খুনির রং – অনীশ দেব
খুনির রং – অনীশ দেব
.
এক মিনিট, আপনাকে বলছি
বাংলা সাহিত্যে খুনচর্চা অথবা খুনিচর্চা প্রায় ১২০ বছরের পুরোনো। একথা বলছি তথাকথিত ক্রাইমকাহিনি কিংবা গোয়েন্দাকাহিনির কথা মনে রেখে—যেসব কাহিনিতে খুন অথবা খুনির একটা মুখ্য ভূমিকা আছে। ব্যাপারটা ‘ট্রু ক্রাইম স্টোরিজ’—বাংলায় ‘সত্যকাহিনি’ তকমা এঁটে যেসব কাহিনিকে বিপণন করা হয়—ধরনের কাহিনি দিয়ে শুরু হয়েছিল। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘দারোগার দপ্তর’ কিংবা বাঁকাউল্লার বিবরণীতে ‘বাঁকাউল্লার দপ্তর’ সেই অর্থে বাংলা ক্রাইমকাহিনির সূচনার মুখ।
কিন্তু মূলধারার সাহিত্যেও তো ব্যবহার হয়েছে খুন অথবা খুনির। যেমন শেক্সপিয়ারের ‘ম্যাকবেথ’, রবীন্দ্রনাথের ‘সম্পত্তি সমর্পণ’, আলবেয়ার কামুর নাটক ‘ক্রস পারপাস’, অথবা তুলনায় আধুনিক সময়ের লেখক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প ‘মটর মাস্টারের কৃতজ্ঞতা’ ইত্যাদি। এরকম নজির আরও বহু রয়েছে।
সাহিত্য থেকে যদি এবার জীবনের দিকে তাকাই তা হলে দেখা যায়, প্রায় প্রতিদিনই আমরা টিভি অথবা খবরের কাগজের মাধ্যমে খুনের ঘটনার ‘মুখোমুখি’ হই। সেইসব খুনের আড়ালে রয়েছে একজন অথবা কয়েকজন খুনি। আর সেইসব খুনির আড়ালে রয়েছে খুনির জটিল বিকৃত মনস্তত্ত্ব। এই মনস্তত্ত্বের স্বরূপ এখনও পর্যন্ত অনেকটাই মনোবিদদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
খুন যেমন বহু ধরনের হয়, তেমনই খুনিও। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খুনের মোটিভও হয় নানান রকম। সেই কারণেই খুন, খুনি ইত্যাদি একটি বহুমাত্রিক বিষয়। তা ছাড়া খুনি কখনও থাকে প্রত্যক্ষে, কখনও বা পরোক্ষে।
এই বহুমাত্রিক বিষয়টির অল্পবিস্তর আভাস দেওয়ার জন্যই এই সংকলনের আয়োজন। মোটামুটিভাবে গল্পের প্রকাশকালের সময় অনুসারে ১৯৫৮ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২৯টি গল্প সাজিয়ে দিয়েছি আপনার জন্য। তার মধ্যে ২০০০ সাল পর্যন্ত, মানে, গত শতকের গল্প রয়েছে ৮টি। বাকি ২১টি গল্প একুশ শতকের। তবে প্রতিটি গল্পেই রয়েছে খুন, খুনি অথবা খুনির মনস্তত্ত্ব।
সংকলনের লেখক তালিকা হয়তো আপনাকে একটু অবাক করলেও করতে পারে। কারণ, সুবিখ্যাত প্রথিতযশা লেখকদের প্রায় কেউই হাজির নেই লেখকসূচিতে। এর কারণ, সংকলনটিকে আমি ‘চরিত্রে’ আধুনিক করতে চেয়েছি। আর চেয়েছি খুন কিংবা খুনিদের বহুমুখী বৈচিত্র্য তুলে ধরতে। এ ছাড়া আরও চেয়েছি, এ সময়ের যেসব লেখক তাঁদের নিত্যনতুন গল্পে আমাকে চমকে দিচ্ছেন —চমকে দিচ্ছেন তাঁদের প্লট, ভাষা এবং স্টাইল দিয়ে—তাঁদের লেখা আপনার কাছে উপহার হিসেবে সাজিয়ে দিতে।
এই সংকলেনর লেখকদের মোট চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় : অপরিচিত, স্বল্প পরিচিত, পরিচিত এবং সুপরিচিত। কিন্তু তাঁদের লেখা গল্পগুলোর শ্রেণি একটাই : দারুণ!
দু—চারটি ব্যতিক্রম ছাড়া সংকলনের প্রায় সবক’টি গল্পই এমন সব পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল যেগুলোকে আমরা বেশিরভাগ পাঠকই নামে চিনি না। আর কয়েকটি ক্ষেত্রে লেখকের কোনও গল্প সংকলন থেকে নির্বাচিত গল্পটি সংগ্রহ করেছি।
সবশেষে বলি চারটি গল্পের কথা।
সংকলনের শেষ চারটি গল্প লিখেছেন পিনাকী মুখোপাধ্যায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, সুজন ভট্টাচার্য ও দেবার্চন বসু। হয়তো আপনার কাছে এই চারটি নাম নতুন। এই চারজন লেখক নতুন গল্প লিখে দিয়েছেন এই সংকলনের জন্য। এঁদের গল্প আমাকে এতই খুশি করেছে যে, সংকলনে এই চারজনের গল্প প্রকাশ করতে পেরে সম্পাদক হিসেবে আমি গর্বিত। আমার মনে হয়েছে, বাংলা সাহিত্যের ময়দানে এই চারজন অনেক লম্বা রেসের ঘোড়া। এই চারজনকে আগাম অভিনন্দন জানাই।
কিন্তু এই সংকলেনর সবক’টি গল্পেরই গুণমান বিচারের সর্বোচ্চচ স্তরে রয়েছেন, হে পাঠক, আপনি। আপনার বিচারই শেষ কথা। শুধু গল্পগুলোর নয়, সম্পাদক হিসেবে আমি ব্যর্থ না অব্যর্থ, সে—বিচারও করবেন আপনি। শুধুই আপনি। তাই আপনার সাধুবাদ কিংবা বকুনির অপেক্ষায় রইলাম।
.
অনীশ দেব
২৩ জানুয়ারি, ২০১৬
ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা ৭০০০০৯
Leave a Reply