চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী – অমলেন্দু দে
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী – অমলেন্দু দে
রেবতী বর্মণের স্মৃতির উদ্দেশে
.
ভূমিকা
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অমলেন্দু দে ১৯৭৫ সালে কলকাতার নেতাজি ভবনে দ্বিতীয় শরৎচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল লেকচারে ইংরেজিতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। তার ঠিক দুইবছর বাদে মার্চ মাসে বিখ্যাত জার্নাল The Social Scientist-এ এই বিষয়ে ইংরেজিতে ওঁর একটি প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৮৪ সালের পুজো সংখ্যার অনুষ্টুপ পত্রিকায়। অধ্যাপক দে দীর্ঘদিন বাংলা ও ইংরেজিতে এ বিষয়ে গবেষণারত ছিলেন। ১৯৮১ সালে রত্না প্রকাশনের পক্ষ থেকে শ্রীক্ষিতীশচন্দ্র দে, যিনি সম্পর্কে লেখকের মাতুল ছিলেন, বই আকারে প্রবন্ধটি প্রকাশ করেন। বইটির নাম ছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি বুদ্ধিজীবী। অধ্যাপক অশোক রুদ্র ও অন্যান্য গবেষকগণ পুস্তকটির প্রশংসা করেন। পুস্তকটির চাহিদা থাকায় অল্পদিনের মধ্যে সব কপি বিক্রি হয়ে যায়। গবেষকমহল ও মননশীল বাঙালি তাঁরা গ্রন্থটির অভাব বোধ করেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে পারুল প্রকাশনীর পক্ষে শ্রীগৌরদাস সাহা এবং অধ্যাপক দে-র পরিবারের পক্ষে আমি সিদ্ধান্ত নিই যে পিতা অধ্যাপক অমলেন্দু দে ও মাতা শ্রীমতী নাসিমা দে-র তৃতীয় তিরোধান বছরে ওঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০১৭ সালে গ্রন্থটি পুনঃপ্রকাশিত হোক। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, সমাজবিজ্ঞানের গবেষক মহলে ও মননশীল বাঙালি সমাজে এই মূল্যবান পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণটি আদৃত হবে।
অধ্যাপক ড. অমিত দে
ইতিহাস বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
১৬ মে ২০১৭
ঐতিহাসিকের তৃতীয় প্রয়াণ দিবসে
.
লেখকের নিবেদন
কয়েক বছর আগে এই বিষয় নিয়ে বাংলায় ও ইংরেজিতে লিখেছিলাম। তারপরে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার নেতাজি ভবনে দ্বিতীয় শরৎচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল লেকচার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হয়ে এই বিষয়ে ইংরেজিতে ভাষণ দিই। একই বছরে গোয়াতে একটি সর্বভারতীয় সেমিনারে এই বিষয়ে ইংরেজিতে একটি প্রবন্ধ পাঠ করি। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে ত্রিবান্দ্রম থেকে প্রকাশিত মাসিকপত্র The Social Scientist (No 56, March 1977) আমার প্রবন্ধ ‘Bengali Intelligentia’s Attitudes to the Permanent Settlement’ মুদ্রিত করে। এই প্রবন্ধটি পাঠ করে অনুষ্টুপ কাগজের সম্পাদক শ্রীঅনিল আচার্য আমার সঙ্গে দেখা করে বাংলায় প্রবন্ধটি তর্জমা করে দিতে বলেন। তাঁরই অনুরোধে এই প্রবন্ধটি লিখেছি। অবশ্য একে ঠিক অনুবাদ হিসেবে গ্রহণ করা ঠিক হবে না। ইংরেজি প্রবন্ধের মূল কাঠামোটি সম্পূর্ণ বজায় রেখে কিছু কিছু নতুন তথ্য এখানে সংযোজন করে বাংলা ১৩৮৪ সনের পুজো সংখ্যার অনুষ্টুপ কাগজে তা প্রকাশ করি।
কাগজে প্রকাশিত প্রবন্ধের মুখবন্ধে লিখেছিলাম, একটি প্রবন্ধে এই ধরনের একটি বিষয়ের সব দিক নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই কয়েকটি পয়েন্টের ওপর আলোচনা নিবদ্ধ রেখে এই প্রবন্ধের মূল বক্তব্য-বিষয় এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রথমেই বলে রাখা ভালো, এই প্রবন্ধে সেই সমস্ত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হিন্দুদের ও মুসলমানদের ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যাঁদের নিয়ে বাঙালি শিক্ষিত সম্প্রদায় গঠিত হয়। এ কথা উল্লেখ করা বাহুল্য যে, বিভিন্ন কারণে হিন্দুরাই ছিলেন তাঁদের মধ্যে প্রধান ও প্রভাবশালী অংশ। ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের যেমন এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তেমনই সংস্কৃত, আরবি, ফারসি এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও এর মধ্যে রাখা হয়েছে। সুতরাং, ‘বুদ্ধিজীবী’ শব্দটি এখানে একটু ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
রত্না প্রকাশনের শ্রীক্ষিতীশচন্দ্র দে অনুষ্টুপ কাগজে প্রকাশিত প্রবন্ধটি পুস্তিকাকারে প্রকাশ করায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অমলেন্দু দে
ইতিহাস বিভাগ
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
৫ জানুয়ারি ১৯৮১
Leave a Reply