কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই – বার্ট্রান্ড রাসেল
কেন আমি ধর্মবিশ্বাসী নই
বার্ট্রান্ড রাসেল
বার্ট্রান্ড রাসেল আধুনিক যুগের এক আশ্চর্য কর্মঠ চিন্তাবিদ। ১৯১৪ সাল, রাসেল তখন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সেই সময় তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন জ্ঞানতত্ত্ব বিষয়ে। প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কোমল মনের এই শান্তিপ্রিয় দার্শনিক সভ্য দেশগুলির বর্বরতায় সব থেকে বেশি আঘাত পেয়েছিলেন। সেইসময় তিনি বক্তৃতা দিয়েছিলেন এক দূরবর্তী বিষয় সম্পর্কে–বহির্বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান’। কেননা তিনি জানতেন এটি এমন একটি বিষয় যা পরিণত হয়েছিল অত্যন্ত কদাকার বস্তুতে, তাই তিনি চাইতেন বিষয়টি যেন বাস্তব থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকে। দশবছর পরে, তখন তিনি বাহান্ন, সেই সময় তাঁর পূর্বতন সহকর্মীরা তাকে আবিষ্কার করে খুশী হয়েছিলেন কেননা পূর্বের রাসেল আর বর্তমান রাসেল সম্পূর্ণ অন্য মানুষ– সবল, হাসিখুশী, সদা প্রফুল্ল এবং একগুঁয়ে। এই দশটি বছর একটি মধ্যবর্তী দশক হলেও তা তাঁর সমস্ত আশা ও বন্ধুত্বকে শেষ করে দিয়েছিল, এবং একদা যে আভিজাত্যপূর্ণ জীবনধারণে তিনি অভ্যস্ত ছিলেন ধ্বংস করেছিল তাকেও।
বার্ট্রান্ড ছিলেন রাসেল পরিবারভুক্ত। এই পরিবার ইংল্যান্ডের তথা প্রাচীনতম পরিবারগুলির মধ্যে অন্যতম। ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে বেশ কয়েক পুরুষ ধরে এই পরিবার সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আসছিল। বাট্রান্ডের ঠাকুর্দা লর্ড জন রাসেল ছিলেন একজন মহান ও উদার প্রধানমন্ত্রী। যিনি মুক্ত বাণিজ্য, সার্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা, ইহুদীদের বন্ধনমোচন ইত্যাদি যাবতীয় ক্ষেত্রে স্বাধীনতার জন্য একরোখা লড়াই চালিয়ে এসেছেন। তার বাবা ‘ভাইকাউন্ট অ্যামবারলে’ ছিলেন একজন মুক্ত চিন্তক। তিনি কখনওই চাননি তাঁর পুত্র বংশানুক্রমিক পশ্চিমী ধর্মতত্ত্বের দ্বারা ভারাক্রান্ত হ’ক। বার্ট্রান্ড তখন দ্বিতীয় আর্ল রাসেলের প্রমাণহীন উত্তরাধিকারী–সেইসময় তিনি তার উত্তরাধিকারলব্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বর্জন করেন এবং সগর্বে নিজস্ব আয় থেকেই নিজস্ব খরচ খরচা নির্বাহ করতে থাকেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর বিশ্বজনীন শান্তিবাদের জন্য তাঁকে চাকরী থেকে অব্যাহতি দিলে তিনি সমগ্র বিশ্বকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন এবং নিজে পরিণত হন এক ভ্রাম্যমান কূট তার্কিকে যাকে সমগ্র বিশ্ব সাদরে গ্রহণ করে।
যুদ্ধ-পূর্ব বার্ট্রান্ড রাসেল ছিলেন ভিন্ন সত্তার অধিকারী গাণিতিক নৈয়ায়িক । সেই গাণিতিক নৈয়ায়িকের ভস্ম থেকে উঠে আসেন যুদ্ধোত্তর রাসেল–একজন রহস্যময় কমুউনিষ্ট-এর জন্ম হয়। তার মধ্যে হয়তো এক মৃদু অতীন্দ্রিয় চাপ কাজ করত যার প্রথম প্রকাশ ঘটে এক পর্বতপ্রমাণ বীজগাণিতীয় সূত্রের দ্বারা এবং তখন সমাজতত্ত্ব সম্পর্কে বিকৃত ব্যাখ্যা জন্ম দিল এক নতুন ধর্মের অথবা বলা যায় এক দর্শনের। তাঁর লেখা বইগুলোর মধ্যে সবচাইতে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিরোনাম হল– Mysticism & Logic’ বা ‘অতীন্দ্রিয়বাদ এবং তর্কবিদ্যা’। এটি অতীন্দ্রিয়তার প্রতি এক নির্দয় আক্রমণ। অতীন্দ্রিয়তার বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত প্রশস্তিকে অনুসরণ করে এটা লেখা। রাসেল উত্তরাধিকারসূত্রে ইংরেজ প্রত্যক্ষবাদী ঐতিহ্য লাভ করেছিলেন এবং কৃতসংকল্প ছিলেন শক্ত মানসিকতার জন্য কেননা তিনি জানতেন তিনি তা পারেন না।
সম্ভবত এটি ছিল এক অতিরিক্ত মূল্যায়ন, যে জন্য তিনি জোর দিয়েছিলেন ধর্মের যৌক্তিতার উপর এবং প্রস্তুত করেছিলেন এক গাণিতিক দেবত্বকে। তিনি বলেছিলেন বার্গস’-এর ‘সিনেমাটোগ্রাফিক অ্যানালজি ফর দ্য ইনটেলেক্ট’ বইটি পড়ার আগে অবধি তিনি কোন সিনেমা দেখেননি, আর বইটি পড়ার পর তিনি নিজেকে একটি উপস্থাপনার সাথে যুক্ত করেন যা ছিল মূলত দর্শনের একটি অধ্যায়। বার্গ-এর সময় ও বেগ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা ছিল। তাঁর মতে, সমস্ত বস্তুই আবশ্যকীয় তৎপরতা সহ জীবিত।’ কিন্তু এই বোধ রাসেলের মনে কোন দাগ কাটেনি। তাঁর কাছে এটি একটি সুন্দর কবিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা গণিত ভিন্ন তাঁর কাছে কোন ঈশ্বরের অস্তিত্বই নেই। তার কাছে ক্লাসিকেরও কোন স্থান ছিল না। তিনি স্পষ্ট ভাষায় সতেজ যুক্তিতে তর্ক করতেন শিক্ষায় বিজ্ঞানের আরো প্রবেশ ঘটানোর জন্য, তিনি অনুভব করতেন পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখের মূল কারণ অতীন্দ্রিয়তা এবং চিন্তার নিন্দনীয় দুর্বোধ্যতা। তার মতে নৈতিকতার প্রথম সূত্র হওয়া উচিত– ‘সূহজ সরল চিন্তা। একজন মানুষের মিথ্যা বিশ্বাসের চেয়ে বরং ভালো পৃথিবীর অকাল ক্ষয়। এটাই হচ্ছে আমাদের চিন্তার ধর্মীয়তা, যার লেলিহান শিখাই একদিন বিশ্বের সব ময়লাকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দেবে।
তাঁর ভাবাবেগের নির্মলতাই তাঁকে অনিবার্যভাবে চালিত করে গণিতের দিকে। তিনি প্রায়ই শিহরিত হতেন এই অভিজাত বিজ্ঞানের প্রশান্ত যথার্থতার কথা ভেরে। তাঁর কাছে ‘গণিত শুধুমাত্র সত্য নয়, সর্বশেষ সৌন্দর্য শীতল; কঠোর, সাধাসিধে এক ভাস্কর্যের ন্যায়, যা আমাদের দুর্বল প্রকৃতির উপর কোন সাড়া না ফেলেই, চিত্রকলা অথবা সুরের চোখ ধাঁধানো ফাঁদ অতিক্রম না করেই– তা শুদ্ধ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পের ন্যায় কঠিন যথার্থতা দেখানোর যোগ্য। তাঁর বিশ্বাস ছিল গণিতের উন্নতি ঊনবিংশ শতাব্দীর সুন্দরতম বৈশিষ্ট্য। গাণিতিক অসীমকে ঘিরে থাকা জটিলতার সমাধান সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যার জন্য আমাদের শতক গর্ব করতে পারে। প্রায় দুই হাজার বছর ধরে আগলে রাখা পুরাতন জ্যামিতি প্রথম শতাব্দীতে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং পৃথিবীর প্রাচীনতম ইউক্লিডীয় পাঠ্যগ্রন্থ অবশেষে অপসারিত হয়। এটা একটা বদনাম ভিন্ন কিছুই নয়।
সম্ভবত আধুনিক গণিতে অধিকাংশ উদ্ভাবনের উৎপত্তিগত স্বতঃসিদ্ধ সত্যকে বাতিল করে। রাসেল সেইসব মানুষদের উপর খুশী হন যারা স্বতঃপ্রত্যক্ষ সত্যকেই চ্যালেঞ্জ জানান এবং যা অনিবার্য তার সম্পর্কেই নিজেকে প্ররোচিত করেন। তিনি এটা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন যে দুটি সমান্তরাল রেখা এক জায়গায় মিলিত হতে পারে এবং সময়ের থেকে অংশ কখনই হতে পারে না।
তিনি সরল পাঠকদের স্তম্ভিত করে দিতে ভালবাসতেন, যেমন–যুগ্ম সংখ্যাগুলি হল সমস্ত সংখ্যার অর্ধসংখ্যা এবং সমস্ত সংখ্যাগুলির মতোই এই যুগ্ম সংখ্যাগুলিকেও পাওয়া যায়, যদিও প্রত্যেক সংখ্যার যুগ্ম সংখ্যাটি হচ্ছে তার দ্বিগুণ, বাস্তবিক এটাই হচ্ছে তাঁর সমগ্র বা মূল বিন্দু যে বিন্দু পর্যন্ত বস্তু অমীমাংসিত থাকে।
রাসেল গণিত বলতে পুনরায় প্রমাণ করতে চাইলেন তার কঠোর নৈর্ব্যক্তিকতা এবং বস্তুময়তাকে। সনাতন সত্য, পরম জ্ঞান– যা প্লেটোর ধারণার এক অবরোহী প্রণালী, স্পিনোজার সনাতন ধারা মূলকথা, যা তাঁর কাছে বিম্বের সার কথা। তাঁর মতে দর্শনের লক্ষ্য হওয়া উচিত অভিজ্ঞতার নিরিখে সত্য গঠন করা ও তার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখে গণিতের সমতুল্য হওয়া। এই অত্যাশ্চর্য প্রত্যক্ষবাদী আরো মনে করতেন–’দার্শনিক প্রতিজ্ঞাগুলি নিশ্চিতভাবেই পূর্বতসিদ্ধ। এই প্রস্তাব বা প্রতিজ্ঞাগুলি কোন বস্তুর প্রতি দিকনির্দেশ করে না করে সম্পর্কের প্রতি, অথবা বলা চলে বিশ্বজনীন সম্পর্কের প্রতি। এগুলি কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা ঘটনার অপেক্ষা রাখে না। যদি বিশ্বের সমস্ত নির্দিষ্ট বস্তুগুলি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তথাপি এই অনুপাত সত্যই থাকবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি সমস্ত A হয় B এবং X হয় A, তবে X হবে B, A যাই হোক না কেন। মরণশীলতা সম্পর্কে সক্রেটিসের পূর্বতন সার্বিক ন্যায় বা সিদ্ধান্তকে এটা সঙ্কুচিত করে তথাপি এই সিদ্ধান্ত সত্যই হত যদি সেখানে কোন সক্রেটিস, বা কোন মানুষ তা না-ও প্রমাণ করত । প্লেটো এবং স্পিনোজা ছিলেন সঠিক । তাঁদের মতে এই বিশ্ব যা যা দিয়ে তৈরি তা দিয়েই তার সার্বিকতা ব্যাখ্যা করা যায় । এই বিশ্ব যা-কিছু দিয়ে প্রস্তুত সেই সব কিছুই অপরিবর্তনীয়, কঠোর এবং সঠিক, এবং একজন গণিতবিদ নৈয়ায়িক জাতীয় মানুষরা হচ্ছেন সেইসব মানুষ যারা পূর্ণতাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন এবং তাঁদের কাছে তা অত্যন্ত আনন্দদায়ক। পিথাগোরাস-এর উচ্চাশা ছিল দর্শনকে তার সমস্ত বিষয়সহ সঙ্কুচিত করে গণিতের আকারে নিয়ে আসা।
এই বর্ণনা হয়তো গাণিতিক দর্শনের প্রতি কোন মহান অবিচার সূচিত (যদি কেউ নিজস্ব মতামত দিয়ে এই ব্যাখ্যায় অশিষ্ট উপায়ে বাধা দান করে) করবে না। এটা যারা পছন্দ করে তাদের কাছে এক চমৎকার খেলা– দাবার মতন এই খেলায় খুব দ্রুত সময় কেটে যায়। এটি নির্জন বা একক খেলার এক নতুন রূপ এবং এটি খেলা উচিত বস্তুর স্পর্শে কলুষিত হবার থেকে যতটা সম্ভব দূরে থেকে। এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর যে Moonshine-এর বহু খণ্ড রচনার পর বাট্রান্ড রাসেল নিজেকে এই পৃথিবীতে নামিয়ে আনলেন এবং অত্যন্ত উত্তেজিত ভাবে যুদ্ধ, সরকার, সমাজতত্ত্ব, বিপ্লব প্রভৃতির কারণ অনুসন্ধানে ব্রতী হলেন– অথচ একবারও নিজের Principia Mathematica-র Pelion, upon Ossa-য় ব্যবহৃত নিখুঁত সূত্রগুলি ব্যবহার করলেন না, অথবা অন্য কেউও তা লক্ষ্য করে ব্যবহার করল না। প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য বস্তু সম্পর্কে বিচারশক্তি জোয়ারের মতন এবং তা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে উৎখাত ও একঘরে করা সত্ত্বেও স্তব্ধ হল না, ঠিক যেন লন্ডনের ছোট্ট পরিসরে অন্য এক গ্যালিলিও। যারা তার বিজ্ঞতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করত, তারাও তাঁর আন্তরিকতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ ছিল। কিন্তু তারাও তার এই বিশাল রূপান্তর দেখে অপ্রতিভ হয়ে পড়েছিল এবং কয়েক মুহূর্তের জন্য হলেও এক অত্যন্ত অ-ইংরেজমূলক অসহিষ্ণুতায় ভুল করে ফেলেছিল।
এই প্রত্যক্ষ বিরোধিতার পিছনে সমস্ত নোংরা দ্বন্দ্বের এক তীব্র ঘৃণা ছিল। বার্ট্রান্ড রাসেল, যিনি চেষ্টা করেছিলেন বস্তুনিরপেক্ষ এক বুদ্ধি হতে, সত্যসত্যই ছিলেন বোধের এক ধারাস্বরূপ এবং জওয়ানদের জীবনের মূল্যের বিনিময়ে সাম্রাজ্যের আকাক্ষা কখনই তাঁর মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করত না তিনি দেখতেন জওয়ানরা গর্বিত ভাবে যাচ্ছে এবং নিজেরাই মৃত্যুবরণ করছে। তিনি ঠিক করেছিলেন এই সামগ্রিক হত্যাকাণ্ড বা এই সম্পূর্ণ বিনাশকারী শক্তির উপর আলোকপাত করবেন এবং নিশ্চিত ছিলেন যে সমাজতত্ত্বের মধ্যে এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণের দ্বারা তিনি তা খুঁজে পাবেন যা অবিলম্বে ব্যাধির। উৎসমুখ খুলে দিয়ে সুস্থতার প্রতি দিকনির্দেশ করবে।
তিনি সূক্ষ্মতার সঙ্গে নির্ধারণ করেছিলেন যে সমস্ত সম্পত্তির উৎস হল উৎপীড়ন নতুবা চুরি। কিম্বারলী-র হীরক-খনি এবং র্যান্ড-এর স্বর্ণখনির ডাকাতি থেকে সম্পত্তিতে রূপান্তরের ঘটনাটি ঘটেছিল সমস্ত বিশ্বের নাকের উপর দিয়ে। ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে প্রাপ্ত ফলাফল, তা যে ধরনেরই হোক না কেন, কখনই ভাল হতে পারে না।
যদিও ব্যক্তিগত সম্পত্তি যা রাষ্ট্র কর্তৃক সংরক্ষিত এবং ডাকাতি যা সম্পত্তি তৈরি করে তা প্রণীত আইনসমূহ দ্বারা অনুমোদিত এবং যুদ্ধ দ্বারা কার্যকরী অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে রাষ্ট্র এক অন্যায্য সংস্থা। বরঞ্চ যদি অধিকাংশ কার্যপ্রণালী সমবেতভাবে এবং নির্মাতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা হত তবে তা হত দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক। আমাদের ব্যক্তিত্ব এবং স্বাতন্ত্র সমাজ কর্তৃক সাদৃশ্যপূর্ণ কাজের মধ্য দিয়ে পুনঃপুনঃ নিষ্পেষিত হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে বৃহত্তর নিরাপত্তা এবং আধুনিক জীবনের নৈমিত্তিকতাই পুনরায় দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্থাপন করাতে পারে।
স্বাধীনতা হচ্ছে উৎকৃষ্টতম বিষয় আর ব্যক্তিত্ব ব্যতিরেকে তা একেবারেই অসম্ভব। একমাত্র মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে ভুলভ্রান্তি পেরিয়ে, পূর্ব সংস্কার অতিক্রম করেই সেই সম্পূর্ণ সত্যকে পেতে পারি। ধরা যাক, মনুষ্যকুল এবং শিক্ষককুলের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে এবং তারা সেই বিষয়ে বিতর্কেও অংশ নেয়। তাদের এই অসম মতামত থেকেই এক সুবিদিত আপেক্ষিকতা বেরিয়ে আসে, যা অবশ্যই নিরপেক্ষ অবস্থায় নেই, তথাপি এইসব স্থিরীকৃত ধারণা অথবা প্রামাণিক আস্থার মধ্য দিয়েই ঘৃণিত যুদ্ধ আসে।
আমরা যতদূর পর্যন্ত চিন্তা করতে পারি ততদূর পর্যন্ত শিক্ষিত না হওয়ার কারণেই বলা যায় আমরা বিদ্যালয়প্রাপ্ত শিক্ষার বিরাট পরীক্ষা-নিরীক্ষার সূচনামাত্র। আমরা যন্ত্রপাতি তৈরি করলেও পদ্ধতি বা টেকনিকের ব্যাপারে এখনও প্রাচীনপন্থী। আমাদের ধারণায় শিক্ষা হচ্ছে একটা শরীরের মধ্যে কিছু নির্ধারিত জ্ঞান চালনা করা যখন কিনা এবং প্রতি পদক্ষেপে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা অত্যন্ত জরুরী। বিমূর্ততার ব্যবহার তাদের কাছে সারাংশ রূপে থাকে, কিন্তু যুক্তিপ্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন চলমান অভিজ্ঞতার ধারাবিবরণী। আমরা যখন পাণ্ডিত্যকে সঙ্গে নিয়ে বিপদের মধ্যে অবস্থান করছি, সেই পরিস্থিতিতে মধ্যযুগীয় দর্শন প্রয়োগিক চিন্তনের মডেল হতে পারে।
এইরকম ভাবে শুরু করে বার্ট্রান্ড রাসেল দৈবনির্দিষ্ট অজ্ঞেয়বাদ অতিক্রম করলেন। তিনি দেখলেন খ্রীষ্টীয়বাদের মধ্যে এমন অনেক কিছু রয়েছে যাকে গণিতের শব্দগুচ্ছ দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাই তিনি বাধ্য হলেন ‘নৈতিক সংকেত’ ব্যতিরেকে সব কিছু পরিত্যাগ করতে। তিনি অত্যন্ত অবজ্ঞার সাথে এটাও জানালেন যে সভ্যতা যা কিনা খ্রীষ্টীয়বাদকেও মানে না তা মানুষকে নির্যাতিতই করছে, তাই যারা এর পৃষ্ঠপোষক তাদের কারারুদ্ধ করার পক্ষে সমর্থন জানালেন তিনি। এই পরস্পর বিরোধী অসংগত বিশ্বে তিনি কোন ঈশ্বর খুঁজে পাননি। তিনি তাঁর দর্শনের মধ্য দিয়ে স্পেনসারকে অনুসরণ করেন এবং ব্যক্তি ও জাতির সর্বশেষে পরাজয় সম্পর্কে স্টোয়িকদের সহিষ্ণুতা বর্ণনা করার জন্য জেগে ওঠেন। আমরা সাধারণত অভিযোজন এবং উন্নতি নিয়ে কথা বলি, এর মধ্যে উন্নতি এক দাম্ভিক শব্দ এবং অভিযোজন যার অর্ধেক হচ্ছে ঘটনাসমূহের এক অনৈতিক চক্র, তার পরিসমাপ্তি ঘটে তরলীকরণ অথবা মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে। জৈব জীবন যে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে প্রোটোজোয়া থেকে দার্শনিক–এইভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে এবং সন্দেহাতীত ভাবেই এই উন্নতি আমাদের অগ্রিম পাওনা। দুর্ভাগ্যবশত এই আশ্বাস একজন দার্শনিকের, একটি প্রোটোজোয়ার নয়। একজন মুক্ত মানুষ কখনওই শিশুবৎ আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ঈশ্বরে আরোপিত মনুষ্যত্বের মাঝে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারে না। তাকে নিজেই নিজের প্রেরণাকে ধরে রাখতে হয় এবং সাহসী হতে বাধ্য হতে হয় এটা মেনে নিয়েই যে একদিন তার মৃত্যু ঘটবে, বস্তুত যা সমস্ত কিছুরই নিয়তি। তথাপি সে আত্মসমর্পণ করে না, যদি সে জিততে না-ও পারে তবুও সে অন্তত লড়াইটাকে উপভোগ করতে পারে। আপন জ্ঞানের দ্বারা পূর্বেই সে জানতে পারে অন্ধ শক্তি গুলি অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সেই শক্তিই তাকে ধ্বংস করবে। তাঁর পুজো বা শ্রদ্ধা কখনই এই বর্বর শক্তিগুলোর দিকে যাবে না যদি না লক্ষ্যহীন অধ্যবসায় তাকে জয় করে নেয়, ধ্বংস করে সমস্ত ঘরবাড়ি ও সভ্যতা আর সৃষ্টিশীল শক্তিগুলি সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যায় এবং কয়েক শতাব্দীর জন্য জেগে ওঠে ক্ষোদিত ও চিত্রিত বস্তুগুলির দুর্বল সৌন্দর্য ও পার্থেনন-এর গরিমাময় ধ্বংস বুকে নিয়ে।
এটাই ছিল যুদ্ধের প্রতি বার্ট্রান্ড রাসেলের দর্শন।
বার্ট্রান্ড রাসেল যিনি সব কিছু ভুলে ছিলেন তর্কবিদ্যা, গণিত ও জ্ঞানবিদ্যার ভারে, হঠাত্র এক মুক্ত শিখার মতন জেগে উঠলেন এবং সমগ্র বিশ্ব চমকিত হয়ে দেখল এই রোগ-ফ্যাকাশে অধ্যাপক একজন অসীম সাহসী মানুষ এবং প্রগাঢ় মানবতাপ্রেমী। তাঁর নিজের সূত্রের অবকাশের মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হলেন এই মেধাবী মানুষটি। প্রকাশিত হলেন তার দেশের মর্যাদাপূর্ণ রাজনীতিজ্ঞ গোষ্ঠীর মধ্যে এক বাদানুবাদপূর্ণ আলোচনা তা হওয়া উচিত মনের বিজ্ঞানসম্মত উন্নতিসাধন। অজ্ঞানী লোকের সঙ্গে জ্ঞানী লোকের পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যটি হল তার হঠকারিতা এবং নিজের মতামতকে একদম সঠিক ভাবা, অপরপক্ষে একজন বিজ্ঞানী অনেকবার ভাবনাচিন্তার পর তবেই কোন কিছু গ্রহণ (বিশ্বাস) করে এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের পরই কোন কিছু সম্পর্কে নিজের মতামত ব্যক্ত করে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির ব্যাপকতর ব্যবহার আমাদের সেই শিক্ষাসংক্রান্ত বিবেককেই বিস্তৃতি প্রদান করে এবং তা তাকেই বিশ্বোস করে যার প্রমাণ আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে এবং সবসময় প্রস্তুত থাকে এটা মেনে নিতে, যে-কোন মুহূর্তে তা ভুল প্রমাণিত হতে পারে। এই পদ্ধতিগুলির মধ্য দিয়েই শিক্ষা প্রমাণ করতে পারে যে তা আমাদের অসুস্থতাগুলি সারাতে সক্ষম এবং আরো পারে আমাদের সন্তানসন্ততিদের পরবর্তী প্রজন্মকে নতুন মানব মানবীতে পরিণত করে নতুন বিশ্বের সামনে নিয়ে আসতে পারে। আমাদের চরিত্রের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যটি হল অত্যন্ত নমনীয়–এটা বিশ্বাসের দ্বারা, পার্থিব পরিস্থিতি, সামাজিক পরিস্থিতি এবং প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা মতামতকে পরিবর্তিত করে উচ্চ ধারণায়, শিল্পকে স্থান দেয় সম্পদের উপরে, ঠিক রেনেসাঁসের দিনগুলোর মতোই যা কিছু সৃজনশীল তার উন্নতিসাধন এবং আবেগ যা আমাদের অধিকারবোধকে কেন্দ্র করে রয়েছে তাকে প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে ও সংকল্পের দ্বারা তাকে পরিচালিত করে। এটা হচ্ছে সৃষ্টির সূত্র, যার ভাবী অনুসিদ্ধান্তগুলি একটি নতুন ও প্রাকৃতিক নৈতিকতার দুটি মহান অনুশাসন। যার প্রথমটি হচ্ছে ভক্তি বা মর্যাদার সূত্র–এটা হচ্ছে ‘ব্যক্তি ও সমষ্টির যতদূর সম্ভব উন্নতিসাধন’ এবং দ্বিতীয়টি (পরধর্ম) সহিষ্ণুতার সূত্র ‘একজন ব্যক্তি বা একটি সমষ্টির উন্নতি অন্যের সাপেক্ষে অত্যন্ত ক্ষুদ্র একটি বিষয়।’ প্রণীত আইনসমূহ হচ্ছে অর্থনৈতিক লোভ এবং বিশ্বজনীন নির্দয়তা থেকে পরিত্রাণের একটা উপায়। মানুষ জীবনের অন্য সকল ধারণাগুলির উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে সমর্থ হয়েছে। তখনই সে তা ব্যবহার করেছে বুদ্ধিমানের মতন এবং শিখতে পেরেছে কিভাবে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ এবং সংরক্ষণ করবে। আমাদের স্কুলগুলি হচ্ছে সুখ-রাজ্য খোলার গুপ্ত মন্ত্র বিশেষ। এই সমস্ত কিছুই নিশ্চিতভাবে আশাব্যঞ্জক এক ধারণা। রাসেল তার সামাজিক দর্শনের মধ্যে অতীন্দ্রিয়তা এবং আবেগকে স্থান দিয়েছিলেন যা সম্পর্কে তিনি দৃঢ় মনোভাব পোষণ করতেন এবং এইভাবেই অধিবিদ্যা এবং ধর্মের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক তত্ত্বে গণিত এবং তর্কবিদ্যাকে ব্যবহার করেননি। পূর্বতসিদ্ধ প্রণালীর (A priori) প্রতি তাঁর প্রবণতা, পূর্ণতা জীবনের চেয়ে মূল্যবান এই ধারণার প্রতি ভালবাসা তাকে এক সুন্দর ধারণার দিকে নিয়ে যায় যা এই গদ্যময় পৃথিবীকে তার সমস্যাসঙ্কুল জীবনের সাধ্যমত পথপ্রদর্শনের চেয়ে বরং একটুকরো কবিত্ব প্রদান করে। এটা অত্যন্ত আনন্দজনক বিষয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সমাজ যেখানে শিল্প সম্পদের তুলনায় বেশি মূল্যবান, তার মূল্যায়ন করাটা রাষ্ট্রের উত্থান-পতনের ন্যায় দীর্ঘ বিষয় । শিল্প হচ্ছে এমন একটি বিষয় যা সম্পদের মধ্যে থেকে উৎপন্ন হতে পারে, কিন্তু কখনই সম্পদের প্রতিভূ হতে পারে না। যেমন–প্রথমে মেদিচি এবং পরে মাইকেল-অ্যাঞ্জেলো ।
কিন্তু রাসেলের মেধাবী দর্শন থেকে কিছু দোষ ত্রুটি খুঁজে বের করে আনাটা কোন জরুরী বিষয় নয়, যখন কিনা তার নিজের অভিজ্ঞতাই ছিল তার অন্যতম কঠোর সমালোচক। রাশিয়াতে তিনি অনুভব করেছিলেন একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠন করার প্রয়াস। তিনি এটা আবিষ্কার করে অত্যন্ত নিরাশ হয়েছিলেন যে রাশিয়ার সরকার গণতন্ত্রের পরিমাপের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি নিতে পারবে না, যা তাঁর কাছে ছিল মুক্ত দর্পণের স্বতঃসিদ্ধ সত্য স্বরূপ। তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন মানুষের বক্তব্য ও সংবাদমাধ্যমের প্রতি আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একচেটিয়া কারবারের প্রচারের সকল পথগুলির যথাযথ ব্যবহার লক্ষ্য করে । তিনি এটা দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন যে নিরক্ষরতার এই তিমিরে, ভর্তুকিপ্রাপ্ত সংবাদপত্রের যুগে, সত্যলাভের প্রতিবন্ধকতার এই ক্ষেত্রে রাশিয়ার জনগণ পড়তে সক্ষম। জমির জাতীয়করণের ফলে ব্যক্তিমালিকদের অধিকার খর্ব হওয়ায় তিনি অত্যন্ত আহত হয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে আজকের মানুষও যথাযথ কার্য করছে না কারণ সে সম্পূর্ণ ক্ষেত্রগুলির উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারেনি। রাসেলের মতে, রাশিয়া ধীরে ধীরে এক বৃহত্তর ফ্রান্সে পরিবর্তিত হচ্ছে যা ক্ষুদ্র কৃষক সম্বলিত এক বৃহৎ দেশ যেখানে প্রাচীন সামন্তপ্রথা উধাও।
তিনি যখন একবছরের জন্য চীনে গিয়েছিলেন অধ্যাপনা করতে, তখন সম্ভবত অধিকাংশ সময় তিনি ঘরেই কাটাতেন। সেখানে তখন যান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যবহার কম, অপেক্ষাকৃত মন্দ ছন্দ। একজন যখন ধীরেসুস্থে কোন কারণ অনুসন্ধানে রত থাকত তখন সেই কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার জীবন একটা জায়গায় স্থির হয়ে থাকত। তিনি অনুভব করলেন ইউরোপ হচ্ছে এক বৃহত্তর মহাদেশের প্রাচীনতর প্রতিভূ এবং সম্ভবত প্রগাঢ়তর সংস্কৃতি। এইসব তত্ত্ব এবং অনুসিদ্ধান্তগুলি এক বিনীত আপেক্ষিকতায় দ্রবীভূত হয়ে দেশের সম্মুখে আনীত হয় একসময় দেখা গেল তার লেখা থেকে তাঁর System বা ব্যবস্থা পৃথক হয়ে পড়ছে। এটা অবশ্যই কঠিন বিষয়– একজন ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকা, সেখান থেকে ভারত হয়ে চীনে গেল অথচ তার সামাজিক দর্শন অপরিবর্তিত থেকে গেল। এই বিশ্ব তাঁকে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিল যে বিশ্ব তার সূত্রের পক্ষে বেশ বড় এবং তার হৃদয়ের ইচ্ছানুসারে পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত বৃহৎ এবং ভারী। কেননা এই পৃথিবীতে রয়েছে আরো অনেক অনেক হৃদয় এবং তাদের ভিন্ন ভিন্ন। ইচ্ছাসকল। এখন একজন তাঁকে দেখলে দেখতে পাবে যে রাসেল একজন বয়স্ক জ্ঞানী মানুষ যিনি কালস্রোতে শান্ত, স্নিগ্ধ, মৌন।
রাসেল ছিলেন কোমলীয় মনের মানুষ, সুগভীরতম অধিবিদ্যা এবং অতি সূক্ষ্ম গাণিতিক ব্যাখ্যা নিরূপণে সক্ষম, এতদসত্ত্বেও কথা বলেন অত্যন্ত সহজ সরল স্পষ্ট ভাষায় যা কিনা তাদের ক্ষেত্রেই সম্ভব যারা অকপট। চিন্তার প্রতি তিনি এমন আকৃষ্ট যা স্বাভাবিকভাবেই অনুভবের স্রোতকে শুকিয়ে ফেলে। তিনি উষ্ণতা ও সহানুভূতির দ্বারা আলোকিত এবং মানবতার পক্ষে অতীন্দ্রিয় কোমলতায় পরিপূর্ণ একজন মানুষ। তিনি কখনই একজন রাজসভাসদ বা তোষামুদে ছিলেন না, ছিলেন একজন জ্ঞানী মেধাবী ভদ্রলোক এবং অন্য অনেকের চেয়ে একজন উন্নততর খ্রীষ্টান যিনি সত্য বলতেন। আনন্দের সাথে এটা বলা যায় তিনি এখনও একজন হৃদয়বান বলিষ্ঠ মানুষ, জীবনের শিখা যার মধ্যে উজ্জ্বলভাবে দীপ্যমান। তিনি জানেন পরবর্তী শতাব্দী তাঁকে দেখবে বিজ্ঞতার রাজ্যে মোহ মুক্তিকরণ থেকে উদ্ভূত একজন মানুষ হিসাবে এবং তাঁর নাম লেখা থাকবে শান্ত নির্মল ভ্রাতৃত্বের সর্বোচ্চ শিখরে।
[email protected]
অনুবাদকের নাম উল্লেখ করা উচিৎ
Bangla Library
ভুল হয়ে গেছে। অত্যন্ত দুঃখিত। এখন উল্লেখ করে দিচ্ছি।