প্রথম প্রকাশ জানুয়ারি ২০১৭
পত্রভারতী
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ – সুব্রত মাজী
.
সুগত চক্রবর্তী, অর্ণব দাস,
সুখেন্দুকুমার সিনহা-কে
.
মন্দির নগরী ‘খাজুরাহ’। এক সময় তার নাম ছিল ‘খর্জুরবাহক’। চান্দেলরাজ বিদ্যাধরের নির্দেশে সেখানে দীর্ঘ দশবছর ধরে নির্মিত হয়েছিল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মিথুন ভাস্কর্যখোদিত কান্ডারীয় মহাদেব মন্দির। এ মন্দিরের অপরূপা সুরসুন্দরীদের যে নগ্নিকা মূর্তিগুলো আমাদের বিস্মিত করে, তারা কিন্তু কেউ প্রাচীন শিল্পীদের কল্পনা ছিল না। সেই সুরসুন্দরীরা, মৈথুনরত যুগলমূর্তিরা সবাই ছিলেন রক্তমাংসের মানুষ। জীবন্ত মডেল সামনে রেখেই তাদের মূর্তি নির্মাণ করতেন ভাস্করেরা। এই নারী মডেলদের কিনে আনা হত দাসের হাট থেকে। তারপর তাদের বাধ্য করা হত নগ্নিকা হতে, অচেনা পুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে, এমনকী পশুর সঙ্গেও মিলিত হতে। অসহায় নারীদের চোখের জল, অসহায় হাহাকার শুষে নিত মন্দিরের রুক্ষ পাথর। ‘খাজুরাহ সুন্দরী’ উপন্যাসটি রচিত হয়েছে এই পটভূমিকায়।
ইতিহাস আধারিত এই গ্রন্থটির দ্বিতীয় উপন্যাস ‘একা কুম্ভ’। ইতিহাসের পটভূমিতে রচিত এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাসটিও এক প্রেমকাহিনি। আবর্তিত হয় এক অনামা নারীকে কেন্দ্র করে। যার মুখ্য চরিত্র ‘কুম্ভ’। ইনি বুঁদির গড়ের কুম্ভ নন, চিতোরের সর্বশ্রেষ্ঠ নরপতি মহারানা কুম্ভ। নির্মাণ করেছিলেন চিতোরের শৌর্যবীর্যের প্রতীক ‘বিজয় স্তম্ভ’। নির্মাণ করেছিলেন আরও বহু দুর্গ। ইতিহাসবিখ্যাত এই রাজপুত মহারানার পত্নী ইতিহাসবিখ্যাত নারী মীরাবাই। পত্নী মীরাবাই কৃষ্ণ প্রেমে বিভোর। কিন্তু কুম্ভ তো সাধক নন, রক্তমাংসের মানুষ! প্রৌঢ় হলেও তাঁর হৃদয় প্রেম চায়, শরীর পেতে চায় নারীর স্পর্শ।
ঐতিহাসিকরা ইতিহাস রচনা করেন। আর ঐতিহাসিক কাহিনিকারেরা ইতিহাসকে আশ্রয় করে তার কাহিনির জাল বোনেন। আমার এই উপন্যাস দুটি তেমনই। আমার খাজুরাহ ভ্রমণের সাক্ষী হয়েছিলেন কাঁচরাপাড়া রেল ওয়ার্কশপের কর্মী, সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ শ্রীসুখেন্দুকুমার সিনহা। লেখার জন্য নোট নেওয়া, ছবি তোলা ইত্যাদি কাজে তিনি প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। তাঁকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই লেখক দেবতোষ দাশ ও শাশ্বতী চন্দকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য। কৃতজ্ঞতা জানাই পত্রভারতী কর্তৃপক্ষকে একমলাটে আমার এই উপন্যাসদুটি প্রকাশ করার জন্য।
পরিশেষে বলি, কিছু পাঠক-পাঠিকার দীর্ঘদিনের অনুযোগ ছিল তাঁরা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস পান না বলে। আমার ধারণা এই বই তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
১২ ডিসেম্বর ২০১৬
Leave a Reply