ডিভোর্স ইত্যাদি – অভীক দত্ত
১)
ভাই প্রিয়,
চিঠিটা প্রিয় প্রিয় দিয়েও শুরু করা যেত, কিন্তু বিশ্বাস কর, বিয়ের পাঁচ বছর পরে আর তোমাকে প্রিয় বলতে পারছি না। শেষ কবে আমরা আদর করেছি, আমার নিজেরও মনে নেই। অফিস থেকে ফিরে মদ গিলে তুমি যখন তোমার ভুঁড়িটা বাগিয়ে শুয়ে থাকো, বিশ্বাস কর, তোমার পেছনে কষিয়ে লাথি মারার ইচ্ছা প্রতিদিন সংবরণ করি।
তোমার অফিস, তোমার খরুস মা (ঢেপসি খায় শুধু পেপসি), তোমরা ঢ্যামনা ঠরকি বাপ, তোমার চালুপুরিয়া বোন সব শালা এক একটা জাত হারামি। রিসেন্ট তোমার সঙ্গে আমার ঝামটা মনে আছে? তুমি আমাকে কত কিছু বলে দিলে? একটু মনে করে দেখো, ব্যাপারটা তোমার মার জন্য শুরু হয়েছিল। হ্যাঁ, মেনে নিচ্ছি, লোকের বয়স হলে লোক একটু পিটপিটে হয়ে যায় কিন্তু মাইরি, আমার মারও তো বয়স হচ্ছে গুরু। কই, মাকে তো কোনদিন দেখি নি এরকম করতে। তোমার বাপের কথা নাই বা বললাম, স্নান করে যখনই বাথরুম থেকে ঘরে ঢুকব, তখনই তোমার বাপকে বাথরুম যেতে হয়। মাইরি বউমাকে টাওয়েল জড়ানো দেখতে এত ভালো লাগে? আর তোমার বোন। যত কম বলি তত ভাল। শুধু একটা ইনফো জেনে রাখো, তোমার বোনের ব্যাগ থেকে সেদিন আমি আই পিল পেয়েছি। হ্যাঁ হ্যাঁ, লুকিয়ে ব্যাগ চেক করতে হয় নি। ওই বলেছিল ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে নিতে, বের করতে গিয়ে দেখি এই কান্ড। বুঝতেই পেরেছ মালটা বিয়ের আগেই পাকিস্তান জয় করে ফেলেছে।
যাক গে, চিঠিতে বেশি ভাট বকতে ইচ্ছা করে না। একদিন ফোন করেও তোমাকে হুল্লাট খিস্তি মেরে দেব। কাজের কথায় আসি। আমি ভাই প্রেমে পড়েছি। বেধড়ক, জবরদস্ত প্রেম। ছেলের নাম রাহুল, ও অবাঙালি, সুবিধার মধ্যে করবা চৌথ করা যাবে। ধনতেরাসে তোমার মত ধন বাগিয়ে শুয়ে না থেকে আমাকে সোনা দানা কিনে দেবে। রাহুলের সঙ্গে আমার টিন্ডারে আলাপ হয়েছে। আমরা একদিন মিট করেছি। অত্যন্ত ভদ্র ছেলে। একবারও শুতে চায় নি। তবে আমার ইচ্ছা ছিল। বুঝতেই পারছ, পেটে খিদে মুখে লাজ থাকলে যা হয়, আমি বাল ছিঁড়েছি। তবে বিশ্বাস কর, কলকাতা শহরে অনেক হোটেল আছে। যে কোন দিন শুভ উদ্বোধন হয়ে যাবে।
সুতরাং তুমি মার গাড়াও।
উকিল ফুকিলের ঝামেলায় যেতে চাই না বস, বাচ্চা কাচ্চা হয় নি। তোমার যা পরিস্থিতি, যে লেভেলে ভুঁড়িটা বাড়ছে, আর ছোটভাই কমছে, এ জন্মে তোমার আর বাপ হওয়া হবে না।
ভালো থাক।
আরও মদ খাও। তারপর বেলুনের মত ফুলতে ফুলতে একদিন ফেটে যাও।
ইতি
তোমার আজ থেকে প্রাক্তন
দীপিকা
.
প্রিয় চিঠিটা পড়ল মন দিয়ে। একবার না, দু বার না, তিনবার পড়ল। তারপর গম্ভীর গলায় বলল “হাতের লেখাটা খুব বাজে”।
প্রিয়র মা কাদম্বরী কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন “তুই এত কিছু পরে শুধু হাতের লেখা দেখলি বাবু? আমাকে খরুস বলল, তোর বাপকে ঢ্যামনা বলে দিল, বুল্টিকে… বুল্টির তো হচ্ছেই, যাক গে, তুই কোন স্টেপ নিবি না?”
প্রিয় বলল “মা কানের কাছে ভ্যাজ ভ্যাজ কোর না তো, অফিসে একটা প্রেজেন্টেশন আছে আজ। বউ গেলে বউ পাওয়া যাবে মাইরি কিন্তু এই বাজারে চাকরি গেলে ফুচকার দোকান দিতে হবে”।
কাদম্বরী রেগে গিয়ে বললেন “ফুচকার দোকান? একটা লেচি বেলতে পারিস তুই? অকর্মার ঢেঁকি। রোজ বলতাম, যা বাবা একটু জিম কর, পেট তো না, শুয়ে থাকলে মনে হয় কুমির ডাঙায় উঠে রোদ পোহাচ্ছে। লজ্জা করে না তোর? বউ পালিয়েছে! ছি ছি ছি, মিসেস রায়ের বউমা শিকাগো থেকে পালিয়েছে, আর আমার বউমা কিনা এই কেষ্টপুর থেকে। স্ট্যাটাস বলে কিছু থাকল না আর”।
প্রিয় গম্ভীর গলায় বলল “তুমি পেপসি কবে থেকে খাও?”
কাদম্বরী রেগে বললেন “ওটা কথার কথা। ফেসবুকও তো ঠিক করে করিস না”।
বুল্টি ভয়ে ভয়ে এসে দাঁড়িয়েছিল। কাদম্বরী বললেন “এই বুল্টি, আজ তোর একদিন কী আমার একদিন, তোর ব্যাগে আই পিল কী করছিল?”
বুল্টি বলল “ওটা তো বউদিই আমাকে আনতে বলেছিল একদিন। তারপর ভুলে মেরে দিয়েছে”।
কাদম্বরী বললেন “আজ আসুক তোর বাবা। সব ক’টাকে দেখে নেব আমি”।
প্রিয় বলল “এখন এই ঘর থেকে যাও তো, আমার অনেক কাজ বাকি”।
কাদম্বরী চোখে জল এনে বললেন “এখন তোর মত হাতিটাকে আবার কে বিয়ে করবে রে!”
প্রিয় রেগে মেগে মার দিকে তাকিয়ে থাকল।
.
২।
“হাই সুনয়না। হোয়াটস আপ?”
বুল্টির মাথা গরম ছিল।
লিখে দিল “আমার বাবা আপ বাল”।
তারপরই জিভ কেটে ছেলেটাকে ব্লক করে দিল।
বউদি তাকে এভাবে ফাঁসিয়ে যাবে বোঝে নি সে। মা এবার চেপে ধরলে কী বলবে? অনেক ভেবে বউদিকে ফোন করল, প্রথম দু বার বউদি ধরল না। তিনবারের বার ফোন ধরল, ঘুম জড়ানো গলায় বলল “বল”।
“বউদি তুমি এটা কী করলে?” কাঁদো কাঁদো গলায় বলল বুল্টি।
“উফ তোদের জ্বালায় যদি একটু বাপের বাড়ি এসে ঘুমোতে পারি”।
বুল্টি বলল “তুমি ভোর বেলা একটা চিঠি লিখে বাড়ি চলে গিয়ে আমাদের বাড়িতে বিস্ফোরণ করিয়ে এখন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছ?”
দীপিকা বলল “তোর দাদাকে লাথ মেরেছি বলে তোর এত ফাটছে কেন? তোকে তো কালই আমি একটা আস্ত ফ্রুটস অ্যান্ড নাটস খাইয়েছি মা”।
বুল্টি বলল “সে খাইয়েছ ভাল করেছ। কিন্তু আই পিলের কথা লিখতে গেলে কেন? মা কেমন কেমন চোখে তাকাচ্ছে তখন থেকে জানো?”
দীপিকা বলল “রাগের মাথায় লিখেছি। পয়েন্ট বের করতে হবে তো! শোন ওটার জন্য তোকে আমি দশ টাকার বেশি ফুচকা খাইয়ে দেব। ম্যানেজ করে নে”।
বুল্টি গো গো করতে লাগল।
দীপিকা বলল “ঢেপসি কী করছে?”
বুল্টির খানিকটা মাথা ঠান্ডা হয়েছে। সে একটা চিউয়িং গাম মুখে দিয়ে বলল “কাঁদতে বসেছে। কার বউমা শিকাগো ছেড়ে পালিয়েছে সেই নিয়ে চাপে আছে। তুমি বাবার নামে কী সব লিখেছ?”
দীপিকা বলল “ঠিকই তো লিখেছি। এই নিয়ে দুদিন হল”।
বুল্টি বলল “কোইন্সিডেন্সও তো হতে পারে বউদি। বাবা এমনিতেই মার কাছে ডাউন হয়ে থাকে। এর পরে তো বাবাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না বাড়িতে”।
দীপিকা বলল “শোন, তুই মাথা ঠান্ডা কর। তোর দাদার মত বোরিং পাব্লিকের সঙ্গে যে পাঁচ বছর কাটিয়েছি, তার জন্য একটা বঙ্গবিভূষণ রেডি কর। আর আমাকে এখন ঘুমাতে দে। হোয়াটস অ্যাপে কথা বলব”।
বুল্টি গলায় এক্সট্রা এফোর্ট এনে বলল “আর রাহুল?”
দীপিকা বলল “বিকেলে মিট করছি। বুঝলি?”
বুল্টি অভিমানী গলায় বলল “আইপিল নিয়ে যেও”।
দীপিকা বলল “ধ্যের বাল। সিনেমা দেখতে যাব। হলের মধ্যে আই পিল কী করতে লাগবে? তোর মত নাকি? সবার কি আশিসের মত ফাঁকা ফ্ল্যাটের কপাল আছে ভাই?”
বুল্টি বলল “কেন? তুমিই তো লিখেছ কলকাতায় কত হোটেল আছে?”
দীপিকা বলল “আছে তো। কিন্তু আমি এইসব প্রপোজাল দেব নাকি এখন? খেপেছিস? ওই ছেলে এখনও হাতও ধরে নি। হেব্বি লাজুক”।
বুল্টি বলল “তাহলে আর দাদার সঙ্গে পার্থক্য কোথায় পেলে তুমি?”
দীপিকা বলল “সবেতেই পার্থক্য! তোর দাদা যত দিন যাচ্ছে একটা পাথর হয়ে যাচ্ছে। তার কোন কিছুতেই ইচ্ছা করে না। আমি কি এমনি এমনি খচে গেছি? কাল কত ইচ্ছা ছিল! এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল। বলে কিনা প্রেজেন্টেশন আছে। তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম। থাক তুই তোর প্রেজেন্টেশন নিয়ে। আমি চললাম”।
বুল্টি বলল “তুমি আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে পালালে বউদি। দেখা হলে তোমার কপালে দুঃখ আছে”।
দীপিকা বলল “কাল সাউথ সিটি চলে আয়। ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিচ্ছি”।
বুল্টি বলল “এই রাখছি রাখছি। মা আবার দাদার ঘরে ঢুকেছে। রামের বিলাপ সেকেন্ড স্টেজ শুরু”।
দীপিকা বলল “ভয়েস রেকর্ড করে পাঠাস আমাকে”।
বুল্টি বলল “হ্যাঁ হ্যাঁ। তুমি যাও। রাহুলের প্রোটিন মুখে নাও। আমাকে কেস খাইয়ে এখন পপকর্ণ হাতে নিচ্ছে!”
দীপিকা বলল “ভাক শালা। আচ্ছা। রাখ। আমি একটু ঘুমিয়ে নি”।
বুল্টি ফোন রেখে দাদার ঘরে ছুটল।
.
৩)
“ভাই দেখ তো জ্বর এসছে নাকি?”
রোশন মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। প্রিয় বিরক্ত গলায় বলল “তোর কি সারাক্ষণ রোগ রোগ বাই ওঠে?”
রোশন বলল “দেখ না, আমার কেমন কেমন লাগছে”।
প্রিয় কপালে হাত দিয়ে বলল “নর্মালের চেয়ে কম টেম্পারেচর”।
রোশন বলল “ব্লাড টেস্ট করিয়েছি কাল। সব রিপোর্ট নরম্যাল এসছে”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “কে করতে বলেছিল?”
রোশন বলল “নিজেই করিয়েছি। পরশু সকালে দুবার যেতে হয়েছিল বাথরুমে। নেটে সার্চ করলাম ডায়রিয়া কেন হয়। এক গাদা টেস্ট সাজেস্ট করল। সব করে ফেললাম। স্টুলের স্যাম্পেল নিতে গিয়ে কেস খেয়েছি হালকা। হাতে হাগা লেগে গেছিল। আচ্ছা বাদ দে, তোর প্রেজেন্টেশন রেডি?”
প্রিয় বলল “বাল রেডি। আমার বউ পালিয়েছে”।
রোশন অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলল “পালিয়েছে মানে?”
প্রিয় বলল “পালিয়েছে মানে পালিয়েছে”।
রোশন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “দীপিকা ওয়াজ হট ইয়ার”।
প্রিয় রোশনের দিকে তাকিয়ে বলল “বউদি হয় তোর”।
রোশন ইনোসেন্ট মুখে বলল “পালিয়েছে বললি তো”।
প্রিয় বলল “ভাগ তো বাল। আমার এদিকে ঝাঁট জ্বলে জি এস টি হয়ে আছে আর উনি এলেন বউদিবাজি করতে”।
রোশন বলল “কেন পালিয়েছে ভাই?”
প্রিয় রোশনের দিকে তাকাল “বলব কেন?”
রোশন প্রিয়র ভুঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলল “পালাবে নাই বা কেন? তেরো মাসের পোয়াতির মত ভুঁড়ি বানিয়েছিস”।
প্রিয় বলল “তেরো মাসে কেউ পোয়াতি হয় না”।
রোশন একটা হাই তুলে বলল “তোর তো এক্সট্রা। তাই বললাম। ওই দেখ, রঞ্জনদা এদিকে আসছে। তোকে প্রেজেন্টেশন নিয়ে জিজ্ঞেস করবে বোধ হয়”।
রঞ্জনদা সিনিয়র ম্যানেজার। প্রিয়র কিউবিকলে এসে বলল “কীরে, তোরা আড্ডা মারছিস কেন? তোর সব রেডি তো?”
রোশন বলল “ওর বউ পালিয়েছে। ওকে ছুটি দিয়ে দাও। নীরবতা পালন করুক”।
রঞ্জনদা হাঁ করে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলল “পার্টি দে ভাই”।
প্রিয় বলল “বউ পালালে পার্টি দেয় কবে থেকে”?
রঞ্জনদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “আমার বউটা যে কবে পালাবে! শালা ক্রেডিট কার্ড নিয়ে কিনে কিনে আমার পেছনটা হলহলে করে দিয়েছে”।
রোশন বলল “প্রোটিন সাপ্লাই বন্ধ করে দিলেই পালাবে। প্রিয়কে দেখছ না, যা ভুঁড়ি বানিয়েছে, ডেটা ট্রান্সফার হয় না নির্ঘাত। ব্যস, পালিয়ে গেছে”।
রঞ্জনদা প্রিয়র ভুঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলল “সত্যি নাকি রে?”
প্রিয় বলল “কী করব? কাল অফিস থেকে বেরলাম সাতটার সময়। তোমরা টানতে টানতে নিয়ে গেলে বারে। বাড়িই তো ফিরলাম এগারোটায়। সাড়ে এগারোটার সময় সিডিউস করা শুরু করল। আমার ঘুম পাচ্ছিল। বিছানায় শুতেই এমন ঘুমালাম উঠে দেখি একটা চিঠি ডাইনিং টেবিলের ওপর রেখে চলে গেছে”।
রঞ্জনদা বলল “দ্যাখ প্রিয়, আমাদের দোষ দিবি না একদম। তোর হচ্ছে না, মদ খেয়ে বা না খেয়ে তুই ধ্বজ হয়ে যাচ্ছিস সেটা তোর প্রবলেম, ওকে?”
রোশন বলল “তুই এক কাজ কর ভাই। জিম জয়েন করে যা”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “তাহলে কী হবে? রাতে ঘুম পাবে না?”
রোশন বলল “অ্যাটলিস্ট যখন পেন ড্রাইভটা পোর্টে গুঁজবি তখন স্লিপ মোডে চলে যাবি না বাল”।
রঞ্জনদা বলল “তুই এক কাজ কর। এক উইক ছুটি নে। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। জিম কর। কন্ট্রোল কর। আর টিন্ডারে মামণি দেখা শুরু কর। মিট কর, মনের সুখে খেলে বেড়া। হ্যাঁ, তবে টুপিটা পরিস”।
প্রিয় বলল “এক সপ্তাহে এই ভুঁড়ি কমে যাবে? মামণিবাজিও করা যাবে?”
রঞ্জনদা জিভ কেটে বলল “সান্ত্বনা দিতে গিয়ে একটু বেশি বলে ফেললাম আর কি। যাক গে, রোশন ঠিকই বলেছে, তুই জিম যাওয়া শুরু কর। আর বাই দ্য ওয়ে, দীপিকাকে ফোন করেছিস?”
প্রিয় বলল “না। ও একটা নন বেঙ্গলী বয়ফ্রেন্ড জুটিয়েছে। যে কোন সময় সেক্স করে ফেলতে পারে বলে হুমকি দিয়েছে”।
রোশন বলল “তুই তো আচ্ছা বাল! তোর বউ আরেক জনের সঙ্গে সেক্স করবে আর সেটা লোককে বলে বেড়াচ্ছিস?”
প্রিয় বলল “কী করব? কাঁচি নিয়ে গিয়ে ছেলেটার অ্যান্টেনা কেটে দেব?”
রোশন রেগে মেগে বলল “যা পারিস কর। তোর বউ পালানোরই ছিল। ওরকম ফোর ফোরটি ভল্ট হ্যান্ডেল করা সবার কাজ না”।
প্রিয় বলল “ওই জন্যই তো তুই এখনও বিয়ে করার সাহসই জুটিয়ে উঠতে পারলি না”।
রঞ্জনদা প্রিয়র কাঁধে হাত রাখল “শোন, তুই এক কাজ কর। দীপিকার বাড়ি চলে যা। প্রেজেন্টেশনটা আমি বুঝে নিচ্ছি”।
প্রিয় বলল “না। আমার প্রেজেন্টেশন আমিই দেব। কাউকে তেল মারতে যেতে পারব না”।
রঞ্জনদা বলল “এত গোঁ ধরে থাকলে ফ্যামিলি লাইফটা রাখতে পারবি না ভাই”।
প্রিয় বলল “যে গেছে, সে নিজের দায়িত্বে গেছে। আমি আর তার পা ধরতে পারলাম না”।
রোশন ফুট কাটল “ওই দেখ, লিঙ্গ ছোট পুরুষ সিংহ”।
প্রিয় কটমট করে রোশনের দিকে তাকাল।
রঞ্জনদা কাঁধ ঝাঁকাল “ওকে, অ্যাস ইউ উইশ। তবে তাই কর”।
প্রিয় গোঁজ হয়ে বসে থাকল।
৪)
আশিস চোখ পিটপিট করে বলল “তোর দাদা পালিয়েছে?”
বুল্টি মাথায় হাত দিয়ে বলল “সব সময় কানের মধ্যে কি দাদুর টুনটুনি গুঁজে বসে থাকিস? দাদা পালাবে কেন? বৌদি পালিয়েছে”।
আশিস বলল “ওহ, আমি তখন পড়াচ্ছিলাম বলে দেখতে পাই নি। হোয়াটস অ্যাপে এত কথা না লিখে ফোনে বললেও তো পারিস”।
বুল্টি বলল “তুই তো বলিস যখন পড়াব তখন ফোন করব না। এবার বল, পায়রার পায়ে চিঠি লিখে পাঠাব”।
আশিস বলল “সরি সরি। এত রাগ করছিস কেন তুই?”
বুল্টি বলল “রাগ করব না? বউদি পালিয়েছে বেশ করেছে, তা না, আবার লিখে দিয়ে গেছে আমার ব্যাগে নাকি আইপিল পেয়েছে। মা তারপর থেকে এমন করে আমার দিকে তাকাচ্ছে যেমন করে সিবিয়াই মদন মিত্রকে দেখে”।
আশিস ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল “সেকী! প্যাকেটটা ফেলিস নি?”
বুল্টি বলল “না, তুইই তো বললি ফ্ল্যাটে ফেলিস না। মাসী এলে ধরা পড়ে যাবি!”
আশিস বলল “কী করব, সোসাইটিতে মাসীগুলো তো বিবিসি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। সেই নিচের ফ্ল্যাটে মিস্টার দাশ বেরিয়ে গেলে মিসেস দাশের কাছে কোন একটা ছেলে আসে সেই নিয়ে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করে”।
বুল্টি কড়া গলায় বলল “তুই সেই গল্পগুলো শুনিস?”
আশিস বলল “না শুনে উপায় আছে? এ বাজারে বউ গেলে বউ পাওয়া যাবে, মাসী গেলে পাওয়া যাবে না”।
বুল্টি মুখ ঝামটা দিয়ে বলল “সে তো বলবিই। কোর্স কমপ্লিট করে ফেলেছিস এখন তো আমাকে যাবার কথাই বলবি”।
আশিস বুল্টিকে জড়িয়ে ধরে কান কামড়ে বলল “এরকম বলে না বাবু”।
বুল্টি ছাড়িয়ে নিল না। বেড়ালের মত আদর খেতে খেতে বলল “দাদাকে ফোন করিস। একটু সান্ত্বনা দে। নিজের লাইন ক্লিয়ার রাখ। দাদা যদি বেঁকে বসে তাহলে আমাদের বিয়ে চাপ আছে কিন্তু”।
আশিস বলল “এই সন্ধ্যেবেলা?”
বুল্টি বলল “হ্যাঁ, অফিস থেকে বেরোবে এখন। এখনই তো করবি। কর কর। আমিও শুনি কী বলে”।
আশিস ফোন বের করল। দু বার ধরতেই প্রিয় ধরল “কে?”
“আমি আশিস প্রিয়দা। কেমন আছেন?”
“কোন আশিস? মোবাইল রিচারজের? আরে ভাই তুমি আমার থেকে দুইশো বাইশটাকা নিয়ে কোন চুলোয় চলে গেলে বল তো? টাকাটা বড় কথা না। বিশ্বাসটা বড় কথা”।
“আরে না, না। আমি রিচারজ আশিস না”।
“তবে? টোটো আশিস? তুমি তো ভাই ডুমুরের ফুল। যখন দরকার, তখনই তোমায় পাওয়া যায় না। বেঁচে আছো কেন? সোমালিয়ায় গিয়ে ত্রাণ শিবির খোলো”।
“আরে দাদা আমি টোটো আশিসও না”।
“তবে? এক মিনিট…”
“না না, আমিই বলছি দাদা। আমি সুনয়না আশিস”।
“সুনয়না? সেটা কী? ব্রডব্যান্ড নাকি? যা যা নতুন নতুন নাম দেখছি। ব্রডব্যান্ডের নাম নাকি মেঘবালা। হুহ। কালে কালে কত যে দেখতে হবে”।
“সুনয়না আপনার বোন দাদা”।
“ওহ… সুনয়না… বুল্টি… আশিস? ওহ তুমিই সেই কুনাল?”
“কুনাল না দাদা আশিস”।
“হ্যাঁ। ওই হল, তোমরা যা কেচ্ছা করেছ তা তো আর কিছুক্ষণ পরে সুমন দেখাবে। বল কেন ফোন করেছ। একা একা মাল খাচ্ছি। মেজাজ ঠিক নেই। খিচরে দিও না দয়া করে”।
“দাদা, বলছি একদম মুড খারাপ করবেন না”।
“ধ্যার ভাই। মুডই ইউজ করছি না বলে বউ পালিয়ে গেল এখন বলছ মুড খারাপ করবেন না। মুড বলে কিছু আছে নাকি যে খারাপ করব”।
“আজ্ঞে আমি সেই মুডের কথা বলছি না”।
“তবে কোন মুডের কথা বলছ?”
“বলছি মন মেজাজ খারাপ করবেন না। এই তো আমারই সুনয়নার সঙ্গে কত ঝগড়া হয়”।
“হ্যাঁ, সে সময় তো আমার পকেট ঝেড়েই বুল্টি আইসক্রিম গেলে বসে বসে। বলে মুড খারাপ দাদা, আইসক্রিম খাওয়া। তা তোমাদের কি উইকলি রেকারিং চলে? এত ঝগড়া কর কী করে বলত?”
“এরকম বলবেন না দাদা। ঝগড়া তো সব রিলেশনেই চলে। আপনারও হয়”।
“উফ… আবার মনে করিয়ে দিলে”।
“সরি দাদা আমি সেটা চাই নি”।
“আচ্ছা আচ্ছা। কী দাবী একটু খোলসা করে বল তো”।
“দাবী কিছু না দাদা। মুড ঠিক রাখুন সেটাই বলছি”।
“মুড? ওকে। রাখব। আর?”
“ইয়ে মানে দাদা… আমাদের বিয়েটা…”
“কী কর তুমি?”
“টিউশনি করাই দাদা। তবে চাকরিও পেয়ে যাব শিগগিরি। সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি”।
“সরকারি চাকরি পাবে? ক্ষেপেছ? তোমার এক্সপেক্টেশন লেভেলের জন্য তোমায় বিমল গুরুঙের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত”।
“ইয়ে মানে টিউশনিতে খারাপ হয় না দাদা”।
“হয়েছে হয়েছে। এখন রেশমী কাবাব আসছে। খেয়ে নি। তারপর তোমার কথা ভাবব। রাখো দেখি”।
ফোনটা কেটে গেল।
বুল্টি বলল “আজব গান্ডু তো তুই! লোকটা ফ্রাস্ট্রু খেয়ে আছে আর তুই বিয়ের কথা বলতে গেলি! আর সময় পেলি না?”
আশিস জিভ কেটে বলল “ঈশ! ভুল করে ভিতরে পড়ে গেল বুঝতে পারি নি মাইরি”।
.
৫)
মালিনী মুখে আঁচল চাপা দিয়ে বললেন “তুই ও বাড়ি ছেড়ে চলে এলি? সোস্যাইটিতে আমরা মুখ দেখাব কী করে বলত?”
দীপিকা বিরক্ত হয়ে বলল “উফ মা, তুমি মানুষ না সন্ধ্যা রায়! সারাক্ষণ চোখের জলে নদী বানিয়ে যাচ্ছ!”
মালিনী বললেন “কাঁদব না? হাসব? ঈশ কত ভাল জামাইটা”।
দীপিকা বলল “হ্যাঁ, ভালো তো বলবেই। তোমার ওই অখাদ্য রান্নাও সোনা মুখ করে খায়। ঈশ, তোমার ওই মুড়িঘন্ট! কী যে বানিয়েছিলে তুমি! সেটাই এক বাটি খেয়ে বলল মা আর হবে? এরকম জামাই তোমার ভাল লাগবে না তো আর কী লাগবে?”
মালিনী চোখের জল মুছে বললেন “শুধু মুড়িঘন্ট? ছেলেটা ভাত পর্যন্ত পাঁচ বারের কম নিত না। এমন জামাইকে খাইয়েও সুখ”।
দীপিকা ঝামটা মেরে বলল “ওতেই আমার সুখটা মেরে দিয়েছ। ভুঁড়িটা তো আইফেল টাওয়ারকে হার মানিয়ে দিয়েছে”।
মালিনী বললেন “ওভাবে বলে না। বাঙালি পুরুষের ভুঁড়ি থাকা মানে তো ভাল”।
দীপিকা বলল “হ্যাঁ। যতদূরে চাই, ভুঁড়ি ছাড়া আর কিছু নাই”।
মালিনী রেগে বললেন “তুই কি সবাইকে দেখে বেড়াস?”
দীপিকা বলল “হ্যাঁ তো, আমি বেহায়া বদচলন আউরাত। পরপুরুষ দেখে বেড়াই”।
মালিনী ফুঁপিয়ে উঠে বললেন “হ্যাঁ রে তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?”
দীপিকা বলল “হয়েছে তো। মাথা কেন, সব খারাপ হয়ে গেছে তোমার জামাইয়ের জ্বালায়। সে ছেলে আর ছেলে নেই, টিকটিকির ল্যাজের মত খসে পড়ে গেছে।”
মালিনী অবাক হয়ে বললেন “কী খসে পড়ে গেছে?”
দীপিকা জিভ কেটে বলল “অত বলা যায় না। মোট কথা জেনে রাখো, খাইয়ে খাইয়ে ওকে তোমরা নষ্ট করে ফেলেছ”।
মালিনী বলল “হ্যাঁ রে, তুই ওই বাড়িতে চিঠি লিখে আসতে গেলি কেন? যেটুকু ফেরার পথ আছে সেটাও তো নষ্ট করে দিলি”।
দীপিকা বলল “ফিরতে কে চায়? আমি তো অ্যাটলিস্ট ফিরছি না”।
মালিনী আবার ফুঁপিয়ে বললেন “প্রিয়র মা কত ভাল। যখনই আসতেন একসাথে কুন্দ ফুলের মালা দেখতাম। কত সিরিয়ালের খুঁটিনাটি আলোচনা করতাম আমরা। দুজনের মধ্যে কত ভাল বন্ডিং ছিল। তোর বাবা আর শ্বশুরের বন্ডিংটাও ভাল ছিল। দুজনে মিলে এক বোতল রয়াল স্ট্যাগ মেরে দিত। আর কি সে দিন দেখতে পাব আমরা?”
দীপিকা শুয়ে ছিল। উঠে বসে বলল “শোন মা, আসল কথাটা শোন। এই যে এত সম্পর্ক, এত প্রেম, এর সবটাই দাঁড়িয়ে আছে একটা জিনিসের ওপরে। সেটা পড়ে গেলে সব পড়ে যায়”।
মালিনী বললেন “কী পড়ে গেলে?”
দীপিকা বলল “তোমাকে অত ডেস্ক্রিপশন দিতে পারব না। ছোটবেলায় আমাদের সময় তো আর সেক্স এডুকেশন ছিল না”।
মালিনী গম্ভীর হয়ে বললেন “বুঝেছি। তা তুই প্রিয়কে নিয়ে কোন ভাল ডাক্তার দেখাতেই পারতি”।
দীপিকা বলল “ডাক্তার কেন দেখাতে যাব? কারও যদি ইচ্ছাশক্তিই শেষ হয়ে যায়, কেউ যদি মনে করে জীবনে খাওয়াটাই সব, মদ আর জাঙ্কফুড ছাড়া যদি সে কিছু না বোঝে, আর সারাক্ষণ খালি কাজ কাজ কাজ কাজ করে বেড়ায়, তাহলে যা হবার তাই হয়েছে”।
মালিনী বললেন “কাজ তো হবেই। আজকালকার দিনে কোথায় কাজ নেই? কাজ করা তো ভাল। বেকার হয়ে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়ালে ভাল?”
দীপিকা বলল “হ্যাঁ ভাল। তাতে অন্তত আমার সুবিধা হত। এমনিতে তো সারাদিন একা থাকি। শ্বশুর শাশুড়ি ননদ সামলাই, রাতটা যদি ও আমাকেই সামলাতে না পারল তাহলে আর কী হল! শোন মা, তোমাকে একটা খুশির খবর দি”।
মালিনী বললেন “এর মধ্যে আবার খুশির খবর কোত্থেকে এল?”
দীপিকা বলল “রাহুল। নাম তো শুনা হি হোগা”।
মালিনী বললেন “ঈশ, আবার এর মধ্যে এসব হোগা টোগা কোত্থেকে নিয়ে এলি?”
দীপিকা বলল “এই জন্য বলি বাংলা সিরিয়াল ছেড়ে হিন্দি কিছু দেখো। কিচ্ছু বোঝ না। শোন, রাহুল বলে একটা নন বেঙ্গলি ছেলের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। ঠিক করেছি ওকেই বিয়ে করব”।
মালিনী হাঁ করে দীপিকার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে “ওগো আমার মেয়েটা পাগল হয়ে গেল গো” বলে ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠলেন।
দীপিকা মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকল।
.
৬)
“প্রথমেই বলে নি, অযথা আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কিত হলেই বিপদ”।
চেম্বারে ঢুকতেই ঝোলা গুঁফো ডাক্তারবাবু কথাগুলো বলে থামলেন।
প্রিয় অবাক হয়ে বললেন “মানে? এই কেসে আতঙ্কিত হতে হবে কেন?”
ডাক্তারবাবু বললেন “আতঙ্কিত হবেন না তো কী হবেন? জ্বর কত?”
প্রিয় ঘাবড়ে গিয়ে বলল “জ্বর নেই তো!”
ডাক্তারবাবু বললেন “তবে? মাথা ধরা? গা হাত পা ফুলেছে? র্যাশ?”
প্রিয় বলল “কিছুই নেই”।
ডাক্তারবাবু বললেন “এই সেরেছে। তবে এসছেন কেন? আপনার ডেঙ্গু হয় নি?”
প্রিয় যেন খুব অপরাধ করে ফেলেছে এমন মুখ করে বলল “না। ডেঙ্গু হয় নি”।
ডাক্তারবাবু খিঁচিয়ে উঠলেন “তবে কী হয়েছে? স্লো মোশন?”
প্রিয় বলল “না মানে অন্য সমস্যা”।
ডাক্তারবাবু বললেন “কী সমস্যা? যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। ওষুধ লিখি কিনুন। কিনে বাড়ি গিয়ে খান। সময় নষ্ট করবেন না”।
প্রিয় বলল “আসলে আমার ভ্যালিডিটি কমে গেছে”।
ডাক্তারবাবু অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বললেন “ভ্যালিডিটি কমে গেছে? কার আপনার? জানলেন কী করে? আপনি কি জ্যোতিষী?”
প্রিয় বলল “সেই ভ্যালিডিটি না, মানে আপনাকে খুলেই বলি। এই যে ভুঁড়ি দেখছেন”।
ডাক্তারবাবু চশমার ফাঁক দিয়ে প্রিয়র ভুঁড়ি দেখে বললেন “দেখলাম”।
প্রিয় বলল “মানে এই ভুঁড়ির জন্য ভ্যালিডিটি কমে গেছে। ফলস্বরূপ আমার বউ পালিয়ে গেছে”।
ডাক্তারবাবু চোখ ছোট ছোট করে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বললেন “তো? থানায় যান। ওরা আপনার বউকে ধরে এনে দিয়ে যাবে। এখানে কী করতে এসছেন?”
প্রিয় বলল “ভুঁড়ি কমাতে। ওষুধ লাগবে”।
ডাক্তারবাবু মাথা নিচু করলেন। কয়েক সেকেন্ড ভেবে বললেন “কী কী খান লিস্ট দিন”।
প্রিয় বলল “আমি একেবারেই তেমন খাই না”।
ডাক্তারবাবু বললেন “যেমন খান তেমন বলুন। শুনি”।
প্রিয় বলল “ওই আর কী! সকালে উঠে যেদিন তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হল সেদিন আর বাড়িতে খাওয়া হয় না, অফিসে গিয়ে চার পাঁচটা পরোটা, দুপুরে কোনদিন মাংস ভাত, কোনদিন মাছ, বিকেলে একটু আধটু আইসক্রিম, সন্ধ্যেয়…”
ডাক্তারবাবু চশমার ফাঁক দিয়ে বললেন “সন্ধ্যায়? বলুন? থামলেন কেন?”
প্রিয় মাথা চুলকে বলল “ওই একটু ড্রিঙ্ক করার অভ্যাস আছে”।
ডাক্তারবাবু বললেন “কী দিয়ে খান?”
প্রিয় বলল “মাছভাজা, বা চিকেন পকোড়া। কোনদিন কাবাব”।
ডাক্তারবাবু বললেন “রোজ গেলেন?”
প্রিয় বলল “না না রোজ না, সপ্তাহে ম্যাক্সিমাম তিন দিন”।
“ক পেগ”?
“বেশি না। তিন চার পেগ হবে”।
ডাক্তারবাবু চোখ গুলো বড় বড় করে বললেন “ওকে আর?”
প্রিয় বলল “আমার একটু ডেজার্ট খাওয়ার অভ্যাস আছে। তিন চার পেগের পর ধরুন একটা ভ্যানিলা স্কুপ সাথে একটা গরম গুলাবজামুন। কোনোদিন হয়ত একটা টুটি ফ্রুটি”।
ডাক্তারবাবু বললেন “ওহ”।
প্রিয় বলল “বেশি কিছু না। এবার বাড়িতে ফিরে বুঝতেই পারছেন মা সারাদিন ধরে কত কষ্ট করে রান্না করে রাখে। নরম্যাল ফুড খাই”।
ডাক্তারবাবু পেন দিয়ে কান খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন “কেমন নরম্যাল ফুড”?
প্রিয় বলল “এই যেমন ভাত মাছভাজা ডাল, মাছের ঝোল, কোনোদিন চিকেন এইটুকুই। এর বেশি কিছু না”।
ডাক্তারবাবু বললেন “ব্যাস?”
প্রিয় বলল “হ্যাঁ। এই আর কী। ওহ, আপনাকে তো বললামই খাবার পরে মিষ্টি খাওয়া অভ্যাস আমার। প্রায় দিনই রসগোল্লা দুটো থেকে তিনটে। এই। একেবারেই নরম্যাল ফুড বুঝলেন”।
ডাক্তারবাবু বললেন “হ্যাঁ নরম্যাল ফুডই বটে। এত কম খেয়ে যে কীভাবে আপনি পৃথিবীতে বেঁচে আছেন সেটাই একটা গবেষণার বিষয়”।
প্রিয় বলল “এবার একটু বলে দিন কিভাবে ভুঁড়িটা কমাব”।
ডাক্তারবাবু বললেন “সেঁকো বিষ খেতে পারেন। তাড়াতাড়ি কমে যাবে”।
প্রিয় ঘাবড়ে গিয়ে ঢোঁক গিলে বলল “সেঁকো বিষে ওজন কমে?”
ডাক্তারবাবু বললেন “খুব তাড়াতাড়ি। আচ্ছা শুনুন। যত তাড়াতাড়ি পারেন এই টেস্ট গুলো করে ফেলুন। সুগার, লিপিড প্রোফাইল, এল এফ টি, টিসি ডিসি হিমোগ্লোবিন, ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন, পারলে একটা এক্স রে করলেও ভাল হত দেখে নিতাম আপনার একটা লিভার না দুটো লিভার”।
প্রিয় করুণ মুখ করে বলল “এই টেস্টগুলো করলে ভুঁড়ি কমে যাবে?”
ডাক্তারবাবু বললেন “টেস্টগুলো করুন। ভোর পাঁচটায় উঠে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার হাঁটুন”।
প্রিয় বলল “আমার তো আটটার আগে ঘুমই ভাঙে না। পাঁচটায় ভাঙলে কি আর বউ পালাত? আটকে দিতাম ঠিক”।
ডাক্তারবাবু বললেন “ভাঙবে। এখন বউ পালিয়েছে। এই রুটিন ফলো না করলে আপনার প্রাণপাখি উড়ে যাবে”।
প্রিয় বলল “কোথায় যাবে উড়ে?”
ডাক্তারবাবু কয়েকসেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে বলল “এই যুগে আপনি সেলেরন প্রসেসর নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন কী করে বলুন তো? আপনাকে টিউবলাইট বললে টিউবলাইট আত্মহত্যা করবে”।
প্রিয় বলল “আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম। সকালে হাঁটলে বউ ফিরে আসবে?”
ডাক্তারবাবু বললেন “পরের সপ্তাহের মধ্যে আমাকে এই রিপোর্টগুলো দেবেন। দেখি, এদিকে আসুন, বিপিটা চেক করি”।
প্রিয় বলল “আজ বিপি পাবেন না”।
ডাক্তারবাবু অবাক হয়ে বললেন “কেন? আপনি রোবট?”
প্রিয় বলল “আজ বিপি খাই নি তো। সিগনেচার খেয়েছি”।
ডাক্তারবাবু দাঁত খিঁচিয়ে বললেন “দূর মশাই। হাত দিন। হাত দিন”।
প্রিয় হাত বাড়াল। বিপি দেখে ডাক্তারবাবু অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন। “আপনি বেঁচে আছেন কী করে?”
প্রিয় করুণ মুখে বলল “কেন ডাক্তারবাবু?”
ডাক্তারবাবু বললেন “আপনার বিপি আর একটু হলেই দেশের জিডিপি পেরিয়ে যাবে। ২২০/ ১২০। অসাধারণ”।
প্রিয় বলল “বউ পালিয়েছে তো, তাই বেড়ে গেছে হয়ত”।
“দাঁড়ান দাঁড়ান। আপনাকে আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি। কাল থেকে ভোরে উঠে হাঁটুন। মদ, আইসক্রিম, রেড মিট, বড় মাছ সব খাওয়া বন্ধ। বুঝলেন?”
“হ্যাঁ ডাক্তারবাবু”।
“কী সর্বনাশ। আপনি মানুষ না যুবভারতীর ফুটবল স্ট্যাচু”?
“মানুষ ডাক্তারবাবু”।
“কী সর্বনাশ, কী সর্বনাশ। আমার বিপিই হাই হয়ে গেল আপনাকে দেখে”।
“আপনার বউ আছে ডাক্তারবাবু?”
.
৭)
মেসেঞ্জার খুলতেই একটা মেসেজ ভেসে উঠল “হাই বেব, সেন্ড ন্যুডস”।
বুল্টির দেখেই মাথায় আগুন চড়ে গেল। লিখল “নিজের বাপেরটা দেখে নাড়া বোকাচোদা”।
ব্লক টক সেরে দেখল দীপিকা ফোন করছে। ধরতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এল “কীরে, তোর দাদা ফিরেছে?”
বুল্টি বলল “এই তো একটু আগে ফিরল”।
“নিশ্চয়ই টাল হয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে”।
“সে জেনে তুমি কী করবে? রাহুলের প্রোটিন কেমন খেলে?”
“বাল। আমি তোর মত রোজ রোজ প্রোটিন খাই নাকি?”
“তাহলে কী করলে? শুকনো ময়দানে খাবি খেলে?”
“না। ওই সব না”।
“তবে? করলেটা কী সেটা তো বল”।
“তেমন কিছু না। সিসিডিতে মিট করলাম। কোল্ড কফি খেলাম। একটু হাঁটলাম”।
“হুউউউ… হাঁটলে?”
“হ্যাঁ”।
“হাত ধরেছে?”
“না। ছেলে হেবি লাজুক”।
“তুমি ধরেছ?”
“না। সবে তো সেকেন্ড দিন”।
“সেকেন্ড দিনে হাত অবধি পৌঁছতে পারো নি যখন তোমার দ্বারা কিছু হবে না”।
“হবে হবে”।
“বাল হবে”।
“তুই কী চাস? তোর দাদার সর্বনাশ হোক?”
“দাদার বাল ছেঁড়া যায়। কাল ভুঁড়ি কমিয়ে মার্কেটে ফিরলেই দেখবে লাখ লাখ মেয়ে দাদার প্রোটিন খাবার জন্য লাইন দিয়েছে”।
“ওই আশাতেই থাক। শোন তোর দাদার প্রোটিন আর ইয়েতি এক জিনিস”।
“মানে?”
“আশা করা যায় আছে, কিন্তু কোথায় আছে কেউ জানে না”।
“শোন বউদি, তুমি আমার দাদাকে নিয়ে যাচ্ছে তাই বলবে তা মেনে নেবো না। যাও না তুমি তোমার রাহুলের কাছে”।
“যাবই তো। চিন্তা করছিস কেন? বাড়ির হাল বল”।
“খুব খারাপ। বাবা এমনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেন স্টিং অপারেশনে ধরা পড়েছে”।
“ঈশ। এটা খারাপ করেছি। আর?”
“বিকেলে পাশের ফ্ল্যাটের আন্টিরা এসছিল। মা তাদের তোমার খবর বলেছে।”
“রিয়েলি?”
“হ্যাঁ। তাও রসিয়ে রসিয়ে”।
“ঢপ মারবি না বুল্টি। তুই তো বিকেলে আশিসের সঙ্গে দেখা করতে যাস। কী করে জানলি?”
“মা-ই বলেছে”।
“কী বলল? আমার নামে খুব গালাগাল দিয়েছে বুঝি?”
“দেবে না? তুমি মাকে ঢেপসি বলেছ!”
“ওকে। দিক। আমার কী! আমি তোদের কে?”
“সেই তো। তোমাকে বউদি বলব না কী ডাকব সেটাই ভাবছি। আচ্ছা তোমাকে রাহুল বৌদি বলব?”
“দাঁড়া। আগে কেসটা জমুক ভাল করে”।
“ওকে। তাহলে তোমাকে কিছু বলছি না আপাতত। ওই ওই বলেই কাজ চালিয়ে নিচ্ছি”।
“তোর খবর বল”।
“আমার কোন খবর নেই”।
“আশিস কী বলছে?”
“ও তো দাদাকে ফোন করেছিল আজ”।
“রিয়েলি? কী বলল ফোন করে?”
“দাদাকে বলল মন খারাপ না করতে”।
“ও নিজে নিজেই বলল না তুই করতে বললি?”
“আমিই বললাম”।
“আচ্ছা, একটা শব্দ আসছে কোত্থেকে বলত?”
“দাদা। জোরে মিউজিক সিস্টেম চালিয়েছে”।
“ঈশ! দেখেছিস! আমি বারবার বারণ করতাম ওটা চালাতে”।
“হ্যাঁ, তুমি নেই তো। এখন সাপের পাঁচ পা দেখবে। আর শোন, আরেকটা সুখবর আছে”।
“কী?”
“বাস্কিন রবিনস নিয়ে ঢুকেছে আজ”।
“খাক। খেয়ে আরও ফুলুক”।
“আজ্ঞে না। ওটা আমার জন্য। দাদা এসেই ঘোষণা করেছে আজ থেকে সব বন্ধ”।
“বলিস কী?”
“হ্যাঁ। হাই বিপি বাধিয়েছে তো”।
“হাই বিপি?”
“হ্যাঁ। ডাক্তার দেখিয়ে এসছে। ২২০/১২০। ডাক্তার নাকি খুব ভয় টয় দেখিয়েছে”।
“হবেই তো। এতো হবারই ছিল। উল্লুক একটা”।
“হ্যাঁ। একগাদা টেস্ট দিয়েছে। দাদা তো কাল ছুটিও নিয়েছে”।
“কী টেস্ট দিয়েছে? এতক্ষণ পর বলছিস কেন?”
“ভুলে গেছিলাম”।
“গাধা। এগুলো ভোলে কখনও? মরবে তো এবার”।
“মরলে মরবে, তোমার কী? রাহুল আছে তো?”
“হু। এই শোন। আমার খুব মাথা ধরেছে। পরে কথা বলছি”।
“ওকে। গুড নাইট”।
ফোন রেখে বুল্টি দাদার ঘরে গেল। প্রিয় গম্ভীর হয়ে বসে গান শুনছে। বুল্টি সাউন্ড কমিয়ে দিল । প্রিয় বলল “তুই ক’টায় উঠিস ঘুম থেকে?”
বুল্টি বলল “সাড়ে আটটা”।
প্রিয় বলল “বাহ। তুই তো আমারও পরে উঠিস। মা! ওমা!”
পাশের ঘর থেকে কাদম্বরী ছুটে এলেন “কী হয়েছে?”
প্রিয় বলল “তুমি ক’টায় ঘুম থেকে ওঠো?”
কাদম্বরী বললেন “সাতটায়। কেন বলত?”
প্রিয় চিন্তিত মুখে বলল “ডাক্তারবাবু পাঁচটায় উঠে হাঁটতে যেতে বলেছেন তো। অন্তত পাঁচ কিলোমিটার কভার করতে হবে”।
কাদম্বরী গালে হাত দিলেন “পাঁচ কিলোমিটার কভার করতে বলেছেন? চিন্তা কী? স্কুটি কিনে নে। কভার হয়ে যাবে।”
বুল্টি বলল “ধ্যাত। কী যে বল মা! স্কুটি কেন কিনতে যাবে। না হাঁটলে ওর ভুঁড়ি কমবে নাকি?”
প্রিয় করুণ মুখে বলল “জীবনটা উচ্ছেসেদ্ধ হয়ে গেল মাইরি”।
.
৮)
.
প্রিয় সবে শুয়েছিল। ফোনটা বেজে উঠল। প্রিয় ভাবল দীপিকা ফোন করেছে। হতাশ হয়ে দেখল রোশন। ধরল “বল”।
রোশন বলল “ভাই তোকে মেন্টাল সাপোর্ট দেবার জন্য ফোন করছি”।
প্রিয় বলল “কেন?”
রোশন বলল “এই যে তুই আমাদের হাতই আমার সাথী ক্লাবে আজ থেকে রি এন্ট্রি নিলি, আর জন্য”।
প্রিয় বলল “আচ্ছা এবার বল”।
রোশন বলল “দেখ, তোর জন্য আমাদের ক্লাবের প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ অফার করছি। মাসে তিনবার বিয়ার খাওয়াতে হবে”।
প্রিয় হাই তুলতে তুলতে বলল “এর পরিবর্তে আমি কী পাব?”
রোশন বলল “মাই ফ্রেন্ডস হট গার্লফ্রেন্ড সহ এক বিস্তৃত সিরিজের বাছাই করা সম্ভার। হ্যান্ড পিকড অনলি ফর ইউ”।
প্রিয়র হাই আটকে গেল “সেটা কী জিনিস?”
রোশন বলল “কী জিনিস মানে? জানিস না কী জিনিস? ওকে, তোকে হোয়াটস অ্যাপে কয়েকটা ক্লিপ পাঠাচ্ছি। দেখে জনি বাবার থানে এগারো টাকার পুজো দিয়ে দিস”।
প্রিয় বলল “জনি বাবা কে আবার?”
রোশন বলল “ওরে বাবা। পৃথিবীর সব থেকে বড় বাবা। সব ধর্মের লোক গুরু বলে মানে। দেখ দেখ, বুঝে যাবি”।
প্রিয় ফোন রাখল। কিছুক্ষণ পর বেশ কয়েকটা ভিডিও এল। একটা ভিডিও খুলেই রোশনকে ফোন করল।
রোশন বলল “কী কাকা, ঠিক আছে?”
প্রিয় বলল “পানু পাঠিয়েছিস কেন?”
রোশন বলল “এটাই তো আমাদের মেম্বারশিপের প্রিমিয়াম প্যাকেজ। কেন তুই দেখিস নি কোনদিন?”
প্রিয় বলল “হ্যাঁ, সে তো কবে দেখেছি! এই বুড়ো বয়সেও তুই এসব দেখিস?”
রোশন বলল “আর কী করব ভাই। তুইও দেখ। দেখবি জীবনের যত ফ্রাস্ট্রেশন, যত কষ্ট, ব্যথা, বেদনা সব ধীরে ধীরে কেমন গায়েব হয়ে যাচ্ছে”।
প্রিয় বলল “আমাকে সকালে উঠতে হবে কাল। ব্লাড টেস্ট আছে। এখন এসব দেখলে চাপ হয়ে যাবে”।
রোশন বলল “শোন না”।
প্রিয় বলল “কী? আর কত ভাটাবি বল তো”।
রোশন বলল “হাতে মেয়ে আছে?”
প্রিয় বলল “কী করবি?”
রোশন বলল “ডাংগুটি খেলব বোকাচোদা। মেয়ে দিয়ে কী করে?”
প্রিয় বলল “কী করে?”
রোশন বলল “এই জন্যই তোর বউ পালিয়েছে। কী করে জানো না?”
প্রিয় বলল “ওহ, আমি কী করে বলব? আমি কি মেয়ের দালাল?”
রোশন বলল “যাহ্ শালা। অ্যাকচুয়ালি কী হয়েছে জানিস, আমার ফ্ল্যাটটা কদিন ফাঁকা আছে। তাই ভাবছিলাম… বুঝতেই পারছিস?”
প্রিয় বলল “আমার ঘুম পেয়েছে ভাই। ঘুমাতে দে”।
ফোনটা কেটে প্রিয় কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করল। কিছুতেই ঘুম আসছে না। এ পাশ ওপাশ করতে করতে কী মনে হতে রোশনের পাঠানো ভিডিও দেখা শুরু করল। কয়েকটা দেখার পর দীপিকাকে ফোন করল।
দীপিকা ফোন ধরে বলল “কী হল?”
প্রিয় বলল “ইচ্ছা করছে”।
দীপিকা বলল “কী ইচ্ছা করছে?”
প্রিয় বলল “কালকে তোমার যেটা ইচ্ছা করছিল”।
দীপিকা সন্দিগ্ধ গলায় বলল “কী খেয়েছ?”
প্রিয় বলল “একটু আগে প্রেশারের ওষুধ খেলাম। ওটা খেয়ে ইচ্ছা করে নাকি?”
দীপিকা বলল “এই তুমি ফোন রাখো তো! মাঝ রাতে হ্যাজ দিও না”।
প্রিয় বলল “তুমি কি এখন করবা চৌথ করছ?”
দীপিকা বলল “করবা চৌথ রোজ করে না। যখন হবে তখন করা যাবে”।
প্রিয় বলল “করবা চৌথ করলে কী হয়?”
দীপিকা বলল “আমি অত জানি না। কভি খুশি কভি গম দেখে নিও”।
প্রিয় বলল “আমার অত সময় নেই”।
দীপিকা বলল “কেন? তুমি কী করছ?”
প্রিয় বলল “হাতই মেরে সাথী ক্লাবের প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ নিয়েছি। প্রিমিয়াম জিনিস দেখছি। সেসব দেখেই তো তোমাকে ফোন করলাম। কাল জনি বাবার থানে এগারো টাকার পুজোও দেব”।
দীপিকা অবাক গলায় বলল “কী সব বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছ?”
প্রিয় বলল “মিস করছি তোমায়। ফিরে আসো”।
দীপিকা বলল “বাল ছেঁড়ো। আর ইয়ে, কাল ব্লাড রিপোর্ট এলে জানাবে”।
প্রিয় ফিসফিস করে বলল “বাল জানাব। তুমিও বাল ছেঁড়ো।”
৯)
“যা বুঝছি, আপনার বউমা একটু ঘুঘু”।
বিস্কুটে কামড় দিতে দিতে গম্ভীর গলায় বললেন বিখ্যাত ডিভোর্স ল ইয়ার মদন মিত্র।
কাদম্বরী ক্রুদ্ধ গলায় বললেন “ঘুঘু? ঘুঘু অনেক ভাল পাখি উকিলবাবু। আমার বউমা একটি, একটি…” উপযুক্ত পাখির নাম না পেয়ে কাদম্বরী মরিয়া হয়ে বললেন “আমার বউমা একটি কী যে বলি এডিস মশা!”
মদনবাবু বললেন “আচ্ছা তাই হোক। যাক গে, যা বলছিলাম, আপনার বউমা একটি ঘুঘু মানে এডিস মশা। চিঠিটা পড়ে কী বুঝেছেন?”
কাদম্বরী বললেন “কী বুঝলাম? মানে আমাকে যাচ্ছেতাই অপমান করেছে আর কী বুঝব?”
মদনবাবু দুদিকে জোরে জোরে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন “বিষয় সেটা নয়। বিষয় হল আপনার বউমা আসলে একটা সলিড গ্রাউন্ড তৈরি করেছে ডিভোর্সের”।
কাদম্বরী চিন্তিত হয়ে বললেন “কী রকম উকিলবাবু?”
মদনবাবু চায়ের প্লেটে চা ঢেলে তাতে চুমুক দিতে দিতে বললেন “প্রথমেই সে প্রমাণ করতে চেয়েছে, আসামী একজন ধ্বজ ইয়ে মানে ইমপোটেন্ট”।
কাদম্বরী রেগে গিয়ে বললেন “আমার ছেলে ইমপোটেন্ট কেন হতে যাবে, বউমার গুষ্টি ইমপোটেন্ট”।
মদনবাবু মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন “সেটা তো আমরা আর দেখতে যাচ্ছি না, যে ওনার গুষ্টিতে কে ইয়েতে পারদর্শী আর কে না! তার জন্য সবাইকে লাইনে বসিয়ে ইয়ে দেখাতে হবে। যাক গে, বিষয়টা সেটা না, বিষয়টা হল আপনার বউমা একটা স্ট্রং গ্রাউন্ড প্রথমেই পেতেছেন। সেকেন্ডলি, আপনারা ওকে অত্যাচার করেন”।
কাদম্বরী গালে হাত দিয়ে বললেন “আমি কবে অত্যাচার করলাম?”
মদনবাবু বললেন “ওই যে, আপনি ছেলেকে ওর নামে কুমন্ত্রণা দিতেন। সেটা বুঝিয়েছে। আপনার হাসব্যান্ড ওকে সেক্সুয়ালি হ্যারাস করে, সেটাও বুঝিয়েছে”।
পাশের সোফায় প্রিয়র বাবা হরনাথবাবু কেঁচোর মত বসে ছিলেন। কাদম্বরী তার দিকে ভস্ম করে দিয়ে দৃষ্টি দিতে দিতে মদনবাবুকে বললেন “সব মিথ্যে উকিলবাবু। আমার সম্পর্কে যা বলেছে সব মিথ্যা। তবে উনি হ্যারাস করেছেন কী না সেটা তো আর দেখতে যাই নি!”
মদনবাবু বললেন “ওনার ননদ মানে আপনার মেয়েও ওকে হ্যারাস করেছে, এটাও বোঝাতে চেয়েছেন”।
কাদম্বরী বললেন “সেটা কী করে বোঝাল?”
মদনবাবু একটা দারুণ হাসি দিয়ে কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন “ওই যে ওর ব্যাগে আই পিল আছে। তার মানে কী? বউদিকে দেখাতে চেয়েছে দেখো তোমরা আই পিল ইউজ করার জায়গাতেও নেই। এটাও মেন্টাল টরচার”।
কাদম্বরী গালে হাত দিয়ে বললেন “ও রে বাবা রে, মা মাটি মানুষের দিব্যি এ তো ভয়ানক মেয়ে মশাই। এ বাড়িতে থাকতে বুঝতেই পারি নি, পেটে পেটে এত!”
মদনবাবু বললেন “তা নয় তো কী? মেয়েরা যে কী ডেঞ্জার চিজ তা আমার থেকে ভাল আর কে জানে? শুনুন, খুব শিগগিরি আপনাদের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে আপনার বউমা”।
কাদম্বরী শিউরে উঠে বললেন “জেলে?”
মদনবাবু বললেন “তা নয় তো কী? আপনাদের নামে ফিজিক্যাল এবং মেন্টাল হ্যারাসের কেস আনবে। ফোর নাইন্টি এইট এ ঠুকে দেবে”।
কাদম্বরী চোখে আঁচল দিলেন “ওরে বাবারে, আমার কী হবে গো, জেলে গেলে কী আর কুন্দ ফুলের মালা, সন্ন্যাসী রাজা, রাখী বন্ধন, খোকাবাবু, কুসুমদোলা দেখতে পাবো গো”!
মদনবাবু বিরক্ত হয়ে বললেন “আহ, আপনি বেশিদূর ভেবে ফেলেছেন। আমি থাকতে আপনাদের চিন্তা করতে হবে কেন? আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আপনারা এক কাজ করুন, ও আপনাদের নামে চার্জ আনে, তার আগে আপনারাই একটা চার্জ নিয়ে আসুন”।
কাদম্বরী বললেন “কী চার্জ বলুন তো?”
মদনবাবু বললেন “কত চার্জ হয়। ওই তো, এক কাজ করুন, মেয়ে দুশ্চরিত্রা প্রমাণ তো করাই যায়। চিঠিতেই আরেক ছেলের কথা লিখেছে। এই লাইন দিয়েই আমরা ওপেনিংটা শুরু করি”।
প্রিয় এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। ল্যাব থেকে এসে রক্ত নিয়ে গেছে সকালে। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়েছিল।
ড্রয়িং রুমের শব্দ শুনে হাই তুলতে তুলতে এসে মদনবাবুকে দেখে অবাক হয়ে মাকে বলল “কী হল?”
মদনবাবু কাদম্বরীকে বললেন “ইনিই আপনার ছেলে?”
কাদম্বরী বললেন “হ্যাঁ”।
মদনবাবুর সামনের টেবিলে পেস্ট্রি সাজানো। তার থেকে মদনবাবু এক কামড় দিয়ে বললেন “আপনার স্ত্রী যে দুশ্চরিত্রা, ছেলে চড়িয়ে বেড়ায়, প্রমাণ করতে হবে প্রিয়বাবু। সে হিসেবে একটা ড্রাফট লিখে ফেলি চলুন”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “মানে?”
মদনবাবু বললেন “মানে আপনার স্ত্রীর চরিত্রের দোষ আছে, আপনি আড়াল হলেই অন্য ছেলের সঙ্গে বিছানায় চলে যায়, এইসব প্রমাণ করতে হবে”।
প্রিয়র তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল “এই বালটা বেরো”!
মদনবাবুর হাতটা নড়ে উঠল। পেস্ট্রিটা নাকে লেগে গেল।
প্রিয় বলল “বেরো, বেরো এখান থেকে”।
কাদম্বরী বললেন “এই বাবু, কী বলছিস! ওনার ডিম্যান্ড জানিস?”
প্রিয় বলল “ডিম্যান্ডের ভাই হয়েছে। বের কর এক্ষুণি এটাকে”।
মদন বললেন “বেশ তো চলে যাচ্ছি, আমার কনসালটেন্সি ফি দিন”।
প্রিয় বলল “কত?”
মদন বললেন “চারহাজার টাকা প্লাস এইট্টিন পারসেন্ট জি এস টি”।
প্রিয় পেপারওয়েট বাগিয়ে চেঁচিয়ে উঠল “এইট্টিন পারসেন্ট তোমার পেছনে গুজব, বেরো বেরো”।
মদনবাবু হাইজাম্প দিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললেন “দেখে নেবো, সব কটাকে দেখে দেব। কালকের মধ্যে কেস ফাইল করে দেব”।
প্রিয় পেপারওয়েট ছুঁড়ে মারল। মদনবাবু ব্যাগ দিয়ে সেটাকে আটকে দাঁত বের করে বললেন “রাহুল দ্রাবিড় আমার থেকে ব্যাটিং টিপস নেয়, ভেবেছ কী ছোকরা?”
তারপরেই দরজা খুলে পগার পার হয়ে গেলেন।
কাদম্বরী হাউ মাউ করে উঠলেন “এটা তুই কী করলি বাবু, কত কষ্ট করে মদনবাবুর ডেট পেয়েছিলাম!”
প্রিয় বলল “কারও ডেট লাগবে না, আমার কেস আমি দেখছি। আর তুমি ওকে এই পেস্ট্রিগুলো দিয়েছ কেন? দীপিকার জন্য এনেছিলাম”।
কাদম্বরী বললেন “সে তো আর নিয়ে যায় নি। ভেবেছিলাম কুকুরকে দিয়ে দেব। উনি এসে গেলেন। তাই ওনাকে দিলাম”।
প্রিয় কটমট করে মার দিকে তাকিয়ে বলল “আমি বেরলাম। ফিরতে রাত হবে”।
কাদম্বরী বললেন “কোথায় যাবি? আজ তো ছুটি!”
প্রিয় উত্তর দিল না। গম্ভীর হয়ে জামা পরতে লাগল।
.
১০।
.
একটা ঘর। তাতে একটা ছেলে গম্ভীর একটা আই প্যাড মুখে দিয়ে বলছে “ভি ব্লগ, ২। আমার ইন্টিউশন বলছে আজ গুলুদা নতুন কোন কেস পাবে। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে একজন ভুঁড়িওয়ালা যুবক উঠে আসছে। কে হতে পারেন এই যুবক?”
গুলুদা অ্যাপেল নোটবুক নিয়ে বসে গম্ভীর মুখে বলল “পার্শে, যে লোকটা আসছে তার মিনিমাম অষ্ট আশি কিলো ওজন”।
পার্শে অবাক হয়ে বলল “কী করে বুঝলে?”
গুলুদা বলল “এলিমেন্টারি পার্শে। দাদুর আমলের সিঁড়িগুলো কীভাবে আর্তনাদ করছে বুঝতে পারছিস?”
পার্শে কিছু একটা বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল।
পার্শে উঠে দরজা খুলল।
প্রিয় পার্শেকে বলল “গাড্ডা টাইমসের গুলুবাবু…”।
ঘরের কোণ থেকে ল্যাপটপ ঘাটতে ঘাটতে গুলুদা বলল “প্লিজ টেক এ সিট”।
প্রিয় সোফার ওপর বসল।
গুলুদা বলল “বলুন। কী সমস্যা?”
প্রিয় পার্শের দিকে তাকাল।
গুলুদা বলল “ভয় নেই, ও আমার সহকারী”।
প্রিয় বলল “ইয়ে মানে ও তো মাইনর। ওর সামনে এসব বলব…”
গুলুদা ভুরু কুঁচকে বলল “ওহ। পার্শে পাশের ঘরে যা”।
পার্শে সন্দেহজনক দৃষ্টিতে প্রিয়র দিকে তাকাতে তাকাতে পাশের ঘরে গেল।
প্রিয় বলল “দেখুন গুলুবাবু। আপনি তো কোনোদিন অ্যাডাল্ট কেস সাল্টান নি। তবু আপনার কথাই মনে পড়ল”।
গুলুদা বলল “কেন? বক্সীবাবুর কথা ভাবেন নি?”
প্রিয় রুমাল বের করে কান মাথার ঘাম মুছতে মুছতে বলল “ব্যাপারটা হল শহরে এতগুলো বক্সী হয়ে গেছে, কার কাছে যাব ঠিক বুঝতে পারলাম না। মাছের বাজারের মত অবস্থা বুঝতেই পারছেন। আপনি আমাদের মত গরীবের শারলক, মানে গাড্ডা টাইমস দেখে যা বুঝেছি আর কী”!
গুলুদা একটা কুতুবমিনার বের করে অগ্নিসংযোগ করতে করতে বলল “হাফ চকোলেট?”
প্রিয় খাবি খেয়ে বলল “মানে?”
গুলুদা বলল “দেখুন আপনার বয়েস তো এখন চকলেট খাবার না, চকোলেট ফ্লেভার ইউজ করার। আপনার প্যান্টের পকেট থেকে একটা ফ্লেভারড প্যাকেট উঁকি মারছে। কিন্তু ওতে কাদার দাগ আছে। তার মানে পুরনো জিনিস। আপনি পকেটে নিয়ে ঘুরছেন কিছুদিন হল। ইউজ করছেন না। অ্যাম আই রাইট?”
প্রিয় গলা খাকড়িয়ে বলল “আজ্ঞে, মানে ঠিকই ধরেছেন, মদ খেয়ে একবার ড্রেনে পড়ে গেছিলাম। তারপরেই কাদা লেগে গেছিল। প্যাকেটটা বের করাও হয় নি”।
গুলুদা বলল “এবার প্রবলেমটা বলুন”।
প্রিয় বলল “আমার বউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে”।
গুলুদা বলল “সেটা তো প্রথমেই বুঝেছি”।
প্রিয় ঘাবড়ে গিয়ে বলল “কী করে বুঝলেন?”
গুলুদা বলল “পার্শেকে পার্শ্বের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন যখন তখনই বুঝেছি। বলুন তো আমার কোন গল্পই অ্যাডাল্ট নয় কেন?”
প্রিয় বলল “কেন?”
গুলুদা কুতুবমিনারে একটা লম্বা টান মেরে বলল “অ্যাডাল্ট কেস এলে পার্শেকে সবাই পাশের ঘরে চলে যেতে বলে তাই”।
প্রিয় বলল “আচ্ছা। আমার কেসটাও আসলে একটু কমপ্লিকেটেড”।
গুলুদা বলল “কেমন?”
প্রিয় দীপিকার চিঠিটা গুলুদার হাতে দিল। গুলুদা চিঠিটা পড়ার আগে শুঁকে বলল “আপনার ওয়াইফ গেম অফ থ্রোন্স দেখেন?”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “এটা আপনি শুঁকে বলে দিলেন?”
গুলুদা হাসল “না না, ওটা তো এমনি মনে হল তাই বললাম। আচ্ছা এক মিনিট”।
মন দিয়ে গুলুদা চিঠিটা পড়ল কুতুবমিনারে টান দিতে দিতে।
প্রিয় একটু অধৈর্য হয়ে বলল “কী বুঝলেন?”
গুলুদা সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজতে গুঁজতে বলল “হাতের লেখা খুব খারাপ”।
প্রিয় উৎসাহিত হয়ে বলল “আমারো চিঠিটা পড়ে প্রথমে তাই মনে হয়েছে”।
গুলুদা বলল “দেখুন, আপনাকে আমি বেশি অ্যাডভাইস আপনার সেক্স লাইফ সম্পর্কে দিতে পারব না, কারণ তাতে অনুভূতিপ্রবণ বাঙালি পাঠক পিটিশন দাখিল করতে পারে, তবে…”
প্রিয় গুলুদার কথায় প্রথমে মুষড়ে পড়েছিল, ‘তবে’ শুনে উৎসাহিত হয়ে বলল “তবে?”
গুলুদা বলল “তবে রাহুল ছেলেটাকে একটু ফলো করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি”।
প্রিয় বলল “আমি অফিস করে কীভাবে মানে ফলো করব…”
গুলুদা বলল “সেটা আমি একটা এজেন্সীকে বলে দিচ্ছি। ওটা নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার ইমেল আইডি দিয়ে যান”।
প্রিয় উঠল “আপনার ফিসটা”?
.
.
১১)
“তুই প্রিয়কে ছেড়ে দিয়েছিস?”
অভিশ্রুতি চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল। দীপিকা মুখ বেঁকিয়ে বলল “তোর এক্সপ্রেশন পুরো বাংলা সিরিয়ালের মত হচ্ছে”।
অভিশ্রুতি বলল “তাহলে কীসের মত করব!”
দীপিকা গম্ভীর হয়ে বলল “আমি কী করে জানব?”
অভিশ্রুতি বলল “কী নিয়ে ঝামেলা?”
দীপিকা মুখ বিকৃত করে বলল “শোন, যেখানে যাচ্ছি, এই এক ভ্যানর ভ্যানর করে আর ভাল লাগছে না। তোর কাছে এলাম, ভাল কিছু রান্না করে খাওয়ালে খাওয়া। নইলে আমি বাড়ি যাই”।
অভিশ্রুতি খুশি হল। বলল “কী খাবি?”
দীপিকা বলল “ওই সব বালের ইউরোপিয়ান খাবার খাব না। কী সব নাম দিস, স্মোকড পটেটো, বেকড বীর্য না কী!”
অভিশ্রুতি হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলল “ওকে ওকে, মা আমার, তোর জন্য বাংলা খাবার বানাব। কী খাবি বল?”
দীপিকা বলল “মুড এক্কেবারে খিচড়ে আছে। এক্কেবারে চরম ঝাল কিছু বানা তো”।
অভিশ্রুতি বলল “দাঁড়া এক মিনিট। সম্ভবত ফ্রিজে চিকেন থাকার কথা”।
দীপিকা বলল “দেখ”।
অভিশ্রুতি ফ্রিজ খুলে বলল “চিকেন আছে। এক্কেবারে ঝাল ঝাল চিকেন আর ভাত খাবি? বিরিয়ানির চালের ভাত?”
দীপিকা বলল “বিরিয়ানি বানা”।
অভিশ্রুতি বলল “তুই খেপেছিস? এখন আমি তোর সঙ্গে আড্ডা মারব না বিরিয়ানি বানাব?”
দীপিকা ঠোঁট উলটে বলল “আচ্ছা। তাহলে ভাতই থাক। মাংসে এমন ঝাল দিবি যেন আমার কান মাথা থেকে ধোঁয়া বেরোতে থাকে”।
অভিশ্রুতি দীপিকার কাঁধে হাত রাখল “কী ব্যাপার ম্যাডাম, এত আগুন কেন শরীরে?”
দীপিকা বলল “বরের ফায়ার ব্রিগেড ফেল করে গেছে। গোটা শরীর এখন আগুন হয়ে গেছে। মাথাটাও”।
অভিশ্রুতি বলল “ট্রাই জিগোলো”।
দীপিকা চোখ বড় করে বলল “তুই করিস?”
অভিশ্রুতি বলল “ইয়েস। একা একা বাল ছিঁড়ব নাকি? শালা বিয়ে করলে তো বরের দাসীগিরি ছাড়া কোন কাজ নেই। তারপর একটা ট্যাঁ হলে তো কথাই নেই। সারাজীবন ডেইলি সোপের অ্যাক্ট্রেস হয়ে কাটিয়ে দাও। একা একা পড়াশুনা করি, যখন দরকার পরে কন্ট্যাক্ট করে নি। লাইফ ইজ গুড”।
দীপিকা বলল “ফ্ল্যাটে আসে?”
অভিশ্রুতি বলল “আসে তো। পরশুও এসছিল”।
দীপিকা বলল “কী করিস?”
অভিশ্রুতি মুচকি হাসল “যা করে”।
দীপিকা বলল “ফুল সিলেবাস?”
অভিশ্রুতি বলল “ইয়েস,ফুল সিলেবাস”।
দীপিকা বলল “অ্যাপার্টমেন্টে বাওয়াল হয় না?”
অভিশ্রুতি বলল “কেন হবে? আমার ফ্ল্যাট। আমার মর্জি। তাছাড়া এখানে কেউই বেশি নাক গলায় না। এখানে বাঙালি কম তো। তাই হয়ত”।
দীপিকা বলল “তোর একবারও কোন জড়তা লাগে নি?”
অভিশ্রুতি বলল “নাহ। রণি আমায় শেষ করে দিয়ে গেছে। তারপর আর অস্বস্তি হয় নি। র্যাদার এই ছেলেগুলো ওর থেকে অনেক ভাল। অ্যাটলিস্ট অভিনয় করে না জামা খোলার সময়”।
দীপিকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “লাস্ট কয়েক মাস… আমাদের কোন ফিজিক্যাল রিলেশন নেই শ্রুতি। প্রিয় মোটা হয়ে যাচ্ছে বিচ্ছিরি ভাবে। ওর কোনরকম অ্যাট্রাকশন নেই আমার উপর”।
অভিশ্রুতি বলল “এর জন্য ছেড়ে দিয়েছিস?”
দীপিকা রেগে গেল “তো কী করব? আরও চার কিলো মাটন এনে বলব খাও? তুই জানিস ওর ওয়েট কত?”
অভিশ্রুতি হাসল “ওহ, তাহলে এসব আসলে নাটক। এক্সপেক্ট করছিস প্রিয় রোগা হয়ে যাবে, তারপরে নায়িকার প্রত্যাবর্তন?”
দীপিকা নখ খুঁটতে খুঁটতে বলল “এক্সপেক্ট করছি না। কারণ ওকে আমি এত বছর ধরে যা চিনেছি, ও এসবের কোন চেষ্টাই করবে না। তাই… সেপারেশন ছাড়া উপায় নেই”।
অভিশ্রুতি বলল “খাবি কী? চাকরিটাও তো ছেড়ে দিয়েছিলি! তখন কত করে বললাম”।
দীপিকা বলল “খুঁজছি চাকরি। অনেক হল। কারও ওপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে লাইফ কাটিয়ে দেবার কোন কারণ নেই। সত্যিই তো, বাড়ি যাচ্ছি, মা বাবা এমনভাবে দেখছে যেন বিরাট কোন প্রবলেম তাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। কেন ভাই? তুমি ছেলে হয়ে যা ইচ্ছে করে বেড়াতে পারবে আর আমি মেয়ে হয়ে তোমাকে ছেড়ে আসতে পারব না? সিরিয়াসলি? এই সময়ে দাঁড়িয়েও … লিভ ইট। ফেমিনিস্টের মত শোনাচ্ছে?”
অভিশ্রুতি মিক্সিতে আদা রসুন দিয়ে বলল “তা শোনাচ্ছে খানিকটা। কিন্তু একটা ব্যাপার আছে”।
দীপিকা বলল “কী?”
অভিশ্রুতি বলল “অ্যাপার্ট ফর্ম অল দিস থিংস, হি লাভস ইউ। পৃথিবীতে যদি একজনকে ও ভালোবাসে, সেটা হলি তুই”।
দীপিকা বলল “তুই এত কী করে বুঝলি?”
অভিশ্রুতি বলল “বোঝা যায় ভাই। যে ছেলে বউয়ের বান্ধবীর ক্লিভেজ না দেখে বউকেই দেখে যায় সে ছেলে পাওয়ার জন্যই তো মেয়েরা শিবরাত্রি করে”।
দীপিকা বলল “ধুস, ওইরকম ছেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর প্লিজ, মার মত প্রিয়র উকিল হয়ে যাস না দয়া করে। পায়ে পড়ছি”।
অভিশ্রুতি হাসল “আচ্ছা হব না”।
দীপিকা বলল “তবে রাগের মাথায় একটা খুব বাজে কাজ করেছি। এখন মনে হচ্ছে সরি বলে দি”।
অভিশ্রুতি অবাক হল “সেকী! কী করেছিস?”
দীপিকা বলল “আমি একটা চিঠি লিখে এসছি। ওর বাবা মা বোন সবাইকে যাচ্ছেতাই বলেছি”।
অভিশ্রুতি জিভ বের করল “ঈশ। এটা বাজে। তবে তুই তো রেগে গেলে যাচ্ছেতাইই করিস”।
দীপিকা বলল “হ্যাঁ। আশা করি উনি সেটা বুঝবেন”।
অভিশ্রুতি জোরে হেসে উঠল “ওরে আমার ভাল বউ রে, তা এত যখন উনি বুঝবেন, তবে ওনাকে গিয়ে জড়িয়ে ধর না”।
দীপিকা বলল “ওসব দিন চলে গেছে। আমি এখন সামনের দিকে তাকাচ্ছি। রাহুল এসছে। হি ইজ হ্যান্ডসাম, ওয়েল বিহেভড”।
অভিশ্রুতি কয়েক সেকেন্ড দীপিকার দিকে তাকিয়ে বলল “ব্যাকগ্রাউন্ড জানিস? কী করে জানিস? কোথায় মিট করেছিস?”
দীপিকা বলল “টিন্ডারে”।
অভিশ্রুতি বলল “টিন্ডারে? রিয়ালি? ওখান থেকে জীবন সঙ্গী ঠিক করে নিলি? এত বড় ডিসিশন নিয়ে নিলি?”
দীপিকা বলল “কেন? ছেলেটা ভাল তো”।
অভিশ্রুতি বলল “সব ছেলেই তো ভাল। কোন ছেলে খারাপ? প্রিয় তোকে স্যাটিসফাই করতে পারছে না বলে যা পারবি ধরে নিয়ে চলে আসবি?”
দীপিকা মরিয়া হল “তোকে বললাম তো ছেলেটা ভাল। অবাঙালি। ভেজিটেরিয়ান”।
অভিশ্রুতি দীপিকার দিকে বড় বড় চোখ করে বলল “ধর তুই ওকে বিয়ে করলি। বিয়ের পর ভেজিটেরিয়ান হয়ে যাবি?”
দীপিকা বলল “ও চাইলে হয়ে যাব”।
অভিশ্রুতি বলল “চিংড়ির মালাইকারি, মাটন কষা, বিরিয়ানি, চিতলের মুইঠ্যা, সর্ষে ইলিশ… ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা, সব ছেড়ে দিবি?”
দীপিকা বলল “ছেড়ে দেব? কী আছে?”
অভিশ্রুতি একটু থেমে বলল “প্রিয়কে এত হেট করতে শুরু করেছিস যে এত কিছু ত্যাগ করে ফেলবি? মানে সেক্সই কি সব?”
দীপিকা বলল “তুই জিগোলো ডাকিস কেন? এগুলো ছাড়াও তো থাকা যায়। সেক্সই কি সব?”
অভিশ্রুতি কয়েক সেকেন্ড দীপিকার দিকে তাকিয়ে বলল “মাংস বসাচ্ছি। খেয়ে যাস”।
দীপিকা গম্ভীর হয়ে বসে রইল।
.
১২।
“ভাই, তোর মত আমিও একটা সমস্যায় পড়েছি”। রোশন গম্ভীর গলায় বলল।
অফিসের টিফিনটাইম। দুজন বাইরে খেতে বেরিয়েছে।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “রিলেশনশিপ প্রবলেম? প্রেম ছিল নাকি তোর?”
রোশন বলল “না বাঁড়া, সে সব না”।
প্রিয় বলল “তবে?”
রোশন বলল “আরে ভাই আমার আই বি এস হয়েছে”।
প্রিয় বলল “সেটা কী?”
রোশন বলল “ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম”।
প্রিয় বলল “বাপ রে, কী ডেঞ্জারাস নাম। হলে কী হয়?”
রোশন বলল “পোঁদ মারা যায়”।
প্রিয় বলল “কে মারে?”
রোশন বলল “দূর বাল, সি এফ এল কোথাকার! তুই সত্যিই বুঝিস না, নাকি না বোঝার ড্রামা করিস?”
প্রিয় বলল “বুঝি না, মাইরি। কী হয়েছে বল”।
রোশন বলল “ধর ঘুম থেকে উঠলাম। বাথরুমে বসলাম। জিনিস কিছুতেই বেরোতে চায় না। এত কষ্ট হয় বের করতে”।
প্রিয় বলল “সকালে উঠেই হ্যান্ডেল মারতে শুরু করিস?”
রোশন বিরক্ত হয়ে বলল “হ্যান্ডেল না বাল। আর শ্যাম্পু বের করার কথা বলছি না। হাগার কথা বলছি। কিছুতেই বেরোতে চায় না। অনেক কষ্ট হয়”।
প্রিয় বলল “ওহ। কোষ্ঠ কাঠিন্য?”
রোশন বলল “হ্যাঁ, ওই আর কী! তারপর যেই অফিস আসার জন্য ব্রেকফাস্ট করে ফ্ল্যাটে তালা দেব, পেটটা গুড় গুড় করতে শুরু করে। বসতেই বলম পিচকারি শুরু হয়ে যায়”।
প্রিয় বলল “এত পানু দেখলে এরকম হয়”।
রোশন অবাক হয়ে বলল “পানু দেখলে কোষ্ঠ কাঠিন্য হয়? কোথায় পড়লি? দাঁড়া গুগল মারি। হু… এফেক্ট অফ মাস্টারবেশন অন স্টুল। ওরে ব্বাস কতগুলো রেজাল্ট”।
খাবার জায়গা চলে এসছিল। প্রিয়র খুব ফ্রায়েড রাইস খেতে ইচ্ছা করছিল। অনেক কষ্টে লোভ সংবরণ করে রুটি তরকারি নিল।
রোশন বলল “কাকা, হালকা কী আছে?”
কাকা খাবার দিতে ব্যস্ত, রোশনের দিকে তাকিয়ে বলল “রুটি তরকারি”।
রোশন বলল “তাই দাও। আমার পায়খানার পোঁদ মারা গেছে”।
প্রিয় রুটিতে তরকারি মাখাতে মাখাতে বলল “দিন ক’বার করিস?”
রোশন বলল “কী? পায়খানা?”
প্রিয় বলল “না বাল। হ্যান্ডেল মারিস কতবার?”
রোশন বলল “আমার লাইফ সাইকেল ইজ ইজি ব্রাদার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার পেন্সিলটা শহীদ মিনার হয়ে যায়। সেটাকে কড়া হাতে দমন করি। বুঝতেই পারছিস কড়া হাত। তারপর অফিস চলে আসি। অফিসে যেদিন চামকি মুন্সী বেশি ভাঁজ দেখিয়ে ফেলে তখন দেশ ও দশের স্বার্থে আরেকবার কড়া হাতে দমন করি অফিসের বাথরুমে গিয়ে। বাড়ি গিয়ে আমাদের হাতই মেরে সাথী ক্লাবের প্রিমিয়াম ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হবার জন্য আরও কিছু শ্যাম্পু জাতির উদ্দেশ্যে ভাসিয়ে দি। সো ধরে নে, দুই থেকে তিন বার। তবে, কোন কোন দিন মাঝরাতে যদি ঘুম ভেঙে যায়…”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলেও…”
রোশন বলল “মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ঘুম না এলে কী করব? তখন আবার একটু দেখতে ইচ্ছে হল। আর কী করব!”
প্রিয় বলল “বিয়ে করে নে।প্রবলেম থাকবে না”।
রোশন বলল “নো ব্রাদার। বিয়ে করলে তো তুই জাস্ট বউকেই করবি। কিন্তু এই যে আমি ইমাজিনেশনে চামকি থেকে হাম্পটি কল্পনা করি… সেই স্বাধীনতাটা কোথায় পাব?”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “তুই হাম্পটিদিকেও ইমাজিন করিস? ও তো আমার থেকেও মোটা”।
রোশন বিষম খেয়ে বলল “অত সব তুই বুঝবি না। টেস্ট চেঞ্জেরও দরকার আছে। রোজ রোজ থার্টি সিক্স, টুয়েন্টি ফোর, থার্টি সিক্স চলে না। মাঝে মাঝে ফরটি ফাইভ, থার্টি ফাইভ, ফরটি ফাইভও ইমাজিন করতে হয়। ইমাজিন দেয়ার ইজ নো মেল ইন দ্য ওয়ার্ল্ড মাই ফ্রেন্ড, জাস্ট আই এন্ড মাই”।
প্রিয়র ফোন বাজছিল। প্রিয় থালাটা রেখে তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে রুমালে হাত মুছে ফোন বের করে দেখল দীপিকা। ধরল “কী হল আবার?”
দীপিকা বলল “টেস্ট রেজাল্ট কী এসছে?”
প্রিয় বলল “জানি না”।
দীপিকা বলল “মানে? জানো না মানেটা কী?”
প্রিয় বলল “জানি না কারণ আমার অফিস আছে। সারাক্ষণ টেস্টের রেজাল্ট দেখে কেঁদে ভাসাতে পারব না”।
দীপিকা বলল “কেঁদে ভাসাতে পারবে না মানে? কেঁদে ভাসাবার মত কিছু হয়েছে নাকি?”
প্রিয় বলল “বাড়ি এসে দেখে যাও। অত ভাটাতে পারছি না। আর বাই দ্য ওয়ে, এত কর্তব্য দেখানোর দরকার নেই”।
দীপিকা রেগে মেগে ফোনটা কেটে দিল।
রোশন বলল “কে ভাই?”
প্রিয় বলল “কেউ না”।
রোশন বলল “ওহ, তোর তো আবার সেক্স লাইফ ম্যালফাংশন করছে। কেউ না মানে দীপিকা তাই তো?”
প্রিয় বলল “হ্যাঁ। ধুস। এই রুটিতে কিচ্ছু হল না। মাটন কোথায় হচ্ছে দেখি দাঁড়া”।
রোশন অবাক হয়ে বলল “এই তো কিছুক্ষণ আগে বললি সব বারণ তোর”!
প্রিয় গম্ভীর মুখে বলল “সব খাব। মদও খাব আজ থেকে। ভাই হয়েছে রোগা হবার”।
.
১৩)
রাত হতেই ফ্রেন্ডলিস্টের ছেলেগুলোর যে কী হয়ে যায় বুল্টি বুঝতে পারে না। আশিস সাড়ে এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে। বুল্টির ঘুম আসতে চায় না।
সে স্ক্রল করে যাচ্ছিল নিউজ ফিড এমন সময় একজন পিং করল
“হাই”।
বুল্টি লিখল “হাই”।
“ফিলিং হট বেব?”
“আমার ঘরে এসি আছে ভাই”।
“ওহ, দ্যাটস কুল”।
“দাবী কী জীবনে তোমার খোকা?”
“আমার পেনিসটা দেখ, তোমার জন্য কেমন পাগল হয়ে গেছে”।
একটা যৌনাঙ্গের ছবি পাঠিয়ে দিল ছেলেটা।
বুল্টি লিখল “এটা পুলিশের পেজে দিচ্ছি। দেখবি যখন রুলের বাড়ি পড়বে তখন আরও পাগল হয়ে যাবি”।
“দে দে, আমি নিজেই পুলিশ। হট পুলিশ বেব। তোমার মনের চোরও আমি, পুলিশও আমি”।
“তাহলে নিজের রুল নিজের পেছনে গুঁজে বসে থাক বোকাচোদা”।
ব্লক করে দিল। কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম নিয়ে এসে ঘরে এল।
দীপিকা ফোন করছে। বলল “বল”।
“কী বুঝছিস?”
“বুঝছি তোমার পরিস্থিতি এই বাড়িতে ঋতব্রতর থেকেও খারাপ”।
“তাই?”
“একদম”।
“তোর দাদার কী খবর? রিপোর্টগুলো দেখলি?”
“হু”।
“কী বুঝলি?”
“যা বোঝার বুঝলাম”।
“উফ। ক্লিয়ার করে বল। সব নরম্যাল তো?”
“ট্রাইগ্লিসারাইড না কী বলে দেখলাম হাই, এল এফ টিতেও সব কিছু বর্ডারলাইন, সুগারটা এখনও ধরে নি এই যা”।
“ডাক্তার দেখিয়েছে?”
“দেখাবে না বলছে। আবার তো আগের মত খাওয়া দাওয়া শুরু করেছে”।
“এসব কী হচ্ছে বুল্টি? তোরা কী করছিস?”
“আমরা কী করব? আমাদের কথা শোনে নাকি! আর মা তো আরেককাঠি উপরে যাচ্ছে। দাদার মন খারাপ কাটাতে আবার মাটন করেছিল আজ”।
“উফ! অশিক্ষিত ফ্যামিলি একটা। শোন, তোর দাদাকে বোঝা, এভাবে আমার ওপর রাগ করে নিজের লাইফটা নষ্ট না করতে। অনেক মেয়ে আছে মার্কেটে, ঠিক আরেকটা বিয়ে হয়ে যাবে”।
“তুমি বুঝিয়ে দাও না। আমাদের কথা তো শুনছে না। দেখা কর কালকে। রাহুলের থেকে একটু ছুটিও নাও। তোমার তো শরীরে প্রোটিন বেড়ে যাবে এবার”।
“আমি তো ফোন করেছিলাম। কিছুতেই রিপোর্টের কথা বলতে চাইল না। রেগে রেগে কথা বলল। দেখাই বা করতে চাইবে কেন?”
“সেটা দেখছি”।
“দেখ। আসলে বাঙালি ছেলেদের সমস্যা কী জানিস? এরা বড় হয় না কোনদিন। প্রবলেমটা কী সেটা বুঝবে না। উলটে ব্যাপারগুলোকে আরো ঘোলাটে করে দেবে”।
“তুমি তো প্রবলেমটা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে, খামোখা ছেলেদের দোষ দিচ্ছ কেন?”
“কেন বাড়াবো না? আমার লাইফটা অসহ্য হয়ে উঠছিল। সেটা তোর দাদা বুঝেছিল?”
“দ্যাখো বউদি, যাকে দিনের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে বারো ঘন্টা অফিসেই কাটাতে হয় তার বোঝার ক্ষমতাগুলো কতখানি অবশিষ্ট থাকে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তোমারও ভেবে দেখা উচিত ছিল সারাদিন অফিস করে এসে যদি বাড়িতে দেখে তুমি মুখ গোমড়া করে বসে আছ তাহলে তার কেমন লাগতে পারে”।
“আচ্ছা!!! এখন আমার দোষ হয়ে গেল!”
“সেটাই তো স্বাভাবিক, আমার দাদা যখন চিন্তাটা তো আমার হবেই। তুমি যেমন বড় হয়ে গেছো। বুঝতে পেরেছ দাদাকে দিয়ে তোমার আর হবে না। নিজের ভালটা ভাল বুঝে গেছ। আমার দাদাটা বোকা। বুঝতে পারছে না। তাই দেবদাস মোড অন করে ফেলেছে। তবে হ্যাঁ, তোমাকে একটা কথা বলতে পারি। দাদার কিন্তু আরেকটা সাইডও আছে। যেটা তুমি দেখো নি। দাদা এভাবেই কয়েকটা দিন কাটাবে। তারপর ধুত্তোর বলে আবার সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে নতুন করে স্টার্ট করবে। তখন কিন্তু আর তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না। তোমার যেটুকু চান্স ছিল এখনই”।
“আমার চান্স দরকার নেই বুল্টি। আই হ্যাভ টেকেন মাই ডিসিশন। আমি আর ফিরছি না ব্যস”।
“একটা কথা বলব বউদি, রাগ করবে না তো?”
“করব না বল”।
“প্রমিস কিন্তু”।
“প্রমিস প্রমিস প্রমিস। বল মা”।
“তুমি ফিরবে না ঠিক আছে, কিন্তু রোজ রোজ আমাকে ফোন করে দাদার খবর নাও, এটা কি মজা দেখার জন্য? যে তুমি ছেড়ে দেওয়ার পর লোকটা কেমন আছে?”
“আমি রাখছি রে। তোকে আর ফোন করব না”।
“তুমি কিন্তু কথা দিয়েছিলে রাগ করবে না”।
“হু। অনেক রাত হল রাখছি রে”।
ফোনটা কেটে দিল দীপিকা।
১৪)
“লাস্ট আপডেট কী তোর?”
অফিস থেকে বেরচ্ছিল প্রিয়। রোশন আগেই বেরিয়ে গেছে সিনেমা দেখার নাম করে।
বীথিকাদির কথায় প্রিয় অবাক হয়ে বলল “কী ব্যাপারে?”
বীথিকাদি বলল “রঞ্জনের থেকে শুনেছি”।
প্রিয় মনে মনে বিরক্ত হল। রঞ্জনদার পি এন পি সি করার স্বভাবটা এখনও গেল না।
বলল “ওহ। কোন আপডেট নেই”।
বীথিকাদি বলল “চল। আমার বাড়ি চল। গল্প করি”।
প্রিয় বলল “বাড়ি যেতাম তো”।
বীথিকাদি বলল “চল না। কফি খেয়ে পালাস”।
প্রিয় বলল “ওকে”।
বীথিকাদির গাড়ি আছে। নিজেই ড্রাইভ করে। প্রিয় বসল।
বীথিকাদি বলল “আমাদের সবার লাইফ চাকরি করেই শেষ হয়ে গেল”।
প্রিয় কিছু বলল না। এমনিতেই সেক্টর ফাইভের রাস্তায় জ্যাম থাকে। বীথিকাদি ভাল ড্রাইভ করে। খানিকক্ষণ পরেই তারা বীথিকাদির বাড়ি চলে এল।
সল্টলেকের মধ্যে অনেকটা জায়গা নিয়ে বীথিকাদির বাড়ি।
দরজা খুলতে খুলতে বীথিকাদি বলল “একটু বস। আমি কফিটা বসিয়ে আসি”।
প্রিয় ড্রয়িং রুমে বসল।
বলল “সোমনাথদা আসে নি এখনও?”
বীথিকাদি বলল “জয়পুর গেছে। অফিসের কাজ না কী কাজ ওই জানে”।
প্রিয় বলল “কী কাজ মানে?”
বীথিকাদি বলল “এক্সট্রা ম্যারিট্যাল থাকতে পারে”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “তুমি জানো?”
বীথিকাদি বলল “আমিই তো বলেছি। যাও যাও, যা ইচ্ছা কর। তোমাকে আটকাতে যাব না”।
প্রিয় বলল “ওহ”।
বীথিকাদি বলল “তোর খবর বল। কী হয়েছে?”
প্রিয় বলল “তেমন কিছুই না, ও বাড়ি চলে গেছে। সম্ভবত ডিভোর্স ফাইল করবে”।
বীথিকাদি বলল “কেন? মানে মেইন রিসনটা কী?”
প্রিয় বলল “আমি সময় দি না। আর আমাদের মধ্যে বহুদিন কোন…”
বীথিকাদি বলল “কেন? তুই ইন্টারেস্ট পাস না?”
প্রিয় বলল “অফিস থেকে ফিরে কীভাবে আর এনার্জি থাকে বল?”
বীথিকাদি বলল “এখন তো তুই অফিস থেকে বেরিয়েছিস। এনার্জি নেই?”
প্রিয় বলল “তা আছে। আমার ভুঁড়ি হয়ে যাচ্ছে, বাবা মা বোন সবাই খারাপ এটসেট্রা লিখে গেছে”।
বীথিকাদি বলল “তুই ফোন করেছিস ওকে? চেষ্টা করেছিস?”
প্রিয় বলল “হ্যাঁ বলেছি। বলেছে ফিরবে না। আমারও মনে হয় ফিরবে না”।
বীথিকাদি বলল “হুইস্কি খাবি?”
প্রিয় বলল “খাব”।
বীথিকাদি বলল “তাহলে কফিটা বন্ধ করছি। আমারও কেমন তখন থেকে হুইস্কি হুইস্কি করছে মনটা”।
প্রিয় বলল “ঠিক আছে”।
বীথিকাদি রান্নাঘরে গ্যাসটা বন্ধ করে এসে হুইস্কি নিয়ে বসল। একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল “লাইফটা যেরকম হবে ভেবেছিলাম হল না। এত ভাল ভাল রেজাল্ট করে, শেষমেষ কী বালটা ছিড়লাম বলত? পার্সোনাল লাইফ বলে কিছু রইল না”।
প্রিয় গ্লাসে চুমুক দিল। কথা বলল না।
বীথিকাদি বলল “তোর সেক্সুয়ালি কোন প্রবলেম হয়?”
প্রিয় বলল “ভেবে দেখিনি”।
বীথিকাদি হঠাৎ তার পাশে এসে বসে তাকে নিজের দিকে টেনে জোর করে ঠোঁটে চুমু খেল। সিগারেট আর হুইস্কির গন্ধ মিশে একটা অদ্ভুত স্বাদ তৈরী হয়েছে। ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে গিয়েছিল প্রিয়। বাধাও দিতে পারল না।
তাকে ছেড়ে তার প্যান্টের ভিতরে হাত বাড়াল বীথিকাদি “এই তো, ঠিকই আছে। প্রবলেমটা কোথায়?”
প্রিয় তাড়াতাড়ি উঠে বলল “আমি বেরোই”।
বীথিকাদি টেবিলে রাখা হুইস্কির গ্লাসটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলল “ভয় পাস না। তুই না চাইলে আমি জোর করব না”।
প্রিয় খানিকটা সামলে নিয়ে বসল “তোমার কী হল হঠাৎ?”
বীথিকাদি বলল “দেখলাম, তোর প্রবলেমটা কোথায়”।
প্রিয় বলল “কোথায়?”
বীথিকাদি বলল “শেষ কবে তুমুল ঝগড়া করেছিস?”
প্রিয় বলল “ভুলে গেছি”।
বীথিকাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “এটাই তো সমস্যা। কেউ ঝগড়া করে না আজকাল। এখন ঝগড়া করছিস?”
প্রিয় বলল “নাহ”।
বীথিকাদি বলল “কী করবি এর পরে?”
প্রিয় বলল “জানি না”।
বীথিকাদি কিছু বলল না। বসে বসে সিগারেট খেতে লাগল।
১৫)
প্রিয় বাড়ি এসে দেখল মঞ্জুমাসী এসেছে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
তাকে দেখেই মঞ্জুমাসী ভেউ ভেউ করে কান্না জুড়ে দিলেন “ওরে আমার প্রিয় রে তোর কী হল রে?”
কাদম্বরী সোফায় বসে কাঁদছেন।
প্রিয় বলল “টিভিটা বন্ধ করে কাঁদো না”।
কাদম্বরী বললেন “আজ মহা এপিসোড আছে সিঁদুরের দিব্যির। বউমার পুরনো প্রেমিক ফিরে এসছে। এদিকে স্বামীর প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছে। স্বামীকে বউমা চিনতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বউমা কার কাছে যাবে?”
প্রিয় বলল “তাহলে সিরিয়ালই দেখো। কেঁদে কী হবে?”
কাদম্বরী বললেন “হ্যাঁরে মঞ্জু তোর ছেলেবউমা কেমন আছে?”
মঞ্জু বললেন “কে বাবু? ওদেরও খুব ঝগড়ারে দিদি। আজ এ ওর জামা ছিঁড়ে দিচ্ছে, কাল আবার ও একে খামচে দিচ্ছে”।
বুল্টি অবাক হয়ে বলল “একী বিয়ে না বিধানসভা?”
মঞ্জু বললেন “হ্যাঁরে বুল্টি, তোর বউদি তোর নামে এসব কী লিখেছে চিঠিতে?”
বুল্টি বলল “ওসব বানিয়ে বানিয়ে লিখেছে বুঝতে পারছ না? মা কি ঢেপসি নাকি? ভাল করে দেখো, মাকে দেখলে এখনও আমার বন্ধুরা বলে তোর দিদি নাকি?”
কাদম্বরী খুশি হয়ে বললেন “হ্যাঁরে বুল্টি, তোর জন্য একটা পঞ্চু অর্ডার করেছি কাশ্মীরি শালওয়ালার থেকে”।
বুল্টি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল “ওটা তুমিই পর। আমার লাগবে না। নিজের জন্য কাশ্মীরি শাল আর আমার জন্য পঞ্চু”।
কাদম্বরী বললেন “আচ্ছা। আমার শালটাও পরিস”।
প্রিয় বলল “আমি ঘরে যাই”।
মঞ্জু বললেন “বস বস বাবা। কী করবি ঠিক করেছিস?”
কাদম্বরী বললেন “সব ঠিক করা হয়ে গেছে। শোন। এমনিতেই তো জানিস এই বিয়েতে আমাদের মত ছিল না। মেয়ে না পারে রাঁধতে, না পারে ভাল সিরিয়াল দেখতে। জানিস, পটল কুমার গানওয়ালা দেখে একদিন বলে দিল এই বাচ্চাটার পড়াশুনা নেই? ভাব! বাচ্চাগুলো সিরিয়াল না করলে আমরা কী দেখব?”
মঞ্জু বললেন “সে দিক দিয়ে আমার বউমাটা ভাল। রিপিট টেলিকাস্টও দেখে। কিন্তু আমার ছেলেটা বদ। সবার খাওয়া হয়ে গেলে বউমা যত বলে বস একটু খোকাবাবুটা দেখে যাই, আমার ছেলেটা খালি বলবে এসো না এসো। শুধু খাটে নিয়ে ওঠার তাল”।
কাদম্বরী চোখে আঁচল দিলেন “আর আমাদের প্রিয় তো খাটেই যেতে চায় না”।
প্রিয় বলল “আহ মা কী হচ্ছে?”
মঞ্জু ধমক দিলেন “তুই থাম। একটা বয়সের পরে মা মাসীরা সব বন্ধু হয়ে যায়”।
বুল্টি বিড়বিড় করে বলল “তারপরই সব মা মাটি মানুষ হয়ে যায়”।
কাদম্বরী ধমক দিলেন “তুই থাম। খালি বড়দের কথার মধ্যে ফুট কাটা। শোন যেটা বলছিলাম, এই বউমা আর ঘরে তোলার দরকার নেই। আমরা একটা গ্রামের মেয়ে নিয়ে আসব”।
মঞ্জু বলল “হ্যাঁ। একবারে সব পারবে। রান্না পারবে, বড়দের সম্মান করবে। বরকে সম্মান করবে। এরকম মডার্ন বউ দরকার নেই আমাদের”।
বুল্টি বলল “কাজের মাসী রাখলেও হয়। বিয়ে দেওয়ার কী দরকার?”
কাদম্বরী কটমট করে বুল্টির দিকে তাকিয়ে বললেন “একদম বড়দের কথার মাঝে কথা বলবি না বুল্টি”।
বুল্টি অবাক হয়ে বলল “এই তো বললে একটা বয়সের পরে মা মাসীরা সব বন্ধু হয়ে যায়”।
কাদম্বরী বললেন “খুব পেকেছিস তুই। দাঁড়া তোর বাবা আসুক আজ”।
বুল্টি বলল “বাবা তো এসে গেছে। ঘরে বসে ব্যায়াম করছে”।
কাদম্বরী বললেন “ওহ। ফ্লোতে বেরিয়ে গেছিল কথাটা”।
প্রিয় বলল “আমাকে ছাড়বে তোমরা? আমি ঘরে যাই”।
মঞ্জু বললেন “দাঁড়া বাবা দাঁড়া। বউমাকে ফোন করত”।
প্রিয় অবাক গলায় বলল “ফোন করতে যাব কেন?”
মঞ্জু বলল “কথা বলব আমি। তুই ফোন কর”।
প্রিয় বলল “কী বলবে?”
মঞ্জু বলল “ধরে দে। আমি কথা বলব”।
প্রিয় বলল “কেন?”
কাদম্বরী বিরক্ত হয়ে বললেন “আহ।এত কথা বলিস কেন? ফোনটা ধরে দে”।
প্রিয় ফোন বের করে দীপিকাকে ফোন করল। দীপিকা ধরে বলল “কী হল?”
প্রিয় বলল “কথা বল”।
ফোনটা মঞ্জু ধরেই বলল “বউমা কেমন আছ?”
দীপিকা কিছু একটা বলল।
মঞ্জু বললেন “শোন বউমা। তোমার মত অসভ্য ইতর বাজে রাস্তার মেয়ে আমি একটাও দেখি নি। একটা রাস্তার মেয়েও তোমার থেকে ভাল। কী ভেবেছ হ্যাঁ? আমার দিদিকে কষ্ট দেবে? তোমাকে বলি শোন, নরকেও তোমার জায়গা হবে না বুঝেছ? অসভ্য ইতর মেয়েছেলে কোথাকার!”
মঞ্জু ফোনটা কেটে দিলেন। ঘরের মধ্যে মনে হল একটা ঝড় বয়ে গেল।
প্রিয় হতভম্ব হয়ে বসে রইল।
.
১৬)
বুল্টি অবাক হয়ে বলল “এ তুমি কী করলে মাসী?”
মঞ্জু বললেন “ঠিক করেছি। অসভ্য মেয়ে আমায় বলে কী না, বলুন বলুন যা বলার বলে ফেলুন”।
সবাই চুপ হয়ে গেল। টিভিতে বউমা কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। প্লাস্টিক সার্জারি করা বরকে দেখে বলছে তুমি কিছুতেই আমার বর হতে পারো না। পাশ থেকে প্রেমিক অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে রোশনের মত ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম আছে। যে কোন সময় সেটেই প্যান্ট হলুদ করে ফেলবে।
বুল্টি প্রিয়কে বলল “দাদা তুই বউদিকে ফোন কর। বল তুই জানিস না কিছুই। কেউ গায়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ পাব্লিক বেশি বাওয়াল দিলে তুই কী করবি?”
কাদম্বরী থমথমে গলায় বললেন “বুল্টি তুই ওই ঘরে যা। বড়দের উল্টো পালটা বলার অধিকার তোকে কেউ দেয় নি”।
মঞ্জু ফুঁপিয়ে উঠে বললেন “দেখ দিদি, সেদিনের মেয়ে বুল্টি, জন্মের পর আমি কোলে নিতেই কোলে একগাদা পায়খানা করে দিয়েছিল, আমার হাতে হলুদ হলুদ হাগু হেগেই কী হাসি! সে কী সব বলে যাচ্ছে আমার নামে। আমি আর কোনদিন তোদের বাড়ি আসব না”।
প্রিয়র ফোন বাজতে শুরু করেছে। প্রিয় দেখল দীপিকা ফোন করেছে। সে ধরল না। দীপিকা করেই যাচ্ছে ফোন। কাদম্বরী বললেন “ধর না! যা বলার বল!” প্রিয় ধরল “বল”।
দীপিকা চেঁচাচ্ছে ওদিক থেকে “তোমার ওই শুয়োরের বাচ্চা মাসীকে ফোন দাও”।
প্রিয় মা আর মাসীকে দেখল। দুজনেই বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওপাশ থেকে দীপিকা লাফাতে শুরু করেছে মানসচক্ষে দেখতে পেল প্রিয়। ফোন কানে দিয়ে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে গেল। ওপাশ থেকে দীপিকা চেঁচাচ্ছে “শোন, তোমার ওই মাসী, ওই মালটার তো মিনিমাম বাথরুম সেন্স অবধি নেই। যতবার বাথরুমে যাবে ফ্ল্যাশ টানবে না। গিয়েই দেখব একটা লাদি ভাসছে। নয়ত কমোড ইউজ করে হিসু পর্যন্ত করতে পারে না। করবি কর, জল পর্যন্ত দেয় না। গা থেকে ভোসা পাঠার মত গন্ধ বেরোয়। সে আমাকে বাজে মেয়ে বলে এত সাহস পায় কী করে?”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “ভোসা পাঠা কী জিনিস?”
দীপিকা বলল “ও তুমি বুঝবে না। যে পাঠার গায়ে বড় বড় লোম, আর যে পাঠা লোকের পেছনে কাঠি করে ঘুরে বেড়ায়, তাদের ভোসা পাঠা বলে। তুমি ফোনটা দেবে? নইলে এপাশ থেকে আমি তোমার মাথাটা ভাংব। নিজে তো একটা অকর্মার ঢেপি, যত দিন যাচ্ছে, হাতি থেকে ম্যামথ তৈরী হচ্ছ, তা নিজে কথা বলার ক্ষমতা নেই বাল? বাঁড়া ছিটকিনিচোদা। ওহ তোমাকে ছিটকিনিচোদা বলব কী করে, তোমার তো দাঁড়ায়ই না। তোমার কোন কিছু চোদারই ক্ষমতা নেই। একটা… একটা…”
প্রিয় বলল “ইমপোটেন্ট?”
দীপিকা বলল “ইয়েস, ইয়েস, একটা ইমপোটেন্ট, একটা ইমপস্টার…”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “আমি ইমপস্টার হব কী করে?”
দীপিকা বলল “ওই হল, ইম… ইম…”
প্রিয় বলল “ইম্পরট্যান্ট?”
দীপিকা বলল “হ্যাঁ, একটা ইম্পরট্যান্ট… ইম্পরট্যান্ট একটা গালাগাল হল নাকি? ধ্যাত!”
প্রিয় বলল “আচ্ছা, তুমি গুগল করতে পারো, স্ল্যাং দেখে টেখে আবার গালাগাল দাও”।
দীপিকা বলল “তুমি তোমার মাসীকে ফোন দাও। নইলে কিন্তু আমি কুরুক্ষেত্র করে দেব। বুড়ির সাহস হয় কী করে?”
প্রিয় বলল “শোন, আমরা বুঝতে পারি নি মাসী অত কিছু বলবে, তুমি রাখো, আমরা কাল মিট করি”।
দীপিকা বলল “কেন মিট করব? তোমাকে মিট করব কেন? মিট করে কী করবে? কিপ্টে কাক কোথাকার”।
প্রিয় বলল “আমি কিপ্টে কবে থেকে?”
দীপিকা বলল “কিপ্টেই তো। কিপ্টে, হিংসুটে, তুমি তুমি… উন্নয়নের প্রতীক! তুমি উন্নততর বামফ্রন্ট। তুমি উল্লুক, তুমি বেল্লিক, তুমি কর্পোরেশনের ডেঙ্গু সচেতনতা! তুমি তুমি ঋতব্রতর বালিশ। তুমিই আচ্ছে দিন। শালা বাড়িতে যত মিউজিয়ামের স্যাম্পেল পুষে রেখে দিয়েছে, ওটা মাসী! ওর থেকে হুম্বা ভাল”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “হুম্বা কী?”
দীপিকা চ্যাঁচ্যাঁতে লাগল, “শোন, একদম ইনোসেন্ট সাজতে যাবে না, বেশি বকবক করলে গায়ে খ্যাঁক খ্যাঁক ওয়ারা ছুঁড়ে মারব। বাঁকুড়া মিম, স্পেসিফায়েড তারকাটা সব ছুঁড়ে মারব। ইয়েতি কোথাকার! জুলফিকার চাঁদের পাহাড় কোথাকার! পিটিশন কোথাকার! আজব ছড়া কোথাকার! দাও তোমার ঝান্ডু মাসীকে ফোন দাও। দাও শিগগিরি”।
প্রিয়র কান মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল। বসার ঘরে গিয়ে মাসীকে বলল “মাসী ফোনটা ধর। দীপিকা ক্ষমা চাইবে”।
মাসী ফোনটা নিল।
প্রিয় ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকল।
.
১৭)
.
কিছুক্ষণ পর প্রিয় দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল। টিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মঞ্জু মাসীর মাথায় ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে আইসপ্যাক বানিয়ে রাখা হয়েছে। মঞ্জুমাসী বিড় বিড় করে বলছে “ওরে, বাবা রে, হরি হে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ, তুমি আমারও বন্ধু বাপেরও বন্ধু। ওরে বাবারে, ভোলেবাবা পার করেগা, ডাইলেতে কি নুন দ্যাসো, ডাইলেতে কি নুন দ্যাসো, জয় ভোলেবাবা”।
কাদম্বরী ডুকরে কেঁদে উঠলেন, কয়েক সেকেন্ড পর সামলে বিলাপ করতে করতে বললেন “ওরে প্রিয় রে তোর বউ আমার বোনটাকে পাগল করে দিল রে, ফোনের ওপারে কী মেশিন রেখেছিল কে জানে, দেখ দেখ আমার বোনটা কেমন করছে রে। কে কোথায় আছো গো, আমার বোনটাকে বাচাও গো, ওগো শুনছ, ওরে প্রিয় তোর বাবাকে ডাক, তোর বাবা যা ব্যায়াম করছে, কোনোদিন দেখব রামদেব এসে তোর বাবার পায়ের কাছে বসে আছে। ডাক ডাক মিনসেকে ডাক, ওগো দেখো আমার বোনটা কেমন করছে গো”।
প্রিয়র বাবা এলেন। মঞ্জুকে দেখে প্রিয়কে বললেন “অ্যাম্বুলেন্স ডাক”।
মঞ্জু বিড়বিড় করে উঠলেন আবার“ওরে বাবারে ওরে বাবারে, হরি হে কালী বুদ্ধ ভট্টচাজ বিমান বসু, পার কর আমারে। পার কর পার কর”।
কাদম্বরী খেঁকিয়ে উঠলেন “ওরকম ঢোল গোবিন্দর মত দাঁড়িয়ে দেখছ কী? কিছু একটা কর”।
হরনাথ গম্ভীর হয়ে বললেন “মনে হচ্ছে সিভিয়ার ডেঙ্গু হয়েছে”।
কাদম্বরী বললেন “এর মধ্যে মশা কামড়ে দিল?”
হরনাথ বললেন “তুমি বুঝবে না, এখন ফাস্ট ইন্টারনেটের যুগ, মিনিটের মধ্যে ডেটা ট্রান্সফার হয়ে যায়।কিছুক্ষণ পর রক্ত পরীক্ষা করলে দেখা যাবে প্লেটলেট কমে গেছে”।
কাদম্বরী বললেন “ডাক্তারবাবুকে ফোন কর না। তুমি তো সকাল বিকেল ডাক্তারবাবুর সঙ্গে ঘুরে বেড়াও”।
হরনাথ বললেন “উনি ডক্টর, ডাক্তার না। তাও কী একটা ভজঘট সাবজেক্ট নিয়ে ডক্টরেট করছেন। পশ্চিমবঙ্গের চপ শিল্প সম্ভাবনা না কী যেন। বাড়িতে গেলেই বেগুণী, আলু আর ডিমের চপের গন্ধ পাওয়া যায়”।
কাদম্বরী দাঁত খিঁচিয়ে বললেন “একটা যদি কাজের কাজ করার মত বন্ধু রাখো”।
বুল্টি অনেকক্ষণ করে জিভ কামড়ে হাসি চাপার চেষ্টা করছিল। খুক খুক করে কাশতে কাশতে বিষম খেল। প্রিয় বলল “আমার ফোনটা কোথায়?”
প্রিয়র ফোনটা টেবিলের ওপর রাখা ছিল। কাদম্বরী বললেন “আগে ডাক্তারকে ফোন করবি। তারপর উকিলবাবুকে। পারলে আজই গিয়ে ডিভোর্স করে আসবি”।
প্রিয় বলল “ডাক্তারবাবুকে ফোন করি আগে”।
কাদম্বরী বললেন “যা পারিস কর”।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তারবাবু এলেন। মঞ্জুকে বিড়বিড় করতে দেখে বললেন “বাই এনি চান্স ওনাকে কি সিবিআই বা ইডি ডেকে পাঠিয়েছে?”
কাদম্বরী বললেন “না না, একটা ফোন এসছিল, তারপর থেকে এরকম শুরু করেছে”।
ডাক্তারবাবু কিছুক্ষণ মঞ্জুকে দেখে বললেন “জ্বর তো তেমন নেই। প্রেশারটা একটু হাইয়ার সাইডে আছে। আমার মনে হয় একটা সিডেটিভ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া ভাল। ঘুম থেকে উঠে আশা করি স্বাভাবিক হতে পারবেন”।
কাদম্বরী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন “আমার বোনটা ভাল হয়ে যাবে তো ডাক্তারবাবু? আমরা এক সঙ্গে ভোরের বেলায় ফুল তুলেছি, দুলেছি দোলায়, বাজিয়ে বাঁশি গান শুনেছি, বকুলতলায়”।
ডাক্তারবাবু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন “এটা গান না?”
কাদম্বরী বললেন “আমার নাম কাদম্বরী। আমি রবীন্দ্রনাথের গান কোট করব না তো কি আমার বউমা করবে? এক চুটকি সিঁদুর ছাড়া ওর কী আছে?”
ডাক্তারবাবু প্রেশারের মেশিনটা বাগিয়ে বললেন “দেখি আপনার প্রেশার কত?”
কাদম্বরী হাত বাড়ালেন। ডাক্তারবাবু গম্ভীর হয়ে বললেন “আপনার প্রেশারটাও তো বেশি দেখছি”।
কাদম্বরী বললেন “হবে না, এক মেয়ে আমাদের সবার জীবনটাকে রঞ্জন গন্ধোপাধ্যায় বানিয়ে রেখে দিয়েছে”।
ডাক্তারবাবু বললেন “ঠিক আছে, আপনার বোনকে আমি ঘুমের ওষুধ দিচ্ছি, এক্ষুণি সিঙ্গুরের ন্যানো কারখানার মত আপনার বোন ঘুমিয়ে পড়বে। কালকে আশা করি ঠিক হয়ে যাবে”।
হরনাথ বললেন “ডেঙ্গি না তো ডাক্তারবাবু?”
ডাক্তারবাবু বললেন “না না, ডেঙ্গির কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না”।
কাদম্বরী বললেন “আপনি আমাকেও ঘুমের ওষুধ দিয়ে দিন ডাক্তারবাবু। বোনের পাশে আমিও একটু শুয়ে থাকি। কেমন কেমন লাগছে”।
হরনাথ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললেন “রোজ রোজ তুমি ঘুমের ওষুধ খেলে জীবনটাই অন্য রকম হয়ে যেত কাদু”।
.
১৮)
মদনবাবু গম্ভীর হয়ে বসে একটিপ নস্যি নিয়ে বললেন “গ্রাউন্ড তৈরি আছে। মেন্টাল হ্যারাসমেন্টের সঙ্গে একটা অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের চার্জও দিয়ে দিচ্ছি দীপিকাদেবীর উপরে”।
হরনাথ বাবুর মুখটা হাঁ হয়ে গেল “সেকী, আমাদের বাড়িতে অ্যাটেম্পট করল আর আমিই জানতে পারলাম না?”
কাদম্বরীদেবী কটমট করে হরনাথবাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন “তুমি থামো। এক্কেবারে মনমোহন সিং হয়ে বসে থাকো”।
হরনাথবাবু চুপ করলেন।
মদনবাবু বললেন “দেখুন ফোনে হুমকি, থ্রেট এবং একজন বয়স্কা মহিলাকে অসাংবিধানিক কথা বলা, এগুলো সমস্তই দীপিকাদেবীর বিরুদ্ধে যাবে”।
মঞ্জুর ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষণ আগে। তিনি কানে তুলো দিয়ে বসেছেন। কয়েক সেকেন্ড পর পর ইষ্টদেবতাকে জপ করছেন।
কাদম্বরী চোখে আবার আঁচল দিয়ে বললেন “আমার বোনটাকে দেখুন উকিলবাবু, কচি মেয়েটা কেমন একদিনে বুড়ি হয়ে গেছে”।
মদনবাবু মঞ্জুর দিকে তাকালেন। মঞ্জুর সব চুল সাদা। সামনের দিকের দাঁতগুলো অধিক পান খেয়ে খেয়ে ক্ষয়ে গেছে। পান খাওয়ার দৌলতেই হয়ত দাঁতগুলোতেও লালের শেড দেখা যাচ্ছে। মদনবাবু বললেন “কাল উনি যুবতী ছিলেন?”
কাদম্বরী বললেন “হ্যাঁ। একদিনে ওর বয়স অন্তত পঞ্চাশ বছর বেড়ে গেছে”।
মদনবাবু নেড়ে চড়ে বসলেন “তাহলে তো মনে হচ্ছে একটা সায়েন্স বোর্ড বসাতে হবে। কী এমন শোনাল ফোনে যে ফোনে একজন যুবতী কন্যা বয়স্কা হয়ে গেলেন। ওনাকে এখন দেখেই মনে হচ্ছে এপাচিএপামা”।
কাদম্বরী অবাক হয়ে বললেন “এপাচিএপামা মানে কী উকিলবাবু?”
মদনবাবু বললেন “এক পা চিতায় এক পা মাটিতে”।
কাদম্বরী কাঁদতে কাঁদতে বললেন “তবেই বুঝুন, আপনি যা পারেন সব লিখুন তো ওই মেয়ে ছেলের নামে! যা পারেন তাই। কিচ্ছু বাদ রাখবেন না। আপনি যতটাকা লাগবে আমার থেকে নেবেন”।
মদনবাবু টাকার কথায় খুশি হয়ে বললেন “এই তো, এবার কাজের কথা বলেছেন। শুনুন, আজ থেকে দীপিকাদেবীর সঙ্গে যা কথা আমি বলব। আপনারা কেউ ওনার সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ রাখবেন না। বুঝেছেন?”
কাদম্বরী বললেন “সেটাই তো। প্রিয় যোগাযোগ রাখছে নাকি সেটা তো জানি না”।
মদনবাবু ব্যাগটা ভাল করে সামলে বললেন “তাই তো, ওনাকে দরকার তো। ডাকুন ওনাকে”।
প্রিয় ঘুমাচ্ছিল। কাদম্বরী ডেকে নিয়ে এলেন।
প্রিয় মদনবাবুকে দেখে অবাক হয়ে মাকে বলল “কী হয়েছে?”
কাদম্বরী বললেন “মাথা ঠান্ডা কর বাবু। বস”।
প্রিয় বসল। মদনবাবু আগের অভিজ্ঞতার জন্য একটু সিটিয়ে ছিলেন। প্রিয়কে বসতে দেখে স্বাভাবিক হলেন।
কাদম্বরী বললেন “দেখ বাবা, তোর মাসীকে দেখ। এখনও দু তিন দিন লেগে যাবে স্বাভাবিক হতে”।
প্রিয় মাসীকে দেখল। মঞ্জু বললেন “জয়ত্তারা, রক্ত চাই মা, রক্ত চাই”।
প্রিয় বলল “হ্যাঁ তো, মাসীর সঙ্গে ওনার কী সম্পর্ক?”
কাদম্বরী বললেন “এবার তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে”।
প্রিয় বলল “কী ব্যাপারে?”
কাদম্বরী বললেন “বউমার ব্যাপারে। আমাদের তো ডিভোর্স ফাইলটা করতে হবে”।
প্রিয় বলল “করে দেব। আমি ঠিক করে দেব। তোমরা চিন্তা করছ কেন?”
কাদম্বরী মুখে আঁচল চাপা দিলেন “কী জাদু করেছে তোকে ওই ডাকিনী, কিছুতেই ওকে ভুলতে পারছিস না বাবা, নিজের মার কথাও শুনতে চাইছিস না?”
প্রিয় বিরক্ত হয়ে বলল “আহ মা, বললাম তো এসব ব্যাপারে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না আমি দেখছি”।
মদনবাবু প্রিয়র দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে বললেন “কোন ল ইয়ার? আমার মত ডিভোর্স ল ইয়ার পাবেন? জানেন আমার সাকসেস রেট?”
প্রিয় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কলিং বেল বেজে উঠল। প্রিয় উঠে দরজা খুলে দেখল দীপিকা দাঁড়িয়ে আছে। সে দরজা খুলতেই দীপিকা শব্দ করে হেঁটে গিয়ে ঘরে ঢুকল।
মঞ্জু দীপিকাকে দেখে হঠাৎ করে চেঁচিয়ে গাইতে লাগলেন “সকলই তোমারই ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি, ডিএর টাকা তুমি রাখো মা, আমরা খালি ছুটি মারি”।
কাদম্বরী তড়াক করে সোফার উপর উঠে বললেন “জঙ্গি হানা, উকুনবাবু, জঙ্গি হানা”।
মদনবাবু বিরক্ত হয়ে বললেন “উকুন না, কথাটা উকিল। আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখছি। দাঁড়ান”।
মদনবাবু উঠতে যাচ্ছিলেন, দীপিকা বসার ঘরে এসে উকিলবাবুকে দেখিয়ে প্রিয়কে বলল “এই বুনিপটা কে?”
প্রিয় বলল “উকিলবাবু”।
দীপিকা বলল “আমার ফোনের চার্জারটা নিতে এসছিলাম। বাই”।
বলে যেমন ঝড়ের মত এসছিল। তেমন ঝড়ের মত চলে গেল।
মদনবাবু হতভম্ব হয়ে বললেন “বুনিপ মানে?”
প্রিয় মোবাইলে গুগল করে মদনবাবুকে বুনিপের ছবিটা দেখাল। মদনবাবু লাফাতে শুরু করলেন “পুলিশ, চোর, মানবাধিকার, ম্যাথু স্যামুয়েলস, সুদীপ্ত সেন, রোজ ভ্যালি…”
.
১৯)
দীপিকা দুপুরে দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিল। দরজা বন্ধ, কারণ মা দরজা খোলা দেখলেই ঘরে এসে কান খেয়ে নিচ্ছে। চারটে নাগাদ কেউ দরজায় নক করতে শুরু করল। “ওরে দীপু ওঠ, ওঠ আমি তোর পিন্টুকাকিমা”।
দীপিকা চোখ মুছতে মুছতে উঠে দরজা খুলল।
পিন্টুকাকিমা এসে বসল খাটে। সঙ্গে দীপিকার মা।
সে বলল “বল, তোমার কী কী জানার আছে”?
পিন্টুকাকিমা মহা উৎসাহে শুরু করলেন “কী হয়েছে?”
দীপিকা বলল “কী হয়েছে?”
পিন্টুকাকিমা বললেন “তুই এখানে কেন?”
দীপিকা বলল “এটা তো আমার বাড়ি। বাড়ি আসব না?”
পিন্টুকাকিমা বিরাট বিজ্ঞের মত মুখ করে বললেন “মা রে, বিয়ের পর মেয়েদের কোন বাড়ি হয় না। শ্বশুরবাড়িই তাদের বাড়ি”।
দীপিকা অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল “আচ্ছা। জানতাম না”।
পিন্টুকাকিমা বললেন “স্বামীর পায়ের তলায় মেয়েদের স্বর্গ”।
দীপিকা বলল “আচ্ছা। এটাও জানতাম না। মা তুমি কাকিমাকে চা দেবে না?”
মালিনী শুনছিলেন তাদের কথা। দীপিকার কথায় উঠলেন “এখনই আনছি”।
দীপিকা হাই তুলে খাটে হেলান দিয়ে বলল “তারপর কাকিমা, পরের ছেলে মেয়ের ব্রেইনওয়াশ প্রকল্প কেমন চলছে?”
পিন্টুকাকিমা দিপিকার কথা শুনলেন না, বা বোঝার চেষ্টা না করেই বললেন “তোর পেট ফোলে না কেন মেয়ে?”
দীপিকা বলল “ভাল হজমের ওষুধ আছে তো। যা খাই, সুন্দর হজম হয়ে যায়। তাই ফোলে না”।
পিন্টুকাকিমা পোকা খাওয়া দাঁতে ভুবন ভোলানো হাসি হেসে বললেন “সে ফোলা না রে”।
দীপিকা বলল “তবে কেমন ফোলা”।
পিন্টুকাকিমা বললেন “যে ফোলায় তোর কোলে ছেলে আসবে”।
দীপিকা বলল “কেন মেয়ে হবে না?”
পিন্টুকাকিমা বললেন “দিনে দুপুরে অলুক্ষুণে কথা বলতে নেই মা! মেয়ে কি মুখাগ্নি করতে পারে? ছেলেই চায় সবাই”।
দীপিকা বলল “ওহ। তোমার খবর কী? তোমার মুখাগ্নি কবে হবে?”
পিন্টুকাকিমা রেগে বললেন “এ কেমন প্রশ্ন?”
দীপিকা বলল “কারও কারও পোঁদে আগুন দেয় জানো তো মরার পরে। তা তোমার পোদাগ্নি হবে না মুখাগ্নি হবে? তবে তুমি যা বিষ মাল, লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাক গলিয়ে বেড়াও, তোমার নাকাগ্নি হওয়া উচিত”।
পিন্টু কাকিমা ডাক ছেড়ে কাঁদতে লাগলেন “ওরে ও মালিনী, দেখো তোমার মেয়ে কী বলছে!”
দীপিকা বলল “শুধু ধান্দা না? এটা আমার বাড়ি না, তা বুড়ি আমার বাপের মাথায় হাত বুলিয়ে এই বাড়ি দখলের ধান্দা তাই না? এটা আমার বাড়ি না তোর বাপের বাড়ি? বাদরের বিচি, শাকচুন্নির টেস্ট টিউব বেবি, মুলোর গ্যাস, শালা ঘুম থেকে উঠে ভাল গালাগালিও মাথায় আসছে না। এই বুড়ি তোর কাজ নেই? মেয়েরা অলুক্ষুণে, তাহলে তুই কী, কী তুই? স্বামীর পায়ের তলায় স্বর্গ? তাহলে তোর বর যখন মরেছিল ওর সঙ্গে স্বর্গে গেলি না কেন নাচতে নাচতে? শালা মশারির ফুটো ফাটা পাব্লিক, কন্ডোমের মশা, উফ, আজ একদম ফর্ম আসছে না বাল! দুপুরবেলা ঘুম ভাঙিয়ে ঘুম নষ্ট করলি! ”
পিন্টু কাকিমা ঘাবড়ে গিয়ে চ্যাঁচ্যাঁতে লাগলেন “ও মালিনী, দীপু পাগল হয়ে গেছে শিগগিরি এসো”।
পিন্টুকাকিমার আর্তনাদ শুনে মালিনী ছুটতে ছুটতে এলেন “কী হয়েছে?”
পিন্টুকাকিমা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন “দেখো না, দীপু কী সব বলছে”।
মালিনী দীপিকার দিকে তাকিয়ে বললেন “কী বলেছিস?”
দীপিকা আকাশ থেকে পড়ার ভাব করে বলল “কই কিছু বলি নি তো। কাকিমার সঙ্গে সিরিয়ালের গল্প করছিলাম তো”।
মালিনী অবাক হয়ে একবার দীপিকা আরেকবার পিন্টিকাকিমার দিকে তাকিয়ে বললেন “এতে এত চ্যাঁচামেচি করার কী আছে। দাঁড়াও আমি চাটা নিয়ে এসে বসছি”।
মালিনী ঘর থেকে বেরোতেই দীপিকা বলল “শোন বুড়ি, ফের যদি আমার ব্যাপারে নাক গলাতে এসছিস, রড গরম করে তোর পোঁদে ঢুকিয়ে দেব। পোঁদ বারবিকিউ রান্না করে সেটা তোকেই গেলাব। নিজের পোঁদের মাংস খাবি আর বলবি বাহ দারুণ হয়েছে তো! খুব মজা না? লোকের ঝাঁট জ্বালাতে খুব ভাল লাগে না? নিজের ছেলেটা তো একটা বাল। বাসে ট্রামে লোকের মেয়েদের কনুই মেরে বেড়ায়। আগে নিজের ছেলেকে ঠিক কর তারপর লোকের ছেলেমেয়েকে জ্ঞান বিতরণ কর বুঝেছিস?”
মালিনীর পায়ের শব্দ পেয়েই দীপিকা গলা চেঞ্জ করে গলায় মধু ঢেলে বলল “তারপর বল কাকিমা, গুঞ্জা কিভাবে ছেলেটার প্রেমে পড়ল? তুমি দেখেছ রিপিট টেলিকাস্টটা?”
মালিনী চা নিয়ে ঘরে ঢুকলেন। পিন্টুকাকিমা কাতর চোখে মালিনীর দিকে তাকিয়ে বললেন “ভেসলিন আছে?”
মালিনী বললেন “হ্যাঁ, এই তো”। মালিনীর থেকে ভেসলিনের কৌটোটা নিয়ে “মেখে নিয়ে আসব পরের দিন” বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন। মালিনী ডাকলেও শুনলেন না।
মালিনী অবাক হয়ে দীপিকাকে বললেন “কী হয়েছে?”
দীপিকা বলল “কী জানি, দেখো বাথরুম পেয়েছে হয়ত”!
মালিনী বললেন “অবাক কান্ড আমাদের বাড়িতেও বাথরুম আছে তো। ভেসলিন নিয়ে কী করবে?”
দীপিকা চায়ের কাপ নিয়ে ভালমানুষের মত মুখ করে বলল “কিছু ফেটেছে হয়ত। লাগানোর জন্য নিল”।
মালিনী বললেন “যাক গে, শোন, তাহলে কী ঠিক করলি?”
দীপিকা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল “মিস্টার ঘোষকে আসতে বলেছি সন্ধ্যেয়। আসুক”।
মালিনী অবাক হয়ে বললেন “মিস্টার ঘোষ কে?”
দীপিকা বলল “ডিভোর্স ল ইয়ার”।
মালিনী হাঁ করে দীপিকার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
.
২০)
দুটাকা দিয়ে ওজন মেশিনটায় খানিকক্ষণ দাঁড়াবার পর একটা টিকেট বেরিয়ে এল। প্রিয় দেখতে পায় নি পিছনে তার সাইজেরই এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। টিকেট বেরোতেই আগ্রহী গলায় জিজ্ঞেস করলেন “কত দাদা?”
প্রিয় বলল “কী? খেলার স্কোর?”
লোকটা বলল “না না, ওয়েট। ওয়েট কত আপনার?”
প্রিয় টিকেটের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলল “নাইন্টি ওয়ান পয়েন্ট ফাইভ”।
লোকটা খুশি হয়ে বলল “যাক, দাদা এখনও আমি ফটো ফিনিশে বেশি আছি। আমার নাইন্টি টু। নার্ভাস নাইন্টিজ বুইলেন কী না, আর আট কিলো বডিতে এলেই সেঞ্চুরি”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “আপনি কি কমাতে চাইছেন না?”
লোকটা বলল “পাগল নাকি মশাই? কমাব কেন? এটাই তো অহংকার। দম আটকে আসবে, কমোড ছাড়া পায়খানায় বসতে পারব না, কোলেস্টেরল আকাশচুম্বী হবে, তবেই না মোটা হয়ে মজা। ওই মাঝামাঝি মোটা হয়ে কী লাভ?”
প্রিয় বলল “আপনি বিয়ে করেছেন?”
লোকটা বলল “হ্যাঁ, কেন করব না? আমার বউ আর আমি তো লড়ে যাই সমানে সমানে। ওর অবশ্য একটু কম, এইট্টি টু। তবে ওর হাইট কম। চার ফুট এগারো। আমি অবিশ্যি ভালই লম্বা”।
প্রিয় হতাশ হয়ে বলল “আমার বউ খুব রোগা। আমাকে ছেড়েও দিয়েছে”।
লোকটা করুণ মুখ করে বলল “ওই জন্যই বলে, মোটা হয়ে করিও বিয়া, বিয়া করিয়া মুটিও না। এর পরের যে বিয়েটা করবেন, দেখে শুনে বিয়ে করবেন। দাঁড়ান, একে দেখুন”।
লোকটা মোবাইল বের করে একজন বেশ স্থূলাঙ্গী মহিলাকে দেখালেন। বললেন “দিনে বারবার চকলেট ড্রিঙ্কস খায়। সপ্তাহে দুবার মাটন, দিনে চারবেলা ভাত খায়। আপনার সঙ্গে ভাল মানাবে”। লোকটা চোখ মারল।
প্রিয় বলল “আপনার বউ?”
লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল “না না আমার শালী। আপনি চাইলে আপনার বউ করার জন্য কথা বলতে পারি। দেখুন, মোটা ফ্যামিলির অনেক সুবিধা। এত সমস্যা হবে শরীর নিয়ে, যে তখন কোন সমস্যাকেই সমস্যা বলে মনে হবে না। দেখুন না, আমার প্রথমে প্রেশার বাড়ল। আমি খুব চিন্তা করলাম। তারপর ধুত্তোর বলে খাওয়া দাওয়া আরও বাড়িয়ে দিলাম। একসময় আমার থাইরয়েড, কোলেস্টরল, মায় সুগারও ধরা পড়ল। এখন আমি বিন্দাস আছি। খাওয়া দাওয়াও কন্ট্রোল করি না। আরেকটা ব্যাপার আছে”।
প্রিয় হতভম্ব হয়ে বলল “কী?”
লোকটা চোখ মেরে বলল “এরকম ওজনে রকেট ক্যাপসুল ছাড়াই খাট ভেঙে যাবে”।
প্রিয় কিছুক্ষণ হুব্বা হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হাঁটতে শুরু করল। লোকটা “ও দাদা শুনুন না দাদা” বলে একটু এসেই হাঁফিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
অফিস টাইম হয়ে গেছে। দেরী করে গেলেই অ্যাবসেন্ট হয়ে যাওয়ার ভয়। প্রিয় ট্যাক্সি নিয়ে নিল।
খানিকটা রাস্তা যাবার পর প্রিয়র ফোনটা বেজে উঠল, প্রিয় নাম্বারটা দেখে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ধরল “বলুন গুলুবাবু”।
“প্রিয়বাবু। আমি ফোনেই আপনাদের রিলেশন সম্পর্কে কয়েকটা অ্যানালিসিস বলছি। আপনার ফোনে কল রেকর্ডার আছে?”
প্রিয় বলল “আছে”।
“ওকে, আপনি চাইলে রেকর্ডিংও করতে পারেন”।
প্রিয় বলল “আচ্ছা”।
রেকর্ডার অন করল। ওপাশ থেকে গুলুদা অনেকগুলো কথা বলল। প্রিয় সব শুনে ফোনটা রেখে দীপিকাকে ফোন করল। দীপিকা ধরল “বল, বাড়ির কাউকে দিয়ে আবার অপমান করতে চাও?”
প্রিয় বলল “না না, আমি একাই আছি। তোমার সঙ্গে কিছু কথা আছে”।
দীপিকা বলল “কোন কথা নেই। ডিভোর্সের ব্যবস্থা করছি”।
প্রিয় বলল “হ্যাঁ, সে ব্যাপারেই তো। আমি তোমাকে ফিরতে বলছি না”।
দীপিকা যন্ত্রের মত গলায় বলল “কী বললে ফোনে বল”।
প্রিয় বলল “না। দেখা করেই বলব। এখন আসতে পারবে?”
দীপিকা বলল “কোথায়?”
প্রিয় বলল “যেখানে খুশি। তোমার বাড়ির ওখানে একটা কফি শপ আছে না? ওখানে যাচ্ছি”।
দীপিকা বলল “নাহ। বাড়ির ওখানে না। পাড়ার লোকের কেচ্ছা ঘাটার স্বভাব আছে। তুমি অভিশ্রুতির ফ্ল্যাটে গেছিলে না একদিন? ওখানে এসো, আমি যাচ্ছি”।
প্রিয় বলল “তাড়াতাড়ি এসো, তোমার তো মেক আপ করতেই ছ ঘন্টা লাগে”।
দীপিকা বলল “বাল, একটা পেঙ্গুইনের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। অত সাজার কিছু নেই। তুমি যাও। আমি আসছি”।
ফোনটা কেটে গেল।
প্রিয় ফোন রেখে অফিসে ফোন করে জানাল আজ যাবে না।
ড্রাইভারকে অভিশ্রুতির ফ্ল্যাটের ঠিকানা বদলে গাড়িতে হেলান দিল।
২১)
“এসো এসো”।
অভিশ্রুতি হাসি মুখে দরজা খুলল।
প্রিয় বলল “দীপিকা ফোন করেছিল?”
অভিশ্রুতি বলল “হ্যাঁ। আধঘন্টা মত লাগবে আসতে”।
প্রিয় বসল। অভিশ্রুতি বলল “টিভি দেখবে?”
প্রিয় আঁতকে উঠে বলল “তুমিও সিরিয়াল দেখো নাকি?”
অভিশ্রুতি হেসে ফেলল “না না, তুমি দেখো তোমার মত করে। আমি কিছু বলব না”।
প্রিয় আশ্বস্ত হয়ে স্পোর্টস চ্যানেল দিল। অভিশ্রুতি বলল “আমি একটু রান্নাঘরে গেলাম”।
প্রিয় বলল “নো প্রবলেম”। পরক্ষণেই প্রিয় একটু ইতস্তত করে বলল “আচ্ছা একটা প্রশ্ন করব”?
অভিশ্রুতি বলল “হ্যাঁ শিওর”।
প্রিয় বলল “এই ফ্ল্যাটে কি রাহুল আর দীপিকা দেখা করে?”
অভিশ্রুতি অবাক হয়ে বলল “না তো, কেন বলত?”
প্রিয় বলল “নাহ কিছু না”।
অভিশ্রুতি রান্না ঘরে গেল। টেবিলের ওপর কয়েকটা ম্যাগাজিন আছে। প্রিয় সেগুলো ঘাটতে লাগল।
কলিং বেল বাজল কিছুক্ষণ পরে। প্রিয় উঠতে যাচ্ছিল।
অভিশ্রুতি চলে এসছিল। তাকে বলল “তুমি বোস। আমি খুলছি”।
অভিশ্রুতি দরজা খুলতে দীপিকা ঘরে ঢুকল। সানগ্লাস নামিয়ে টেবিলে রাখতে রাখতে বলল “ওহ, তুমি এসে গেছো। শ্রুতি, আমাকে যা হয় একটা কিছু দে। খুব খিদে পেয়েছে”।
অভিশ্রুতি হাসল “হ্যাঁ, বস তোরা। আমি রান্নাই করছিলাম”।
অভিশ্রুতি রান্নাঘরে গেলে দীপিকা প্রিয়র সামনের সোফায় বসে বলল “বল। তোমার কী বলার আছে। অফিস ছুটি নিয়েছ?”
প্রিয় মাথা নাড়ল।
দীপিকা বলল “বল। বিলিভ মি, এ ক’দিন তোমার বাড়ির আর আমার বাড়ির কার্টুনগুলোকে সামলাতে সামলাতে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তোমার দাবীদাওয়াগুলো শুনে নি। বল বল”।
প্রিয় বলল “দেখো, আমি জানি, তুমি ডিভোর্সের ব্যাপারে মানসিকভাবে প্রস্তুত”।
দীপিকা হাঁফ ছাড়ল “যাক, বুঝেছ তাহলে”।
প্রিয় বলল “হ্যাঁ। বুঝেছি। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্যই আমি তোমাকে এখানে ডেকেছি। দেখো, আমি সম্প্রতি আমার অফিসের সিনহাদাকে ডিভোর্সের এই প্রসেসটার মধ্যে দিয়ে যেতে দেখেছি। সিনহাদা এবং সিনহাবৌদি দুজনেই ভাল লোক। কোন একটা কারণে ওদের বনিবনা হল না। ফলস্বরূপ ডিভোর্স ফাইল করতে হল”।
দীপিকা বলল “হু তো?”
প্রিয় বলল “এই সময়েই দেখা গেল সব থেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা। দুটো মানুষ সহ, দুজনের গোটা ফ্যামিলিটাই যেন চেঞ্জ হয়ে গেল। এ ওকে দুশ্চরিত্র বলছে, এ তার মাকে বলছে খাবারে বিষ মিষিয়ে দিত, বাবার নামে ভাইয়ের নামে যা ইচ্ছা তাই বলছে, সিনহাদার নামে বৌদি ফোর নাইন্টি এইটও করেছিল, এক রাত জেলে অবধি থাকতে হয়েছিল সিনহাদাকে”।
দীপিকা বলল “ওকে, তুমি চাও না, তোমার বাড়ির বা তোমাকে জেল যেন খাটাই, তাই তো?”
প্রিয় হাসল, “ব্যাপারটা শুধু আমার ফ্যামিলি নিয়েই না। তোমার ফ্যামিলি নিয়েও। আমিও একই ভাবে চাই আমার বাড়ি থেকেও তোমাদের নামে এসব অ্যালিগেশন যেন না ওঠে। তুমি ডিভোর্স চাও, ফাইন, তোমার একটা অ্যাফেয়ার হয়েছে, ফাইন, তোমার আমার সঙ্গে বিয়েটায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল, ফাইন…”
দীপিকা বিরক্ত হয়ে বলল “কী বালের মত ফাইন ফাইন করে যাচ্ছ”?
প্রিয় এবার সরাসরি বলল “আমি চাই, গোটা ব্যাপারটাই নিরুপদ্রব হোক। এর ওর নামে দোষারোপ না হয়ে, লেটস মেক ইট আ স্মুথ প্রসেস। তুমি আক্রমণাত্মক হয়েছ, আমার কোন সমস্যা নেই। আমি চাইছি না আবার আক্রমণাত্মক হতে। দেখো ছোটবেলা থেকে যে লোকটা আমাকে হাঁটা শেখাল, কথা বলা শেখাল, সাইকেল চালানো শেখাল, সে লোকটাও কেমন এই তিক্ত প্রক্রিয়ায় ঠরকি অবধি শুনে ফেলল”।
দীপিকা একটু থমকে বলল “আই অ্যাম সরি ফর দ্যাট। তোমার বাবাকে কথাটা আমার না বললেই ভাল হত”।
প্রিয় বলল “দেখো, প্রথমে ভেবেছিলাম তুমি গোটা চিঠিটাই রাগের মাথায় লিখে চলে গেছিলে, পরে আমার ধারণাটা ভেঙেছে। চিঠিটা যে তুমি আর রাহুল পরামর্শ করেই লিখেছিলে সেটা…”
দীপিকা চমকে প্রিয়র দিকে তাকাল “তুমি কী করে জানলে?”
প্রিয় বলল “সেটা ম্যাটার করে না। যেটা ম্যাটার করে সেটা হল লেটস মেক আ স্মুদ এন্ড অফ আওয়ার রিলেশনশিপ। আমি চাই না, এরপর আমাদের বাড়ির উকিলও তোমার সম্পর্কে আবার উল্টোপালটা কিছু লিখে পাঠায়। হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি, তোমার একটা আলাদা পার্সোনাল লাইফ থাকতে পারে, তোমার সেই চয়েসটা আছে, যদি তোমার বরের ওপর তুমি আর ইন্টারেস্ট না পাও, তবে তুমি সরে যেতেই পারো রিলেশনটা থেকে। আমি তোমার ডিসিশনকে রেসপেক্ট করি। আমি এটাই তোমাকে বলতে ডেকেছিলাম। আমার দিক থেকে তোমায় আর কোন টেনশন নিতে হবে না। আমি আমার লাইফ বুঝে নিতে পারব। আই নো, ইউ হেট মি, আই নো আই ডিজারভ দ্যাট। এই নিয়ে আমার আর কোন আক্ষেপ নেই”।
দীপিকা কয়েক সেকেন্ড অবাক হয়ে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে বলল “তুমি এই কথাগুলো ভেবে বললে? আমি তো ভাবতেই পারছি না তুমি এই কথাগুলো আমায় বলবে”।
প্রিয় বলল “বুল্টিকে তুমি বলেছ রাহুলের এখনও হাতও ধর নি?এই মিথ্যা কথাগুলো বোধ হয় না বললেই হত।”
দীপিকা বলল “বুল্টি তোমায় বলেছে?”
প্রিয় কিছু বলল না। মাথা নিচু করে বসে থাকল। বলল “আমার আর সিরিয়ালের মত মেলোড্রামা পোষাচ্ছে না। মিটিয়ে নাও তাড়াতাড়ি। এমনিতেও অফিসে খুব চাপ”।
দীপিকা কিছু বলল না।
প্রিয় উঠল, বলল “হাতের লেখাটা ইম্প্রুভ করে নিও। এলাম”।
দীপিকা চুপ করে বসে থাকল।
প্রিয় দরজা খুলে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেল।
.
২২
কিছুক্ষণ পর অভিশ্রুতি একগাদা ফিশ ফিঙ্গার আর পকোড়া নিয়ে ঢুকে অবাক গলায় বলল “প্রিয় কোথায় গেল? বাথরুমে?”
দীপিকা টিভির দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে ছিল।
অভিশ্রুতি আবার বলল “কী রে, প্রিয় কোথায়?”
দীপিকা বলল “বেরিয়ে গেল তো”।
অভিশ্রুতি বলল “যাহ্বাবা! এতগুলো ফিশ ফিঙ্গার আর পকোড়া কে খাবে?”
দীপিকা বলল “তুই খা। খুব রোগা হয়ে যাচ্ছিস, গায়ে গত্তি লাগুক”।
অভিশ্রুতি বসল “কী হল? কী বলল প্রিয়? আমি তো ভাবছিলাম তোদের আজ শুভ মিলন টিলন হবে। বেডরুমও সাজিয়ে রেখেছিলাম”।
দীপিকা একটা ফিশ ফিঙ্গার তুলে বলল “তুই চিরকালই বোকা হাঁদা রোম্যান্টিক থেকে যাবি। বাস্তবের মাটিতে পা দিবি না। ওই জন্য সারাজীবন ছিঁড়ে কাটিয়ে দিলি”।
অভিশ্রুতি বলল “ভাল তো। বেশি চালাক হয়ে লাভ নেই। রিলেশনশিপে একটু বোকা হাঁদা থাকাটা মনে হয় ভাল। অপশন খুঁজতে খুঁজতে একদিন হঠাৎ করে আবিষ্কার করতে হবে না যে আমিও কখন যেন একটা অপশন হয়ে গেছি”।
দীপিকা কয়েক সেকেন্ড অভিশ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলল “তুই কী বলতে চাইছিস? প্রিয় আমাকে অপশন ভাবছে? ওর লাইফে আরও মেয়ে আছে?”
অভিশ্রুতি হাসল “না না, প্রিয়র সে ক্ষমতা নেই। কিছু কিছু মানুষ থাকে জানিস তো, যারা একটা সরলরেখায় চলে। তারা ডানদিকে তাকায় না, বামদিকে তাকায় না, সোজা তাকানো ছাড়া তাকাতেই পারে না। এরা সকালে ওঠে, খাওয়া দাওয়া করে, অফিস যায়, অফিস থেকে ফেরে, ঘুমিয়ে পড়ে। অনেকটা ওয়ান মাস্টার ডগ টাইপের মানুষ। প্রিয় হল সেই টাইপের”।
দীপিকা বলল “আর আমি? আমি কী? সে লোকটা অফিস যাবে, অফিস থেকে ফিরবে, আমার দিকে তাকাবে না, এসে ঘুমিয়ে পড়বে,আমি একটা ইউজড ন্যাপকিনের মত ডাস্টবিনে পড়ে থাকব? আমার বুঝি কোন পছন্দ থাকতে নেই? লাইফ থাকতে নেই?”
অভিশ্রুতি বলল “সসটা আনিনি, এক মিনিট”।
দীপিকা অভিশ্রুতির হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলল “সসের গাঁড় মারি। আমি যেটা বলছি, সেটার উত্তর দে”।
অভিশ্রুতি দীপিকার চোখে চোখ রেখে বলল “তুই কতটা এগিয়েছিস?”
দীপিকা বলল “কার সঙ্গে? রাহুলের সঙ্গে?”
অভিশ্রুতি বলল “প্রিয় কিছুটা আন্দাজ করছে। ও আমাকে জিজ্ঞেস করছিল তুই রাহুলকে নিয়ে এই ফ্ল্যাটে আসিস নাকি?”
দীপিকা মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বলল “হু, ও কিছুটা আন্দাজ করেছে বা দেখেছে কিছু হয়ত। রাহুলের সঙ্গে আমার লাস্ট তিনমাস আলাপ। কী করব বল? সারাদিন একা একা থাকি। ওর মা সিরিয়াল দেখবে, বুল্টি চলে যাবে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে, আমি কী করব? ইয়েস উই মেট…”
অভিশ্রুতি বলল “শুয়েছিস?”
দীপিকা অভিশ্রুতির চোখের দিকে না তাকিয়ে বলল “হ্যাঁ, একবার…”
অভিশ্রুতি মাথায় হাত দিল, “এতদূর? আমাকেও বলিস নি? এটার একপ্ল্যানেশন?”
দীপিকা বলল “ভালোবাসি তাই শুয়েছি, অবাক হবার কী আছে? হতেই পারে”।
অভিশ্রুতি বলল “তোর একবারও মনে হয় নি প্রিয়কে ফাঁকি দিচ্ছিস?”
দীপিকা বলল “না। মনে হয় নি। ফাঁকি দিলে ঘোমটার নীচে খ্যামটা নাচতাম। ওর যা পরিস্থিতি তাতে ওকে লুকিয়ে রোজই রাহুলের সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করতে পারতাম, তা করিনি। ইভেন একদিন আমিও শেষ চেষ্টা করেছিলাম। লাস্ট দিন। ও অফিস থেকে এল, আমি ওকে সিডিউস করার চেষ্টা করলাম। কেমন একটা ভঙ্গি করে বলল ভাল লাগছে না। ঠিক করে রেখেছিলাম যদি কিছু না করে পরের দিন চিঠিটা লিখে দিয়ে চলে যাব। মদ খেয়েছিল। বাট হি ইজ নট ইমপোটেন্ট অ্যাটলিস্ট ইউ নো…” দীপিকা কথাটা বলতে বলতে অভিশ্রুতির দিকে হাঁ করে তাকাল।
অভিশ্রুতি বলল “ও কি কিছু জেনেছিল? তাই তোকে সরিয়ে দিয়েছিল?”
দীপিকা বলল “কী করে জানবে?”
অভিশ্রুতি বলল “মে বি তোর মোবাইল দেখেছিল… পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখিস?”
দীপিকা বলল “নাহ। ও কোনোদিনও আমার মোবাইল চেক করে না। সেসব দেওয়ার কথা ভাবিও নি”।
অভিশ্রুতি বলল “কোইন্সিডেন্টলি… কিছু একটা দেখেছিল মে বি…”
দীপিকা একটা ফিশ ফিঙ্গার তুলে আবার রেখে দিয়ে বলল “খাব না। খুব ক্যালোরি। মোটা হয়ে যাব”।
.
২৩)
প্রিয় বাড়ি ফিরল দুপুর নাগাদ। ড্রয়িং রুমে মঞ্জু বসে আছেন। খানিকক্ষণ আগে বোনকে খাইয়েছেন কাদম্বরী। একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছেন মঞ্জু তবে মাঝে মাঝেই ক্ষেপে উঠছেন।
প্রিয়কে দেখে বুল্টি অবাক হয়ে বলল “কীরে, তুই অফিস গেলি না?”
প্রিয় বলল “না। কাল থেকে যাব আবার”।
প্রিয় নিজের ঘরে ঢুকল। বুল্টি পিছন পিছন। প্রিয় বলল “টাকা লাগবে? মানিব্যাগ থেকে নিয়ে নে যা লাগবে”।
বুল্টি বলল “না লাগবে না”।
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “এ দেখি ভূতের মুখে রামনাম? তাহলে কী লাগবে?”
বুল্টি বলল “যা লাগবে দিবি?”
প্রিয় বলল “সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই দেব। এখন যদি বলিস তোর বউদিকে ফিরিয়ে আনতে তাহলে কী করে আনব?”
বুল্টি বলল “সেসব না”।
প্রিয় বলল “তবে? বলে ফেল। দেখি”।
বুল্টি বলল “নিজের চিকিৎসা করা। রিপোর্টগুলো কোনটাই স্বাভাবিক না। তুই সব ঘরের কোণায় ফেলে রেখে দিয়ে এভাবে দেবদাস হয়ে ঘুরে বেড়াবি কেন বলত?”
প্রিয় হাসল “ওহ, সে করাবো তো। উইকেন্ডে করিয়ে নেব”।
বুল্টি বলল “না, আজকেই যাবি। আজ ছুটি নিয়েছিস। তুই বল দরকার হলে আমি যাব”।
প্রিয় বলল “হবে হবে, এমন কিছু হয় নি আমার”।
বুল্টি বলল “সেটা ডাক্তারকে বুঝতে দে দয়া করে”।
প্রিয় বলল “ঠিক আছে। যা মানিব্যাগে একটা পিংক নোট আছে। নিয়ে ভাগ”।
বুল্টি বলল “আমাকে ঘুষ দিয়ে লাভ নেই দাদা। যাবি কী না বল”।
প্রিয় বলল “আচ্ছা, তুই এখন যা তো। গিয়ে ওই শুভাশিস না দেবাশিসের সঙ্গে ভাটা”।
বুল্টি বলল “উফ, দাদা! ওর নাম আশিস”।
প্রিয় বলল “ওই হল। যাহা আশিস তাহাই দেবাশিস”।
বুল্টি রাগল না। বলল “আচ্ছা। তুই দেবাশিস বলেই ডাক। খুশি”।
প্রিয় বলল “ডাক একদিন। বাবা মার সঙ্গে পরিচয় করুক”।
বুল্টি বলল “মা যদি উল্টোপাল্টা বলে?”
প্রিয় বলল “বলবে না। মাকে চিনলি না এখনও? ব্যাটাকে বলবি ভাল করে কয়েকটা সিরিয়ালের গল্প মুখস্ত করে আসতে। মা দেখবি পারলে সেদিনই তোদের বিয়ে দিয়ে দেবে”।
বুল্টি বলল “ধুত, ওর টিভিই নেই”।
প্রিয় বলল “তাতে কী? তুই দেখে ওকে একটু কনসেপ্ট গুলো বুঝিয়ে দিবি। সিরিয়ালের কি কোন কন্সেপ্ট আছে নাকি? আজ দেখলে আগামী এক বছর পর কী হবে বলে দিতে পারবি”।
বুল্টি বলল “এই তুই আরেকটু ভাল প্ল্যান ভাব দাদা। এগুলো খুবই ঘটিয়া”।
প্রিয় বলল “ঘটিয়া? ঘটিগরম খেতে ইচ্ছা করছে তো তোর ঘটিয়া শুনে। চানাচুর, তার সঙ্গে লেবু, আম আদা না কী একটা বলে, উফ, অসাধারণ”।
বুল্টি বলল “আমারও খেতে ইচ্ছা করছে”।
কাদম্বরী ঘরে ঢুকে বললেন “কীরে প্রিয়, অফিস টফিস সব ছেড়ে দিলি নাকি?”
প্রিয় বলল “আজকের দিনটাই। কাল আবার যাব”।
কাদম্বরী বসলেন “শোন, অনেকগুলো কথা বলার আছে। তোকে বুঝতে হবে”।
প্রিয় বলল “কিচ্ছু বুঝতে হবে না। কাউকে দোষারোপের কোন দরকার নেই। আমার দীপিকার সঙ্গে কথা হয়ে গেছে। আমরা মিউচুয়ালি সেপারেশন করে নেব। একেবারেই চিন্তা কোর না”।
বুল্টির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল প্রিয়র কথা শুনে। অবাক গলায় বলল “মানে? সেপারেশন মানে, কী বলছিস দাদা?”
প্রিয় বলল “ঠিকই শুনেছিস। ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি হয় সেটা দেখছি”।
কাদম্বরী উৎসাহিত হয়ে উপরওয়ালার উদ্দেশ্যে প্রণাম করে বললেন “এই তো, বাঁচা গেল, ভগবান যা করেন সব মঙ্গলের জন্য। শোন প্রিয়, ওই যে বিশ্বাস আছে না, আরে তোর বাবার বন্ধু বিশ্বাস, তার মেয়ে, খুব সুন্দর দেখতে। নাম মাত্র ডিভোর্সি বুঝলি, ফুলসজ্জাও হয় নি”।
বুল্টি অবাক গলায় বলল “এর মধ্যে মেয়ে দেখাও শুরু করে দিয়েছ?”
কাদম্বরী বললেন “আবার কী দেখতে হবে না?”
বুল্টি বলল “কিন্তু মা ফুলসজ্জা হয় নি কী করে বুঝলে? মানে কেউ টেস্ট করে দেখেছে নাকি?”
কাদম্বরী কটমট করে বুল্টির দিকে তাকিয়ে বললেন “বুল্টি খুব বেড়েছিস তুই”।
বুল্টি হাসতে হাসতে নিজের ঘরে চলে গেল।
কাদম্বরী বললেন “ফেসবুকটা খোল না, প্রোফাইলটা দেখ। মেয়েটা খুব ঠাকুর দেবতার ফটো শেয়ার করে। খুব ভাল মেয়ে”।
প্রিয় বলল “মা, এখন এই সব রাখো তো, অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে। বারবার এই নিয়ে বিরক্ত করলে আমি কিন্তু অন্য জায়গায় ফ্ল্যাট নিয়ে চলে যাব তখন বুঝবে”।
কাদম্বরী বললেন “আমারও তো ইচ্ছা হয়। নতুন বউমাকে নিয়ে সিরিয়াল দেখতে বসি”।
প্রিয় উত্তর না দিয়ে মোবাইল ঘাটতে লাগল।
.
২৪)
সকাল সাড়ে আটটা। প্রিয় দাড়ি কাটছিল। বুল্টি ঘুম থেকে উঠে সোফায় বসে বসে হাই তুলছে।
কাদম্বরী টিভিতে সিরিয়ালের রিপিট টেলিকাস্ট দেখা শুরু করেছেন। হরনাথ বাবু বাজারে গেছেন।
মঞ্জু ঘুম চোখে এসে ড্রয়িংরুমে বসলেন। কাদম্বরী নরম গলায় জিজ্ঞেস করলেন “কীরে, কেমন আছিস?”
মঞ্জু বললেন “ভাল আছি। এটা কী সিরিয়াল হচ্ছে?”
কাদম্বরী খুশি হয়ে বললেন “ওরে, আমার বোন সুস্থ হয়ে গেছে রে”।
মঞ্জু অবাক হয়ে বললেন “আমি তো সুস্থই”।
কাদম্বরী বললেন “বাবাহ! যা খেল দেখালি!”
মঞ্জু বললেন “খেল দেখালাম? কী খেল দেখালাম?”
কাদম্বরী বললেন “সে অনেক কথা। শোন খুশির কথা হল আপদ বিদেয় হয়েছে। ও ডাইনি আর এ বাড়িতে আসবে না”।
প্রিয় বিরক্ত গলায় বলল “আহ, কী হচ্ছে মা?”
কাদম্বরী বললেন “ঠিক আছে ঠিক আছে। অত ওর হয়ে তোমাকে গাইতে হবে না। কী কুক্ষণে যে ওই মেয়েকে বিয়ে করেছিলি”!
মঞ্জু খুশি খুশি গলায় বললেন “ও, ডিভোর্স হবে? বাহ বাহ, এতো দারুণ খবর। শাখ বাজা, উলু দে, উকিলবাবুকে খবর দে, ও মেয়ের নামে যত বদনাম হয় সব দে”।
প্রিয় বলল “কিচ্ছু করতে হবে না। এমনিই ডিভোর্স হয়ে যাবে। তোমরা একটু বেশি ভেবে ফেলছ”।
মঞ্জু অবাক হয়ে বললেন “তা কী করে হয়? আসল মজা তো কোর্টে। ও মেয়ের শাড়ি খুলে টেনে দিতে হবে বদনাম করে করে”।
প্রিয় মুখ ধুয়ে এসে মাসীর সামনে বসল। “শোন। আমার বিয়ে, আমাকে বুঝতে দাও। বললাম তো আর কোন ঝামেলা নেই। মিউচুয়ালি মিটে যাবে সব”।
মঞ্জু ধরা গলায় বললেন “দেখলি দিদি, আমাদের সেই ছোটবেলার ছেলেটা কত চেঞ্জ হয়ে গেছে”।
কাদম্বরী বললেন “ওই সব ছাড়। কাল থেকে আমাদের কঠিন কাজ”।
মঞ্জু গালে হাত দিলেন “কী রে দিদি?”
কাদম্বরী বললেন “প্রিয়র জন্য মেয়ে দেখতে বেরোতে হবে। আর কোন ডাইনি যেন এই বাড়িতে না আসে”।
প্রিয় বলল “না। তোমরা দয়া করে আর মেয়ে দেখো না। ক’টা দিন একা থাকতে দাও”।
কাদম্বরী বললেন “তোকে তো কিছু করতে হবে না বাবা। আমি আর মঞ্জু যা করার করব। তুই কদিন পরে শুধু বিয়ের পিঁড়িতে বসবি। বুঝলি কী না!”
প্রিয় কঠিন গলায় বলল “বললাম তো, কদিন একটু একা থাকতে দাও”।
মঞ্জু বললেন “যাক, তুই চিন্তা করিস না দিদি। ও মেয়ের হাত থেকে তো বেঁচে গেছে। এবার আর কারও কোন চিন্তা নেই”।
মঞ্জুর কথা শেষ হল না বাইরের দরজা খুলে দীপিকা ঢুকল। হাতে একটা ট্রলি।
ঘরের সবাই অবাক হয়ে দীপিকার দিকে তাকাল।
দীপিকা বুল্টিকে ব্যস্ত গলায় বলল “কী রে, হাঁ করে কী দেখছিস? ট্রলিটা ঘরে রাখ গিয়ে। উফ, ট্যাক্সিওয়ালাটা কী শয়তান রে বাবা! একটু ঘর অবধি বয়ে দিল না?”
বুল্টি হতভম্ব মুখে উঠে ট্রলিটা নিয়ে প্রিয়দের ঘরে নিয়ে গেল।
দীপিকা সোফায় এসে বসল। “ওহ, মা, কী দেখছ?”
কাদম্বরী হাঁ হয়ে দীপিকার দিকে তাকিয়েছিলেন। তার মুখে কথা আসছিল না।
প্রিয় বলল “কী ব্যাপার?”
দীপিকা বলল “কী ব্যাপার আবার কী? সারাজীবন বাপের বাড়ি থাকব নাকি?”
মঞ্জু পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে চোখ ছোট ছোট করে দীপিকাকে দেখছিলেন, বললেন “এই মেয়ে, তোমার ধান্দা কী?”
দীপিকা হাসি মুখে বলল “কীসের ধান্দা মাসী?”
মঞ্জু বললেন “তুমি এই বাড়িতে কেন?”
দীপিকা বলল “এটা তো আমারই বাড়ি। জানো না, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িই মেয়েদের বাড়ি হয়ে যায়? কিন্তু তুমি এই বাড়িতে কেন?”
মঞ্জু দিদির দিকে কাতর চোখে তাকালেন। কাদম্বরী বললেন “প্রিয়, তুই যে বললি ডিভোর্সের সব ঠিক হয়ে গেছে!”
দীপিকা বলল “মাসী ক’দিনের প্ল্যান?”
মঞ্জু বললেন “কীসের প্ল্যান?”
দীপিকা বলল “এই বাড়ির লোকেদের মাথা চিবনোর প্ল্যান ক’দিন?”
প্রিয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উঠে বসে বলল “আমি অফিস গেলাম। ফিরে এসে কথা বলছি”।
মঞ্জু কাদম্বরীর দিকে তাকালেন। কাদম্বরী ব্যস্ত হয়ে বললেন “যাই, রান্না বসাই, কত কাজ”।
ঘর ফাঁকা হয়ে গেল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে।
দীপিকা মঞ্জুর দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসে রইল।
.
২৫)
.
রোশন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুটি দিয়ে অমলেট খেতে খেতে বলল “বাড়ি থেকে খুব চাপ দিচ্ছে ভাই”।
প্রিয় মাছভাজা খাচ্ছিল। বলল “কেন?”
রোশন বলল “বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে। মা নাকি মেয়ে দেখে রেখেছে”।
প্রিয় বলল “করে ফেল। আর দেরী করে কী হবে?”
রোশন করুণ মুখে বলল “কী লাভ? তারপর তো আমার বউও পালাবে”।
প্রিয় কিছু বলল না। মাছভাজায় মন দিল।
রোশন বলল “ভাই তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে করবি না তো?”
প্রিয় বলল “কী?”
রোশন গলা নামিয়ে বলল “তোকে বীথিকাদি বাড়ি নিয়ে গেছিল?”
প্রিয় বলল “হ্যাঁ”।
রোশন চোখ মারল “কেমন ছিল?”
প্রিয় অবাক হয়ে বলল “কী কেমন ছিল”?
রোশন বলল “যা শালা, এখনও ডিডি সেভেন হয়ে আছিস দেখছি”।
প্রিয় বলল “কেন তুই গেছিস আগে?”
রোশন বলল “হ্যাঁ। এক পেগ পেটে পড়তেই খুলতে শুরু করে দিয়েছিল। আমি দেখেই পালিয়েছিলাম। এখনও তার জন্য আমার পেন্সিল আমাকে প্রতি রাতে দোষারোপ করে”।
প্রিয় বলল “ভদ্রমহিলা একটু ফ্রাস্ট্রেটেড আছেন। বেশি না ঘাটানোই ভাল”।
রোশন বলল “হ্যাঁ ভাই, তা বলে, বলে কয়ে খুলতে পারত। আমি কি কম ফ্রাস্ট্রেটেড নাকি। ফ্রাস্ট্রেশনে ফ্রাস্ট্রেশনে আমার বিছানার চাদরটা ওয়ার্ল্ড ম্যাপ হয়ে গেছে। লন্ড্রিওয়ালা পর্যন্ত চাদর দেবার সময় আমার দিকে এমনভাবে তাকায় যেন আমি আইসিসের সিক্রেট এজেন্ট”।
প্রিয় বলল “বলে কয়ে খুললে কী করতি?”
রোশন বলল “সেসব কথা মনে করে আর অফিসের বাথরুমে স্পার্ম ডোনেট করার কোন ইচ্ছা নেই আমার। তুইও কিছু করতে পারলি না তাহলে আমার মতই। অবশ্য তুই ঘরের ফ্রিজের খাবারই খেতে পারিস না, বাইরে আর কী করবি”।
প্রিয় বলল “প্রবলেম কী আছে? তুই বীথিকাদির সঙ্গে যে কোন দিনই যেতে পারিস। চলে যা আজকেই”।
রোশন বলল “না না ভাই, ভয় লাগে। তারপর যদি আমার যন্ত্রটা গিলে খেয়ে নেয়? শরীরের একটা জায়গা থেকেই হিসি করি ভাই। সেটা চলে গেলে খুব চাপ হয়ে যাবে”।
প্রিয়র খাওয়া হয়ে গেছিল। রোশনের বক বক শুনতে খারাপ লাগছিল না। বলল “তাহলে তুই সবটাই কল্পনার জগতে থেকে করিস?”
রোশন হেসে বলল “ওটি আছে বলেই তো এখনও পৃথিবীটা সুন্দর। বীথিকাদি ইমাজিনেশনেই ভাল। রিয়্যালিটিতে নয়”।
প্রিয় বলল “তুই তো কথাবার্তাও ভাল ভাল বলা শুরু করেছিস আজ”।
রোশন বলল “কথার আর দোষ কী ভাই, অফিসের খাটনি খেটে খেটে জীবনে যেটুকু পড়ে থাকে তা হল ওই ইমাজিনেশন। বাদ দে, তোর খবর বল। লাস্ট আপডেট কী?”
প্রিয় বলল “কোন আপডেট নেই”।
রোশন বলল “ডিভোর্স ফাইল করেছিস?”
প্রিয় বলল “এখনও করি নি। দীপিকা আমাদের বাড়িতে এসেছে আজ”।
রোশনের খাওয়া শেষ হয়ে গেছিল। মুখ ধুয়ে জল খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে বলল “ফিরে এসছে? বোকাচোদা সারা দিন পরে এখন বললি কথাটা?”
প্রিয় বলল “এমন কিছু না তো ব্যাপারটা তাই বলি নি”।
রোশন বলল “এমন কিছু না? তুই তো আমাদের ক্লাসের টপারের মত কথা বললি। দুচির ভাই অঙ্কে একশো পেয়ে বলত এ আর এমন কী!”
প্রিয় বলল “সত্যিই এমন কিছু নয়”।
রোশন বলল “লে হালুয়া। আবার বলে এমন কিছু নয়। খাওয়া ভাই খাওয়া”।
প্রিয় বলল “খাইয়ে দিচ্ছি। এই রুটি অমলেটের টাকা আমি দিয়ে দিচ্ছি”।
রোশন বলল “না না, কাকা, ওইসব বললে হবে না। দারু পার্টি হবে, বাবা পার্টি হবে, আমরা ড্রেনে পড়ে থাকব সেই পার্টি হবে”।
প্রিয় বলল “ঠিক আছে। হবে। তবে আজকে কিছু কাজ আছে। আজ হবে না”।
রোশন খুশি হয়ে বলল “সে তো জানিই কাকা। আজ তো তোমারই কাজ। শোন কাকা, আজ আর কোন দিকে তাকাবি না। বাড়ি ঢোকার আগে জিনিসটাকে আইফেল টাওয়ার বানিয়ে স্ট্যাচু অফ লিবার্টির দিকে…”
রোশনের ফোন বাজতে শুরু করেছিল।
রোশন বিরক্ত গলায় বলল “ওই দেখ, রঞ্জনদা। সিনিয়রগুলো একটু যদি শান্তিতে গ্যাজাতে দেয়। চল দেখি আমাদের জন্য কী আইফেল টাওয়ার নিয়ে বসে আছে মালটা”!
২৬)
প্রিয় যখন বাড়ি পৌঁছল তখন রাত আটটা বাজে। প্রিয় দরজা খুলে দেখল কাদম্বরী সিরিয়াল দেখছেন। সে বলল “মঞ্জুমাসী কোথায়?”
কাদম্বরী কাঁদো কাঁদো মুখে বললেন “দুপুরে চলে গেছে”।
প্রিয় আর কথা বাড়াল না। নিজের ঘরে গেল।
দীপিকা খাটের উপর বসে ম্যাগাজিন পড়ছে।
তাকে দেখে বলল “হাই”।
প্রিয় উত্তর দিল না।
দীপিকা বলল “আমি কিছু বলেছি। কানে গেছে?”
প্রিয় খাটের উপর বসল। কয়েক সেকেন্ড দীপিকার দিকে তাকিয়ে বলল “কী চাও?”
দীপিকা বলল “দেখতেই পাচ্ছ কী চাই। আমি ফিরে এসছি”।
প্রিয় বলল “সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু তোমার দাবীটা তো ঠিক বুঝতে পারছি না”।
দীপিকা বলল “দেখো… আমার ভুল হয়েছিল। আমি কাল সারারাত ভেবেছি…আমি চিরকালই এরকম হুইমজিক্যাল। আগে পিছে ভেবে কাজ করি না। তুমি তো জানো কতবার এরকম পাগলামি করেছি। এবারও দেখো!!!”
প্রিয় কিছু বলল না।
দীপিকা বলল “কী? কিছু বল।”
প্রিয় বলল “তোমাকে তো বলেছি প্রসেসটা স্মুদ হবে। তুমি উকিলের সঙ্গে কথা বল”।
দীপিকার চোখ মুখ লাল হয়ে গেল কথাটা শুনে। বলল “তোমাকে আমার নামে কেউ উল্টো পালটা বলেছে? সত্যি করে বল”।
প্রিয় বলল “তোমার চেনা জানা উকিল থাকলে ভাল হয়। আমাদের লোকটাকে আমার সুবিধের বলে মনে হয় না”।
দীপিকা বলল “আমি ভেবেছিলাম আমি এলে তুমি খুশি হবে”।
প্রিয় বলল “তুমি ভেবেছিলে তুমি আমাকে ছেড়ে দেবে। তুমি যখন বুঝলে আসলে আমিই তোমাকে যেতে দিয়েছি, তুমি ঠিক খুশি হতে পারলে না। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম কি?”
দীপিকা কয়েক সেকেন্ড তার দিকে তাকিয়ে বলল “আমি কিন্তু ফিরে এসছি। আশা করছি বুঝতে পারছ… আমি ফিরে এসছি। বিগবস খেলতে আসি নি, তোমার কাছে ফিরে এসছি”।
প্রিয় বলল “রাহুল কেমন আছে?”
দীপিকা খাটের উপর একটা ঘুষি মেরে বলল “আমার হাতে অনেক ক্ষমতা প্রিয়। আমি চাইলে তোমাদের সবাইকে জেল খাটাতে পারি”।
প্রিয় হাসল। বলল “তাই কর। তোমার সেটা ইচ্ছা হলে তুমি করতেই পারো”।
দীপিকা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বসে থাকল। তারপর উঠে পড়ল “আমি এলাম তাহলে”।
প্রিয় কিছু বলল না। চুপ করে বসে থাকল। দীপিকা ব্যাগ গুছিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বলল “এখন রাত ন’টা। আমি একা একা যাব?”
প্রিয় উঠল, “চল দিয়ে আসি”।
প্রিয়কে বেরোতে দেখে কাদম্বরী অবাক হয়ে বললেন “কোথায় যাচ্ছিস?”
প্রিয় বলল “ওকে দিয়ে আসি। রাত হল”।
কাদম্বরী অবাক চোখে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে কী বলবেন বুঝতে না পেরে টিভির দিকে মনোযোগ দিলেন। খানিকটা রাস্তা হেঁটে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড।
দুজনের কেউই কথা বলছিল না। দীপিকা জোরে হাঁটছিল। প্রিয়র গতি কম। ধীরে ধীরে হাঁটছিল।
খানিকটা গিয়ে হঠাৎ দীপিকা গতি কমিয়ে বলল “তুমি ডাক্তার দেখিয়েছ?”
প্রিয় বলল “দেখা যাবে”।
দীপিকা কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল।
প্রিয় বলল “প্রোটেকশন ইউজ করেছিলে? নইলে আবার অনেকরকম ঝামেলা হতে পারে। এমন লোকের সঙ্গে সম্পর্কে যাও, যে পেটে একটু মদ পড়তেই সবাইকে ফলাও করে বাঙালি বৌদির সঙ্গে শোয়ার গল্প করে বেড়ায়”।
দীপিকা দাঁড়িয়ে পড়ল। বলল “তুমি ফিরে যাও, আমি চলে যাব”।
একটা ট্যাক্সিকে দাঁড় করালো প্রিয়। বলল “ওঠো। দিয়ে আসি”।
দীপিকা বলল “তোমার যেতে হবে না”।
দীপিকা ট্যাক্সিতে উঠে বসল।
প্রিয় দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর কী মনে হতে সেও ট্যাক্সিতে উঠল।
দীপিকা বলল “কী হল? বললাম তো তোমায় যেতে হবে না”।
প্রিয় ড্রাইভারকে দীপিকাদের বাড়ির এলাকার নাম বলে বলল “চল”।
গাড়ি স্টার্ট দিল।
২৭)
.
গোটা রাস্তায় দীপিকা জানলার বাইরে তাকিয়ে থাকল। প্রিয় অন্য জানলায়।
দীপিকাদের বাড়ির সামনে এলে ট্যাক্সিটা দাঁড় করাতে বলল প্রিয়।
দীপিকা নামলে প্রিয় ট্যাক্সিচালককে একটু দাঁড়াতে বলে নামল।
দীপিকা বলল “কিছু বলবে?”
প্রিয় বলল “পরের সম্পর্কগুলোকে টেকেন ফর গ্রান্টেড নিও না। ব্যস”।
দীপিকা অনেকটা সামলে নিয়েছিল নিজেকে। বলল “ভাল থেকো”।
প্রিয় বলল “তুমিও, ছেলেমানুষিটা রেখো, শুধু আরেকটু…”
প্রিয় কথাটা শেষ করল না।
দীপিকা আবার বলল “ভাল থেকো। খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্সটা হয়ে যাক। নতুন জীবন শুরু করতে পারবে”।
প্রিয় হাসল, “একটা সময় আসার পর জীবন থমকে যায়। আমাদের তো এটাই লাইফ, সকাল সকাল নাকে মুখে গুঁজে দৌড় মারা, রাতে ক্লান্ত হয়ে এসে আবার ঘুমিয়ে পড়া। মাকে খুশি করতে হবে, বাবাকে খুশি করতে হবে, বউকে খুশি করতে হবে, ওহ, মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি নিজের ভুঁড়ি ঠিক রাখতে হবে…সময় কোথায়? এই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আবারও একা লাগতেই পারে। খামোখা আরেকটা মেয়েকে টিন্ডারপ্রেমী করার থেকে বোধ হয় বাকি জীবনটা একা কাটিয়ে দেওয়াই বেস্ট অপশন। যাক গে, অনেক রাত হয়েছে। আমি এলাম। ভালো থেকো”।
দীপিকা কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে অ্যাপার্টমেন্টের ভিতরে চলে গেল। প্রিয় পুরো সময়টা দাঁড়িয়ে থেকে সেটা দেখে ট্যাক্সিতে উঠে বলল “একটু ঘুরিয়ে নিয়ে বাড়ি চল কাকা”।
কাকা বলল “আমার খিদে পেয়েছে ভাইপো, ঘুরতে পারলাম না”।
প্রিয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল “বাড়িই চল। এছাড়া আর কোথায় যাব”?
শহরে একটু একটু শীত পড়ছে…
প্রিয় জানলাটা নামিয়ে দিল।
দমকা হাওয়া অনেক কিছু ভোলাতে সাহায্য করে…
.
২৮)
প্রিয় প্রিয়,
না, তুমি আর ভাই নেই। তোমাকে যেরকম ভেবেছিলাম, দেখলাম সেরকম তুমি নও। একটা ম্যাদামারা পুরুষের মধ্যেও যে ম্যানলি ব্যাপারটা থাকতে পারে, সেটা আমি কোন দিন ভাবি নি।
তাই তখন তোমার কথাগুলোর উত্তর দিতে পারিনি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনে বাড়ি চলে এলাম।
বিশ্বাস কর, মাইরি বলছি, আমার হেড অফিসে বেশ কয়েকটা হাইটেনশন লাইন কাটা আছে। নিজেও জানি না, কখন কী করি। মানুষ যেমন ভুল করে, আমিও তেমন ভুল করি।
তাতে আমার খারাপ লেগেছে। এখনও খারাপ লাগে। বিশ্বাস করবে কী না জানি না, কিন্তু একটা মানুষকে শরীর দেওয়ার থেকেও বেশি খারাপ তখন লাগে যখন মানুষটা বিশ্বাসঘাতকতা করে। আমার হয়ত অতটা খারাপ লাগত না যদি রাহুল ঠিক থাকত। দোষটা আমারই, কারণ আমি মেয়ে। দোষটা আমারই প্রিয়, যেহেতু আমার চামড়ার মধ্যে ছেলেটার চামড়া ঢুকেছে বলেই আমি খারাপ হয়ে গেছি। দিনের শেষে শোধ বোধও হয়ে গেছে। তোমার সেন্টু দেওয়া কথাগুলোও তাই হজম করে নিলাম বিনা খিস্তি মেরেই।
আমি তোমার বিশ্বাসের গাঁড় মেরেছিলাম, রাহুল আমার বিশ্বাসের মারল। খেলার ফল ১-১। কী বল?
সম্পর্ক নিয়ে ঝাঁট জ্বলে, চিন্তায় মরে যায় যে আত্মীয়স্বজনগুলো, তাদের দায়িত্ব নিয়ে মা মাটি মানুষ করেছি,এ জন্য নিজেকেই নিজে বিরিয়ানি ট্রিট দেব। তোমার মঞ্জু মাসী কিংবা আমার পিন্টুকাকিমাদের নাক কয়েকদিন ভটকতি আত্মার মত এদিক সেদিকে ঘুরে বেড়াবে এই আশাও করি।
আচ্ছা, অনেক বালের কথা হল, এবার আসল কথায় আসি।
কথা ১- নিজের চিকিৎসা করিও। ভাল থেকো। ভুঁড়িটাও কমিও। অফিস কর বলে ভুঁড়ি কমানো যাবে না এরকম বালের এক্সকিউজ মারিও না গুরু, তুমিও জানো ওসব ফালতু কথা। ইচ্ছা থাকলে ঠিকই উপায় হয়।
কথা ২- উকিলের কাছে আর যাওয়ার দরকার আছে কী? আমি না হয় আমার বাড়িতেই থাকি, তুমি তোমার বাড়িতে থেকো, আমি একটা চাকরি জোগাড় করি, সপ্তাহান্তে একদিন দেখা করি, সিনেমা দেখি, একটু আধটু ক্যালোরি বাঁচিয়ে আইসক্রিম ফুচকা খাই… হিসেব করে দেখো, এই থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড় টাইপ বালের জিন্দেগির থেকে আমরা অনেক ভাল থাকব।
কথা ৩- সরি বলব না। থ্যাঙ্কু বলব। এই এপিসোডটা না ঘটলে জানতেই পারতাম না, এতদিন একটা এত ম্যাচিউরড লোকের সঙ্গে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।
মেসেজের উত্তর দেওয়ার দরকার নেই।
সীন কর। করে ঘুমিয়ে পড়।
কাল থেকে তো আবার সেই বালের অফিস তোমার।
ভালো থেকো
ইতি তোমার নেক্সট হতে চাওয়া এক্স”।
.
হোয়াটস অ্যাপে চিঠিটা পড়ে প্রিয় হেসে বলল “হাতের লেখার ঝামেলায় যায় নি, বুদ্ধি বেড়েছে তাহলে”…
Leave a Reply