল্টায়ে যাই নাগ হাম্মাদির
উবেরমাশের খোঁজে, মা গো, পড়তে পাও?
এ-মদ্দাও চেয়েছিল মাংসই, মাদির,
তারও রেতঃ শ্বেতপত্রে পড়তেই উধাও।
অতখানি নিচে নয়, শোপেনহাওয়ার
বরং খানিকটে, তাই আরও বিনাশন-
ধ্বংসের বাবুশকা-ডল, তলায়ে যাওয়ার
পরতের পরে শুধু পরতান্বেষণ।
শার্লট, এমিলি, অ্যান, ওরা তিনটি বোনে
খুনসুটি-খিলখিল সেরে আত্মায় তাকায়
একে-অপরের, একে অপরের জেনে
চুলাচুলি লেগে যায় ক্যাথি আর জেনে,
জানালার বাইরে এক ঝড়ের পাখায়
মাকড়শা হিথক্লিফ তার আত্মঘাত বোনে।
৩
হেকেটি, তুমি তো ছিলে দু’এককাঠি এগিয়ে
পুরুষমহল থেকে, পুরুষমহলে
তবু মাত্র একটিবারও অভ্যাগত হ’লে
যে-ঝিল্লি পর্দার মতো জেহোহ্বারও গৃহে
ফর্দা হয়, জোড়ে না তা আফিমেরও জোরে।
স্বয়ং-শয়ন!– প্যাঁচা- লক্ষ্মীর পায়ের
আলতা-ছাপ বুকে তোর রাহুর হা-য়ের
মতো ক্রমাতত, মিতা, চিতা কিংবা গোরে।
পরভৃতা, তুমি এক শূন্য রণাঙ্গনে
অদৃশ্য শরের শয্যা করিলে বরণ;
কাদম্বরী, অহিফেন আমিই বরং
উৎপাদনে ব্যর্থ হ’য়ে গগনে-গগনে
উড়ি ফানুস। আজি, হে গিরিগভীর,
সাধের আসন পাছা পোড়াক কবির।
৪
জেবুন্নেসা, লিখে চলো সলিমগড়ের
হরেক পাথরে তব পিতার পাকনাম।
রাদিয়াল্লাহু আনহুরা তোমার ডাকনাম
জেবরের জেল্লাসহ জপুক। জ্বরের
রিমান্ডে জীবন যা’ক, চারাহীন টব
ন’মাসে ছ’মাসে মোছা, বেলা দ্বিপ্রহর,
ধুধু বালুচর, বুক? কবি, যো-জহর
পী চুকা হুঁ তুম-হি-নে মুঝে দিয়া, অব
জিন্দগি-কি দুয়ায়ে-তো মুঝে তুম না-দো।
লেসবসে সাফোর কান্না আমরা শুনিতাম।
বাগদত্ত হতাম যদি, আগ্রায় নিতাম
তোরে জাহানারা-ক্রোড়ে, নিশা, তবে কাঁদো
“মাখফি, এ প্রেমের পথে একা চলতে হবে,
যিশুও তোমার জুড়ি নহে ইহ ভবে।”
৫
এপিকিউরাসের সাথে বসেছ প্রথম
সঙ্ঘারামে, ও মাতঙ্গী, তারপর পুবিয়ে
গিয়াছ আলতাই ছেড়ে গোবিতে ডুবিয়ে
উট-নাসিকা, পেরোয়েছ কেন্তুম্ সতম্,
কনফুসিয়াসের কাছে জেনেছ, যে যা-ই
তা-ই-তে নির্বাণ তার; পরে নিরীশ্বর
বুদ্ধের সুজাতা, তুমি হ’লে জাতিস্মর।
রাস্তায় মৈত্রেয়ী তুমি, সহসা বেজায়
একটা সত্তা- যাজ্ঞবল্ক্য চিদানন্দ হেসে
তোমাকে অমৃত করল… তুমি হ’লে নারী,
নরের স্ত্রী-রূপে নয়, পরিত্রাত্রী-বেশে।
এবং, এল ইব্রাহিম ইপকের শেষে
লাওয়ের দাওয়ের স্থলে দাওয়া এল তারই
যে তোমাকে লাশের পোশাকে দেবে ঠেসে।
৬
আইসো, ভ্রাতঃ, ভুঞ্জি দোঁহে এ-এজমালি জমি
যে-আসনে বাঞ্ছা করি; বাঞ্ছা আমাদের
ফিকাহি হুকুম। জিবে ঘৃতাধিক্যে বমি
পাইলে পিয়ো উষ্ট্রমূত্র তহুরা-স্বাদের;
নাজে, সিনেমায় চলো দিগন্তের পারে
যাঁহা একটা লাভা-ডোবা, ভানু ডোবে যা’য়,
বাতেনি বাতচিত হোগা বেহেশতি ব্যাপারে—
পুরুষ-বিলাসে উঁহা কী-কী থোওয়া যায়।
আইসো, মোরা পরস্পরে বুদ্ধি দিয়া ধার
দরমিয়ানি দরিয়ার ধার ছেড়ে, যাই
পশুর-রূপসার রাজ্যে, তন্ত্রের আঁধার
ফেড়ে ফেলি বাঁকা-চাঁদে শালায়-জিজায়।
সেথায় কালিমা এক:— নাকি কালী মা সে?-
ন্যাংটা মাগিটার খ্যামটা ভচকায় দেই ত্রাসে।
৭
তোমার আঁখিতে, মা গো, ধর্ষিতার নুন,
মা গো, আঁসু আর খুন। তোমার মন্দিরে
তোমারই সেবাইত ফাড়ে তোমার শৈশব
নাড়ায়ে ধর্মের কল। কিশোরী বন্দিরে
(হেরি’ তার মা-সোহাগি চাউনি অসহায়,
জেনে মাত্র মোছলা-মাগি, গোবরের কিড়া,
তার রক্তরঙা পুঁজ, শুভ্র অশুচিতা)
সীতার চিতায় তোলে তোরই পুজারিরা,
মা গো! তব ওষ্ঠ তবু গাটাপার্চা-আঁটা,
সাধে-কি অহল্যা তোরে বলে লোকে, মীরা?
দৃশ্য বদলে যেতে-যেতে দীপ্র ফিরে আসি—
আমার টায়রার মুখে কাসান্দ্রার হাসি,
আমার টায়রার আঁখি থেকে আসিফার
মুছি নুন, মুছি খুন— দীপ্র লুসিফার।
চতুর্থ প্রকরণ
প্রবেশক
কত খাবি খাবি, কবি, কত-বা মাখাবি
গুয়ে-ঘি? থুয়ে-কি ব্যাকে যাওয়া যায় না আর
বুকে-সন্ধ্যা-রাঙা ঘাস শুয়ে থাকা মা’র
গর্ভের ইঁদারা খুঁড়তে, ও বিভার, যাবি?
সিলভিয়া-কি লগে যাবে? যাবে মেরিলিন?
যাবে আন্না— গেলে ট্রেন-? গা’বে উমা বসু?
মাহি মা না, সিলিংফ্যানে নিজেই সিলিং
ঝুলবে, বাবুইয়ের বাসা; আলতো হাতে অসু
খসাল যেমন ডটি, অ্যারোপ্লেন-সহ
ঝাঁপাল ফারিয়া লারা, যাবি, বোকা পাঁঠা?
খাবি, না খাবি না শ্রীশ্রীকমলার মাঠা?
বসুধৈব মাতৃকম্, তাও-তো তুই, অহো,
এতিমের হদ্দ একটা বাঁকাচাঁদ-হাতে
বেনাঘুড্ডি উড়তেছিস এ-ছাতে ও ছাতে।
কমলা
১
আমারে ফিরায়ে লহো, অয়ি বীরাঙ্গনে!
ফাতেমা ফেরদৌসি জেহরা কমলা শেফালি—
যে-মহাজঙ্গের ক্ষত তোমার জঘনে
ক্লেদজ কুসুম আমি তার। মৌলা আলি,
আমি-কি বাঙালি, নাকি পাঞ্জাবির জালি?
যে-দেহে পয়দাইশ, রব্বা, আমি সে-দেহের?
না তার, যে তারে দিল নয়ানজুলি-ডালি?
কে গো, মা, তাপসী পাল, কে শবমেহের?
এ-দেশে বেশ্যার বেশে যে-সব মেয়ের
জন্ম হয় উদ্বৃত্তের মতো, দুর্বৃত্তের
সহসা-শয্যায়, যারা তথাপি শেহের-
জাদির দাদির মতো ধৃষ্ট-নারীত্বের
রিষ্টিটুকু ল’য়ে জাগে দ্বিতীয় প্রভাতে,
তাদের সন্তান বাড়ে কার দুধে-ভাতে?
২
মা, তোমার মনে পড়ে, নরিয়েগা নামে
প্রেজিডেন্ট ছিলা এক মায়াদের দেশে,
ইয়াংকি লৌড়ানি খায়া ঢুকেছিল-যে সে
ভাতিকান দূতাবাসে সদাপ্রভুধামে?
যিশু, পোপ, কেহ তারে বাঁচাতে পারে নি।
আমাদের সাদ্দামের, গাদ্দাফির নামও
মনে আসে। গ্রটো থেকে এবে একটু নামো,
ওগো আদ্যাশক্তি, হেরো, রোহিঙ্গা-কারেনি-
বসনিয়-চেচনিয় সাইকি টেররিস্ট-হাতে
হারাকিরি বেছে নিচ্ছে; বাগদাদিরা যত
জান্নাতের হাঁড়ি ভাঙছে দোজখের হাটে।
যত মারছে, যত মরছে, তত সমুন্নত
কাফের-মোয়াহেদের অব্যয় বাবেল-
বিশ্ব-কর্পোরেশনের বিষের আপেল।
৩
হিলারিতে হবে না, মা, তোমার এ-বোনের
বেবুনের কুলে জন্ম, আমাদের চাই
নোতুন মেসায়া, হয়তো সুন্দরবনের
পাওয়ার-প্লান্টের থেকে উগড়ে-আসা ছাই
গায়ে মেখে সে দাঁড়াবে নাঙ্গা, মুখোমুখি
লম্পট বাপের, ব্লেডে ছাঁটতে তার লোভ,
হয়তো আমরা থাকব না, মা, কিন্তু খোকাখুকি
না-পাবে গো নীলতিমির তিমিরে বিলোপ।
আমরা তারে বীরাঙ্গনা ডাকব— বীরাঙ্গনা!
শব্দটাই!— সভ্যতার মুখে রক্তথুথু,
নাকে নাভিশ্বাস — না না, নাক না-তো, ঘোণা-
ঐ-যে ট্রাম্প, ঐ-যে তার সম্বন্ধীর পুতও
ইউনিয়ন জ্যাক-গায়ে ঠেলে করছে দেনালেনা…
হিলারিতে হবে না, মা, লাগবে মাগদালেনা।
৪
পিয়েতা-য় পিতা নাই— মায়ে আর পোয়ে
ক্রিস্টালের বৃষ্টি যেন, জ’মে-যাওয়া আলো,
নোনতা-লাল অ্যালকোহল কে কাকে খাওয়াল-
কালভারি, কারবালা বাইরে থরথর কাঁপয়ে,
বিশ্বযুদ্ধে লণ্ডভণ্ড হোলি আর্টিজান।
পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম— আমি মাতৃক্রোড়ে;
স্বর্গ নাই, ধর্ম নাই শ্মশানে বা গোরে,
শোক?— না এ শোকও-তো না, এ এক সুনসান
তাকায়ে থাকা-ই, আল্লাহ! পোয়ে আর মায়ে
ঊর্ধ্বে আর অধে; কার ধড়ে কার প্রাণ,
বা মরণ- এ-যে এক সোনার আঘ্রাণ-
সময়ের চক্রধুরা যা দেয় থামায়ে।
পিয়েতা-য় পিতা নাই, আছে খালি মা-ই :
গর্ভ বা কবর, একটা মুখ, একটা মাই।
৫
কত পুনর্জন্মাবধি খনা ও মিহির
আমরা-দু’টি, হায়ারার্কি বদলে-বদলে আছি;
পিতা-পুত্র-ভ্রাতা-ভর্তা, তোমার সিঁড়ির
নানা ধাপে নানা বারে আমি চড়িয়াছি
যেন-বা বানর চড়ছে তেলে-পিছলা থামে-
পাকড়াতে পাকড়াতে চোখ ঠোঁট বুক যোনি
কখনও উচ্চৈঃ, কভু নীচৈঃ সে নামে:–
অসঙ্খ্য নক্ষত্রবীথি জ্বালায় রজনি
আঁধারের ঘোমটা-তলে। কিন্তু— ঘোমটা যদি
একটাবারও খুলে পড়ে? নামে যে মিহির,
সেও তবে সেরা খোলে, শাশুড়ি-ননদি
দু’-হাতে ফতোয়া ল’য়ে তুরন্ত হাজির:
ডাইনি তুই! ছেলেধরা! কাটব তোর জিব!
ফরজ না-যদি হয়ও, কোরবানি ওয়াজিব।
৬
দুধের নহর, আম্মি, দুধের নহর
জান্নাতে জর্দান বয়–মানাতের দধি,
শূন্যের ঘৃতের স্রোতঃ, ক্ষীর নিরবধি।
তেনচতিৎলান ভাসে, আলেপ্পো শহর,
ভাসে ব্রহ্মা, জগদম্বা, আল্লাহ, এলোহিম,
ভাসে কালো-আলো আর ধলা-অন্ধকার,
কমলে কমলা দেয় জন্মের জোকার,
নিজের ছায়ার ঘিয়ে করিম রহিম
ধীরে-ধীরে গুলে যায়, আলো হয় ছায়া,
দুধের বোঁটার মতো ফোটে— মহামায়া।
আমার ঔরসে তুই, আমি গর্ভে তোর,
দুধ আরও গাঢ় রেতঃ, গাঢ়তম আলো,
আমাদের মাঝখানে ঘি, দুধেরও ভিতর-
মোনাডের কালো-লিঙ্গে ঢালো, আরও ঢালো…
৭
নিমফল-নিছনি ঐ আস্বচ্ছ আঙুর-
গুলি, তারই বাহাত্তরটা আমি খেলতে চাই;
কত জ্যামিতির, কত ঢকের, রঙের
সুলতানা- সয়লাব মল, সেই আঙুর নাই,
তকতকে, টসটসে গুলা, হুরির ঠোঁটের
চুমু— মেড়া কিশোরের কামরাঙা-শরীরে
ফুলের বেগুনি ব্রীড়া, ভোরের মাঠার
মাখম, ফরফরে এক খর্ব শফরীরে
রুখে-রাখা যেন কেওড়া-জলের কলস!
আঙুর, আঙুর-রে ভাই, আঙুর ওগো বোন,
বিচিছাড়া দাড়িমের দানা তোমরা এসো,
পাপড়ির লাহান খোলো আমার তবন…
হুরির জিহ্বার হাল্কা হল্কা, আর ফেঁশো-
খশানো কোঁড়ল— মা গো! পবিত্র কলুষ!
৮
অক্ষর আমার বলি, আমি অক্ষরের,
বৈখরী খড়ের গোরু, নিজেকে সে খায়,
তারই সে জবান শেখে, সে যাকে শেখায়,
আয়নার ভিতরে এক আয়না লক্ষ্য এর–
আমিও অক্ষরে আর অক্ষরও আমাতে,
অক্ষরের বাইরে আমি, আমার বাইরে সে।
স্বাধীন ছায়ার সনে নামিলা র্যাটরেসে
কায়া—অহো, হরি-হর স্বহরণে মাতে,
উভয়ের হ-র ঐ নর্মদায় ভাসে,
খালি অ-ই প’ড়ে থাকে নর্দমার পাশে
ব্যঞ্জনাবিহীন। আমি, জন্মনিরক্ষর,
কান্ধে বহি জগদ্দল শূন্যের রগড়-
ত্রিত্বের তৃতীয়া, অয়ি, করো মোরে বিয়া,
হরফ-বরফ ভাঙো, বসরার রাবেয়া!
৯
তোমার কদম-তলে যে-লাল গালিচা
তা আমার সিনা, জান, আমার অওকাত
ইতনা। ও-পায়ের ছাপ যেথায়, বালিকা,
যা তোমার পায়েতক্ত, তা মম মোকাম।
বাইরে যা, তা ইয়াখ-কঠিন চির-জেমেস্তান।
জাহানারা, যত শের তব তবসসুমে
ঝরে, আমি তা-সবের ললিতবিস্তর,
আতর-সুরভি লহু, খুদকুশি উৎসবে।
আমারে আপনাও, কবি, তব রেকাবির
আনার-দানার সাথে, ঘিয়ের মিঠালোয়
বাঙালি জবানে; দেখো, এ’ দীন ভিখারি
গাইবে গীতগোবিন্দম্। তোমার তলব
আমারে এনেছে তুলে ম্যানগ্রোভ-শিকড়
ভুঁইফোঁড় উত্থানে যদি, জান্নাতও-কি দূর?
১০
এ-আকাশে পাখা ম্যালো, নবনীতা নেহা,
আমি তব প্রিয়তম উদয়ন, মানে
কামিকাজি-সামুরাই মরণ-বিমানে;
শেখাও আমাকে উড়তে, কিংবা করো রেহা।
পাণিনি পারে নি সাধা সাধিতে আসমানে,
খালি যে-বা যাবে সূর্যে, বা যে বাড়াবে হা
ম্যানিকিন-হেন, যার আসন্ন ইন্তেহা,
লো ললনে, খোলো তুমি তারই বিদ্যমানে
জেব্রাজিন; যে বাজাবে পাখাবজে সুর
বা সেতারে তাল— আমি অশোক নতুবা
সাজি দারাশিকো, কিংবা স্রেফ আদিশূর-
জি হাঁ— এ-বাতেনি শের: বা তার মর্তবা
দায়েমি নামাজে ঢাকে সকল কসুর-
মৌচাকে চাউনির ঢিল! অগম্যা কি? তৌবা!
১১
মোরে করো ইস্তামাল, ওগো অভিজ্ঞতা!
যেন আমি ছিলামই না তোমার চোখের
পলক পড়ার আগে, তোমার নখের
উপরে তুষার-আরশি থেকে ছিটকে-ওঠা
একটা স্পার্ক— আমি- ওগো কস্তূরীর কৌটা,
দক্ষিণ-সাগরে ভাসা ঘিয়ের অ্যাম্বারগ্রিস,
সুমের জাগায়ে যাওয়া দুরন্ত টাইগ্রিস,
এবার আমারে নাও, যে-খাস্তা পরোটা
তোমার ওদন হবে ব’লে আছে ব’সে
মোনাডের জন্মপূর্ব অসময় থেকে
বার-বার ম’রেও গেছে, তৃতীয় দিবসে
আরবার জাগিবে ব’লে ভিখারির ভেকে,
জান্নাত মাগে না সে-তো, নফর তব সে,
যে-চাঁদ আমার শুধু, সে-চাঁদ ছাড়ে কে?
১২
আমি নাই, তাই আমি আছি। জোনাকিরা
নিবে থেকে, থেকে যায় নিবে যে-রকম—
আলোতে আলোই দ্যাখো, কাফনের ব্রীড়া,
কেকারে ঢাকিয়া রাখে যেমতো পেখম।
আমার কবর তুমি, তবু, বেঁচে আছো।
কবরে-কি আমি থাকি? না-ই মনে হয়।
আমাকে বুকের মাংস যবে বেচিয়াছ
সেথায় মাংসের ভুখ নাই মনে হয়
আর। নাকি থাকে? তাও? যদি থাকে তাও,
কিনেছ নিজেরে বেচে আমার অভাব
বুকে? মাংসে? রজমান্তে এ-নীরবতাও
নিমিত্ত। কারণ নয়। ঘরের আসবাব
নয়। আসবাবের ঘর। কার্য বা কারণ
মর্গান লা ফে-র বুকে খোঁড়ে পেনড্রাগন।
১৩
অসহ্য, অশ্রাব্য,- তুমি – না না, তুমি নও,
‘তুমি’ শব্দটাই; ‘তুমি’ হয়তো তুমি নয়,
সে তোমার সর্বনাম হ’লেও, নির্ণয়
করে না তোমাকে, তুমি অনিচ্ছাতে বও
আস্ত-আস্ত ত উ ম ও আস্ত একটা ই,
অতিব্যক্ত হ’য়ে চলে যে আমি-র ঠোঁটে,
পয়লা-পয়লা নওলা নওশা, বোঁটা হ’য়ে ফোটে,
তারপর ডোবার পোনা ডোরাকাটা ঈল!
তোমার-তো বটেই, ‘তুমি’ আমারও ইজ্জতে
হাফসোল পরায়ে সারছে, তাই-তো আমরা দুইই
পিনকুশন শুয়ে আছি, আশরীর সুই,
অম্বা-তো শিখণ্ডী পায়, ভীষ্মের কী জোটে?
তুমি ‘তুমি’ কখনও ছিলাই না। থাকবাও না।
তবু এ-’তুমি’ই করবে তোমার বর্ণনা।
১৪
দশ মহাবিদ্যা এবে হৈল সমাপন।
ভেবেছিনু এ-রেলগাড়ি না-থামিবে আর,
প্যারালেল য়ুনিভ্যর্স হ’য়া যাবে পার
তবু টঙ্গি পৌঁছাবে না ভৈরব জংশন
কভু। চৌদ্দ-চৌদ্দ ক’রে কালভারি-প্যাশন
কানীন-পুত্রের কাটল কোহকাফে, এইবার
এইবার খুকুর চোখ খুলল অন্ধকার
দ্বিতীয় মিলনে। মায়া, কা’তে সমৰ্পণ
কৈলা তুমি সাদা বুক, রঙিন দু’চোখ?
সে-কি পায় না বদবু মম তোমার ভিতর?
নিবে গেছে দীপাবলি? সকল সূচক
ঘুরে গেছে? নাকি, চাঁদ, উল্টা-পিঠই তোর?
রোজা-শেষে সবই রোচে। না-হয় রুচুক।
মোবারক হোক তব ঈদুল ফিতর।
Leave a Reply