টার্নিং পয়েন্টস : এ জার্নি থ্র চ্যালেঞ্জেস – এ.পি.জে. আবদুল কালাম
(দি ইন্সপায়ারিং সেকুয়েল টু উইংস অফ ফায়ার)
‘মিসাইল ম্যান’ খ্যাত বিজ্ঞানী রাষ্ট্রপতির আত্মজীবনী দ্বিতীয় গ্রন্থ
অনুবাদ – মনোজিৎকুমার দাস
প্রকাশকাল : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩
অনুবাদকের উৎসর্গ
সাফল্যের জন্য নিবেদিত সংগ্রামীদের উদ্দেশ্যে।
ভূমিকা
আমার বই উইংস অব ফায়ার-এ আমার জীবনের ১৯৯২ সাল পর্যন্ত লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বইটি ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হবার পর আজ পর্যন্ত বিপুল সারা পেয়েছি। এক মিলিয়ন কপিরও বেশি বই বিক্রি হয়েছে। এই বইয়ের সাহায্যে হাজার হাজার মানুষ তাদের উন্নততর জীবনযাপনের ইতিবাচক দিকনিদর্শন পাওয়ায় আমার হৃদয় আনন্দে আপ্লুত।
কেন আমি টার্নিং পয়েন্টসের মতো বই লিখবার চিন্তাভাবনা করেছি? জব বে বলা যায় যে আমার গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে উদ্বেগ, দুঃচিন্তা এবং বহু ভারতবাস র আশা-আকাঙ্খা। আমি আমার জীবন শুরু করেছিলাম মইয়ের নিচের প্রথম ধাপ থেকে। আমার প্রথম চাকরি ছিল সিনিয়র সায়েন্টিফিক অ্যাসিসট্যান্ট হিসাবে। ধীরে ধীরে আমি বৃহত্তর দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করি। পরিশেষে, আমি ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করি। নিশ্চিতভাবে গত দশকে অনেক কিছুই ঘটেছে। সেসব ঘটনা থেকে আমি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।
যা হোক, টার্নিং পয়েন্টস লেখার অনুষঙ্গটা ছিল ভিন্ন ধরনের। উইংস অব ফায়ার বইয়ের অনুপ্রেরণায় এই বইখানা লিখলাম। এই বইখানা মানুষের উপকারে এলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে। প্রকৃতপক্ষে, এই বই থেকে একজন মানুষ কিংবা একটা পরিবারও যদি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আলোর মুখ দেখতে পারে তবে আমি আশান্বিত হবো। প্রিয় পাঠক, এই বইখানা আপনাদের উদ্দেশ্যে লেখা হলো।
এ. পি. জে. আবদুল কালাম
৩০ মে ২০১২
নতুন দিল্লি
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
প্রিয় বন্ধুরা, আমার বয়স আশি বছর, টার্নিং পয়েন্টস দিয়ে আমার বইয়ের সংখ্যা একুশ হলো। আমি নতুন দিল্লির ১০ রাজাজী মার্গে আমার বাসায় বসে এক শীতের সকালে এই বইখানা লিখতে শুরু করি। আমার ব্যক্তিগত সচিব এইচ. শেরিডনের সহায়তায় আমি আমার ডায়েরিগুলো ঘেঁটে দেখতে পেলাম আমার জীবনে সাতটা সন্ধিক্ষণ বা চ্যালেঞ্জ ছিল-রাষ্ট্রপতির অফিস ছাড়ার পর আমি যে কাজে ব্রতী হয়ে সাফল্য লাভ করতে চলেছি তাকে অন্তর্ভুক্ত করলে আটটা সন্ধিক্ষণও ধরা যেতে পারে।
আমার জীবনব্যাপী যেসব মানুষ আমার প্রতি তাদের স্নেহ আর ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা আমার সাথে সুখ-দুঃখ ও চ্যালেঞ্জের অংশীদার ছিলেন তাদেরকেও জানাই কৃতজ্ঞতা। আমার বইগুলোর পাঠকের সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে পাঁচখানা বইয়ের পাঠকের সংখ্যা ১০০,০০০-এর অধিক। আমার বইয়ের অগণিত পাঠকদের প্রতি প্রগাঢ় কৃতজ্ঞতা রইল। বিশেষভাবে, আমার সাফল্য ও ব্যর্থতার তিরিশ বছরেরও অধিককালের সাথী মেজর জেনারেল আর. স্বামীনাথনকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি আমার বন্ধু, দার্শনিক ও পথপ্রদর্শক। টার্নিং পয়েন্টসকে নির্ভুলভাবে বিস্তারিত আঙ্গিকে উপস্থাপন করতে তিনি সার্বিক সহায়তা দান করে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে ধ্যান শ্যাম শর্মা ও ভিশাল রাস্তোগী’র নিরলস চেষ্টা আর নিবেদন ছাড়া এটা কখনোই বইয়ের রূপ ধারণ করতে পারতো না। নারায়ণ মূর্তি ও ভি. পোনরাজের দেওয়া তথ্য-উপাত্তকে মূল্যায়ন করি। আমার সাথে নিরলসভাবে আমার পাণ্ডুলিপি পর্যালোচনা এবং সুসম্পাদনায় বইটি প্রকাশ করার জন্য আমি প্রকাশকের কাছে ঋণী। আমার পাণ্ডুলিপি স্বল্পসময়ের মধ্যে টাইপ করে মুদ্রণের উদ্দেশ্যে প্রেসে পাঠানোর জন্য আমি আরো ধন্যবাদ দেই রাজিন্দর গানজুকে।
অনুবাদকের কথা
“বিশ্ববিদ্যাতীর্থপ্রাঙ্গণ কর মহোজ্জ্বল আজ হে
বরপুত্রসংঘ বিরাজ হে।
ঘন তিমিররাত্রির চিরপ্রতীক্ষা পূর্ণ কর, লহ জ্যোতিদীক্ষা।
যাত্রিদল সব সাজ হে। দিব্যবীণা বাজ হে।
এস কর্মী এস জ্ঞানী, এস জনকল্যাণধ্যানী,
এস তাপসরাজ হে!
এস হে ধীশক্তিসম্পদ মুক্তবন্ধ সমাজ হে।।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভারতের তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবরে জন্ম নেওয়া শিশুটি দিনে দিনে বড় হয়ে ওঠে এক বিশাল কর্মযজ্ঞে নিজেকে সঁপে দেন। এই কর্মযজ্ঞের সাগ্নিক পুরুষটির নাম এ. পি. জে. আবদুল কালাম। তিনি তাঁর মেধা, মনন, চিন্তাচেতনা, অধ্যবসায়, উদ্দীপনা, অভিজ্ঞতা, সততা আর চরিত্রের দৃঢ়তার বলে সাফল্যের উচ্চশিখরে আরোহন করতে সমর্থ হন। তাঁকে আমরা দেখতে পাই একজন রাষ্ট্রপ্রধান, একজন বিজ্ঞানী, একজন শিক্ষক, একজন কবি, একজন পরিব্রাজক, একজন উন্নয়নের রূপকার এবং সর্বপরি একজন সৎ মানুষ হিসাবে। তিনি তাঁর বালক বয়সে পিতার কাছ থেকে সততার যে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন তা তাঁর জীবনে বিশেষভাবে প্রতিফলিত হয়। সততার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে লোভলালসাহীন অনাড়ম্বর জীবনযাপনে ব্রতী থাকার অসংখ্য কথা উঠে এসেছে তাঁর আত্মকথন থেকে।
ড. এ. পি. জে. আবদুল কালাম তাঁর “টার্নিং পয়েন্টস” গ্রন্থের চৌদ্দটি অধ্যায়ে আত্মকথনের মাধ্যমে নিঃসঙ্কোচে ও সাহসিকতার সাথে তাঁর কর্মজীবনের নানা ঘটনাকে তুলে ধরেছেন। তিনি প্রথমে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অ্যাসিসট্যান্ট হিসাবে চাকুরীতে ঢুকে ধাপে ধাপে উচ্চতম পদে আসীন হন। পরিশেষে ভারতের রাষ্ট্রপতির পদ লাভ করেন।
তাঁর চাকরি জীবনে তিনি ভারতের রোহিনী উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য প্রথম স্যাটেলাইট লঞ্চ ভাইকল, এসএলভি-৩, উন্নয়নের জন্য প্রধান ভূমিকা রাখেন। তিনি ভারতের মিসাইল সিস্টেম ও নিউক্লিয়ার টেস্টগুলোর প্রধান উদ্গাতা হিসাবে বিশেষভাবে খ্যাত। তিনি টেকনোলজি ভিশন ২০২০-এর রোডম্যাপ প্রদান করে ভারতকে উন্নত জাতিতে পরিণত করতে ব্রতী আছেন।
ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তিনি দেশে-বিদেশে বহুবিধ কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ২০২০-এ ভারতকে উন্নত দেশের পর্যায়ে উন্নিত করার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, যোগাযোগ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধনের উদ্দেশ্যে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল অননুকরণীয়। ভারতের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণ-তরুণী, শিশু ও নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য তাঁর নিরলস কর্মপ্রচেষ্টার কথা অনুপম অনুষঙ্গে এই গ্রন্থে তিনি তুলে ধরেছেন। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তাঁর হৃদয়ের উদার মানবিকতা, ধীসম্পন্ন সরলতা ও সততার নজির পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। ইংরেজি ভাষায় তাঁর লেখা টার্নিং পয়েন্টস বইখানাকে বঙ্গানুবাদ করে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তাঁর প্রতি রইল সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা।
পরিশেষে, আমাকে এই বইখানা অনুবাদ করার দায়িত্ব দেওয়ায় অন্যধারার স্বত্বাধিকারী মোঃ মনির হোসেন পিন্টুকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। বঙ্গানুবাদের পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করায় স্নেহের মলয় ও সঞ্চিতাকে শুভেচ্ছা জানাই। ভ্রাতৃপ্রতিম অঞ্জন ও সত্যরঞ্জন অন্যান্যভাবে সহায়তা করায় তাদের প্রতি রইলো কৃতজ্ঞতা। ভুলভ্রান্তি থাকলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনের আশা রাখি। পাঠকের বইখানা ভালো লাগলে আমার শ্রম সার্থক হবে।
মনোজিৎকুমার দাস
২৫ ডিসেম্বর ২০১২
Leave a Reply