কাঁটায়-কাঁটায় – ১ – প্ৰথম খণ্ড – নারায়ণ সান্যাল
কাঁটায়-কাঁটায় – ১ – প্ৰথম খণ্ড – নারায়ণ সান্যাল
পি. কে. বাসু-কাঁটা সিরিজের গোয়েন্দা কাহিনি
প্রথম প্রকাশ : বইমেলা ১৩৯৭, জানুয়ারি ১৯৯১
প্রচ্ছদ ফটো : বিপুল বসু
.
গোয়েন্দাকাহিনিকে যিনি
উন্নতমানের কথাসাহিত্যে
রূপায়িত করেছেন সেই
জাদুকর সাহিত্যিক
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে
সশ্রদ্ধ তৰ্পণান্তে
.
কৈফিয়ত
কাঁটা-সিরিজ় লেখা শুরু করি সাতের দশকে, নাগচম্পা উপন্যাসটি চিত্রায়িত হবার অব্যবহিত পরে। ওই নাগচম্পা-কাহিনিতেই ব্যারিস্টার পি. কে. বাসুর প্রথম আবির্ভাব। তখন তিনি ছিলেন কনফার্মড-ব্যাচিলার এবং বৃদ্ধ। তিনি উত্তম না অধম এ প্রশ্ন আমার মনে আদৌ জাগেনি। সুধীজন মাত্রেই জানেন চিত্রস্বত্ব বিক্রয় করার সঙ্গে জ্যান্ত-পাঁঠা বিক্রয়ের পার্থক্য নেই। অতঃপর সেই অবোলা জীবটিকে মাথার দিকে কাটা হবে অথবা ল্যাজের দিকে, তা স্থির করার দায়িত্ব চিত্র-পরিচালকের। ‘যদি জানতেম’ ছায়াছবির উদ্বোধনের দিনে ছবি দেখতে গিয়ে জানতে পারলাম যে, পি. কে. বাসু অধম নন, “উত্তম”। ফলে বৃদ্ধ নন, এবং তাঁর স্ত্রী বর্তমান, যদিও পঙ্গু। হুইল-চেয়ারে আসীনা। ব্যাপারটা মেনে নেওয়া ছাড়া আমার আর উপায় রইল না। তাই ‘নাগচম্পা’ হচ্ছে কাঁটা-সিরিজের ট্রায়াল বল—এলেবেলে খেলা।
কাঁটা-সিরিজ লিখতে শুরু করি নিতান্ত খেয়ালবশে। বিষয় থেকে বিষায়ত্তরে যাবার যে প্রবণতা আমার অন্তর্লীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য—বোধকরি তারই তাগিদে। প্রথম কাহিনি ক্রিস্টি-কীর্তি ‘মাউস-ট্র্যাপ’-এর ছায়া-দিয়ে গড়া : “সোনার কাঁটা”। তার কৈফিয়তে প্রসঙ্গত লিখেছিলাম (২.১০.৭৪) :
নাগচম্পা উপন্যাসে ঐ বাসু-সাহেব চরিত্রটাকে আমি রূপায়িত করেছিলাম একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বোমকেশ বক্সী’ চরিত্রটিকে সৃষ্টি করেছিলেন স্যার আর্থার কনান ডয়েল-এর বিশ্ববিশ্রুত গোয়েন্দা শার্লক হোম্স-এর ছায়া দিয়ে। শার্লক হোম্স-এর সহকারী ডাক্তার ওয়াটসনের প্রতিরূপ-রূপে অজিতবাবুকেও পেয়েছে বাংলা সাহিত্য। গোয়েন্দা গল্প যে চপল লঘু-সাহিত্য নয় এটা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন শরদিন্দু। তাঁর সাহিত্য আমার শিল্প-প্রচেষ্টাকে নানাভাবে, নানা যুগে প্রভাবিত করেছে। তাঁর ঝিন্দের বন্দীতে বিদেশি কাহিনিকে খোল নলচে পালটে বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টায় আমি এক সময়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার ফলশ্রুতি আমার মহাকালের মন্দির। শুধু ভাব নয়, সেখানে শরদিন্দুর ভাষাও আমি অনুসরণ করবার চেষ্টা করেছি। আরও পরিণত বয়সে লিখেছি আবার যদি ইচ্ছা কর—সেখানে ভাষার বন্ধন আমি কাটিয়ে উঠেছিলাম।
এবারও শরদিন্দুবাবুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি একটি বিদেশি গোয়েন্দাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছি বাংলা সাহিত্যে—যে চরিত্রটি স্ট্যানলি গার্ডনার -সৃষ্ট চরিত্র প্যেরী মেসন, ‘বার-অ্যাট-ল’। গার্ডনারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, তাঁর গোয়ন্দা-কাহিনির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রহস্যমোচন হয়েছে যবনিকাপাত-মুহূর্তে, আদালতের কক্ষে, ওকালতি-প্যাচে।
ব্যোমকেশ চিরতরে অবসর নিয়েছেন। অজিতবাবুর কলম আজ স্তব্ধ। বাংলা সাহিত্যের একটা দিক ফাঁকা হয়ে গেল। সেই গুরুতর অভাবটা পূরণ করতে লব্ধ প্রতিষ্ঠিত এবং শক্তিমান কোনও সাহিত্যিক অগ্রসর হয়ে আসছেন না। কিরীটী, পরাশর বর্মা প্রভৃতিরাও এখন আত্মগোপন করে রয়েছেন। যেন মনে হচ্ছে এই দশকের বাংলাদেশে খুন-জখম-রাহাজানি সব বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রিমিনালরা বুঝি সব কারাপ্রাচীরের ওপারে—মিসায় আটক পড়েছে!
ফলে এই অক্ষম প্রচেষ্টা—’পি. কে. বাসু. সিরিজ’ এর অবতারণা। এই সিরিজে নাগচম্পাকে প্রথম. কাহিনি হিসেবে ধরে নিলে বর্তমান কাহিনি হচ্ছে দ্বিতীয় কাহিনি।
পি. কে. বাসু যদি পাঠকদের মনোহরণে সমর্থ হন তাহলে তাঁর পরবর্তী কিছু কীর্তিকাহিনি শোনানোর বাসনা রইল।
শরদিন্দু আমাকে কী প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত করেছিলেন—অন্তত গোয়েন্দা কাহিনি ও ঐতিহাসিক কাহিনির ক্ষেত্রে—তা বোঝা যাবে আমার এই গোয়েন্দা সিরিজের প্রথম বইটির উৎসর্গ-পত্র থেকে। “কাঁটায়-কাঁটায়” সংকলন-গ্রন্থ প্রকাশের পরে প্রতিটি কাহিনি হয়তো পৃথকভাবে আর পুনঃপ্রকাশিত হবে না। তাই এই সিরিজের প্রথম সংকলনগ্রন্থে প্রথম কাহিনির উৎসর্গপত্রটি এখানে পুনঃপ্রকাশিত করা বুদ্ধিমানের কাজ :
উৎসর্গ
পরম শ্রদ্ধেয় অগ্রজপ্রতিম
ব্যোমকেশ বক্সী মশাই,
তোমার কীর্তি কাহিনি আমরা রুদ্ধ নিঃশ্বাসে জেনেছি কয়েক দশক ধরে। গোয়েন্দা-কাহিনিকে তুমি ক্লাসিক্যাল সাহিত্যের সমপর্যায়ে উন্নীত করেছিলে। মৈনাককে তুমি মগ্ন হয়ে থাকতে দাওনি, দুর্গের রহস্য তুমি ভেদ করেছিলে, চিড়িয়াখানার কলকাকলীতে তুমি বিভ্রান্ত হওনি, শজারুর কাঁটা কার হৃৎপিণ্ডের কোন দিকে বিদ্ধ হচ্ছে তা একমাত্র তোমারই নজরে পড়েছিল। তুমি গোয়েন্দা নও, তুমি ছিলে সত্যান্বেষী! “অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়াণে তুমি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেলে চিরদিনের জন্য! তাই তোমাকেই স্মরণ করছি সর্বাগ্রে।
.
গ্রন্থকারের তরফে
পি. কে. বাসু, বার-এ্যাট-ল
২।১০।১৯৭৪
প্রসঙ্গান্তরে যাবার আগে একটি ব্যক্তিগত বেদনার কথা জানাই। ব্যোমকেশ বক্সী মশাই তাঁর জীবনের শেষ ‘কেস’টার সমাধান করে যেতে পারেননি। শরদিন্দু অমনিবাসের দ্বিতীয় খণ্ডের ভূমিকায় লেখকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শ্রদ্ধেয় প্রতুলচন্দ্র গুপ্ত লিখেছিলেন :
1970 সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে শরদিন্দুবাবু কলকাতায় এসে মাসখানেক ছিলেন। পুনায় ফিরে গিয়ে তিনি “বিশুপাল বধ” শুরু করেছিলেন। গল্পটি তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। পড়লে মনে হয় প্রায় অর্ধেক লেখা বাকি আছে। উত্তর কলকাতার একটি থিয়েটারের স্টেজে একজন অভিনেতার খুনের রহস্যভেদ করবার চেষ্টা কেবল আরম্ভ হয়েছে। এই গল্পে আমার নামের সঙ্গে মিল, শরদিন্দু বাবু হয়তো বলতেন স্বভাবের সঙ্গেও মিল, একটি চরিত্র আছে। সে ব্যোমকেশকে থিয়েটার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছে এবং প্রসন্নচিত্তে গড়িয়াহাট মার্কেট থেকে সত্যবতীর বাজারের ব্যাগ নিজের হাতে বয়ে নিয়ে আসছে। গল্পটির পাণ্ডুলিপি লেখকের জীবদ্দশায় দেখিনি। তবে তাঁর মুখে শুনেছিলাম তিনি আমার নাম ব্যবহার করেছেন। আমার ক্ষীণ আপত্তি টেঁকেনি। এই গল্পে প্রতুলবাবু নামের ব্যক্তিটিকে পুলিসের জেরায় নাজেহাল হতে হবে। কিন্তু গল্পটি ততদূর এগোয়নি। থিয়েটারের প্রম্পটার কালীকিঙ্কর দাসের জবানবন্দি আরম্ভ হয়েছে মাত্র। থিয়েটারের লোকের জবানবন্দি শেষ হলে অন্য সবার পালা আসত। বঙ্কিমচন্দ্র একটি অসমাপ্ত ভূতের গল্প রেখে গিয়েছিলেন, তার নাম নিশীথ-রাক্ষসীর কাহিনি। গল্পটির সূত্রপাত কেবল আরম্ভ হয়েছিল। বঙ্কিমচন্দ্রের মৃত্যুর অনেক পরে কোনও মাসিক পত্রিকার সম্পাদক সেটিকে অন্য একজনকে দিয়ে সমাপ্তি ঘটিয়ে প্রকাশ করেছিলেন। শরদিন্দুবাবুর প্রকাশক সে চেষ্টা করেননি। বোধহয় ভালই করেছেন।
অগ্রজপ্রতিম মহাপণ্ডিতের সঙ্গে আমি একমত হতে পারিনি। আমি মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছিলাম অসহায় ব্যোমকেশ বক্সী-মশাইকে! কুরুক্ষেত্র-রণাঙ্গনে শরসজ্জায় শায়িত পিতামহ ভীষ্মের মতো; বরং বলা উচিত ‘জকি’র দোষে শেষ লেংথে হুমড়ি খেয়ে- পড়া চির-অপারজেয় রেসের ঘোড়ার মতো। ওদিকে অজিতের চিতা জ্বলছে, এদিকে ব্যোমকেশ সব্যসাচীর শেষাবস্থায়—গাণ্ডীব তুলবার ক্ষমতাও নেই তাঁর, অথচ অসহায় গোয়েন্দার চোখের সামনে যাদবকুলবধূ অপহরণকারীর অট্টহাসি হাসছে বিশুপালের হত্যাকারী। এক রবিবাসরীয় আসলে কথাটা বলেছিলাম শ্রদ্ধেয় প্রতুলবাবুকে। উনি সহাস্যে প্রতিপ্রশ্ন করেছিলেন, আপনি গল্পটা কীভাবে শেষ হত তা আন্দাজ করতে পারেন?
জবাব দিইনি। অর্থাৎ দিয়েছিলাম—লিখিত জবাব—পরের অধিবেশনে। পরে বিশুপাল বধের শেষাংশটি উনি আমাকে প্রত্যর্পণ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। প্রতুলবাবুর সবকয়টি শর্তই শেষাংশে মানা হয়েছিল—অজিতের গাড়ি হয়েছিল, সে-গাড়িতেই তার মরদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়, ‘প্রতুল’ নামধারী ভালমানুষ অধ্যাপকটিকে অহেতুক পুলিশের জেরায় পড়তে হয়। আর অন্তিমে বিশুপালের হত্যাকারীর হাতে হাতকড়া পড়ে।
ঘটনাচক্রে একথা বন্ধুবর সমরেশ বসুর কর্ণগোচর হয়। সে আমার কাছ থেকে পাণ্ডুলিপিটি সংগ্রহ করে। সমরেশ তখন ‘মহানগর’ পত্রিকার সম্পাদক। পূজাসংখ্যায় ‘বিশুপালবধ-উপসংহার’ নামে কাহিনির শেষাংশটি ছাপা হয়। সে সময় শরদিন্দুর সহধর্মিণীও প্রয়াত। দুঃসংবাদটা আমার জানা ছিল না। তাঁর কাছে অনুমতি ভিক্ষা করি। জবাব পাই না। পরে যাঁরা শরদিন্দুর সাহিত্যকীর্তির গ্রন্থস্বত্ব আইনত ভোগ করার অধিকারপ্রাপ্ত হন তাঁরা আমাকে গ্রন্থাকারে ঐ উপসংহারটুকু প্রকাশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন। শরদিন্দু ভক্ত হিসাবে ওভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার অধিকার আজ আমার আইনত নেই। সে-ক্ষোভ কিছুটা মিটল এই গ্রন্থের উৎসর্গপত্রটি রচনা করে।
আরও দুটি কথা এই প্রসঙ্গে বলব। এক : পি. কে. বাসুর কোনও কেস অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় যদি তাঁর সৃষ্টিকর্তার কলম হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায় (ঐ যাকে বলে, “প্রবাসে দৈবের বশে জীবতারা যদি খসে…”) তাহলে অধম গ্রন্থকারের কোনো স্বত্বাধিকারীর আপত্তি গ্রাহ্য হবে না—কপি-রাইট আইন যাই বলুক। সে-ক্ষেত্রে এ গ্রন্থের প্রকাশক অনুজপ্রতিম শ্ৰীমান্ সুধাংশু দে সে-কালীন কথাসাহিত্যিকদের ভিতর থেকে বেছে নিয়ে কোনো একজনকে দায়িত্ব দেবে কাহিনিটি সমাপ্ত করার জন্য। অন্যের প্রয়াণে পি. কে. বাসু ব্যর্থ হয়ে থাকবেন আবহমানকাল—এটা আমার বরদাস্ত হবে না। বরদাস্ত করার হিম্মত নয়। দে’জ পাবলিশিং-এর শ্রীমান সুধাংশু দে-কে আমার অনুরোধ, সে বা তার স্থলাভিষিক্ত স্বত্বাধিকারী যেন এই গ্রন্থের “এন-এথ” তম এডিশনে বিশুপাল বধ-উপসংহার’ কাহিনিটি অন্তর্ভুক্ত করে প্রকাশ করে 22.9.2020 তারিখের পরে। যখন কপিরাইট-আইনের বেড়াজালের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ব্যোমকেশ হবেন দেশের সম্পদ, দশের সম্পদ!
এ পর্যন্ত যতগুলি গোয়েন্দা-কাহিনি লিখেছি তার সবগুলি বর্তমান সংকলন-গ্রন্থে প্রকাশ করা গেল না। এর পরবর্তী অনুজ সংকলনগ্রন্থটি আসন্ন। তারপর তিন-নম্বর গ্রন্থ সংকলন লিখবার সুযোগ আদৌ হবে কি না খোদায় মালুম।
একথা মুক্তকণ্ঠে স্বীকার্য যে, বিভিন্ন কাহিনির মৌল-কাঠামো এবং গোয়েন্দা-কাহিনির প্যাঁচ বিষয়ে মৌলিকতার কোনো দাবি আমার নেই। মাকড়শার জাল তার নিজস্ব কীর্তি, মৌমাছির মৌচাক তা নয়। যাঁরা সাহিত্যে মৌলিকর্তা ভিন্ন রসাস্বাদনে অক্ষম তাঁরা মাকড়শার জাল চর্বণ করতে থাকুন। আমার মধুকর-বৃত্তিতে অহেতুক বাধাদান করবেন না। অকুণ্ঠভাষায় স্বীকার করি : অধিকাংশ কাহিনি ইংরেজি ভাষায় লেখা নানান ডিটেকটিভ কাহিনির হচপচ! যাঁরা কনান ডয়েল, আগাথা ক্রিস্টি বা স্ট্যানলে গার্ডনার-এর মূল কাহিনির রসাস্বাদনে অক্ষম তাঁরা যদি আমার গ্রন্থপাঠে… তাই বা কেন? অ্যান্টনি হোপের ‘দ্য প্রিজনার অব জেন্দা’ তো আমার পড়া ছিল, তবু কেন রুদ্ধ-নিশ্বাসে শেষ করেছিলাম শরদিন্দুর “ঝিন্দের বন্দী”?
কাঁটা-সিরিজ বিষয়ে পাঠিকা-পাঠকদের কাছ থেকে আমি সচরাচর দুই জাতের চিঠি পাই। পত্রলেখকরা যেন দুই ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা। দীর্ঘদিন যদি শিল্প ভাস্কর্য- স্থাপত্য-বিজ্ঞান জাতীয় ওজনদার বিষয়ে ডুবে থাকি তাহলে প্রথম দলের কাছ থেকে তাগাদা আসে : ‘বাসু-সাহেবের ‘অবিচুয়ারিটা’ তো স্টেটসম্যানে দেখিনি। উনি কেমন আছেন?’
দ্বিতীয় জাতের পত্রবন্ধুরা প্রচ্ছন্নভাবে আমাকে তিরস্কার করেন। বলেন, “আপনার নিজের জবানবন্দি অনুসারে অত অত গুরুতর বিষয়ে মগজস্থ রয়েছে—না-মানুষী ‘বিশ্বকোষের’ যাবতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী, রূপমঞ্জরীর দ্বিতীয় খণ্ড, লেঅনার্দো, দাক্ষিণাত্যে ময়দানবের স্থাপত্যকীর্তি ইত্যাদি প্রভৃতি : আর আপনি ছেলেখেলা করছেন? ছি-ছি-ছি নয়, এমনকি য-ফলা ছ্যা ছ্যা-ছা-ছ্যাও নয়, বলতে ইচ্ছে করে তোবা! তোবা!”
আমি আপনমনে রামপ্রসাদী ভাঁজি :
‘সকলি তোমারই ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি…’
নারায়ণ সান্যাল
1.12.90
সূচী
Leave a Reply