কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়
(এক ডজন কিশোর রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি)
সম্পাদনা – সমুদ্র বসু
প্রথম প্রকাশ – জুন ২০২২
প্রচ্ছদ – সুদীপ্ত দত্ত
প্রকাশক – শংকর মণ্ডল
.
উৎসর্গ
সমকালীন শিশু-কিশোর সাহিত্যে অন্যতম শক্তিশালী কলমধারী
শ্রীমতী দীপান্বিতা রায়কে
.
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্যে হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় একটি উজ্জ্বল নাম। কিশোর সাহিত্যের ধারাকে বিভিন্ন বিচিত্র ধারার লেখা দিয়ে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। ভৌতিক-অলৌকিক হোক বা রহস্য, অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় লেখা, পাঠকদের আমোদিত করতে কখনো তিনি ব্যর্থ হননি। বলা বাহুল্য আমাদের কিশোরবেলার অনেকটা জুড়ে ছিলেন হরিনারায়ণ। তারপর পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। আনন্দের কথা এই যে, দীর্ঘকাল পরে আজকের দিনেও হরিনারায়ণ পাঠকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে অনেকটাই। কৈশোর পেরিয়ে-আসা আমরা যেমন স্মৃতিচারণার জন্য আজও গল্পগুলো উলটে-পালটে দেখি, তেমনই নতুন পাঠকরাও গোগ্রাসে ওঁর লেখা পড়েন। ওঁর বিভিন্ন ধারার লেখার মধ্যে থেকে শুধুমাত্র কিশোরপাঠ্য রহস্য ও অ্যাডভেঞ্চারগুলিকে নিয়ে দু-মলাটের মধ্যে সাজিয়ে পেশ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন দীপ প্রকাশন।
এই বইতে রয়েছে রহস্য-অ্যাডভেঞ্চার গোত্রের কিশোরপাঠ্য ১২টি কাহিনি। যার মধ্যে রয়েছে গল্প ও উপন্যাস দুইই। বিষয় ও বিচিত্রতায় স্বতন্ত্র এই এক ডজন কাহিনি। যেমন—
‘অরণ্য বিভীষিকা’তে রয়েছে কালু সর্দার নামে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতের কাহিনি। আজ যেখানে দুর্গাপুরের কারখানা অনেক বছর আগে সেখানে ছিল গভীর অরণ্য। সেই পথ দিয়ে গেলে টাকাপয়সা আর প্রাণ দুই খোয়াতে হত তাঁকে। এই নিয়েই রোমহর্ষক কাহিনি, যা পড়লে ভয় পাবে সকলেই।
‘ভয়ের মুখোশ’-এ রয়েছে দুই স্কুল ছাত্র দিপু ও তপুর গল্প। বাড়ি থেকে পালিয়ে কীভাবে তারা দুষ্ট লোকেদের পাল্লায় পড়েছিল আর কীভাবেই বা তারা আবার তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসে রয়েছে সেই বিচিত্র কাহিনি।
‘কবন্ধ বিগ্রহের কাহিনি’ হল রতনগড়ের মন্দিরের দুটি মূর্তি নিখোঁজ এবং সেগুলি উদ্ধারের গল্প।
‘পাথরের চোখ’-এ রয়েছেন মহিলা ডিটেকটিভ বৈশাখী ব্যানার্জি। একজন ভদ্রলোকের ব্রোঞ্জের তৈরি ময়ূরের চোখের দামি পাথর চুরি যাওয়ায় তিনি বৈশাখীর কাছে আসেন সাহায্যের জন্য। ময়ূরের চোখের পাথর সরিয়ে ঝুটো কাচ বসানোর পিছনে আসল কালপ্রিট কে? কীভাবেই বা সেই রহস্য সমাধান করবেন ডিটেকটিভ বৈশাখী, জানার জন্য পড়তে হবে এই কাহিনি।
‘বোলতার হুল’-এ রয়েছেন ডিটেকটিভ পারিজাত বক্সী। আর রয়েছে এক দুর্ধর্ষ অপরাধী বোলতা। টাকার জন্য নানারকম দুষ্কর্ম করত সে, তেমনই টাকার জন্য সে লালিকে কিডন্যাপ করে। বিপদে পড়ে পরিবারের লোকেরা পারিজাত বক্সীর শরণাপন্ন হয়। তারপর লালি উদ্ধার নিয়ে রয়েছে পারিজাত এবং বোলতার দ্বৈরথের কাহিনি।
‘গুপ্তধনের সন্ধান’ গল্পে রয়েছে ছয় অন্তরঙ্গ বান্ধবী—শ্রাবণী, অদিতি, মধুছন্দা,সমাপ্তি, মিতালি ও জয়শ্রী। একবার তারা ভাঙা বাড়ির মধ্যে গুপ্তধন আছে শুনে, সেই গুপ্তধনের সন্ধানে পাড়ি দেয়। তারপর কী হল, উদ্ধার হল কি গুপ্তধন? জানতে হলে পড়তে হবে এই গল্প।
‘কাঠের পা’ গল্পে দেখতে পাই কীভাবে আফজলের কাছ থেকে পারিজাত আসল পাথর পেয়েছিলেন।
‘অমানুষিক’ গল্প হল ডিটেকটিভ হৈমন্তীর রহস্যভেদ নিয়ে। তেজেশবাবুর খুনের তদারক করতে তাঁর বাড়ি এসে হৈমন্তীর মনে হয়েছিল ভেন্টিলেটর দিয়ে কোনও জন্তুকে নামানো হয়েছিল। তারপর অনুসন্ধান করে সে পৌঁছোয় রূপচাঁদের কাছে। তারপর উঠে আসতে থাকে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য। হিংসা-প্রতিহিংসা-রহস্যে ঘেরা টানটান এই গল্প পাঠকদের আকৃষ্ট করবে সন্দেহ নেই।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী উপন্যাস এবং গল্পগুলিকে তাদের প্রথম প্রকাশকাল অনুযায়ী সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বেশ কিছু কাহিনির প্রথম প্রকাশ সম্পর্কে সঠিক প্রামাণ্য তথ্য না-পাওয়ার কারণে সেগুলি দেওয়া সম্ভবপর হল না। আগামী দিনে কেউ সেগুলির বিষয়ে কোনও প্রামাণ্য তথ্য পেয়ে প্রকাশককে জানালে আগামী সংস্করণে তা অবশ্যই উল্লেখ করা হবে। আশা করি ১২টি কাহিনিসমৃদ্ধ এই বই পাঠকদের আনন্দ দেবে। এই সংকলনটির জন্য আমি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা শ্রীমতী তপতীদেবীকে যিনি এটি প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন দীপ প্রকাশনকে। আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই দীপ প্রকাশনের প্রকাশক শ্রী দীপ্তাংশু মণ্ডলকে আমার উপর ভরসা রেখে এই কঠিন কাজের গুরুদায়িত্ব তুলে দেওয়ার জন্য। আমি আমার বাবা শ্রীসমরকুমার বসু ও মা শ্রীমতী সংযুক্তা বসুর কাছে ঋণী থাকব কারণ ছোটো থেকেই বই নিয়ে আমার উন্মাদনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য ও ছোটোবেলার কিনে-দেওয়া পত্রিকাগুলি আজ আমার কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে দাঁড়িয়েছে যা না থাকলে এই ধরনের কাজ সম্ভবপর ছিল না। আশা রাখছি এই সংকলনটি আগামী দিনে সমস্ত পাঠক ও গবেষকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে। এই সংকলনের প্রতিটি কাহিনিকে আরেকবার খুঁজে বের করে প্রথম প্রকাশকাল অনুযায়ী সাজিয়ে দিয়েছে আমার বন্ধু অমিতাভ চক্রবর্তী। ওর ভূমিকা সমস্ত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার ঊর্ধ্বে। সেই সঙ্গে বাছাই করতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন প্রকাশক দীপ্তাংশু মণ্ডল এবং সিইও সুকন্যা মণ্ডল। চিফ এডিটর গৌরব অধিকারী এই কর্মকাণ্ডের এক মূল শরিক— যাকে ধন্যবাদ না দিলে কাজটা অসম্পূর্ণ থাকবে, তাই তাকে বিশেষ ধন্যবাদ। এছাড়া রাজর্ষি সরকার ও দেবাঞ্জন দেবকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আমাকে বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে সবসময় উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
আমার গুরুদেব ঠাকুর শ্রীশ্রীজিতেন্দ্রনাথের শ্রীচরণে শতকোটি প্রণাম।
সমুদ্র বসু
২৬ জানুয়ারি ২০২২
(প্রজাতন্ত্র দিবস)
বড়িশা, কলকাতা
Leave a Reply