চাঁদ পড়ে আছে – প্রচেত গুপ্ত
প্রথম প্রকাশ – ফেব্রুয়ারি ২০১৩
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – সৌজন্য চক্রবর্তী
.
যারা দূরে থাকলেও মনে হয়, পাশে আছে।
ডাকলেই সাড়া দেবে।
মুম্বাইবাসী শঙ্কর-মহুয়া
আর প্রণব-সাহানাকে
.
ভূমিকার বদলে ঝামেলা
যার কপালে যা। কারও কপাল ভালো, কারও মন্দ। আমার হল ঝামেলার কপাল। বইয়ের নাম নিয়ে ঝামেলা। বেশিরভাগ সময়েই বইয়ের নাম মাথায় আসে না। লেখা হয়ে গেছে, প্রুফ দেখা শেষ, বই ছাপতে যাবে, প্রচ্ছদ প্রায় তৈরি, কিন্তু নাম নেই! শিল্পীর তাড়া, প্রকাশকের ধমক, প্রেসের চোখ কটমটে আমি দিশেহারা। পড়েছি অকুলপাথারে। পায়চারি, চোখ লাল, চুল উশকো-খুশকো। দিনে খিদে নেই, রাতে ঘুম নেই। মটকা মেরে পড়ে থাকি। কোন এক পত্রিকায় পড়েছিলাম, ঘুমের মধ্যে যে সবসময় স্বপ্ন আসে এমন নয়, অনেক সময় মটকাতেও স্বপ্ন আসে। এই স্বপ্নকে বলে ‘মটকা-স্বপ্ন’। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি, যদি মটকা স্বপ্নে বইয়ের নাম পাই। অপেক্ষাই সার হয়। নাম আসে না। শেষ পর্যন্ত অনেক ভাবনা-চিন্তা করে, মাথার চুল ছিঁড়ে, কম্পিউটারের কী বোর্ড কামড়িয়ে (কলমের বদলে) হয়তো একটা নাম ঠিক করি, কিন্তু প্রেসে দেওয়ার আগের মুহূর্তে মনে হয়, নাম যথেষ্ট খারাপ হয়েছে। এই নামে বই পড়া তো দূরের কথা, পাঠক বই হাতে তুলেও দেখবে না। আরও ঝামেলা আছে। নাম আমার পছন্দ হয়তো শিল্পীর হয় না, শিল্পীর হয় তো প্রকাশকের হয় না। কখনও আবার শিল্পী, প্রকাশক এবং আমার তিনজনেরই হয়, কিন্তু পাঠকের হয় না। এই কারণে ঠিক করেছি, ঝামেলা রাখব না। এবার থেকে নাম বাছাইয়ের ব্যাপারে আমি হব গণতান্ত্রিক। ভোটের মাধ্যমে নাম ঠিক হবে। প্রথমে তিন-চারটে নাম ভাবব। তারপর যে নাম বেশি ভোট পাবে সেটাই থাকবে। বাকি সব বাতিল। ভোটে জেতা নাম খারাপ হলে হবে। আমার কোনও দায় থাকবে না। যারা ভোট দেবে তাদের দায়।
দুর্ভাগ্য, এবারও ঝামেলা মুক্ত হতে পারিনি। এই বইয়ের নাম সবথেকে কম ভোট পেয়েছে। তবু আমি তাকে বাদ দিতে পারলাম না। হেরে যাওয়া সবের ওপর বড্ড মায়া হয়। সে মানুষই হোক আর বইয়ের নামই হোক। থাক, বাকি জীবনটা না হয় ঝামেলা নিয়ে থাকব। যার কপালে যা।
কৃতজ্ঞতা শক্তি চট্টোপাধ্যায়,
প্রচেত গুপ্ত
১ জানুয়ারি ২০১২
Leave a Reply