জীবনপুরের পথিক অনুপকুমার
সম্পাদনা – অভীক চট্টোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ – জুন ২০১৪
সম্পাদকের তরফে
অনেকের কাছেই শুনে এসেছি, ইনি যদি আর কয়েক ইঞ্চি লম্বা হতেন, অনেক প্রতিষ্ঠিত নায়কের বাজার টলোমলো করে দিতে পারতেন। এরকম ‘ভার্সেটাইল অ্যাক্টর’ বাংলা ছবির জগতে বেশি আসেননি। দেখতে-শুনতেও যৌবনকালে যথেষ্ট শোভন ছিলেন। নায়কের অভিনয় যে অল্প কয়েকটি ছবিতে তিনি করেছেন, তা যেমন পর্দায় উপস্থিতির ক্ষেত্রেও যথেষ্ট মানানসই হয়েছে, পাশাপাশি নায়কের অভিনয়ে এনেছেন এক সম্পূর্ণ নিজস্ব ধরন। অন্যান্য নায়কোচিত অভিনয়ের সঙ্গে যার একটা স্পষ্ট ফারাক চোখে পড়েছে এবং একইসঙ্গে তা এক অন্যরকম বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় পৌঁছেছে। এতক্ষণ যাঁর সম্বন্ধে এতো কিছুর উল্লেখ করা হল, তিনি হলেন অদ্বিতীয় অভিনেতা অনুপকুমার। যাঁর নিজের কয়েকটি রচনার সমাবেশ ঘটেছে ‘জীবনপুরের পথিক’ নামক এই বইটিতে।
মূল রচনাটি শিল্পীর আত্মকথা— ‘জীবনপুরের পথিক’। সঙ্গে অনুপকুমারের কয়েকটি রচনায় আছেন উত্তমকুমার, সুচিত্রা সেন, কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, তরুণ মজুমদার, মান্না দে, প্রমুখ প্রথিতযশারা।
এছাড়াও, একটি রচনায় অনুপকুমার ‘অভিনয় শিক্ষা’ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আত্মকথাটি যে বইয়ে ছিল সেই ‘আনন্দ-বৈরাগী’ (অনুপকুমারের অভিনয় জীবনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত, নিজের কাছেই থাকার কারণে, প্রথমে এই একটি রচনাকেই গ্রন্থাকারে পর্যবসিত করার ইচ্ছেটা জাগে। তারপর, টুকরো লেখাগুলি একে একে নজরে আসার পর, এগুলিকেও এই বইতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিই। এগিয়ে আসে ‘সপ্তর্ষি প্রকাশন’। এই ধরনের বইয়ের ক্ষেত্রে বরাবরই এই প্রকাশন সংস্থার কার্যনির্বাহী প্রকাশক সৌরভ মুখোপাধ্যায়ের অকৃপণ আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। তবে, সম্পাদক হিসেবে আমি এবং প্রকাশক হিসেবে সৌরভ, আমরা দুজনেই নতমস্তকে কৃতজ্ঞ থাকবো অনুপকুমারের পরিবারের ব্যক্তিবর্গের প্রতি। একটি ভদ্র-শিক্ষিত-অভিজাত-সাংস্কৃতিক চেতনাসম্পন্ন পরিবারের এ এক উজ্জ্বল উদাহরণ! প্রথমত, অনুপকুমারের স্ত্রী বিশিষ্ট অভিনেত্রী অলকা গঙ্গোপাধ্যায় ফোন-মারফতই এই গ্রন্থ প্রকাশের মৌখিক অনুমতি দিয়ে দিলেন। এরপর, অনুপকুমারের দুই ভাই যথাক্রমে অরবিন্দ দাস ও হিমাদ্রি দাস বারবার নিজেরা সশরীরে প্রকাশকের অফিসে এসে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য-ছবি ইত্যাদি দিয়ে গেছেন। এ ব্যাপারে অবশ্য তাঁর দাদার সবকিছু অসম্ভব যত্নসহকারে রক্ষা করছেন, ছোটোভাই হিমাদ্রিবাবু। তথ্যসামগ্রীর সাহায্য মূলত তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া গেছে। এই বই প্রকাশ এই পরিবারের প্রত্যেককে অসম্ভব উৎসাহিত করেছে, তা বোঝা যায়।
এই অসামান্য অভিনেতার অভিনয়-জীবনের কর্মতালিকা বইয়ের শেষে দেওয়া হয়েছে। রচনায় উল্লিখিত তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত ব্যক্তি ও বিষয়বর্গের টীকাকরণও করা হয়েছে। হয়তো, এখনও কিছু অসম্পূর্ণতা থেকে গেছে। তার জন্যে আগাম মার্জনা চেয়ে রাখছি। তালিকার বিষয়েও অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন হিমাদ্রি দাস। বেতার-নাটকের তালিকাটি প্রস্তুত করে দিয়েছেন, বেতার-নাট্য গবেষক অধ্যাপক নিখিলরঞ্জন প্রামাণিক। অবশ্যই কৃতজ্ঞ তাঁর কাছে। এছাড়া, ‘আনন্দ-বৈরাগী’ বইয়ে প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদার যে নিবন্ধটি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় অভিনেতা অনুপকুমারের সম্বন্ধে লিখেছিলেন, সেটি ‘জীবনপুরের পথিক’ গ্রন্থের ভূমিকা হিসেবে মুদ্রণের অনুমতি দিয়ে, আমাদের যারপরনাই বাধিত করেছেন। তাঁকে অকুণ্ঠচিত্তে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করলাম। অনুপকুমার অভিনীত ছবির বাছাই করা বুকলেট দিয়ে সাহায্য করেছেন শ্রদ্ধেয় রেকর্ড-সংগ্রাহক সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়। অনুপকুমার অভিনীত হিন্দি ছবির তালিকাটি করে দিয়েছেন রেকর্ড সংগ্রাহক সঞ্জয় সেনগুপ্ত এবং বাংলা ছবির তালিকা নির্মাণের ক্ষেত্রেও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি। সুতরাং সুশান্তবাবু ও সঞ্জয়বাবু দুজনের কাছেই সম্পাদক হিসেবে আমি কৃতজ্ঞ। এছাড়াও কৃতজ্ঞ থাকছি তপজা মিত্রের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে অকৃপণ সাহায্যের জন্য। এছাড়া, বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকছি ‘অভিনেতৃ সংঘ’-র কাছে।
প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও আদিযুগের অভিনয় জগতের এক মহান প্রতিভাবান ধীরেন্দ্রনাথ দাসের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন অনুপকুমার। তাঁর পিতার সাংস্কৃতিক প্রতিভার ধারা বহন করেছিলেন যে প্রণম্য অভিনেতা, তাঁর আত্মকথা সহ আরও কিছু রচনা সম্বলিত এই বই প্রকাশ করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি। একইসঙ্গে একান্তভাবে নিজে রোমাঞ্চিত হচ্ছি, এই গ্রন্থ সম্পাদনার দায়িত্ব পালনের মতো সৌভাগ্য অর্জন করে।
মহান অভিনেতা অনুপকুমার, আপনাকে প্রণাম।
অভীক চট্টোপাধ্যায়
Leave a Reply