গীতা কেন? – সুকুমারী ভট্টাচার্য
গীতা কেন? – সুকুমারী ভট্টাচার্য
প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর ২০১০
ভূমিকা
গীতা একটি বহুপঠিত, বহু-অনূদিত এবং বহুচর্চিত গ্ৰন্থ। ‘গীতা কেন’ গ্রন্থটি অনুবাদ বা ভাষ্যও নয়। কোন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে গীতার উদ্ভব তারই অনুসন্ধান করেছি এই লেখায়। কুষাণ যুগের আর্যাবর্তে যে পরিবেশে গীতা রচনা হয় সেটির অনুসন্ধান করে গীতার ধর্মীয় সামাজিক কেন্দ্রবিন্দুটির সন্ধান পাবার চেষ্টা হল এই লেখা; তা কতটা সার্থক হয়েছে বা হয়নি তার বিচার করবেন পাঠকরা। গীতায় শূদ্রের হীনবর্ণতা উল্লেখ করা হয়েছে; এরা কঠিন কায়িক শ্রম করত। ব্যতিক্রম হিসেবে এদের কেউ কিছু পারিশ্রমিকও পেত। ধর্মসূত্রগুলিতেও দেখি এরা পেটভাতায়, কখনও কখনও কিছু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করত। এটা অবশ্য অনুমাননির্ভর। হয়তো কখনও আঞ্চলিক ভাবে ছোটখাটো বিদ্রোহও করেছে এরা, কিন্তু প্রবল রাজশক্তির কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এ ধরনের উপাখ্যান গ্রন্থে পাওয়া যায়, মহাকাব্যে ও পুরাণে অনেক পাওয়া যায়।
যে গোষ্ঠীটি সদৃশপ্রায় অথচ সম্ভবত সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাবি রাখে, তারা হল নারী। রাজার কর্তব্য বর্ণগুলির সীমারেখার অলঙ্ঘনীয়তা রক্ষা করা। তার মধ্যে নারীকে শাসনে, দমনে পুরুষের পদতলে রাখাও একটি। নারী যে একনিষ্ঠ ভাবে পতিব্রতা হয়, তার আশ্রয় হল স্বামীর পদতলে। ডাইনে বাঁয়ে চাইলেই অনর্থ।
শূদ্র ও নারী সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ দু’টি অংশ। বৈশ্যকে গীতা কখনও উচ্চবর্ণ বলে স্বীকার করেছে, আবার কখনও বা পাপযোনি বলেছে। অর্থাৎ সমাজ বৈশ্য সম্বন্ধে তখনও মনস্থির করতে পারেনি। কিন্তু নারী সম্বন্ধে এ দেশ মনস্থির করেছে সেই বেদের যুগ থেকেই।
যখন বহু বিজাতীয় জনগোষ্ঠী এখানে নানা উদ্দেশ্য নিয়ে এল তখন তাদের কোথায়, কী ভাবে, কী শর্তে গ্রহণ করা হবে, সমাজপতিরা তা ঠিক করতে পারেনি। নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে তৎকালীন সমাজদেহের বিভিন্ন অংশে তাদের স্থান দিয়েছিল। এ প্রক্রিয়া সার্থক হবার জন্য প্রয়োজন ছিল একটা বিশিষ্ট মতবাদ এবং একজন কেন্দ্রীয় পুরুষ, অর্থাৎ ঊর্ধ্বতম শিখরে অবস্থিত এক পুরুষোত্তম। গীতায় সেই মতবাদ, আর কৃষ্ণ সেই আদি ব্রহ্মস্বরূপ। এই বইটির প্রকাশনা সম্ভব হল প্রতীচী ট্রাস্টের গবেষক কুমার রাণার অক্লান্ত ও অকুণ্ঠ প্রচেষ্টায় এবং ‘ক্যাম্প’-এর উদ্যোগে। ধন্যবাদ জানিয়ে এঁদের ছোট করতে চাই না।
সুকুমারী ভট্টাচার্য
Leave a Reply