জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ১ – প্রথম খণ্ড
জেমস হেডলি চেজ রচনা সমগ্র ১ – প্রথম খণ্ড
অনুবাদ : পৃথ্বীরাজ সেন
প্রথম প্রকাশ : শুভ মহালয়া আশ্বিন, ১৪০৪
.
প্রস্তাবনা
মানুষ যেদিন প্রথম সাহিত্য রচনা শুরু করেছিল সেদিন থেকেই বুঝি রহস্য সাহিত্যের জয়যাত্রা শুরু হয়। যদিও অনেক বোদ্ধা সমালোচক মনে করেন যে রহস্যকাহিনী সাহিত্য সমাজে ব্রাত্য, কিন্তু তার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে অস্বীকার বা উপেক্ষা করার সাহস বোধহয় কারও হবে না।
তাই দেখা যায় নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস বা টোকিও থেকে প্রকাশিত সপ্তাহের সর্বাধিক বিক্রীত বই-এর তালিকা বা বেস্ট সেলারের লিস্টে রহস্য কাহিনীর জয় জয়কার। এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে সমকালীন পাঠকসমাজ ক্রমশই এই ধরণের রচনার প্রতি বেশী মাত্রায় অনুরক্ত হয়ে পড়ছেন। তাই রহস্য সাহিত্যের নিত্যনতুন দিগন্তের দ্বার হচ্ছে উন্মুক্ত। এতদিন যা ছিল ব্রীড়াবনতা নববধূর মত অবগুণ্ঠিতা, আজ তা শরমহীনা রূপোপজীবিনীর মত উন্মোচিতা আমাদের নিলাজ চোখের সামনে ; আমরা সহজেই তার সাথে মুহূর্তের সখ্যতা পাতাতে পারি অথবা ইচ্ছে হলে তাকে করতে পারি জীবনের প্রতিটি পল অনুপলের ছায়াসঙ্গিনী।
বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি বিদ্যার অলৌকিক অভিযানে যতই আমরা উন্নত থেকে উন্নততর জীবনযাত্রার প্রতি অগ্রসর হব ততই জীবনের আনাচে কানাচে হঠাৎ ছুটে আসা কালো মেঘের মত জমবে রহস্যেরা—বিচিত্র তার রূপ, বিস্ময়কর তার আঙ্গিক আর অবিশ্বাস্যতার প্রয়োগমহিমা ।
রহস্য থাকবে তার নিত্য নতুন তন্ময়তা নিয়ে, তাকে উদ্ভাসিত করতে হবে এতদিনের অজানা অনুসন্ধানে। এই ভাবেই জমে উঠছে এক রোমাঞ্চকর খেলা।
একুশ শতকের বুকে পা রাখতে গিয়ে যদি আমরা পিছিয়ে যাই ফেলে আসা দিনে তাহলে দেখব বিশ্বসাহিত্যের সুমহান মহাকাব্যগুলির মধ্যেই রহস্যকাহিনীর অবয়ব লুকিয়ে আছে, হয়তো তা রোমান্টিকতার ধূম্রজালে ছায়াচ্ছন্ন অথবা সামাজিক ঘেরা- টোপে বন্দী।
আমাদের জাতীয় মহাকাব্য রামায়ণ-মহাভারত আর গ্রীসের ইলিয়াড ওডিসির পাতায় পাতায় এমনই কতশত রহস্যের হাতছানি আমাদের একাধারে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে। পাণ্ডবদের জতুগৃহে হত্যার প্রয়াস অথবা রাবণ কর্তৃক সীতাকে অপহরণের মধ্যে কি লুকিয়ে নেই এক নিটোল নিখাদ রহস্যকাহিনীর অনুপম উপস্থাপনা অথবা হেলেন অফ্ ট্রয়ের গল্পে ছুটে আসা সৈন্যবাহিনী! আরব্য রজনীর ছত্রে ছত্রে শিহরিত রহস্য! বোধিসত্ত্বের জীবনভিত্তিক জাতকের গল্পের সামাজিক রহস্য, সোমদেব ভট্টের কথাসরিৎ সাগর থেকে উৎসারিত জীবনরহস্য কিংবা চিরন্তন পঞ্চতন্ত্রের গল্পের এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোমাঞ্চকর কাহিনীগুলি আমাদের শিহরিত করে না কি?
রহস্য প্রতিমা তার ধোঁয়া ঢাকা আবরণ ছেড়ে উন্মোচিত হয়েছিল চসারের ক্যান্টারবেরি টেসের পাতায় পাতায় অথবা ডেকা মেরনে। হয়তো তার মধ্যে ছিল এক আধ্যাত্মিক অপচ্ছায়া, ছিল ভৌতিক উন্মাদনা, কিন্তু তাদের অন্তরালেও মাঝে মধ্যে ঝিলিক দিয়ে উঠেছে মধ্য দিনের রহস্য তপন কিরণ—তার প্রাখর্য্যে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেছি।
এমন ভাবেই যার জন্ম হয়েছিল তা অচিরেই যৌবনপ্রাপ্ত হয় এবং বিস্তৃত হয় নানা শাখা প্রশাখায়। শুরু হয় গোয়েন্দা কাহিনী, ভৌতিক গল্প, স্পাই কাহিনীর জয়যাত্রা। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আর পরিশীলিত অনুসন্ধান ক্ষমতা নিয়ে আসরে অবতীর্ণ হন স্যার আর্থার কোন্যাল ডয়েল। সৃষ্টি হয় তাঁর অসামান্য গোয়েন্দা চরিত্র—শার্লক হোমস। পৃথিবীর বুকে কত না ডিটেকটিভের আগমন হবে, হয়তো হাতে লেজার বীম, কানে মোবাইল ফোন নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিনি রিমোট কন্ট্রোলে অপরাধীর অনুসন্ধান করবেন, কিন্তু ১০/বি, বেকার স্ট্রীটের সেই গোয়েন্দা সম্রাটকে কি আমরা কোনদিন ভুলতে পারব যিনি এক লহমাতে ভেদ করেন রহস্য জাল! আর এলেন সম্রাজ্ঞী ডেম আগাথা ক্রিস্টি। এই সেদিন পর্যন্ত কি প্রাণবন্ত ছিল তাঁর লেখনী। এরকুল পোয়ারো, পারকার পাইন আর মহিলা গোয়েন্দা মিস মারপেলের মত চরিত্র সৃষ্টিতে আগাথা লক্ষ লক্ষ পাঠক-পাঠিকার মন ভরিয়েছেন অনায়াস আভিজাত্যে।
এর পাশাপাশি ভৌতিক গল্পের তালিকায় সংযোজিত হয়েছে একের পর এক স্মরণযোগ্য নাম— ফ্রিজ লিবার, রবার্ট ব্লচ, এডগার এ্যালেন পো, রে ব্রাডবেরী ইত্যাদি ।
এরই মাঝে উইলিয়াম সেক্সপীয়ার, গী দ্য মোপাসা, স্যার ওয়ালটার স্কট, এডগার ওয়ালেস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইলিয়াম ফকনার এবং ও’ হেনরীর মত বিশ্ববন্দিত সাহিত্য স্রষ্টারা মাঝে মধ্যে দু’একটি রহস্যকাহিনীর জন্ম দিয়েছেন যার মাধুর্য আমাদের মন ভরিয়ে দেয়। এতেই প্রমাণিত হয় যে রহস্যকাহিনীর প্রতি মানুষের দুর্বার, দুনির্বার আকর্ষণের কোন শেষ নেই। যতদিন পৃথিবীর বুকে মানুষ থাকবে ততদিন বেঁচে থাকবে রহস্যকাহিনী ভোরের শিশির ও রাতের জ্যোৎস্না হয়ে। ১৯৩৯ সালে যে বিশ্বযুদ্ধের তূর্য নিনাদ বেজেছিল তা যে শুধু কোটি কোটি মানুষের প্রাণহরণ করেছিল তা নয় মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে ঘটিয়েছিল এক নিঃশব্দ বিপ্লব, বিনোদনের জগতেও ঘটে গিয়েছিল ব্যাপক রূপান্তর। এতদিন পর্যন্ত আমরা যেসব কাহিনীতে শিহরিত হতাম, আমাদের শৈশবের রঙীন কল্পনা—কৈশোর দুময় বাসনারা – যৌবনের অনাবিল উন্মাদনারা যেসব কাহিনী মাধুর্যে একাধারে মুগ্ধ ও বিস্মিত হত এখন তা আর হৃদয়ের তন্ত্রীতে জাগাতে পারছে না প্রাণের ঝঙ্কার ।
পরিবর্তিত পরিবেশে তাই সামনে এসে দাঁড়াল থ্রিলার আর চিলার সাহিত্য। রহস্যকাহিনীকে চমকিত শিহরণ, ঈষৎ যৌনতা, উচ্ছল প্রেম আর প্রাণবন্ত ঘটনা প্রবাহে সাজিয়ে উপস্থাপিত করা হল পাঠক-পাঠিকার সামনে, তাঁরা সানন্দে গ্রহণ করলেন এই নতুন আঙ্গিক। শুরু হল থ্রিলার সাহিত্যের জয়যাত্রা।
এলেন অ্যালেস্টেয়ার ম্যাকলিনস তাঁর অসামান্য সাহিত্য প্রতিভা নিয়ে। ঘটনাবলীর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ, ধাপে ধাপে ঈস্পিত বিস্ফোরণের মুহূর্তে উত্তরণ আর অনায়াস অবহেলায় সেই মুহূর্তটিকে প্রলম্বিত করার মধ্যে লুকিয়ে আছে অ্যালেস্টেয়ারের প্রতিভা। যদিও তাঁর সাহিত্যজীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে তুমুল উৎসাহের সঙ্গে পাঠ করা হয় তাঁর গোল্ডেন গেট অথবা দ্য ওয়ে টু ডাস্টি ডেথ।
এলেন ইয়াং ফ্লেমিং তাঁর বেপরোয়া উদ্দাম বাধা না মানা গোয়েন্দা ০০৭ জেমস বন্ডকে নিয়ে এক হাতে যার রিভলভার কারণে অকারণে ঝলসে ওঠে। অন্য হাত কোন ব্লন্ডে বা ব্রুনেট্রের অনাবৃতা কোমরে অনায়াসে মেতে ওঠে বাঘবন্দী খেলায়। চলচ্চিত্রায়ণের মাধ্যমে বন্ড পৌঁছে গেলেন আপামর জনসাধারণের হৃদয়ের গভীর গোপন অন্তঃপুরে। জেমস বন্ড হয়ে উঠলেন কিংবদন্তীর মহান নায়ক।
এলেন নিক কার্টার, কার্টার ব্রাউন, রস ম্যাকডোনাল্ড, ফ্রেডরিক ফরসাইথ, মারিয়া পূজো, ব্রেট হ্যালিডে, জ্যাকলিন সুসানের মত সাহিত্যিকেরা। কেউ বা বেছে নিলেন পলিটিক্যাল ক্রাইম, যেমন ডে অফ দ্য জ্যাকেল, কেউ বা উপজীব্য করলেন মাফিয়ারাজের অন্ধকার জগতকে, যেমন মারিও পূজো। কেউ আবার বেছে নিলেন লাজহীন প্রেমের উন্মাদনাকে, যেমন—দি ভ্যালী অফ দি ডলস ।
এঁদের মাঝে মধ্যাহ্ন সূর্যের দীপ্তি ছড়িয়ে হাজির ছিলেন জেমস হেডলি চেজ। তিনটি শব্দ আমাদের মনের আকাশে ঝড় তোলে, সেই অশনির সংকেতে কেঁপে ওঠে চেতনারা, ঈশান কোণে ঐ শোনা যায় মায়াবী বাঁশীর সুর—আমরা আপ্লুত হই । অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকি সেই মহান স্রষ্টার দিকে, তিরিশের দশকে নো অরকিড ফর মিস ব্ল্যানডিশ এর মাধ্যমে যাঁর চকিত বিস্ফোরণ ঘটে গিয়েছিল থ্রিলার সাহিত্যের অঙ্গনে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তাঁর সতত সঞ্চরমান লেখনীর অমোঘ যাদুর স্পর্শে একে একে প্রাণ পেয়েছে ৮০টির মত থ্রিলার, যাঁর প্রতিটিই বিষয়-বৈচিত্র্যে অভিনব, উপস্থাপনায় অননুকরণীয় আর প্রয়োগ কুশলতায় অভিনন্দন যোগ্য।
মূলত তাঁর কাহিনীর উপজীব্য আধুনিক আমেরিকা!
আমেরিগো ভেসপুচির সেই অবাক করা নতুন দেশ আজ ইনকা সভ্যতার ধূলি- ‘ধূসরিত শয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে, পৃথিবীর বুকে সে স্থাপন করেছে এক উন্নততর জীবন-যাত্রাকে যার প্রতিটি স্পন্দনে লুকিয়ে আছে অপার অনন্ত রহস্য তন্ময়তা।
তাই জমে ওঠে লাস ভেগাসের জুয়ার আসর, আসন্ন সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে অপসৃয়মান চন্দ্ৰালী জ্যোৎস্নায় শিকারী মার্জারিনীর মত চলাফেরা করে কোন এক রঙ্গ নটী পার্ক এভিনিউএর প্রশস্ত রাজপথে, শিকাগোর বিকৃত কাম যুবক মেতে ওঠে সমকামিতায়, টেক্সাসের রুক্ষ্ম কঠিন প্রান্তরে ছুটে যায় ডেনিম পরিহিতা অগ্নিকন্যা, আবার ক্যালিফোর্নিয়ার সমুদ্র-তটে ঘুম-হারা নিঁদ নিশীথে ভালবাসার খুনসুটিতে মেতে ওঠে তরুণ-তরুণী।
জীবনের শরৎ-আকাশে সঞ্চারমান মেঘের মত ভেসে যাওয়া এই সব ঘটনায় তাদের বীভৎস রিরংসা উন্মাদ হাহাকার, দুরন্ত প্রেম আর অকারণ অভিসারের অঞ্জলি নিয়ে পূর্ণ করেছে চেজের পুণ্য করপুট।
তাঁর সদা সন্ধানী দৃষ্টির সামনে একে একে উদ্ভাসিত হয়েছে জীবনের জটিল সমস্যাবলী। নির্মোহ দৃষ্টি ভঙ্গীতে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন তাদের— স্থাপিত করেছেন আমাদের চোখের সামনে।
আমরা কি কোনদিন ভুলতে পারব কেডের সেই ব্যর্থ শিল্পীর আর্তনাদ ? হিপি অন দ্য হাইওয়ের ছিন্নমূল যুবক-যুবতীরা কি মধ্যরাতের সুষুপ্তির মধ্যে বাজাবে না তাদের অবহেলার ব্যানজো? ভালচার ইজ এ পেশেন্ট বার্ড-এর সেইসব করুণ মুখগুলি কি আমাদের মনের ক্যানভাসে আঁকবে না কি তাদের সিল্যুট ছবি? ডাবল ডিল কি মনে করাবে না রিরংসার মারাত্মক পরিণতিকে?
১৯৮৬ সালে চলে গেছেন জেমস হেডলি চেজ। কিন্তু আজও প্রতিমুহূর্তে বিশ্বের কোথাও না কোথাও পঠিত হচ্ছে তাঁর সাহিত্য। হয়তো টরেন্টোর কোন স্কাই কিসিং হাইরাইজ অট্টালিকার মাইল্ড ফোম ডিভানে আধশোয়া কোন তরুণী নিমগ্ন আছে এ কফিন ফ্রম হংকং-এর পাতায়, সমুদ্রবন্দিতা সিডনীর কোন অবাক কিশোরের সদ্য প্রস্ফুটিত চেতনার রাজ্যে আলোড়ন তুলেছে ডায়াল এম ফর মার্ডার। আবার কলকাতার কোন সলাজ গৃহবধূর দ্বিপ্রাহরিক অবসরের মুহূর্তগুলিকে রঙীন করে তুলেছে কেড।
এমন ভাবেই তো চেজ বেঁচে আছেন আমাদের মধ্যে। পৃথিবীর এমন কোন ভাষা নেই যেখানে চেজ সাহিত্যের অনুবাদ হয়নি। এমন কোন শিক্ষিত মানুষ নেই যিনি এই নামটির সঙ্গে পরিচিত নন, এমনই হল চেজ-এর অমোঘ আকর্ষণ।
বাংলা সহিত্যে চেজের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে। পত্রপত্রিকার পাতায় প্রকাশিত চেজ-উপন্যাসের অনুবাদ ধীরে ধীরে গ্রন্থাকারে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে আর এমন ভাবেই তৈরি হয় তাঁর জনপ্রিয়তা। ধীরে ধীরে তিনি গত তিন দশকে বাঙালী পাঠকমনকে একেবারে আবিষ্ট করে দেন তাঁর যাদুকরী লেখনীর মোহিনীমায়ায়। যেকোন গ্রন্থাগারে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে চেজই হলেন সর্বাধিক পঠিত সাহিত্যিক।
আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে শেষ কৈশোরের ফেলে আসা দিনে আমি যখন অনুবাদ সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ করি তখন চেজই ছিলেন আমার প্রেরণার প্রতীক। তাঁর অনেক রচনাকে আমি উপস্থাপিত করেছিলাম পত্রিকার পাতায়।
তারপর ধীরে ধীরে আমি প্রবেশ করলাম চেজ সাহিত্যের বৃহত্তর এবং ব্যাপকতর পরিবেশনায়। একে একে প্রকাশিত হল একাধিক চেজ উপন্যাস। প্রথম যৌবনের সেই- প্রহর থেকেই আমার মনের মধ্যে এই অভিলাষ লুকিয়ে ছিল যে চেজের সমস্ত রচনাবলীকে বাঙালী পাঠক-পাঠিকার সামনে উপস্থাপিত করতে হবে। জানি এ কাজ অত্যন্ত দুরূহ এবং ব্যয়সাপেক্ষ কেননা ৮০টি থ্রিলারের মাধ্যমে চেজ যে সুবিশাল সাহিত্যসম্ভার রচনা করেছেন তার যথাযথ পরিবেশনা সহজসাধ্য নয় ।
ইতিমধ্যে কোন কোন প্রকাশক বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে চেজকে পরিবেশিত করেছেন কিন্তু চেজের সমগ্র সাহিত্যকে সার্বিকভাবে তিন খণ্ডের মাধ্যমে পরিবেশিত করার দুঃসাহসিক প্রয়াসে আত্মনিমগ্ন থেকে কামিনী প্রকাশালয়-এর কর্ণধার শ্রীশ্যামাপদ সরকার বাঙলা প্রকাশন সাহিত্যের ইতিহাসে একটি স্মরণযোগ্য অবদান রাখলেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। মূলত তাঁরই নিরস্তর উৎসাহে আমি এই সুবিশাল সারস্বত সাধনায় ব্রতী হয়েছি। আজ দীর্ঘদিনের পরিশ্রমের অন্তে কত না নিদ্রাবিহীন মধ্যযামিনীর ঔরসে সঞ্জাত, লক্ষ অযুত শব্দাবলীর স্পন্দনে ধ্বনিত জেমস হেডলি চেজ রচনাবলীর প্রথম খণ্ড আপনাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করল। এজন্য ধন্যবাদ জানাই সেইসব অজানা, অচেনা কর্মীবৃন্দকে যাঁদের সমবেত প্রয়াসে এই বইটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে।
চেজের অবশিষ্ট রচনাবলী নিয়ে বাকী দুটি খণ্ড প্রকাশনের কাজ এগিয়ে চলেছে। আশা করা যায় যে আগামী বইমেলার আগেই তারা আত্মপ্রকাশ করবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে উদার নীতির মুক্তবাতায়নে বিশ্ব সাহিত্যের মণিমুক্তো ছড়িয়ে পড়ুক হীরক দ্যুতিতে, উদ্ভাসিত হোক আপনাদের মন এই শুভকামনায় এখানেই শেষ করি আমার প্রস্তাবনা।
১৫ই আগস্ট, ‘৯৭
শুভেচ্ছা সহ
পৃথ্বীরাজ সেন
*****
Leave a Reply