খুঁজে খুঁজে খুন – ইন্দ্রনীল সান্যাল
প্রথমার পরের দশ
প্রথম প্রকাশ – জানুয়ারি ২০২৪
পত্রভারতী বুকস প্রাইভেট লিমিটেড
.
গৌতম চ্যাটার্জি
সুহৃদপ্রতিমেষু
.
রইল না আর কেউ!
হারাধনের দশটি ছেলে
ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
রইল বাকি নয়।
হারাধনের নয়টি ছেলে
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দু’খান হল
রইল বাকি আট।
হারাধনের আটটি ছেলে
বসলো খেতে ভাত,
একটির পেট ফেটে গেল
রইল বাকি সাত।
হারাধনের সাতটি ছেলে
গেল জলাশয়,
একটি সেথা ডুবে ম’ল
রইল বাকি ছয়।
হারাধনের ছয়টি ছেলে
চ’ড়তে গেল গাছ,
একটি ম’ল পিছলে পড়ে
রইল বাকি পাঁচ।
হারাধনের পাঁচটি ছেলে
গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে
রইল বাকি চার।
হারাধনের চারটি ছেলে
নাচে ধিন ধিন,
একটি ম’ল আছাড় খেয়ে
রইল বাকি তিন।
হারাধনের তিনটি ছেলে
ধরতে গেল রুই,
একটি খেলো বোয়াল মাছে
রইল বাকি দুই।
হারাধনের দুইটি ছেলে
মারতে গেল ভেক,
একটি ম’ল সাপের বিষে
রইল বাকি এক।
হারাধনের একটি ছেলে
কাঁদে ভেউ ভেউ,
মনের দুঃখে বনে গেল
রইল না আর কেউ।
বাঙালি শিশুদের সংখ্যা শেখানোর জন্যে ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ ছড়াটি লিখেছিলেন যোগীন্দ্রনাথ সরকার। চিকিৎসক নীলরতন সরকার যে তাঁর দাদা, এটা জেনে বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ দাদার নামাঙ্কিত নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজেই আমি পড়াশুনো করেছি।
ছোটবেলায় ছড়াটি আওড়ানোর সময় কোনওদিন খেয়াল করিনি যে এর মধ্যে লুকিয়ে আছে অসহ্য ভায়োলেন্স! হারাধন নামের মানুষটির কথা ভাবলে খারাপই লাগে। কারণ তাঁর ছেলেরা একের পর এক অদ্ভুতভাবে মারা যাচ্ছে। কী করে সহ্য করছেন সেই বাবা?
অন্য একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, হারাধনের কোনও মেয়ে নেই। দশটিই পুত্র। ছোটবেলায় পড়া রূপকথা বা ছড়ার মধ্যে কী ভাবে যে পুরুষতান্ত্রিকতা আর হিংসা লুকিয়ে থাকে, তা বড়বেলায় নতুন করে পাঠ না করলে বোঝা যায় না।
এই কাহিনিগুলির প্রোটাগনিস্ট প্রথমা লাহিড়ী ভারত সরকারের মহিলা গুপ্তঘাতক। ‘হারাধনের দশটি ছেলে’ নামক শিশুতোষ ছড়ার মোড়কে দশটি জিও পলিটিকাল থ্রিলার লিখে বাংলা থ্রিলার বা গোয়েন্দা কাহিনির ঘরানায় পুরুষ গোয়েন্দার আধিপত্য আমি সচেতনভাবে ভাঙতে চেয়েছি।
পেরেছি, কি না পাঠিকা-পাঠক বলবেন।
ইন্দ্রনীল সান্যাল
ডিসেম্বর ২০২৩
বালি। হাওড়া
Leave a Reply