ক্রিকেটের রাজাধিরাজ ডন ব্র্যাডম্যান – মতি নন্দী
ক্রিকেটের রাজাধিরাজ ডন ব্র্যাডম্যান – মতি নন্দী
.
মুখবন্ধ
১৯৩৮ ওভাল টেস্ট ম্যাচের রিপোর্টে উইজডেন লেখে :
তৃতীয় দিন চা-এর সময় হ্যামণ্ড নিশ্চয়ই ইনিংস ঘোষণা হয়তো করত না, যদি বিপক্ষ অধিনায়কের দুর্ঘটনা না ঘটত।
স্কোরবোর্ডে ইংল্যাণ্ডের তখন ৯০৩-৭ এবং ‘বিপক্ষ অধিনায়ক’ ডন ব্র্যাডম্যান পায়ের গোছ মুচড়ে যাওয়ায় আর ব্যাট করতে পারবে না নিশ্চিতভাবে তা জানার পরই হ্যামণ্ড ইনিংস ঘোষণা করে। সেজানত, ডন যদি ব্যাট করতে পারত তাহলে ন-শো রানেও ইংল্যাণ্ড নিরাপদ নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ইটালিতে মুসোলিনির পতন ঘটেছে কিন্তু হিটলারের জার্মানি তখনও লড়ে যাচ্ছে। কমন্স সভায় এক সদস্য বক্তৃতা করতে উঠে বললেন, ‘পন্সফোর্ডকে আমরা অল্পেই আউট করেছি, এবারে ব্র্যাডম্যান।’ সভায় কারোরই এই রূপক হৃদয়ঙ্গমে অসুবিধা হয়নি। নির্দয়ভাবে বোলারদের নিষ্পেষণ করেছে যে ভয়ংকর ডিকটেটর, তার নাম ব্র্যাডম্যান।
ব্র্যাডম্যানের প্রথম ইংল্যাণ্ড সফর ১৯৩০-এ। নটিংহামে প্রথম টেস্টে করে ১৩১। সেযখন ব্যাট করছে নেভিল কার্ডাস জিজ্ঞাসা করলেন সিডনি বার্নেসকে, ‘দেখে কী মনে হচ্ছে?’ বার্নেস জবাব দেন, ‘একথা বলব না যে, আমি যখন দারুণভাবে বল করছি তখন ওকে আউট করতে পারতাম না। তবে আমাকে অত্যন্ত দারুণভাবে বল করতে হত।’ বার্নেস ২৭ টেস্টে ১৮৯ উইকেট নিয়েছেন ১৬.৪৩ গড় রানে, এক সিরিজে ৪৯ উইকেট ১০.৯৩ গড়ে। বার্নেসের ‘অত্যন্ত দারুণ’ অতিমানবদের জন্য।
১৯৭৪ সালে ব্র্যাডম্যানের ১৯৩৬-৩৭ টেস্ট রেজার লণ্ডনে বিক্রি হয়েছে ৭০০ গিনিতে, স্বাক্ষরিত ‘ফেয়ারওয়েল টু ক্রিকেট’ বইয়ের কপি ১৫০ পাউণ্ডে।
কয়েকটি ব্যাপার মাত্র উল্লেখিত হল ডন ব্র্যাডম্যান কী ধরনের শ্রদ্ধা, ভয়, বিহ্বলতা আকর্ষণ করেছে বোঝাতে। শেষ টেস্ট ইনিংস খেলেছে ১৯৪৮-এ কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রবাদে পরিণত হয়ে, প্রবাদের নিজস্ব ভঙ্গি অনুসারে ক্রিকেটার হিসাবে মানবিক আবেদন থেকে চ্যুত হয়েছে। ওর সম্পর্কে এমন একটা ধারণা গড়ে উঠেছে যাতে মনে হয় ডন যেন যান্ত্রিক ব্যাটসম্যান, নিজের হৃদয়হীন টেকনিকের দাস, ক্রিকেট থেকে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা ও মহান অনিশ্চয়তা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, রান যোগ দেওয়ার এমন একটি যন্ত্র। এই ধারণাটা, ডনের দক্ষতার ওস্তাদিকে মর্যাদায় ভূষিত করে বটে কিন্তু অপ্রত্যক্ষভাবে ধারণাটা ভুলও। কেননা এর মধ্যে মোটেই ধরা পড়ে না তার চমৎকারিত্বের ধারাবাহিকতা বা স্ট্রোকের গভীর ব্যাপ্তি। উইকেটে ব্র্যাডম্যান বিরস, কল্পনাবোধহীন এবং ব্যক্তিগত স্পর্শরহিত এই ধারণাটাও মিথ্যা।
ব্র্যাডম্যান যেভাবে ক্রিকেট মাঠের ওপর দিয়ে হেঁটে গেছে, তার আগে বা পরে কেউ সেভাবে পারেনি। অবিশ্বাস্য তার সাফল্যের ধারাবাহিকতা। জ্যাক হবসও ধারাবাহিক সাফল্যে দীপ্যমান, ডা. গ্রেসকেও মোকাবিলা করতে হয়েছে খামখেয়ালি পিচের, কিন্তু ব্র্যাডম্যান সকলের মাঝে একা দাঁড়িয়ে। কিশোর উপন্যাসের কোনো লেখকও তার নায়ককে এইরকম বিস্ময়কর সাফল্য দিতে সাহস পাবে না। ব্র্যাডম্যান যা করেছে : ইংল্যাণ্ডে প্রথম ম্যাচে ২৩৬; আগন্তুক প্রথম ব্যাটসম্যান মে মাসের মধ্যে ১০০০ রান; ইংল্যাণ্ডে প্রথম টেস্টে ১৩১, লর্ডসে প্রথম খেলায় ২৫৪; একপক্ষ পরেই লিডসে একদিনে ৩০৯ এবং লাঞ্চের আগে ১০৫ (সবই ২২ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে); এবং ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত এইভাবেই প্রতি দ্বিতীয় ম্যাচে এবং প্রতি তৃতীয় ইনিংসে একটি শতরান দ্বারা ১১৭টি শতরান করেছে যতদিন-না অবসর নিয়েছে। সব রকমের ম্যাচে ৬৬৯ ইনিংসে রান ৫০,৭৩১; গড় ৯০.২৭। শুধু প্রথম শ্রেণির ম্যাচেই ২৮,০৬৭ রান ৩৩৮ ইনিংসে, গড় ৯৫.১৪ এবং টেস্ট ম্যাচে করেছে ৬,৯৯৬ রান, ৮০ ইনিংসে গড় ৯৯.৯৪। স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার মতো হিসাব। ৮০ টেস্ট ইনিংসের ৬৩টি ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে খেলায়। অবশ্যই বলা দরকার— ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে, যেখানে ঝুড়ি ঝুড়ি রান জমা, সেখানে খেলেনি; নিউজিল্যাণ্ডেও না।
শুধু পরিসংখ্যানেই ব্র্যাডম্যানের অবিসংবাদী বিরাটত্বের কাহিনি বিধৃত। কিন্তু তার প্রচন্ড ক্ষমতার একটি দিক মাত্র এই পরিসংখ্যানে পাওয়া যায়। ওর সঙ্গে যারা ব্যাট করেছে বা বিরুদ্ধে বল ও ফিল্ড করেছে অথবা খেলা বোঝেন এমন লোকেরা যাঁরা ওর খেলার টেকনিক বিশ্লেষণ করেছেন, তাঁরাই বুঝতে সক্ষম কী প্রচন্ড বৈপ্লবিক আধিপত্য ব্র্যাডম্যান ক্রিকেটে এনেছিল। এখনকার টেস্ট ম্যাচে রান তোলার হার অর্ধেক করে দিয়েছে যেসব বোলিং কৌশল, ফিল্ড সাজানোর ছক বা উইকেট তৈরির পদ্ধতি, তার হদিশ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, ব্র্যাডম্যানের দ্রুত রান তোলার ভগ্নাংশ মাত্র কমাবার প্রয়াসে বোলারদের দ্বারা এইসব ব্যাপার সেই আমলেই শুরু হয়েছিল। ট্রাম্পার, ম্যাককেব বা মে যে-অর্থে ক্ল্যাসিকাল, ব্র্যাডম্যান তা নয়। ওর দেহের গঠন দোহারা, পেশিসমন্বিত এবং কবজিতে নমনীয়তা। অথচ সূক্ষ্ম, স্নিগ্ধ আলতো ছোঁয়ার সেইসব মার (দলীপ সিংহজির ধরনে), যাতে মনে হয় মাঠের ওপর সম্মোহন ছড়াচ্ছে কোনো জাদুদন্ড— এমন কিছু ডনের ব্যাটিংয়ে ছিল না। হয়তো কোনো বোলারের মনে হল ম্যাকার্টনির রক্ষণ ভেদ করে স্টাম্পে বল প্রায় লাগিয়ে ফেলেছে এবং এইরকম মনে হতে হতেই সেদেখল ব্যাটের শেষ মুহূর্তের একটা মোচড়ে বিদ্যুৎগতিতে বল বাউণ্ডারির দিকে চলেছে। সোবার্সের ক্ষেত্রেও বোলারদের এইরকম মনে হতে পারে কিন্তু ব্র্যাডম্যানের ক্ষেত্রে নয়। ক্রিকেটে এমন কোনো স্ট্রোক নেই যা মারতে পারত না, কিন্তু বাস্তববোধে ভরা ছিল তার পা থেকে চুলের ডগা।
ব্যাটিংয়ে নতুন ও বৈপ্লবিক পথ নির্দেশ করেছিলেন রঞ্জিত সিংহজি : ‘পিছিয়ে খেলো নয়তো ড্রাইভ।’ এর পরই বলের পিচের দিকে ঝুঁকে পড়া বাতিল হয়ে যায় বা ক্রমশ হতে থাকে। সি বি ফ্রাই লিখলেন :
পা বাড়িয়ে খেলতেই হবে, এই অযৌক্তিক ধারণাটি নিখুঁত ক্রিকেটে অত্যন্ত মারাত্মক। একমাত্র দৈত্য ছাড়া আর কারও পক্ষে বঁা-পা বাড়িয়ে ঝুঁকে, গুড লেংথ ফাস্ট বলের পিচের দু-ফুটের মধ্যেও পৌঁছোনো সম্ভব নয়। বোলার যেটা করতে চায় বা করবার জন্য চেষ্টা করে, সেটা হল ব্যাটসম্যান যেন তার বোলিংয়ের পিচের দিকে পা বাড়িয়ে ঝোঁকে।
ব্র্যাডম্যান যখন মধ্যাহ্নে দীপ্যমান তখন কদাচিৎ তাকে ক্রিজ থেকে পা বাড়িয়ে সামনে ঝুঁকতে দেখা গেছে। ফুটওয়ার্ক তার শরীরকে নিয়ে গেছে বলের কাছে, বলের পিচের উপরে। তার পূর্ববর্তী কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষেই এতটা করা সম্ভব হয়নি। টেকনিককে আরও এগিয়ে এনে ব্র্যাডম্যান নতুন কোনো অধ্যায় সংযোজিত করেনি। আবিষ্কৃত যাবতীয় নিয়মকে সমন্বিত করে ব্যাটসম্যানশিপকে জ্যাক হবস এমন এক জায়গায় নিয়ে যান, যেখান থেকে আর এগিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় এবং আজও তার প্রয়োজন হয়নি। ব্র্যাডম্যানের অবদান— অতন্দ্র প্রহরা ও নতুন এক মিতাচার।
‘স্টাইল না কার্যকারিতা, কোনটা নিয়ে ব্যস্ত হবে?’ প্রশ্নটা স্বয়ং ব্র্যাডম্যানেরই। নিজেই বলেছে, ‘কার্ডাস লিখেছিলেন, ইগলের ওড়া আধুনিক জেট প্লেনের থেকে দেখতে অনেক বেশি সুন্দর, কিন্তু কে যে দ্রুতগামী তাতে কারও সন্দেহ নেই।’
ব্র্যাডম্যান এমনই প্রতিভাসম্পন্ন যে, ইচ্ছা করলে সেতার ব্যাটিংকে সৌকুমার্যে ভূষিত করার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারত। কিন্তু এ ব্যাপারে তার বাস্তববোধ ছিল অতি সজাগ। বোলারদের সম্পর্কে দুটি মূল জিনিস সেজানত :কেউই ব্যাটের পুরো মুখের সঙ্গে অনবরত মোলাকাত পছন্দ করে না; কেউই সাধারণভাবে গুড লেংথ বোলিং পলকের ফুটওয়ার্কে ওভারপিচ বলে রূপান্তরিত দেখতে পছন্দ করে না। বাউণ্ডারি-ফেন্সে বলের সংঘর্ষের শব্দ শুনতে সেভালোবাসত; স্কোরবোর্ডে তার নামের পাশে রানের সংখ্যা ঘুরতে দেখলে খুশি হত; বোলারদের খুন করায় এবং বিপক্ষ অধিনায়কের মুখ বিমূঢ় করে তোলায় তার আনন্দ হত।
সূক্ষ্ম আলতো মিহি মার ছিল না; কিন্তু ব্র্যাডম্যানের সেরা দিনগুলিতে প্রত্যেক বোলার, প্রত্যেক ফিল্ডসম্যান, প্রত্যেক দর্শক অনুভব করত— তার হাতের জিনিসটি ব্যাট নয় কুঠার এবং তা থেকে ঝরে পড়ছে বোলারের রক্ত। দয়া জানত না। একটি শতরানে কদাচ সেতৃপ্ত হয়েছে। দুশো, তিনশো এমনকী চারশো রানেও পৌঁছোতে চায় সে। কুইন্সল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে ৪৫২ করেও ব্যাট সমর্পণ করেনি। দর্শকদের কাছে তার আবেদনের প্রচন্ডতা ও ক্ষিপ্ততা এখনও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। স্কোরবোর্ডে তার নাম ওঠামাত্র যে-গর্জন মাঠ ঘিরে ধ্বনিত হত, তা নিছকই পূর্ব-অনুমিত হর্ষধ্বনি। ব্র্যাডম্যান কদাচিৎ তার ‘বাহিনী’কে হতাশ করেছে।
ব্র্যাডম্যান যেমন বোলারের শিরঃপীড়ার, তেমনই অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানের মানসিক শান্তি হরণের কারণ। একগাল হাসি নিয়ে সেগার্ড নেবে, সাজানো ফিল্ড দেখবে, ট্রাউজার্সে হ্যাঁচকা টান দেবে, ব্যাট হাতে তৈরি হয়ে দাঁড়াবে এবং তারপর তীক্ষ্ণস্বরে ‘রাইট’ বলেই প্রথম বল থেকে প্রথম রানটি নেওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়বে। এটাকে সেঅভ্যাসে পরিণত করেছিল। তারপর কখন যেন সে২০, ৩০, ৪০, ৫০ এবং অবশ্যম্ভাবী শতরানে পৌঁছে যেত। সেএকাই খেলে যেত এবং অন্যপ্রান্তের ব্যাটসম্যান ক্রমশই হীনতা ভাবে মধ্যে ডুবত। সব কিছুই যেন অতি সহজ, এইরকমভাবে ব্যাপারটাকে সেসবার চোখে প্রতিভাত করাত এবং ঘড়িকে আর একটি উৎখাতযোগ্য শত্রু বিবেচনা করত। তার আমলে বহু ব্যাটসম্যান তার বিরাট ছায়ায় ঢাকা পড়ে গিয়ে অনুযোগ করেছে, অন্য সকলের থেকে ব্র্যাডম্যান বেশি ফুলটস ও শর্টপিচ বল পেয়েছে। তারা এটাই বোঝাতে চায়, ওর কপালটা ভালো। অবশ্যই সেভাগ্যক্রমে বলগুলি পেত না। আসলে যেভাবে সেচেয়েছে বোলাররা সেইভাবেই বল করেছে। সব কিছু তারই ইচ্ছানুযায়ী হত। তার ফুটওয়ার্ক, নিজের ওপর অগাধ আস্থা, তছনছ করে দিত বোলারদের; তাদের সম্মোহিত করত এবং তারা বুঝে উঠতে পারত না ওকে ঠাণ্ডা করার জন্য কোথায় বল ফেলতে হবে।
বোলিংয়ে বিপ্লবের কারণ হয়েছিল ব্র্যাডম্যান। লারউডকে ফলাগ্রে রেখে জার্ডিনের পরিকল্পনা—লেগসাইডে ফাস্ট বোলিং, মাথার উচ্চতায় বল লাফাবে, লেগসাইড ঘিরে ফিল্ডসম্যান—ছকা হয়েছিল তার ব্যাটিং গড়কে সম্ভব হলে অর্ধেকে নামিয়ে আনার জন্য। সফল হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই (আট ইনিংসে ৫৬.৫৭ গড় রান)।কিন্তু ব্র্যাডম্যান যেভাবে এই বোলিংয়ের—লারউডের জীবনের দ্রুততম অধ্যায়—মোকাবিলা করেছিল, কোনো যুগের কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে তা সম্ভব হত না। আশ্চর্যজনক এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ সেই মোকাবিলা! হয়তো বেপরোয়াও। কিন্তু অবস্থা বিচারে আর কী পন্থা নেওয়া যেতে পারে! সাহস এবং মৌলিকতা তখন দরকার ছিল। ব্র্যাডম্যান তা দেখিয়েছিল। লেগসাইডে দেওয়া লারউডের বল অন-এর দিকে সরে এসে অফ-এ মারা এবং এমন দ্রুততম বলকে, যা অস্ট্রেলিয়াবাসীরা আগে কখনো দেখেনি। লারউড ও লেগ-ফিল্ডের বিরুদ্ধে পরিকল্পনার দ্বারা ইচ্ছানুযায়ী সুদীর্ঘ ইনিংস গড়ার বা মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কোনো যৌক্তিক উপায় সম্ভবপর ছিল না। ১৯৩২-৩৩-এ জার্ডিনের নিষ্ঠুর চ্যালেঞ্জের সামনে ব্র্যাডম্যান যে চোখ-ধাঁধানো উদ্ভাবনক্ষমতা, করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে সংকল্প, চারিত্রিক কাঠিন্য দেখিয়েছিল, তার সারা জীবনে এর থেকে বিস্ময়কর আর কিছু সেকরেনি।
অনেকে বলেন ব্র্যাডম্যান কেতাব-ছাড়া। এ কথাটাও ঠিক নয়। তার ব্যাটিং জমাট বনিয়াদের ওপর গড়া। দুই পায়ের মাঝে সেব্যাট রাখত, স্টান্সটা অস্বাভাবিক; এবং বঁা-হাত বেশ খানিকটা তফাতে থাকত হ্যাণ্ডেলের ডান দিকে, এটা কেতাব-ছাড়া। ওর মারাত্মক পুল দ্রুত জমিমুখীন করায় এইভাবে ব্যাট ধরাটা দ্বিগুণ কার্যকরী হয়। কেতাব-বহির্ভূত কিছু যদি থেকে থাকে, তা ওর দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যরা যে গুডলেংথ বলকে বিপজ্জনক সন্দেহ করবে, ব্র্যাডম্যান সেটিকে ঘৃণাভরে শাস্তি দেবে। ওর কাছে গুডলেংথ নামক কোনো ব্যাপারই ছিল না। অকল্পনীয় আত্মবিশ্বাস, অসাধারণ বিচারবোধ, অসম্ভব রানের ক্ষুধা, অনতিক্রমণীয় মানসিক স্থৈর্য ও আত্মশৃঙ্খলা। যদি আভাস দেওয়া হত, (এবং এইসব আভাস কখনোই তার কান এড়াত না) অমুক বোলার তাকে বুঝে ফেলেছে, তাহলে সেই বোলারের ধ্বংসই আমন্ত্রণ করা হত।
কেউ কেউ বলেন, এখনকার আঁটো বঁাধুনির অধিনায়কত্বের বিরুদ্ধে ব্র্যাডম্যান টিকতে পারত না। চক্রাকারে সাজানো আধুনিক ফিল্ড, যার উদ্দেশ্য অক্ষম করে দেওয়া এবং অধুনা যা বহুল প্রচলিত, ব্র্যাডম্যানকে নাকি তা সীমিত করে দিত। আসলে ব্র্যাডম্যান মুচকি হেসে এই চ্যালেঞ্জ নিত। এই চক্রাকার ফিল্ড সেদেখেছে, কঠোর অধিনায়কদের বিরুদ্ধেও খেলেছে। ফিল্ড কীভাবে সাজানো হবে সেটা ব্র্যাডম্যানই ঠিক করে দিত, এটা ছিল তার কাছে মর্যাদার প্রশ্ন। বিপক্ষ অধিনায়করা বস্তুত তার ব্যাটিংয়ের সময় হাস্যকর হয়ে পড়ত। ব্র্যাডম্যানের বাউণ্ডারি-প্রবাহ রোধ করতে অধিনায়ক হয়তো এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ফিল্ডসম্যান সরালেন। অবধারিত সেই সরানো জায়গা দিয়ে ব্র্যাডম্যান পরের বলটি পাঠাবেই এবং একগাল হাসবে। জনতার এটা ভালো লাগত। বলের কাছে পৌঁছোতে তার ফুটওয়ার্ক ছিল বিদ্যুৎগতির, তাকে আটকে রাখা ছিল দুঃসাধ্য। পলকের মধ্যে চক্রাকার ফিল্ডের চাকার স্পোকগুলোকে সেবেঁকিয়ে দিত। বডিলাইন তাকে কিছুটা দমিয়েছিল বটে (তবু গড় ৫০-এর উপর), কিন্তু সেটা মূলত ছিল দৈহিক আক্রমণ এবং অপরোক্ষে ব্র্যাডম্যানের বিরাটত্বের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তার সেরা বছর ১৯৩০-এইংল্যাণ্ডে এক সিরিজে ৯৭৪ রান। ৪০ বছর বয়সে ১৯৪৮-এ যখন শেষ বার ইংল্যাণ্ডে খেলতে আসে তখন খুনি মেজাজটা অনেক কোমল, তবু ১১টি শতরান করেছে। ১৯৫৬-এ ওভালে অস্ট্রেলীয় এক ইনিংসে দশ জনকেই জিম লেকার আউট করে সারের পক্ষে বল করে এবং ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টে ১৯জনকে। ১৯৪৮-এ ব্র্যাডম্যান প্রায় ১,০০০ রান তোলে সেই ম্যাচগুলিতে, যাতে লেকার খেলেছে। এক বারও সেব্র্যাডম্যানের উইকেট পায়নি। তার ফুটওয়ার্ক ৪০ বছর বয়সেও স্পিনারদের খুন করেছে।
ব্র্যাডম্যানকে সর্বকালের সর্বোত্তম ব্যাটসম্যান বলতে অনেকেরই আপত্তি। কারণ একটিই : ‘স্টিকি’ উইকেটকে সেচাকর বানাতে পারেনি। এই একটি ব্যাপার ধন্দ হয়ে রয়ে গেছে ব্র্যাডম্যানের খেলার মধ্যে। দেখা গেছে তার বিজয়রথের চাকা মাঝে মাঝেই বসে গেছে সেইসব বৃষ্টিভেজা পিচে, যা মালিদের তদবিরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে অসুবিধাজনক লেংথ থেকে ফাস্ট বলকে ফণা তুলতে বা স্পিনিং বলকে আরও মোচড় দিয়ে লাফিয়ে উঠতে প্ররোচিত করে। এই কারণেই ব্র্যাডম্যানকে বড়ো ব্যাটসম্যান বলার সময় হারবার্ট সাটক্লিফ সবসময় সযত্নে যোগ করতেন, ‘ভালো উইকেটে’।
টেস্টে এক দিনে ৩০০ রান করা ছাড়াও ব্র্যাডম্যান ছয় বার দ্বিশতাধিক রান করেছে এক দিনে। অথচ বৃষ্টিভেজা পিচে ইংরেজ বোলাররা ২০০-র কম রানে অস্ট্রেলীয় দলের ইনিংস যেসব খেলায় শেষ করে দেয়, তার ১৫টিতে ব্র্যাডম্যান খেলেছে। এই ১৫ ইনিংসে মাত্র চার বার সে১৫ রান অতিক্রম করে। যে লোক ১৯২৭ থেকে ১৯৪৮, ক্রমান্বয়ে একটির পর একটি বিস্ময় তৈরি করে গেছে, যে লোক অলৌকিক ফুটওয়ার্ক ও দৃষ্টিশক্তি নিয়ে জন্মেছে, স্পিন বোলিং জয় করতে সেকেন কবচকুন্ডলহারা কর্ণের মতো অসহায় হয়ে পড়ে বৃষ্টিভেজা পিচে! এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, বৃষ্টিভেজা পিচ ক্রিকেটের যাবতীয় স্বাভাবিক ব্যাপারেরই একটি অংশ এবং বিরাট ব্যাটসম্যান অবশ্যই জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি থাকবে যখন স্টিকি পিচের চ্যালেঞ্জ আসবে।
সি বি ফ্রাই এ সম্পর্কে লিখছেন :
মনে হয় যেন, নিখুঁত ফাস্ট উইকেটে বিরাটভাবে রান তোলার জন্য তার ক্ষমতা সম্পর্কে এবং সেই কাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা নিজস্ব স্টাইলে সে(ব্র্যাডম্যান) এতই নিশ্চিত—যে স্টাইল খারাপ উইকেটে সফল হতে পারে না—তাই অস্বাচ্ছন্দ্যকর পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য স্টাইলের অদলবদল করাটা সেঘৃণিত কাজ মনে করত। টেকনিক বদল করলে খারাপ উইকেটে সেও যে কত ভালো খেলোয়াড় হত, তা আমি জানি। বিপজ্জনক উইকেটের জন্য দরকারি এমন কিছুই নেই যা কিনা ও নিজের খেলার অঙ্গীভূত করতে না পারত। সোজা বলের বিরুদ্ধে যেমনটি, ব্রেক করা বলের বিরুদ্ধেও নিখুঁতভাবে সেই ডিফেন্সই সেগড়ে তুলতে পারত…
এ সম্পর্কে ব্র্যাডম্যান কী বলে? তার ধারণা, স্টিকি উইকেট তো ব্যাটিংয়ের বিজ্ঞানকে পরিহাসের বস্তু করে তোলে। তাহলে তো ছেঁড়া টেবিলে নামি খেলোয়াড়রা বিলিয়ার্ডস খেলবে আশা করতে হয়। তার বক্তব্য, সেজানে বৃষ্টিভেজা নরম পিচে কদাচিৎই ব্যাট করতে হবে। সুতরাং শক্ত পিচে খেলার জন্য যে-টেকনিকটি সেরা, তাই সেপ্রয়োগ করে এবং তাতেই সেঅভ্যস্ত। এর মধ্যে স্টিকি উইকেটের টেকনিককে নাক গলাতে দিতে রাজি নয়। এবং এই টেকনিক অনায়ত্ত রেখেই সেটেস্ট ক্রিকেটে হ্যামণ্ডের থেকে সাতটি ও হাটনের থেকে দশটি বেশি শতরান করেছে এবং ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে তার ৩৭টি ম্যাচে ১৭টি অস্ট্রেলীয় জয়ের মধ্যে ১৩টিতে দিয়েছে শতরান এবং ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া তার ১১টি ম্যাচে দিয়েছে দুটি শতরান।
স্টিকি উইকেটে সফল হওয়ার যাবতীয় টেকনিক্যাল প্রয়োজনই ব্র্যাডম্যানের ছিল। যথা, দ্রুত ফুটওয়ার্ক, সুদক্ষ ব্যাক-প্লে, বলের লাইনে এসে খেলা, দেরি করে ব্যাট চালনা, ওভার পিচ বলের কাছে পৌঁছোনোর এবং পেটানোর ক্ষমতা, বাকি যাবতীয় ফরোয়ার্ড খেলা ছাঁটাই করা এবং অসুবিধাজনক লেংথের বল থেকে ব্যাটকে সরিয়ে রাখা। এতৎসত্ত্বেও চক্ষু, মস্তিষ্ক ও পদদ্বয়ের মধ্যে অকল্পনীয় দ্রুততায় সমন্বয় ঘটাবার অধিকারী ব্র্যাডম্যান স্টিকি উইকেটে অসফল। রে রবিনসনের ধারণা, এর কারণ পা বা হাত যতটা নয় তার থেকেও বেশি মানসিকতা। যে-পিচে বল আপন খেয়ালখুশিমতো আচরণ করে, সেখানে ব্যাট করায় ব্র্যাডম্যানের তীব্র বিরাগ। দাপটে প্রভুত্ব করায় সেএতই অভ্যস্ত ছিল যে, উইকেটের বিদ্রোহ বা বাম্পারের চক্রান্ত তার ব্যাটিং থেকে কতৃত্ব হরণ করত। তাকে তখন মনে হত সেই অসুখী ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বহু বছর যাকে লিমুজিনে অফিসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখন সাইকেলে অফিসে যাচ্ছেন। ১৯২৮-এ ব্রিসবেনে তার প্রথম টেস্ট খেলার আগে পর্যন্ত ব্র্যাডম্যান স্টিকি উইকেট কখনো চোখে দেখেনি।
শুকনো উইকেটে এবং যখন সেতুঙ্গে, কোনো বোলারই ব্র্যাডম্যানকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। রান তোলার দ্রুতলয় সত্ত্বেও খুব কমই সেঅসুন্দরভাবে বল মাটি থেকে তুলে মেরেছে। ব্যাটসম্যানশিপের দাবাগ্নি সেজ্বালিয়েছে, জ্বালাতে গিয়ে নিজের হাত কখনও পোড়ায়নি। প্রত্যেক বোলার চেষ্টা করেছে মুহূর্তের জন্যও অন্তত ব্র্যাডম্যানকে খ্যাতিচ্যুত করতে। প্রথম রানটি বা দ্বিশত কি ত্রিশত সম্পূর্ণ করার রানটি পাওয়ার জন্য কেউ তাকে একটিও সহজ বল দেয়নি। সেইজন্য ব্র্যাডম্যানও কখনো কোনো ব্যাটসম্যানকে তার দাতব্যের পাত্র করতে উৎসুক হয়নি। দিনের পর দিন তাকে ব্যাট করে যেতে হয়েছে দূরান্ত থেকে আসা, সকাল থেকে লাইন-দেওয়া দর্শকদের মন ভরানোর জন্য। ইংল্যাণ্ড সফরকালে শারীরিক বা মানসিক অবসাদের জন্য যদি সেজানাত— খেলব না, তাহলে বহু কাউন্টি ক্লাব দেউলিয়া হওয়ার দিকে আরও কিছুটা এগিয়ে যেত। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে খেলতে হয়েছে, পরিস্থিতি দাসে পরিণত করেছিল প্রভুকেই। এ যুগের আর কোনো ক্রিকেটারই দাবি মেটাতে বা আশা পূরণ করতে ব্র্যাডম্যানের মতো বিবেকের ডাকে এতটা সাড়া দিয়েছে কি না সন্দেহ। শতরান করেও সেউইকেট ছুড়ে দিয়ে আসত না। দলকে জেতানোর মতো অবস্থায় পৌঁছে দেওয়ার বা পরাজয় থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালন ছাড়াও ছেলে, বুড়ো, রসিক ও অজ্ঞ সব রকমের দর্শককে মাতিয়ে রাখার কাজ তাকে করতে হত।
ব্র্যাডম্যান কঠিনভাবে খেলেছে ঠিকই কিন্তু নীচভাবে খেলেনি। আয়াস এবং প্রয়াস বাদ দিয়ে সেক্রিকেটকে ভাবতে পারেনি। প্রতিপক্ষকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কিন্তু তাকে দাক্ষিণ্যে রাজি হয়নি। প্রবল বিরোধিতার সেকদাচ অবমাননা করেছে বা তার থেকে দূরে সরে গেছে কিন্তু নির্দয় হয়েছে অযোগ্য দুর্বলচিত্ততার প্রতি। ভালোবাসা যত-না পেয়েছে তার থেকেও বেশি আদায় করেছে শ্রদ্ধা। সহজে সেবন্ধু করে না, বন্ধুত্ব রক্ষার জন্যও নিজের পথ ছেড়ে বেপথে যায় না। অসামাজিক আখ্যা সেপেয়েছে তার কারণ, যেকোনো লোকের সঙ্গে দহরম-মহরম করায় তার রুচি কম। তার অ-জনপ্রিয়তার আংশিক কারণ তার প্রচন্ড ক্ষমতা এবং ওস্তাদি। তার সাফল্য সহজেই মানুষের দুর্বল রিপু ঈর্ষাকে জাগিয়ে তুলেছিল। ব্র্যাডম্যান তার সেরা সময় নি:সঙ্গ কাটিয়েছে। প্রতিভাই তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল অন্যদের থেকে।
কঠোর এবং চতুর অধিনায়ক ব্র্যাডম্যানের করায়ত্ত ছিল প্রতিটি কূট চাল। চমকপ্রদ তৎপর ফিল্ডসম্যান, হরিণের মতো দ্রুতগতি, বাউণ্ডারি থেকে নির্ভুল নিক্ষেপে বল পৌঁছে দিত উইকেট-কিপারের হাতে। পরিহাসরসিক বক্তারূপে ক্রিকেটে তার জুড়ি খুঁজে পাওয়া ভার। সেআগেও যেমন এখনও তাই, অসাধারণ মানুষ। যতগুলি টেস্ট রেকর্ড এখনও তার নামে রয়েছে, একদা ততগুলি ব্যবসায় সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান।
ব্র্যাডম্যান ১৯৭৪-এ লণ্ডনে আসে ১৩ বছর পর। প্রশ্নোত্তরে জানায়, ইংল্যাণ্ডে তার দেখা সেরা ব্যাটিং নটিংহামে ম্যাককেবের ২৩২, অস্ট্রেলিয়ায় দেখা সেরা ব্যাটিং মেলবোর্নে বিশ্ব একাদশের পক্ষে সোবার্সের ‘অবিশ্বাস্য’ ২৫৪। তার খেলার জীবনে সেরা বোলার বিল ও রিলি, ইংল্যাণ্ডের সেরা অ্যালেক বেডসার। নিজের সেরা ব্যাটিং? ১৯৩০-এ লর্ডসের ২৫৪ আর লিডসে একদিনে ৩০০ রান। আজকে এমন সুস্বাস্থ্য বজায় আছে কী করে?—‘‘গত ৬৫ বছর যাবৎ সু-জীবন যাপনে।’’ একটি নৈশভোজে বক্তৃতা দেওয়ার সময় ৬৫ বছরের ব্র্যাডম্যান এই কথাগুলি বলে :
আইনের অধীনে স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নুরেমবার্গে লর্ড বারকেট যা বলেছিলেন সেই সততা, আন্তরিকতা, বিশুদ্ধতা ও মানবিকতাই আমাদের চাই, নয়তো এই পিচ খেলার অযোগ্য হয়ে উঠবে।
ডন ব্র্যাডম্যান সারাজীবন আইন মেনে ‘ক্রিকেট’ খেলে গেছে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে ‘অযোগ্য পিচ’ সেপ্রত্যাখ্যান করেছে। তার বিরাটত্বের পরিলেখ মাত্র এই বইয়ে আঁকতে চেষ্টা করেছি। মাঠে যত বড়ো ক্রিকেটার, মাঠের বাইরেও তত বড়ো চরিত্র। অতি সামান্য থেকে সংকল্প, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণবলে অসামান্য হয়েছে। খেলার ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে ডনের মতো সুদীর্ঘকাল এতখানি মর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব কোনো খেলায় আর কেউ বোধ হয় বজায় রাখতে পারেনি। ওর জীবনকথা ওর খেলার মতোই অভিভূতকারী, প্রেরণাদায়ক এবং মানুষের ক্ষমতাকে নতুন সীমান্তের দিকে ঠেলে দিতে উত্তেজিত করায়। অনুভব করছি, ডনের সঙ্গে আমাদের এখনকার ছেলেমেয়েদের পরিচয় হওয়া দরকার। আর সেই উদ্দেশ্যেই কিশোরদের পড়ার জন্য এই বইটি লিখলাম।
মতি নন্দী
Leave a Reply