কাউরীবুড়ির মন্দির – অভীক সরকার
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা, জানুয়ারি ২০২১, মাঘ ১৪২৭
উৎসর্গ
যিনি প্রথম আমাকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন৷
আমার বড়মা স্বর্গতা মহামায়া সরকারের স্মৃতিতে৷
.
ভূমিকা
ভূমিকায় একটি কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে প্রথমে আমি উপন্যাস হিসেবে নয়, চেয়েছিলাম একটি বড় গল্প লিখতে৷
দুহাজার উনিশের অক্টোবর নাগাদ এক প্রসন্ন প্রভাতে দেব সাহিত্য কুটিরের কর্ণধার রূপাদি আমাকে ফোন করে বললেন পৌষ সংখ্যার জন্য একটি বড় গল্প লিখে দিতে৷ গরীবের কপালে এসব সৌভাগ্য কালেভদ্রে জোটে৷ আমিও কৃতজ্ঞথরথর চিত্তে তৎক্ষণাৎ ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে ফেললুম।
কিন্তু ম্যান প্রপোজেস, গড ডিজপোজেস বলে একটা দামি কথা আছে৷ গল্পটা বেশ জমিয়ে সূত্রপাত করতে গিয়ে দেখি তাতেই শব্দসংখ্যা ছড়িয়ে চৌষট্টি! এরপর যতই এগোই গল্পের ধরতাই মোটামুটি এরিয়াডনের কুখ্যাত সুতোর বলের আকার নিতে থাকে৷ সে জটিল জাল উদ্ধার করতে শেষমেশ থিসিয়াসকে আসতেই হল৷ আবির্ভূত হলেন কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ৷
এখানে বলে রাখা ভালো কাহিনিগঠনের দিক থেকে এই গল্পটি আমার আগমবাগীশ সিরিজের অন্য গল্পগুলির থেকে অনেকটাই আলাদা৷ কোনো প্রাচীন অভিশাপ বা অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো কাহিনি নয়, এই কাহিনির মূল উপজীব্য হল যৌন ঈর্ষা৷ একজন পুরুষের ওপর কামনার অধিকার নিয়ে দুই মানবীর দ্বন্দ্ব৷ তার প্রেক্ষাপটে রয়েছে উত্তর আসামের প্রাচীন জনজাতি দেওরিদের একটি শাখা পাতরগোঁয়্যাদের হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাস, তাদের শিউরে ওঠা ধর্মীয় আচার৷ রয়েছে জঙ্গলের মধ্যে জেগে থাকা এক মন্দির, তাকে ঘিরে থাকা অজস্র মিথ৷
আর রয়েছে সেই মন্দির ঘিরে থাকা কাউরীদের দল৷
এখানে একটি কথা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার যে পাতরগোঁয়্যাদের ইতিহাস সংক্রান্ত অংশটি সম্পূর্ণরূপে আমার কল্পনাপ্রসূত, বাস্তবের সঙ্গে এর দূর দূর অবধি কোনো মিল নেই৷ একই কথা বলা যায় তাদের ধর্মবিশ্বাস সংক্রান্ত ঘটনাবলী নিয়ে৷ পাতরগোঁয়্যারা সত্যিই দেওরিদের একটি হারিয়ে যাওয়া উপজাতি, এই তথ্যটুকু ছাড়া বাকি সমস্ত তথ্যাবলী আমার স্বকপোলকল্পিত, তাকে সঠিক বলে মেনে নিলে তা সত্যের অপলাপ হবে৷
কাহিনিটি শেষ পর্যন্ত একটি পঁয়ত্রিশ হাজার শব্দের উপন্যাস হয়ে দাঁড়ায়, এবং আমার সমস্ত আশঙ্কা অমূলক প্রমাণ করে উপন্যাসটি রূপাদির পছন্দও হয়৷ যেদিন রূপাদি ফোন করে জানালেন যে তাঁরা এটি বই আকারে প্রকাশ করতে চলেছেন, স্বীকার করতে বাধা নেই সেদিন সত্যিই গায়ে কাঁটা দিয়েছিলো৷ জ্ঞান হওয়া ইস্তক যে প্রকাশনীর বই পড়ে আমার বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ার অভ্যেস তৈরি হয়েছে, সেই ঐতিহ্যশালী দেব সাহিত্য কুটির থেকে আমার লেখা বই প্রকাশিত হবে সে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি৷ পূর্বপুরুষদের অসীম সুকৃতি ছাড়া এ সৌভাগ্য সম্ভব নয়৷
আপাতত আমার প্রাককথনের নটে গাছটির মুড়োলো৷ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কোনো লেখা যে মুহূর্তে বই হিসেবে পাঠকের হাতে পৌঁছোয়, সেই মুহূর্ত থেকে তার মালিকানা পাঠকের৷ তিনি পড়েন বলেই লেখক লেখেন, নইলে মিথ্যে হতো সন্ধ্যাতারা ওঠা, মিথ্যে হতো কাননে ফুল ফোটা৷ আশা করি আমার আগের বইগুলির মতো এই উপন্যাসটিকেও পাঠককূল সাদরে গ্রহণ করবেন৷ আপনাদের পাঠপ্রতিক্রিয়ার আশায় রইলাম৷ আপাতত এখানেই বিরতি দিচ্ছি৷ অলমতি বিস্তারেণ, নমস্কার৷
অভীক সরকার
১৬ ডিসেম্বর ২০২০
Leave a Reply