জিন্দাবাহার – পরিতোষ সেন
হেমাঙ্গিনী দেবীর
পুণ্যস্মৃতির উদ্দেশে
পরিচিতি
‘ওবিন ঠাকুর ছবি লেখে।’ ছবি লিখেছেন পরিতোষ সেন-ও। লিখেছেন এমন অকস্মাৎ, কোনো পূর্বাভাস না-দিয়ে এবং সে-লেখায় এমন নিখুঁত মুন্সিয়ানা যে বিশ্বাস হতে চায় না যে এই প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এই প্রথম আপন অনবদ্য শিল্পীসত্তা প্রকাশ করলেন লেখনীর মাধ্যমে। মনে পড়ছে যে আজ থেকে প্রায় দু’বছর পূর্বে এক সন্ধ্যায় পরিতোষ আমার বাড়িতে এসে তাঁর কয়েকটি রচনা প’ড়ে শোনালেন তাঁর স্মৃতিমদির কণ্ঠে, আমি বিস্ময়ে আনন্দে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম, কেননা যদিও পরিতোষকে আমি চিনি আজ পঞ্চাশ বৎসর যাবৎ, তার বিচিত্র ব্যক্তিত্বের এই দিকটি আমার জানা ছিল না, আমার ভাবনার মধ্যে ছিল না। কিন্তু এই বাঙ্ময় আলেখ্যগুলি প’ড়ে অন্তশ্চক্ষুতে দর্শন ক’রে মনে হচ্ছে যে পরিতোষের পক্ষে আপন শিল্পীসত্তার একাধিক মাধ্যম আবিষ্কার করা নিতান্তই স্বাভাবিক এবং আবশ্যক ছিল।
ঢাকা শহরের বাবুর বাজার নামক জনবহুল অঞ্চলে কালীবাড়ির পাশ দিয়ে চ’লে গেছে জিন্দাবাহার লেন (নামের মানে কি জীবন্ত, প্রাণবন্ত সৌন্দর্য?), সে- রাস্তার প্রায় শুরুতেই ছিল পরিতোষদের পৈতৃক বাড়ি, তার লাগাও ছিল আমাদের ভাড়াটে বাড়ি। এই রাস্তার কয়েকটি বিদগ্ধ পরিবারের আবাস ছিল, তার মধ্যে ছিল মণীশদার (ঘঠক) শ্বশুরবাড়ি, শ্রীনগরের জমিদারবাড়ি, পরবর্তী কালের খ্যাতনামা সাধক পরমানন্দ সরস্বতীর বাড়ি। আবার এ রাস্তারই এক শাখায় ছিল একটি গলিতে বারাঙ্গনাপাড়া, এই বারাঙ্গনাদের কিছু বাক্চিত্র পরিতোষের নিবন্ধগুলিতে আছে। কিন্তু পাড়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল জনকয়েক ব্যক্তি– যেমন একজন দর্জি (আমি বলতাম খলিফা, অর্থাৎ কারিগর), একজন দন্ত-চিকিৎসক, একজন চিত্রশিল্পী। সে- গলির ভিস্তিটি এবং কালীবাড়ির একজন পুরুতও আমার মনে দাগ কেটেছিল, তবে আমি ছিলাম সৃজনী কল্পনা থেকে বঞ্চিত আর আমার ছোটো ভায়ের মতো পরিতোষ যে রঙে রূপান্বয়ের আকাঙ্ক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন সেই বালক বয়সেই, তার প্রমাণ পেয়েছিলাম যখন তিনি মাঝে মধ্যে শহরের পূর্বাঞ্চলে ফরাসগঞ্জে (যে-অঞ্চলে একদা সত্যিই ফ্রেঞ্চ ঈস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গুদাম এবং অফিস ছিল) বাস করতেন এক চিত্রকর, ব্রজগোপাল (খুবই সাধারণ চিত্রকর), তার কাছে যেতেন। পরিতোষ কিছু বেশি উপকার পেয়েছিলেন আরেকজন স্থানীয় শিল্পীর সঙ্গে মিশে, কামাখ্যা বসাক। পরিতোষদের পরিবারে তখন কেউ ছিল না যার কাছে তিনি তাঁর উপচে-ওঠা সৃজনী অভিলাষ ব্যক্ত করতে পারতেন। ওঁর এক দাদা আমার সহপাঠী ছিল কিন্তু তাঁর জ্যেষ্ঠগণ– ‘ন’বাবু ও সেজোবাবু অধ্যায়ে দু’জনের কথা আছে- কনিষ্ঠ বালকভ্রাতার অঙ্কুরোন্মুখ প্রতিভার দিকে তাকাবার সময় পাননি, তাকাবার মেধা তাঁদের আদৌ ছিল না ব’লে আমার ধারণা। ফলে পরিতোষ যে তাঁর প্রতিভা বিকাশের পথে চলা শুরু করলেন, সে নিতান্তই তাঁর নিজ অন্তঃশক্তির বলে। আমার বিশ্বাস তিনি তাঁর মা’র শুভাশীবাদও পেয়েছিলেন। পরিতোষ (আমার যতদূর স্মরণ আছে) যখন বুঝলেন তাঁর বিদ্যুৎগর্ভ প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পাওয়া যাবে না ঢাকা শহরে, তখন একটি কাজ করলেন যাকে সাহসী বললে কম বলা হয়। দূর মফঃস্বলের ঢাকা শহরের এই তরুণ নিজের আঁকা কিছু চিত্র ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলেন মাদ্রাজে দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীর কাছে, তিনি তখন স্থানীয় আর্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। দেবীপ্রসাদ ছিলেন মহৎ শিল্পী, গুণের কদর জানতেন। দু’জনের সঙ্গে পত্রসংযোগ স্থাপিত হ’ল এবং কিছুকাল পরে তরুণ পরিতোষ পদ্মা পার হয়ে চ’লে গেলেন মাদ্ৰাজ আর্ট স্কুলে। ঢাকা পিছনে প’ড়ে রইল।
কিন্তু পরিতোষ ঢাকাকে ভোলেননি। তাঁর বাল্য-অভিজ্ঞতার গ্রাম ভোলেননি। ভোলেননি তো আরো কত দৃশ্য ও ব্যক্তিকে। ঘুড়ি ওড়াবার কাটাকাটি করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা- সে কি অসহনীয় উত্তেজনা, আর ঘুড়ি-শাস্ত্রের কত সুক্ষ্ম, কত বিচার- তীক্ষ্ণ নিপুণতা! দর্জি হাফিজ মিঞা তো শুধু অর্থকরী কাজ করত না, তার কাজ ছিল শিল্প, তার শিল্প ছিল কাজ, এবং সে জন্যই তাঁর প্রতিটি কাজ দেখে অতি সংগতভাবেই বলা চলত, ‘কামাল, কামাল! গজব, গজব!’ পরিতোষ সেন তো ভোলেননি সিন্-পেণ্টার জিতেন গোঁসাইকেও, যিনি সারাদিন কাজের পর প্রথম রাত্রে বিশ্রাম করতে বসেছেন বোতল এবং গ্লাস নিয়ে আর গান চালাচ্ছেন ‘পোড়ারমুখো কোকিল এসে/কুঁহু কুঁহু করে লো।’
এরা আর ওরা আরো এবং অনেকে এসে আসর জমিয়েছে পরিতোষ সেনের বাক্চিত্রশালায়। বাক্চিত্রের সঙ্গে মিলিত হয়েছে নিপুণ চিত্রায়ণ-কালি দিয়ে কলমের আঁচড়–তবু এই রচনাগুলির প্রধান মূল্য তাদের ভাষাশিল্পেই। শিল্পের বিভিন্ন রূপগুলি যে অলঙ্ঘ্য প্রাচীর দেওয়া কতকগুলি স্বতন্ত্র জগতের অধিবাসী নয়, শিল্পে- শিল্পে যে অন্তপ্লাবন সম্ভব, এক শিল্পরূপ উপচে পড়তে পারে এবং পড়েও অপর শিল্পে, এ-কথা পরিতোষ সেন জানবেন না তো জানবেন কে? তিনি যে কয়েক বৎসর প্যারিসে কাটিয়েছিলেন, পিকাসোর কাছ থেকে তার কাজের সমাদর লাভ করেছিলেন সে তো নিরর্থক হওয়ার কথা নয়। পরিতোষ স্বদেশেও শিল্পের
অন্তপাবনশক্তি বোধ করেছিলেন ব’লে আমার বিশ্বাস। আমার কাছে একখানা ফোটো আছে, আলমোড়াতে তোলা, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন উদয়শঙ্কর, হরীন্দ্রনাথ চট্রোপাধ্যায়, পরিতোষ সেন, যেন তিন শিল্পী তিন শিল্পের প্রতিভূ, যে তিন শিল্প পরস্পরের সঙ্গে মিশে যায়। এক শিল্পে অন্য শিল্পের সংবেদনা সৃষ্টি করা অতীব দূরূহ কাজ, যদিও অসম্ভব নয়। গান গেয়ে নাচের চেতনা জাগানো যায়, শুধু নাচ দিয়ে গানের বোধ উদ্বুদ্ধ করা যায়। কবিতা দিয়ে একটি বিশাল হর্মের কল্পনা জাগানো যায়, একটি নৃত্যভঙ্গিমায় প্রস্তর মূর্তিতে যেন একটি সাঙ্গীতিকী সুর পাওয়া যেতে পারে। ভাষার মতো বিচিত্রশক্তিসম্পন্ন, অঘটনপটিয়সী নৈপুণ্যবিশিষ্ট শিল্পের মাধ্যমে অন্য সব শিল্পের গুণই অল্পবিস্তর প্রকাশ করা যায়, তবুও এই রূপান্তরণ যে অতীব কঠিন কাজ সে-কথা না-মেনে উপায় নেই। আমার দৃষ্টিতে এই সুকঠিন কাজ উজ্জ্বল কৃতিত্বের সঙ্গে সাধন করেছেন পরিতোষ সেন, তাঁর চিত্রশিল্পীত্বের সঙ্গে মিলিয়েছেন বাক্শিল্পীত্ব। যে-সব মানুষের কথা তিনি বলেছেন তারা যেন শরীরী সত্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে আমাদের সামনে, এই শরীরী সত্তা নির্মিত হয়েছে রঙে- রেখায়। যে-রঙ যে-রেখা চিত্রশিল্পের নয়, বাক্শিল্পের, অথচ তারা কাজ করেছে চিত্রশিল্পের বর্ণ-বৈচিত্র্যের। রঙের যে কী গভীর কী অপরূপ বিনিময় হতে পারে ভাষার ধ্বনির সঙ্গে, তার নিখুঁত দৃষ্টান্ত মেলে “আগুন” রচনাটিতে। লেলিহান অগ্নির লক্ষ-কোটি বর্ণসমাবেশ, তার লক্ষ-কোটি প্রতিকৃতি, তার বামে দক্ষিণে ঊর্ধ্বে বিদ্যুৎ গতি, তার অভ্যন্তরে অর্জুনের বিশ্বরূপ-দর্শন-সম্ভাবনা, এ সমস্তই সম্ভব হয়েছে এই অতুলনীয় রচনায়
আমার বিশ্বাস এই রচনাগুলির পাঠক আমার মতোই মনে করবেন যে খ্যাতনামা চিত্রশিল্পী পরিতোষ সেন প্রমাণ করেছেন যে তিনি একইসঙ্গে কুশলী বাক্শিল্পীও। তাঁর বাঁশিল্পের আরো সমাহার দেখে আমরা আনন্দিত হব ।
অমলেন্দু বসু
প্রথম সংস্করণের ভূমিকা
বছর দুই-আড়াই আগেকার কথা। গ্রীষ্মের এক মধ্যাহ্নে, লিটল্ ম্যাগাজিন ‘কবিপত্র’র সম্পাদক শ্রী পবিত্র মুখোপাধ্যায় এবং শিল্প-সমালোচক শ্ৰী সন্দীপ সরকার একটি অনুরোধ নিয়ে আমার কাছে হাজির হলেন। অনুরোধটি ছিল যে, এই পত্রিকার জন্যে আমার বাল্য-আলেখ্য লিখে দিতে হবে। লিখতে বসে, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধ’রে, স্মৃতিসৌধের অন্ধকার কোঠায় আবদ্ধ, ছোটোবেলাকার নানা কথা, নানা লোকজন, নানা অনুভব, এক অজানা সঞ্জীবনীর প্রক্রিয়ায় জীবাত্ম পদার্থের নতুন প্রাণ পাওয়ার মতো, মিছিল ক’রে বেরিয়ে এল। প্রচলিত অর্থে স্মৃতিকথা লেখার প্রয়াসে ব্যর্থ হলাম। সাহিত্যিক ভানশীলতায় দুষ্ট হওয়ায় সেই লেখনী বাতিল ক’রে দিতে হ’ল।
ছবি আঁকাই আমার অনেক দিনের পেশা; লেখা নয়। ছবি আঁকার ফাঁকে-ফাঁকে পোর্ট্রেট, এমন-কি একই চিত্রপটে একটি গোটা পরিবারের প্রতিকৃতি আঁকায় আমি বরাবরই বিশেষ আনন্দ পেয়েছি। তাই মনে হ’ল শব্দ দিয়ে প্রতিকৃতি রচনা করলে কেমন হয়! এই বইটি সেই প্রয়াসেরই ফল। দু-একটি রচনা তৈরি হবার পর সর্বশ্রী সত্যজিৎ রায়, রাধাপ্রসাদ গুপ্ত, নিখিল সরকার (শ্রীপান্থ), শান্তি চৌধুরী, সুরজিৎ দাশগুপ্ত প্রমুখ নিকট বন্ধুদের পড়তে দিই। তাঁদের সকলের কাছে একইসঙ্গে সমাদর, সমালোচনা এবং উৎসাহ পেয়ে, একের পর এক প্রতিকৃতি “এঁকে” যাই। সম্পাদনার কাজে নিখিল সরকার মশাইয়ের সাহায্যও পেয়েছি উদারভাবে। তাঁদের সকলের কাছেই আমি নানাভাবে ঋণী। বন্ধুবর এবং সহকর্মী শ্রী দীপঙ্কর সেনের অকৃ পণ সাহায্যের জন্য আমি নানাভাবে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতাবদ্ধ।
যে নয়টি লেখা এই বইতে স্থান পেয়েছে, তার প্রত্যেকটিই ‘এক্ষণ’, ‘অমৃত’ এবং ‘কৃত্তিবাস’-এ গত এক-দেড় বছরে, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে।
বইটির ‘জিন্দাবাহার’ নামের সংক্ষেপ ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে ব’লে মনে করি। ঢাকার নবাববাড়ির ঠিক পুব, পশ্চিম ও উত্তরের এলাকা-ক’টিই ছিল শহরের প্রকৃত স্নায়ুকেন্দ্র। উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী হয়ে অনেকগুলো সরু পথ এই কেন্দ্রে এসে মিলিত হয়েছে। শহরের সবচাইতে বর্ণাঢ্য এলাকাও এইটিই। যেমনই বিচিত্র এখানকার বাসিন্দারা, তেমনই বিচিত্র এ-সব গলিঘুচির নাম–”জুমরাইল লেন” “আশক্ লেন” (ফাশি ইস্ক থেকে কী?) “জিন্দাবাহার লেন”, আরো কত কী! এই জিন্দাবাহার লেনেই আমার জন্ম। ষোলো বছর অবধি একটানা এই এলাকায় আমার জীবন কাটে। উর্দু “জিন্দেগী” (জীবন) থেকে “জিন্দা” (জীবন্ত, তাজা)। তার সঙ্গে “বাহার” (“বসন্ত”) জুড়ে একটি অসাধারণ নামের সৃষ্টি। অর্থাৎ, “তাজা বসন্ত”। এই নামের স্রষ্টা যিনিই হোন-না কেন, তিনি যে নিতান্ত রসিক ছিলেন তাতে আর সন্দেহ কী!
এই গলিটি একটি বিশেষ কারণে প্রসিদ্ধ ছিল। সে-কথা অন্যত্র বলছি। শহরের গরীব আমীর অনেক বাসিন্দাই তাদের জীবনকে “তাজা” রাখবার উদ্দেশ্যে জিন্দাবাহার লেনে আনাগোনা করতেন। তার চাইতেও বড় কথা নামটি “জীবন” সম্পৃক্ত এবং শাব্দিক ধ্বনিতেও সমৃদ্ধ। “জিন্দাবাহার” নাম রাখার পক্ষে এই কি যথেষ্ট নয়?
পরিতোষ সেন
দ্বিতীয় মুদ্রণের ভূমিকা
জিন্দাবাহারের অপ্রত্যাশিত এবং অসামান্য সাফল্যে আমি কিঞ্চিৎ বিমূঢ় এবং বিস্মিত। আনন্দিতও বটে। এই বইয়ের যে কোনদিন একাধিক মুদ্রণ বেরুবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। আরও বিস্মিত হয়েছি এর সর্বজনপ্রিয়তায়। ছাত্র-ছাত্রী, সাহিত্যপ্রেমী এবং সাধারণ পাঠক, সাক্ষাতে, চিঠিপত্রে এবং টেলিফোন যোগে, কলকাতা, গ্রামগঞ্জ, প্রবাস, এবং ওপার বাংলা থেকেও, অনেকেই তাঁদের শর্তহীন এবং অকৃপণ সমাদর জানিয়ে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। করেছেন দুই বাংলার পত্রপত্রিকার সমালোচকরাও। তাঁরা সবাই আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন আরো লিখতে যদিও পেশাদারী লেখক হতে আমার বিন্দুমাত্রও বাসনা নেই। ছবি আঁকার ফাঁকে ফাঁকে কখনো বা যদি কলম ধরি (প্রবন্ধাদির কথা বলছি না); সেটা এ-কারণেই ক’রে থাকি যে ছবিতে যে-সব কথা অবলা থেকে যায়, তারই প্রকাশের একটা অন্য ক্ষেত্র চাই ব’লে। আমার এ নূতন পরিচয় নেহাৎই আকস্মিক এবং এ-সম্বন্ধে আমি কোনো অলীক ধারণা পোষণ করি না।
ছবিই হোক আর লেখাই হোক, সৃজনশীলতায় গুরুত্ব, আমার কাছে, এ দুয়ের বেলায়ই সমান। তা রসোত্তীর্ণ হ’ল কি না, তা দর্শক এবং পাঠকই বিচার করবেন। তাছাড়া, সর্বোপরি আছে কালের বিচার যার কাছে অনেক কিছুই ধুয়ে মুছে যায়। পরিশিষ্ট থাকে খুব অল্পই।
সৃষ্টির রহস্য আমাকে প্রতিনিয়তই বিস্মিত করে। চিত্রকরের দৃষ্টিতে আমি তা প্রতি জাগ্ৰত মুহূর্তে অনুভব করে থাকি। “আগুন” ও “হে অর্জুন” আমার এ অনুভবেরই অভিব্যক্তি। তেমনি বিস্ময় সৃষ্টি করে মানুষ, তার অসীম চারিত্রিক বৈচিত্র্যে এবং বৈশিষ্ট্যে। এ বই-এর বাকি রচনাগুলো তারই কয়েকটি অসাধারণ দৃষ্টান্ত। মানবিক মূল্যবোধ এ সব-ক’টিতেই সক্রিয় আছে ব’লে আমার ধারণা। কারণ, সমগ্র মূল্যবোধের ক্রমোচ্চ শ্রেনীবিভাগের মধ্যে, এ-বোধই আমার কাছে সর্বোচ্চ। জিন্দাবাহারের দ্বিতীয় মুদ্রণের পাঠকের কাছে যদি এ-সত্যটি পৌঁছে দিতে পারি তাহলেই, আমার এই সামান্য সাহিত্যিক প্রয়াস সার্থক হয়েছে ব’লে মনে করব।
পরিতোষ সেন
Leave a Reply