তরিতা পুরাণ – রূপক সাহা
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ২০১৭
প্রচ্ছদ : সুমন
প্রকাশক : শংকর মণ্ডল
.
উৎসর্গ
মনসাভক্ত আমার মামিমা
রঞ্জুলা রায়কে—
.
ভূমিকা
মা মনসা হলেন লৌকিক দেবী৷ তাঁকে পৌরাণিক দেবীর মর্যাদা দেওয়া হয় না৷ জন্মসূত্রে তিনি দেবকন্যা৷ অথচ দেবিত্ব অর্জন করার জন্য তাঁকে কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল৷ কে তাঁর প্রতি অবিচার করেননি? পিতা শিব, সৎমা চণ্ডী, স্বামী জরতকারু থেকে শুরু করে সমস্ত দেবকুল এমনকী, মানুষ রূপে চাঁদ সওদাগরও মনসাকে অবজ্ঞা করেছেন৷ তাঁর মতো আর কোনও দেবকন্যাকে, এত দুঃখ সহ্য করতে হয়নি৷ মঙ্গলকাব্য-কাররাও তাঁর প্রতি নির্দয় ছিলেন৷ তাঁর চরিত্রকে এমনভাবে উপস্থাপিত করেছেন যেন, তিনি অত্যন্ত জটিল, কুটিলা নারী৷ প্রতিহিংসাপরায়ণা, নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পারেন না, এ হেন কোনও কাজ নেই৷ আসলে কি তাই? মনসার জন্মবৃত্তান্ত থেকে শুরু করে তাঁর দেবিত্ব অর্জনের পর্যায়ের ঘটনাগুলো যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তা হলে তাঁর স্বপক্ষে অনেক যুক্তিই দেওয়া যায়৷ মনসার জীবনে দুটি পর্ব৷ একটি দেবখণ্ড ও অন্যটি মর্ত্যখণ্ড৷ দেবখণ্ডে তাঁর জন্মকাহিনী থেকে মর্ত্যে আগমন পর্যন্ত বিস্তারিত৷
মনসার জন্মবৃত্তান্তটাই অভিনব৷ শিব যখন কাশীতে এসে বসবাস করছেন, তখন মা চণ্ডী সরযূনদীর তীরে একটা উদ্যান করেছিলেন৷ শিব তা জানতেন না৷ মহর্ষি নারদের কাছে খবরটা জেনে গোপনে শিব সেই উদ্যানে গিয়ে হাজির হলেন এটা দেখার জন্য যে, চণ্ডী অভিসারে যান কি না? বসন্ত কাল, মনোরম উদ্যানের সৌন্দর্য দেখে শিব কামমোহিত হয়ে গেলেন৷ উত্তেজনায় তিনি একটি বেলগাছকে জড়িয়ে ধরলেন৷ তাঁর বীর্যস্খলন হয়ে গেল৷ সেই বীর্য তিনি পদ্মপাতার উপর রেখে দিলেন৷ পদ্মের নাল দিয়ে বীর্য পৌঁছে গেল পাতালে নাগরাজ বাসুকির মায়ের কাছে৷ তিনি সেই বীর্য দিয়ে পুতুল বানিয়ে জন্ম দিলেন এক কন্যার৷ তাঁর নাম হল পদ্মাবতী৷
পদ্মা হলেন অযোনিসম্ভবা৷ কারও গর্ভে তাঁর জন্ম হয়নি৷ দেবতারা জানতেন, তিনি শিবের কন্যা৷ কেননা, পদ্মাবতীর জন্মের পর তাঁরা সবাই পাতালে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ পদ্মা শৈশবটা কাটিয়েছেন নাগ অর্থাৎ সাপেদের সঙ্গে৷ বাসুকি তাঁকে খুব স্নেহ করতেন৷ একটা সময় তিনি বুঝতে পারলেন, নাগলোকে পদ্মার অসুবিধে হচ্ছে৷ তখন তিনি তাঁকে রেখে গেলেন জনবিরল এক উদ্যানে৷ যুবতী পদ্মা একদিন একা বনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন৷ এমন সময় ঘুরতে ঘুরতে শিব সেখানে এসে তাঁকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়লেন৷ শিবকে দেখে পদ্মা কিন্তু চিনতে পারলেন৷ তখন ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘আপনি আমার পিতা! আপনি কী করে আমাকে কামনা করেন?’ এই কথা শুনে শিব খুব লজ্জায় পড়ে গেলেন৷
পদ্মা পিতৃগৃহে যেতে চাইলে শিব খুব অস্বস্তিতে৷ তিনি বুঝতে পারলেন, পদ্মাকে ঘরে নিয়ে তুললে চণ্ডী পছন্দ করবেন না৷ নানারকম সন্দেহ করবেন৷ তবুও তিনি দায় এড়াতে পারলেন না৷ ফুলের সাজির ভিতর পদ্মাকে লুকিয়ে তিনি বাড়ি নিয়ে গেলেন৷ ঘরের ভিতর ফুলের সাজি রেখে তিনি স্নান করতে চলে গেলেন৷ এদিকে চণ্ডী পুজোর জন্য ফুল নিতে এসে সাজিতে পদ্মাকে দেখে মারাত্মক খাপ্পা৷ তিনি ভাবলেন, শিব সতীন নিয়ে এসেছেন৷ পদ্মাকে তিনি ঝাঁটাপেটা করতে লাগলেন৷ মার খাওয়ার সময় পদ্মা বারবার বলতে লাগলেন, তিনি শিবের কন্যা৷ কিন্তু, তা বিশ্বাসই করলেন না চণ্ডী৷ পদ্মা তখন মা গঙ্গাকে ডাকতে লাগলেন৷ গঙ্গা এসে চণ্ডীকে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেন৷ তা সত্ত্বেও চণ্ডী নিবৃত্ত হলেন না৷ শেষে মার সহ্য করতে না পেরে শেষে পদ্মা বিষপ্রযোগ করে মা চণ্ডীকে মেরে ফেললেন৷ সারা জগতে অন্ধকার নেমে এল৷ জগৎতারিণী মা, আদ্যাশক্তি মহামায়া মৃত৷ দেবতারা এসে হায় হায় করতে লাগলেন৷
মা মনসার সঙ্গে শিব কিন্তু পিতৃসুলভ আচরণ করেননি৷ তাঁরই কারণে একটা বয়স পর্যন্ত মনসা পারিবারিক বৃত্তে থাকার সুযোগই পাননি৷ শিবের অন্য ছেলে-মেয়েরা জন্মসূত্রেই দেব-দেবী৷ অথচ মনসা সেই মর্যাদা পেলেন না৷ পিতা হিসেবে শিব কখনই তাঁর কর্তব্য পালন করেননি৷ প্রতিটি ঘটনায় তিনি মা মনসাকে অবজ্ঞা করেছেন৷ শিবের চরিত্রটাই ন্যাক্কারজনক৷ কখনও তাঁকে কামার্ত পুরুষ বলে মনে হয়৷ কখনও তিনি স্ত্রৈণ৷ ভয়ে তিনি চণ্ডীকে সরল সত্যটা বলার সাহস দেখাতে পারেননি, মনসা তাঁরই ঔরসজাত৷ চণ্ডী মৃত, এই খবরটা পাওয়ার পর শিব দৌড়ে এলেন এবং কাকুতি মিনতি করতে লাগলেন, যাতে মনসা ফের চণ্ডীকে বাঁচিয়ে দেন৷ পিতার অনুরোধে মনসা বিষ প্রত্যাহার করে বাঁচিয়ে দিলেন চণ্ডীকে৷
পিতৃগৃহে মনসা রয়ে গেলেন৷ কিন্তু চণ্ডীর গঞ্জনা বিন্দুমাত্র কমল না৷ মনসার যখন বিয়ের কথা উঠল, তখন দেববংশের কেউ তাঁর কপালে জুটলেন না৷ নারদের কথায়, শিব তাঁকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেলেন এক মানুষের সঙ্গে৷ হ্যাঁ, জরৎকারু মুনি খুব উচ্চবংশীয় ছিলেন৷ তাতে কোনও সন্দেহ নেই৷ তবে কথা হল, দেবকন্যাদের আর কারোর সঙ্গে কিন্তু মানুষের বিয়ে হয়নি৷ মনসাই ব্যতিক্রম৷ তবুও এই অন্যায়টা মেনে নিয়েছিলেন মনসা৷ এদিকে, জরৎকারু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, তিনি বিয়ে করবেন না৷ মেয়েকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় শিব ছলনার আশ্রয় নিলেন৷ কামদেব মদনকে ডেকে তিনি বললেন, এমন কিছু করো, যাতে জরৎকারু আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়৷ রতির সঙ্গে তমসা নদীর তীরে গিয়ে কামদেব মদন তখন পুষ্পধনু দিয়ে বাণ মারলেন৷ তাতে জরৎকারু বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন বটে, কিন্তু দুর্ভাগ্যের, বিবাহিত জীবনের সুখ মনসার কপালে এক রাত্তিরের বেশি জুটল না৷ শিব জানতেন, জরৎকারু অত্যন্ত বদমেজাজের৷ তা সত্ত্বেও, মনসাকে তাঁর হাতে তুলে দিলেন কেন?
মা চণ্ডীও বিয়েতে আপত্তি করেননি৷ মনসার কাছে হার তিনি মেনে নিতে পারেননি৷ তাই চুপ করেছিলেন৷
মনসামঙ্গলে মা চণ্ডীকে মেরে ফেলার অংশটা কিন্তু বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় না৷ যিনি জগৎজননী, জগতের রক্ষাকারিণী, সেই মা চণ্ডীকে মনসা কী করে মেরে ফেলবেন? তাঁর এত ক্ষমতা কী করে হতে পারে? এটা মঙ্গলকাব্যকারদের বানানো গল্প৷ যাতে মা মনসাকে খলনায়িকা করে দেওয়া যায়৷ কিন্তু, তা তাঁরা করতে পারেননি৷ মা মনসা তো ঠিকই করেছিলেন৷ মা চণ্ডীর ঝাঁটার আঘাতে তাঁর একটা চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল৷ তিনিই বা ছেড়ে দেবেন কেন? প্রত্যাঘাত করবেন না কেন? পরে অবশ্য মা চণ্ডীকে বাঁচিয়ে তিনি ক্ষমার মনোবৃত্তি দেখিয়েছেন৷
কাশীতে মনসাকে বিয়ে করতে এলেন জরৎকারু৷ ঘটা করে বিয়েটাও হয়ে গেল দেবতাদের উপস্থিতিতে৷ বাসর ঘরে বসে জরৎকারু মনসাকে বললেন, তুমি যদি কোনওদিন আমার কথার অবাধ্য হও, তা হলে তোমাকে ছেড়ে আমি চলে যাব৷ মনসা কথাটার মানে তখন বুঝতে পারেননি৷ কিন্তু বাসর ঘরে রাত্রি গভীর হলে জরৎকারু তাঁকে বললেন, বিয়ে করতে এসে আমার তপস্যায় বিঘ্ন ঘটেছে৷ তুমি যেখান থেকে পারো, আমায় কুশ আর ফুল এনে দাও৷ আমি আহ্নিকে বসব৷ কিন্তু মনসা উত্তর দিলেন, আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷ জরৎকারু মারাত্মক রেগে গিয়ে কটু কথা বলতে লাগলেন৷ শুনে মনসার দুই চোখ বিষে ভরে উঠল৷ তিনি স্বামীর দিকে তাকাতেই জরৎকারু মুখে রক্ত তুলে অচেতন হয়ে পড়লেন৷ ভোরবেলায় শয্যা তুলতে এসে মা চণ্ডী এই দৃশ্য দেখে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলেন৷ শিব সেখানে হাজির হয়ে জানতে পারলেন, কী কারণে জরৎকারু মৃতপ্রায় হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন৷
শিবের অনুরোধে জরৎকারুকে বাঁচিয়ে দিলেন মনসা৷ কিন্তু, তখন জরৎকারু সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি মনসার সঙ্গে ঘর করবেন না৷ তমসা নদীর তীরে তাঁর আশ্রমে ফিরে যাবেন৷ লোকনিন্দার ভয়ে শিব অনেক করে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন৷ মনসা সারাজীবন কাটাবে কী করে? কিন্তু জরৎকারু গোঁ ধরে রইলেন৷ শেষে বললেন, মনসা আমার কাছে কী চায় বলুক৷ আমি দিতে রাজি৷ দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে মনসা আটবার পুত্রবর কথাটা বলায় জরৎকারু ধরে নিলেন, মনসা পুত্রসন্তান চান৷ তিনি তখন মনসার নাভিতে হাত রেখে বললেন, তোমার মনষ্কামনা পূর্ণ হবে৷ তোমার গর্ভে আট পুত্রসন্তান আসবে৷ তারা হবে নাগজাতীয় এবং মহাতেজা৷ তাতে তোমার গৌরব বাড়বে৷ বলে তিনি চলে গেলেন৷ নারী হিসেবে এখানেই মনসা অনবদ্য৷ প্রথম রাতেই তিনি মাথা তুলে প্রতিবাদ করেছিলেন৷ সঠিক কারণেই শাস্তি দিয়েছিলেন স্বামীকে৷
চণ্ডী কিন্তু মনসাকে টিঁকতে দেননি পিতৃগৃহে৷ রোজই তিনি শিবের কাছে অভিযোগ জানাতেন, মনসার সঙ্গে থাকা সম্ভব না৷ তিনি হিমালয়ে পিতার কাছে চলে যাবেন৷ শুনতে শুনতে শিব একদিন আর মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারলেন না৷ মনসার কাছে গিয়ে বললেন, চলো, তোমাকে বনবাসে যেতে হবে৷ চণ্ডী তোমার সঙ্গে থাকতে চাইছেন না৷ শুনে মা চণ্ডীর কাছে গিয়ে অনেক করে কাকুতি মিনতি করলেন মনসা৷ কিন্তু তাঁকে বিদায় করতে পারলেন বাঁচেন চণ্ডী৷ তিনি রাজি হলেন না৷ বাধ্য হয়ে পিতৃগৃহ থেকে বেরিয়ে এলেন মনসা৷ বনবাসে দিতে এসে শিব বুঝতে পারলেন, কাজটা তিনি ঠিক করছেন না৷ অনুতাপে তিনি কেঁদে ফেললেন৷ তাঁর চোখের জল থেকে এক কন্যার জন্ম হল৷ শিব তার নাম রাখলেন নেত্রা৷ জন্মের পরই নেত্রা শিবের কাছ থেকে বর আদায় করে নিলেন, মনসা যেন সারা জীবন তাঁর কথা শুনে চলেন৷
এর আগে দেবসভায় এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল, যার কারণে মর্ত্যে মনসাকে আসতেই হত৷ নাগভূষণা হয়ে একদিন মনসা দেবসভায় বসে আছেন৷ এমন সময় চান্দ অধিকারী বলে শিবের এক কিঙ্কর সেখানে হাজির হলেন৷ এই চান্দকে শিব বর দিয়েছিলেন, নাগেরা তাঁকে দেখলেই পালাবে৷ তাই মনসার শরীর থেকে সব নাগ পালিয়ে যায়৷ মনসা নগ্ন হয়ে যান৷ রুষ্ট হয়ে তিনি চান্দকে শাপ দেন, তোর জন্য আমাকে লজ্জিত হতে হল৷ তোকে মর্ত্যে গিয়ে জন্মাতে হবে৷ শিবভক্ত চান্দ পিছু হটলেন না৷ তিনিও মনসাকে শাপ দিলেন, যতদিন না আমি তোমার পুজো করব, মর্ত্যে তোমাকে কেউ পুজো করবে না৷ অর্থাৎ দেবলোকেই চাঁদের সঙ্গে মনসার শত্রুতার শুরু হয়েছিল৷ শিবের সামান্য সেবক হয়ে চাঁন্দ কী করে মনসাকে পাল্টা শাপ দিতে পারেন, সেটাই খুব রহস্যময়৷ মনসার এমনই দুর্ভাগ্য, একজন মানুষের পুজো নিয়ে তাঁকে দেবিত্ব পেতে হল!
চাঁদ সওদাগরের সঙ্গে মা মনসাকে লড়িয়ে দেওয়ার পিছনে কিন্তু শিব৷ অবস্থাটা যখন এমন দাঁড়াল যে, চাঁদ আগে পুজো না করলে মা মনসা দেবীত্ব অর্জন করতে পাবেন না, তখন তো শিব স্বচ্ছন্দে বলে দিতে পারতেন, চাঁদ একবার অন্তত পুজোটা করে দাও৷ তাতে তো শিবের প্রতি ভক্তসংখ্যা কমে যেত না৷ তা না করে শিব আড়ালে বসে দু’জনের লড়াই দেখতে থাকলেন৷ এমনটা নয়, চাঁদ যখন বিপদে পড়েছেন, তখন মা মনসার সঙ্গে সম্মুখসমরে এসে তিনি চাঁদকে উদ্ধার করেছেন৷ উল্টোদিকে, শিবের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে চাঁদকে কিন্তু দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাতে হল৷ হ্যাঁ, মা মনসা চাঁদ সওদাগরের অনেক ক্ষতি করেছিলেন৷ কিন্তু পুজো পাওয়ার পর সবই তিনি চাঁদকে ফিরিয়ে দেন৷ তাঁর সব ধনসম্পত্তি, মৃত সাত পুত্রসন্তানকেও৷ চাঁদের পরিবারের ষোলোজনকে তিনি স্বর্গেও পাঠিয়েছিলেন খুশি হয়ে৷
আমার তো মনে হয়, মনসাই ঠিক৷ উনি যা কিছু করেছিলেন, তা নিজের অধিকার অর্জনের জন্য৷ নারীশক্তির ধ্বজা ওড়ানোর জন্য৷ সত্যের পথে ছিলেন বলেই মা মনসা বারবার লড়াইয়ে জিততে পেরেছেন৷ চণ্ডী, শিব… প্রত্যেকে তাঁর কাছে হার মেনেছেন৷ মনসার জীবনে যতবার ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটেছে, ততবারই সাফল্যের সঙ্গে তিনি জয়ী হয়ে বেরিয়ে আসেন৷ আর জেতার জন্য কোনও দেবতার সাহায্য পাননি৷ কখনও চানওনি৷ চাঁদের মতো ক্ষমতাধর এক পুরুষকে উনি বাধ্য করেছিলেন আনুগত্য স্বীকার করতে৷ মনসামঙ্গলে মা মনসার চরিত্রচিত্রণটাই তৈরি করা হয়েছে ভয়ের আবরণে৷ ‘উনি সাপের দেবী৷ সাপ মানে, যে প্রাণীটাকে মানুষ প্রচণ্ড ভয় পায়৷ অথচ মনসা সাপের দেবী হলেও, তিনি কিন্তু সাপের মতো দেখতে নন৷ তিনি মানুষের মতোই…৷’
নারীশক্তির এই যুগে মনসা কাহিনীর নতুন বিশ্লেষণ প্রয়োজন৷
Leave a Reply