কিশোর কর্নেল সমগ্র ১ – সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
প্রথম প্রকাশ – নভেম্বর ২০০৫, অগ্রহায়ণ ১৪১২
কিছু কথা
কর্নেলের রহস্য কাহিনি লিখতে শুরু করেছিলাম বড়দের জন্য। তখন আমি আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। হঠাৎ তারা আনন্দমেলা নামে ছোটদের একটি পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করলেন। সাইজ ছিল চটি বইয়ের মতো। শ্রদ্ধেয় কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি একদিন আমায় ফরমাশ করলেন, ছোটদের জন্য একটা গল্প লিখে দে। ততদিনে আমার মাথায় কর্নেল ঢুকে বসে আছেন। নীরেনদা মুখে কিছু না-বললেও পত্রিকার সাইজ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম গল্পটা বড় করা চলবে না। লিখতে বসে কলম দিয়ে বেরিয়ে এলেন কর্নেল নীলাদ্রি সরকার। গল্পের নাম ছিল টুপির কারচুপি। ওই টুকু গল্পে জমজমাট রহস্য আর কর্নেলকে নিয়ে প্রায় একটা অসাধ্য সাধন করেছিলাম। মনে পড়ছে না কোনও একটা হিন্দি পত্রিকায় সেই গল্পটি টোপি কী করতুত নামে প্রকাশিত হয়েছিল। উৎসাহ গেল বেড়ে। এর পর কর্নেল আমার ছোটদের জন্য লেখা অনেক গল্পেই। ক্রমে জাঁকিয়ে বসলেন। শুকতারা, চিল্টেন্স ডিটেকটিভ, পক্ষীরাজ ইত্যাদি পত্রিকায় ক্রমশ কর্নেল ছোটদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। একবার কর্নেলের ফোন নম্বর দিতে আমার নিজের ফোন নম্বর দিয়ে প্রচণ্ড ঝামেলায় পড়েছিলাম। যখন তখন ছোটরা টেলিফোনে আমাকে অতিষ্ঠ করে তুলল। তারা সবাই রহস্যের কথা কর্নেলকে জানাতে চায়। আমার ফোন নম্বর অনেক তদ্বিরে বদল করে রেহাই পেয়েছিলাম এ বিপদ থেকে। এর পরে এমন একটা ঘটনা ঘটল যে ছোটদের জন্য লেখায় কর্নেল অনিবার্য হয়ে উঠলেন। ততদিনে আনন্দমেলার সাইজ গেছে বেড়ে। দুসংখ্যায় একটা করে উপন্যাস ছাপা হচ্ছে। নীরেনদার ফরমাশে একটা উপন্যাস লিখতে হল। তারপর একদিন নীরেনদা জানালেন, সত্যজিৎ রায় নাকি আমার লেখার দারুণ ভক্ত হয়ে উঠেছেন। প্রথমে কথাটা বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু কিছুদিন পরে স্বয়ং সত্যজিৎ রায়ের লেখা একটি চিঠি আমার কাছে পৌঁছল। তিনি আমার লেখার প্রশংসা করে শারদীয় সন্দেশ-এর জন্য গল্প চেয়েছেন। কপাল ঠুকে লিখে ফেললাম কাক ও ছড়ি রহস্য। শারদীয় সন্দেশ হাতে পেয়ে দেখি সত্যজিৎ রায় নিজেই গল্পের ছবি এঁকেছেন এবং তার ছবিতে কর্নেলকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম।
সত্যি বলতে কী, নীরেনদা এবং সত্যজিৎ রায়ই আমার মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই এই পরিণত বয়সেও ছোটদের জন্য লিখতে হলে কর্নেলই লেখায় এসে যান। এত বছর ধরে ছোটদের জন্য কর্নেলের যত রহস্য কাহিনি লিখেছি, দেজ পাবলিশিং-এর কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে তাকে এক মলাটের মধ্যে আনতে চেয়েছেন। সায় আমারও ছিল প্রবল। বড়দের জন্য লেখাগুলি নিয়ে কর্নেল সমগ্র বারোটি খণ্ড প্রকাশের পর এবার খণ্ডে খণ্ডে ছোটদের হাতে তুলে দিতে চেয়েছি। আমার ভরসা আছে বড়দের মতো ছোটরাও তাদের প্রিয় কর্নেলকে একত্রে পেয়ে খুশি হবে।
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
Leave a Reply