প্রতীক্ষা
পাতী অরণ্যে কার পদপাত শুনি
জানি কোনও দিন ফিরবে না ফাল্গুনী;
তবে অঞ্জলি উদ্যত কেন পলাশে?
বনের বাহিরে ক্ষওয়া মাটি ধূ ধূ করে;
নেই ফসলের দুরাশাও অম্বরে;
যা ছিল বলার, কবে হয়ে গেছে বলা সে।।
মহাশূন্যের মৌনে পরিস্ফীত,
বিবিক্তি আজ বেষ্টনীবিরহিত;
অধুনায় নিশ্চিহ্ন অতীত, আগামী;
নাস্তিতে নেতি স্বতঃসিদ্ধ প্রমা,
সোহংবাদীর আর্তি আত্মোপমা,
অগতির গতি মনোরথ বৃথা লাগামই।।
আরও এক বার, হাজার বছর আগে,
বিপ্রলব্ধ আস্থা অন্তরাগে
খুঁজে পেয়েছিল উজ্জীবনের প্রেরণা;
এবং আবার সহস্র বৎসর
পূবে আসে বটে, তবু মন্বন্তর
মানবেতিহাসে সর্বনাশেরই দেশনা।।
অন্তত এতে সন্দেহ নেই আর
অলাতচক্রে ঘুরে ঘুরে, সংসার
অনাদি অমাকে আনে আমাদের গোচরে;
পুঞ্জ পুঞ্জ ব্যক্তির বুদ্ধুদ,
সময়ের স্রোতে অচির, অরুন্তুদ,
মমতার জোট পাকায় এ-চরে, ও-চরে।।
অভাব হয়তো স্বভাবেরই অগ্রজ :
নিরবধি তাই প্রভাসে ফুরায় ব্রজ–
প্রতিজ্ঞা রাখে মরণ ত্রাতার বদলে;
বিশৃঙ্খলার পরাকাষ্ঠায় স্থাণু,
পৃথিবী অনাথ; যথেচ্ছ পরমাণু;
প্রগতিক শুধু কালভৈরব সদলে।।
অতএব কারও পথ চেয়ে লাভ নেই :
অমোঘ নিধন শ্রেয় তো স্বধর্মেই;
বিরূপ বিশ্বে মানুষ নিয়ত একাকী।
অনুমানে শুরু, সমাধা অনুশ্চয়ে,
জীবন পীড়িত প্রত্যয়ে প্রত্যয়ে :
তথাচ পাব না আমি আপনার দেখা কি?
কলকাতা
২৭ জুলাই ১৯৫৪
Leave a Reply